#ভালোবাসা ভালোবাসা
#পর্ব – ০৫ (শেষ)
#লেখিকা > জান্নাতুল ইসলাম মাওয়া
-না। সে আমাকে ভালোবাসে নি।চলো রুমে চলে যাই।অনেক রাত হয়েছে। অধরা আগে হাঁটতে শুরু করে। অয়ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে।অধরা রুমে এসে শুয়ে পড়ে।অয়ন দরজা বন্ধ করে রুমের আলো নিভিয়ে দিতেই অধরা চিৎকার করে বললো,আলো জ্বালান আমার ভয় করে।
-কিন্তু আলো জ্বললে যে আমার ঘুম আসে না।
-আপনার ঘুম না আসলে আপনি জেগে থাকবেন। সমস্যা কোথায়?
-আমার কোনো সমস্যা নেই।আমি কম্বলের ভেতরে ঢুকে ঘুমিয়ে যাবো।
-না।
-কী না।আপনি কম্বলের ভেতরে ঢুকে ঘুমাতে পারবেন না।
-কেনো?
-আমার ভয় করবে।
-অধরা তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো।
-বলেন।
-আমি ডিভোর্স চাই।আমরা দুজন দুজন কে ভালোবাসি না।আমরা এক সাথে সুখী হতে পারবো না।কথাটা যতো দেরিতে বলা হতো তোমার সমস্যা ততো বেড়ে যেতো।তাই কথাটা আগেই বলে দিলাম।
কথাটা শুনে অধরা চুপচাপ বসে থাকে।অয়ন কে একটা প্রশ্নও করলো না।
—-
সকালে ঘুম থেকে অয়ন অধরা কে পাশে দেখলো না।অয়ন অস্থির হয়ে উঠে বসে।কম্বল সরিয়ে অধরা কে রান্না ঘরে খুঁজতে চলে গেলো।অধরা কে রান্না ঘরে না পেয়ে মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো।অধরা বসে আছে মায়ের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।
-আম্মু তুমি তৈরি?
-হ্যাঁ।
-আমি ফ্রেস হয়ে আসছি একটু অপেক্ষা করো।
অয়ন ফ্রেস হয়ে এসে ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,চলো আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।
-বউ মা একা বাসায় থাকবে? (বাবা)
-সমস্যা হবে না।আমি তোমাদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসবো।
-যেতে হবে না। আমার যেতে পারবো।
অয়ন দরজা বন্ধ করে দিলো।অধরা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।অয়ন পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,মন খারাপ কেনো?
-আমার মন খারাপ হবে কেনো?
-বুঝতে পারছি না।তোমাকে কেমন জানি লাগছে।
অয়ন রুমে চলে যায়।অধরা সোফায় বসে আছে।
-অধরা দরজা বন্ধ করে দিয়ো।
-কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
-অফিসে দরকারী কাজ আছে।
-দাঁড়ান একটু।
অধরা দৌড়ে রুম থেকে চাবি এনে দেয়।অয়ন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হাতে নিয়ে প্রশ্ন করলো এইটা তো বাসার চাবি?
-হ্যাঁ এইটা বাসার চাবি।আপনাকে দরজা খুলে দেওয়ার মতো কেউ বাসায় থাকবে না।
-মানে?
-মানে আমি চলে যাচ্ছি।
অয়ন কিছু বললো না।বলার মতো কোনো অধিকার অয়নের নেই।চাইলেও অধরা কে আটকে রাখতে পারবে না।অয়ন চাবি পকেটে রেখে বের হয়ে যায়।
—–
রাতে অয়ন অফিস শেষে বাসায় ফিরছে।অয়ন জানে অধরা চলে গেছে। একটি বার থেকে যেতেও বলতে পারে নি।আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।একা লাগছে এতোটা একা কখনো লাগে নি।অধরা যেটুকু সময় আমার সাথে ছিলো।মনে হতো আমার পৃথিবী আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। তুমি চলে যাওয়াতে চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে। অয়ন একা রাস্তায় হাঁটছে রাত দুইটা বেজে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে অয়নের ভিজে যাওয়া চোখ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে না বাসায় ফিরে যেতে একা দম বন্ধ হয়ে আসবে।অয়ন বাসায় গিয়ে সোফায় ব্যাগ ছুড়ে মারলো।বাসাটা কেমন শূন্য হয়ে আছে।অধরার স্মৃতি গুলো ছুটে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অধরা কোথাও নেই।রুমে গিয়ে দেখলো টেবিলের উপর একটা কাগজ কাগজের উপরে একটি গোলাপ রাখা।কাগজটা দেখে মনে হচ্ছে চিঠি। অয়ন তাড়াতাড়ি করে গোলাপ ফুল সরিয়ে কাগজটা হাতে নিলো,
প্রিয়তম,
তুমি যখন বলেছিলে ডিভোর্স চাও।তখন আমার প্রচন্ড কষ্ট হয়েছে।তোমাকে কিছু বলার মতো ভাষা আমি খুঁজে পাই নি। তাই চুপ ছিলাম।তবে বড্ড অভিমান হয়েছিলো।আমি চেয়েছি তুমি আমাকে ভালোবাসো কথাটা বলতে। কিন্তু তুমি বলো নি।তুমি যতোবারই বলেছো আমাকে কিছু বলতে চাও।আমি ততোবারই তোমার থেকে ভালোবাসি শব্দটা আশা করেছি।কিন্তু ভালোবাসি না বলে তার চেয়ে ভয়ংকর একটা শব্দ তুমি বললে।
তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে আমার ভালোবাসার মানুষটি কে। আমি আসলে তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি যখন প্রতিদিন সকালে বাস স্টেশন দাঁড়িয়ে থাকতে আমাকে একটি নজর দেখার জন্য। ঠিক তেমনি আমার মনও তোমাকে একটি নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো।তোমাকে কখনো বুঝতে দেই নি।আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্রথম প্রথম তোমাকে দেখলে আমার প্রচন্ড রাগ হতো।মনে হতো তুমি বোকা। তোমার মতো বোকা কোনো ছেলে নেই।আজ সত্যি মনে হচ্ছে তুমি বোকা।নিজের বউ কে ভালোবাসি বলার মতো সাহসও তোমার নেই।
বাসা থেকে যখন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। তখন আমি ভেবেছিলাম তোমাকে ভালোবাসি বলেই দিবো।কিন্তু তখন তুমি নিরুদ্দেশ তোমার দেখা মিললো না।ভাইয়ার রাগারাগিতে পাত্র পক্ষের সামনে যাই।আমি সেইদিন তোমাকে দেখে চমকে গিয়েছি।কোথায় ছিলে এই কয় দিন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিলো?তোমাকে স্বামী হিসেবে আমি পাবো কখনো ভাবতেই পারিনি।ভাবতে পারিনি পেয়েও হারিয়ে ফেলবো তোমাকে।তুমি হয়তো সত্যি আমাকে ভালোবাসো না।কিন্তু আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।
ভালো থেকো ভালোবাসা।সুখে থেকো।
………..
চিঠিটা পড়ে অয়ন বসে যায়।কপালে হাত দিয়ে ভাবছে, কেনো করলাম আমি এমন।আমি একটা বার যদি বলতাম ভালোবাসি।তাহলে হয়তো অধরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতো না।অয়ন অধরার নাম্বারে কল দিলো অধরার মোবাইল অয়নের রুমে বেজে যাচ্ছে। অধরা মোবাইল নেয় নি।অয়ন অধরার বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নিলো অধরা সেখানেও যায় নি।অধরা কোথায় গেছে।অয়ন চিন্তিত হয়ে রাস্তায় নেমে পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে খোঁজ নিচ্ছে। কিন্তু কেউ অধরার খোঁজ দিতে পারছে না।অয়ন ছাঁদের এক কোনে বসে আছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে।আমি সত্যি বোকা ভালোবাসা বুঝার মতো ক্ষমতা আমার নেই।আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসো।অধরা প্লিজ ফিরে আসো।আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না।আমাকে এভাবে একা করে দিয়ো না।অয়ন হঠাৎ অনুভব করলো কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরেছে।এই ছুঁয়া অয়নের চেনা অয়ন বুঝে গেলো কে জড়িয়ে ধরেছে।অয়ন ঘুরে অধরা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।অধরার চোখগুলো ভিজে আছে।
-আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না অধরা।
-অধরা চুপ।
-আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষণ। আমি তোমাকে কতো জায়গায় খুঁজেছি জানো?
-আমি সব জানি।আপনি এমন কেনো?
-কেমন আমি?
-আপনি এখনো বলেন নি।
-কি বলিনি।
অধরা অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেন।অয়ন অধরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,ভালোবাসি মহারানী আপনাকে।
-এইটুকু বলতে এতো সময় লেগেছে।
-আমি কিভাবে জানবো তুমিও আমাকে ভালোবাসো।তুমি কখনো আমাকে বলোনি।
-আপনি বলেছেন?
-না।
-তাহলে।
-এখনো ঝগড়া করবে?
-সারা জিবন ঝগড়া করবো।
অধরা অয়ন কে মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।অয়ন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,মেডাম রাগ একটু কমিয়ে আমাকে ভালোবাসবেন।
-না৷
সমাপ্ত
(০১)