গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ৭
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা
নীলাদ্রি চেম্বার থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। এখন নীলাদ্রি ওর বন্ধুর বাড়িতে যাবে ডিনারের জন্য। নীলাদ্রি কিছুক্ষন পর ওর বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছলো। অনেক পর বন্ধুর সাথে দেখা হলো, নীলাদ্রির বন্ধুর নাম সৌম্য। ইন্টার থেকে ওদের পরিচয়, তখন থেকেই ওরা একসাথে পড়ালেখা করেছে। মূলত সৌম্যর কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছে কিন্তু নীলাদ্রি বিয়েতে আসতে পারেনি তাই এই ডিনারের আয়োজন। নীলাদ্রি সৌম্য কে জিজ্ঞেস করলো,,
—কিরে বিয়ে করে দেখছি মোটা হয়ে গেছিস, বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে মোটা হচ্ছিস,বুঝি?
—তা বলতেই পারিস, আমার বউ কিন্তু দারুণ রান্না করে, তুই খেয়ে আঙ্গুল চাটবি।
—তাই নাকি, তো তোর বউ কই, আলাপ টা তো করা আগে।
—হ্যাঁ অবশ্যই, আলাপ তো আগেই আছে, এখন বন্ধুর বউ হিসেবেও আলাপ করে নে, ও রান্নাঘরে আছে,কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।
সৌম্যর বউ ড্রইংরুমে এসে নীলাদ্রি কে বললো,,
—কি গো নীলাদ্রি দা কেমন আছো?
নীলাদ্রি সৌম্যর বউকে দেখে বললো,,
—আরে এইতো মেঘা উপস সরি মেঘা বৌদি এসে গেছে, ভালো আছি গো, তুমি কেমন আছো? অনেক দিন পর তোমাকে দেখলাম কিন্তু
মেঘা জবাব দিলো,,
—ভালোই আছি।আমিও তো অনেক দিন পর দেখলাম তোমাকে, তোমার চেহারার মধ্যে কিন্তু অনেক পরিবর্তন এসে গেছে।
—ওই আরকি, সৌম্য বলছিলো তুমি নাকি দারুণ রান্না করো, আমি নাকি খেয়ে আঙ্গুল চাটবো তো কখন খাওয়াবে তোমার রান্না, শুনি?
মেঘা নীলাদ্রির দিকে এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে বললো,,
—আরে আগে এই শরবত তো খেয়ে নাও।
—এই একদম এখন শরবত-টরবত খাবো না, নয়তো ঠিকভাবে ডিনার করতে পারবো না, আফটার অল তুমি নাকি দারুণ রান্না করো কব্জি ডুবিয়ে খেতে হবে তো নাকি, এখন যদি শরবত খেয়ে নেই তাহলে তো আর সেইভাবে খেতে পারবো না।
—-আচ্ছা তাহলে একবারে ডিনার টাই করে নাও রাতও হয়ে গেছে। তুমি নিশ্চই চেম্বার থেকে সরাসরি এখানেই চলে এসেছো, ক্লান্ত হয়ে আছো নিশ্চই,যাও, আগে ফ্রেশ হয়ে এসো।
মেঘা সৌম্যকে বললো,
—নীলাদ্রি দা কে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দাও, ফ্রেশ হয়ে আসুক।
——————
খাবার টেবিলে,,
নীলাদ্রি খাচ্ছে আর মেঘার তারিফ করছে,
—সৌম্য তো তাহলে ঠিকই বলছিলো মেঘা, অনেক ভালো রান্না করো দেখছি তুমি, সেই পিচ্চি-পাচ্চি মেয়েটা এখন কত্ত বড় হয়ে গেছে রান্নাও শিখে গেছে।আর প্রেম করে বিয়েটাও করে নিয়েছে।
মেঘা হেসে ফেললো।সৌম্য নীলাদ্রি কে বললো,,
—কিরে, এখন তো তুই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছিস, বিয়েটা কর, দেখ আমি কিন্তু এখন বিয়ে করে মিঙ্গেল হয়ে গেছি, সিঙ্গেলদের দেখলে বড্ড কষ্ট হয় আর আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে এখন শুধু তুই-ই সিঙ্গেল আছিস, দেখ আমাদের কষ্টটাও একটু বোঝ, বিয়ে টা করে নে, নাকি আমাদের তোর বিয়ে খাওয়াতে চাচ্ছিস না, হুম?
নীলাদ্রির মুখ মলিন হয়ে গেলো, নীলাদ্রি বললো,,
—বিয়ে?
—হ্যাঁ বিয়ে, কবে করবি বল, মেয়ে দেখা শুরু করে দেবো নাকি তুই কাউকে ঠিক করে রেখেছিস?
নীলাদ্রি নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,
—এসব বিয়ে-টিয়ে আর আমার দ্বারা হবে না,তাই বিয়ে খাওয়ার আশাটা তুই ছেড়ে দে।আর পছন্দের কথা বলছিস তুই?এ জীবনে আর অন্য কাউকে পছন্দ হবে বলে আমার আর মনে হয়না।পছন্দের জায়গাটা সেই একজনই নিয়ে আছে, শুধু পছন্দের জায়গাটা কেনো ভালোবাসার জায়গাটাও এখনো শুধুই তার আর ভবিষ্যতেও থাকবে।
মেঘা নীলাদ্রি কে বললো,,
—এখনো তুমি দিশানী কে খুব ভালোবাসো তাইনা নীলাদ্রি দা?
নীলাদ্রি মুচকি হেসে জবাব দিলো,
—তা বাসি, আর সারাজীবন বেসে যাবো,ও আমার নাই বা হলো, ভালোবেসে যেতে তো ক্ষতি নেই।
সৌম্য নীলাদ্রি কে বললো,,
—কিন্তু ওর তো বিয়ে গেছে তুইও বিয়ে করে নে না।
—দরকার কি বিয়ে করার, অন্য কাউকে বিয়ে করে যে সুখী হবো তার গ্যারান্টি কি?আর তোর আর মেঘার মতো সবার ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায়না তাইনা?আর আমার পরিবারেও তো কেউ নেই যে আমাকে বিয়ে করতে জোর করবে, তাই আমি বিয়ে না করলেও খুব একটা সমস্যা হবে না।দিশানী বিয়ে করেছে তো কি হয়েছে ও যদি খুশি থাকে,সুখী হয়, তাহলে আমিও ওতেই খুশি।
মেঘা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,
—সুখী? দিশানী আর সুখী তাও নির্ঝর দা কে বিয়ে করে,তাহলেই হয়েছে।
নীলাদ্রি মেঘার কথায় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকালো। মেঘা নীলাদ্রির অবস্থা বুঝতে পেরে নীলাদ্রি কে বললো,,
—দিশানী মোটেই সুখী নেই নীলাদ্রি দা,ওর খুশি তো সেই এক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।
নীলাদ্রি অবুঝ কণ্ঠে জবাব দিলো,,
—আমাকে একটু পরিষ্কার করে সবকিছু বলবে মেঘা, প্লিজ?
মেঘা নীলাদ্রি কে সব খুলে বললো।সব শুনে নীলাদ্রি অবাক হয়ে গেছে। অবাকের থেকেও বেশি করে দিশানীর জন্য নীলাদ্রির কষ্ট হচ্ছে, নীলাদ্রির বুকের ভেতর টা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে,নীলাদ্রি এবার বুঝতে পারলো, এসবের জন্যই দিশানীর মুখটা ওইরকম শুকনো লাগছিলো সেইদিন।সৌম্য মেঘা কে জিজ্ঞেস করলো,,
—মেঘা তুমি এসব কিছু জানলে কি করে?
মেঘা সৌম্যর কথার উত্তরে বললো,,
—কি বলছো তুমি, দিশানী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়, এসব আমি জানবো না?আমার পক্ষে এসব জানা কি স্বাভাবিক না?তবে গত একমাস হলো ওর সাথে আর কথা হয়নি আমার।হয়তো খুব ব্যস্ত থাকে।সব কাজ তো ওকেই করতে হয়, দিশানী কে কাজের মেয়ের মতো খাটিয়ে নেয় ওরা ।
দিশানী আর মেঘা বেস্ট ফ্রেন্ড হয়। আর সৌম্য নীলাদ্রির বন্ধু। একই স্কুলে থাকার সময় সৌম্য আর মেঘার প্রেম হয় অতঃপর ২ মাস আগে বিয়ে হয় ওদের।তাই এরা আগে থেকেই একে অপরকে চেনে।
নীলাদ্রি আর সৌম্য মেঘাকে বললো,,
—ও এসব সহ্য করছে কেনো, আমরা যতদূর ওকে চিনি ও ছোটো থেকেই খুব প্রতিবাদী মেয়ে, তাহলে?
মেঘা জবাব দিলো,,
—আগের দিশানী আর এখনকার দিশানীর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। কোথায় আগের দিশানী আর কোথায় এখনকার দিশানী।
নীলাদ্রি কণ্ঠ নিচু করে বললো,,
—মেঘা আমাকে দিশানীর ফোন নাম্বার টা দেবে?
মেঘা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
—তুমি দিশানীর নাম্বার নেবে, কিন্তু কেনো?
—ওই যে বললাম না ও যদি খুশি থাকে তাহলে আমিও খুশি, দেখি না ওর খুশির জন্য কি করতে পারি?
—-আচ্ছা আমি নাম্বার দিচ্ছি, এক মিনিট।
মেঘা ওর মোবাইলটা বের করে দিশানীর ফোন নাম্বার টা বললো আর নীলাদ্রি দিশানীর ফোন নাম্বার টা নিজের মোবাইলে সেভ করে করে নিলো।
মেঘা নীলাদ্রি কে আবার জিজ্ঞেস করলো,,
—তুমি ঠিক কি করতে চাইছো বলোতো?
নীলাদ্রি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,,
—দেখি না কি করা যায়।
মেঘা আর সৌম্য নীলাদ্রির এই কথা বা হাসির অর্থ কিছুই বুঝলো না।
——————
রাত ১.০০ টার দিকে দিশানীর ফোনে একটা আননৌন নাম্বার থেকে কল আসলো। দিশানী ফোন হাতে নিয়ে ভাবলো,,
—এতো রাতে আমাকে আবার কে ফোন করলো?তাও অচেনা নাম্বার থেকে।কারো কিছু হয়েছে নাকি? দিশানী একবার নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝর একবার ঘুমোলে ওর আর কোনোদিকে হুশ থাকে না। দিশানী কলটা রিসিভ করলো।দিশানী ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো।
চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
হ্যাপি রিডিং