#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_35
কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।আহীর এটাই ভেবে পাচ্ছে না,রুম তো ভিতর থেকেই বন্ধ ছিলো তাহলে সাড়িকা গেলো কোথায়?আর কিভাবেই বা গেলো?হঠাৎ আহীরের চোখ গেলো ব্যালকনির দরজার দিকে।দরজাটা হালকা করে খুলে রাখা।অন্যদিন রাতে ঘুমানোর সময় সাড়িকা সাঈফা সবসময় ব্যালকনির দরজা লক করে ঘুমায়।এখন খোলা দেখে আহীরের আর বুঝতে বাকি রইলো না সাড়িকা ওখানেই আছে।ও ধীর পায়ে ব্যালকনির কাছে গিয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে, ফোনের টর্চ টা সামনের দিকে নিক্ষেপ করলো।টর্চের মৃদু আলোতে আহির স্পষ্ট দেখতে পেলো সাড়িকা ব্যালকনির এক কোনায় ফ্লোরে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে।ও সাড়িকা কে এখানে দেখে একটা সস্তির নিশ্বাষ ফেললো,,কিন্তু পরক্ষনেই সাড়িকার দিকে ভালো করে তাকাতেই ওর হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ও হতবম্ভ হয়ে কিছুক্ষন ওখানে স্থিরভাবে ঠায় দাড়িয়ে রইলো।তারপর কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে ফ্লোর থেকে ফোনটা হাতে উঠিয়ে, তড়িঘড়ি করে সাড়িকার কাছে এগিয়ে গেলো।তারপর হাতে থাকা টর্চ টা ভালো করে সাড়িকার গায়ে ধরতেই আহিরের কলিজায় মোচর দিয়ে উঠলো।ও ধপ করে হাটু ভেঙে ষাড়িকার সামনে বসে পড়লো।
সাড়িকার সাড়া শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রয়েছে।কোনো কোনো জায়গা থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।আবার কোনো কোনো জায়গায় রক্ত শুকিয়েও গেছে।শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাচের ছোট ছোট টুকরো গেথে রয়েছে।পায়ের নিচটা একদম কেটে চিড়ে গেছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কাধে,মুখে,পিঠে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।চোখের কাজল,ঠোটের লিভষ্টিক,আই স্যাডো সব কিছু লেপ্টে আছে।হাতের কাচের চুড়ি গুলো ভেঙে হাতের মধ্যে গেথে আছে।ফাংশনে যে শাড়িটা পড়ে ছিলো এখনো সেই শাড়িটাই পড়ে আছে।আহীরের আর বুঝতে বাকি রইলো না,সাড়িকা বাসায় এসেই ভাংচুর করে সেই কাচের উপরে শুয়ে ছিলো তাই সারা শরীরের এই অবস্থা।
ও একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে সাড়িকা কে পাজ-কোলে তুলে নিলো।তারপর রুমে এসে আস্তে করে ওকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো।এরপর দ্রুত ফোনের লাইট টা ফ্লোরের দিকে নিক্ষেপ করে ফাষ্ট-এইড বক্স খুজতে লাগলো।অনেকক্ষন সব উল্টেপাল্টে খোজার পর, অবশেষে বক্সটা খুজে পেলো।আহির বক্সটা নিয়ে দ্রুত সাড়িকার কাছে এসে, ওর পাশে বসে আস্তে আস্তে করে সাড়িকার শরীর থেকে একটা একটা কাচ তুলতে লাগলো।
_____________________
মিহির খুব সাবধানে ছাহীরের রুমের সামনে এসে,আস্তে করে রুমের মধ্যে ঢুকে, দরজাটা হালকা চাপিয়ে দিলো।দরজা চাপিয়ে পিছনে ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো সোফার উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত সাঈফার উপর।ওর পড়নে একটা লেডিস টিশার্ট আর থ্রি কয়ার্টার প্যান্ট।একে তো সাঈফা একদম শুকনো, তার উপরে থ্রি কয়ার্টার প্যান্ট পড়ে এইভাবে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকার জন্য,ওকে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।সাঈফা কে এভাবে বাচ্চাদের মতো শুয়ে থাকতে দেখে মিহির মৃদু হাসলো।তারপর কিছু ক্ষন এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত সাঈফার দিকে তাকিয়ে থেকে এক-পা,দু-পা করে ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
‘ও’ সোফার একদম কাছাকাছি এসে থেমে গিয়ে, হাটু ভেঙে সাড়িকার একদম মুখোমুখি বসলো।তারপর সাঈফার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো আর সাড়িকার আগের করা কান্ড গুলোর কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
আগে কতোটা হাসি,খুশী, দূরন্ত স্বভাবের ছিলো এই মেয়েটা।মনে যা আসতো গরগর করে বলে দিতো।ওর দুরন্তপনার মধ্যেও অদ্ভুত এক সরলতা খুজে পাওয়া যেতো ।’কতো বার এসে মিহিরকে আই লাভ ইউ,আই মিস ইউ বলেছে।কোনো কারন ছাড়াই একগাদা করে গিফট,ফুল ওকে দিয়েছে।সারাদিন ফোন আর মেসেজ করে বিরক্ত করেছে।আর এখন সেই হাসি খুশী মেয়েটা হঠাৎ করেই একদম শান্ত শিষ্ট হয়ে গেছে।এখন ভুলেও একবারও মিহিরের দিকে ঘুড়েও তাকায় না।
সাঈফার আগের সেই পাগলামি গুলোতে মিহির বিরক্ত হলেও এখন সেই পাগলামি গুলো খুব মিস করে।কেনো মিস করে সেটা নিজেও জানে না।শুধু জানে সাঈফা ওকে ইগনোর করলে ও একদম মেনে নিতে পারে না।ওর দম বন্ধ হয়ে আসে।
ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সাঈফা ঘুমের মধ্যেও হিচকি দিচ্ছে।মিহির বুঝতে পারলো হয়তো কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে তাই এখনো হিচকি দিয়ে যাচ্ছে।মিহির ওর একহাত দিয়ে সাঈফার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো ওর কানের পিছনে গুজে দিলো।তারপর কিছু একটা ভেবে একটা বাকা হাসি দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সাঈফার ঠোট উল্টে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে থাকার কয়েকটা পিক তুলে নিলো।এই গুলো দিয়ে পরে ওকে ক্ষ্যাপানো যাবে মূলত সেই জন্যই মিহির পিক গুলো তুললো।
গভীর ঘুমের মধ্যেও সাঈফার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে,,ওর আশে পাশে কেউ আছে।যে ওকে খুব কাছ থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।সাঈফা প্রথমে বিষয়টা পাএা না দিলেও ধীরে ধীরে ব্যাক্তিটির নিশ্বাস ওর চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই, ‘ও’ ভয় পেয়ে ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
মিহির অন্যমনষ্ক হয়ে সাঈফার পাশে হাটু ভেঙে বসা অবস্থাই ফোনে সদ্য তোলা পিক গুলো দেখছিলো।তার মধ্যেই সাঈফা এভাবে যে হঠাৎ করেই উঠে যাবে সেটা ও ভাবতেই পারেনি।সাঈফা ঘুম থেকে উঠেই অন্ধকারের মধ্যে একটা ছেলেকে ওর এতোটা কাছে দেখে ঘাবড়ে গেলো।ও যখনই চিৎকার দেওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখনই মিহির হাতে থাকা ফোনটা সোফার উপরে রেখে দ্রুত এগিয়ে এসে সাঈফার মুখটা ধরে সোফার সাথে চেপে ধরলো।সাঈফা ভয়ে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে,,মুখ থেকে উম উম শব্দ বের করছে।সাঈফাকে এমন ছটফট করতে দেখে মিহির ফিসফিসিয়ে বললো
“হেই ডোন্ট শাউট!ইটস মি..মিহির!”
মিহির! নামটা কানে আসতেই সাঈফা স্থির হয়ে গেলো।ও ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে মিহিরের চেহারার দিকে তাকালো।হ্যা এটা সত্যিই মিহির,,আবছা আলোর মধ্যেও সাঈফার ওকে চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না।ও অবাক হয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আচ্ছা ও কি আবারো স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যিই মিহির এসেছে?কিন্তু মিহির এতো রাতে ওর কাছে কেনো আসবে?এসব ভাবতে ভাবতেই মিহির সাঈফার মুখ থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে ওর থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।মুখ থেকে হাত সরাতেই সাঈফা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।মিহির ওর মুখ এতোটাই জোড়ে চেপে ধরেছিলো যে ওর এতোক্ষন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।সাঈফা জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে রাগি কন্ঠে বললো
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?আপনি এতো রাতে আমার রুমে কি করছেন?”
সাঈফার মুখ থেকে আপনি ডাক শুনে মিহির ভ্রু কুচকে সাঈফার দিকে তাকালো।মনে মনে বললো,যে মেয়ে এতোদিন দেখা হলেই বাবু,সোনা,জানু ছাড়া কখনো কথাই বলতো না,সে কিনা এখন সোজা আপনি বলে ডাকছে।বাই চান্স এখন আবার না ভাইয়া ডেকে বসে।মিহিরের ভাবতে দেরি হলো কিন্তু সাঈফার বলতে দেরি হলো না।
সাঈফা আবারও একই ভঙ্গিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“কি হলো ভাইয়া চুপ করে আছেন কেনো?এতো রাতে আপনি আমার রুমে কি করছেন?”
সাঈফার মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনে মিহিরের ভীষন রাগ লাগছে সাথে কান্নাও পাচ্ছে।ওর ইচ্ছে করছে ফ্লোরে বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ওয়া ওয়া করে কান্না করতে।সাঈফার মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
মিহিরকে এভাবে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে সাঈফা বিরক্তির স্বরে বললো
“কি হলো এই ভাবে হাবলার মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো?আমার প্রশ্নের উওর দিন?আপনি আমার রুমে কেনো এসেছেন?”
মিহির দাতে দাত চেপে বললো
“সুইসাইড করতে আসছি।আসলে আমার বাড়িতে ফ্যান নেই তো,তাই তোদের বাড়িতে এসেছি ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিবো বলে।আর এটা তোর রুম না,ছাহীরের রুম বুঝেছিস?”
সাঈফা ভেংচি কেটে বললো
“হুহ আমাদের এতো ঠ্যাক্যা পড়েনি যে আপনার মতো হাতিকে আমাদের বাড়ির ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে, ফ্যানের আয়ু কমিয়ে ফেলবো।আপনি গিয়ে কটু গাছের সাথে ঝুলে পড়েন,ওই টাই আপনার মতো কচু পাতার জন্য পারফেক্ট।আর এটা ছাহীরের রুম তো কি হয়েছে ও আমার ভাই হয় তাই ওর রুম মানেই আমার রুম।”
মিহির রাগি স্বরে বললো
“ওই তোর সাহস তো কম না?তুই আমাকে হাতি বললি আবার কচু পাতাও বললি?আর ছাহীর যদি তোর ভাই হয় তাহলে ও আমারও ভাই আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই রুমে আসার।”
“কচু পাতাকে কচু পাতা বলবো না তো কি বাশ পাতা বলবো?আর এসব বলার জন্য সাহসের কোনো প্রয়োজন নেই,কথা বলতে জানতে হয় আর সেটা আমি ভালো করেই জানি।ওয়েট কি বললেন ছাহীর আপনারও ভাই হয় তাইতো?ঠিক আছে আপনি থাকুন আপনার ভাইয়ের রুমে আমি গেলাম বাইরে।”
বলেই সাঈফা দরজার দিকে পা বাড়াতে নিলেই মিহির সাঈফার হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।তারপর দাতে দাত চেপে বললো
“ইদানিং একটু বেশিই সাহস বেড়ে গেছে তোর।আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করছিস?আমার সাথে কেউ অতিরিক্ত সাহষ দেখাতে আসলে তার পরিনতি কি হয় জানিস?”
সাঈফা তাছিল্য হেসে বললো
“কি করবেন মেরে ফেলবেন?ফেলুন,নো প্রভলেম!এমনিতেই তো মরে গেছি শুধু শরীরটা বেচে আছে সেটাকেও মেরে ফেলুন।মরে গেলে অন্তত এই অসহ্যকর ভালোবাসা নামক রোগ টা থেকে তো বেচে যাবো।জানেন,,মাঝে মাঝে যখন ভাবি আমার ভালোবাসার মানুষটা একদিন অন্য কারো হবে,তাকে আই লাভ ইউ বলবে,তার সাথে বেড শেয়ার করবে,তাকে স্পর্শ করবে, তখন খুব কষ্ট হয়,নিশ্বাস নিতে পাড়ি না।দু-চোখে পাতা এক করতে পাড়ি না,,চোখ বন্ধ করলেই আমার প্রিয় মানুষকে অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখি।বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা হয়।কি করবো কিছু বুঝতে পারি না।নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।কেনো আমার সাথে এরকম হলো বলতে পারেন?কেনো আমি চারটা বছর ধরে একজনকে সবটা দিয়ে ভালোবেসে গেলাম অথচ সে আমার ভালোবাসাটা বুঝলোই না।তাকে বারবার এটাসেটা দিয়ে বুঝাতে থাকলাম আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি কিন্তু সে বারবার আমাকে প্রত্যাখান করলো,অপমান করলো।কি দোষ করেছিলাম আমি?শুধুমাএ তাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসে গেছি এটাই কি আমার একমাএ দোষ?”
কথাগুলো বলতে বলতে সাঈফা কেদে দিলো।
মিহির অসহায় চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর ভিতরটা ধুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ও তো কখনো সাঈফার খারাপ চায়নি।শুধু চেয়েছে যাতে ওর থেকে দূরে থাকে।ওই বা কি করতো? কাউকে ভালো না বেসেও কি তার সাথে রিলেশনে যাওয়া ঠিক?তাতে তো সেই মানুষটাকে ঠকানো হয়।
সাঈফা ফোপাতে ফোপাতে বললো
“আমি কি এমন অন্যায় করেছি,যার জন্য আল্লাহ আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলো?আমি তো সবসময় নামাজ পড়ে মোনাজাতে শুধু একটা মানুষকেই আমার জিবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছি।তাহলে আল্লাহ কেনো আমার ভাগ্যে তার নাম লিখলো না।আমি এখন বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি,,এখন সবসময় শুধু একটা জিনিসই চাই,সবাইকে ঝামেলা থেকে মুক্ত করে দিয়ে যেনো একটা শান্তির ঘুম দিতে পাড়ি।”
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহির সাঈফার বাহু ছেড়ে দিয়ে ওকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারলো।চড়টা খেয়ে সাঈফা ফ্লোরে উপুর হয়ে পড়ে গেলো।এমনিতেই সারা দিন ফাংশনে কাজ করতে গিয়ে ওর উপর দিয়ে এতো ধকল গেছে, তার উপড়ে রাতেও কিছু খাওয়া হয়নি,তারপর সাঈফা ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে তাই ঘুমানোর আগে অনেকক্ষন কেদেছে।সব মিলিয়ে ওর শরীর প্রচন্ড দূর্বল ছিলো তাই থাপ্পড় টা খেয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি।মিহির সাঈফার বাহু দরে টেনে তুলে দাড় করিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“আরেকবার যদি মরার কথা বলেছিস তো তোকে আমি নিজের হাতে খুন করবো বলে দিলাম।”
সাঈফা মিহিরকে ধাক্কা দিলো,,মিহির অচমকা ধাক্কার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তাই দুই কদম পিছিয়ে গেলো।সাঈফা ঝাঝালো গলায় বললো
“একদম দরদ দেখাতে আসবেন না।আমি মরে যাই বা বেচে থাকি তাতে আপনার কি?”
মিহির কটমট চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো
“তুই মরে,পচে,গলে গেলেও আমার কিচ্ছু আসে যায় নাহ।আর তোর মতো মেয়ের উপরে দরদ দেখবো আমি?হুহ এই স্বপ্ন জিবনেও দেখিস না!আর,,,,,,,”
মিহির আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঈফা গিয়ে মিহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“প্লিজ এমন কিছু বলবেন না যাতে আরো কয়েকটা দিন বেচে থাকার ইচ্ছেটাও হাড়িয়ে ফেলি।আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না,,আপনার এই কথা কথা গুলো শুনলে আমার কতোটা কষ্ট হয়।আমি জানি আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না।তাও আমার সামনে এভাবে বলবেন না প্লিজ,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”
মিহির ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।ও ভাবতেও পারেনি সাঈফা ওকে এভাবে এসে জড়িয়ে ধরবে।হঠাৎ করেই ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করতে লাগলো।মনে হচ্ছে এখনি লাফ দিয়ে বাইরে চলে আসবে।কই এর আগে তো কখনো সাঈফার বা কোনো মেয়ের এতোটা কাছে আসাতে এমন অদ্ভুত অনূভুতি হয়নি।হঠাৎ করেই তাহলে আজকে কেনো এমন হচ্ছে।
________________________
ডাইনিং টেবিলে লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মেঘ।ওর বিপরীত পাশের চেয়ারটায় সোজাসুজি বসে আছে আহান।আহানের দৃষ্টি মেঘের দিকে স্থির।আহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।ওর গাল দুটো টমেটো সসের মতো লাল হয়ে গেছে।ওর ঠোটের কোনে লজ্জা মিশ্রিত হাসি।
তখন একজন সার্ভেন্ট এসে দরজায় নক করায় দুজনই ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে।এতোক্ষন কি করেছে সেটা ভেবেই মেঘ লজ্জায় মাথা নিচু করে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মেঘ অনেকক্ষন শুধু শুধু ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে বসেছিলো।আহানের সমানে আসবে না এইজন্য।তারপর আহানের ধমক খেয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।বের হওয়ার পর থেকে লজ্জায় আহানের দিকে একবারও তাকায়নি।
সামান্য একটা কিস এর জন্যও যে কেউ এতোটা লজ্জা পেতে পারে সেটা মেঘকে না দেখলে আহান জানতেই পারতো না।মেঘকে এতোটা লজ্জা পেতে দেখে আহান মেঘের দিক থেকে চোখ সড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
দুইজন মহিলা সার্ভেন্ট কিচেন থেকে ফুড ট্রলিতে করে খাবার এনে একে একে টেবিলে সাজিয়ে রেখে মেঘ আর আহানকে পরিবেশন করতে লাগলো।আহান মেঘকে নরমাল করার জন্য হালকা একটু গলা খাকানি দিয়ে বললো
“মেঘ খাওয়া শুরু করো।”
মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে, চামচ উঠিয়ে এক বাইট মুখের কাছে নিয়েও আবার কিছু একটা ভেবে নামিয়ে রাখলো।তারপর মহিলা সার্ভেন্ট দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো
“আপনার ডিনার করবেন না?”
একজন মহিলা সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বললো
“জ্বি ম্যাম,,আপনারা খেয়ে নিন তারপর আমরা খাবো।”
মেঘ নাক কুচকে মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ বের করে বললো
“উফফ আমাকে একদম ম্যাম বলবেন না।আমার সুন্দর একটা নাম আছে মেঘ।আমাকে সবাই ওই নামেই ডাকে।আপনারাও আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন।আর পরে কেনো খাবেন?এতো বড় ডাইনিং টেবিল,,পচিশজন লোক চোখ বন্ধ করে খাওয়ানো যাবে।সেখানে আমরা মাএ দুজন বসে খাচ্ছি।বাকি চেয়ার গুলো খালী পড়ে আছে তাহলে আপনারা কেনো পড়ে খাবেন?”
আহান মেঘের কথা শুনে মুচকি হাসলো ও জানতো মেঘ এমন কিছুই একটা বলবে।মহিলা দুজন অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজের লোকের সাথে কাউকে এতোটা সুন্দর ব্যাবহার করতে ওনারা প্রথম বার দেখছে।
মেঘ ওনাদের দিকে তাকিয়ে একটু শাসনের স্বরে বললো
“কি হলো আপনারা এখোনো দাড়িয়ে আছেন কেনো?এক্ষুনি আমাদের সাথে বসে পড়ুন আর কিচেনে যারা আছে তাদেরকেও ডেকে নিয়ে আসুন।”
মহিলা দুজন কি করবে বুঝতে না পেরে আহানের দিকে তাকালো।আহান মুচকি হেসে বললো
“সবাইকে ডেকে নিয়ে আসুন।ম্যাডাম যখন একবার আদেশ করেছেন,ম্যাড্যামের কথা তো আর ফেলতে পাড়ি না।ম্যাড্যাম যা আদেশ করবে আমাদের তাই করতে হবে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।মহিলা দুজন মৃদু হেসে কিচেনে বাকিদের ডাকতে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ওনারা আর চার পাচ জনকে সাথে করে নিয়ে আসলেন।সবাই একসাথে ডিনার করতে বসে পড়লো।
আহান শুধু মুচকি মুচকি হাসছে আর মেঘের কান্ড দেখছে।মেঘ সবার সাথে ননষ্টপ বকবক করেই যাচ্ছে আর ওনারাও সবাই মেঘের সাথে দারুন ভাবে মিশে গেছে।মেঘকে ওনাদের খুব ভালো লেগেছে।আজকাল এতোটা মিশুকে সভাবের মেয়ে লাখে একটা খুজলেও পাওয়া যায় না।
আর ওনারা সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছেন আহানকে দেখে।কারন আহান সবসময়ই সিরিয়াস আর রাগি মুডে থাকে কিন্তু এখন শুধু ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে আছে।যেটা ওনারা খুব একটা দেখতে পাননি বললেই চলে।আহান মাঝে মাঝে যতোটুকু হাসে সেটা হচ্ছে বাকা হাসি এই রকম অমায়িক মুচকি হাসি হাসতে আহানকে কখনো দেখা যায় না।
খাওয়া দাওয়া শেষে মেঘ আর আহান ছাড়া সবাই উঠে গিয়ে নিজেদের কাজ করতে লাগলো।আহান চেয়ার ঠেলে উঠে দাড়াতেই মেঘ একটু ইতস্তত করে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।”
মেঘের কথায় আহান ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকালো কারন মেঘকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও সিরিয়াস কোনো কথা বলবে।আহান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
“হুমম বলো।”
মেঘ কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচু স্বরে বললো
“দেখুন আমি এখানে থাকতে চাইনা প্লিজ।আমি বাসায় যেতে চাই। আমি জানি,,এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে আমি যদি সবচেয়ে কারো কাছে নিরাপদ থেকে থাকি সেটা হচ্ছেন আপনি।সেটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।বাট আমরা যেই সমাজে থাকি।সেখানে থাকতে গেলে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।এখানে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের বিয়ের আগে এভাবে এক বাড়িতে থাকাটা সবাই খারাপ ভাবে নিবে।সবাই আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলবে, আমাকে বাজে মেয়ে বলবে,এইগুলো আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।একবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছি,অন্যায় না করেও শাস্তি পেয়েছি।এইবার আর কারো কটু কথা সহ্য করতে পারবো না।আশা করি আপনি আমার সিচুয়েশন টা বুঝবেন।আপনি না চাইলে আমি এখান থেকে জিবনেও বেরোতে পারবো না।হাত জোড় করছি আমার উপর একটু দয়া করুন।”
আহান একটু মলিন হেসে বললো
“এভাবে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো।একটু ওয়েট করো আমি গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি।”
বলেই আহান আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাড়িয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।মেঘের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।ও জানে আহান অনেক হার্ট হয়েছে।কিন্তু মেঘেরও কিচ্ছু করার নেই।যাই হয়ে যাক ও আহানের সাথে এখানে থাকতে পারবে না।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ36_বোনাস_পর্ব
(রুদ্ধশ্বাস)
আহীর সাড়িকার পা থেকে কাচ তুলে অ্যান্টিস্যাপ্টিক লাগাতেই সাড়িকার ঘুম ভেঙে গেলো।ওর পা টা ভীষন জ্বলছে।শুধু পা নয় সারা সরীরেই অসম্ভব জ্বালা করছে।ও পিট পিট করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলো,আহীর ওর পায়ের কাছে বেডের উপর বসে মাথাটা একটু নিচু করে ওর পায়ে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।আহীর কে এতো রাতে এখানে দেখেও সাড়িকা একটু চমকালো না।কারন ও আগে থেকেই জানতো আহীর এখানে আসবে।আহীরের সাথে এ যাবৎ যতোবার ঝগরা মারামারির জন্য ওর ব্যাথ্যা লেগেছে ততোবার আহীর এভাবে চুপিচুপি এসে,হয় ওকে এভাবে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে গেছে,নাহলে চকলেট,আইসক্রিম,চিপস এসব কিনে দিয়ে রাগ ভাঙিয়ে গেছে।আহীরের এরকম কাজ গুলো সাড়িকার সবসময়ই আদিক্ষেতা লাগে।কারন প্রথমে তো নিজেই আঘাত করবে তার উপর আবার আসবে ন্যাক্যামো করে ঔষধ খাওয়াতে।
আহীরকে দেখতেই সাড়িকার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।বারবার ষ্টেজে ঘটা ঘটনাটা মাথার মধ্যে ঘুড়তে লাগলো।ও রাগে ফোস ফোস করতে করতে শোয়া থেকে উঠে বসে,হঠাৎ করেই আহীরের ব্যাক সাইডে দিলো এক লাথি।আচমকা এমন অ্যাট্যাকের জন্য আহির মোটেও প্রস্তুত ছিলো না,তাই এতো জোড়ে লাথি মারায় বেচারা ফাষ্ট-এইড বক্সসহ বেড থেকে ধরাম করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
ঠিক তখনই বাইর থেকে দরজা ঠেলে মিহির আর সাঈফা রুমে প্রবেশ করলো।ভিতরে ঢুকেই আহীরকে ওভাবে নিচে বসে থাকতে দেখে দুজন কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে আহীরের দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলো।
আহীর বসা থেকে দাড়িয়ে সাড়িকার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
“ওই তুই আমাকে লাথি দিয়ে কেনো ফেলে দিলি?”
সাড়িকা দাতে দাত চেপে বললো
“তুই আমার রুমে আমারই বেডে বসে কি করছিলি?”
“কেনো?তুই কি রাত কানা?চোখে দেখিসনি কি করছিলাম?তোর পায়ে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছিলাম।”
“না আমি রাত কানা নই।আমার চোখ ঠিকই আছে।কিন্তু তুই আমার পায়ে কোন সাহসে হাত লাগিয়ে ছিলি?”
“আজব হাত না লাগালে মেডিসিন দিবো কিভাবে!”
সাড়িকা ঝাড়ি মেরে বললো
“তোকে মেডিসিন লাগাতে কে বলেছে?নিজে আঘাত করে আবার নিজেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে আসিস?আর তুই আমাদের বাড়িতে কোন সাহসে এসেছিস?যাহ এক্ষুনি বের হ আমাদের বাড়ি থেকে,নাহলে বড় আব্বু আর বাবাইকে বলে তোদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।
“আচ্ছা,তাই নাকি!তো যাহ এক্ষুনি গিয়ে তোর বাবা কাকাকে সবটা বল,আমিও দেখি ওনারা আমাদের কি করতে পারে?”
সাড়িকা খাট থেকে নামতে নামতে বললো
“দাড়া এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে সবটা বলে দিবো ”
সাড়িকা খাট থেকে নেমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা দিতেই আহীর সাড়িকার হাত ধরে এক টান দিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিলো।তারপর সাড়িকার দিকে তাকিয়ে শাসানোর স্বরে বললো
“এই রুম থেকে যদি এক পাও বাইরে বের হয়েছিস তাহলে তোর হাত পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে আসবো।বুঝেছিস?”
মিহির আর সাঈফা এতোক্ষন নিলিপ্ত ভঙ্গিতে দরজার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সাড়িকা আর আহীরের ঝগরা দেখছিলো।এসবে এখন ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।আগে ওরা দুজনকে থামানোর চেষ্টা করতো বাট এখন করে নাহ।কারন আগে যতোবারই এদের থামাতে গেছে ততোবারই মাঝখান থেকে ওরা মার খেয়ে ফিরে এসেছে।তাই ওরা এখন শুধু নিরব দর্শকের মতো সবটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে। না ঝগরা থামাতে যায়,আর না ওদের কথার মাঝে কোনো কমেন্ট করতে যায়।
আহীর আর সাড়িকার কথা কাটাকাটির মাঝেই হঠাৎ করেই আহীর আর মিহিরের ফোনে টুং করে কিছু একটার নোটিফিকেশন আসে।এতো রাতে এভাবে দুজনের ফোন একসাথে নোটিফিকেশন আসায় দুইজনেই বেশ অবাক হয়।
আহীর ঝগরা থামিয়ে ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখে আহানের আইডি থেকে একটা ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়েছে।আহীর অবাক হয়ে মেসেজটার দিকে একবার তাকিয়ে মিহিরের দিকে তাকায়।দেখে মিহিরও অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওরা বুঝতেই পারছে না,আহান হঠাৎ এতো রাতে ভয়েজ মেসেজ কেনো পাঠালো!ওরা দুজন তাড়াতাড়ি করে ভয়েজ মেসেজ টা ওপেন করতেই আহানের কন্ঠ শুনতে পেলো।আহান ভাঙা গলায় ব্যাথ্যায় কুকিয়ে উঠা স্বরে বলছে
“আ-আমাদের উপরে অ্যা-অ্যাট্যাক করা হয়েছে।ওরা দলে প্রায় বিশ পচিশ জন আছে।সবাই আমাদের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করছে।তোরা তাড়াতাড়ি আমার ফোনের লোকেশন ট্রেস করে আমাদের কাছে আসার চেষ্টা কর।আমার একহাতে গুলি লেগেছে। সাথে গার্ড,ড্রাইবার কিচ্ছু নেই।মেঘও ভিষন ভয় পেয়েছে।আমার যা হয় হোক তোরা এসে ওকে নিয়ে যাহ প্লিজ।আমার মেঘের গায়ে যেনো একটা আচও না লাগে। ইনশাআল্লাহ আমি যতোক্ষন বেচে আছি ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দিবো না।”
ভয়েজ মেসেজটা শুনে ওদের চার জনের পৃথীবি থমকে গেলো।আহীর মিহির ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলো।সাড়িকা সাঈফা হাউমাউ করে কেদে দিলো।ওদের কান্নার শব্দ কানে আসতেই আহীর মিহিরের হুস ফিরে আসলো।ওরা আর এক মুহূর্তও দেরি না করে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সিড়ির সামনে এসে যখনই সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনই দেখলো হিয়ান হাতে গান নিয়ে দ্রুত এদিকেই দৌড়ে আসছে।
ওদের দেখে হিয়ান দাড়িয়ে গিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“তোরা এতো রাতে এখানে কি করছিস?”
মিহির সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে নামতে বললো
“পড়ে বলবো,এখন হাতে একদম সময় নেই, ব্রোর উপরে অ্যাট্যাক হয়েছে।”
হিয়ানও ওদের পিছনে দৌড়ে নামতে নামতে বললো
“হ্যা আমার কাছে একটু আগেই আহানের ভয়েজ মেসেজ এসেছিলো।কোন বাষ্টর্ডের বাচ্চারা এতো বড় স্পর্ধা টা দেখিয়েছে,একবার জানতে পারি সব গুলোকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”
বলেই ওরা তিনজনই বাসার মেইন গেটের দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।ছাহীর অবাক হয়ে ওদের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ও দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।
ছাহীর বাইরে এসে দেখলো হিয়ান আহীর আর মিহির তিনজন তিনটা আলাদা আলাদা গাড়ি আর সাথে কিছু গার্ডস নিয়ে অলরেডি বেড়িয়ে গেছে।ওদের এভাবে যেতে দেখে ছাহীর ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।বেশ বড় সড় কোনো প্রভলেম হয়েছে।ও দ্রুত বাসার ভিতরে এসে দৌড়ে সাড়িকা সাঈফার রুমে গেলো।গিয়ে দেখলো সাড়িকা বেডের উপর বষে আর সাঈফা ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাদছে।ও গিয়ে সাঈফা পাশে হাটু গেড়ে বসে সাঈফাকে জড়িয়ে ধরে বললো
“আপি এভাবে কাদছিস কেনো?”
সাঈফা অসফুট স্বরে বললো
“আহান ভাঈয়া আর মেঘ আপির উপরে অ্যাট্যাক হয়েছে।ভাইয়ার গুলি লেগেছে।”
গুলি লেগেছে কথাটা শুনতেই ছাহীরের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।ওর ধপ করে ওখানে ফ্লোরের উপরে বসে পড়লো।
এইদিকে সাঈফার বাবা এতোরাতে তিনটা গাড়ি বাইরে যেতে দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন।তখনই ওনার কানে সাড়িকা সাঈফার কান্নার শব্দ ভেষে এলো।উনি দ্রুত পায়ে দৌড়ে ওদের রুমের দিকে গেলেন।গিয়ে ওদের তিনজনের এমন অবস্থা দেখে চমকে উঠলেন।ওদের কান্না শুনে একে একে ওদের মা,হিয়ানের মা-বাবা সবাই ঘুম থেক জেগে গেলেন।ওনারা দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে ওদের রুমের এসে ওদের কাছ থেকে সবটা জানতে পারে।হিয়ানের বাবা আর কাকা নিচে গিয়ে দ্রুত আহাদ খান,মোনা খান,মিড়া রহমান,আজম রহমানকে ফোন করে সবটা জানিয়ে, ওনারাও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন।
_________________________
মেঘ আহানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।আহান গুলি লাগা হাতটা দিয়ে মেঘকে জড়িয়ে রেখেছে আর ভালো হাত টা দিয়ে ড্রাইভিং করছে।আহানের যে হাতে গুলি লেগেছে সেই হাতটা মেঘের ওরনা দিয়ে শক্ত করে বাধা।তবুও রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না,,রক্ত পড়তে পড়তে মেঘের গায়ে পড়ে থাকা জামাটা পুরো লাল হয়ে গেছে।আহান অনেক কষ্টে ক্ষত হাতটা মেঘের মাথার উপর রেখে বললো
“মেঘ পড়ি কেদো না প্লিজ।আমি তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না।ভয় পেও না, আমি আছিতো।আমি যতোক্ষন বেচে আছি ততোক্ষন ওরা তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না।শুধু কিছুটা সময় ধৈর্য্য ধরো,আহীর,মিহির,হিয়ান, অভি ওরা হয়তো কাছাকাছি এসেও পড়েছে।ওরা আসলেই তোমাকে ওদের কাছে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হবো।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলো।নীজের হাতে গুলি লেগেছে, তাও এই লোকটা নিজের কথা না ভেবে এখোনো শুধুমাএ ওর কথাই ভাবছে।আর ও কি করেছে, কয়েকটা মানুষের বাজে কথা শোনার ভয়ে এতো রাতে এই মানুষটাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।কেনো ও এতো রাতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য জেদ করলো?কেনো কোনো গার্ড ছাড়া আহানের সাথে আসতে রাজি হয়ে গেলো?আজকে রাতটা আহানের বাড়িতে থাকলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো ওর?
আজকে মেঘের নিজেকে খুব সার্থপর মনে হচ্ছে।নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।মেঘ আহানের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমি খুব খারাপ তাইনা?একদম সার্থপর বাজে একটা মেয়ে।সব সময় আপনাকে কষ্ট দেই।আজকে আমার জন্য আপনার এই অবস্থা।গুলিটা আপনার না লেগে আমার লাগা উচিত ছিলো।আমার মতো সার্থপর মানূষের বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
মেঘের কথা শুনে এতোক্ষন আহানের ব্যাথ্যায় কুচকে থাকা চেহারাটা রাগে লাল হয়ে গেলো।ও মেঘের দিকে হিংস্র বাঘের মতো তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“মেঘ উল্টোপাল্টা কথা বলা বন্ধ করো।তুমি যদি এখন এইসব কথা বলো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।ভেবো না হাতে একটা সামান্য গুলি লেগেছে বলে আমি তোমার কিচ্ছু করতে পারবো না।যতো যাই হোক আমি আগেও যেমন ছিলাম এখোনো সেই রকমই আছি।শুধুমাএ তুমি সাথে আছো বলে বাষ্টার্ড গুলোকে কিছু করতে পারছি না।তোমাকে সেইভ রাখার জন্য আমাকে পালাতে হচ্ছে।নাহলে ওদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিতাম আহান খান আসলে কি জিনিস! কাওয়ার্ডের দল কতো গুলো, এতোজন এসেও একটা মানুষকে সামনা সামনি অ্যাট্যাক করার সাহস পেলো না,পিছন থেকে শুট করলো।এরা নাকি আবার গ্যাংষ্টার হুহ।”
_____________
ফ্লাসব্যাক
মেঘ বাসায় যাবে বলার সাথে সাথে আহান উপর থেকে চাবি নিয়ে এসে মেঘকে নিয়ে এসে মেঘকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।মেঘ গার্ড নেওয়া পছন্দ করে না তাই আহান সাথে কোনো গার্ডও নেয়নি।ওরা কিছু দূর আসতেই হঠাৎ আহানের চোখে পড়ে হাই ওয়ের পাশেই একটা আইসক্রিম পার্লার খোলা আছে।মেঘ আইসক্রিম পছন্দ করে তাই আহান গাড়িটা এক সাইডে দাড় করিয়ে মেঘকে একটু বসতে বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর আইসক্রিম পার্লারের মধ্যে ঢুকে মেঘের জন্য এক বক্স চকলেট ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে পার্লার থেকে বের হয়ে যখনই গাড়ির দিকে আসতে যাবে তখনই ওর হাতে একটা গুড়ি এসে লাগলো।
সাথে সাথে ওর হাতে থাকা আইসক্রিম টা নিচে পড়ে গেলো।আহান পিছনে তাকিয়ে দেখলো চারটা গাড়ি ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।আর গাড়ির মধ্যে থাকা লোকেরা ননষ্টপ আহানের দিকে গুলি ছুড়ে যাচ্ছে।আহান দ্রুত দৌড়ে গাড়ির কাছে আসলো, কিন্তু দৌড়ে আসতে আসতে আরেকটা গুলি এসে আহানের পেটের এক সাইডে লাগলো।গুলিটা লাগার সাথে সাথে ও মুখ থুবরে ওর গাড়িটার দরজার সাইডে এসে পড়লো।ব্যাথ্যার ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হতে লাগলো।তখনই হঠাৎ আহানের চোখ গেলো মেঘের উপর।মেঘ জোড়ে জোড়ে গাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।আহান যাওয়ার আগে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চাবিটা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো।
মেঘকে দেখে আহানের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়তে লাগলো,যাই হয়ে যাক ওকে মেঘকে বাচাতে হবে।ও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে গায়ে পড়ে থাকা কালো জ্যাকেটের চেইন টা গলা অবদি লাগিয়ে দিলো।যাতে মেঘ পেটে লাগা গুলিটা দেখতে না পারে।তারপর নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে গাড়ির মধ্যে ঢুকে গাড়ি ষ্টার্ড দিলো।
আহানের এমন অবস্থা দেখে মেঘ হাউমাউ করে দিলো। ওর গায়ে জড়ানো থাকা ওড়নাটা দিয়ে দ্রুত আহানের হাত বেধে দিলো।আহানের এতো কষ্ট হওয়া শর্তেও মেঘকে ওর জন্য এভাবে কাদতে দেখে ওর ঠোটের কোনে এক চিলতে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।
আহান চেয়েছিলো ওদের সাথে কোনো ঝামেলা না করে দ্রুত ড্রাইব করে মেঘকে নিয়ে কোথাও একটা সেইভ জায়গায় চলে যাবে।কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না।ওরা কিছু দূর আসতেই এক এক করে আরো তিনটা গাড়ি ওদের সাথে এসে যোগ হলো। টোটাল সাতটা গাড়ি বারবার এদিক সেদিকের রাস্তা থেকে ঢুকে আহানের গাড়ির সামনে এসে ওদের থামানোর চেষ্টা করছে।আহান ভালো করেই বুঝতে পারছে এরা বেশ আটঘাট নেমেই এসেছে তাই ও আর কোনো উপায় না পেয়ে আহির, মিহির,হিয়ান, অভি কে ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছে।
________________
বতর্মান
মেঘ দেখলো আহান ওকে জড়িয়ে ধরে রাখায় আহানের ড্রাইভিং করতে কষ্ট হচ্ছে তাই ও আহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে নিজের সিটের সাথে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।বসার কিছুক্ষনের মধ্যেই দুই সাইডের দুই রোড থেকে দুইটা গাড়ি এসে আহানের গাড়িকে ধাক্কা মারলো সাথে সাথে গাড়ির জানালায় থাকা কাচ গুলো ঝরঝর করে ভেঙে আহানের আর মেঘের সাড়া শরীরে গেথে গেলো।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে মেঘ পড়ি বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।
মেঘের সারা শরীরে সুচের মতো করে কাচ গেথে আছে।আহান আবার দ্রুত মেঘকে টেনে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো,কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না। ওদের গাড়ির ভাঙা জানালা দিয়ে ওই লোকেরা বার বার গুলি ছুড়তে লাগলো।আহান কোনো উপায় না পেয়ে মেঘের মাথাটা বুক থেকে সড়িয়ে নিচে হাটুর উপর নামিয়ে রেখে গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু তাতে আর কোনো লাভ হলো না, ওদের ছোড়া আরেকটা বুলেট এসে সোজা আহানের বুকে লাগলো।ধীরে ধীরে আহানের গাড়ি ব্যালেন্সলেস হয়ে গেলো।ও নিজেও আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়লো।
মেঘ ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।ওর ভয়ে আবার প্যানিক অ্যাট্যাক হয়েছে।যেমনটা চার বছর আগে হয়েছিলো মিহিরকে চোখের সামনে গুলি খেতে দেখে।ও টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে।আহানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।নিজেকে আজকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর।ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে এভাবে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ওর দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।যার গায়ে এই চার বছরে একটা আচর অবদি লাগতে দেয়নি তার শরীর থেকে আজকে রক্ত ঝরছে।আহান অনেক কষ্টে মেঘের মাথাটা উপরে উঠিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো
“আই অ্যাম সরি মেঘ পড়ি।আমি তোমাকে সেইভ করতে পারিনি।দেখো তোমার গায়ে কতোটা আঘাত লেগেছে কিন্তু আমার শুধু দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।”
মেঘ আহানকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাইছে কিন্তু পারছে না।ওর শরীর অবষ হয়ে আছে। যেমনটা একজন প্যারেলাইসড রোগির হয় তেমনটা।ও সব শুনতে পারছে বুঝতে পারছে কিন্তু হাত পা নাড়াতে পারছে না।ও জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে হয়তো আর একটু পরই ওর শ্বাস টা বন্ধ হয়ে যাবে। আহান মেঘের কপালে একটা চুমু খেয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“আই লাভ ইউ!আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।এই তিন শব্দের কথাটা বলার জন্য আমি এতোগুলো বছর অপেক্ষা করেছি।চেয়েছি দুনিয়ার সবচেয়ে স্পেশাল ভাবে তোমাকে প্রপোজ করতে কিন্তু তা বোধহায় আর হলো না।আল্লাহ বোধহয় তোমাকে আমার নসীবে লেখেননি।তুমি খুব ভালো থেকো মেঘ পড়ি।আমি নাহয় দূর থেকে তোমার হাসি মুখটা দেখে খুশী থাকবো।সবাই তো আর নিজের ভালোবাসা পায় না।আমার ভালোবাসা টাও নাহয় অপূর্ন থেকে যাক।দোয়া করি তোমার স্মৃতি থেকে আহান নামক ব্যাক্তিটির সব চিহ্ন মুছে যাক।তুমি ভুলে যাও তোমার জিবনে আহান নামের কারো অস্তিত্ব ছিলো।তুমি সব সময় ভালো থেকো।”
বলেই আহান মেঘের গালে কপালে মাথায় অনবরতো চুমু দিতে লাগলো।মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আহানকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায় ও আজ অক্ষম হয়ে গেছে।চাইলেও এই মানুষটা কে ও আজ ছুতে পারবে না।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা ম্লানো হাসি দিয়ে বললো
“আমি আমার জিবন দিয়ে হলেও তোমাকে বাচানোর একটা শেষ চেষ্টা করবো।”
বলেই আহান ওর গাড়িটা রাস্তার এক সাইডে নিয়ে এসে মেঘের পাশের দরজা খুলে মেঘের মাথায় একটা চুমু খেয়ে বললো
“লাভ ইউ জান,সব সময় ভালো থেকো।”
বলেই মেঘকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিলো সাথে আহান নিজের ফোনটাও মেঘের পাশে ছুড়ে মারলো।যাতে মিহিররা ওর লোকেশন ট্রেস করতে পারে।মেঘ গিয়ে রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা পাতার মধ্যে পড়লো আর ওর শরীর পাতা দিয়ে ঢেকে গেলো।আহান চোখের পানিটা মুছে গাড়িরা স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো সাথে সাথে তিন দিক থেকে তিনটা গাড়ি এসে আহানের গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার অপর পাশের খাদে ফেলে দিলো।গাড়িটা পড়ার সাথে সাথে ঠাস করে একটা ব্লাষ্ট হলো। মেঘ নিভু নিভু চোখে দেখলো খাদ থেকে সেই আগুনের ঝলকানি উপরে উঠে চারপাশটা আলোকিত হয়ে গেছে।ও আর চোখ খোলা রাখতে পারলো না,আস্তে করে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।
চলবে,,,,,,
চলবে,,,,,,,,