#ভালবাসা_তুই
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃসাদিয়া_আক্তার
_____________________🍂
দুইহাত গালের সাথে চেপে ধরে চেয়ারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন তূর্য।ভাবছে কিভাবে ওই ইমারানের থেকে ইরা আর ইরার ফ্যামিলিকে বাচাঁনো যায়।তার চিন্তার ঘোর কাটে ফাহিমের ডাকার স্বরে।
—–তূর্য কি ভাবছো?কি করবা?
—–কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।তবে যেভাবে করে হোক আমাদের ওই এগ্রিমেন্টটা চুরি করতে হবে ইমারানের কাছ থেকে আর জানতে হবে সে আর কোথাও তার কপি করে রেখেছে কিনা আর সবচেয়ে বড় কথা তার কালো ধান্দাগুলো কোথায় কোথায় এইসবের একটা ইস্ট্রোং প্রুফ লাগবে।তাহলেই ওকে পুলিশের হাতে ধরায় দেওয়া যাবে।
—–রাইট।বাট করবোটা কিভাবে?দেখো তূর্য যেহেতু ইমরানের দুর্বলতা ইরা। তাই এই কাজটাতেও ইরাকে দরকার হবে।
তূর্য কিছুটা রেগে গেলেও নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বলে,
——হুম।কি আর করবো।সব কিছুকে ঠিক করার জন্যে ইরাকে অনেকটাই ইনবোলভ করতে হবে না চাইতেও।
——তার জন্যে এখনো ইমরানকে বলা যাবে না ইরা বিবাহিত।আর ইরাকে অভিনয় করতে হবে নরমালি।
রক্তিম চোখে তূর্য ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
——হুম তাই ই করতে হবে।তবে ওই ইমরান যেনো আমার ইরাকে স্পর্শ না করে।করলে বা হয়তো আমার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেয়ে ইমরানকে সেদিনই শেষ করে ফেলবো।
——তূর্য প্লিজ ঠান্ডা হও।এখন মাথা গরম করে কিছু হবে না।যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায়।
🍂
ইমরানের বডিগার্ডরা ইরাকে তার রুম দেখিয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষনপর ইমরান ফাহিমকে ডেকে আনে তার রুমে।সাথে তূর্য আর আমিরও ফাহিমের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ইমরান ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তূর্য আর আমিরের দিকে নিক্ষেপ করে বলে,
——আমার লোকেরা তো যাকে পারে তাকেই তুলে আনলো তোমার(ফাহিম)আর ইরাকে সহ।আমির আর তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে ওরা কারা?
ফাহিম কিছুটা ভয় পেয়ে যায় হঠাৎ ইমরান এই প্রশ্ন করাই।কেঁপে কেঁপে উত্তর দেয়,
——-তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে ও আমার কাজিন তূর্য মানে আমার খালার ছেলে আর আমিরের দিকে তাকিয়ে বলে,ও তূর্যের ছোটো ভাই আমির।
তা শুনে আমির কিছুটা রেগে যায়।বাট রাগটা ভিতরেই গুটিয়ে রাখে।’শালা আর অন্যকিছু বলতে পারলি না শেষমেশ তূর্যেরই ভাই বানাতে হলো।’মনে মনে বিড়বিড় করে বলে।
তূর্য ও খুশি না ফাহিমের বানানো এই মিথ্যে সম্পর্কে যেখানে আমিরকেই তার ছোট ভাই করে দিলো ফাহিম।
ইমরান সব শুনে বলে,
—–আচ্ছা তো ভালোই হলো ইরা আর আমার বিয়েতে সবাই থাকছে।সমস্যা হবে না।এক সপ্তাহের মধ্যে আমি ইরাকে বিয়ে করে ফেলতে চাই।বুঝছো ফাহিম।আর তোমার যে কাজিন তূর্য, আমির ওয়াটএবার যারাই আছে ওদের নিয়ে আমার বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও।অনেক দুমদাম করেই করব।বলেই শয়তানির হাসি দিলো।
ফাহিম, তূর্য রেগেই বেশ চওড়া হয়ে আছে।তূর্যের তো ইমরানের শয়তানি মার্কা হাসি দেখে ইচ্ছে করছে এখুনি সব দাঁত এক ঘুষিতে ঘুরোঘুরো করে দিতে।যদি ম্যাটার শুধু ইরার হতো ইরার ফ্যামিলির না হয়ে তাহলে হয়তো তাই করতো ।আমিরের মনে রাগ উঠলেও চুপ করেই আছে কোজ আমিরের তো অন্য প্লান আছে।সে ইমরানকে দিয়ে তূর্যকে মেরে ইরাকে নিজের করে নিয়ে পালাবে।তাই আমিরের এতো মাথা ব্যাথা নেই।
ফাহিম ইমরানের সব কথা শুনেই যাচ্ছে।ইমরান তো ব্যস্ত তার বিয়ের প্লানিং নিয়েই।সবশেষে ফাহিম সব কথার উত্তর হ্যাঁ বলেই বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
♦
ইমরান দাঁড়িয়ে ইরার রুমের দরজায় ঠকঠক করতে থাকে।ইরার রুমের দরজা খুলে দেই।ইমরানকে দেখে যেনো ইরার এখুনি ইচ্ছে করছে পাশে থাকা গ্লাসটা দিয়ে মাথা ফাটায় দিতে।বাট তূর্য তাকে যেভাবে বলে গেছে তাকে সেভাবেই করতে হবে।চুপ থাকতে হবে।
ইমরান ইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—–কি হয়ছে এতো দুখি কেনো লাগতাচে তোমারে?
ইরা অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে উত্তরে বলে,
—–ক কয় নাতো।আমি ঠিকি আছি।
—–এভাবেই থাকো! এহানে আইছো যতো তারাতারি সব মানাই নিতে পারবা ততোই তোমার লইগগা ভালো।আর এক সপ্তাহ পর তুমি আমার রুমে থাকবা আর দুরে থাকতে হয়বো না।
—–আজব একটা বিবাহিত মহিলাকে এই লোকটা কি বলে মাথা ঠিক আছে তো।রাগে তো আমার গা জ্বলে যাচ্ছে এই বদমাইশ লোকটার কথা শুনে।(মনে মনে ইরা বলে)
—–এ্যা, কিছু কইলা?
—–জ্বি না।
—–তোমার এই চুপচাপ চাহনি তো সেইদিন আমারে গ্রাস করছে।তোমার ছবি দেইখাই পুরোই ক্রাস একদম।তারপরই ফাইনাল করলাম বিয়ে করমু তো তোমারেই।আর পরে আরও জানতে পারছি যে ফাহিমের বোন ই তুমি।তহন আরও খুশি লাগচে।আহা!
—–আমার মাথাটা ব্যাথা করছে খুব।আমি এখন একটু ঘুমোতে চাই।
—–ওহ আচ্ছা ঘুমাও তুমি।আমি তাইলে চল্লাম।
♥
রাতের আকাশে তারা গুলো কালো মেঘের বুকে বার বার লুকোচুরি খেলছে তাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইরা।আবার কিছুক্ষণ পর চাদঁটা মেঘের বুক থেকে সরে আসছে।মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে ইরা।তূর্যকে মিস করছে।দুইহাত দিয়ে পিছন থেকে কেউ একজন ইরার চোখ দুটো চেপে ধরলো।ইরা তার হাতের স্পর্শ পেয়েই বুঝতে আর বাকি রইলো না এইটা যে তূর্য।কিছুটা ভয়ে পেয়ে যায় তূর্যকে এই সময় এভাবে দেখে।তূর্য ইরার চোখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে এসে দাড়াঁয়।
——তূর্য এখন তুমি এখানে?যদি ইমরাম এসে যায়।আমার ভয় করছে।
—–আরে দুরু তুমি এতো ভয় কেনো করো? এতো সুন্দর চাদেঁর রাত আর এতো সুন্দরী বউকে রেখে আমি একা কি করে ঘুমায় বলতো?
——-ইরা কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।
——আর তুমি কি আমাকে মিস করছিলে না বলো?
——হুম তা করছিলাম।বাট ওই ইমরান জগন্যটার কথা মনে পরলে ভয় করে।
——বাদ দাও তো ওই ইমরানের কথা।এই রাতটা এখন তোমার আর আমার।
তূর্য ইরাকে তার বুকের কাছে টেনে নিয়ে চাঁদের উজ্জ্বলতার দিকে তাকিয়ে আছে।ইরার মুখে চাদের আলো পরছে।তাতে ইরার চাহারার সৌন্দর্য যেনো আরও বেড়ে গেলো তূর্যের কাছে।ইরার কপালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।আলতো করে দু চোখের পাতায়,গালে কিস করে ঠোঁট জোড়া আকরে নিলো তূর্য নিজের ঠোঁটের সাথে।ইরা কিছুটা লজ্জা পেলেও তূর্যের আলতো ছোঁয়ায় নিজেকেও হারিয়ে ফেলল।জোরে আকরে খামছে ধরে আছে তূর্যের শার্ট।কিছুক্ষণ পর তূর্য ইরার ঠোঁট ছাড়াতেই তাকে কোলে তুলে নিলো।দুইজন দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে।তূর্য ইরাকে বিছানায় ফেলে ইরার উপর উঠে যায়।ভালোবাসা সাগরে ডুব দিয়ে কাটিয়ে দেয় পুরো রাত।
সকালে ইরার ঘুম ভাঙতেই দেখে তূর্য তাকে জরিয়ে ধরে এখনো গভীর ঘুমে।ইরা লাফ দিয়ে উঠে তূর্যকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে।তূর্যর ঘুম ভাঙতেই বলে,
——কি হলো সুইটহার্ট এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো?
—–তোমার মাথা ঠিক আছে?
—–আমার মাথা তো কালকেই নষ্ট করে দিয়েছো।(হেসে)
—–ধ্যাত!এইটা আমাদের বাসা না তূর্য।ইমরান যেকোনো মুহুর্তে আমাকে ডাক দিতে আসতে পারে।তুমি যাও এখন।
—–এই ইমরান শালার জন্যে এখন আমার নিজের বউই রুমে থাকতে দেয়না।উফফ কি জামেলাই পরলাম।
——হয়েছে হয়েছে বুঝছি এখন যাও প্লিজ।
——অকে যাচ্ছি।বলে ইরার কপালে চুমু দিয়ে চলে যায় তূর্য।
তূর্যকে বের করে ইরা গোসল করে দ্রুত রেডি হয়ে নেই।তারপর সবাই ডাইনিং রুমে এসে নাস্তা করে।ইমরান খাচ্ছে আর ইরার দিকে তাকিয়েই আছে।তা দেখে আমিরের ইচ্ছে করছে উঠে পুরো খাবারের প্লেটটা ইমরানের মুখে মারতে।পাশে লিজাও বসে আছে।আমিরের দিকে সেও তাকিয়ে আছে।সেইদিনের আমিরের রোমাঞ্চ ভরা চিঠি সে চেয়েও ভুলতে পারছে না।তূর্য ও খাচ্ছে।আর ইরার দিকে তাকিয়ে আছে তাই ইমরানের নজর কার দিকে তা দেখতে পারছে না।
🔶
প্রায় ৪দিন পর,
বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেলো।এখনো তূর্য ইমরানের সেই ডকুমেন্টস গুলোর কোনো হদিস খুঁজে পাইনি।তাই মাথায় টেনশন কাজ করছে।আজ ইরা আর ইমরানের একসাথে গায়ে হলুদ হবে।পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।তূর্য মেহমান খাতিরে বিজি।ফাহিম সেই সুযোগে কিছু রুম তন্নতন্ন করে খুঁজছে ইমরানের ডকুমেন্টস বাট পাচ্ছে না।তূর্যকে বার বার ইশারা করে তার ব্যর্থতার তথ্য দিচ্ছে।
____________________
চলব💠