#রঙিন_প্রজাপতি
লেখনীতে – Ifra Chowdhury
পর্ব- ৬
.
প্রণব আমাকে দেখেই অবাক হয়ে একটা হাসি দিলো এবং সেই সাথে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাতও নাড়লো। আমি ওকে দেখলাম। ওর ডাকও শুনলাম। কিন্তু কোনো সাড়া দিলাম না। বরং আমার কী যে হলো, উলটো সেখান থেকে পালিয়ে নিজের বাসায় চলে এলাম৷
দৌড়ে এসে বাসায় ঢুকলাম। তড়িঘড়ি করে দরজা লাগাতেই মা উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কী রে, জাহির ভাইয়া এসে গেছে?’
মামার কথা জিজ্ঞেস করতেই আমার কপালে হাত চলে গেলো। ধ্যাৎ। যেজন্য নিচে গেলাম, সেটাই মনে ছিল না। মামার কথা বেমালুম ভুলেই গেছিলাম।
কী করি এখন? মামারও তো আসার সময় হয়ে গেছে। আমি চুপিচুপি বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকালাম। প্রণব এখনও বেশ বিভ্রান্তিকর চেহারায় নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে হাতঘড়িতে সময় দেখছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ও মাথাটা একটু উপরের দিকে তুলে তাকাতে চাইলেই আমি চট করে নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে নিলাম।
তখনি পেছনে দেখতে পেলাম দিয়া মাত্রই চুল শুকিয়ে টাওয়েল খুলছে। ওকে দেখেই যেন আমার ধরে প্রাণ এলো। আমি হেসে হেসে ওর দিকে এগিয়ে বললাম,
‘লক্ষ্মী বোন আমার, জলদি নিচে গিয়ে মামাকে নিয়ে আয় না? মামা যদি পরে বাসা না চিনতে পারে, তখন মায়ের বকুনি থেকে তুই বা আমি কেউই রেহাই পাবো না।’
দিয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। আমি আরেকটু আহ্লাদের সুরে বললাম,
‘যা না বোন? পিলিজ?’
দিয়া একটা মুখ ভেংচি কেটে জবাব দিলো,
‘হুহ যাচ্ছি, যাচ্ছি।’
মুহুর্তেই আবার পিছন ঘুরে বললো,
‘তাহলে তোর গতকালকের কিটক্যাট চকলেটগুলোও কিন্তু আমি খেয়ে নিবো।’
আমি হেসে জবাব দিলাম,
‘আচ্ছা খেয়ে নিস। কিন্তু আমাকেও একটু ভাগ দিস বনু?’
বলেই ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো ভাব ধরলাম।
দিয়া মুচকি হেসে জবাব দিলো,
‘আচ্ছা, আচ্ছা। দেবো, দেবো।’
তারপর দুজনেই হাসলাম একটু। দিয়াও চটজলদি চুলটা ঠিক করে নিচে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেল।
________________________
অনেকদিন হলো ভার্সিটি মিস দিয়েছি। আজ আর মিস দিতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে, একটু বাইরের হাওয়া খেয়ে আসি। ভার্সিটিতেই যাই, বন্ধু বান্ধবীদের সাথেও দেখা করি। বেশ ভালো লাগবে।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ।
আজ সকাল সকালই ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম। তখনি দিয়া এসে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপুই, ভার্সিটি যাচ্ছিস?’
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ-বোধক জবাব দিলাম। দিয়া এবার বায়না ধরে বললো,
‘আসার সময় আমার ফেভারিট বার্গারটা আনবি, প্লিজ? প্লিজ?’
ওর বায়নাটা শুনে আর না করতে পারলাম না। হেসে ওকে আশ্বস্ত করলাম,
‘আচ্ছা, অবশ্যই আনবো।’
দিয়া খুশিতে জড়িয়ে ধরে ওর পড়ার টেবিলে চলে যাচ্ছিলো। তখনি আবার ফিরে এসে আমায় প্রশ্ন করলো,
‘আপু, ঐদিন সকালবেলা নিচে প্রণব ভাইকে দেখতে পেয়েছিলাম। তুই কি সেজন্যই মামাকে আনতে যাসনি? যদি তাই হয়, তবে কেন? প্রণব ভাই কী করলো?’
আমি ওর প্রশ্ন শুনে কিছুটা নীরব হয়ে গেলাম। খানিক বাদে হাতের চিরুনিটা রেখে আয়নায় একটাবার দেখে নিলাম নিজেকে, সব ঠিকঠাক আছে কিনা। তারপর দিয়ার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম,
‘গিয়েছিলাম নিচে। গিয়েও ফিরে এসেছি। প্রণবকে দেখেই চলে এলাম। কিন্তু কেন যে এমন করলাম, আমি নিজেও জানি না।’
দিয়া বিরক্তের সহিত জবাব দিলো,
‘তুই আসলেই একটা যাচ্ছেতাই!’
আমি দাঁত বের করে হাসলাম। আর বললাম,
‘হ্যাঁ, একদম তোর মতোই।’
দিয়া ফিক করে হেসে দিলো। তারপর সাথে সাথেই মুখটা গম্ভীর করে বললো,
‘আচ্ছা এখন আসুন। আর ফিরার সময় অবশ্যই বার্গার নিয়ে আসা চাই, চাই, চাই। হুম!’
আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালাম এবং হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
____________________________
আজ সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিতে দিতেই খেয়াল করি, ভার্সিটির মেইন গেইটে প্রণব আর ওর কিছু বন্ধু একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে, কারোর জন্য যেন অপেক্ষা করছে। হ্যাঁ, হয়তো আরিশার অপেক্ষার করছে, নাহয় অন্য কোনো বন্ধুবান্ধবের।
যাকগে! আমার কী?
আমি ভাড়া মিটিয়ে ভার্সিটির দিকে এগোলাম।
আমি গেইটের কাছাকাছি যেতেই প্রণবেরা আমার কাছে ছুটে এলো। প্রণব জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি এসেছো? এই কয়দিন আসোনি কেন?’
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমতা আমতা করে জবাব দিলাম,
‘না মানে.. বড় ভাই..’
আমি প্রণবের প্রশ্নের কোনো উত্তরই দিতে পারলাম না। তার আগেই সে বলে উঠলো,
‘তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তুমি কখন সময় দিতে পারবে বলো?’
ওর কথাটা শুনে আমার কেমন জানি ফিল হলো। প্রেমিক প্রেমিক ভাব মনে হলো। এমন যেন, নিজের প্রেমিকা বা প্রিয় মানুষটার কাছে খুব করে একটু সময় চাইছেন শুধু। আমি চমকে তাকালাম প্রণবের দিকে। জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী কথা?’
‘সেটা তখনি বলবো। তুমি বলো, কখন সময় হবে?’
আমি ফোনে সময় দেখে বললাম,
‘বেলা সাড়ে বারোটার দিকে পারবো হয়তো।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি পুকুর পাড়ে অপেক্ষা করবো। তুমি চলে এসো।’
‘আচ্ছা।’
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে নিজের ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম। সেই সাথে প্রণবেরাও ওখান থেকে অন্যত্র চলে গেল।
_____________________
প্রণবের কথা ভেবে ক্লাসে পুরোপুরি মনোযোগই দিতে পারলাম না। ও কী এমন কথা বলবে, সেটাই শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্লাস শেষ করেই পুকুরপাড়ে রওনা দিলাম আমি।
ওখানে যেতেই দেখলাম প্রণবের ওর বন্ধুরা বসে একধারে বসে আছে। আর প্রণব একে একে পুকুরে কয়েকটা ঢিল ছুড়ছে। আমাকে যেতে দেখেই শিহাব বললো,
‘প্রণব। দিবা এসে গেছে।’
বলেই শিহাবের সাথে ওদের বাকি বন্ধুরাও উঠে দাঁড়ালো। আমি একে একে সবার দিকে চোখ বুলালাম। সোহাগকে দেখতে পাচ্ছি না ওদের মাঝে।
আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম প্রণবের দিকে। ও আমাকে একটা কাগজ পেতে বসার জায়গা করে দিলো। তারপর বললো,
‘বসো এখানে।’
বলে সে নিজেও পুকুরপাড়ে একটা কাগজ পেতে বসে পড়লো। ওর বাকি বন্ধুদের কিছু একটা ইশারা করতেই তারা ওখান থেকে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
আমি ওদের ভাবসাব কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না। বেকুব লাগছে নিজেকে। ওরা যেতেই প্রণবকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী হয়েছে বড় ভাই?’
‘তোমার নাম…’
‘দিবা।’
প্রণব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,
‘হুম দিবা। তোমায় যে জন্য ডেকেছি.. আসলে ঐদিনের সোহাগের ঘটনাটার জন্য আমি নিজেই ওর তরফ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কী থেকে যে কী হয়ে গেল, আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।’
প্রণবের কথাটা শুনেই আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। মানে কী এই কথার? ও কেন ক্ষমা চাইছে? আর ও কী বুঝে উঠতে পারেনি? তাহলে সত্যিই কি প্রণব নিজেও ওটার সাথে জড়িত ছিলো?
ব্যাপারগুলো ভেবেই আমার চারদিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল।
.
.
চলবে..