ভালোবাসার রংবদল পর্ব ১৬ ও অন্তিম পর্ব

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ১৬(অন্তিম পর্ব)
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আমাকে মাফ করে দে শুভ্রতা। এই একটা মাস ধরে অনুশোচনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। তোর সাথে এতো বাজে ব্যবহার করা আমার একদমই উচিত হয়নি শুভ্রতা। আমি খুবই লজ্জিত আমার ব্যবহারের জন্য। তোদের মুখোমুখি হওয়ার মতো কাজ আমি করিনি তবুও আজ এসেছি তোর কাছ মাফ চাইতে। তুই আমাকে মাফ না করলে আমি কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবো না শুভ্রতা।”

আদ্রর আম্মু আমার সামনে এসে কান্না জড়িত কন্ঠে কথা গুলো বললেন। আর শেষের কথা গুলো বলার সময় দু’হাত জোর করে কান্না করতে করতেই বললেন। আমি দ্রুত ওনার হাত ধরে বললাম-

—”আরে আন্টি এইসব কি করছো!! আমি তোমার উপর একটুও রাগ করিনি। আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমাকে নিয়ে। প্লিজ তুমি এভাবে আমার কাছে হাত জোড় করো না।”

উনি আবারও অনুনয় করে বললেন-

—”আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি শুভ্রতা। তোর কাছে মাফ না চাইলে তো আমি মরেও শান্তি পাবো না।”

এবার আমি কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম-

—”আন্টি এবার কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই রাগ করবো তোমার উপর। আবার এসব বললে আমি তোমার সাথে কথাই বলবা না।”

আমি আদ্র আর বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম-

—”আপনারা কিছু বলছেন না কেন।?”

আদ্র কিছু বলছেন না ওনারা আসার পর থেকেই গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আদ্র হয়তো এখনো ওনার আম্মুর উপর রেগে আছেন। আমি আদ্রর দিকে এগিয়ে গেলাম। ওনার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে বললাম-

—”আপনি চুপ করে আছেন কেন? আন্টির সাথে কথা বলুন…..”

কথা বলার মাঝে হঠাৎ করে আদ্রর শরীরের পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই আমার গাঁ গুলিয়ে আসলো। খুবই অস্বস্তি লাগছে, মাথা ঘুরাচ্ছে। সাথে সাথেই আদ্রর গাঁয়ের উপর বমি করে দিলাম। মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলেই আদ্র আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। আদ্রর আব্বু আম্মু উত্তেজিত হয়ে আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

—”আদ্র কি হয়েছে শুভ্রতার!! হঠাৎ করে বমি করলো কেন?? তাড়াতাড়ি ওকে রুমে নিয়ে যা।”

আদ্র দ্রুত আমাকে ধরে রুমে চলে আসলেন। আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে দাঁড়িয়ে করিয়ে উনি শার্ট খুলেতে খুলতে বললেন-

—”তোর শরীর খারাপ লাগছে সেটা কি আমাকে বললেই পারতি শুভি। তোকে আমি বলেছি আমার কাছে কিছু লুকাতে না!!”

আমি কোনো কথা বলতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে বমি করার জন্য। আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনার শার্টের এক পাশ পুরো নোংরা হয়ে গেছে। এটা আমি কি করলাম ছিঃ ছিঃ আদ্রর গাঁয়ের বমি করে দিলাম!! আমার তো নিজেরই ঘৃণা লাগছে আর উনি কিভাবে এখনো স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন এই অবস্থায়!!!
আদ্র আমাকে মাথা হাল্কা পানি ঢেলে দিয়ে আমার মুখ হাত মুছে দিলেন। আর উনি নিজেও ফ্রেশ হয়ে আমাকে নিয়ে রুমে আসলেন। আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্র সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

—”বমি করার জন্য কি আমার গাঁয়ের উপরেই জায়গা পেলি তুই শুভি!!”

আমি এবার নাক মুখ কুচকে বললাম-

—”আপনার জন্যই তো আমার বমি হয়েছে। কি সব বাজে পারফিউম দিয়েছেন এইটার গন্ধে আমার গাঁ গুলিয়ে উঠছে বার বার।”

আদ্র বিস্ময় নিয়ে বললেন-

—”এই পারফিউম আমি সব সময় দেই আগে তো কিছু বলতি না।”

—”এত কিছু জানি না আমি, তবে এখন আর ভালো লাগছে না।”

“কিরে হয়েছে শুভ্রতার?”

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রর আব্বু আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। ওনারা ভিতরে এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আন্টি জিজ্ঞেস করলেন-

—”এখন কেমন লাগছে শুভ্রা??”

আন্টির কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠলাম। আজ অনেক দিন পর আন্টির মুখে শুভ্রা নামটা শুনলাম। আমি আবারও আগের মতো ওনার ভালোবাসা অনুভব করতে পারছি। হ্যাঁ আবারও ভালোবাসার রংবদল হলো। তবে এবার আগের মতোই রঙিন হয়ে উঠেছে ভালোবাসার রঙ। আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম-

—”আজ অনেক দিন পর তুমি আমাকে শুভ্রা বলে ডাকলে আন্টি। আমি আজ অনেক খুশি।”

আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে অভিমানী কন্ঠে বললেন-

—”কিন্তু তুই এখনো আমাকে আন্টিই ডাকছিস।”

আমি ওনাকে ছেড়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম-

—”সরি মা আর বলবো না।”

হঠাৎ দীপ্ত এসে বলে উঠলো-

—”এখন কি শুধু কথাই বলবে সবাই নাকি মিষ্টি খাবে?? আমি কতো কষ্ট করে মিষ্টি নয়ে আসলাম।”

আমি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর সাথে আব্বু আর দিদুমনিও আছে। আমি দ্রুত বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আব্বু আর দিদুমনিকে জড়িয়ে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষন পর আব্বু আমাকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-

—”আচ্ছা কি ব্যাপার বল তো আমাকে!! দীপ্ত আমাদের নিয়ে আসলো বললো অনেক জরুরি কিছু কথা আছে। এখন দেখছি এখানে সবাই আছে। কিছু কি হয়েছে নাকি??”

দীপ্ত বিস্মিত হয়ে বললেন-

—”আব্বু আম্মু তোমার কখন আসলে?? যাক এসেছো যখন ভালোই হয়েছে।”

আব্বু এবার কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বললো-

—”উফফফ কেউ কি বলবে এখানে কি হচ্ছে? ”

আদ্র এবার কিছুটা লাজুক ভাবে বললেন-

—”শুভি প্রেগন্যান্ট।”

আদ্রর এমন লাজুকতা দেখে বেশ অবাক হলাম। ওনাকে আমি কখনো এইভাবে লজ্জা পেতে দেখিনি। হয়তো বাবা হওয়ার সংবাদ সবাইকে নিজে বলছেন তাই।আদ্রর কথায়া শুনে সবাই চমকে উঠে একসাথে বলে উঠলো-

—”কিইইইই!! সত্যিই??”

দীপ্ত খুশিতে গদগদ করে বললো-

—”হ্যাঁ একদম সত্যি। আমি নিজেই শুভ্রা কে নিয়ে গেছিলাম হসপিটালে। তখনই জানতে পারলাম আমি ফুপি আর খালা মনি একসাথেই হবো।”

সবার মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। আমাকে জড়িয়ে ধরছে, মাথায়া হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,চুমু খাচ্ছে। কিন্তু আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

—”আমার সেই ছোট্ট শুভ্রা কখন যে এতো বড় হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারিনি। আমার এই ছোট্ট শুভ্রা এখন মা হবে আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

আমি কিছু বললাম না শক্ত করে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।

সবাই খুশিতে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। বেবি নিয়ে এটা ওটা কথা বলছে। আর দীপ্ত তো এখনই বেবির জন্য নাম ঠিক করে ফেলছে। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার এমন বাচ্চামো দেখছি। বেবি হবে শুনে সবাই যেন নিজেরাই বাচ্চা হয়ে গেছে। আজ নিজেকে বড্ড বেশিই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ভালোবাসার রংবদলে এতটা রঙিন হবে তা আমার ধারণার বাহিরে ছিল।
হঠাৎ করেই আদ্র আমার পাশে এসে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন-

—”বলেছিলাম তো ভালোবাসার রংবদলে ধূসর কালো নয় বরং রংধনুর মতো রঙিন হবে।”

আমি আদ্রর কথায় মুচকি হাসি দিয়ে বললাম-

—”আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আদ্র আমার জীবনে এসে আমাকে আপনার ভালোবাসার রঙে রঙিন করার জন্য। ভালোবাসি আপনাকে প্রচন্ড বেশি ভালোবাসি।”

আদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন-

—”আমিও ভালোবাসি আমার বাবুকে আর খুব খুব বেশিই ভালোবাসি আমার শুভিকে। সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসে যাবো তোমাদের দু’জনকে।”

একথা গুলো বলেই আমার কপালে গভীর এক ভালোবাসার স্পর্শ দিলেন।
সবার ভালোবাসার রংবদল হয় কারও ভালোবাসা ফিকে পরে ধূসর কালো হয়ে যায় আর ভালোবাসা দিন দিন রংধনুর সাত রঙের মতো রঙিন হয়ে যায়। আমার জীবনও সবার ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আদ্রর ভালোবাসায়। এই মানুষটা আমার মেঘলা আকাশে রংধনু মতো হয়ে এসেছে। ভালোবাসি এই মানুষটাকে।

__সমাপ্ত__🌈

।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here