#বোনের_রোমান্টিক_সাইকো_দেবর (৫)
#স্বপ্নীল_আজিম
সবাই দরজা ধাক্কাচ্ছে তবুও তুলি দরজা খুলছে না। সায়ানের বাবা মাও চলে এসেছে। তুলির মা তো কান্না কাটি শুরু করে দিছে।
এভাবে হবে না দরজা ভাঙতে হবে
আদর ভাঙার চেষ্টা করছে কিন্তু ভাঙছে না
সায়ান একপাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে
“আমি কি একটু বেশি বকে ফেললাম? কিন্তু ও তো কিচ্ছু বুঝে না যে যা বলে তাই করে। এবার আমি কি করবো? দরজা ধাক্কাবো যদি আমার ওপর রেগে যায়। ধুর কি ভাবছি রেগে যাবে কি রেগেই তো আছে।
সায়ান তুই দাঁড়িয়ে আছোস কেন?
সায়ানের মা বলে। সায়ানও দরজা ধাক্কায়
” তুলি সরি প্লিজ দরজা খুলো। ভুল হয়ে গেছে আর বকবো না প্লিজ
মনা ফোন দেয়। সায়ান ওখান থেকে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে
” হুম বলো
“কোথায় তুমি? ওভাবে দৌড়ে কোথায় গেলে
” তোমায় পরে বলছি
“পরে মানে এখন বলবে আর আমার কাছে আসবে
” মনা প্লিজ
“সায়ান প্লিজ
” বোঝার চেষ্টা করো
“খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়। প্লিজ সায়ান। ভালোবাসি তো
” আসছি
সায়ান ফোন কেটে চুপিচুপি চলে যায়।
আদর আর বাবা মিলে দরজা ভেঙে ফেলে। ভেতরে গিয়ে দেখে তুলি হাত পা কেটে বসে আছে। হাত পা থেকে রক্ত ঝড়ছে
আদর মা বাবা দৌড়ে তুলির কাছে যায়।
জিসান নিশি শাশুড়ী শশুর ওরা দাঁড়িয়ে আছে।
“কি হয়েছে এমনটা কেনো করছো? তুলির বাবা তুলির দুগালে হাত রেখে বলে।
” রাগ কন্ট্রোল করলাম।
“মানে (আদর)
” আমি একটু একা থাকতে চাই
“কিন্তু তুলি
” বললাম না একা থাকতে চাই
মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলি চেচিয়ে বলে। সবাই বেরিয়ে যায়। তুলি উঠে চোখের পানি মুছে
“আমি হারবো না। তাইবা তাজনিন তুলি কখনো হারতে শিখেনি। আর অন্যায়ের কাছে তো না ই। ওই মনা এভাবে জিততে পারবে না। সায়ান আমার ক্রাশ আর ও আমারই থাকবে। আর কারো না। আমার বাচ্চাদের বাবা সায়ানই হবে।
তুলি জামাকাপড় লাগেজে ঢুকিয়ে নিয়ে বের হয়।
” কোথায় যাচ্ছ? (বাবা)
তুলি না দাঁড়িয়েই বলে
“শশুর বাড়ি
বাবা মা পেছন থেকে তুলিকে ডাকে কিন্তু তুলি সারা দেয় না। হনহনিয়ে চলে যায়।
দুই বার কলিং বেল বাজানোর পরে জিসান দরজা খুলে দেয়
” তুই
“চোখে কম দেখোস না কি?
” না মানে
তুলি জিসানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। সায়ানের রুমে চলে যায়। সায়ান আরাম করে সুয়ে মনার সাথে কথা বলছিলো তুলিকে দেখে উঠে বসে
“তুলি তুমি
” তো কি খালাম্মা আসবে
তুলি সায়ানের কাছ থেকে ফোন নেয়
“হেলো আমি মিসেস সায়ান মাহমুদ বলছি
” তো আমি কি করবো? মনা রেগে বলে
“বিবাহিত পুরুষকে ফোন করেন কেন খালাম্মা
” মানে
“মানলাম আমার স্বামী একটু নিকনিক বেশি করে। মেয়ে দেখলেই ক্লোজ আপ হাসি দেই তাই বলে ওনার পেছনে পরে থাকবেন? ওনার তো একটা নিষ্পাপ বউ আছে বউয়ের তো আবার বুকের বা পাশ আছে তাই না
” তো
“বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করে তো
সায়ান তুলির কাছ থেকে ফোনটা নেয়। কেটে দেয়। তুলি অগ্নি দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” ফোনটা নিলেন কেনো?
“আমার ফোন আমি নিছি তোমার কি?
” আমি অসুস্থ তাও আপনি মনার সাথে দেখা করতে চলে গেলেন
“হ্যাঁ তো
সায়ান বিছানা থেকে নামতে যায় তুলি সায়ানের ওপরে উঠে পরে
” হচ্ছে টা কি?
সায়ানের কলার ধরে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে তুলি
“তুই জানোস না কি হচ্ছে
” হুটহাট এভাবে এটাক করো কেন
“তাহলে কি সারাক্ষণই এমন করবো না কি
” সরো তো
“ভালোবাসি আপনাকে
” আমি বাসি না
“কেনো?
” মনা
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল দেয়
“এখানে সায়ান তুলি আছে। আর সায়ান তুলির মধ্যে কোনো মনা টনা থাকবে না। বুঝলি
সায়ান তো ঘামতে শুরু করেছে। কেমন মেয়েরে আল্লাহ
” কি হলো
“হুম
” কি হুম
“থাকবে না
” কে
“মনা
গুড
তুলি সায়ানের কপালে একটা চুমু দিয়ে সরে যায়। সায়ান উঠে বসে।
” আমি আপনাকে খুব বিরক্ত করি তাই না
“হুমম
” কিচ্ছু করার নাই সারাজীবন আপনাকে আমার এই বিরক্তি সয্য করতে হবে।
“সেটাই
” হুম সেটাই।
“হাত পায়ের এমন অবস্থা করছো কেন?
” আপনি আমায় বকলেন কেন?
“তাই বলে
” ইচ্ছে তো করছিলো মরে যেতে
“পাগল একটা
” আপনারই তো বউ
সায়ান তুলির হাত পায়ের রক্ত মুছে দেয়।
সায়ানের সিঙ্গাপুর যাওয়ার ডেটটা এগিয়ে এসেছে। দুইদিন পরেই যেতে হবে। সায়ান ফোনে মনাকে বলছিলো তুলি শুনে ফেলেছে। শাশুড়ীর রুমে যায়।
দেখে শশুর শাশুড়ী নিশির বিয়ের কথা আলোচনা করছে।
“মা বাবা
” আরে তুলি ভেতরে এসো
হাসিমুখে বলে শাশুড়ী। তুলি ভেতরে গিয়ে শশুরের পাশে বসে
“কি হয়েছে তুলি? শশুড় মশাই বলে
” তোমার ছেলে দুদিন পরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে
“হুম জানি তো
” আমাকে নেবে না বলছপে😭
“ও নিবে না ওর বাপ নিবে (মা)
” আমাকে কেনো টানছো🥺 (বাবা)
“তুমি থামো। তুলি তুমি কান্না করো না সায়ানের সাথে তুমি যাচ্ছ
” সত্যি 😁
“হুম সতি
” আমার সোনা মা😘
তুলি এক দৌড়ে চলে যায়। জিসানের কাছে যায় বলতে
“তোরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছিস আমাকেও নিয়ে চল
” ইহহহহহ শক কতো। আমি কতো নাকানি চুবানি খেয়ে রাজী করিয়েছি
“প্লিজ দোস্ত আমার সোনা মনা টুনুমুনু দোস্ত
” ঠিক আছে দেখছি
“লাভ ইউ
” টু
প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়
তুলি জিসান গানটা গাইছে আর লাগেজ গোছাচ্ছে। সায়ান অফিস থেকে বাড়ি এসে দেখে এই অবস্থা
“পাগলটা আবার যাচ্ছে দেখি। গেলেই ভালো আমি শান্তিতে সিঙ্গাপুর যেতে পারবো। কোনো সমস্যা হবে না।
” কি হচ্ছে এখানে?
তুলি আর জিসান গান বন্ধ করে সায়ানের দিকে তাকায়।
“জিসান বাবু তুমি এবার যাও আমি জামাইয়ের সাথে রোমাঞ্চ করবো
সায়ান বড়সড় চোখ করে তুলির দিকে তাকায়।
” আমি দেখমু
“যা বলছি
জিসান চলে যায়। তুলি সায়ানের হাত থেকে অফিস ব্যাগ নেই।
” কাল যাচ্ছি
সায়ান বেডে বসতে বসতে বলে।
“ভালো
” আমি আর মনা যাচ্ছি
“গ্রেট
কি বেপার রাগলো না কেন? সায়ান মনে মনে
” তোমার যদি পাসপোর্ট ভিসা থাকতো তো তোমাকেও নিয়ে যেতাম
“মরছি মরছি 😱😱
আমার জামাই আমারে এতো ভালোবাসে আল্লাহ
” ইডিয়েট
“যাহ বাবা করলাম কি?
” কিছু না পাগল
“আপনারই বউ
সায়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সায়ান বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। যদিও সায়ান সিগারেট খায় না তবে আজ কেনো জানি খেতে মন চাচ্ছে। সায়ান একটা দোটানায় পড়ে গেছে। সায়ানের ঠিক কি করা উচিৎ সায়ান বুঝতে পারছে না। একদিকে ভালোবাসা একদিকে বউ। তাও আবার ডেঞ্জারাস বউ৷ সায়ান এতো দিনে এটা বুঝে গেছে তুলি সায়ানকে ছাড়বে না। কিন্তু সায়ান তুলিকে ছেড়ে দিতে চায়। মনার সাথে সংসার করতে চায়। সায়ান ভেবে নিয়েছে আর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরবে না। ওখানেই থাকবে মনার সাথে।
এসব ভাবছো আর সিগারেট খাচ্ছে সায়ান। তুলি বেলকনিতে এসে দেখে ফ্লোরে সিগারেটের বাঁকি আংশ অনেক গুলো পরে আছে। আর সায়ানের দু হাতে দুটো সিগারেট
” আপনি সিগারেট খাচ্ছেন কোন দুঃখে। একটা বউ আছে গার্লফ্রেন্ড আছে। চাকরি আছে বাবা মা আছে তাহলে সিগারেটের কি প্রয়োজন।
সায়ান এক পলক তুলির দিকে তাকিয়ে বলে
“মানুষ কি শুধু দুঃখে সিগারেট খায়? সুখেও খায়। আমিতো সুখে খাচ্ছি।
তুলি সায়ানের পায়ের কাছে বসে
“যদি কখনো জানতে পারেন আপনাকে মনা ঠকাচ্ছে আপনার কষ্ট হবে
সায়ান হো হো করে হাসে
” এটা অবাস্তব কথা। মনা কখনো আমাকে ঠকাবে না
“এর ওপর কালো জাদু করেছে দেখছি। তুলি মনে মনে বলে
“অন্ধ বিশ্বাস ভালো না জামাই।
” হয়ত
“আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি
” অনেক বার শুনেছি
“হয়ত শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছেন কিন্তু আমি তো বিরক্ত হয় না
সায়ান পাল্টা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।
” এই মেয়েটা মনে হয় মেজিক জানে। কেমন আমাকে প্রতিনিয়ত ওর কাছে টানছে। কিন্তু আমি কঠোর থাকবো। মনা আমার সব। ভালোবাসি মনাকে
চলবে?
সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এবং পর্দা করুন