মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ১৪

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৪

★হাসি কান্নার মাঝে কেটে গেছে আরও পনেরো দিন। আজ আদিত্য আর নূরের বিয়ের একমাস পূর্ণ হয়েছে। নূর এখন আদিত্য ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। এখন আর মা বাবার কথাও তেমন বলেনা নূর। আদিত্যরও খুশীর সীমা নেই। নূর এসে তার জীবন টা রঙিন আলোতে ভরিয়ে দিয়েছে। তার পৃথিবী এখন নূরময়।

আবির আর নিলার খুনসুটিও ওভাবেই চলছে। কে কাকে কিভাবে জালাতে পারবে সেই ধান্দাতেই থাকে দুজন।
আয়াত এখনো বিহানের মন জয় করার চেষ্টায় লেগে আছে। তবে বিহানের কোন পরিবর্তন নেই। সে এখনো আগের মতোই আছে।

বাসার কলিং বেল বাজতেই নূর দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। ও জানে এখন ওর হিরো এসেছে। তাইতো সবার আগে ও খুলবে। বাকি সবারও এই জিনিসটার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাইতো আদিত্য বাসায় আসার সময় হলে কেও আর ড্রয়িং রুমে থাকে না। ওদের প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য সবাই যার যার কাজে চলে যায়।

নূর দরজা খুলে আদিত্যকে দেখে রোজকার মতো একরাশ হাসি দিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও প্রশান্তির হাসি দিয়ে এক হাতে নূরকে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপর আলতো করে চুমু খেল। নূর আদিত্যকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো আদিত্য এক হাত পেছনে লুকিয়ে রেখেছে। সেটা দেখে নূর কৌতুহলী হয়ে বললো।
–তোমার হাতে কি আছে হিরো? আমার জন্য কিছু এনেছ?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–হুম এনেছি তো।আগে চোখ বন্ধ করো তাহলে দিব।

নূর উৎসাহী কন্ঠে আচ্ছা বলে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য এক গুচ্ছ সাদা জারবেরা ফুলের বুকে সামনে ধরে বললো।
–এখন চোখ খোল।

নূর চোখ খুলে তাকালো। এতো সুন্দর ফুল দেখে নূর খুশিতে হাতে তালি দিয়ে লাফাতে লাগলো। প্রফুল্ল কন্ঠে বললো।
–ওয়াও কত্তো সুন্দর ফুল।এগুলো সব আমার জন্য হিরো?

–হ্যাঁ, এগুলো সব আমার এঞ্জেল টার জন্য। আজ আমাদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হলো। তুমি আমার জীবনে আসার একমাস পূর্ণ হলো, তো সেইজন্য তো তোমাকে উপহার দিতেই হয় তাইনা?

আদিত্যের কথা তেমন একটা বুঝতে না পারলেও অত্যন্ত খুশী মনে ফুলগুলো হাতে নিল নূর। তারপর ফট করে আদিত্যের গালে একটা চুমু খেয়ে বললো।
–তুমি সত্যিই অনেক ভালো একটা হিরো।

আদিত্য তৃপ্তির হাসি দিয়ে নূরকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে গেল।

রাতে ডিনারের সময় হলে আদিত্য নূরকে ডিনার করার জন্য নিচে যেতে বললো। তখন নূর বলে উঠলো।
–আমি যাবো না।

আদিত্য বললো।
–তাহলে কি রুমে খাবে?

–না আমি রুমেও খাবো না

–কেন?

–কারণ আমি ভাত খাবোনা।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কেন, ভাত খাবেনা কেন? দেখ নূর সোনা, রাতে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবে তো তুমি।

–আমি কি বলেছি নাকি আমি খাবোনা? আমি বলেছি আমি ভাত খাবোনা।

–তাহলে কি খাবে?

–আমি পিজ্জা খাবো। ইয়াম্মি ইয়াম্মি চিজ পিজ্জা। প্লিজ হিরো পিজ্জা এনে দাওনা।

আদিত্য একটু হেসে বললো।
–ওকে ওকে আমার এঞ্জেল টার যখন পিজ্জা খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে, তাহলে তো পিজ্জা আনতেই হবে। একটু বসো, আমি এক্ষুনি অর্ডার করছি।
কথাটা বলে আদিত্য ফোন বের করে অনলাইনে পিজ্জা অর্ডার করতে লাগলো। নূর সেটা দেখে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–তুমি ফোনে কি করছো?

আদিত্য একটু দুষ্টুমি করে বললো।
–আমার ফোনে না যাদু আছে । এখানে টিপলেই বিশ মিনিটের ভেতর তোমার পিজ্জা চলে আসবে।

নূর বিস্ময় নিয়ে বললো।
–সত্যিই?

–হ্যাঁ অবশ্যই।

নূর আদিত্যের গা ঘেঁষে বসে বললো।
–আমাকেও একটু শেখাও না হিরো। আমিও করবো এই যাদু, প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–আচ্ছা ঠিক আছে আসো আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি।
তারপর আদিত্য নূরকে শিখিয়ে দিল কিভাবে খাবার অর্ডার করতে হয়। নূর এক্সাইটেড হয়ে বললো।
–তাহলে আজকে আমি অর্ডার করি?

–আচ্ছা ঠিক আছে করো।

নূর খুশীমনে পিজ্জা অর্ডার করতে বসে গেল। নূরকে অর্ডার করতে দেখে আদিত্য একটু ওয়াশরুমে গেল। পাঁচ মিনিট পর আদিত্য ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নূরকে বললো।
–অর্ডার করেছ পিজ্জা?

নূর ঘাড় ফিরিয়ে করে বললো।
–হ্যাঁ, করে দিয়েছি।

–গুড,তাহলে এখন ওয়েট করো।একটু পরেই দেখবে যাদুর মতো তোমার পিজ্জা চলে আসবে।

বিশ মিনিট পরেই বাসার কলিং বেল উঠলো। আদিত্য বলে উঠলো।
–দেখেছ, তোমার পিজ্জা চলে এসেছে।

নূর উৎসাহ নিয়ে বললো।
–সত্যিই?

–হ্যাঁ সত্যিই, চলো নিচে যাই।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে নিচে আসার জন্য বের হলো।

তবে নিচে আসতেই আদিত্যের চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল।ফ্লোরে থাকা বিশাল খাবারের প্যাকেটের ঢের দেখে, আদিত্য সার্ভেন্ট দের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–এসব কি?

সার্ভেন্ট রা বললো।
–আমরা জানিনা সার। এই লোকটা নিয়ে এসেছে এসব।
ডেলিভারি বয়কে দেখিয়ে বললো কথাটি।

আদিত্য এবার ডেলিভারি বয়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এসব কি ভাই?রেস্টুরেন্টের সব খাবার আমার বাসায় কেন এনেছেন?

ডেলিভারি বয় বলে উঠলো।
–স্যার আপনাদের অর্ডার মতোই তো নিয়ে এসেছি। আপনারাই তো এসব অর্ডার করেছেন।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–হোয়াট এতো খাবার আমরা কেন অর্ডার করতে যাবো? আমরা তো শুধু পিজ্জা অর্ডার করেছি।

–না না স্যার আপনাদের এখান থেকেই অর্ডার এসেছে। এইযে দেখুন।
ডেলিভারি বয়টা আদিত্যকে ফোনে ওদের করা অর্ডার গুলো দেখালো।

আদিত্য এবার নূরের দিকে তাকালো। নূর এখনো বিস্ময় নিয়ে খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না যে ও সত্যি সত্যিই যাদু করে ফেলেছে। তখন ফোনে যা যা ভালো লেগেছিল সবকিছুই অর্ডার করে দিয়েছিল। এটা দেখার জন্য যে,সত্যিই যাদু হয় কিনা। আদিত্য একটু কাঁধে হালকা ঝাঁকি দিয়ে বললো।
–নূর তুমি কি এইগুলো সব অর্ডার করেছ?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
–হ্যাঁ, আমি এই সবগুলো অর্ডার করেছি। আসলে আমি দেখতে চাচ্ছিলাম যে সত্যি সত্যিই সব খাবার আসে কিনা।

আদিত্যর মাথায় হাত। এই মেয়েটার সাথে মজা নিতে গিয়ে এখন নিজেই ফেঁসে গেল আদিত্য। কি আর করার? অগত্যা ডেলিভারি বয়কে সব খাবারের বিল দিয়ে তাকে বিদায় করলো। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তা রাণী সাহেবা এতো খাবার যে অর্ডার করলেন। এতো খাবার খাবে কে শুনি? আমরা দুজন তো সারা মাস খেয়েও এই খাবার শেষ করতে পারবোনা।

নূর বলে উঠলো।
–কেন? শুধু আমরা দুজন খাবো কেন? আমরা কি শুধু দুজন থাকি নাকি এইবাড়িতে? আমাদের তো অনেক বড় পরিবার। আমরা আছি, মিনু আন্টি,আরও (বাকি সব সার্ভেন্ট গুলোর নাম নিল) তারপর গার্ডসরা আছে। এরাও তো আমাদের পরিবার। আমরা সবাই মিলে একসাথে খাবো। অনেক মজা হবে।
কথাটা বলে নূর হাতে তালি বাজালো।

আদিত্য অবাক চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
–মেয়েটা সরল মনে কতো বড় একটা কথা বলে ফেললো। যেটা হয়তো আমাদের মতো বিদ্বান লোকেরা কখনো ভাবিনা। আমরা তো শুধু মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী, সন্তান কেই নিজের পরিবার ভাবি। কিন্তু নূর বাসার কাজের লোক, গার্ডস তাদেররও নিজের পরিবার মনে করে। আমার বউটা সত্যিই একটা এঞ্জেল। তার মনটাও তেমন পবিত্র।

আদিত্যের ভাবনার মাঝেই নূর ডাক দিয়ে বললো।
–এই হিরো,দেবর আর ননদকেও একটু আসতে বলোনা। আর ভাইয়াকেও আসতে বলো।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–ঠিক আছে।
আদিত্য ফোন বের করে আবিরের নাম্বারে ফোন দিল। আবির ফোন রিসিভ করলে,আদিত্য বলে উঠলো।
–ফটাফট আমার বাসায় চলে আয়।

–কেন?

–তোর ভাবি কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছে। ফ্রিতে আনলিমিটেড খাবার খেতে চাইলে চলে আয়। অফার সীমিত সময়ের জন্য।

–আরে কি বলো ভাইয়া,ফ্রী খাবার পাবো আর আমি আসবোনা। বাঙালী মাঙনা আলকাতরা ছাড়ে না।আর আমি খাবার কিভাবে ছাড়বো? তুমি দুই মিনিট দেরি করো,আমি সুপারম্যান হয়ে আসছে।

–ওই সুপারম্যান, আসার সময় আয়াতকেও পিঠে করে নিয়ে আসিস। তোর ভাবি ওকেও আসতে বলেছে।

–ওকে ভাই আমরা এখুনি আসছি।

আবিরের সাথে কথা বলা শেষে আদিত্য বিহানকেও ফোন করে আসতে বললো।

আদিত্যের বাসার ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে সবাই গোল হয়ে বসেছে খাবার জন্য। এটাও নূরের আইডিয়া। সবাই মিলে একসাথে নিচে বসে খাবে। আদিত্যরা সহ বাসার সব সার্ভেন্ট আর গার্ডস রাও বসেছে। প্রথমে সবাই আদিত্যর সাথে বসে খেতে ইতস্তত করছিল। তবে নূর সবাইকে জোর করে হাত ধরে বসিয়ে দিয়েছে। বলেছে আমরা সবাই এক পরিবার তাই একসাথে বসে খাবো। নূরের কথা শুনে সার্ভেন্ট আর গার্ডস দের মন ভরে উঠেছিল, চোখ ছলছল হয়ে উঠেছিল। আজ পর্যন্ত তারা কোন মালিক কে এভাবে কাজের লোকদের পরিবার বলতে দেখেননি। আদিত্যও সবাইকে বসে একসাথে খেতে বলেছে। আবির,আয়াত আর বিহানও খেতে বসেছে। সবাই হাসি আনন্দ আর উৎসাহের সাথে খাচ্ছে।

আদিত্যর মনে মনে অনেক খুশী লাগছে। আজ ওর বাড়িটা আর শুধু একটা বিরান অট্টালিকা নেই। এর কানায় কানায় এখন হাসি আর খুশিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আর সবই হয়েছে আমার এঞ্জেলের জন্য।আদিত্য নূরকে খাইয়ে দিতে দিতে দিতে কথাগুলো ভাবছে। আদিত্যের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ নূর একটা চিজবল আদিত্যের মুখে ঢুকিয়ে দিল। আর বলে উঠলো।
–শুধু আমাকে খাওয়ালে হবে? নিজেও তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও হিরো।সবাই কিন্তু সবকিছু খেয়ে ফেলছে। পরে আর তুমি কিছু পাবে না।ওই দেখ।
নূর হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো।

আদিত্য নূরের হাতের ইশারা বরাবর তাকিয়ে দেখলো, আবির আর বিহান খাবার নিয়ে রিতীমত মারামারি শুরু করে দিয়েছে। দুজন নিজেদের প্লেটের ওপর খাবারের পাহাড় জমিয়ে ফেলেছে। তবুও একটা জিনিস নিয়ে দুজন কাড়াকাড়ি করছে। বিহান খাবার নিচ্ছে আর বলছে।
–ওই হালা ছব ন্যাছ ক্যালা? তোর দরিয়ার ভিতরে কতো হান্দায়? ছারাজনমের খাওয়া কি আইজকাই খাবি নি হাবায়তা? আমারেও কিছু নিতে দে।

আবির বলে উঠলো।
–তুই চুপ থাক ব্যাটা। নিজেতো প্লেটের ওপর হিমালয় পর্বত তৈরি করে ফেলেছিস। আবার আমার টার ওপর নজর দিস? আমার যদি কালকে পেটখারাপ হইছে। তাহলে তোর খবর আছে।
বাকিরা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
আবির আর বিহান নিজেদের প্লেটের খাবার শেষ করে সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা প্যাকেটে লাস্ট চিকেনের একটা লেগ পিছ বাদ আছে। ওরা দুজন দুজনের দিকে একবার তাকালো। তারপর দ্রুত গতিতে চিকেনের ওপর দুজন হাত রাখলো। প্রথমে আবিরের হাত পড়লো,তারওপর বিহানের হাত পড়লো। দুজনের কেউই ছাড়ার পাত্র না। আবির বলে উঠলো।
–আমার হাত আগে পড়েছে, তাই চিকেন আমার। তুই ছাড়।

বিহান বলে উঠলো
–আমি আগে দেখেছি,তাই এটা আমার। তুই ছাড়।

–তুই ছাড়।

–তুই ছাড়।

আবির এবার একটু ড্রামাটিক ভাবে বলে উঠলো।
–আমার আঙুল গুলো চিকেন টাকে চারপাশ দিয়ে ঘেরাও করে ফেলেছে। এটা এখন আমার আয়ত্তে

বিহানও একই ভাবে বলে উঠলো।
–আর আমার আঙুল গুলান তোর হাতখানেরে চাইরপাশ দিয়া ঘিরা হালাইছে। ভালা চাছতো আত্মসমর্পণ কর।

আদিত্য এদের কান্ড দেখে বলে উঠলো।
–কি করছিস তোরা এসব? বাচ্চাদের মতো লড়াই করছিস? একটা চিকেন এর জন্য কি তোরা এখন এখানে মহাভারত শুরু করে দিবি নাকি?

আবির বিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রতিবাদী আন্দোলনের সুরে বললো।
–শুধু মহাভারত না ভাই। দরকার হলে এখানে ওয়ার্ল্ড ওয়ার শুরু করে দিবো।আজ চাহে ভূমি ফেটে যাক,আসমান ফেটে যাক, দরকার পরলে লাশের ঢের লাগিয়ে দেবো,রক্তের বন্যা বইয়ে দেব। তবুও এই চিকেন নিয়েই ছাড়বো।

বিহানও নেতাদের মতো আন্দোলনী সুরে বললো।
–হ এক্কেরে কারেক্ট কইছচ। আমিও তোর লগে সহমত। এবারের ছংগ্রাম(সংগ্রাম) চিকেন পাওয়ার ছংগ্রাম,এবারের ছংগ্রাম লেগ পিছ জেতার ছংগ্রাম। রক্ত যহন দিছি,রক্ত আরও দিমু। চিকেন পিছ পাইয়াই ছারমু ইনশাআল্লাহ।

বিহান #ষোলে মুভির গাব্বার সিং এর মতো বলে উঠলো।
–ইয়ে চিকেন মুঝে দে দে ঠাকুর।

আবির ঠাকুরের মতো করে বললো।
–নেহিই

দুজন চিকেন পিছ নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। বাকিরা সবাই কিছু লোক বিহানকে,আর কিছু লোক আবিরকে চিয়ার্স করছে।যেন এখানে কোন ডাব্লিউ ডাব্লিউ ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। আদিত্য এসব দেখে চরম বিরক্ত। তবে নূরের অনেক মজা লাগছে। নূর হাসছে আর তালি বাজিয়ে ওদের কান্ড দেখে মজা নিচ্ছে। গার্ডসদের ভেতর থেকে একজন গ্লাস হাতে নিয়ে ভাষ্যকার দের মতো করে বলে উঠলো।
–জ্বি হা দর্শকবৃন্দ ম্যাচ পুরোপুরি জমে উঠেছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। দুই প্রতিযোগিই যার যার জায়গায় অনড়।কেও কারোও থেকে কম না। দেখা যাক কার ভাগ্যে যায় এই কাঙ্খিত চিকেন ট্রফিটা। দেখার জন্য চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে।যেখানে আমরা আপনাদের লাইভ দেখাচ্ছি এই দুর্ধর্ষকর ম্যাচ। প্রযোজক ইন্দুর মার্কা চুলকানি পাওডার,ছাগল মার্কা ঢেউটিন, তেলাপোকা মার্কা দাঁতের মাজন, আবুল খায়ের জাঙ্গিয়া,মফিজ লুঙ্গি এবং চান্দিছিলা ট্যালকম পাউডার।

আবির আর বিহান সমানে চিকেন নিয়ে টানাটানি করেই যাচ্ছে। শেষমেশ একসময় চিকেন টা দুই ভাগ হয়ে গেল। এক টুকরো আবিরের হাতে আর এক টুকরো বিহানের হাতে চলে এলো। সবাই তখন একসাথে তালি বাজিয়ে উঠলো। অতঃপর এদের ম্যাচ শেষ হলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দিল। তারপর সবাই যার যার মতো উঠে ঘুমাতে গেল। আজকে সবাই অনেক ইনজয় করেছে। আদিত্যের বাসায় এর আগে কখনো এতো হাসির রোল পরেনি। আজকে ওদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হওয়ার দিনটা ভালোই সেলিব্রেট করলো ওরা। কথাটা ভাবতেই আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকালো। নূরের চোখ জোড়া কেমন ঘুমুঘুমু হয়ে গেছে। সবাই এখন চলে গেছে। তাই আদিত্য নূরকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই নূর আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
–কোলে না। আমি আজকে পিঠে উঠবো। আমাকে পিঠে নাওনা হিরো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের দিকে দুই হাত বাড়াল।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–জো হুকুম রাণী সাহেবা। আপনার হুকুম কি ফেলতে পারি?
কথাটা বলে আদিত্য উল্টো হয়ে দাঁড়াল। নূর খুশী হয়ে সোফায় দাঁড়িয়ে, দুই হাত দিয়ে পেছন থেকে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে, দুই পা দিয়ে আদিত্যের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে পিঠে চড়ে বসলো। আদিত্য দুই হাত দিয়ে নূরের পা দুটো ধরে রইলো, যাতে নূর পরে না যায়। তারপর নূরকে পিঠে নিয়ে ওভাবেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।

নূরের অনেক মজা লাগছে এভাবে। নূর দুষ্টুমি করে একবার আদিত্যের কানে ফু দিচ্ছে, তো একবার আদিত্য ঘাড়ে সুরসরি দিচ্ছে। আদিত্য বলে উঠলো।
–কি করছ এঞ্জেল? পরে যাবো তো।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। নূর ওর মতো দুষ্টুমি করেই যাচ্ছে।

নিলা নিজের রুমে শোবার জন্য পাতলা একটা টিশার্ট আর প্লাজু পরে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল। তখনই হঠাৎ কেও ওর দরজায় নক করলো। নিলা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আবির হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো। নিলা হকচকিয়ে উঠে বললো।
–আরে আরে কোথায় ঢুকে পড়ছেন? আপনি এতরাতে আমার রুমে কি করছেন? বের হন। বের হন বলছি। নাহলে কিন্তু আমি জিজুকে ডাকবো।

আবির বলে উঠলো।
–আরে কি সবসময় জিজু জিজু লাগিয়ে রেখেছ? আমি তোমার জিজুকে ভয় পাি নাকি? যাও গিয়ে বলো কি বলবে? আর হ্যাঁ আমারও এতো শখ নেই এমনি এমনি কারও রুমে আসার। আমার একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারিয়ে গেছে। সেটাই খুঁজতে এসেছি। এখন আমাকে ডিস্টার্ব না করে খুঁজতে দাও।
কথাটা বলে আবির এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে কি যেন খুঁজতে লাগলো

নিলা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–আপনার হারানো জিনিস আমার রুমে কেন থাকতে যাবে? আপনার কি মনে হয় আপনার জিনিস আমি চুরি করেছি?

আবির হঠাৎ নিলার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আবিরকে আসতে দেখে নিলা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালের সাথে লেগে গেল। আবির এসে নিলার দুই পাশে দেয়লে হাত রেখে নিলাকে আটকে দিল।আবির এতো কাছে আসায় নিলার শরীর কেমন যেন কেপে উঠলো।আবির মাথাটা একটু ঝুকিয়ে নিলার চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেমন যেন ঘোর লাগা কন্ঠে বললো।
–মনে হয় না। আমার পুরো বিশ্বাস আছে আমার জিনিস টা তুমিই চুরি করেছ। ভালোই ভালোই আমার জিনিস ফিরিয়ে দাও।নাহলে তোমার টা আমাকে দিয়ে দাও।

নিলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–দে দেখুন,,

বরাবরের মতো আবির নিলার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলো।
–দেখাও। আই লা……ভ টু সি, হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট টু শো।

–এ একদম ফালতু কথা বলবেন না। কি এমন আপনার জিনিস চুরি হয়েছে? যে এভাবে আমাকে চোর বলছেন?

আবির নিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বললো।
–মাই হার্ট ❤️। আমার মন চুরি করেছ তুমি। যেটা এতদিন ধরে সামলে রেখেছিলাম। সেটা ফট করে তুমি চুরি করে ফেললে?এখন আমার হার্ট ছাড়া আমি বাঁচবো কি করে? হয় আমার হার্ট ফিরিয়ে দাও। নাহলে তোমার হার্ট টা আমাকে দিয়ে দাও।

আবিরের এভাবে ফিসফিসানি কথায় নিলার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। গলা কেমন যেন শুকিয়ে আসছে। নিলা আর সহ্য করতে না পেরে আবিরকে একটা ধাক্কা দিয়ে দিল। ধাক্কা খেয়ে আবির কিছুটা দূরে সরে গিয়ে হাসতে লাগলো। নিলা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপনাকে আমি আগেই বলেছি আমার সামনে এইসব লুচুগিরি দেখাতে আসবেন। এইসব ফালতু চিজি কথাবার্তায় আমি গলবো না।

আবির বাকা হেসে বললো।
–লুচুগিরির তো কিছু করলামই না। করবো নাকি?
কথাটা বলে আবির নিলার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, নিলা আবারও আবিরকে ধাক্কা দিয়ে একেবারে রুমের বাইরে বের করে দেয়। আবিরকে বার করে দিয়ে যেই দরজা লাগাতে যাবে ওমনি আবির ফট করে নিলার গালে একটা চুমু খায়। চুমু খেয়েই ওখান থেকে ছু মন্তর হয়ে যায়। আর নিলা বেচারি আবারও রোবটের মতো অটো হয়ে যায়।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here