ভালোবাসার অনুভূতি পর্ব -৬১+৬২

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ61

আজ চারদিন ধরে নিজেকে রুম বন্ধি করে রেখেছে মেঘ।ওর নিজেকে কেমন জ‍্যান্ত লাশ মনে হচ্ছে।সেদিন রাতে ‘ও’ ছাদ থেকে নিচে নেমে দেখে রিয়ান,হিয়ান,অভি,আহির,মিহির ওরা সবাই আহান কে খুজতে যাওয়ার জন‍্য বের হচ্ছে।মেঘ ওদের কথা শুনে বুঝতে পারে আহান ছাদ থেকে নেমে তখনই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে।মেঘকে নামতে দেখে মিহির ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সোজা বাড়িতে নিয়ে আসে।বাড়িতে আসার পর মেঘ ওর রুমে চলে আসে।সেদিন যে রুমে ঢুকেছে তারপর ‘ও’ আর রুম থেকে বের হয়নি।সার্ভেন্ট এসে সময় মতো ওকে খাবার দিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু মেঘ এক বেলাও ঠিক করে খাবার টা খায় না।কোনো রকম ঔষধ খাওয়ার জন‍্যে একটু খানি খায়।সারাদিন বেডের এক কোনায় শুয়ে শুয়ে আহানের কথা ভেবে কান্না করে।মাঝে মাঝে কান্না করতে করতে যখন ওর মাথায় ভয়ংকর যন্থনা উঠে তখন ‘ও’ বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে চিল্লিয়ে কান্না করে।তবে মুখে বালিশ চেপে ধরায় সেই কান্নার শব্দ কারো কানে গিয়েই পৌছায় না।

মেঘ আনশোয়া হয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফোনের গ‍্যাল‍্যারিতে আহানের কিছু পিক দেখছিলো।তখনই ওর রুমের দরজায় কেউ এসে নক করলো।মেঘ ভাবলো সার্ভেন্ট হয়তো খাবার নিয়ে এসেছে।তাই ‘ও’ ফোনটা বিছানায় রেখে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজাটা খুলতেই ‘ও’ অবাক হলো।কারন ওর সামনে হিয়ান দাড়িয়ে আছে।হিয়ানের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়ান মেঘকে সাইড করে গটগট করে রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা লক করে দিলো।দরজা লক করতে দেখে মেঘের ভ্রু কুচকে এলো।হিয়ান মেঘের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বললো

“এতো কিছু করার পরেও তুই রুমে ঢুকে এভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস?লাষ্ট চারদিন ধরে আমরা প্রত‍্যেকটা মানুষ আহান কে পাগলের মতো খুজে চলেছি।আর তুই?তোর তো আহান মরে গেছে নাকি বেচে আছে সেটা নিয়েও কোনো মাথা ব‍্যাথ‍্যাই নেই।কি সুন্দর নিজের রুমে বসে আড়ামচে খাচ্ছিস,ঘুমাচ্ছিস।একটা বারও ভাবছিস না,তোর থেকে এতোবড় আঘাত পাওয়ার পর ওই ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে?”

হিয়ানের কথা শুনে মেঘ বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো।তারপর কাপাকাপা কন্ঠে বললো

“আহান ভাইয়াকে চারদিন ধরে খুজে চলেছো মানে?ভাইয়া এখন কোথায় আছে?”

হিয়ান শক্ত কন্ঠে বললো

“জানিনা কোথায় আছে।তবে বাংলাদেশে নেই।অন‍্য কোনো কান্টিরিতে চলে গেছে।ওর ফোনটাও বন্ধ।”

কথাটা শুনে মেঘ ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।ওর মাথাটা কেমন খালি খালি লাগছে।’ও’ ভাবতেই পারেনি আহান কাউকে কিছু না বলে এভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।হিয়ান আবারও বললো

“চারদিন ধরে আমরা সবাই হন্নে হয়ে ওকে খুজে চলেছি।আমাদের যতো সোর্স ছিলো সবাইকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।কিন্তু সেদিন ফার্ম হাউজ থেকে বের হওয়ার পর ওকে আর কেউ দেখেনি।একটু আগে ওর পি.এ. জানালো ‘ও’ নাকি দেশ ছেড়েই চলে গেছে।কোথায় গেছে কাউকে কিচ্ছু জানায়নি।”

হিয়ানের কথা শেষ হতেই মেঘ হাউমাউ করে কেদে দিলো।মেঘকে কাদতে দেখে হিয়ান অবাক হলো।’ও’ ভাবতে পারেনি আহানের যাওয়ার খবর শুনে মেঘ কাদবে।হিয়ান অবাক হলেও ওর মন একটুও নরম হলো না।’ও’ বিদ্রুপের স্বরে বললো

“কাদছিস কেনো?তোর তো খুশী হওয়ার কথা।তুই তো এটাই চেয়েছিলি যাতে আহান তোর থেকে দূরে চলে যায়।আর তুই তোর নিউ বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারিস।”

মেঘ কাদতে কাদতে চিল্লিয়ে বললো

“নাহ,আমি কক্ষনো চাইনি ওনি আমার থেকে দূরে চলে যাক।আমি তো সারা জিবন ওনার সাথেই থাকতে চেয়ে ছিলাম।”

হিয়ান দাতে দাত চেপে বললো

“তোর এই ন‍্যাক‍্যামো গুলো এখন একটু বাদ দে প্লিজ।এসব এখন আমার আর সহ‍্য হচ্ছে না।এতোই যখন সাথে থাকতে চেয়েছিলি তাহলে অন‍্য ছেলের সাথে রিলেশনে গেলি কেনো?আহান কে এভাবে ঠকালি কেনো?”

মেঘ আগের থেকেও আরো জোড়ে চেচিয়ে বললো

“আমি কোনো রিলেশনে যাইনি।কাউকে ঠকাইনি।আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে।তাই এসব নাটক করতে বাধ‍্য হয়েছি।”

মেঘের কথাটা কানে আসার সাথে সাথে হিয়ান দু-কদম পিছিয়ে গেলো।তারপর কাপাকাপা কন্ঠে বললো

“কি বলছিস এসব?তোর ব্রেন টিউমার আসবে কোথা থেকে?তুই নিজের দোষ ঢাকার জন‍্যে আমাকে মিথ‍্যা বলছিস তাইনা?আমি জানি তুই আমাকে মিথ‍্যা বলছিস।”

হিয়ানের কথা শুনে মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো।তারপর ফ্লোর থেকে উঠে টেষ্টের সব রিপোর্ট গুলো হিয়ান কে দেখালো।সব রিপোর্ট দেখার পর হিয়ান বাকশূন‍্য হয়ে গেলো।ওরা সবাই মিলে মেঘকে কতো কিছু বলেছে অথচ কেউ একটা বারও মেঘের এতো বড় সমস‍্যা টা আন্দাজ করতে পারেনি।

হিয়ান কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে মেঘকে বললো ‘ও’ সবাইকে সবটা জানিয়ে দিবে।কিন্তু মেঘ অনেক কষ্টে হিয়ান কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাউকে কিছু বলতে বারন করলো।হিয়ান প্রথমে রাজি না হলেও পরে মেঘের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।মেঘ বলেছিলো ‘ও’ যেদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে সেদিন ‘ও’ নিজে সবাইকে সব সত‍্যিটা জানাবে।

তার এক সপ্তাহ পর মেঘ বাসার সবাইকে জানায় ‘ও’ আর এই বাসায় থাকতে চায় না।ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে অন‍্য আলাদা একটা বাসায় থাকতে চায়।সবাই মেঘের কথা শুনে সাফ সাফ মানা করে দেয়।কিন্তু মেঘ কারো কোনো কথায় পাএা না দিয়ে সবার সাথে মিসবিহেব করে বাসা থেকে বের হয়ে আসে।কারন এখানে থাকলে ওর অসুস্থতার কথা সবাই জেনে যেতো।

বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই মেঘ নিউ জব আর ফ্লাটের ব‍্যাবস্থা করেছিলো।’ও’ বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে নিজের ফ্লাটে উঠে।কিছু দিন পর অফিসও জয়েন করে।প্রথম প্রথম ওর কাজ গুলো বুঝতে একটু সমস‍্যা হতো।ধীরে ধীরে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।অফিস জয়েন করার এক মাস পর মেঘ ওর ভার্ষিটি চেইঞ্জ করে ফেলে।সাথে ওর ফোনের সিম কার্ডও চেইঞ্জ করে ফেলে।হিয়ান ছাড়া বাকিদের সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়।

এই দুই বছর মেঘকে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ওর থেরাপি,মেডিষিন সব কিছুর খরচ হিয়ান দিয়েছে।নিজের সাধ‍্যমতো মেঘকে সবচেয়ে বেষ্ট ট্রিটমেন্ট টা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।যখনই মেঘ একটু অসুস্থ হয়ে পড়তো হিয়ান নিজের সব কাজ ফেলে রেখে ওর কাছে ছুটে যেতো।আর মেঘ যতোক্ষন পযর্ন্ত না বেটার ফিল করতো ততোক্ষন পযর্ন্ত হিয়ান ওর পাশ থেকে এক পাও নড়তো না।
_________________________
বতর্মান

হিয়ান মেঘের মাথায় এক হাত রেখে বললো

“কাদছিস কেনো বুড়িটা?ভয় পাস না।আমি আছি তো,তোর কিচ্ছু হতে দেবো না।”

মেঘ হিয়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

“ভীষন ভয় লাগছে ভাইয়া।মনে হচ্ছে আমি কক্ষনো আর আমার কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে পাবো না।”

হিয়ান বললো

“মেঘ দুইটা বছর একা একা ফাইট করেছিস নিজের এই অসুখটার সাথে।আর আজকে শেষ মূহুর্তে এসে এরকম বোকা বোকা কথা বলছিস?ইনশাআল্লাহ দেখিস কিচ্ছু হবেনা তোর।একবার সার্জারিটা হয়ে গেলে সবকিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।”

হিয়ানের কথা শেষ হতেই মেঘ হিয়ান কে ছেড়ে দিলো।তারপর হিয়ানের দিকে ম্লানো হেসে বললো

“আমাকে সান্তনা দিচ্ছো ভাইয়া?থাক দিতে হবে না।আমার ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে।উনি বলেছেন সার্জারিতে আমার লাইফ রিস্ক আছে।বাচার চান্স খুবই কম।”

মেঘের কথা শুনে হিয়ান মাথা নিচু করে ফেললো।ওর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

“আহান কে আমি আমার লাইফ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়ে ভালোই করেছিলাম।কারন দুইটা বছর আমি যেই যন্ত্রণা সহ‍্য করেছি আহান যদি আমাকে ওতোটা কষ্ট পেতে দেখতো কখনো সহ‍্য করতে পারতো না।আহান কেনো?বাকিরা কেউই সহ‍্য করতে পারতো না।তার থেকে ওরা আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে থেকেছে সেটাই ভালো হয়েছে।ওরা ভেবেছে আমি ওদের ছেড়ে ভীষন ভালো আছি।আমিও এখন আর ওদের এই ভুলটা ভাঙাতে চাই না।এতোদিন যেটা ভেবে এসেছে যতোদিন পযর্ন্ত বেচে থাকবো ততোদিনও নাহয় এটাই ভাববে।”

এইটুকু বলে মেঘ একটু থামলো।তারপর আবার বললো

“আমার একটা কথা রাখবে ভাইয়া?ধরে নাও এটাই আমার শেষ আবদার।”

শেষ আবদার কথাটি শুনে হিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ নীচু স্বরে বললো

“ভাইয়া আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কক্ষনো ওদের সত‍্যিটা বলবে না প্লিজ।ওরা এতোদিন যেমন ভেবে এসেছে যে আমি সার্থপর,ঠকবাজ,ক‍্যারেক্টারলেস একটা মেয়ে,আমার যাওয়ার পরও নাহয় সেটাই ভাবলো।ওরা সত‍্যিটা যদি জানতে পারে তাহলে সবাই খুব কষ্ট পাবে।তার থেকে আমাকে খারাপ ভেবে নাহয় সবাই আমাকে ভুলেই গেলো।সবার ভালোর জন‍্য নাহয় কিছু কথা অজানাই থেকে গেলো।আমি নাহয় একটা খারাপ মেয়ে হয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলাম।কেউ আমার জন‍্যে নাই বা দোয়া করলো।কিন্তু দিনশেষে ওরা সবাই ভালো তো থাকবে।আর ভুলে যাবে এই সার্থপর,খারাপ মেয়েটা কে।”

কথাটা বলে মেঘ আর এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালো না।দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।এদিকে হিয়ানের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়ছে।এতো চেষ্টা করার পরেও কি শেষ রক্ষা হবে না?আহানের কাছে কি মেঘকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না?কেউ কি কোনোদিন জানতে পারবে না,এই দুই বছরে ওরা সবাই যতোটা কষ্ট পেয়েছে তার থেকে হাজারগুন বেশি কষ্ট মেঘ পেয়েছে।সত‍্যিই কি সবার সবকিছু অজানাই থেকে যাবে?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হিয়ান রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।
_____________________________
মেঘ ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।সেখানে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।কাদতে কাদতে কখনো ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো বুঝতেই পারলো না।ঘুম যখন ভাঙলো তখন বিকাল সাড়ে চারটা বাজে।

মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ‘ও’ এতো সময় পযর্ন্ত কিভাবে ঘুমিয়েছে বুঝতেই পারছে না।এখনো ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ কিছুই করা হয়নি।মেডিসিন গুলোও খাওয়া হয়নি।শাওয়ার নেয়নি,নামাজ পড়েনি।সবকিছু একদম এলোমেলো হয়ে গেছে।সকালে কিছু না খেয়েই ছাদে চলে গিয়েছিলো।ছাদে যাওয়ার পর ওর ডাক্তার ওকে ফোন করে জানায় সামনের সপ্তাহে ওর সার্জারি হবে।আর অপরেশন থিয়েটারে যখন তখন ওর যা কিছু হয়ে যেতে পারে।’ও’ যাতে মেন্টালি নিজেকে সেইভাবে প্রিপেয়ার করে।সার্জারিতে আরো কিছু কমপ্লিকেশন হতে পারে ডাক্তার সেগুলোও ওকে জানায়।সব শুনে মেঘের মনে হয়েছিলো ‘ও’ হয়তো আর বাচবেই না।তাই তখন হিয়ান কে জড়িয়ে ধরে অভাবে কেদে দিয়েছিলো।মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নেওয়ার জন‍্যে।

মেঘ শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুচ্ছিলো।তখনই কেউ এসে দরজায় নক করলো।মেঘ টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে গিয়ে দরজাটা খুললো।দেখলো আহান দরজার সামনে দাড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।আহান কে এখানে দেখে মেঘ একটু হকচকিয়ে গেলো।আহান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও।আমরা সবাই একটু পরে ঘুড়তে বের হবো।”

কথাটা বলে আহান ফোনের দিক থেকে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই ওর দৃষ্টি মেঘের উপর আটকে গেলো।আহান মুগ্ধ দৃষ্টিতে পলকহীন চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।এই দৃষ্টিতে নেই কোনো লালশা,নেই কোনো খারাপ আকাঙ্খা।শুধু আছে একরাশ ভালোলাগা আর ভালোবাসার। শাওয়ার নেওয়ায় মেঘকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে।ওর চুল থেকে পানির ফোটা টুপটাপ করে ওর চোখ,গাল,ঠোট,গলায় চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে সদ‍্য ফোটা কোনো তাজা গোলাপ কে এইমাএ পানিতে চুবিয়ে ওঠানো হয়েছে।আর তার শরীর থেকে পানির ফোটা গুলো মুক্তোর মতো ঝড়ে পড়ছে।

আহান কে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘের অশ‍্যস্তি হতে লাগলো।’ও’ মাথা টা নিচু করে কাচুমাচু করতে করতে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।আহানের হঠাৎ চোখ গেলো মেঘের গলার দিকে।গলার দিকে চোখ যেতেই মুহূর্তের মধ‍্যে ওর চেহারা থেকে মুগ্ধতার রেশ কেটে গেলো।আহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘের গলার চেইনটার দিকে।যদিও লকেট টা দেখা যাচ্ছে না তার পরেও চেইননের ডিজাইন টা দেখে আহানের চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না যে এটা ওর দেওয়া সেই চেইনটা।আহান হাত বাড়িয়ে মেঘের চেইন টা ধরতে যাবে তার আগেই মেঘ দ্রুত দু-কদম পিছিয়ে গেলো।সেই সুযোগে আহান রুমের মধ‍্যে ঢুকে দরজাটা লক করে দিলো।আহানকে দরজা লক করতে দেখে মেঘ একটু ঘাবড়ে গেলো।পরক্ষনেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে কন্ঠে একটু জোড় এনে বললো

“একি আপনি পারমিশন না নিয়ে আমার রুমে প্রবেশ করেছেন কেনো?”

আহান দুষ্ট হেসে বললো

“তুমি পারমিশন না নিয়ে আমার নামের লকেট গলায় পড়তে পারো,আমার সারনেইম ইউজ করতে পারো,আমাকে না বলে অন‍্য ফ্লাটে গিয়ে থাকতে পারো,আর আমি পারমিশন না নিয়ে একটু তোমার রুমে ঢুকতে পারবো না?আর তাছাড়া তুমি আমার আইনতো বিয়ে করা বউ।তাই তোমার রুমে ঢুকতে গেলে আমার পারমিশন নেওয়ার কোনো প্রয়জোন নেই।”

আহানের কথা শুনে মেঘ ভয় পেয়ে গেলো।মেঘ বুঝতে পারছে না যে ‘ও’ আহানের সারনেইম ইউজ করে সেটা আহান কিভাবে জানলো। একথা তো কারোরই জানার কথা না।মেঘের ভাবনার মধ‍্যে আহান ওর একদম কাছে গিয়ে ওর কোমরে হাত রাখলো।তারপর হেচকা টান দিয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর কানের কাছে লো ভয়েজে বললো

“তোমার খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলা মিথ‍্যে গুলো আস্তে আস্তে সব বেড়িয়ে যাচ্ছে মাই কুইন।একবার আমি পুরো সত‍্যিটা জানতে পারি তারপর তোমার কি অবস্থা করবো তুমি ভাবতেও পারছো না।এতোগুলো বছর অনেক জ্বালিয়েছো এখন আর এসব জ্বালা সহ‍্য করার মতো শক্তি আমার মধ‍্যে অবশিষ্ট নেই।”

কথাটা বলে আহান মেঘের গলায় থাকা চেইনটা টান দিতেই জামার মধ‍্যে থেকে লকেট টা বেড়িয়ে আসলো।আহান লকেট টার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।যেটা ভেবেছিলো ঠিক সেটাই হয়েছে।এটা সত‍্যিই ওর দেওয়া চেইনটা।তারমানে ওর মেঘ পরী আজ অবদি এটা গলা থেকে খুলেনি।আহানের ভাবনার মধ‍্যেই মেঘ ছো মেরে আহানের হাত থেকে চেইনটা নিয়ে লকেট টা আবার জামার মধ‍্যে ঢুকিয়ে হাইড করে ফেললো।আহান বিদ্রুপের স্বরে বললো

“লকেট টা লুকিয়ে ফেললেই কি সত‍্যিটা মিথ‍্যে হয়ে যাবে নাকি?”

মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে বললো

“ক-কিসের ম-মিথ‍্যে?এটা আপনার দেওয়া উপহার ঠিকই।বাট “A” তে আপনার নাম সেইজন‍্য এটা পড়িনি।আমার বয়ফ্রেন্ডের নামও “A” দিয়ে।তাই এটা আর খুলিনি,এখনো পড়ে আছি।”

মেঘের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহান হাত দিয়ে শক্ত করে মেঘের গাল চেপে ধরলো।তারপর রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“আর একটা মিথ‍্যা কথা বললে তোমার হাত-পা ভেঙে তোমাকে জ‍্যান্ত মাটিতে পুতে ফেলবো।আমাকে কি তোমার সার্রকাসের জোকার মনে হয় যে তুমি যখন যা বলবে সেটাই আমি বিশ্বাস করে নিবো?অলরেডি তোমার ওইসব ভুলভাল কথা বিশ্বাস করে আমার জীবন থেকে দুটো বছর নষ্ট হয়ে গেছে।আর না!এইবার আমি আর তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করবো না।নিজে খোজ খবর নিয়ে সবটা জানবো।”

কথাটা বলে আহান মেঘের গাল ছেড়ে দিলো।মেঘ ভয়ে ভয়ে জিঙ্গেস করলো

“নিজে খোজ খবর নিয়ে সবটা জানবেন মানে?”
.
আহান মেঘের আরেকটু কাছে গিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললো

“আমি অলরেডি লোক লাগিয়ে দিয়েছি।এই দুই বছর তুমি কি কি মহৎ কাজ করেছো সব নিউজ চব্বিশ ঘন্টার মধ‍্যে আমার কাছে এসে পড়বে।এমনিতেই বড্ড দেরি করে ফেলেছি।আমি যদি সেদিন তোমার কথা গুলো বিশ্বাস না করে তোমার ব‍্যাপ‍্যারে একটু খোজ-খবর নিতাম তাহলে আর এতো কিছু হতোই না।”

আহানের কথা শুনে মেঘের হাত-পা কাপছে।’ও’ ভাবছে আহান যদি সবটা জেনে যায় তাহলে ওর এতোদিনের করা সব প্লান মাটিতে মিশে যাবে।আর সত‍্যিটা জানলে আহান কিছুতেই সহ‍্য করতে পারবে না।মেঘকে এতোটা ভয় পেয়ে যেতে দেখে আহান মেঘের গালে শ্লাইড করতে করতে বললো

“এতো ভয় পাচ্ছো কেনো মেঘ পরী?”

আহানের প্রশ্নের উওর না দিয়ে মেঘ মাথাটা নিচু করে ফেললো।আহানের স্পশে ওর শরীর জমে যাচ্ছে।হৃদ স্পন্দনের গতি দ্রুত উঠা নামা করছে।ঠোট জোড়া মৃদ‍্যু কাপছে।কোথা থেকে রাজ‍্যের লজ্জা,জড়তা এসে মেঘের চোখের পাতায় ভর করেছে।তাইতো চোখ তুলে আহানের দিকে তাকানোর শক্তি টুকু পাচ্ছে না।হুট করেই আহান এক হাত মেঘের ঘাড়ে রেখে ওর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় মেঘ চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো।আর আহান পরম যত্নে চোখ বন্ধ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটার ঠোটের স্বাদ গ্রহন করতে লাগলো।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ62

সন্ধ‍্যা 6:30

রেষ্টুরেন্টে এক পাশের চেয়ারে বসে আছে মেঘ।মাথার মধ‍্যে ভিষন যন্ত্রণা হচ্ছে ওর।গা টা কেমন গুলিয়ে উঠছে।সকাল থেকে এখন পযর্ন্ত খাবার বা ঔষধ কিছুই খাওয়া হয়নি।তাই শরীর ভিষন উইক লাগছে।ভেবেছিলো গোসল করে নামাজটা পড়ার পর খাবার খেয়ে ঔষধ খাবে।কিন্তু নামাজ পড়ার পর সাড়িকা,সাঈফা ওকে রেডি করিয়ে জোড় করে নিজেদের সাথে বাইরে নিয়ে এসেছে।বলেছে এখন কিছু খাওয়ার দরকার নেই বাইরে গিয়ে একসাথে খাবে।অগত‍্যা মেঘও বোনদের আবাদার আর ফেলতে পারেনি।কিছু না খেয়েই চলে এসেছে।

মেঘের সোজাসুজি টেবিলের অপর পাশের চেয়ারটায় বসে আছে আহান।খাবার এখনো এসে পৌছায়নি তাই সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।আহান সবার সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে আড় চোখে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে।মেঘকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে ওর কাছে।আহান ভ্রু কুচকে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আর ইউ ওকে মেঘ?”

হঠাৎ এভাবে বলায় মেঘ একটু হকচকিয়ে উঠলো।বাকিরা সবাই মেঘের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।’ও’ যথা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে ঠোটের কোনে জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো

“হ‍্যা একদম ঠিক আছি।”

মেঘ ঠিক আছি বললেও কথাটা আহানের একদম বিশ্বাস হলো না।কারন মেঘকে দেখেই মনে হচ্ছে ওর কিছু একটা সমস‍্যা হচ্ছে।আহান কিছু না বলে কোনা চোখে বারবার মেঘকে দেখতে লাগলো।এতে মেঘের আরো অসস্তি হতে লাগলো কিন্তু তারপরেও ‘ও’ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।

কিছুক্ষনের মধ‍্যেই ওদের খাবার চলে আসলো।খাবার দিয়ে যেতেই সবাই নিজেদের মতো খাওয়া শুরু করলো।মেঘ স্পুন দিয়ে একটু খানি রাইস মুখে নিতেই ওর গা গুলিয়ে বমি পেতে লাগলো।’ও’ দ্রুত বসা থেকে দাড়িয়ে কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মেঘের এমন কান্ডে আহানেরা সবাই হতবাক হয়ে গেলো।ওরা বুঝতেই পারছে না যে মেঘ হঠাৎ করে কেনো এভাবে দৌড়ে চলে গেলো।
______
মেঘ ওয়াশরুমে এসে ভেসিনের সামনে দাড়িয়ে মুখের সব খাবার ফেলে দিলো।ওর ভিষন বমি পাচ্ছে।কিন্তু পেটে কোনো খাবার না থাকায় বমিটা হচ্ছে না।মেঘ কোনো রকম চোখে মুখে পানি দিয়ে কাউকে কিছু না বলে সোজা রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো।তারপর একটা ট‍্যাক্সি বুক করে বাড়িতে চলে আসলো।বাড়িতে এসে অল্প কিছু খাবার খাওয়ার পর মেডিসিন খেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে হিয়ানকে একটা মেসেজ দিলো।
____
এদিকে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে বসে মেঘের জন‍্যে অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু বেশ কিছু সময় পরেও যখন মেঘের আসার কোনো নাম গন্ধও দেখলো না।তখন আলিশা উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে কোথাও মেঘকে পেলো না।’ও’ বের হয়ে কথাটা সবাইকে বলতে যাবে তার আগেই হিয়ান জানায় মেঘের শরীর টা একটু খারাপ লাগছিলো তাই ‘ও’ বাড়িতে চলে গেছে।মেঘ কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাড়িতে চলে গেছে শুনে সবাই ভীষণ অবাক হলো।ওরা এটাই বুঝতে পারছে না যে শরীর খারাপ লাগলে ওদের বললো না কেনো?
_________________________
রাত 09:00

রুমের দরজায় নক পড়তেই আহান গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজাটা খুলতেই একে একে অভি,রিয়ান,আহির,মিহির নিশব্দে রুমের মধ‍্যে প্রবেশ করলো।আহান দরজাটা আবার লক করে দিয়ে বেডের উপর এসে বসে পড়লো।আহির,মিহির,অভি,রিয়ান গিয়ে আহানের সামনা সামনি সোফায় বসে পড়লো।তারপর অভি আহান কে ঊদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“হঠাৎ আমাদের এভাবে জরুরী ডেকে পাঠালি কেনো?কোনো সমস‍্যা হয়েছে নাকি?আর আমরা সবাই যখন আসছি তাহলে হিয়ানকে নিয়ে আসতে বারন করলি কেনো?”

কথাটা বলে অভি আহানের দিকে তাকালো।আহানকে ভীষন সিরিয়াস দেখাচ্ছে।আহান অভির প্রশ্নের অ‍্যান্সার না দিয়ে উল্টে ওদের প্রশ্ন করলো

“এই দুই বছরে মেঘ কোথায় গিয়েছে,কি করেছে সে বিষয়ে তোরা কে কি জানিস?”

মেঘের নাম টা শুনতেই আহির আর মিহিরের মুখে যেনো বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো।মিহির কপাল কুচকে কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো

“কোনো কিছুই জানি না।ওর ব‍্যাপ‍্যারে আমরা কেউই কোনো খোজ খবর নেইনি।”

মিহিরের কথা শুনে আহানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।’ও’ রাগি কন্ঠে জিঙ্গেস করলো

“কেনো খোজ খবর নিস নি?তোদের তো উচিৎ ছিলো ‘ও’ কোথায় যায়,কি করে সেই বিষয়ে খোজ নেওয়া।”

আহির বললো

“দেখ ব্রো ‘ও’ তোর সাথে যেটা করেছে তারপর আর আমরা ওর বিষয়ে খোজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।”

আহির কথা শুনে আহান রাগি চোখে ওর দিকে তাকালো।তারপর বললো

“আমার সবচেয়ে বড় ভুলে হয়েছে মেঘের কথা বিশ্বাস করে সেদিন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।আর সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া।যদি সেদিন একটা বারও মেঘের বিষয়ে খোজ খবর নিতাম তাহলে হয়তো আজকের দিনটা অন‍্য রকম হতো।জানিস এতোদিন আমি ভেবে এসেছি মেঘের কাছে আমি নেই তো কি হয়েছে?ওর কোনো সমস‍্যা হলে ওকে প্রটেক্ট করার জন‍্যে তোরা তো আছিস।কিন্তু তোরা?তোরা তো এই দুই বছরে ওই মেয়েটার কোনো খবরই নিস নি।”

আহানের কথাটা শেষ হতেই আহির আর মিহির মাথা টা নিচু করে ফেললো।অভি বললো

“দেখ আহান মেঘ যেটা করেছিলো সেটার জন‍্যে আমরা কম বেশি সবাই ওর উপর রেগে ছিলাম।তাই আমরা কেউই ওর খোজ খবর নেইনি।কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বলবি?”

আহান দাতে দাত চেপে বললো

“আমি নাহয় ভেবে ছিলাম মেঘ এতোদিনে বিয়ে করে স্বামি সংসার নিয়ে সুখে আছে।কিন্তু তোরা তো সবাই জানতিস মেঘ এখনো বিয়ে করেনি তারপরেও কেনো তোরা সব সত‍্যিটা জানার চেষ্টা করলি না।তোরা একটু খানি খোজ খবর নিলেই তো সবটা জেনে যেতিস।”

আহানের কথা শেষ হতেই আহির বললো

“এর পিছনেও একটা কাহিনি আছে।”

আহান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আহিরের দিকে তাকালো।মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো

“তুমি চলে যাওয়ার পর অফিসের সব কাজের দ্বায়িত্ব আমার আর আহিরের কাধে এসে পড়ে।সব কিছু সামলাতে আমাদের দুজনের প্রায় নাজেহাল অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো।প্রায়ই লেট নাইটে বাসায় ফিরতাম।একদিন রাত পেনো বারোটার সময় আমি আর আহির বাসায় আসছিলাম ঠিক তখনই মাঝ রাস্তায় আমাদের গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়।ড্রাইবার আমাদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে আশে পাশের কোনো গ‍্যারেজ খোলা আছে কিনা সেটা দেখতে চলে যায়।আমাদের গাড়িতে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছিলো তাই আমরা গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে হাটাহাটি করছিলাম।হঠাৎ ল‍্যাম্প পোষ্টের আলোতে আমরা স্পষ্ট দেখলাম কয়েকটা ছেলে মিলে একটা মেয়েকে টেনে হিছরে রাস্তার পাশের ঝোপের মধ‍্যে নিয়ে যাচ্ছে।ওরা মেয়েটার মুখটাও চেপে ধরে রেখেছিলো তাই মেয়েটা চিৎকারও দিতে পারছিলো না।আমি আর আহির দৌড়ে ছেলেগুলোর কাছে চলে যাই।ছেলেগুলো হয়তো আমাদের চিনতে পেরেছিলো তাই মেয়েটাকে ওখানে ওভাবে ফেলে রেখেই ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।ওরা যেতেই আমরা মেয়েটার কাছে যাই ওকে হেল্প করার জন‍্যে।কিন্তু,,,,,”

আহান এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে মিহিরের কথা শুনছিলো।মিহির থেমে যেতেই আহান ভ্রু কুচকে বললো

“কিন্তু?”

আহির স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“ওটা আর কেউ না মেঘ ছিলো।আমরা দূর থেকে ওর চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পাইনি।”

আহিরের কথা শুনে আহান চমকে উঠলো।সেদিন যদি আহির আর মিহির ঠিক সময় না পৌছাতো তাহলে কি হতো সেটা ভেবেই আহানের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আহান বললো

“তারপর?”

মিহির কঠিন কন্ঠে বললো

“মেঘকে ওখানে দেখে কিছুক্ষনের জন‍্যে ওর করা অন‍্যায় গুলো সব ভুলে গিয়েছিলাম।যতোই হোক কলিজার টুকরো বোনকে বিপদে পড়তে দেখে নিজেদের আর সামলাতে পারিনি।আমি আর আহির ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিয়েছিলাম।কিন্তু ‘ও’ না আমাদের জড়িয়ে ধরেছে,আর না ওর চোখ থেকে এক ফোটা পানি পড়েছে।ওকে দেখে মনে হয়েছিলো যেনো ‘ও’ আমাদের চিনেই না।আমি ওকে জিঙ্গেস করেছিলাম তুই এখানে এতো রাতে কি করছিস?তখন ‘ও’ বলেছিলো,ও নাকি জব করে।তাই অফিস থেকে আসতে একটু দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো।আর এতো রাতে রিকশা পাচ্ছিলো না এজন‍্য হেটেহেটে বাসায় ফিরছিলো।আর তখনই ছেলে গুলো ওকে অ‍্যাট‍্যাক করে।মেঘ জব করে শুনে আমরা ভীষন অবাক হয়েছিলাম।আহির মেঘকে জিঙ্গেস করেছিলো,ও জব কেনো করছে? ওর হাজবেন্ট কোথায়?তখন আমরা জানতে পেরেছিলাম তোমার সাথে ডিবোর্স টা হয়নি তাই ‘ও’ বিয়ে করতে পারেনি।”

এটা শুনে আহানের নিজেকে নম্বর অন বেক্কল মনে হচ্ছে।কারন মেঘের সাথে আইনতো রেজিষ্ট্রি করে ওর বিয়েটা হয়েছিলো।তাই ওদের ডিবোর্স না হওয়া পযর্ন্ত মেঘ তো অন‍্য কোথাও বিয়েই করতে পারবে না।আর ‘ও’ কিনা এতোদিন গাধার মতো ভেবে এসেছে মেঘ বিয়ে করে সংসার করছে।আহানের ইচ্ছে করছে দেয়ালের সাথে নিজের মাথাটা কে ঠুকতে।আহানের ভাবনার মধ‍্যেই আহির বলে উঠলো

“মেঘ এখনো বিয়ে করেনি শুনে আমরা দুজনেই বেশ খুশী হয়ে ছিলাম।কিন্তু পরক্ষনেই মেঘের আরেকটা কথা শুনে মেঘের প্রতি ঘৃনা টা হাজার গুন বেরে গিয়েছিলো। ‘ও’ বলেছিলো বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে?ওকে ওর ভালোবাসার মানুষের থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।ওদের বিয়ে না হলেও ওরা লিভেন রিলেশনে আছে।আর তুমি দেশে ফিরলেই নাকি তোমার কাছ থেকে ডিবোর্স নিয়ে সেই ছেলেকে বিয়ে করবে।ওর কথা শুনে সেদিন এতো রাগ উঠেছিলো ইচ্ছে করছিলো ওকে মেরে ওখানেই মাটিতে পুতে দিয়ে আসি।”

এইটুকু বলে থামলো আহির।আহির থামতেই মিহির বললো

“কিন্তু ওইযে আদরের কলিজার টুকরো বোন তাই আর কিছু বলতে পারিনি।বাড়িতে ফোন করে লোকেশন বলে আরেকটা গাড়ি পাঠাতে বলেছিলাম।কিছুক্ষন পরে ড্রাইবার গাড়ি নিয়ে চলেও এসেছিলো।মেঘকে ওর বলা লোকেশনে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে গিয়েছিলাম।বাড়িতে আসার পর কেনো যেনো মনে হয়েছিলো আমার বোন কখনো এমন ভুল করতেই পারে না।’ও’ যা বলেছে সবকিছু মিথ‍্যা।তাই পরেরদিন আমি আর আহির মেঘ যেই লোকেশনে নেমেছিলো সেখানে আবার গিয়েছিলাম।ওর একটা পিক দেখিয়ে সেখানের লোকদের জিঙ্গেস করতেই ওনারা বলেছিলো,ওরা ব‍্যাপ‍্যারে ওনারা তেমন কিছুই জানেন না।মেয়েটা নাকি কারো সাথে তেমন একটা মেশে না।তবে মাঝে মাঝেই ওর ফ্লাটে একটা ছেলে আসে।আর মেয়েটার কাছে ছেলেটার ব‍্যাপ‍্যার কিছু জিঙ্গেস করলে বলে ওই ছেলেটা নাকি ওর ভাইয়া হয়।”

কথাটা বলে মিহির একটা লম্বা নিশ্বাস ছাড়লো।তারপর ভাবলেশহীন কন্ঠে বললো

“সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম আমার বোনটা সত‍্যিই পাল্টে গিয়েছে।তাই কখনো আর ওর বিষয়ে কোনো খোজ খবর নেইনি।নেওয়ার রুচি অথবা ইচ্ছা কোনোটাই হয়নি।কারন ওর নোংরামির কাহিনি আরেকটু শুনলে হয়তো ওকে আমি নিজের হাতে খুন করে ফেলতাম।তবে এই দুই বছর রোজ রাতে ওর পিছু নিয়েছি।যাতে পথে ওর কখনো কোনো বিপদ না হয় সেইজন‍্য। সারাদিন যেই কাজেই ব‍্যাস্ত থাকতাম না কেনো ওর অফিস থেকে ফেরার টাইমে আমি আর আহির গিয়ে ঠিক ওর অফিসের সামনে দাড়িয়ে থাকতাম।কতোবার নিজেকে বুঝিয়েছি যে ওর যাই হয়ে যাক না কেনো,ওকে সেইভ করতে আমরা আর যাবো না।কিন্তু চেষ্টা করেও ওকে একা ছাড়তে পারিনি। ”

এইটুকু বলে মিহির ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।আহান মৃদ‍্যু হাসলো।কারন এতো কিছুর পরেও আহির আর মিহির নিজেদের দ্বায়িত্ব ঠিকই পালন করেছে।শুধু ও’ই নিজের দ্বায়িত্ব টা ঠিক ভাবে পালন করতে পারেনি।আহান হঠাৎ করেই বলে উঠলো

“যেই ছেলেটা মেঘের সাথে দেখা করতে ওর ফ্লাটে যেতো সেটা আর কেউ না হিয়ান ছিলো।”

আহানের কথা শুনে রিয়ান,অভি,আহির,মিহির একসাথে অবাক কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো

“হোয়াট?”

আহান বললো

“হ‍্যা!আমার লোকেরা খোজ নিয়ে জেনেছে ওটা হিয়ান ছিলো।আশেপাশের লোকদের আমাদের পিক দেখাতেই ওরা হিয়ানকে চিনে ফেলে।আর আমাকেও হিয়ানই খুজে বের করেছে।”

আহানের কথা ওরা আরো অবাক হলো।ওরা তো আহান কে অনেক খুজেছে কিন্তু পায়নি।তাহলে হিয়ান কিভাবে পেলো।রিয়ান বললো

“হিয়ান তোকে কিভাবে পেলো?আমরা তো তোকে অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি।তাহলে ‘ও’ কিভাবে,,,,”

আহান মুচকি হেসে বললো

“তোরা প্রথম কয়েক মাস আমাকে লন্ডনে হন্নে হয়ে খুজেছিস।কিন্তু আমি তো ওখানে ছিলামই না।আমি কেনাডা চলে গিয়েছিলাম।এক বছর ওখানেই ছিলাম।তারপর লন্ডনে চলে আসি।ততোদিনে তোরা আমাকে খোজাখুজি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিলি কিন্তু হিয়ান ওর সবটা দিয়ে আমাকে খুজেছে।আর ‘ও’ তো ছোট বেলা থেকে আমাকে হারে হারে চিনে।তাই আমি কখন কোথায় যেতে পারি,কি করতে পারি সেই সম্পর্কেও ওর ভালো করেই ধারনা আছে।একদিন সকালে আমার ফোনে একটা কল আসে।কলটা পিক করতেই হিয়ানের কন্ঠস্বর শুনতে পাই।’ও’ বলেছিলো সাড়িকা,সাঈফার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছিলো অন‍্য ছেলেদের সাথে।ওদের বাবা-মা আহির আর মিহিরের সাথে ওদের রিলেশন টা মেনে নেয়নি।সবাই নাকি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ওনারা কারো কোনো কথাই শোনেনি।তাই সাড়িকা আর সাঈফা একসাথে সুইসাইড করেছে।ওদের খুব খারাপ অবস্থা।ওরা হসপিটালে ভর্তি আছে।এসব শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো।তাড়াতাড়ি এমাজেন্সি সবকিছুর ব‍্যাবস্থা করে বাংলাদেশে চলে আসি।এসেই সোজা হসপিটালে চলে যাই।সেখান থেকে হিয়ান আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে।বাড়িতে আসার পর যখন সবটা জানতে পারলাম ইচ্ছে করছিলো হিয়ান কে খুন করে ফেলি।কিন্তু ওকে কিছু বলার আগেই সবাই এমন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলো।মনে হচ্ছিলো আমি না আমার লাশ এসেছে।তাই সবাই এমন মরা কান্না কাদছে।”

আহানের কথা শেষ হতেই আহির,মিহির,অভি,হিয়ান হো হো করে হেসে দিলো।আহানও ঠোট চেপে হাসলো।কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই অভি হাসি থামিয়ে বললো

“আচ্ছা হিয়ান মেঘের সাথে দেখা করতে যেতো সেটা আমাদের বলেনি কেনো?আর তোকে যে বুদ্ধি করে ও’ই এখানে নিয়ে এসেছে সেটাই বা আমাদের বলেনি কেনো?”

আহান হাসি থামিয়ে দিয়ে গম্ভির মুখে বললো

“কারন হিয়ান সম্ভবত মেঘ ব‍্যাপ‍্যারে সবটা জানে।”

আহানের কথা শুনে ওরা সবাই শকড হলো।কারন হিয়ান যদি সবটা জেনেই থাকে তাহলে ওদের বললো না কেনো?আহান বললো

“প্রথম কথা হচ্ছে মেঘের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।’ও’ যা করেছিলো সেটার পিছনে নিশ্চয়ই অন‍্য কোনো কারন ছিলো।আর আমি সিওর সেই কারনটা হিয়ান জানে।তবে চিন্তা করিস না।আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি হিয়ান আর মেঘ মিলে কি খিচুরী পাকিয়েছে আশা করি সবটা জেনে যাবো।আর আমাদের এখানে কি কথা হলো সেটা হিয়ান কে কেউ জানাবি না।ওকে?”

আহানের কথা শেষ হতেই সবাই উপর নিচ করে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
_____________________________

রাত 11:30

মেঘের ভালো লাগছিলো না তাই ছাদের একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো।প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তাই এখন আর ঘুমও আসছে না।আর শরীরটাও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।তাই ছাদে এসে ফ্রেস এয়ারে দাড়িয়ে আছে।মেঘ মনোযোগী হয়ে একটা নিউজ দেখছিলো ঠিক তখনই একটা কন্ঠস্বর ওর কানে ভেষে এলো।

“এতো রাতে ঠান্ডার মধ‍্যে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছো?”

মেঘ ফোনের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো আহান ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।মেঘ আহান কে দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো।ভীষন অশস্তি লাগছে ওর।এতো রাতে আহান কে এখানে একদমই আশা করেনি।বিকালে আহান যা করেছে তারপর থেকে মেঘ ওর সামনে গেলেই ওকে লজ্জা আর অশস্তি ঘিরে।মেঘ নিচু স্বরে বললো

“ঘুম আসছিলো না,তাই ছাদে চলে এসেছি।”

আহান থমথমে কন্ঠে বললো

“সারাদিন ঘুমালে তো ঘুম আসবেই না।কিন্তু তাই বলে এতো ঠান্ডায় ছাদে এসেছো কেনো?যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন কি হবে?”

মেঘ শক্ত গলায় বললো

“আমার ব‍্যাপ‍্যারে আপনার না ভাবলেও চলবে।নিজের চরকায় গিয়ে তৈল দিন প্লিজ।”

কথাটা বলে মৈঘ আহানের সাইড কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আহান মেঘের হাত ধরে ফেললো।তারপর কোনো কিছু না বলে ঝট করে ওকে পাজকোলে তুলে নিয়ে বাকা হেসে বললো

“আমার একটা মাএ বউ।তার ব‍্যাপ‍্যার আমি ভাববো না তো কে ভাববে বলো?”

কথাটা বলেই আহান নিচের দিকে হাটা দিলো।মেঘ ভীতু কন্ঠে বললো

“কি করছেন?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?বাড়ি ভর্তি লোকজন আছে।কেউ যদি আমাদের এভাবে দেখে ফেলে তাহলে কি ভাববে?”

আহান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো

“সবাই আপাততো ঘুমিয়ে আছে।তাই কারো দেখার সম্ভবনা নেই।কিন্তু তুমি যদি বেশি কথা বলো তাহলে সবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।এজন‍্য তোমার চুপ থাকাটাই বেটার।”

মেঘ ছটফট করতে করতে বললো

“প্লিজ নামান আমাকে।কোথায় যেতে হবে বলুন আমি নিজেই আপনার সাথে যাচ্ছি।”

আহান মুখ বাকিয়ে বললো

“আমার কপালে কি গাধা লেখা আছে নাকি?আমি তোমাকে কোল থেকে নামাবো আর তুমি ফুড়ুৎ করে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।তোমাকে আমি হারে হারে চিনি।তাই আমাকে এসব বলে লাভ নেই।”

কথাটা বলতে বলতে আহান মেঘকে নিজের রুমে নিয়ে এসে ওকে বেডের উপর শুইয়ে দিলো।তারপর গিয়ে দরজাটা লক করে দিলো।মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো

“আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?”

আহান রুমের লাইট টা বন্ধ করে ড্রিম লাইট অন করে মেঘের দিকে দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো

“দুই বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু ফুলসজ্জা টা এখনো হয়নি।তাই ভাবছি বেশি দেরি করে লাভ কি শুভ কাজটা আজকেই করে ফেলি।”

আহান কথাটা বলতেই মেঘ বেড থেকে নেমে দিলো এক দৌড় কিন্তু দরজার কাছে যেতেই আহান ওর হাত ধরে ফেললো।আবছা আলোতে মেঘের চোখে মুখে যে ভয়টা ফুটে উঠেছে সেটা আহান ঠিকই দেখতে পেলো।মেঘ আহানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন‍্যে ছটফট করছে কিন্তু পারছে না।মেঘ অসহায় দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।আহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে মেঘের হাত ধরে টেনে এনে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর নিজেও মেঘের পাশে শুয়ে ওকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো।মেঘ আহানের বুকে জোড়ে ধাক্কা দিতে দিতে বললো

“আমার থেকে দূরে থাকুন বলছি নাহলে কিন্তু আমি আপনার মাথা ফাটিয়ে দিবো।”

মেঘের কথা শুনে আহান মেঘকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো

“দেখো মেঘ পরী তুমি যদি এই মুহূর্তে নড়াচড়া বন্ধ করে চুপচাপ গুড গার্লের মতো ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে তুমি আজকের মতো বেচে যাবে।আর যদি এভাবেই নড়াচড়া করতে থাকো তাহলে দুই বছরের পেন্ডিং কাজটা করতে আমার বেশি টাইম লাগবে না।”

আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ ছোটাছুটি বন্ধ হয়ে গেলো।কিন্তু ওর চোখে কিছুতেই ঘুমের ধরা দিচ্ছে না।তাই কিছুক্ষন ঠোট উল্টে শুয়ে থেকে আহানের গলায় জোড়ে একটা কামর বসিয়ে দিলো।আহান চোখ বন্ধ করেই মৃদ‍্যু আর্তনাদ করে উঠলো।আর এতেই যেনো মেঘের মনটা খুশীতে ভরে গেলো।আহান ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো

“মেঘ আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেও প্লিজ।নাহলে তোমার শান্তি নষ্ট করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”

আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে আহানের বুকের সাথে মিশে রইলো।

চলবে
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here