-শাড়ির আঁচল ঠিক করো।বেহায়ার মতো আমাকে শরীর দেখানোর প্রয়োজন নেই।
আফরানের কথায় বোকা হয়ে যায় মুনিরা।
জর্জেট এর শাড়ি পরেছে সে।কিন্তু পিন না দেওয়ার কারণে কখন যে আঁচলটা খানিকটা বুক থেকে সরে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি।
তাই বলে আফরান এভাবে বলবে!সেতো আর পর পুরুষ নয়।তার স্বামী।ভালো করে বললেই হয়।অবশ্য ভালো ব্যবহার তার কাছ থেকে আশা করাও ঠিক হবেনা এখন।কেননা অন্য চার-পঁাচটা বিয়ের মতো তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক নয়।
মুনিরা….
গ্রামের মেয়ে।মা-বাবার খুব বাধ্য মেয়ে।এইস.এস.সি পরীক্ষার পর পরই বাবা তার বিয়ে ঠিক করে।তার বাবার মতে গ্রামের মেয়েদের এতো পড়া-শোনা করে লাভ নেই।
তার সাথে যে ছেলের বিয়ে ঠিক হয় তার নাম আনাস,
ছেলেটি ডুবাই কাজ করে।বিয়ে করতেই দেশে এসেছে।
মুনিরাকে একবার দেখেই তার ভালো লাগে।
মুনিরার ও ছেলেটিকে পছন্দ হয়।দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়েও ঠিক হয়।
কিন্তু বিয়ের দিন এমন একটা পরিস্থিতির সমুক্ষীন হবে সে জানতোনা।
বিয়ের আসরে আসার পথেই মুনিরার হবু বর মারা যায়।তাদের গাড়িটি একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে।হবু বরের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় মুনিরাকে।গ্রামের মানুষের মতে মুনিরা অপয়া বলেই আনাসের মৃত্যু হয়।আর তাই মুনিরাকে তাকে আর এই গ্রামে রাখতে চায়না,গ্রামের আর কোনো ছেলের সাথে তার বিয়ের চেষ্টা-ও করা যাবেনা।
ঘরের ভেতর থেকে এসব কথা শুনতে পায় মুনিরা।তার মা-বাবার সাথে গ্রামের মানুষের তর্ক হচ্ছে শোনা যাচ্ছে।আনাস মারা গিয়েছে,,এতে কি তার নিজেরও কষ্ট হচ্ছেনা!বর না হোক,হবু বরতো ছিলো।তার কষ্ট টাও কেউ দেখছেনা।উল্টো অপবাদ দিচ্ছে।এসব কি তার প্রাপ্য ছিলো!ভাবতে ভাবতে তার ঘরের ভেতর কয়েক জন মহিলা ঢুকে পরে।হাত ধরে তাকে বাহিরে নিয়ে যায়।এক ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে একজন বলে উঠে-
এই মাইয়ার এহানে কোনো জায়গা নাই।এ মাইয়া গ্রামের পোলা সব খায় ফেলবো।এহনি এরে বের করো।
মুনিরার বাবা সবার কাছে মেয়ের সম্মান রক্ষার জন্য আকুতি মিনতি করছিলো।গ্রামের চেয়ারম্যান,মেম্বার কেউ-ই তাকে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
আর তখনি আফজাল খান এসে মুনিরার বাবার হাত ধরে বলেন-
তোমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো।আমার একমাত্র ছেলের পুত্র বধু হবে মুনিরা,যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
আফজাল খানের কথা শুনে অবাক হয়েছিলো মুনিরার মা-বাবা।তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে আফরান!
আফজাল খান…..
চট্রগ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাঝে একজন।তার একমাত্র ছেলে আফরান খান।
আফরানের মতামত ছাড়া তার বাবা এমন একটা কথা বলে বসবে সে ভাবেনি।তাড়াহুড়ো করে বাবার হাত ধরে একটু দূরে নিয়ে বলে-
বাবা তুমি এমন করতে পারোনা।আমি এতো পড়াশোনা করেছি একটা গ্রামের মেয়ে বিয়ে করার জন্য?
-মেয়েটা এইস.এস.সি. পাশ করেছে।ওকে আমি আরো পড়াবো।
-না বাবা…
-কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা আফরান।মেয়েটা অসহায়।আমার বন্ধুর এমন অবস্থায় আমি ওকে সাহায্য করবোনা!তাছাড়া মুনিরার বাবা তোমাকে ছোট বেলায় পুকুরে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে ছিলো বলেই আজ তুমি….
-তুমি অন্য কিছু করে ঋণ শোধ করো কিন্তু এটা আমি করতে পারবোনা।
-তুমি আমার কথার মান রাখবেনা আফরান?
কথা শেষ না হওয়ার আগেই একটি মহিলা চেঁচিয়ে উঠলো-
এরা কি এই মেয়েকে নিবে নাকি বের করবো এরে?
অসহায় দৃষ্টিতে আফজাল সাহেব তার ছেলের দিকে তাকালো।আর তখনি আফরান মাথা নেড়ে সাই দিলো।
অবশেষে হয়ে যায় আফরান আর মুনিরার বিয়ে।রওনা হয় তারা শহরের উদ্দেশ্যে।
ঘরে পৌছে কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে সায়নী।আফরানের পাশে লাল কাতান শাড়ি পড়া মেয়ে দেখতেই বুকটা ধুক করে উঠে তার।সাথে সাথেই আফজাল সাহেব বলে উঠে-আফরানের বউ এটা।বিয়ে খেতে গিয়ে বউ নিয়ে এসেছি,হাহাহাহা।
সায়নীর মাথায় কিছু ডুকছেনা।সে শুধুই আফরানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এক দৃষ্টিতে।
আফজাল খান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন
-আফরান,মুনিরাকে তোর ঘরে নিয়ে যা।
আর সায়নী তোর খালাম্মার একটা শাড়ি এনে দে মুনিরাকে।
আফরান নতুন বউ নিয়ে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে।
কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা সায়নী।
সায়নী….
আফরানের খালাতো বোন।৭বছর ধরে আফরানদের বাসায় থাকে সে।কারণ ৭বছর আগে এক্সিডেন্ট এ মা-বাবা,দু’জনকেই হারায় সায়নী।
সেদিনটা ছিলো তার জীবনে এক ভয়াবহ দিন।
সায়নীর পরিবার আফরানদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো।তখন আফরানের মা ছিলো ৮মাসের প্রেগন্যান্ট।রাতের খাবার খেয়ে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।সেই সময় হঠাৎ পেটে ব্যাথা করে উঠে আফরানের মায়ের।সায়নীর মা বুঝতে পারে তার পেইন উঠেছে।এদিকে আফজাল খান বাসায় ছিলেন না।তাই সায়নীর মা-বাবা ঠিক করে তারাই আফরানের মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।
সায়নীর মা ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে সায়নী আর আফরানের কাছে এসে বলে-
তোরা বাসায় থাক,অফিস থেকে দুলাভাই(আফজাল খান) এলে উনাকে নিয়ে হাসপাতাল চলে আসিস।
গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় তারা।কিন্তু পথে এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু হয় সকলের।
সেই সময় আফরানের পাশে ওর বাবা থাকলেও,সায়নীর পাশে ছিলোনা কেউ।তাই
আফজাল খান সায়নীর সব দায়িত্ব নেন।
সায়নী খালাম্মার একটা জর্জেট শাড়ি নিয়ে মুনিরার কাছে আসে।সে সময় রুমে আফরান কে দেখতে পায়নি সে।
-কেমন আছো মুনিরা?
-আমার আর ভালো থাকা!
-কেনো?
-যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে মারা গিয়েছে।অপয়া বলে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো গ্রাম থেকে,আর তখনি আমাকে বিয়ে করে উদ্ধার করেছে উনি।
-ওহ।
-আপনি কে?
-সায়নী।আফরানের খালাতো বোন।এখানেই থাকি ৭বছর ধরে।কিন্তু চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবো।
-কেনো?
-বিয়েতো সামনে।
-ও আচ্ছা।কিন্তু কিসের চিন্তা?
-কিছুনা।
আর কিছু না বলেই সায়নী নিজের রুমের দিকে রওনা হয়।
এদিকে আফরান নিজের ফোন-টি নিতে রুমে আসতেই দেখে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মুনিরা।কিন্তু আঁচল-টা ঠিক নেই।এমন দৃশ্য দেখে মাথাটা ঠিক রাখতে পারেনি সে।শুনিয়ে দেয় কয়েকটা কথা মুনিরাকে।
#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_১
#Saji_Afroz