মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৩০

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩০

★দুই দিন পার হয়ে গেছে। আদিত্য নূরের সামনে আর যায়নি। নূরের দৃষ্টির ওই অপরিচিত চাহনি আদিত্য সহ্য করতে পারে না। আর এমনিতেও ডক্টরের কথা অনুযায়ী ও নূরকে এখন স্ট্রেস দেওয়া যাবে না। তাই ওকে দেখলে নানান প্রশ্ন করবে। আর সত্যি টা বললে ওর ক্ষতি হতে পারে। আর আদিত্য সেই রিস্ক নিতে চায় না।যদিও নূরের মা বাবা অনেক বার বলেছে নূরের কাছে যেতে, ওকে সত্যি টা বলে দিতে।তবে আদিত্য রাজি হয় নি। তাই আদিত্য দূর থেকেই ওকে দেখেছে। “না হলো সে আমার, বেঁচে তো আছে।আমার থেকেই দূরেই নাহয় থাকুক তবু ঠিক তো আছে। নাহয় ছুয়ে দিতে পারবোনা,তবুও দূর থেকে দেখে আঁখির খায়েশ মেটানো তো যাবে।

আদিত্য আজ নিজের বাসায় এসেছে। বিহান আর আবির ওকে জোর করে নিয়ে এসেছে। কারণ এই দুই দিন আদিত্যর কোন নাওয়া খাওয়া নেই। পাগলের মতো হয়ে গেছে। আজ নূরকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। নূর ওর মা বাবার বাসায় চলে গেছে। নূরকে নিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল ওর প্রাণটায় ওর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। সেকি আর কখনো তার এঞ্জেল কে পাবে না? নূর কি তার হিরোকে কখনো মনে করবেনা? নাহ্ আর নিতে পারছেনা আদিত্য। অনুভূতি শূন্য হয়ে পরেছে আদিত্য। নিজেকে বড্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে।

আদিত্য ধীরে ধীরে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ঢুকলো। নূরকে ছাড়া আজ এই বাসাটা যেন বিরান মরুভূমি মনে হচ্ছে। সারা বাড়িতে নূরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে। যেন নূর এখানেই আছে। এখুনি হয়তো কোথাথেকে ছুটে চলে আসবে। আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বলবে,” আরে হিরো তুমি এসে গেছ? আমার চকলেট দাও? আর আদিত্য চকলেট বের করে দিতেই নূর তার হিরোকে মিষ্টি করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিবে। আদিত্যের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ নূরের হাসির শব্দ শুনতে পেল আদিত্য।

আদিত্য চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো নূর সোফার চারিদিকে ঘুরছে আর খিলখিল করে হাসছে। আদিত্য খুশী হয়ে নূরকে ধরতে গেলেই নূর সেখান থেকে হাওয়া হয়ে গেল। আদিত্যর খুশীটা উধাও হয়ে গেল। আদিত্যে আবারও নূরের হাসির শব্দ শুনতে পেল। পাশে তাকিয়ে দেখলো নূর সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর হাসতে হাসতে আদিত্যকে ডাকছে। “হিরো, হিরো আসো আসো আমাকে ধরো। আদিত্য আবারও ধরতে গেলে আবারও গায়েব হয়ে গেল নূর। পরক্ষনেই আবারও একই ভাবে নূর অন্য জায়গায় হেসে হেসে খেলা করছে। সারা বাড়িতে নূরের হাসির শব্দ ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারিদিক থেকে শুধু নূরের হাসির শব্দ আদিত্যের কানে বাজছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই নূরকে দেখতে পাচ্ছে। এসব আর সহ্য করতে পারছে না আদিত্য। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। আদিত্য একছুটে বাসার বাইরে বেরিয়ে এলো।

দৌড়ে বাইরে এসে দুই কান চেপে ধরে বসে পড়লো। আবির আর বিহান ওখানেই ছিল। আদিত্যকে এভাবে যেতে দেখে ওরাও ওর পিছে গেল। আদিত্যর কাছে বসে বিহান বলে উঠলো। –নিজেকে একটু সামলা আদি।এইভাবে ভাইঙ্গা পড়লে কি চলবো?

আদিত্য ব্যাথিত কন্ঠে বললো।
–না বিহান আমি পারবোনা। আমি বাসার ভেতর যেতে পারবোনা।নূরকে ছাড়া এই বাসা আমাকে কুঁড়ে খেতে চাইছে। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাসার সব জায়গায় নূরের প্রতিধ্বনি বাজছে। আমি পারবোনা থাকতে ওখানে।

আবির বলে উঠলো।
–নিজেকে একটু শক্ত করো ভাইয়া। এতো ভেঙে পড়লে কিভাবে চলবে। তুমি দেখ ভাইয়া ভাবিডল তোমাকে বেশিদিন ভুলে থাকতে পারবে না। খুব শীঘ্রই তার সব আবার মন পরে যাবে। তখন সে তোমার কাছে আবার চলে আসবে।

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো।
–সত্যি বলছিস তুই? সত্যিই আমার এঞ্জেল আমার কাছে আবার ফিরে আসবে?

–হ্যাঁ ভাইয়া অবশ্যই হবে। নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস রাখো ভাইয়া। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এভাবে আবির আর বিহান আদিত্যকে কোনমতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার বাসার ভেতর নিয়ে এলো।
______

আজ প্রায় মাসখানিক হয়ে গেছে নূর আদিত্যের জীব থেকে যাওয়ার। এই কয়দিনের প্রত্যেক টা মুহূর্ত যেন আদিত্যের কাছে এক একটা বছর মনে হয়েছে। আর প্রতিটি মুহূর্তই অসহ্য যন্ত্রণা দায়ক। যেন বেঁচে থেকেও বেঁচে নেই আদিত্য। দেহটা তো আছে তবে প্রাণটা নেই। নির্জীব নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে সবকিছু। আদিত্য ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। ঠিকমতো ঘুমায় না। কিভাবে ঘুমাবে? এখন যে আর ওর বুকে ওর এঞ্জেল টা থাকে না। তাইতো আর দুচোখে ঘুমও আসেনা। তবুও একটু চোখের শান্তি পায় যখন সে দূর থেকেই নূরকে দেখে। নিলা আদিত্যকে সবসময় নূরের সব আপডেট দেয়। নূরের অগোচরে নূরের ভিডিও করে আদিত্যেকে পাঠায়। আর তখনই আদিত্যর তৃষ্ণার্থ মনটা একটু ঠান্ডা পায়।

আবির,বিহান আর আয়াত সবসময় আদিত্যকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। তবে কেউই তেমন একটা সফল হয়ে উঠে না। সবার জীবনই কেমন যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে।

অন্যদিকে নূরের জীবন তার মোতাবেক স্বাভাবিকই চলছে।নূরকে আদিত্যর ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। আদিত্যই মানা করেছে। কারণ আদিত্য নূরকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চায়না। নূর এখন পুরোপুরি সুস্থ। আবার আগের মতো নরমাল জীবনযাপন করছে। নূর ওর পড়ালেখা কন্টিনিউ করার জন্য আবারও প্রাইভেট একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। পুরাণ বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা শুরু করেছে। বলতে গেলে সবকিছুই পারফেক্ট চলছে। তবুও সবকিছু থেকেও যেন, মাঝে মাঝে কেন জানি নিজেকে অপূর্ণ অপূর্ণ লাগে। মনে হয় কিছু একটা যেন মিসিং আছে। তবে সেটা কি সেটাই ভেবে পায়না নূর। রাতে ঘুমাতে গেলে কেমন জানি খালি খালি লাগে। মনে হয় কিছু একটা নেই। এমনটা কেন হয় বুঝতে পারে না নূর। এসব ভেবে মাঝে মাঝে উদাসীন হয়ে পড়ে নূর। চোখ বন্ধ করলে মাঝে মধ্যে কেমন জানি আবছা আবছা কিছু ভেসে উঠে ওর চোখের সামনে। তবে কিছুই স্পষ্ট না তাই নূর বুঝে উঠতে পারে না।

বেডের ওপর অচেতনের মতো পরে আছে আদিত্য। রাতে অনেক নেশা করেছে। আসলে আদিত্যর যন্ত্রণা অতিরিক্ত মাত্রাই হয়ে গেলে তখন নিজেকে ভুলতে এই নেশায় ডুবে পরে। যদিও সেটা কতটা কার্যকর হয় তা জানা নেই আদিত্যের।
হঠাৎ গায়ের ওপর ঝপাৎ করে পানি পরায় ধড়ফড়িয়ে উঠে আদিত্য। চোখ ডলে সামনে তাকিয়ে দেখে বিহান আর আবির বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে এই কাজটা ওদেরই। আদিত্য একটু রেগে গিয়ে বললো।
–হোয়াট দ্যা হেল??? তোদের মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে?

বিহান বলে উঠলো।
–মাথার স্ক্রু আমগো না তোর ঢিলা হইছে। আর শুধু স্ক্রু না তোর নাট বল্টু সব খুইল্যা পইরা গেছে। সবকিছুতে জং ধইরা গেছে। মোট কথা ওইলো তুই অহন একখান পুরাইনা ভাঙ্গার হইয়া গেছচ।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–হোয়াট ননসেন্স? কি আবোল তাবোল বকছিস?

এবার আবির তার সো কল্ড মেলোড্রামা করে বলে উঠলো।
–বিহান একদম ঠিক বলেছে ভাই। তুমি একদম বেকার ইউজলেস হয়ে গেছ।নিজেকে দেখ একবার। যাকে বলে একদম গুড ফর নাথিং। দাড়ি মুছ দিয়ে তো অ্যামাজনের জঙ্গল হয়ে গেছে। চেহারার অবস্থা এমন যেন এখনই কোন পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছ। তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি ভাই। জানো তোমাকে নিয়ে আমাদের কতো আশা ছিল। কতো গর্ব করে বলতাম,এই হলো আমাদের ভাই। দ্যা মাচো ম্যান, দ্যা গ্রিক গড,দ্যা ওয়ান ওনলি আদিত্য। যার মতো পুরুষ এই দুনিয়াতে আর একটাও নেই। আর সেই তুমি আমাদের সব গর্বের ওপর বালি ঢেলে দিলে? মাচো ম্যান তো দূরের কথা, তুমিতো এখন ম্যাচের কাঠিও নেই।

আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–সকাল সকাল কি খাঞ্জা খেয়ে এসেছিস নাকি তোরা? নাকি মাথায় আঘাত পেয়েছিস? এভাবে পাগলের মতো কি যাতা বলছিস? দেখ সকাল সকাল আমার মেজাজ খারাপ করলে কিন্তু তোদের কপালে দুঃখ আছে।

বিহান বলে উঠলো।
–আরে গাঞ্জা আমরা খাই নাই। আজকাল তো ওইডা তোর প্রিয় খাবার হইয়া গেছে। আরে হালা, #কবির সিং এর শাহেদ কাপুরও তো এতো মাল খায়নায়।যতটা তুই এই একমাসে ঢালছোচ। তুইও ওই গাঞ্জা খোর কবির সিং এর মতোই আবাল মার্কা কাম করতাছোচ। তুই কি ভাবতাছচ এমতে করলে তোর ছব ঠিক হইয়া যাইবোগা?

আবির বলে উঠলো।
–হ্যাঁ ভাই। বিহান ঠিকই বলেছে। আচ্ছা একটা কথা বলোতো, ভাবিডল তোমাকে কি বলে ডাকতো? হিরো বলে ডাকতো তাইনা? তাহলে তুমি বলোতো তুমি কি এখন হিরোদের মতো কাজ করছো?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে?

–মানে হিরোরা কি এতো সহজে হার মেনে যায়? তাহলে তুমি এতো সহজে হার মানলে কিভাবে? এতটাই সহজে কিভাবে হাল ছেড়ে দিতে পারো তুমি?

–তো কি করবো? তোরা তো জানিসই নূর,,,

আদিত্যর কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির বলে উঠলো।
–হ্যাঁ জানি ভাবিডল তোমাকে ভুলে গেছে। আরে তাতে কি হয়েছে? নূরের স্মৃতি গেছে, কিন্তু নূরতো আছে? তুমি তার জীবনে নতুন হিরো হিসেবে যাও। সে নাহয় আগের স্মৃতি ভুলে গেছে। তুমি তার সাথে নতুন স্মৃতি তৈরি করো। তার মনে নতুন করে তোমার জন্য অনুভূতি জাগাও। আরে তুমি হলে সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য। যার চার্মের সামনে সব মেয়েদের মন পরাজিত হয়ে যায়। তাহলে ভাবিডলকে কেন নিজের অ্যাবিলিটি দেখাচ্ছ না? আরে শো সাম চার্ম ব্রো।ভেতরের প্রেমিক পুরুষকে জাগাও। নতুন করে ভাবিকে তোমার প্রেমের মায়ায় ফেল। আরে এমন কপাল কয়জনের হয়,বিয়ের পরে নিজের বউয়ের সাথে আবার নতুন করে প্রেম করার?

এবার বিহান বলে উঠলো।
–একখান কথা ভাবছচ কহনো? নূর কিন্তু জানেনা ওর বিয়া হইয়া গ্যাছেগা। তাইলে এমনও তো হইতে পারে যে নূরের জীবনে অন্য কেও চইল্যা আইলো। আর নূরেরও তহন তারে ভালো লাইগা গেল। তহন কি করবি তুই? একবারও ভাবছচ?

বিহানের কথায় আদিত্য চমকে উঠলো। সত্যিই যদি কখনো এমন হয়? না না কখনোই না। নূর শুধু আমার। আর কারোর না। আর কাওকে আমি ওর কাছে আসতে দেবনা। কখনোই না।

বিহান বলে উঠলো।
–আমগো কাম ছিল বুঝাইনা। তাই আমরা বুঝাইলাম। অহন তুই দেখ তুই কি হবি? আবাল মার্কা দেবদাছ হবি,নাকি মাচো ম্যান হিরো হবি।
কথাগুলো বলে ওরা চলে গেল। আর আদিত্য বসে বসে ভাবতে লাগলো।
_____

ড্রয়িং রুমের সোফায় বিহান আবির আর আয়াত গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বিহান গালে হাত দেওয়া অবস্থায়ই আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তোর কি মনে হয়, ডোজ কামে লাগবো?

আবিরও একই ভঙ্গিতে বললো।
–যে ভাষণ দিয়ে এসেছি, তাতে এ্যাফেক্ট তো হওয়া লাগে। এখন দেখা যাক আমাদের মেহনত কতদূর সফল হয়।

–মাগার যাই কচ, তোর ডায়লগ গুলান কিন্তু জোচ ছিল। কোন মুভি থেকে চুরি করছচ?

আবির এটিটিউট দেখিয়ে বললো।
–এগুলো আমার অরিজিনাল নিজস্ব ডায়লগ।এই আবির কারোরটা চুরি করে না। এটাকে ট্যালেন্ট বলে ট্যালেন্ট। এতো ট্যালেন্ট নিয়েও কখনো অহংকার করিনি আমি। দেখোছিস কতটা মহান আমি?

বিহান তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–হ হ খালি তুই ক্যান, তোর জাঙ্গিয়া ডাও ট্যালেন্টেড। আইছে আমার ট্যালেন্ট। সন্ধ্যার পরে বাইরে গিয়া মুতার সাহস নাই। তার আবার ট্যালেন্ট। তোর ট্যালেন্টের ওপর স্যানিটাইস কর। ভাইরাস ধইরা গ্যাছেগা।

আবির ক্ষেপে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই আদিত্য সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। আদিত্যের দিকে তাকাতেই সবাই ৮৮০ ভোল্টের একটা ঝটকা খেল। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্যকে পুরো কিলিং লাগছে।আদিত্য দাড়ি মুছ ট্রিম করে ফেলেছে। জিন্স, টি শার্ট, চোখে সানগ্লাস সব মিলিয়ে পুরো হিরো লুক। বিহান ঠোঁট চোখা করে শিস বাজিয়ে উঠলো। আবির বলে উঠলো।
–ওয়াহ্, বোল্লাহ বোল্লাহ কেয়া লাগরাহে হো ভাই। আজতো নিজের চার্ম দিয়ে দু চারশো তো ঘায়েল করেই ফেলবে।

আয়াতও বলে উঠলো।
–সত্যি ভাইয়া তোমাকে একদম সুপার লাগছে।

আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–প্রথম প্রথম শশুর বাড়ি যাবোতো। তাই একটু ভালো তো লাগতেই হবে কি বলিস তোরা?

আবির আর বিহান অবাক হয়ে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকালো। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
—তারমানে তুই আমাদের কথা মেনে নিয়েছিস?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–হ্যাঁ। তোরা ঠিকই বলেছিস। এভাবে বসে থাকলে হবে না। আমার নূরকে পাওয়ার নতুন চেষ্টা করতে হবে।

আবির আর বিহান খুশী হয়ে দুজন মিলে আদিত্যকে ধরে উঁচু করে ঘোরাতে লাগলো। আর হইহই করে উঠলো। একটু পরে নামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–আমরা সত্যিই অনেক খুশী। শেষমেশ তুই ডিপ্রেশন থেকে বের হলি।দেখবি এখন সব ঠিক হয়ে যাবো।

আবির দুষ্টু হেসে বললো।
–ভাই আমারেও সাথে নিয়ে চলনা? আমিও আমার কচি বিয়াইন টাকে একটু দেখে আসবো। না মানে তোমার শোকে শোকে আমিও ঠিকমতো প্রেম পিরিতি করতে পারিনি।

আদিত্যের কথায় সবাই হেঁসে দিল।
_____

নূর ওর মাকে খুঁজতে এসে দেখলো ওর মা ওদের গেস্ট রুমটা পরিস্কার করছে। আবার নতুন চাদর আর পর্দাও লাগাচ্ছে। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কেও আসবে নাকি মা? রুমের এতো রুপচর্চা করছ কেন?

নূরের মা কাজ করতে করতেই জবাব দিল।
–হ্যাঁ আসবে।

–কে আসবে?

–আসলে এই রুমটা পেইং গেস্ট হিসেবে ভাড়ায় দিয়েছি। শুধু শুধু পড়ে ছিল। তাই ভাবলাম ভাড়া দিলে কিছু টাকাও আসবে। আর রুমটাও কাজে লাগবে।

–কি বলছ মা? কবে ভাড়া দিলে? আমাকে তো কেউ কিছু বললো না? আর এটা আবার কেমন কথা? নিজেদের বাসায় তুমি অন্য একটা বাইরের লোককে আনবে? কে না কে,কেমন হবে না হবে? এমন এমনি একজনকে তুমি বাসায় থাকতে দিবে? যদি কিছু হয়ে যায়? তারওপর এবাড়িতে আমরা প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মেয়ে থাকি। যদি কিছু হয়ে যায়?

নূরের মা বলে উঠলো।
–এই নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। যে ছেলেটা আসবে সে আমার এক আত্মীয়র পরিচিত। ছেলেটা নাকি বিদেশ থেকে কোন এক বিজনেসের কাজে এসেছে। এখানে তেমন কাওকে চিনে না। আর হোটেলের খাবার নাকি ছেলেটা খেতে পারে না। তাই সে এখানে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকবে। তাই চিন্তার কিছু নেই।

নূর অবাক স্বরে বললো।
–হোয়াট? তারমানে একজন ছেলে মানুষ আসবে এখানে থাকতে? মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছ। একজন অপরিচিত ছেলেকে তুমি বাসার ভেতর থাকতে দিবে?

নূরের মা একটু বিরক্তির সুরে বললো।
–হ্যাঁ তো কি হয়েছে? ছেলে মানুষ বলে কি তাকে পেইং গেস্ট রাখা যায়না? এই তুই যাতো এখান থেকে, আমার অনেক কাজ আছে। শুধু শুধু আমার মাথা খাস না।

নূর যেন তাজ্জব বনে গেল। যে মা আজ পর্যন্ত বাড়ির আশেপাশে কোন ছেলে মানুষকে আসতে দেয়নি। এমনকি নূরের খালাত,ফুপাতো, চাচাতো,মামাতো যত কাজিন প্রাপ্তবয়স্ক ভাইয়েরা আছে তাদেরও এই বাসায় তেমন একটা আসতে দিতো না। যদিও বা আসতো নূর আর নিলাকে তাদের রুম থেকে বের হতে দিতোনা। আর আজ কিনা অনায়াসে বাইরের একজন ছেলেমানুষ কে বাসার ভেতর নিয়ে আসছে? তাও আবার এমন একটা ভাব করছে যেন পেইং গেস্ট না, তার মেয়ের জামাই আসছে।
নূরের ভাবনার মাঝেই নিলা এসে উৎসাহিত কন্ঠে বললো।
–আপু চলনা আমাকে একটু শাড়ি পরিয়ে দাওনা?

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কেন তোর আবার হঠাৎ করে শাড়ি পরার ইচ্ছে জাগলো কেন? আমি বুঝতে পারছিনা হচ্ছে টা কি এসব? মনে হচ্ছে এবাড়িতে যেন ঈদের উৎসব শুরু হয়েছে।

নিলা বলে উঠলো ।
–আরে এমন কিছুই না। আসলে আমাদের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে তো।তাই আমরা সব বান্ধবীরা মিলে শাড়ি পরে যাবো বলে ভেবেছি। তাই আজকে একটু পরে দেখতে চাই কেমন লাগে। আর শাড়ী পরে থাকার প্রাকটিস টাও হয়ে যাবে। চলনা প্লিজ?

–ঠিক আছে ঠিক আছে, চল।

নূর নিলার রুমে এসে শাড়ী হাতে নিতেই নিলা বলে উঠলো।
–আপু চলনা আমরা দুই বোনই আজকে শাড়ী পরি।অনেক মজা হবে।

–আরে না না আমার এখন শুধু শুধু শাড়ী টারি পড়তে ইচ্ছে করছে না।

নিলা মিনতির সুরে বললো।
–প্লিজ আপু পড়না? সত্যিই অনেক মজা হবে। প্লিজ প্লিজ প্লিজ আপু? আমার সোনা আপু, আমার মোনা আপু প্লিজজজজ,,,

নূর আর না পেরে রাজি হয়ে গেল। নিলার খুশী আর দেখে কে। ওর প্ল্যান কাজ করেছে। ওতো এসব নূরকে শাড়ী পড়ানোর জন্যই করছিল। অতঃপর দুই বোন শাড়ী পরে নিল। নূর একটা পিংক কালারের আর নিলা একটা ব্লু কালারের জামদানী শাড়ি পড়লো। নিলার চাপাচাপিতে নূর একটু সেজেও নিল। চোখে কাজল,কানে বড়ো ঝুমকা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাতে কাচের চুড়ি সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে দুই বোনকে।
__

বেলা দুইটার দিকে আদিত্য আর আবির নূরদের বাসায় এলো। বুকটা ধড়ফড় করছে আদিত্যর। আজ কতদিন পরে আদিত্য ওর এঞ্জেল কে সরাসরি দেখতে পাবে। নাজানি নূর আমাকে দেখে কিভাবে রিয়াক্ট করে? এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার ভেতর এলো আদিত্যেরা। নূরের মা বাবা আদিত্যকে দেখে অনেক খুশী। এতদিন পরে আদিত্যকে একটু স্বাভাবিক দেখে তাদেরও একটু শান্তি লাগছে।

আদিত্য আর আবির ড্রয়িং রুমে সোফায় এসে বসলো। আদিত্য নূরের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
–মা নূর কিছু বুঝতে পারেনি তো?

নূরের মা বলে উঠলো।
–আরে না না তুমি যেভাবে বলেছিলে আমরা সেভাবেই ওকে বলেছি।তুমি চিন্তা করোনা।

আদিত্য এদিক ওদিক চোখ ঘুড়িয়ে নূরকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ হাসির রিনিঝিনি শব্দে পাশে ফিরে তাকালো আদিত্য। নূর আর নিলা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে বলতে আর হাসতে হাসতে পাশের রুম থেকে বেড়িয়ে আসছে। নূর এখনো আদিত্যকে দেখেনি।
তবে আদিত্যের চোখ আর হৃৎপিণ্ড দুটোই ওর পরিটার ওপর আটকে গেল। আজ যেন নতুন নূরকে আবিষ্কার করলো আদিত্য।এই প্রথম নূরকে শাড়ীতে দেখছে আদিত্য। হৃৎস্পন্দন যেন কিছু সময়ের জন্য থমকে গেল। নূরকে আগের সেই বাচ্চা এঞ্জেল মনে হচ্ছে না। এযে এক অপরুপ মহীয়সী নারী। যার রুপের ঝংকারে যে কেউ ঝলসে যাবে। আদিত্য অপলক চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। আদিত্য এতদিন শুধু নূরকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে এসেছে। তবে আজ যেন এই মহীয়সী নারীর প্রেমে পড়ে গেল আদিত্য।

নূর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ বেখেয়ালিতে শাড়ির সাথে পা বেজে পরে যেতে নিল। আদিত্য সেটা দেখে দ্রুত গিয়ে নূরকে ধরলো। এক হাত নূরের কোমড়ে রেখে আরেক হাতে নূরের কাঁধ ধরে নূরকে আটকালো। নূর চমকে গিয়ে আদিত্যের দিকে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হতেই কিছু একটা হয়ে গেল নূরের। হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন ধুকধুক শুরু হয়ে গেল।কেমন যেন খুব চেনা চেনা একটা ঘ্রাণ পেল নূর
। আনমনেই আদিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো নূর। আর আদিত্য তো আগে থেকেই ডুবে আছে নূরের ওই ডাগর ডাগর কাজল কালো আঁখি জোড়ায়।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here