বোকা প্রেমিকা পর্ব -০৪

#বোকা_প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

গতকাল জলের বড় মামা ফোন করেছিলো।তারা নাকি জলের মায়ের বিয়ে ঠিক করেছে।আজই বিয়ে।জলকে তারা যেতে বলেছে।ব্যাপারটা জলের কাছে খুব হাস্যকর লাগলো।না জানিয়ে তারা এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।শেষ মুহুর্তে তারা জলকে তাতে যেতে বলছে।ক্লাস শেষে জল মামাদের বাসায় যায়।গিয়ে দেখে ড্রয়িংরুমে কিছু মানুষ জন বসে আছে।এরা জলের মায়ের বিয়ের বরপক্ষ হবে হয়তো।জল তাদের উপেক্ষা করেই তাদের সামনে দিয়ে হনহনিয়ে মায়ের ঘরে চলে যায়।দেখে মামীরা জলের মাকে সাজাচ্ছে।আকাশি রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরেছে জলের মা।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।যদিও মায়েরা সব সময় সুন্দর। তবে আজ জলের মাকে এক অন্যরকম সুন্দর লাগছে।জলকে দেখে পরীর মা মানে জলের ছোট মামী বলে উঠে,,,

” জল এসেছো?”

জল কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,,

” হু।”

” তা মুখ এমন শুকনো কেন?”

” ক্লাস করে সরাসরি এলাম তো।তাই চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপটা একটু বেশিইই।”

” ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।”

” নাহ,থাক।আমি এভাবেই ঠিক আছি।”

” মায়ের বিয়ে কেউ এভাবে খায়?ক’জনেরই বা ভাগ্য হয় এভাবে মায়ের বিয়ে খাওয়ার।”

কথাটা একপ্রকার টিটকারি দিয়েই বললেন ছোট মামী।জল অপমানিত বোধ করলো।জলের মন চাচ্ছিলো সেই মুহুর্তেই সেখান থেকে চলে আসতে।কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জল মনের বিরুদ্ধে কাজ করে।ছোট বেলা থেকে জল দেখে আসছে জলের জন্য ওর মা অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন।স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে সেখানে পরে থাকার মুল কারণ ছিলো ছোট্ট জল।কিন্তু অত্যাচার যখন সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন জলের মা চলে আসেন সেখান থেকে।ততদিনে ছোট্ট জলটাও অনেক বড় হয়ে গিয়েছিলো।জলের মা জলকে নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু স্বামীর সাথে তাতে পেরে ওঠেন না।আর তাছাড়াও জলের মামারাও জলকে নিয়ে ততটা আগ্রহ দেখাচ্ছিলো না।মায়ের সাথে মামাবাড়িতে থাকলে জলের কষ্ট হতে পারে।তাই জলকে ওর বাবার কাছেই রেখে আসেন জলের মা।
জল অপলক দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।খুব করে তার মায়ের মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে করছে যে আদোও জলের মায়ের এই বিয়েতে মত আছে কিনা!কেন যেন জলের মন বলছে জলের মায়ের এই বিয়েতে মত নেই।বিধাতা মেয়েদের একটা বিশেষ গুণ দিয়েছেন।তা হলো আন্দাজ। বন্ধুকের গুলি মিস যেতে পারে কিন্তু মেয়েদের আন্দাজ কখনো ভুল হয় না।

” মামী যদি কিছু মনে না করেন!আমি কি মায়ের সাথে আলাদা কিছু কথা বলতে পারি?”

বড় মামীকে বলে জল।মামী ভেঙচি কেটে বলেন,,,

” হুহ!কিসের কথা যা আমাদের সামনে বলা যাবে না?যা বলার আমাদের সামনেই বলবে।আমাদের অনুপস্থিতিতে মাকে কি না কি বলে কান ভাঙাবে আর শেষমেশ উনি বিয়েটাই না ভেস্তে দেন!”

জল উত্তর পেয়ে গেছে।বড় মামীর টিটকারি মেশানো কথায় জল উত্তর পেয়ে গেছে। সংকীর্ণ কন্ঠে বলে,,,

” মা তোমার যদি এই বিয়েতে মত না থাকে আমায় বলতে পারো।আমি তোমায় নিয়ে যাবো।থাকতে হবে না উনাদের কাছে বোঝা হয়ে।”

জল মায়ের থেকে হ্যাঁ বোধক উত্তর আশা করেছিলো।কিন্তু তার বিপরীতটা হয়েছে।জলের মা চুপ।তিনি কোনো কথা বলেন নি।সাজানো শেষ হলে মামীরা মাকে নিয়ে যায়।জল মায়ের ঘরেই থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে ছোট মামী জলকে ডেকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যান।

” আপনাদের আগেই বলেছি আমার বোনের আগের পক্ষে একটা মেয়ে আছে।এই সেই মেয়ে।জল।”

বরপক্ষকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেন বড় মামা।বড় মামার কথা শুনে বরপক্ষ লোকজন মুচকী হাসে।জলকে উদ্দেশ্য করে পাঞ্জাবি পরা লোকটাকে ইঙ্গিত দিয়ে বড় মামা বলেন,,,

” জল ইনি তোমার নতুন বাবা।”

বাবা?মানে বাবা-মা যাকে দ্বিতীয় বিয়ে করবে সেই মা-বাবা হয়ে যাবে?মা-বাবা হওয়া কি এতই সোজা?দায়িত্ব লাগে,স্যাক্রিফাইস লাগে বাবা-মা হতে গেলে।জলের এই মুহুর্তে রাগে মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে।রাগে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে মাটির দিকে তাকায় জল।সে চায় না এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হোক।লোকটা তখনও জলের সাথে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

” কি হলো জল?”

” কিছু না।”

ছোট মামার কথার জবাবে বলে জল।বড় মামা জলকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে,,,

” কি হলো নতুন বাবাকে সালাম দে।”

” What the hell!নতুন বাবা?কিসের নতুন বাবা?উনি না আমায় জন্ম দিয়েছেন আর না আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।বাবা হতে গেলে দায়িত্ব পালন করা লাগে।বাবা ডাকটা অনেক মূল্যবান। এত সহজে বাবা ডাক শোনা যায় না।”

” খুব তো বড় বড় কথা বললি।তাহলে কে তোর বাবা?ওই জানোয়ার জাবেদ চৌধুরী?”

” How dare you call my father জানোয়ার?সে আমার বাবা।ভালো হোক খারাপ হোক সে আমার বাবা।তাকে এভাবে বাইরের মানুষের সামনে ছোট করার কোনো অধিকার নেই আপনাদের।সে না আপনাদের খায় আর না আপনাদের পরে।”

দাঁতে দাঁত চেপে বড় মামার কথার জবাবে এভাবে অনর্গল কড়া কথা শুনিয়ে দেয় জল।জলের এ হেন আচরণে বড় মামা বেশ অনেকটাই রেগে যায়।চোখে,মুখে,কন্ঠে তীব্র রাগ নিয়ে বলেন,,

” আমার বোনের জীবনটা তো তোমার বাবাই নষ্ট করেছে।”

” that was your mistake…!টাকা দেখে বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন কেন?টাকা আছে মানেই বোন সুখী হবে?কেন?বিয়ের আগে খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন নি ছেলেটা ভালো কি না?এইবারও তো মনে হয় সেই একই কাজ করলেন।আমার মায়ের গায়ে যদি একটা ফুলের টোকাও পড়ে! শ্মশান বানিয়ে দেবো আমি। বলে দিলাম।”

” বাপের মতোই অমানুষ হয়েছে।’

বড় মামীর কথা যেন জলের ক্রোধের আগুনে ঘি ঢালার মতো।অনর্গল কথা গুলো বলে বেরিয়ে আসছিলো জল।বড় মামীর কথা শুনে জল রাগে চোখ উল্টিয়ে ফেলে।রাগে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,

” আগেই বলেছি আমি বা আমার বাবা কেউ ই আপনাদের খাই না পরিও না।তাই আমাদের নিয়ে কোনো নেগেটিভ কিংবা পজেটিভ কমেন্ট করার কোনো রাইট আপনাদের নেই।আর অন্যকে নিয়ে নেগেটিভ কমেন্ট করার আগে নিজেদের দিকে তাকান।নিজেরা যদি মানুষ হতেনই।তাহলে আমার নানা-নানুকে এভাবে অবহেলায় দুনিয়া ছাড়তে হতো না।ছোট মামীর তো বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।নানা নিজে পড়াশোনা করিয়ে জমি বিক্রি করে ঘুষ দিয়ে ছোট মামীকে চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো আর শেষে ছোট মামী এভাবে তার প্রতিদান দিলেন…….”

জল থেমে যায়।কিছু কথা অপ্রকাশিতই থাক।আর জল যদি বাইরের মানুষের সামনে মামা-মামীদের ছোট করে তাহলে জল আর তাদের মধ্যে পার্থক্যটা কি থাকে?সবাই তখন মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।জল আর পিছন ফিরে না তাকিয়ে বেরিয়ে যায়। জলের আপনজনের নামে কেউ কিছু বলুক বিষয়টা জলের মোটেও পছন্দ না।সে যতই খারাপ হোক!তার নামে কোনো মানুষ খারাপ কিছু বললে জলের ইচ্ছে করে সেই মানুষটাকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে।যা এই মুহুর্তে মামা-মামীদের করতে ইচ্ছে করছে।

চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here