মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৩৩+৩৪+৩৫

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৩
চারদিকে নিস্তব্ধতা বিদ্যমান।সেই নিস্তব্ধতা কাটলো মারিয়ার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে।মারিয়া নিজের বাবার দিকে তাকাতে পারছে না।ও নিজের বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।এতোটাই কষ্ট দিয়েছে যে ওর জন্যে আজ ওর বাবার চোখে পানি। যে বাবাকে মারিয়া ওর বোঝার বয়সের পর থেকে কখনই কাঁদতে দেখে নি।কি বলবে মারিয়া তাকে?ঠিক কি দিয়ে কি বোঝাবে?মারিয়া তো জানতো ওর বাবা ওকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।কখনও উচ্চ শব্দে একটা ধমকও কোনোদিন দেয়নি।ওর মা ওকে যেদিন বকা দিত।তা জানতে পারলে ওর বাবা ওর মাকে ধমকে ধামকে রাখত না।ঠিক এই কারনেই কি সে কেন তার মেয়েকে বকা দিলো।আর মারিয়া কিনা তাকে তার মনের কথাগুলো বলতে পারেনি।একবার বাবাকে বিশ্বাস করে মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেনি।মারিয়া ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঢেকে উঠল,’ বাবা! বাবা!’

মারিয়ার বাবা ভেজা কণ্ঠে বলেন,’ ডাকিস না আমায় বাবা।আমার মনে হচ্ছে এই বাবা ডাকের যোগ্য বোধহয় আমি হতে পারেনি।নাহলে নিজের মেয়ের মনের কথা।কেন আমায় অন্য একজনের থেকে শুনতে হবে?’

মারিয়া ধুকরে কেঁদে উঠে বলে,’ নাহ বাবা।এভাবে বলো না।তুমি এইভাবে বললে আমি বেঁচে থাকতেই মরে যাবো বাবা।তুমি আমার বাবা।আমার জীবনে সবথেকে বেশি আপন মানুষটা তো তুমিই।সেই তুমি আমায় এভাবে বললে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো বাবা।আমি তো তোমার মেয়ে বাবা।আমায় ক্ষমা করে দেও বাবা।আমি বুঝতে পারিনি।তুমি এতোটা কষ্ট পাবে।আমি ভয় পেতাম তোমায় নীলের কথা বলতে।তুমি কষ্ট পাবে এটা ভেবে।আর তুমি তো জানো তোমার মেয়ে আর সব মানতে পারে।কিন্তু তার বাবাকে কখনও কষ্ট দিতে পারে না।কিন্তু দেখো শতো চেষ্টা করেও।হয়তো মনের অজান্তেই কিন্তু তোমায় কষ্ট দিয়ে ফেললাম।আ’ইম সরি বাবা।’

মারিয়া দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।মারিয়ার বাবা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।মেয়েটা তার বড়ো আদরের।আর সেই আদরের মেয়েকে এইভাবে তিনি মারলেন। উনার ভীতরটা হুঁ হুঁ করে উঠল।তিনি দ্রুত গিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।মারিয়া বাবার সান্নিধ্য পেয়ে যেন নিজেকে আরও গুটিয়ে নিলো ওর বাবার বুকে।কাঁদতে কাঁদতে বলছে,’ আই’ম সরি বাবা।আই’ম সরি।রেয়েলি ভেরি সরি।’
‘হুঁশ! কাঁদে না আর।তুই তো আমার কলিজা।আমার সোনা মা।বাবাকে ক্ষমা করে দিস।বাবা তোকে এইভাবে জোড়ে মেরে ফেলেছি।’
‘ উঁহু বাবা।ক্ষমা কেন চাইছ?আমি তোমার সন্তান আর বাবা-মা তাদের সন্তানদের শাষণ করতেই পারে।’

বাবা মেয়ে নিজেদের মান অভিমান মেটাতে ব্যস্ত।আর তাদের দেখে সবাই মুগ্ধ।সত্যি বাবা মেয়ের মতো মধুর সম্পর্ক আর হয় না।এভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটল।মারিয়ার কান্না থেমে আসতেই মারিয়া সরে আসল বাবার বুক থেকে।মারিয়া বাবাকে মেয়েকে নিজের সাথে আগলে নিয়েই এগিয়ে যায় নীলের দিকে।নীল উনাকে দেখেই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালো।মারিয়ার বাবা গম্ভীর মুখে হঠাৎই হেসে উঠলেন।নীলের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিলেন।নীল অবাক হয়ে তাকালো উনার দিকে।তিনি হেসে সুধান,’ আগামী শুক্রবার তোমার ফ্যামিলির সবাইকে নিয়ে এসো।আর বাদ বাকি যা বলার তাদের সামনেই নাহয় বলব।’

নীল ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে বোকার মতো প্রশ্ন করল,’ তার মানে কি আংকেল আপনি আমার শশুড় আব্বা হতে রাজি?’

নীলের এহেন কান্ডে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।নীল থতমত খেয়ে গেল।সে একটু আগে কি বলেছে তা বুঝতে পেরেই লজ্জা পেলো।ইহান নীলের পিঠে চাপড় মেরে হেসে বলে,’ হ্যা রে রাম ছাগল সে রাজি। এইবার তোর শশুড় আব্বাকে সালাম কর জলদি।’
‘ হ..হ্যা করছি।’

নীল উবু হয়ে উনাকে সালাম করতে নিতেই তিনি নীলকে ধরে থামালেন।তারপর নীলকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।নীল ও মুচঁকি হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন।তারপর সরে আসল দুজনে।

রুদ্রিক এইবার গম্ভীর স্বরে বলে,’ তো আমাদের এখন যেতে হবে আংকেল।ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস আছে আমাদের।আসলে সামনেই ইয়ার ফাইনাল এক্সাম তো তাই।’

মারিয়ার বাবা বলেন,’ হ্যা তা জানি। তাই আমিও আর তোমাদের আটকাবো না।তবে সময় করে সবাই মিলে এসে বেড়িয়ে যেও আমার বাড়ি থেকে।এটা নিজেদের বাড়ির মতোই মনে করবে।’

তারপর মারিয়ার দিকে ফিরে বলেন,’ তবে যা।আর হ্যা সাবধানে যাবি।পৌছে আমায় ফোন করিস।’

‘ আচ্ছা বাবা।’

নীল এগিয়ে এসে মারিয়ার হাত আকঁড়ে ধরল ওর হাতের মুঠোয়। মারিয়া অবাক হয়ে গেল নীলের কান্ডে।বাবার সামনে এসব কি করছে নীল।সে হাত মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিলো।কিন্তু নীল সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে,’ আপনার মেয়েটাকে যেহেতু আমায় দিয়ে দিয়েছেন আংকেল।তবে ওয়াদা করলাম।এইযে হাতটা ধরেছি।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।ওকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখব।কখনও কষ্ট পেতো না দিবো না।এটা প্রমিস করলাম আমি আপনার কাছে।’

মারিয়ার বাবা মুগ্ধ হলেন নীলের কথায়।তিনি বলেন,’ তোমরা সুখে থাকলেই আমি সুখি।আর একজন মেয়ের বাবা এর থেকে আর বেশি কিছু চায় না।’
‘ তবে আসি আংকেল।’
‘ এসো।আর সাবধানে যাবে সবাই।’

মারিয়ার বাবা আর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সবাই আবার ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।একজোড়ার সিটিং তো হয়ে গেল।এখন সিয়া আর অনিকের জন্যে টেনশন হচ্ছে ওদের।সিয়া না জানি কি বলবে অনিককে।সবাই বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দিলো।যতো দ্রুত সম্ভব ভার্সিটি পৌছাতে হবে।
_______________
অনিক সিয়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।সিয়া আজ একটা কালো রঙের কামিজ পরেছে। খোলা চুল,মুখে নেই কোনো ভারি প্রসাধনীর ছোঁয়া।মেয়েটাকে এতেই যেন মায়াবী লাগছে ভীষণ।অনিক চোখ ফেরাতে পারছে না সিয়ার উপর থেকে।প্রকৃতির নির্মল বাতাস এসে ক্ষণে ক্ষণে সিয়ার খোলা চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।অনিক মুগ্ধ হয়ে তা দেখছে।আগেরকার সময় হলে অনিকের এই মুগ্ধ দৃষ্টি দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যেতো সিয়া।তবে আজ তার ছিঁটেফোটাও ওর মধ্যে নেই।অনিকের জন্যে যেই ভালোবাসা ওর মনে ছিলো।তা অনিকের কাছ থেকে শতো অপমান,লাঞ্চনা পেতে পেতে চাপা পড়ে গিয়েছে।আর সিয়া সেই ভালোবাসাকে আর কখনও বাহিরে প্রকাশ করতেও চায় না।হ্যা, তার কষ্ট হয় অনেক নিজেকে সামলাতে।কিন্তু সে সামলে নিতে পারবে।যেমনটা এতোদিন যাবত করে এসেছে।সিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’ দেখেন আমি আপনাকে এখন যা বলব তা মন দিয়ে শুনবেন।বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করবেন আশা করি।’

অনিক সরল গলায় বলল,’ আমার মন তোর কাছেই।তুই শুধু বলতে থাক।’

অনিকের এসব কথায় সিয়ার এখন ভালোলাগে না।বিরঞ্চ সে বিরক্তবোধ করে।এতোদিন তো তাকে দিব্যি সে অপমান করে বসতো।আর হঠাৎই অনিকের এহেন ভালোবাসা তার সহ্য হয় না।সিয়া নিজেকে সামলে নিলো।ধীরে স্বরে বলল,’আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন কিনা জানিনা আমি অনিক।কিন্তু বিশ্বাস করুন। আমি যদি আগের সিয়া হতাম আপনার এইসব কথায় আমি অনেক খুশি হতাম।আমার থেকে হয়তো সুখী কেউই হতো না।কিন্তু এখন আমি আপনার এসব কথায় আমার বিন্দুমাত্র কিছু যায় আসে না।বরঞ্চ বিরক্ত লাগে।’

অনিক অবাক হয়ে গেল সিয়ার কথায়।সে ভাবতে পারেনি সিয়া এমন একটা কথা বলে ফেলবে এইভাবে নির্দ্বিধায়।অনিক কণ্ঠে অবাকের রেশ বিদ্যমান।
‘ সিয়া তুই কি বলছিস এসব?’

সিয়া শক্ত কণ্ঠে বলে,’ যা বলছি ঠিক বলছি।কেন কষ্ট হচ্ছে আপনার?হুম,আমারও হয়েছিলো সেদিন।যেদিন সবার সামনে আপনি আমাকে বাজেভাবে অপমান করে আমার সাথে ব্রেকাপ করে নিয়েছিলেন।’

অনিক শুকনো ঢোক গিলল।বুকের বাপাশটায় ব্যথা হচ্ছে সিয়ার এসব কথা শুনে।অনিক জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,’ সিয়া দেখ।আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে।আমি তার জন্যে তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।প্লিজ এইভাবে বলিস না।তুই এখন থেকে যা বলবি আমি তাই করব।তবুও আমাকে এসব বলে কষ্ট দিস না।আমি সহ্য করতে পারি নাহ। ‘

সিয়া হাসল।তার হাসিতে তাচ্ছিল্যতা বিদ্যমান।সিয়া বলে,’ আমি তো কোনো একসময় সহ্য করেছিলাম।এর থেকেও বেশি কঠিন সব কথা বলেছিলেন আপনি আমায়।তবে আজ কেন আমার সামান্য কথায় আপনার এতো কষ্ট হচ্ছে?আমি তো দিব্যি আপনার সেই অপমান সহ্য করে এই পর্যন্ত এসেছি। আপনি পারবেন না কেন?’

অনিক অসহায় গলায় বলে,’ সিয়া তুই তো আমার ভালোবাসিস।’

সিয়া চিৎকার করে উঠে,’ হ্যা ভালোবাসি আপনাকে।অনেক ভালোবাসি।তবে সেই ভালোবাসাকে আমি মাটিচাপা দিয়ে রেখেছি। আর তা আর কখনই আমি প্রকাশ করতে চাই না।অনেক সহ্য করেছি।আর পারব না আমি।বড্ড ক্লান্ত আমি অনিক।তোমাকে ভালোবেসে আমি কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি।এতোই যদি আমাকে ভালোবাসেন তবে কেন সেদিন আমাকে রেখে অন্য মেয়ের কাছে গিয়েছিলেন?কেন সেই মেয়ের কথায় আমাকে পুরো ভার্সিটির মানুষদের সামনে অপনান করেছিলেন।’

অনিক বোঝাতে চেষ্টা করল,’ দেখ সিয়া মানুষ মাত্রই তো ভুল।আর তাছাড়া তো তুই জানতি আমি এমনই।তা জেনেই তো আমায় ভালোবেসেছিস।’

সিয়া উচ্চস্বরে হেসে উঠে।হাসি থামিয়ে বলে,’ সেটাই তো আমার জীবনের সবথেকে বড়ো ভুল।আমি তোমার মতো একটা মানুষকে ভালোবেসেছি।আমি মনে করেছি আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারব।কিন্তু আমি ব্যর্থ।এই জন্যে আমি দুঃখিত।আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।কিন্তু অনেক হয়েছে আমি আবার সেই কষ্ট সহ্য করতে চাই না।আমার বাবা মা অনেক আশা নিয়ে আছেন আমায় নিয়ে।আমি তাদের আশা পূরণ করতে চাই।পড়ালেখা করে ভালো একটা পজিশনে যেতে চাই।যা আবারও আপনার কাছে ফিরলে সম্ভব হবে না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আজ থেকে আপনার আর আমার মাঝে কিছু নেই।কিছু নেই মানে নেই।আপনি আমাকে ভুলে যান। দয়া করে আমার পিছনে আর পরে থাকবেন না।আমি দোয়া করব আপনি আমার থেকে বেটার কাউকে পেয়ে যাবেন।তবুও আমায় রেহাই দিন।আর কখনও এই ভালোবাসার দাবি নিয়ে আমার কাছে আসবেন না।’

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে সিয়া হাটা ধরল। ও চলে যাচ্ছে।তার সহ্য হচ্ছে না অনিককে।পুরনো আঘাতটা আবারও তড়তাজা হয়ে গিয়েছে।সিয়ার চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে।কান্না না করতে পারার কারনে।কিন্তু সিয়া কান্না করতে চায় না।কাঁদতে চায় না সে অনিকের কারনে।অনেক তো কেঁদেছে।সে আর ক্ষয় করতে চায় না তার চোখের মূল্যবান জলগুলো।সিয়া চলে গেল।আর অনিক স্তব্ধ হয়ে দেখে গেলো শুধু সিয়াকে। তার সিয়া তো এতো পাষাণ ছিলো।তবে এ কোন সিয়াকে সে দেখছে।এই সিয়া এতো শক্ত কণ্ঠে তাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে গেলো।অনিকের সহ্য হচ্ছে না।আজ মনে প্রাণে তার শূন্যতা বিরাজ করছে।তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলছে সে।বিষাদতায় ছেঁয়ে যাচ্ছে হৃদয়।অনিক সহ্য করতে পারল না।দপ করে বসে পরল মাটির উপর।এইভাবে কতোক্ষণ রইলো জানে না সে।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই ধ্যান ফিরে অনিকের।অশ্রুঘেরা চোখজোড়া নিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে রুদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে।পিছনে নীল,সাফাত আর ইহান।মারিয়াকে রুদ্রিক সিয়ার কাছে পাঠিয়েছে।সে জানে সিয়াও ভেঙে পরেছে।রুদ্রিক আর ইহান অনিককে ধরে দাঁড় করালো।অনিক উঠে দাঁড়াতেই সে রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল।রুদ্রিক অনিকের কাঁধে হাত রাখল।অনিক কাঁদতে কাঁদতে বলে,’ ও আর আমার কাছে ফিরবে না রুদ্রিক।ফিরবে না।আমায় আজ চিরতরে নিঃশেষ করে দিয়ে গেলো ও।আমি সহ্য করতে পারছি না দোস্ত।আমি কি করব বল?ঠিক কি করলে ও আমার কাছে ফিরে আসবে?’

রুদ্রিক দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিকে তাকিয়ে নিষ্প্রভ কণ্ঠে বলল,’ তুই চেষ্টা করতে থাক।চেষ্টা করতে তো মানা নেই।তবে যেদিন মনে করবি।না আর যতো কিছুই তুই করিস না কেন?সিয়া তোর কাছে ফিরবে না।তবে সেদিন বুঝে নিবি সিয়া আর কোনোদিন হবে না।আর দোস্ত আর যাই হোক।ভালোবাসা কখনও জোড় করে হয় না।ভালোবাসা তো হয় মন থেকে।আর সিয়াও তোকে ভালোবেসেছিলো।আর তুই নিজ হাতে সিয়ার সেই ভালোবাসাকে মেরে ফেলেছিলি।তার পরিবর্তে সিয়া তো তোকে কিছুই করিনি। তুই যেই কষ্ট দিয়েছিলি ওকে।’

অনিক কিছুই বলল না।সে চুপচাপ রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরে রইলো।কি আর বলবে। বলার তো কোনো ভাষাই সে পাচ্ছে না।শুধু সহ্য করা ছাড়া।আর অনিক তাই করছে।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৪
সময় চলে আপন গতিতে।দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ।সকাল থেকেই মন মেজাজ ভালো নেই অথৈয়ের।গরম মেজাজ সে কথার অগ্নিতে পারলে সবাইকে ভষ্ম করে দেয়।তার এই গরম মেজাজের কারনে রিধি,পিহু,প্রিয়ান,আহিদ বিরক্ত হয়ে আছে।কিছু বললেই ছ্যাঁৎ করে উঠে এই মেয়ে।বিরক্ত কণ্ঠে প্রিয়ান বলে, ‘ তোর এতো ত্যাছ (তেজ শুদ্ধ ভাষা।ত্যাছ আমাদের এখানের আঞ্চলিক ভাষা) ক্যান? খামোগা আমাগো সাথে এমন করতাছস ক্যান?ওইযে তোর জামাই ওইখানে গিয়ে তারা তোর রাগের ফোয়ারা দিয়ে জ্বালায় পুড়ায় ফেল।তবুও আমাগো খ্যামা(ক্ষমা) দে বা*।’

পিহু তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল প্রিয়ানের দিকে।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’ তুই কারে কি কইতাছস?তোরে এমন লাত্থি মারুম হনুমানের বাচ্চা।সর এনতে।সহ্য হইতাছে না তোরে আমার। এই পিহু এই বা**ডারে নিয়া যা।’

পিহু মুখ ঘুরিয়ে বলে,’ আমারে বলছ ক্যান?তুই নিজে ওরে সরাইতে পারোস না?’

প্রিয়ান ওকে নিয়ে এমন কাঁদা ছোড়াছুড়ি দেখে ক্ষ্যাপে গেল।রাগি স্বরে বলে, ‘ এই তোরা আমারে নিয়া এমন ফেলা ফেলা করতাছস কেন?যেমন করতাছস মনে হইতাছে আমি তোগো কোলে উইঠা বইসা আছি।’

‘ আপাততো তোর রেডিও ওফ কর।ওইটা দিয়াই তো মানুষরে আধপাগল বানায় ফালাবি। ‘

অথৈয়ের ব্যাঙ্গাত্মক কথায় প্রিয়ান ওর চুল টেনে ধরল।এতে যেন আরও রাগল অথ৷ সজোড়ে প্রিয়ানের পায়ে ওর পা দিয়ে আঘাত করল।প্রিয়ান আকষ্মিক আঘাতে ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। পা ধরে লাফাতে লাগল।অথৈ ফিক করে হেসে দিলো।বলল,’ বেশ হয়েছে।আর করবি আমার সাথে এমন?’

প্রিয়ান ব্যথায় নাক মুখ কুচকে বলে,’ শাকচুন্নির বাচ্চা তোরে যদি আমি মেরে আজ হাড্ডি গুড্ডি না ভেঙে দেই। তবে দেখিস।’

‘ পারলে আগে আমাকে ধরে দেখা।’ এটা বলেই অথৈ দৌড় লাগালো।একবার আহিদের পিছনে যাচ্ছে।তো একবার রিধি আর পিহুর পিছনে যাচ্ছে।এভাবে দৌড়াদৌড়ির এক পর্যয়ায়ে অথৈ আবারও গিয়ে দাঁড়ায় পিহুর পিছনে।প্রিয়ান ওকে ধরতে এগিয়ে যায়।হঠাৎ প্রিয়ান নিজের তাল সামলাতে না পেরে পিহুর উপরে পরল।প্রিয়ানের মতো এমন স্বাস্থ্যসম্মত ছেলে পিহুর মতো পুচকে একটা মেয়ের উপর পরলে কি সে আর নিজেকে সামলাতে পারে?পিহুর ক্ষেত্রেও তাই হলো।প্রিয়ান সোজা পিহুকে নিয়ে মাঠের মধ্যে পরে গেল।পিহু ব্যথায় নাক মুখ কুচকে ফেলেছে।তবে অতোটাও ব্যথা পায়নি।কারন প্রিয়ান তার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে পিহুর বাহুর দুপাশে দু হাত রেখে নিজেকে সামলে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।এদিকে পিহুর ব্যথায় চোখে পানি চলে এসেছে।আর প্রিয়ান সে তো হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ব্যথাতুর পিহুকে দেখতেও যেন প্রিয়ানের ভালো লাগছে।সে একধ্যানে তাকিয়ে আছে পিহুর দিকে। হঠাৎ আহিদের ডাকে ধ্যান ভাঙে ওর।
‘ কিরে সালা উঠছিস না ক্যান?পিহু ব্যথায় কেঁদে দিয়েছে।উঠ জলদি।’

হুঁশ ফিরতেই প্রিয়ান তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর পিহুকে উঠাতে সাহায্য করল।ভাজ্ঞিস এদিকটায় তেমন একটা মানুষ নেই। নাহলে কি একটা লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পরতো ওরা।পিহু ভেজা কণ্ঠে বলে,’ এমনভাবে পরে কেউ কারো উপর। এমন একটা হাতি মার্কা শরীরটা নিয়ে পরেছিস আমার উপর।চ্যাপ্টা হয়ে যাইনি সেটাই অনেক আহ্, আমার কোমড়।গন্ডার একটা।’

প্রিয়ান যেন চিন্তিত হয়ে পড়ল।পিহু কি আসলেই অনেকটা ব্যথা পেয়েছে।প্রিয়ান চিন্তিত গলায় বলে,’ দেখি?বেশি ব্যথা পেয়েছিস?চল তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।’

পিহু থতমত খেয়ে গেল প্রিয়ানের কথায়।ও ব্যথা পেয়েছে ঠিক আছে। তবে ওতোটাই না যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।পিহু আলতো স্বরে বলে,’ না আসলে ব্যথা পেয়েছি কোমড়ে।তবে অতোটাও না।ঠিক আছি আমি।’
‘ আর ইউ সিয়র?’
‘ হুম!’

প্রিয়ান রাগি চোখে তাকালো অথৈয়ের দিকে।দাঁত খিচিয়ে বলে,’ তোর কারনে এমন হয়েছে ভুতনি একটা।’

অথৈ মুখ কুচকে বলল,’ তুই এমন মাইয়া মাইনষের মধ্যে আইসা চিপকা থাকবি তা কি আমি জানি?’

‘ তুই কিন্তু মার খাবি?’
‘ আয় দেখি কে কাকে মারে?’

প্রিয়ান আবার আগালো।এইভাবেই খুনশুটি চলতে লাগল ওদের।আহিদ,রিধি,পিহু হাসাহাসি করছে খুনশুটি দেখে ওদের।

দূর থেকে বন্ধুদের সাথে হাস্যজ্জ্বল অথৈকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তবে মনে মনে একটা চাপা কষ্টও অনুভব করছে।ওদের বন্ধুদের মাঝে হঠাৎ কি হয়ে গেল।কেমন যেন নেতিয়ে গিয়েছে সবাই।এমন কেন হচ্ছে?তবে কি ওদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে শুরু করে দিয়েছে?রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।নাহ,তাকেই কিছু করতে হবে।এইভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।রুদ্রিক তার এই বন্ধুগুলোকে কোনোদিন হারাতে পারবে না কিছুতেই না।

ওদিকে প্রিয়ান দৌড়াতে দৌড়াতে রুদ্রিকদের সামনে এসে পরেছে।ওখানেই ব্রেক কষে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,’ রুদ্রিক ভাই প্লিজ আপনার বউকে থামান।’

রুদ্রিক প্রিয়ানের অবস্থা দেখে হেসে দিলো।বেচারার চুলগুলো সব এলোমেলো,ইন করা শার্টটাও ঠিক নেই।বোঝাই যাচ্ছে অথৈয়ের হাতে সে বেজায় মার খেয়েছে।রুদ্রিক হাসতে হাসতে বলে,’ তো তুমি কি এমন করেছ?যার কারনে সে তোমায় এইভাবে তাড়া করছে?’

প্রিয়ান অসহায় গলায় বলে,’ আর বলেন না ভাই।আপনার বউয়ের আজ কি যেন হয়েছে।সকাল থেকেই ভালো মন্দ কিছু বলা যাচ্ছে না।তাহলেই ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ করে উঠছে।’

ভ্রু-কুচকে আসে রুদ্রিকের।প্রশ্ন করল,’ কেন কি হয়েছে ওর আবার?’

প্রিয়ান মাথা চুলকে বলল,’ তা তো জানি না। ‘

তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখে অথৈ আসছে এদিকেই।সাথে রিধি,পিহু আর আহিদ।প্রিয়ান ওদের দেখেই বলল,’ ওই তো এদিকেই আসছে।আপনিই জিজ্ঞেস করে নিন।’

অথৈ দৌড়ে এসে প্রিয়ানকে ধরতে যাবে।তার আগেই রুদ্রিক ওর হাত আকঁড়ে ধরে থামিয়ে দেয়।অথৈ তা দেখে বলে,’ কি হলো?আপনি আমাকে আটকালেন কেন?’

রুদ্রিক পকেট থেকে রুমাল বের করল।অনেকক্ষণ যাবত দৌড়াদৌড়ি করার কারনে অথৈয়ের কপালে বিন্দু বিন্দু জমেছে।রুমাল দ্বারা তা খুব যত্ন করে মুছে দিতে দিতে বলে,’ কি হয়েছে তোমার?এমন ছোটাছুটি করছ কেন?এইযে গরমে কি অবস্থা হচ্ছে তোমার?’

ঘামটুকু মুছে অথৈয়ের কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুছে দিলো রুদ্রিক।সবার সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে লজ্জা পেলো অথৈ। ফর্সা গালে লালাভ আভা ছড়িয়ে পরল।তা দেখে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে।পিহু তা দেখে হৈ হৈ করে উঠল,’ বাহ বাহ।কি সুন্দর প্রেম।আহা,কারো নজর না লাগুক।’

অথৈ যেন এতে আরও লজ্জায় পরল।ছটফট করে দ্রুত সরে গেল রুদ্রিকের কাছ থেকে।এদিকে ইহান চিন্তিত স্বরে বলে,’ কিরে বোন?কি হয়েছে তোর?শরীর ঠিক আছে?’

ভাইয়ের আদুরে গলায় অথৈ যেন আহ্লাদে গদগদ হয়ে গেল।দু হাত বাড়িয়ে চলে গেল ইহানের কাছে।ইহানও আগলে নিলো বোনকে।অথৈ বাচ্চাদের মতো করে বলে,’ ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না।বাড়ি থেকে ভার্সিটি আর ভার্সিটি থেকে বাড়ি।এসব করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পরেছি।আমার অসহ্য লাগে এখন সবকিছু।’

ইহান মৃদ্যু হেসে বলে,’ হুঁ! তা এখন কি কর‍তে হবে আমাকে?’

ইহানকে ছেড়ে দিলো অথৈ।হাসিমুখে বলে,’ ভাইয়া প্লিজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি?ইনফেক্ট রুদ্রিক,তুই, সাফাত ভাইয়া,নীল ভাইয়া,অনিক ভাইয়া,মারিয়া,জেনি,সিয়া আপু।আর রিধি,প্রিয়ান, পিহু, আহিদ আমরা সবাই মিলে কোথায় কয়েকদিনের জন্যে ট্যুরে যাই।কি বলিস ভাইয়া?প্লিজ ভাইয়া।’

ইহানের বোনের আবদার ফেলতে পারছে না।আবার আর মাত্র দেঢ় মাসের মতো সময় আছে ওদের ইয়ার ফাইনাল এক্সামের।ইহান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।অথৈয়ের হাসি মুখ দেখে তা যেন আরও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে ওকে না বলার জন্যে।ইহান ধীর আওয়াজে বলে,’ শোন বোন।তোর আবদার তো আমি কোনোটাই কোনোদিন ফেলেনি।তুই এক কাজ কর রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদদের সাথে তুই চলে যা।তোর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে।বাট আমি আর রুদ্রিক বাকিরা যেতে পারবো না।আর মাত্র কয়েকদিন আছে ইয়ার ফাইনালের। এখন ট্যুরে যাবো কিভাবে?’

অথৈ কাঁদো স্বরে বলে,’ মাত্র তিন চারদিনের জন্যে ট্যুরে গেলে কি হবে ভাইয়া?প্লিজ চলো না।এমন করছিস কেন?’

‘ কিন্তু অথৈ তোর এই আবদারের কারনে তো অন্যদের পড়ায় সমস্যা হবে।’

অথৈ ইহানের থেকে সরে আসল।রুদ্রিককে মুখ ভার করে বলে,’ আপনার কি ট্যুরে যেতে কোনো প্রবলেম আছে?’

রুদ্রিক দুহাত দ্বারা চুলে ব্রাশ করছিল।অথৈয়ের কথায় বলে,’ আমার কোনো সমস্যা নেই।তোমার জন্যে আমি ওলওয়েজ ফ্রি।’

রুদ্রিকের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসল।অথৈ ‘ ধুর!’ বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।এই লোক শুধু তাকে লজ্জায় ফেলার ধান্দায় থাকে।রুদ্রিক মুচঁকি হাসল।অথৈ সাফাত,নীল,অনিক,সিয়া,মারিয়া,জেনি ওদের সবাইকে একই প্রশ্ন করল।তারাও বলল দু তিনদিনের জন্যে তাদের কোনো সমস্যা নেই।অবশ্য অন্যসময় জেনি হলে এতো সহজে রাজি হতো না।তবে ওইযে রুদ্রিক যাবে। তাই সেও রাজি হয়ে গিয়েছে কোনো ভণিতা ছাড়া।সবার সম্মতি পেয়ে অথৈ ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ দেখছিস ভাইয়া।সবাই রাজি।শুধু তুই-ই এমন করছিস।’

ইহান বোঝানোর জন্যে বলল,’কিন্তু তারা রাজি হচ্ছে সেটা না।এইভাবে এক্সাম সামনে আর ওরা ঘুরতে যাবে।ওদের ফ্যামিলি থেকে সমস্যা হবে।’

অথৈ বিরক্তিতে মাটিতে ‘ ধ্যাৎ ‘ বলে আঘাত করল পা দ্বারা।ভেজা কণ্ঠে বলে,’ তোর শুধু এই সমস্যা, সেই সমস্যা।আমি যাবোই না। এইবার খুশি তো তুই।’

এই বলে অথৈ রাগে হন হন ভার্সিটি থেকে চলে গেলো।বোনের রাগ দেখে ইহান কি করবে বুঝতে পারছে না।সাফাত ইহানকে বলল,’ শুধু শুধু বেচারিকে রাগিয়ে দিলি।কি এমন হতো দু তিন দিনে?’

নীল আর অনিকও সহমত হলো।সিয়া বলে,’ এক্সামের দেঢ় মাস বাকি আছে এখনও।আর আমরা পড়ালেখায় এতোটাও খারাপ না যে দু তিনদিন না পড়লে আমরা এক্সামে খারাপ করব।এমনিতেও আমরাও গত একবছর যাবত কোথাও ঘুরতে যাই না।’

মারিয়া বলে,’ হ্যা রে ইহান সিয়া ঠিকই বলছে।’

রুদ্রিক পকেটে হাত গুছে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।ঠান্ডা স্বরে বলে,’ আমি তোর উপরেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম।তবে এটুকু শুনে রাখ ওর মন খারাপ আমার সহ্য হয় না।’

রুদ্রিক চলে গেল।রুদ্রিক চাইলেই ইহানের অনুমতি না নিয়েই পারতো।তবে একজন বোন যেহেতু তার ভাইয়ের কাছে আবদার করেছে তাই সে আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি।তবে অথৈয়ের মন খারাপ তার সহ্য হচ্ছে না। মেয়েটা কোথায় গেলো কে জানে?রুদ্রিক পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে বাইকে উঠে সোজা চলে গেল।তবে বেশি দূর না যেতেই দেখে অথৈ মুখ ফুলিয়ে একা একা হাটছে।রুদ্রিক ওর সামনে বাইক থামালো।তারপর বাইক থেকে নেমে ওর সামনে দাঁড়াতেই অথৈ বিরক্ত হয়ে বলে,’ কি সমস্যা আপনি এখানে এসেছেন কেন?’

রুদ্রিক আলতো হেসে বলে,’ আমার একমাত্র বউয়ের মন খারাপ।এটা কি আমি সহ্য করতে পারি বলো?তাই তো তার মন ভালো করতে চলে আসলাম।চলো?’

রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যেতে লাগল।অথৈ ওর সাথে যেতে যেতে প্রশ্ন করল, ‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
‘ আমার সাথে চাচ্ছো এটাই কি যথেষ্ট নাহ?বিশ্বাস নেই আমার উপর?’

অথৈ একটুও হকচকালো না।সরল গলায় বলে,’ নিজের থেকেও বেশি।’

রুদ্রিক প্রশান্তির হাসি দিলো।বলল,’ তাহলে চলো।’

রুদ্রিক বাইকে উঠে বসল।পর পর অথৈও উঠল।পিছন থেকে রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরতে রুদ্রিক বিস্তর হেসে বাইক স্টার্ট দিলো।পথিমধ্যে আর কথা হলো না ওদের মধ্যে।রুদ্রিক একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে বাইক থামালো।পর পর বাইকের হর্ণ সজোড়ে বাজালো।হর্ণের আওয়াজ পেতেই বাড়ির দারোয়ান দারোয়ান সজাগ হয়ে উঠল।মূলত দারোয়ান ঘুমোচ্ছিলো।দারোয়ান সজাগ হয়ে ওদের দিকে তাকাতেই।রুদ্রিককে দেখেই কেমন বিচলিত ভঙিতে উঠে দাঁড়ালো।আমতা আমতা করে বলে,’ রুদ্রিক বাবা আসলে আমি যে কেমনে ঘুমায় গেছিলাম টের পাই নাই।চোখটা লাইগা আইছিলো একটু।’

রুদ্রিক বাইক থেকে নামতেই অথৈও নেমে দাঁড়ালো।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে গেল।অথৈ তাকে সালাম দিলো।তিনিও হাসিমুখে সালামের জবাব দিলেন।রুদ্রিক দারোয়ানের কাধে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,’ চাচা আপনার শরীরটা ভালো না দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি ভার্সিটি যাওয়ার সময় আপনাকে বলে গিয়েছিলাম বাড়ি চলে যেতে আর যাওয়ার সময় ডাক্তার দেখিয়ে যেতে।কিন্তু আপনি যাননি।কেন যাননি?’

দারোয়ান চাচা মুখটা কাচুমাচু করে ফেললেন।কোনরকম বললেন,’ অতোটাও খারাপ না আমার শইল।আইজকার দিনডা কাম কইরা হের ফর কাইল যাওয়ার কথা ভাবছিলাম।’

রুদ্রিক পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সেখান থেকে দুটো এক হাজার টাকা নোট বের করে দারোয়ান চাচার হাতে গুজে দিলেন।কোমল কণ্ঠে বলেন,’ আজ আর করা লাগবে না আপনার কিছু।এই যে টাকাটা দিলাম এটা দিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নিবেন।এখন যান আপনি।নাকি আমি পৌছে দিবো চাচা?’

দারোয়ান চাচা যেন রুদ্রিকের এতো নরম ব্যবহারের আবেগে আপ্লুত হয়ে পরলেন।চোখে জল এসে পরেছে উনার।তিনি ভেজা গলায় বলেন,’ ধন্যবাদ বাবা।আপনে অনেক ভালো।’

রুদ্রিক তার কান্না দেখে বলে,’ আহা, কাঁদছেন কেন আপনি?’

দারোয়ান চাচা চোখ মুছলেন।এইবার সরাসরি তাকালেন অথৈয়ের দিকে। প্রশ্ন করলেন,’ এইটা কে রুদ্রিক বাবা?’

রুদ্রিক অথৈকে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বলে,’ এ হলো আপনাদের ছোটো বউ মা চাচা।’

তিনি অবাক হলেন। পরক্ষণে চওড়া হেসে বলেন,’ মাশা-আল্লাহ! মাশা-আল্লাহ! দুজনরেই অনেক সুন্দর মানায়ছে বাবা।সুখে থাকো তোমরা।দোয়া করি বাবা।’

রুদ্রিক একপলক তাকালো অথৈয়ের দিকে।তারপর দুষ্টু হেসে বলে,’ চাচা এই দোয়াও করেন।বাড়ির বউ যেন জলদি বাড়িতে নিয়ে আসতে পারি।এবং ঠিক তার একবছর পর আপনাকে দাদু ডাক শোনাতেও পারি।’

অথৈ চোখ বড় বড় করে তাকালো রুদ্রিকের এহেন কথায়।এদিকে চাচা বলেন,’ হো বাবা দোয়া করলাম।জলদি বউ মারে বাড়িতে নিয়া আসো। আমরাও আর দাদু ডাক শুনতে পারমু তাড়াতাড়ি এইটা তো ভালা কথা।’

অথৈ লজ্জায় হতভম্ব।এই লোক তাকে এইভাবে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা ফেলে দেয়। অথৈ চাচার অগোচরে রুদ্রিকের পিঠে চিমটে কাটল।রুদ্রিক চাচার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করল।তারপর ড্রাইভারকে বাহির থেকে বাইক আনতে বলে দিলো।ড্রাইভার যেতেই রুদ্রিক হঠাৎই বলে উঠল,’ এইভাবে ইঁদুরের মতো আমায় চিমটে কাটলে আমার কিছুই হবে না।অবশ্য এরকম কিছু করার যদি উদ্দেশ্যেই থাকে।তাহলে সোঁজা কামড় দিয়ে দিও।এতে মাইন্ড করবো না আমি।চাইলে এখনিই চলো আমার রুমে।কেউ দেখবে না। এই সুযোগে তোমার এই আদুরে ঠোঁটজোড়ার একটু স্পর্শ পাবো আমি।’

অথৈয়ের শ্বাস ঘণ হয়ে আসল।কিসব বলছে রুদ্রিক।অথৈয়ের মন চাচ্ছে সে মাটি খুঁরে মাটির ভীতর ঢুকে যেতে।লোকটা এমন লাগামহীন কথাবার্তা বলে।অথৈকে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠতে দেখে রুদ্রিক মুগ্ধ চোখে তা অবলোকন করল।এই মেয়েটাকে এতো আদুরে লাগে কেন তার?মন চায় আদুরে আদুরে ভড়িয়ে তুলতে মেয়েটাকে।রুদ্রিক জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।নাহ,নিষিদ্ধ অনুভূতিদের নিয়ন্ত্রণ হারা করা যাবে না।রুদ্রিক কথা ঘুরানোর জন্যে বলে,’ অথৈ? প্রথমবার শশুড়বাড়ি এসে কেমন লাগছে?’

অথৈ চমকে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক তাকে মির্জা ভিলায় নিয়ে এসেছে এটা ও ভাবতেই পারিনি।অথৈয়ের তনমনে তরতর করে নার্ভাসন্যাস এসে ভড় করল।ও উত্তিজিত কণ্ঠে বলে,’ আল্লাহ্? এটা কি করলেন আপনি?সবাই কি ভাববে রুদ্রিক?এইভাবে আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাড়িতে আনার আগেই এখানে চলে আসলাম।চলুন আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবেন।’

রুদ্রিক কোমল হাতে অথৈয়ের গাল স্পর্শ করল।উত্তেজিত অথৈকে শান্ত করার জন্যে বলে,’ রিলেক্স অথৈ। এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।আর তাছাড়া কে কি ভাবল এসব তোমার ভাবা লাগবে না।আর বাবা,বড়োভাইয়া,দাদু,ভাবি উনারা সবাই খুশি হবেন উলটো তোমাকে দেখে।’

অথৈ অসহায় গলায় বলে,’ কিন্তু তবুও এইভাবে হুট করে এখানে নিয়ে আসলেন।আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।’

রুদ্রিক বিরক্ত হলো অথৈয়ের কথায়।মেয়েটা বেশি বুঝে।রুদ্রিক গম্ভীর কণ্ঠে বলে,’ বেশি বুঝ তুমি।আর তাছাড়া আজ হোক আর কাল একদিন না একদিন তো রোজা ভাবির মতো এই বাড়িটা তোমারও হবে।’

অথৈ আরও কিছু বলবে তার আগেই রুদ্রিক ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’ আর কোনো কথা নয় চলো।’

অথৈ চুপ হয়ে গেল।কি আর বলবে সে?মুখ ফুলিয়ে ফেলল।ওর নজর ঘুরিয়ে আশপাশ দেখল একটু।বাড়িটা বাহির থেকে ভীষণ সুন্দর দেখতে।বাড়ির বাগানে হরেকরকম ফুল গাছ।ঠিক যেমনটা রুদ্রিকদের কটেজটা ছিলো।ওর শাশুড়ি মায়ের যে ফুলের প্র‍তি ভীষণ ঝোক ছিলো তা বেশ বুঝতে পারছে অথৈ। তবে দূর থেকে দোলন চাঁপা ফুল গাছটা দেখে অথৈয়ের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরল।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।সাদা সাদা দোলনচাঁপা ফুলগুলো কি সুন্দর স্নিগ্ধ আর কোমল লাগছে।অথৈয়ের একবার গিয়ে তা স্পর্শ করার অদম্য ইচ্ছা মনে জাগ্রত হলো।তবে তার আগেই রুদ্রিক ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।তাই মনের ইচ্ছে মনের মাঝেই দমিয়ে রাখল অথৈকে।ভাবল সময় পেলে একা একা এসেই একবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবে ফুলগুলোকে।সাদা ফুল বরাবরই ভীষণ পছন্দ অথৈয়ের।এদিকে রুদ্রিক বাড়ির কলিংবেল বাঁজিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।একটু পরেই দরজা খোলার শব্দ হলো।অথৈ অস্থিরচিত্তে কাচুমাচু হয়ে আরও সেটে দাঁড়ালো রুদ্রিকের সাথে।তার ভীষণ ভয় লাগছে।এই প্রথম সে নিজ শশুড়বাড়িতে আসল। তাও হুট করে।চিন্তিত অথৈ জোড়োসোড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৫
লজ্জা,ভয়,অসস্থি নিয়ে অথৈ বসে আছে মির্জা বাড়ির বসার ঘরে।রিতিমতো সে নার্ভাসন্যাসে ঘামছে।এইভাবে না বলে হুট করে নিজের শশুড়বাড়িতে আসা একটা লজ্জাকর পরিস্থিতি।অথৈয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আরহাম সাহেব হাসলেন।নরম কণ্ঠে নিজের পুত্রবধুর উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,’ অথৈ তুমি তোমার নিজ বাড়িতেই এসেছ।বাড়িটা যেমন রোজার, তেমন তোমারও।এইভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেন মা?তোমার কি আমাদের জন্যে অসস্থি হচ্ছে?’

অথৈ শশুড়ের মুখে এতো স্নেহময়ী বাক্য শুনে যেন শান্তি পেল।ওর এতোক্ষণের লজ্জা,ভয়,অসস্থি সবটা যেন কোথায় ঘায়েব হয়ে গেল।এই বাড়ির লোকগুলো এতো ভালো কেন?মাঝে মাঝে ভাবে অথৈ। বাড়ির পুত্রবধুদের এতো আদর,যত্ন,স্নেহ আর ভালোবাসা দিতে সচরাচর কোনো ফ্যামিলিদের দেখা যায় না।আর এই বাড়ির লোকগুলো তো রিতিমতো বাড়ির বউদের নিজেদের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসেন তারা।অথৈ হালকা আওয়াজে বলে,’ আসলে আংকেল।প্রথমবার এসেছি তো এই বাড়িতে।তাছাড়া আপনার ছেলে যে এইভাবে আমাকে না জানিয়ে এই বাড়িতে নিয়ে আসবে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।’

আরহাম সাহেব কপাল কুচকালেন অথৈয়ের কথায়।তাকে এইভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে অথৈ বলে,’ কি হলো আংকেল?’

আরহাম সাহেব গম্ভীর স্বরে বলে,’ শশুড়কে কেউ আংকেল বলে?তাহলে কি আমি মেনে নিবো যে তুমি এখনও এই পরিবারের লোকদের আপন করে নিতে পারোনি।নিজেকে এই পরিবারের অংশ ভাবো না।’

অথৈ থতমত খেয়ে গেল আরহাম সাহেবের এহেন কথায়।অথৈ আসলে বুঝতে পারেনি।আর তাছাড়া এইভাবে হুট করে তো বাবা বলে সম্বোধণ করা যায় না।একটু সময় তো লাগবেই।আচ্ছা, তিনি কি রাগ করলেন অথৈয়ের উপর।অথৈয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট মন খারাপের আভাস।
‘ আমি সরি। আসলে আমি বুঝতে পারেনি।আপনি কি রাগ করেছেন আং…না মানে বাবা?’

অথৈয়ের মুখে ‘ বাবা ‘ ডাক শুনে আরহাম সাহেব প্রশান্তির হাসি দিলেন।বলেন,’ একটু আধটু রাগ করেছিলাম।তবে এই যে এখন তুমি আমায় বাবা বলে ডাকলে।এখন আর রাগ নেই।’

অথৈয়ের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠল।এদিকে আরিয়ান আসল দোতলা থেকে নেমে।সাথে রোজাও আছে।আরিয়ান অথৈয়ের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।অথৈ সালাম দিলো ওকে।আরিয়ান সালামের জবাব দিয়ে বলে, ‘ কেমন আছ অথৈ? বাড়ির সবাই ভালো আছে তোমার।
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।বাড়ির সবাইও ভালো আছে।আপনি কেমন আছেন?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ। সরি বোন প্রথম আসলে বাড়িতে।তাও আমি তোমাকে বেশি সময় দিতে পারলাম না।দুপুরে লাঞ্চ করে সময় থাকেই অল্প একটু।তোমায় দেখেই রোজা ছুটে গিয়েছে আমায় ডাকতে।অফিসে চলে যাবো তাই দেখা করে নিলাম।’

আরিয়ানের আদর পেয়ে অথৈয়ের ইহানের কথা মনে পরে গেল।ইহানও তাকে ঠিক এইভাবে আদুরে হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরহাম সাহেব আর আরিয়ান অথৈয়ের সাথে আরেকটু কথাবার্তা বলে অফিসে চলে গেল।আতিক মাহাবুব মির্জা তিনি বাড়িতে নেই।কিছু কাজে বাহিরে গিয়েছেন।রোজা ফোন করে তাকে জানিয়েছে অথৈ এই বাড়িতে এসেছে।তিনি এই কথা শুনে পারলে তখনই উড়ে চলে আসেন।তবে রোজা তাকে আস্তে ধীরে আসতে বলেছে।সে আসা না পর্যন্ত অথৈকে যেতে দিবে না এটাও জানিয়েছে।এদিকে সবাই চলে যাওয়ায় বাড়িটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।অথৈ হাশফাশ করতে লাগল।না পেরে অবশেষে প্রশ্ন করেই বসল,’ রোজা আপু?এতো বড়ো একটা বাড়িতে আপনি এমনভাবে থাকেন কিভাবে?’

রোজা হতাশ কণ্ঠে বলে,’ কি আর বলবো বোন।এইভাবেই আমায় থাকতে হয়।বাড়ির সব কর্তরা চলে যান যার যার কাজে বাহিরে।দাদুর একটু বেশি থাকা পরে বাড়িতে।তবে তার সাথে কি চব্বিশ ঘন্টা গল্প করা যায় বলো?সে তো বয়স্ক মানুষ।তার বিশ্রামের প্রয়োজন হয় এখন বেশি।’

একটু থেমে তারপর আবার অভিমানি গলায় বলে,’ তোমার বড়ো ভাইয়াটাও অনেক খারাপ জানো? বিগত একটা বছর যাবত বলছি।চলো আমরা একটা বেবি নেই।কিন্তু না সেই যে ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করিয়ে জানতে পেরেছে আমার নাকি প্রচুর রক্তশূন্যতা।কমপক্ষে এক, দেঢ় বছরের মধ্যে বেবি নিতে না।আগে রিকেভর করবো পুরোপুরি এরপরেই নাকি নিতে বলেছেন।বলো তো?একটা বেবি থাকলে কি আমার এতো একা একা লাগতো?কখনও লাগতো না।এক বছর পেরিয়ে গেছে।আর আমিও পুরোপুরি ঠিক আছি।তবে জনাব মানছেই না।তিনি আরও কয়েকদিন ওয়েট করতে বলেছেন।এই লোকটাকে নিয়ে আমি আর পারি না।আর আমার বাবামশাই,দাদু আর রুদ্রিকও আরিয়ানের কথার তালে তালে সায় দিয়ে যাচ্ছে।উফ!’

রোজা অভিযোগগুলো শুনে মুচকি হাসলো অথৈ। ঠিক কতোটা সুখে রোজা আছে তা তার কণ্ঠ শুনলেই বোঝা যায়।অথৈ নিজেও যে রোজার মতো একজন ভাগ্যবতী।এটা ভাবতেই মনেপ্রাণে আলাদা শিহরণ বয়ে যায়।আল্লাহ্’র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে সে।

রোজা আর অথৈ অনেকক্ষণ বসে বসে গল্প করল।ওদের কথার মাঝে হঠাৎ একজন সার্ভেন্ট আসল।সে বলে,’ বড়ো বউমনি ছোটো ভাইজান কফি বানিয়ে ছোটো বউমনিকে দিয়ে তার রুমে পাঠাতে বলেছে।আর ছোটো বউমনিকেই কফি বানাতে বলেছে।’

রোজা সব শুনে মুচকি হেসে বলে,’ হ্যা আপনি যান। ‘

সার্ভেন্ট চলে যেতেই রোজা অথৈয়ের দিকে তাকালো।অথৈয়ের মুখে এক্সপ্রেসন দেখেই রোজা কিটকিটিয়ে হেসে উঠল।এদিকে অথৈ হতবুদ্ধুর মতো বসে।লজ্জায় তার গালজোড়া ফুলে ফেঁপে উঠেছে।এই লোক এতো নির্লজ্জ কেন?এইভাবে কেউ কাউকে এসব বলে?রোজা হাসি দেখে এখন তার আরও বেশি লজ্জা লাগছে।অথৈকে লজ্জা পেতে দেখে রোজা হাসি থামিয়ে বলে,’ থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।অভ্যাস করে নেও।যেমনটা আমি করেছি।দু ভাই-ই একরকম তারা।আমারও প্রথম প্রথম আরিয়ানের এইসব কান্ডে যে কি পরিমান লজ্জা লাগতো বলে বোঝাতে পারবো না।তবে এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।যখন তুমি পার্মান্যান্টলি এই বাড়িতে এসে পরবে।তোমারও অভ্যাস হয়ে যাবে।এখন চলো তোমায় কিচেনে নিয়ে যাই।ছোটো নবাবজাদা আবার দেরি হলে রেগে যাবে।’

অথৈ মাথা দুলিয়ে রোজার পিছন পিছন রান্নাঘরে আসল।রোজা তাকে কফি বানানোর সব উপক্রম এগিয়ে দিয়েছে।আরিয়ান ফোন করায় সে রুমে চলে গিয়েছে।অবশ্য সে যেতে চাচ্ছিলো না।আরিয়ান বার বার ফোন দেওয়ায় অথৈ জোড় করে পাঠিয়ে দিয়েছে।অথৈ সুন্দরভাবে এককাপ কফি বানিয়ে নিলো।তারপর পা বাড়ালো রুদ্রিকের রুমের দিকে।কিন্তু রুদ্রিকের রুম কোনটা সে তো জানে না।হঠাৎ একজন সার্ভেণ্টকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে।সে অথৈকে দেখিয়ে দেয় রুদ্রিকের রুম।অথৈ রুদ্রিকের রুমের সামনে এসে থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।ভাবল অনেককিছু।কোনো একদিন এই রুমটা তার হবে।ভাবতেই অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে হৃদয় জুড়ে।অথৈ লম্বা শ্বাস ফেলে রুদ্রিকের রুমে প্রবেশ করল।কফিটা নিয়ে টি-টেবিলের উপর রেখে চারদিকে চোখ বোলালো।পুরো রুমটা গ্রে কালারের পেইন্ট করা।রুমের মাঝে রাউন্ড বেড।তার সাথে দুই সাইডে দুটো এটাচ্ড ছোটো টেবিল।একটা ড্রেসিংটেবিল,আলমারি আর একটা সোফাসেট।ব্যস এইগুলোই আছে রুমটায়।তবে রুমটা ভীষণ সুন্দরভাবে ডেকোরেট করা।অথৈয়ের ভীষণ ভালো লাগলো।

‘ রুমটা যেভাবে দেখছ।আমাকেও তো সেভাবে কোনোদিন দেখোনি।অথৈ আ’ইম ফিলিং জেলাস।’

নিরবতার মাঝে হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ভয় পেয়ে গেল অথৈ।আর একটু হলেই তো সে হার্ড এট্যাক করে বসত।অথৈ বিরবির করে রুদ্রিককে বকা দিলো।রুদ্রিকের গম্ভীর গলা ফের শোনা যায়,
‘ আমাকে না বকে।কফিটা নিয়ে ব্যালকনিতে এসো।কফিটা যে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?’

অথৈ মুখ ভেংচি কাটলো।তারপর কফিটা নিয়ে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে।যেতেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করল ওকে।এতো সুন্দর ব্যালকনি।অনেক বড়ো রাউন্ড শেইপের একটা ব্যালকনি।ব্যালকনিটার একপাশে ছোটো পুরো কাচের তৈরি একটা রুম দেখা যাচ্ছে।একেবারে ছোটো সেখানে শুধু সিংগেল বেডের সমান একটা ফ্লোর বেড বিছানো।রুমটায় স্লাইডিং ডোর দেওয়া।সেটা খোলা তাই সব দেখতে পেয়েছে অথৈ। অপরপাশে ছোটো একটা জানালাও আছে।পুরো ব্যালকনিতে শতো ধরনের ফুল গাছ আছে।অথৈয়ের বেডরুম থেকে ব্যালকনিটাই বেশি ভালো লাগলো।হঠাৎ রুদ্রিকের কথা মনে আসতেই ব্যালকনির চারদিকে চোখ বুলালো অথৈ। কিন্তু রুদ্রিককে কোথায় দেখতে পেলো না।আশেপাশে তাকাতে থাকা অথৈ হঠাৎ নিজের ঘাড়ের কাছে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেলো।আএ সে কেউটা যে রুদ্রিক ছাড়া কেউ না।তাও ভালোভাবে জানে সে।রুদ্রিক আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো অথৈয়ের সাথে।অথৈয়ের পিঠ গিয়ে লাগল রুদ্রিকের প্রসস্থ,চওড়া বক্ষে।অথৈয়ের শরীর মৃদ্যুভাবে কাঁপছে।এই লোকটা এমনভাবে তার কাছে আসলেই ওর সব এলোমেলো হয়ে যায়।মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়।রুদ্রিক একটু আগেই গোসল দিয়েছে।তাই ওর শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে।রুদ্রিক ওর শীতল হাতটি দিয়ে অথৈয়ের হাতে স্লাইড করতে লাগলো।ধীরে ধীরে হাতটি গিয়ে ঠেকল অথৈয়ের ধরে থাকা কফির উপর।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত থেকে কফিটা নিয়ে নিলো।চুমুক বসালো কফিটায়। নাহ,পুরপুরি ঠান্ডা হয়ে যায়নি কফি। রুদ্রিক আধঠান্ডা কফিটাকে একনিঃশ্বাসে খেয়ে নিলো।কফির মগটা নাগালে একটা চেয়ার আছে সেখানে রেখে দিলো।এইসবে রুদ্রিকের নজর বিন্দুমাত্র সরে যায়নি অথৈয়ের উপর থেকে।রুদ্রিক ঠোঁট এলিয়ে অথৈয়ের কানে ফিসফিস করে বলে,’ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফি খাইয়েছ আমায়।বিনিময়ে তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো?’

গলা শুকিয়ে আসল অথৈয়ের।এই লোক এতো কাছে আসছে কেন ওর?আর এইভাবে কথা বলায় রুদ্রিকের ঠোঁটের স্পর্শ লাগছে অথৈয়ের কানের লতিতে।অথৈয়ের পায়ের তলা শুধু শিরশির করছে।অথৈ কাঁপা গলায় বলে,’ আ…আমার কি দোষ?আপ…আপনাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিলাম নাহ।’

বিনিময়ে রুদ্রিক ওর হাতখানা এনে রাখল অথৈয়ের পেটের উপর।শক্ত হাতে চেপে ধরলো।আকস্মিক রুদ্রিকের এহেন কাজে।নিঃশ্বাস আটকে গেল অথৈয়ের।খামছে ধরল ওর পেটের উপরে রাখা রুদ্রিকের হাত।রুদ্রিক অন্যহাতে অথৈয়ের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে দিলো।রুদ্রিকের একেকটা স্পর্শে পাগল হয়ে যাচ্ছে অথৈ। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে।রুদ্রিক অথৈয়ের ঘাড়ে নরম অধরের ছোঁয়া দিতে লাগল।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে অথৈ। রুদ্রিকের অধরের একেকটা স্পর্শে যেন অথৈয়ের মনে হচ্ছে রুদ্রিক ওর শরীরের সব শক্তি শুষে নিচ্ছে।অথৈ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।শরীরের ভড় ছেড়ে দিলো রুদ্রিকের উপর।রুদ্রিক বাহুডোরে আগলে নিলো অথৈকে।পর পর পাঁজাকোলে নিয়ে নিলো।অথৈ লজ্জায় চোখ খুলতে পারছে না।মুখ লুকালো রুদ্রিকের বুকের মাঝে।রুদ্রিক অথৈকে কোলে নিয়েই বসে পরল ব্যালকনিতে রাখা একটা বেতের চেয়ারে।অথৈ দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরল রুদ্রিকের। মুখ লুকানো রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক মাদকতা ভড়পুর কণ্ঠে বলে,’ অথৈ তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না।তুমি কাছে আসলেই আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব করে।এতো এতো অপেক্ষা আমি কিভাবে করব অথৈ?’

শেষ বাক্যটা করুন শোনালো রুদ্রিকের।রুদ্রিকের এহেন কথায় চোখ পিট পিট করে তকালো অথৈ। রুদ্রিকের লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দেখে বুকের বা পাশটায় ব্যথা অনুভব করল।ঠিকই তো বলে রুদ্রিক।মুখে না বলুক তবে অথৈ জানে রুদ্রিক তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষ যদি তার পাশে থাকে।তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক কষ্টসাধ্য।তা একটু হলেও বুঝতে পারছে অথৈ। আবার তার উপর ও রুদ্রিকের সহধর্মিণী। ওর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে রুদ্রিকের।কিন্তু লোকটা শুধু ওর কারনে।ও যেন কষ্ট না পায় সেই কারনে নিজের ইচ্ছা,ইমোশন,কষ্ট সব লুকিয়ে রাখে।অথৈয়ের খারাপ লাগছে।ও নিজেও রুদ্রিকের কাছে পার্মানেন্টভাবে এসে পরতে চায়।কারন ও নিজেও যে ভালোবেসে ফেলেছে লোকটাকে।লোকটাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারে না ও।ভাবনার মাঝে রুদ্রিকের আদুরে কণ্ঠের ডাক শুনতে পেলো।

‘ অথৈ, শোনো।’

রুদ্রিকের বুক থেকে মাথা সরালো অথৈ। ডাগর ডাগর চোখজোড়া নিয়ে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।বলল,’ হুম বলুন।’

রুদ্রিক নেশাকাতর হয়ে দৃষ্টি তাক করে আছে অথৈয়ের ওষ্ঠজোড়ার দিকে।আলতো করে স্পর্শ করলো অথৈয়ের ঠোঁটজোড়া।কেঁপে উঠল অথৈ। চোখ বন্ধ করে নিলো।রুদ্রিক শুকনো ঢোক গিলছে।ভীষণভাবে টানছে ওকে ওই নরম ঠোঁটজোড়া।একটুখানি ছুঁয়ে দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?রুদ্রিক অস্থির গলায় বলে উঠে,’ এখানে যদি আমার অধরের একটুখানি ছোঁয়া ছাপিয়ে দেই তোমায়।তুমি কি খুব বেশি রাগ করবে?’

রুদ্রিকের এহেন কাতর কণ্ঠের আবদার যেন অথৈয়ের হৃদয় নাড়িয়ে দিলো।শিরশিরে অনুভূতিতে ছেঁয়ে গেলো সর্বাঙ্গ।কি বলবে অথৈ?কিভাবে জবাব দিবে?লজ্জা’রা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ওকে।অথৈয়ের মৌনতায় রুদ্রিক ব্যাকুল হয়ে বলে,’ প্লিজ অথৈ স্যে সামথিং!’

অথৈ নড়েচড়ে উঠল।রুদ্রিকের গলায় বেধে রাখা হাতদুটোর বাঁধন আরও শক্ত করল।চোখজোড়া বন্ধ করে মুখশ্রীটা উঁচু করে রুদ্রিকের মুখের কাছাকাছি আনলো।আলতো স্বরে বলে উঠল,’ ইয়্যু ক্যান।’

রুদ্রিকের হৃদয় যেন প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেলো অথৈয়ের জবাবে।আলতো হাতে গাল স্পর্শ করল অথৈয়ের।অথৈ নিভু নিভু চোখে তাকালো।রুদ্রিক ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো।আস্তে আস্তে ঠোঁট এলিয়ে নিলো অথৈয়ের কাছে।সামান্য একটুখানি অধর ছোঁয়ালো অথৈয়ের অধরে।রুদ্রিকের বক্ষস্থল কেঁপে উঠল।অথৈয়ের ঠোঁটে আলতো ঠোঁটের একটুখানি স্পর্শ করতেই মনে হচ্ছে ওর শরীরে বৈদ্যুতিক ঝটকা লেগেছে।এদিকে অথৈ খামছে ধরে আছে রুদ্রিকের ঘার।লোকটা চুমুও খায়নি। শুধু একটুখানি ছুঁয়ে দিয়েছে ঠোঁটজোড়া দিয়ে।তাতেই যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অথৈয়ের।অথৈ ঘণ ঘণ শ্বাস নিচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।কিন্তু রুদ্রিক বোধহয় তা হতে দিলো না।অথৈ কিছু বুঝে উঠার আগেই রুদ্রিক এইবার অথৈয়ের ঠোঁটজোড়ায় তার ঠোঁটজোড়া গভীরভাবে স্পর্শ করল।বরফ শীতলতায় ছেঁয়ে গেলো অথৈয়ের তনমন।রুদ্রিক যেন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গিয়েছে।সে প্রিয়তমাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে মত্ত হয়ে উঠেছে।একহাত অথৈয়ের পিঠে আড়াআড়িভাবে রেখে আরেক হাত অথৈয়ের কোমড় চেপে ধরে অথৈকে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো।উন্মাদের ন্যায় চুমু খেতে লাগলো অথৈকে।অথৈ কিছুক্ষণ থম মেরে ছিলো।পর পর রুদ্রিকের লাগামহীন স্পর্শে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।পর পর নিজেও সারা দিতে লাগল রুদ্রিকের সাথে।হাজার হোক লোকটা তার স্বামী।কোন স্ত্রীই বা না চাইবে তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক,তাকে সোহাগ করুক।অথৈও চায়,খুব করে চায়।এইভাবে কেটে গেলো কতোক্ষণ কেউ জানে না।দুজনে দুজনার মাঝে এতোটাই হারিয়ে গিয়েছিলো।অথৈ যখন দেখলো যে সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।তখন ছটফট শুরু করে দিলো।রুদ্রিক যেন হুঁশে নেই।অথৈ জোড় করে অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে আনে রুদ্রিকের কাছ থেকে।রুদ্রিকের বুকে কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।রুদ্রিকও হাপাচ্ছে।রুদ্রিক নিজেকে শান্ত করতেই ওর ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ফুঁটে উঠল।অথৈ যে তার হৃদয়ের ঠিক কতোটা জুড়ে আছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না রুদ্রিক।রুদ্রিকের মন চায় হৃদয়ের সবটা ভালোবাসা উজাড় করে দিতে মেয়েটার কাছে।মেয়েটা যদি তাহলে তার ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে পারে।এইযে অথৈকে যে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আছে।এতে যে তার কি শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে সে পরিপূর্ণ। আজীবন ওকে এই বুকের মাঝে আগলে রাখতে চায় রুদ্রিক।হারাতে দিবে না কোনোদিন।খুব,খুব ভালোবাসবে।রুদ্রিক অথৈয়ের চুলের ভাঁজে চুমু খেলো।অথৈ তখনও নিজেকে স্বাভাবিক করতে ব্যস্ত।হঠাৎ রুদ্রিকের একটুখানি দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করল অথৈয়ের সাথে।রুদ্রিক দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,’ অথৈ আমার ভালোবাসাগুলো মন থেকে অনুভব করেছ তো?নাকি আরও গভীরভাবে ভালোবাসব?’

অথৈ থম মেরে গেলো।লজ্জায় হতভম্ব সে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে ওর।লজ্জায় সর্বমুখশ্রী রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেলো।অথৈ রুদ্রিকের বক্ষে আলতো হাতে আঘাত করে মিনমিনিয়ে বলে,’ অসভ্য লোক।খুব,খুব খুব খারাপ আপনি।’

রুদ্রিক উচ্চস্বরে হেসে উঠল।সেই হাসির মায়াজালে আটকে গেলো অথৈ।রুদ্রিককে সচরাচর এমন প্রাণখোলা হাসি হাসতে দেখা যায় না।তাই অথৈ সে হাসিটা মন ভড়ে দেখলো।রুদ্রিক হাসি থামিয়ে অথৈয়ের গালে হাত রেখে ওর চোখে চোখ রাখল।প্রগাঢ় স্বরে বলল,’ তুমি একটুখানি ছোঁয়ার জন্যে,ভালোবাসার জন্যে যদি আমাকে খারাপ হতে হয় অথৈ। তবে আমি হাজারবার খারাপ হতে রাজি।তুমি আমার থাকলেই হবে।’

অথৈ মুচঁকি হাসলো।লোকটার হুটহাট এমন আবেগঘন কথা অথৈয়ের হৃদয় ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়।অথৈ জড়িয়ে ধরল রুদ্রিককে।ধীম কণ্ঠে আওড়ায়,’ ভালোবাসেন আমায়?’
‘ ভালোবাসা এই শব্দটা অতি সহজ আবার অতি কঠিন।সে এই শব্দটা বুঝতে সক্ষম হয় বুঝে নেবে সেও ভালোবাসে।বুঝলে প্রিয়,
ভালোবাসাটা পিথাগোরাসের উপপাদ্য নয়,
যে প্রমাণ করতেই হবে।
ভালোবাসাটা রবিঠাকুরের শেষের কবিতার মতো,
যা শুধু উপলব্ধি করতে হয়।এখন বলো তুমি কি আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করো না?’

অথৈ রুদ্রিকের বুকে মুখ ঘষে নরম গলায় বলে,’ খুব করে অনুভব করে।একদম হৃদয়ের সবটুকু গভীরতা দিয়ে।’

রুদ্রিক অথৈ দুহাতে জড়িয়ে নিলো।চোখজোড়া বন্ধ করে বলে উঠল, ‘ তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি ঠিক তোমাকে কতোটা চাই অথৈ। আমার চোখে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারি।তবে তুমি কতটা সুন্দর তা বলার জন্য আমার এই শব্দগুলি যথেষ্ট নয়। লোকে বলে যে মানুষ নাকি কেবল একবার প্রেমে পড়ে, তবে এটি সত্য হতে পারে না … যতবার আমি তোমাকে দেখি, আমি আবার প্রেমে পড়ে যাই নতুন করে।বলো তো কেন এমন হয় আমার সাথে?’

অথৈ কি বলবে তার কাছেও এ এটার জবাব নেই।তাই সে মৌন হয়ে চুপচাপ পরে রইলো রুদ্রিকের বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে।

#চলবে___________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here