মহুয়া পর্ব -১৮

#মহুয়া
লেখা; শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:১৮

” শো‌নো ভা‌বি একটা কথা ব‌লি, অনু‌শোচনার ‌চে‌য়ে বড় কো‌নো শা‌স্তি নেই। য‌দি কা‌ছের মানুষটা‌কে জ্বালা‌তে পোড়া‌তে চাও, য‌দি চাও সে তার ভু‌লে অনুতপ্ত হোক, প্রচুর অনুতপ্ত হোক; ত‌বে তা‌কে না মার‌বে, না বকা দি‌বে, না চিল্লা‌বে, না রাগ, অভিমান দেখা‌বে, স্বাভা‌বিক ভা‌বে সব কাজ কর‌বে, শুধু তার সা‌থে কথা বলা বন্ধ ক‌রে দি‌বে। আর কৌশ‌লে তার ভুলগু‌লো চো‌খে আঙুল দি‌য়ে দে‌খি‌য়ে দি‌বে। দেখ‌বে এম‌নি জ্ব‌লে পু‌ড়ে কষ্ট পা‌বে। তখন মাফ চে‌য়ে কুল পা‌বে না।”
” তোর ভাই তো অল‌রে‌ডি অনুতপ্ত।”

” বা‌লের অনুতপ্ত। মু‌খে খারাপ কথা আনি‌য়ো না তো। শো‌নো সব ছে‌লেরা কোথাও না কোথাও একই রকম। ও এখন অনুতপ্ত হবার ঢঙ কেন করছে? বি‌য়ের আগে কি ঘোড়ার ঘাস কাট‌ছে না‌কি বাল ফালাই‌ছে? তোমা‌কে দে‌খে আর তোমার সা‌থে কথা ব‌লেই ও তোমা‌কে ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি‌লো। ও তোমা‌কে বি‌য়ের আগে স‌ত্যিটা কেন ব‌লে‌নি সেটা শো‌নো, ও ভাব‌ছে বি‌য়ের আগে জান‌লে, তো তু‌মি ওরে লা‌ত্থি ‌মে‌রে ওকে বি‌য়ে কর‌তে না বল‌তে। বি‌য়ে করার বদ‌লে ওরে পিছা মার‌তে। সে জন্য ভাব‌ছে বি‌য়ের পর বল‌বে। বি‌য়ের পর বল‌লে, বাঙালী মে‌য়েরা আর যাই পারুক স্বামী‌কে ছাড়‌তে পা‌রে না। তখন তো বাধ্য হ‌য়ে স্বামী সা‌থে থাক‌তে হ‌বে। ঐ ছাগলটা তাই ভাব‌ছে।”

” ‌তো এখন আমি কী করবো?”
” কান্নাকা‌টি বন্ধ ক‌রে একদম স্বাভা‌বিক থাক‌বে। কিন্তু ওর সা‌থে কো‌নো কথা বলবে না। তোমার কা‌ছে আসার চেষ্টা করলে বা স্বামী‌গি‌রি দেখাই‌তে আস‌লে, পাছায় লা‌ত্থি মে‌রে বলবা, যা না তোর প্রেমার কা‌ছে। আমার কা‌ছে মারা‌তে কেন আস‌ছিস!”
” এমন বা‌জে ভাষায় বল‌বো?”
” এটা বা‌জে ভাষা না। জাস্ট একটু কড়া ভাষা। একটু কড়া ভাষা বললে কিছু হয় না।”
” কিন্তু।”
” রা‌খো তোমা‌র কিন্তু। বলদা‌মি তো কম ক‌রো‌নি। তোমার বরটা মন থে‌কে ভা‌লো কিন্তু চ‌রি‌ত্রের দিক থে‌কে পুরা ইমরান হাস‌মি।”
” অতটা খারাপও না।”

” না দু‌ধে ধোয়া তুলসী পাতা সে। গা জ্বালা‌নো কথা বলবা না। প্রথ‌মে রিয়া, তারপর প্রেমা, প্রেমার সা‌থে কিছু না কর‌লে,‌ প্রেমা‌কে কো ভূ‌তে প্রেগ‌নেন্ট ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লো। প্রেমার বাচ্চা তো ওর পে‌টে আকাশ থে‌কে পড়‌ছে। কোথা থে‌কে পড়‌ছে তা কী তু‌মি বো‌ঝো না? তারপর আবার প্রিয়‌তি। হারা‌মি আমার ভাই না হ‌লে র্নিঘাত জে‌লে পাঠাতাম।”
” কিন্তু ও মানুষ ভা‌লো। রিয়ার বিষয়টা তো কম বয়‌সের আবেগ ছি‌লো।”
” তো প্রেমার বিষয়টা কি বড় বয়‌সের উত্তেজনা, লুচ্চা‌মি ছি‌লো!”
‌প্রিয়তি মুখ গম্ভীর ক‌রে বলল,
” তুই-ই তো বল‌লি দোষ প্রেমার।”
” হ্যাঁ বে‌শির ভাগ দোষ স‌ত্যি প্রেমার। তা ব‌লে তোমার বরও ঋষি মহাঋ‌ষি নয়। একটা মে‌য়ে ছলাকলা করল ওম‌নি গ‌লে গে‌লো। তার সা‌থে বিছ‌ানায় চ‌লে গে‌লো। শো‌নো ও না পাপ ক‌রে‌ছে। যিনা ক‌রেছে, যার শা‌স্তি তু‌মি আর আমা‌কে যে বাচ্চাটা ফুপি ডাকতো সে পে‌য়ে‌ছে। ছোচা বিলাই। জায়গা বেজায়গায় ছোচলা‌মি ক‌রে, মুখ দেয়।”

‌প্রিয়‌তি নি‌জে রিদু‌কে কি গা‌লি দি‌বে, হৃ‌দিতার গা‌লি শু‌নে রি‌তিমত রিদুর উপর ওর মায়া হ‌চ্ছে এখন। হৃ‌দিতার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
” থাক বাদ দে এখন।”
” ও জামাই‌রে কিছু বল‌লে এখনও পো‌ড়ে তোমার? জ্ব‌লে খুব?”
‌প্রিয়‌তি দীর্ঘশ্ব‌াস ছে‌ড়ে বলল,
” স‌ত্যিই খুব পো‌ড়ে রে। ভা‌লোবা‌সি যে খুব। পৃ‌থিবীতে ওকেই বোধ হয় আমি এখন সব থে‌কে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি।”

হৃ‌দিতা নি‌জের গা‌ম্ভির্য্য বজায় রে‌খে বলল,
” এটাই তো বলদা বাঙালী মে‌য়ে‌দের বলদা‌মি। স্বামী বলতে তা‌দের কা‌ছে সব‌চে‌য়ে দা‌মি। আর স্বামীরা এটা বুঝ‌তে পা‌রে, এবং স্ত্রী‌দের দুর্বল প‌য়েন্ট পে‌য়ে যায় ব‌লেই তো স্ত্রী‌দের সম্মান করে না। নি‌জের মনম‌র্জি ক‌রে। তারা বু‌ঝে যায় তারা আকাম কুকাম যাই করুক তাদের স্ত্রীরা তা‌দের ছে‌ড়ে যা‌বে না বরং মাথায় তু‌লে নাচ‌বে। যার কার‌ণে নি‌জেদের রাজা মহারাজা ভা‌বে আর স্ত্রী‌দের চাকরানী।”
” তোর ভাই তো এমন নয়।”
” হয়‌তো। কিন্তু ভা‌বি একটা কথা ব‌লি কখনো কা‌রো কা‌ছে নি‌জের দুর্বল প‌য়েন্ট প্রকাশ কর‌বে না। যা‌কে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সো তার কা‌ছে তা কখ‌নো প্রকাশ কর‌বে না। নি‌জের দুর্বল প‌য়েন্ট এবং সব‌চে‌য়ে ভা‌লোবাসার জায়গাটা সর্বদা গোপন রাখ‌বে। মানুষ যখন তোমার দুর্বল প‌য়েন্ট বা ভা‌লোবাসার জায়গাটা খুঁ‌জে পা‌বে তখনই তারা সেখা‌নে আঘাত কর‌তে শুরু কর‌বে।”
” বুঝলাম।”

” এখন তু‌মি রেস্ট নাও। বেটার হয় আমার সা‌থে আমার রু‌মে চ‌লো। সারা রাত তোম‌া‌কে বোঝা‌তে হ‌বে। এতে ক‌রে ভাইয়াও ছটফট কর‌বে।”
” এটা কী অতি‌রিক্ত হ‌য়ে যা‌বে না?”
” না বরং কম হ‌বে। তু‌মি একা যে‌তে পার‌বে না‌কি ধ‌রে নিব?”
” ধ‌রে নে। শরীর কাঁপ‌ছে খুব।”
” আচ্ছা চ‌লো তোমা‌কে রু‌মে রে‌খে তারপর প্লেট বা‌টিগুলা রান্নাঘ‌রে রাখব।”
” হুঁ”

‌প্রিয়‌তি চ‌লে যাবার কিছুক্ষণ পর রিদু রু‌মে ঢুকে দেখ‌লো প্রিয়‌তি নেই। প্রিয়তি‌কে খুঁজ‌তে খুঁজ‌তে হৃ‌দিতার রু‌মে গি‌য়ে দেখ‌লো প্রিয়‌তি হৃ‌দিতার বিছানায় ঘু‌মি‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। একটু অবাক হ‌লো রিদু। তারপর হৃদিতা‌কে বলল,
” প্রিয়‌তি তোর এখা‌নে ঘুমা‌লো যে?”
” ভা‌বি এখন থেকে আমার রু‌মে থাক‌বে। সকা‌লে গি‌য়ে তার সব কাপড় এ রু‌মে নি‌য়ে আসব।”
” মা‌নে? ও নি‌জের রুম ছে‌ড়ে তোর রু‌মে কেন থাক‌বে?”
” তোর সা‌থে কেন থাক‌বে?”
‌রিদু বেশ রাগ করে বলল,
” তুই কিন্তু বেশ বাড়াবা‌ড়ি কর‌ছিস। স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে ঢোকা ঠিক না।”
ভাব‌লেশহীন ভা‌বে হৃ‌দিতা বলল,
” হুঁ
” এটা আমা‌দের ব্য‌ক্তিগত ব্যাপার।”
” হুঁ ব‌ুঝলাম। এখন নি‌জের ব্যক্তিগত রু‌মে গি‌য়ে ঘুমা। আর আমা‌কে ঘুমা‌তে দে। রাত দুপু‌রে ক্যাচাল ক‌রিস না তো।”

‌রিদু হৃ‌দিতার দি‌কে বড় চো‌খে তা‌কি‌য়ে বিছানার কা‌ছে এসে প্রিয়‌তি‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। শরীর বড্ড খারাপ ছি‌লো প্রিয়‌তির। বিছানায় শু‌তেই গভীর ঘু‌মে ত‌লি‌য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লো। তাই হঠাৎ কো‌লে নেয়ায় প্রিয়‌তি অনেকটা হচ‌কি‌য়ে উঠল। রিদু হৃ‌দিতার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
” এরপর আমার বউ‌কে ফুস‌লি‌য়ে নি‌জের রু‌মে আন‌লে তোর হবু ব‌রের সা‌থে বি‌য়ের আগে ডি‌ভোর্স করা‌ব ম‌নে রা‌খিস। তা‌রপর প্রিয়‌তির দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, ননদ বলল আর ওম‌নি নাচ‌তে নাচ‌তে ননদের রু‌মে এসে ঘু‌মি‌য়ে পড়‌লে? একবারও ভাব‌লে না তোমা‌কে ছাড়া আমার চ‌লে না, ঘুম হ‌বে না।”

‌প্রিয়তি কো‌নো কথাই বলল না। রিদু রু‌মে নি‌য়ে গি‌য়ে বিছানায় শু‌ইয়ে দি‌তেই প্রিয়তি অপর পা‌শে মুখ ঘু‌রি‌য়ে চোখ বন্ধ করল। রিদু পা‌শে শু‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তেই প্রিয়‌তি বলল,
” আমার অসহ্য লাগ‌ছে। প্লিজ মাঝখা‌নে ফাঁকা রে‌খে ঘুমাও।”
‌রিদু আর প্রিয়‌তি‌কে কিছু বলল না। খা‌নিক দূরত্ব রে‌খে শু‌য়ে পড়ল। যখন বুঝ‌তে পারল প্রিয়‌তি গভীর ভাবে ঘু‌মি‌য়ে গে‌ছে তখন আবার আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ম‌নে ম‌নে বলল,
” আ‌মি তোমার জন্য বেহায়া হ‌তে পা‌রি সারা জীবন। তু‌মি যত না ক‌রো, তারপর বেহায়ার মত বারবার তোমার কা‌ছেই যাব। তোমা‌কে ছাড়া আমার নিশ্বাস চলবে না।”

২৩!!

সকাল বেলা প্রিয়ম এসে‌ছে প্রিয়‌তির সা‌থে দেখা কর‌তে। গতকাল হস‌পিটা‌লে গি‌য়ে একবার দে‌খে এসে‌ছি‌লো। প্রিয়‌তির বাবা মা জা‌নতো না, প্রিয়‌তি অসুস্থ। আজ সকা‌লে প্রিয়‌মের কা‌ছে শু‌নে খ‌ুব রাগ ক‌রে‌ছে কেন তা‌দের জানা‌নো হয়‌নি! তা‌রপর প্রিয়তিকে কল ক‌রে না পে‌য়ে, রিদু‌কে কল করল ওর খবর নি‌তে। রিদু স্বাভা‌বিক ভা‌বেই কথা বলল। তারা দেখ‌তে আস‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো কিন্তু রিদু বলল,
” আপনারা এখন আস‌লে আবার বাবার সা‌থে ঝা‌মেলা হ‌বে, কথা কাটাকা‌টি হ‌বে, প্রিয়‌তি ডিস্ট্রাব হ‌য়ে যা‌বে। শরীর আরও খারাপ কর‌বে। তারচে‌য়ে বরং বিকা‌লে আমি কথা ব‌লি‌য়ে দিব।”

তারাও ভে‌বে দেখ‌লো রিদুর কথা ঠিক। তাই নি‌জেরা না গে‌লেও প্রিয়ম‌কে দেখ‌তে পাঠা‌লো। প্রিয়ম প্রিয়‌তির রু‌মে ব‌সে আছে। রিদু সকা‌লেই অফিস গে‌ছে। হৃদিতা ওদের নাস্তা দি‌য়ে বলল,
” আপনারা গল্প করুন।”
‌বেশ কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলার পর প্রিয়ম বলল,
” আজ বিকা‌লে ক‌দি‌নের জন্য খুলনা যাব। বড় খালার বা‌ড়ি‌তে।”
খুলনার নাম শুন‌তেই প্রিয়‌তির কাটা ঘা‌য়ে যে‌নো লব‌নের ছিটা পড়ল। তবুও নি‌জে‌কে শান্ত রে‌খে বলল,
” হঠাৎ?”
” এম‌নি। ক‌দিন ঘু‌রে আসি। তাছাড়া কাল তি‌থির বি‌য়ে। আমার এখা‌নে না থাকাটাই বেটার।”

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে প্রিয়‌তি বলল,
” তা ঠিক। তা ফির‌বি ক‌বে?”
” জা‌নি না।”
” সপ্তাহ খা‌নি‌কের ম‌ধ্যে ফির‌বি?”
” কেন?”
” আমার কিছু কাজ ছি‌লো তোর সা‌থে।”
” কী কাজ?”
” ম‌নে অাছে ইন্টা‌রে পড়াকালীন আমি প্রতিমা‌সে পাঁচশ টাকা ক‌রে একটা ডি‌ পি এস ক‌রে‌ছিলাম, দশ বছর মেয়া‌দে। তখন টিউশ‌নি পড়াতাম তাই প্র‌তিমা‌সে কষ্ট হ‌লেও পাঁচশ টাকা ক‌রে জমা রাখতাম। দশ বছর হ‌য়ে‌ছে কিনা জা‌নি না ত‌বে ডি‌ পি এসটা ভে‌ঙে ফেলব।”
” কেন?
” আমার খুব টাকার প্র‌য়োজন।”
” কে‌নো?”
” প‌রে বল‌বো।”
” ঠিকআ‌ছে কতটাকা বল, আমি না হয় দি‌চ্ছি।”

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে প্রিয়‌তি বলল,
” না ভাই, তো‌দের প‌রিবা‌রের থে‌কে আর কিছু নিব না।”
” আমার প‌রিবার নয়, আমি দি‌চ্ছি।”
” না‌রে পারব না। তুই বরং খুলনা থে‌কে ফি‌রে আমা‌কে নি‌য়ে একটু ব্যাং‌কে যা‌বি। তারপর ‌ডি পি এস হিসাব ক‌রে বইটা কে‌টেকু‌টে টাকা নি‌য়ে আসব।”
‌প্রিয়ম জা‌নে প্রিয়‌তি শত বার বল‌লেও ও টাকা নি‌বে না। তাই বলল,
” ঠিক আ‌ছে।”
‌প্রিয়ম আরও ঘন্টাখা‌নিক সময় প্রিয়তির সা‌থে কথা ব‌লে বিদায় নিয়ে চলে গে‌লো।

রা‌তে রিদু ফি‌রে দেখল প্রিয়‌তি ব্যালক‌নি‌তে ব‌সে বাই‌রে তা‌কি‌য়ে আছে। অথচ রোজ রিদু বাসায় ফির‌তে না ফির‌তেই দৌঁ‌ড়ে ওর কা‌ছে আছে। রিদু প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে ওর মাথায় চু‌মো খে‌য়ে বলল,
” দি‌নে কতবার মা আর হৃ‌দিতা‌কে কল ক‌রে তোমা‌কে চাইলাম তু‌মি কথা বল‌লে না যে?”
” প্রিয়‌তি নিশ্চুপ।”

‌রিদু আর কথা বাড়া‌লো না। প্রিয়তির ম‌নের অবস্থা বুঝ‌তে পার‌ছে ও। ফ্রেশ হ‌য়ে রিদু বিছানায় বস‌তেই দেখল চেকবুক আর নি‌চে চাপা দেয়া একটা কাগজ। রিদু কাগজটা খু‌লে তা‌তে প্রিয়‌তির হা‌তের লেখা দেখ‌লো। কাগজটা পড়া শুরু করল,
” রিদু বি‌য়ের রা‌তে তু‌মি আমার দেন মোহ‌রের দুই লাখ টাকা পুরোটাই দি‌য়েছি‌লে। এবং প‌রে ব্যাং‌কে একাউন্ট ক‌রে তা রে‌খে দি‌য়ে‌ছি‌লে। ব‌লে‌ছি‌লে আমার যেমন ইচ্ছা তেমন খরচ করব। কিন্তু আমি সেখান থে‌কে এক টাকাও খরচ ক‌রি‌নি। ‌দেন‌মোহ‌রের টাকার উপর শুধুমাত্র মে‌য়ের অধিকার। ত‌বে সে টাকা মেয়ে তার ইচ্ছামত কাউ‌কে দি‌তে পা‌রে। আমি তাই আমার টাকাগু‌লো তোমা‌কে দিলাম। চেক লিখে রে‌খে‌ছি। র‌বিবার ব্যাং‌কে গি‌য়ে টাকাগু‌লো তু‌লে তোমার দেনার যতটা পা‌রো শোধ কই‌রো।”

‌রিদুর প্রিয়‌তির লেখাটা প‌ড়ে মনটা খুব খারাপ হ‌লো। বুঝ‌তে পারল ওর বাবার বলা কথাগু‌লো প্রিয়‌তি শু‌নে‌ছে। খা‌নিক রাগও হ‌লো প্রিয়‌তির এমন কা‌জে। প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
” এগু‌লো লাগ‌বে না। আমি ম্যা‌নেজ ক‌রে নি‌বো। এ টাকার হক শুধু তোমার।”
‌বিরস ক‌ন্ঠে প্রিয়‌তি বলল,
” যেখা‌নে মানুষটারই হক নেই আমার; সেখা‌নে টাকা নামক তুচ্ছ কাগজ দি‌য়ে কী হ‌বে? তাছাড়া দেন‌মো‌হেরর টাকা মে‌য়ে তার ইচ্ছামত খরচ কর‌তে পা‌রে বা কাউ‌কে দি‌তে পা‌রে।”

‌রিদু অনেকক্ষণ প্রিয়‌তির দি‌কে তা‌কি‌য়ে থে‌কে বলল,
” মানুষটার উপর হক কেবল তোমারই ছি‌লো আর তোমারই থাক‌বে। হয়‌তো মানুষটা কখ‌নো ভুল প‌থে চ‌লে গি‌য়েছি‌লো। কিন্তু ভুল তো মানুষই ক‌রে। আর ভুল ক‌রে য‌দি ভুল স্বীকার না ক‌রে ত‌বে তা পাপ। ভুল ক‌রে তা স্বীকার ক‌রে ক্ষমা চাই‌লে সৃ‌ষ্টিকর্তাও ক্ষমা ক‌রেন। ত‌বে মানুষ কেন ক্ষমা কর‌তে পা‌রে না?”
‌প্রিয়‌তি একম‌নে রিদুর দি‌তে তা‌কি‌য়ে রইল।

চল‌বে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here