#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#Writer:মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃএক
-এইটা ভালো না। কেমন যেনো দেখতে। দাম ও তো কত বাপরে বাপ। বলি বাপু দাম কি একটু কমাই রাখা যাইবো? এতক্ষণ ধরে একজন বয়স্ক লোক দোকানে এসে দোকানের প্রত্যেকটি জিনিস ধরে ধরে দেখছিল। তিনি এখন কতগুলো প্যাকেট হাতে ধরে দোকানে বসা মেয়েটিকে কথাটি জিজ্ঞাস করলো। তুলতুল এতোক্ষণ বিরক্তির সাথে লোকটিকে দেখছিল। কেমন দোকানের সব জিনিস ধরে ধরে দেখছিল আর উল্টো পাল্টা ভাবে রাখছিল। কিছু বলতেও পারছে না কারণ তার বাবা দোকান টা কিছুক্ষন এর জন্য দেখতে বলেছে। এখন এই ঝামেলাময় লোকটিকে কিছু বললে আরো ঝামেলা করবে। কারণ লোকটা আগেও একবার তাদের সাথে ঝামেলা করে গিয়েছে। এইজন্য সে কোনো কথা ছাড়া বিরক্তির সাথে শুধু দেখছিল। কিন্তু লোকটির কথায় তা আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিল।
তুুলতুল বিরক্ত ভাবেই জবাব দিল- জি না কমিয়ে রাখা যাবে না সব একদাম। আপনার ভালো লাগলে নেন নাহলে রেখে দিন। লোকটা কথা শুনে বলে উঠলো -নিব কেমনে নিব তোমরা বাপ- বেটি মিলে যে দাম ঠিক করছো এই দামে কেউ কিনবো। কিনবো না। নতুন দোকান করছো দাম কমাই না রাইখা আরো বাড়াই দিছো। দোকান দুই দিনেই লাটে উইটা যাইবো। দেইখো।
এবার আর চুপ করে থাকলো না তুলতুল। সে বললো- দোকান উঠে যাবে নাকি থাকবে সেটা আমরা দেখে নিব। আপনার না ভাবলেও চলবে।তা আঙ্কেল আপনি কিছু কিনতে এসেছেন নাকি জিনিস দেখে দেখে দাম জিজ্ঞাস করতে এসেছেন? আগের বারো তো এমন করে ঝামেলা করে গিয়েছন। এবারো কি তাই করতে চান নাকি? আচ্ছা আপনার আশেপাশে কোথাও নিজের দোকান দেওয়ার মতলব আছে নাকি? সেইজন্য আমাদের টার বদনাম করে দোকান উঠিয়ে নিজের কাজ হাছিল করতে চান নাকি? আর আমরা বাপ- বেটি মিলে দাম ঠিক করব কেনো?এটাতো করবে বিএসটিআই। চিনেন তো নাকি ওইযে দাম ঠিক করে। বাড়তি দামতো নেই না। সব ন্যায্য মূল্যেই বিক্রি করা হয়। আপনার ভালো না লাগলে অন্য দোকানে যান। বারবার ঝামেলা করতে আসেন। তুলতুলের কথা শুনে লোকটি কিছু বলতে যাবে ওই সময় বাইরে হৈচৈ শুনা গেলো। অনেক মানুষ চেচামেচি করছে। লোকটিও কি হয়েছে এটা দেখতে দোকান ছেড়ে বাইরে গেলো।
আর তুলতুল যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। লোকটির কথা বলার ধরন যেমন খারাপ তেমনি তাকানোও খুব খারাপ। বাজেভাবে তাকাচ্ছিল।তুলতুল আর তার পরিবার দোকান থকে কিছুটা সামনে ছোট একটা একতালা বাড়িতে থাকে। তুলতুলের দাদা বাড়ি এদিকেই। তাই তার বাবা এখানে জায়গা কিনে বাড়িটা বানিয়েছিল যখন তাদের অবস্থা ভালো ছিল। বাড়ির কিছুটা সামনেই বাজারের রাস্তা। সেখানে অনেক দোকান পাঠ গড়ে উঠেছে। তাদের ও ওখানে একটা দোকান দিয়েছে নতুন। সেখানে লোক রেখেছে কাজের যে দোকান চালায় মাঝেমধ্যে তার বাবাও বসে সেখানে। কিছু সময় তুলতুলও গিয়ে তার বাবা সাথে দোকানে বসে। আজ কলেজে যাবার সময় বাবা ফোন করে বলে যে তার কাজ আছে সে যেনো কিছু সময় দোকানে বসে। তার কাজের লোকটিও আজ আসে নি তাই তুলতুল কলেজ ড্রেস পড়েই দোকানে এসে বসে। তুলতুল খুব মিশুক ও চঞ্চল টাইপের মেয়ে। কিন্তু মাঝে মাঝেই কি যেন হয় হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায়।
সে ভাবছে বাইরে চেচামেচি হচ্ছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। তার বাবা তো এখোনো এলো না। সে কি কলেজ যাবে না আজকে? ওদিকে কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তার। রাগ হচ্ছে তার। উফফ। এমন সময় দিয়া হাপাতে হাপাতে ওর সামনে এসে দাড়ালো। তুলতুল ভ্রু কুঁচকে বললো-
-তুই এমন হাঁপানি রোগীর মতো করছিস কেনো? আর কোথা থেকে আসলি? তোর তো এখন কলেজে যাওয়ার কথা। আমি তো দেড়িতে যাবো বলেছিলাম। দোস্ত তুই আমার সাথে দেরিতে যেতে চাস? যাতে আমি একা বকা না খাই তাই। ওয়াও তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস আমি বুঝিনি। এই বলে তুলতুল হাত বাড়িয়ে দিয়ার দিকে যায়। আর দিয়া বলে ওঠে-
-এই তোর ছাতার মাথার ঢং বাদ দে। এহহ উনার জন্য আমার কলেজে লেট করে যেতে বয়েই গেছে। আমি কলেজে যাচ্ছিলাম হঠাৎ সবাই চিল্লাচিল্লি করছে দেখলাম। পড়ে শুনলাম রাফসান তার লোকজন নিয়ে এসে ভাঙচুর আর মারামারি করছে। তাই দৌড়ে এখানে এসেছি। তোর জন্য না হুহ।
এই কাথায় তুলতুল কে চিন্তিত দেখালো। এই গুন্ডা এখানে এসেছে তার মানে তার আর দোকান খুলা রাখার মানেই হয় না। দ্রুত তাকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যেতে হবে। নাহয় ওই গুন্ডা গুলো এদিকে এসে যদি দোকান ভাঙচুর করে? নাহ এটা হতে দেওয়া যাবে না। তুলতুল দিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো দোকান বন্ধ করতে হবে। তুলতুল আর দিয়া দ্রুত দোকান বন্ধ করে বাইরে গেলো। বাইরে এসে দেখে প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন ও আছে কয়েকজন তারাও তাড়াতাড়ি কাজ সেরে কেটে পড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তুলতুল বোঝে না এই রাফসান ব্যাটার সমস্যা কি? সে কখনো দেখেনি লোকটি কে। শুধু নামই জানে। শুনেছে লোকটি ভিষণ ভয়ানক।মায়া-দয়া কিছু নেই। সব সময় ধারালো অস্ত্র আর বন্দুক নিয়ে ঘোরে। কাউকে মারতেও হাত কাপে না। খুব খরাপ কাজ করে। তাকে লোকজন দেখলেই পালায় এই ভয়তে যে গুলি করে কখন মেরে ফেলে। তুলতুলের ব্যাপক ইচ্ছা আছে এই লোককে দেখার। অবশ্যই দূর থেকে কাছ থেকে নয় যদি মেরে দেয় খারাপ লোকটা।
দিয়া রাস্তায় দুজন লোককে জিজ্ঞেস করে রাফসান রা কোথায় আছে। লোকগুলো বলে পেছনের দিকে। যাক বেঁচে গেছে তাদের বাড়ির পথের দিকে নেই। এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারলে বাঁচে। তারা দুজন দ্রুত হাটা দেয়। দুজনের মাথায় দুরকম চিন্তা ঘুরছে। তুলতুল রাফসান লোকটিকে নিয়ে ভাবনায় ব্যাস্ত আর কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নিয়ে। এখন আর তো ওখান দিয়ে যেতে পারবে না। কিছুদিন পর পর বেটা ঢং করে আর সমস্যা হয় তাদের। দিয়া আর তুলতুল বেখেয়ালে হাঁটতে হাঁটতে দুজনে রাস্তার দুই পাশে চলে যায়। আর তখনই তুলতুল কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখনই দিয়ার খেয়াল হয় দেখে তুলতুল মাটিতে বসে আছে। ও তারাতাড়ি করে তুলতুল কে উঠায় আর বলে-
-তুই মাটিতে বসে আছিস কেন? গড়াগড়ি দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? তা বাড়ি গিয়েই দিতে পারতি। এখন তো আমাদের যাওয়া উচিত।
– বেয়াদব। সামনে তাকিয়ে দেখ আমি গাড়িতে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছি। আর তুই বলছিস আমার মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। কোথায় আমি ব্যাথা পেয়েছি বলে তুই আমাকে সমবেদনা জানাবি একটু কাঁদো কাঁদো মুখ করে থাকবি তা না করে উল্টো পাল্টা বকছিস। এই তুই আমার বেস্টু হলি কিভাবে?
-তাই তো কিভাবে হলাম? আর তোকে সমবেদনা জানাব কেন তুই চোখ গাছে রেখে হাঁটলে তো ধাক্কা খাবিই।
-আমি চোখ গাছে রেখে হাঁটবো কেন রে আমি তো ওই রাফসান লোকের কথা ভাবছিলাম। বেটা আস্ত একটা বিরক্তি।
ওরা কথা বলছিল পাশে যে ওদের কে কেউ দেখছিল সেটা খোয়াল করে নি। পাশ থেকে একটা ছেলে বলে ওঠে –
-এই পিচ্চিস এই তোমাদের সাহস তো কম না তোমারা রাফসান ভাইকে নিয়ে কথা বলছো আবার বলছো বিরক্তি। এখন কি হতে পারে তোমাদের বুঝতে পারছো।
তুলতুল চোখে মুখে আরো দিগুণ বিরক্তি নিয়ে বলে-
কি হতে পারে ওই ব্যাটা তো আর শুনছে না। শুনলেই বা কি? আস্ত একটা খারাপ লোক। কিছু দিন পর পর এসে ভাঙচুর করে মারামারি করে আর ঝামেলা পোহাতে হয় আমাদের। মনে হয় ইচ্ছা মতো কেলাই সামনে যেয়ে। আর আমি একদম ভয় পাই না। বলি তার কি কাজ নেই এই যে সবসময়ই সবার পেছনে লেগে থাকে অকারণে। পরিবার থেকে কিছু শিখেনি। শুনেছি ব্যাটা নাকি ভয়ংকর। মনে হয় দেখতে বাইট্টা, কালো মোটা ভূরি ওয়ালা হাতি। কাজ গুলোও এমন। এই জন্য মানুষ ভায় পায়। হুহ।
-তাই নাকি তোমরা আমাকে দেখে ভয় পাও না তা ভয় পায়িয়ে দেব।
দিয়া আর তুলতুল দেখে পেছনে একটি ছেলে গাড়ি থেকে নেমে আসছে। ছেলেটির হাতে পিস্তল। গায়ে একটা হোয়াইট শার্ট। হালকা ব্লু কালার জিন্স। তাও হাটুর কাছে আর উপরে ছেঁড়া ছেঁড়া ভাব। শার্টের হাতা ফোল্ড করা কনুই পযন্ত। শার্টের নিচের দিকে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ হালকা। চুল গুলো সিল্কি কিছু কপালের উপর পড়ে আছে। গায়ের রঙ সাদা। খোঁচাখোঁচা দাড়ি। হাতে একটা মোটা কলো ব্রেসলেট টাইপ কিছু। যেটা দেখে গুন্ডা গুন্ডা লাগে। তুলতুল এতোক্ষন হা করে ছেলেটি কে দেখছিল। তার কথায় ঘোর ভাঙে।
-তা ভয় কিভাবে পায় দেখিয়ে দেই। যেহেতু আমাকে ভয় পাও না। ছেলেটি তুলতুলের গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে বললো। তুলতুল ওখানেই জমে গেছে তার গলায় পিস্তল ঠেকানো দেখে। এখনই কি সে মরে যাবে? চার- পাঁচ টা গুলি এসে তার গায়ে লাগবে আর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। আস্তে আস্তে তার চোখ বন্ধ হয়ে যাবে।সে আর তার বাবা-মা, ভাইদের দেখতে পারবে না। তার সপ্ন গুলো পূরণ হবে না। এটা হতে দেওয়া যায় না। আর এই লোক তাকে মারতে চাইছে কেন? সে তো রাফসান নামক ব্যক্তি কে বলেছে যে ভয়ানক দেখতে। আর একে ক্রাস খাওয়া টাইপ দেখতে। নিশ্চয়ই রাফসানের কোনো চেলা হবে।হ্যাঁ তাই হবে। এটা ভেবে তুলতুল বললো
-এই এই এটা সরান। কোন সাহসে আপনি আমাকে মারতে চান।আর কি করেছি আমি হ্যা? আপনাকে তো কিছু বলিনি। রাফসানের লোক আপনি তাই না। দেখতে তো ভালোই দেখা যায় তা রাফসানের চামচাগিরি করেন কেনো। তুলতুল ওভাবেই বললো।
-হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চামচা গিরি। আর আমাকে তুমি সাহস দেখাচ্ছো? আমাকে? বলে ঘাড়ে হাত দিয়ে পিস্তল চেপে ধরলো তুলতুলের গলায়। তুলতুলের অবস্থা খরাপ। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। দিয়া কিছু বলতে গেলে ছেলেটা চোখ রাঙিয়ে তাকায়। এমন সময় পাশের ছেলেটি বললো –
-রাফসান ভাই বাচ্চা মানুষ আপনাকে চেনে না তাই বলে ফেলেছে। একে আমি দেখছি ছেড়ে দিন।
ছেলেটার কথা শুনে তুলতুল ব্যাথা ভুলে অবাক হয়ে তাকালো তার সামনের লোকটির দিকে। এই লোক রাফসান। আর এতক্ষণ তার সামনেই তার নামে বাজে কথা বলেছে। তাই এখন নিজের এই অবস্থা। ইনি রাফসান হলে ওই লোকগুলো যে বললো সে পেছন দিকে আছে। এখানে এলো কিভাবে? ওই লোকগুলো তাহলে নিশ্চয়ই মিথ্যা বলেছে। উফফ। কিন্তু একে তো মোটেও ভয়ানক দেখতে লাগছে না। তাহলে অন্যরা বলে কেন? আর এতো সুন্দর চেহারার মানুষ এতো খারাপ কাজ করে কিভাবে। সে এখন কি করবে? লোকটিকে বলবে তার ভুল হয়ে গিয়েছে। তাকে যোনো ছেড়ে দেয়। সে আর কখনো তার সামনে আসবে না। তাহলে কি তাকে ছেড়ে দিবে? কিন্তু এতো খারাপ মানুষের কাছে এটা বলবে সে? খারাপ কে খারাপ বলেছে এটা তার অন্যায় হয়েছে।নাকি হাতি বলেছে তাই? হুহ
চলবে….