#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :২
সেদিন বাড়ি ফিরতেই দেখি । বাড়ি ভরা মানুষ । টিয়া আপু আর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসেছে ।
মামার দুই মেয়ে । টিয়া আর হিয়া । টিয়া আপু মামার বড় মেয়ে । আর হিয়া আপু ছোট ।
রুমে যেতেই টিয়া আপুকে দেখতে পাই ।আপুকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলি ,
– “কেমন আছো আপু ? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম ! তোমাকে দেখেই মন ফুরফুরে হয়ে গেছে । ”
টিয়া আপু বেশ বিরক্তি নিয়ে আমার হাত ঝাড়ি দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় ।বিরক্তি ভরা গলায় বলে উঠে ,
– “দেখ হুর ,তোকে হাজারবার বলেছি এই সব আদিক্ষেতা আমার পছন্দ না ।তার পরও কেন গায়ে পরে এমন করিস ? ”
আমি মলিন হাসি দিয়ে দূরে সরে যাই ।মৃদু স্বরে বলি,
– “সরি আপু ! আর এমন হবেনা । ”
আমার কথায় যেন আপুর বিরক্তি আরো বৃদ্ধি পায় । ঝাঁঝালো গলায় বলেন,
– উফফ হুর ! তুই এখান থেকে যা তো এখন । তোকে দেখেই আমার মাথা ব্যথা করছে । অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি আমি এখন একটু রেস্ট নিতে চাই । ”
আমি রুম থেকে বের হতে নিবো এমন সময়ই পিছন থেকে টিয়া আপু ডেকে বলেন,
– যাওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করে যাবি । আর হ্যা আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সামনে আসবি না । নিজের রুপ দেখিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরতে হবেনা । ”
আমি আপুর কথা মত দরজা বন্ধ করে রুম থেকে চলে আসি । আপুর এমন ব্যবহার আমাকে তেমন একটা কষ্ট দেয়নি। কারণ এটা নতুন কিছু না । আপুর এমন ব্যবহারে আমি ছোট থেকে অভ্যস্ত । তাই এসব কথায় এখন আর কষ্ট পাই না । শরীরে সয়ে গেছে ।
টিয়া আপু ছোট থেকে কোনো এক অজানা কারণে আমাকে অপছন্দ করে।কিন্তু হিয়া আপু একদম তার বিপরীত । আমাকে বাচ্চাদের মত সবসবয় আগলে রাখে । সব সময় আমার সব দোষ নিজের উপর নিয়ে নেয় । আমাকে প্রটেক্ট করে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই আপুর রুমের সামনে চলে আসি । দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই । থম মেরে যাই । বিছানায় বসে হিয়া আপু কান্না করছে ।
আপু আমাকে দেখতেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলেন ,
– “হুর আমার সব শেষ ,আমি সব হারিয়ে ফেলেছি । ”
বলেই হিয়া আপু আবার কান্না জুড়ে দিলো । আপুর কান্না দেখে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে । নিজেকে কোন রকম শান্ত করে বললাম ,
– “এসব কি বলছো আপু ? কিচ্ছু শেষ হয়নি । কি হয়েছে সেটা বলো । ”
– “আমি আবির কে ভালোবাসি হুর । খুব বেশি ভালোবাসি । আবির ও আমাকে ভালোবাসে ।কিন্তু আবিরের মা আবিরের বিয়ে অন্যকথাও ঠিক করেছে । আবির তার মা কে না করতে পারবেনা । আর আমাকেও ছাড়তে পারবেনা ।
এদিকে আবিরের সাথে একসাপ্তাহ দরে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না । তাকে বলতেও পারছিনা যে যে আ আ। আমি তার বাচ্চার মা হচ্ছি । আমি আবেগে বসে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হুর ,অনেক বড় ভুল । ”
আপুর কথা শুনে আমি থম মেরে বিছানায় বসে পড়ি। আপু বলা প্রতিটা কথা কানে বাজছে । মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে । মামা জানলে কি হবে ?
আপু এখনো কান্না করে যাচ্ছে।
আশ্চর্য হচ্ছি আবির ভাইয়ার কাজে । যদি মায়ের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দাড়ানোর সাহস না থাকে তবে কেন ভালোবাসে ?
মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । কিন্তু যাই হোক না কেন আমি হিয়া আপু আর তার বাচ্চাকে তাদের পাপ্য সম্মান আর অধিকার দিয়েই ছাড়বো ।
আপুকে কোনো ভাবে শান্ত করে নিজের রুমে চলে যাই । সারারাত ভর চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আমি আবির ভাইয়ার মায়ের সাথে সরাসরি দেখা করবো । উনাকে আবির ভাইয়া আর হিয়া আপু সম্পর্কের কথা জানাবো । কেন জানো মনে হচ্ছিলো উনি আমার কথা বুঝবে । আবির ভাইয়া আর হিয়া আপুর সম্পর্কটা মেনে নিবে ।
যেই ভাবা সেই কাজ !
পরের দিন সকাল হতেই আপু থেকে ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আবির ভাইয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
সেদিন ভার্সিটি না গিয়ে চলে যাই আদ্রিতা খাঁনের বাড়ী তে। বিশাল বড় বাড়ি । আমাকে দেখতেই দাড়োয়ান এগিয়ে এসে জিগাসা করে আমার কি চাই । আমি বললাম আমি আদ্রিতা খাঁনের সাথে দেখা করতে চাই । দাড়োয়ান ভিতরে ফোন করে পার্মিশন নেয়।বিরাট লোকের বিরাট কারবার । আমি ভিতরে যেতেই একজন মহিলা আমাকে বসার রুমে নিয়ে যায় । সম্ভবত কাজের লোক । আমি চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছি । কিছুক্ষণ পরই একজন সুন্দরি মহিলার আগমন ঘটে । আমার আর বুঝতে বাকি রইল না উনিই আদ্রিতা খাঁন । আমি সালাম দিতেই উনি মুচকি হেসে আমার সালামের উত্তর নেয় । আমি নিজের জড়তা ভেঙে আবির ভাই আর হিয়া আপুর সম্পর্কের ব্যপারে সবখুলে বলি । আমার কথা শুনে প্রথমে উনি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে । আমার বেশ ভয় করে যদি উনি মেনে না নেয় তো ? কিন্তু তিনি আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে । তার পর আবির ভাইয়াকে ডেকে সবটা যাচাই করে।আবির ভাইয়া থেকে সবটা শুনে বেশ রেগে যায় কিন্তু পরবর্তীতে সম্পর্কটা মেনে নেয় । আমার যেন আনন্দের সিমানা থাকে না । বাড়ি ফিরে আপুকে খবর দিতেই আপু খুশিতে লাফাতে থাকে । সাথে আমিও ।
পরদিনই আবির ভাইয়ার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। মামা মামী কে আপু আর ভাইয়ার সম্পর্কের কথা জানাই । প্রথমে মামা মামী ও আদ্রিতা আন্টির মত বেশ রেগে ছিলো । কারণ কোন বাবা মায়ের কাছেই ব্যপারটা সিম্পল না। আর তা মেয়ের প্রেগন্যান্সি নিয়ে তো একদমই না । এমন একটা ব্যপারে রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু পরে ঠান্ডা মাথায় সবটা ভেবে রাজী হয়। ছেলে ভালো ফেমেলি ভালো মামা মামী ও কোন আপত্তি করে না । সেদিনই বিয়ের তারিখ ঠি ক করা হয় । দু সাপ্তাহ পরে বিয়ের ডেট । সময় কম আর কাজ অনেক !
সেদিন থেকেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।
আজ হিয়া আপুর হলুদ। পুরোবাড়ি ভরা মানুষ । শত কাজ তার উপর আবার ডাকাডাকি । হুর এটা করে দে ,হুর ওইটা করে দে !
উফফ ,আমারও তো একটা ছোট্ট প্রাণ নাকি! এতকাজ একা কি করে সামলাই ?
এমন সময়ই শুনতে পাই ছেলের বাড়ি থেকে হলুদের তথ্য নিয়ে এসেছে ।খুশি মনে সেদিকে এগিয়ে যাই তাদের বরণ করতে । কিন্তু সেখানে যাবার পর হাজার বল্ডের ঝাটকা খাই ।
ওমাই গড ,ওমাই গড ,ওমাই গড !
সামনে অগ্নি ভাইয়া দাড়ানো ! এখানেই ব্যপারটা থেমে নেই ,এর পর যা শুনলাম তা শুনার পর আমি হার্টফেইল করার উপক্রম ।উনি ই আবির ভাইয়ার একমাত্র ভাই । ভাবা যায় ব্যপারটা ?
এখানে ব্যপারটা থামতে পারতো কিন্তু তা হলো না । মামী আমার কাছে এসে বেশ শক্ত গলায় বলল ,
– “হুর ,অগ্নি আমাদের বাড়িতে এই প্রথমবার এসেছে তুই তার খেয়াল রাখবি । ”
আমি শুধু বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ালাম । মামী অগ্নি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ,
– “বাবা অগ্নি ,তোমার কিছুর প্রয়োজন হলে হুর কে বলবে । কেমন ? ”
বাবা অগ্নি ও মনে হয় এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো । আমার দিকে তাকিয়ে বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে ,
– “আন্টি আপনি একদম চিন্তা করবেন না । হুর তো আমার সাথেই আছে । তাই না হুর ?
আমি জোরপূর্বক হাসি দিলাম ।মামী মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো । আমি ঠাই দাড়িয়ে ।
ওই যে কথায় আছেনা ? যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় । আমার সাথে ও এমন কিছুই হলো । অগ্নি ভাইয়া আমার কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ,
– “এবার কই পালাবে সুন্দরী ??? ”
বর্তমান_____________________
হ্ঠাৎ ই ঘড়ির এলাম বেজে উঠে । ঘুমঘুম চোখে বিরক্তির নিয়ে এলামটা বন্ধ করি । আসে পাশে তাকিয়ে দেখি আমি বিছানায় । গায়েঁ চাদর জড়ানো । এ কি আমি বিছানায় কি করে ? আমার যতটুকু মনে পরে কাল রাতে আমি নিচে ছিলাম তাহলে এখানে কি করে আসলাম !
ম্যাজিক নাকি ? এসব ভাবতে ভাবতেই কপালে কাটা জায়গায় হাত চলে যায় ।হাত লাগতেই বুজতে পারি সেখানে ব্যান্ডেজ লাগানো । এই ব্যান্ডেজ আবার কে করলো ? এই রুমে তো আমি আর অগ্নি ভাইয়া ছাড়া অন্যকেউ নেই । তবে কি অগ্নি ভাইয়া ?
সাথে সাথে উনার দিকে তাকালাম । উনি সোফায় ঘুমাচ্ছেন ।তার অর্ধেক টা শরীর সোফায় আর অর্ধেকটা ফ্লোরে । এক হাতে মদের বোতল । মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে । একদম কাবির সিং প্রো মেক্স লাগছে ।
উনি কি করে এসব করবে তাছাড়া উনি আমাকে ঘৃনা করে আমি মরে গেলেও তার কোনো কিছু যায় আসে না । আমিই হয়তো রাতে ঘুমের ঘোরে এসব করেছি । আমার ঘুম খুব খারাপ । খুব বেশিই খারাপ । ঘুমের ঘোরে কি করি না করি হুস থাকে না । পরে তা ভেবে ভেবে নিজের মাথা খারাপ করি ।
মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগলো । কেন জানো তার দাড়ি গুলোতে হাত বুলাতে ইচ্ছে করছে । তার কাছে যাবো একবার ? না থাক !
যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে আমার আর রক্ষা নেই । কাল রাতে খুন করার ধমকি দিয়েছে কাছে গেলে খুনই না করে ফেলে । যা লোক বাপ রে !
ভেবে নিলাম শুনবো না মনের কোনো কথা । কিন্তু মন যে বড্ড অসভ্য ।ঠিক ছুটে চলেছে উনার দিকে সাথে শরীরটাও সায় দিচ্ছে । উনার সামনে হাটুঁ গেড়ে বসি। উনি শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। কেন জানো উনার মায়া ভরা চেহারা আমাকে উনার দিকে আকৃষ্ট করছে । আমি উনার দিকে আরো ঝুঁকে আরো গভীর ভাবে তাকে দেখতে লাগি । তার ফর্সা গালে দাড়িগুলো বেশ মানিয়েছে । উনি বাচ্চাদের মত নিচের ঠোঁট ভিতরে নিয়ে ঘুমাচ্ছে । আনমনেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে । যেই তার গালে হাত ছোঁয়াতে যাবো ওমনি উনি চোখ খুলে । আমি বরফের মত জমে যাই । উনি কিছুক্ষণ সরু দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । হয়তো কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করছে। আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে নেই । আচানক উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় । আমি নিচে পড়ে যাই । উনি সোফা থেকে উঠে আমার দিকে এক পা এক পা করে আগাচ্ছে । উনার চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ ।আমার ভয়ে হাত পা কাপঁছে ।আমি মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকছি আর পিছনের দিকে যাচ্ছি ।
#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ৩
( লিখা শেষ করতে পারিনি তাই লেট হয়েছে স্যরি )
আমি ফ্লোরে বসে আছি পিছনে দেয়াল । অগ্নি ভাইয়ার অগ্নিদৃষ্টি আমার দিকে । মনে হচ্ছে এখনই চোখ দিয়ে আমাকে ভস্ম করে দিবে ।উনি কিছুটা ঝুকে আমার চোখে চোখ রাখে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার গাল টিপে ধরে । দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলে,
– “বলেছিলাম না আমার থেকে দূরে থাকতে ? কি এক কথা একবার কানে যায় না ? কি বউয়ের অধিকার ফলাচ্ছি লে !
নাকি আমাকে ফাসানোর ধান্দা করছিলে । ভুলে গেছ তুমি আমার নাম মাত্র বউ ?
তোমার কোন কৌশলই আমার উপর চলবে না । একটা কথা ভালো করে কানে ঢুকিয়ে রাখো ।তোমার মত মিডল ক্লাস ছোট মনের মানুষকে ভালোবাসা তো দূর ,তাকাই না পর্যন্ত । ইউ আর যাস্ট ডিসগাস্টিং । ”
উনি নিজের কথা শেষ করে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি উনার কথা শুনে থ হয়ে বসে রইলাম । বুক চিড়ে কান্না আসছে । চোখের পানি বাঁধা মানছে না । কিন্তু আমি কান্না করলাম না । বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি । আমি কাদঁবোনা । এই লোকের জন্য তো একদম না !
ফ্লোর থেকে উঠে দাড়াই । উনার দিকে শক্ত চাহনি তে তাকিয়ে বলি ,
– “মানে যা মনে আসবে তাই বলবেন ? আর আমি সিরিয়ালের নাইকাদের মত তা শুনে চোখের জল ফেলবো !
আমাকে কি গপি ভাহু পাইছেন ?
আমার এত খারাপ দিন আসে নাই যে আমি আপনাকে ফাসাতে যাবো ! আমি মানছি আমার টেস্ট একটু খারাপ কিন্তু এতোও না যে আপনাকে পছন্দ করবো । নিজেকে এত ইম্পরট্যান্টস দেওয়ার মত কিছু নেই অকে !
আপনি দেখতে ঠি ক ঠা ক আছেন বাট ইউ আর নট মাই টাইপ । ”
উনি আমার কথা শুনে বেশ তেতে যায়। আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কেউ নক করে ।উনাকে পিঠ দেখিয়ে দরজা খোলার জন্য পা বাড়াই । উনি সিংহের মত গর্জন করে উঠে।বাট হু কেয়ার্স ?
উনি পিছন থেকে কিছুসময় রাগী দৃষ্টি তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
দরজা খুলে দেখি মধ্যবয়স্ক এক মহিলা দাড়িয়ে ।আমাকে দেখে বললো ,
– “বউমনি আপনাকে বড় মেডাম রেডি হয়ে নিচে যেতে বলেছে । ”
আমি মুচকি হেসে উত্তর দেই ,
– “আমি এক্ষুনী রেডি হয়ে আসছি ”
মহিলাটি চলে যায়। আমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগি। শত হোক আমি এই বাড়ির বউ তো ? হোক তা নামে বা একবছরের জন্য ।আর বাড়ীর বউদের এতবেলা পর্যন্ত ঘুম একদম শোভা দেয় না ।
লাল শাড়িটা পড়ে একটু সাজগোজ করে নিচে চলে যাই ।
নিচে যেতেই আপু আর আন্টিকে দেখতে পাই । আপু নাস্তা রেডি করছে ,আবির ভাই পেপারস চেক করছে আর নাস্তা করছে । আর আন্টি চা খাচ্ছে আর নিউজ পেপার পড়ছে । আন্টি খুব স্ট্রিট একজন মানুষ ।প্লাস খুব স্ট্রং । আঙ্কল মারা যাবার পর আন্টি একা হাতেই এই পুরো বিজনেস সামলিয়েছে ।কিন্তু তাই বলে সংসারে কোনো ত্রুটি রাখেনি ।সবদিকে সমান ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে । ওই যে কথায় আছে না ? যে মেয়ে রাধঁতে পারে সে মেয়ে চুলও বাধতে পারে ।
আমাকে দেখেই আন্টি মুচকি হেসে বলে ,
– “ঘুম ভেঙেছে ? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে লাজুক হেসে উত্তর দিলাম ,
– “জি আন্টি । গুড মর্নিং ”
আন্টি আমার কথায় মুখ কালো করে ফেলেন যেন উনার কথাটা খুব একটা পছন্দ হয়নি । কিন্তু আমি এমন কি বললাম ?
আন্টি গম্ভির কন্ঠে বললেন,
– “এখনো আন্টি ? আমাকে মা বলা যায় না! এখনো আপন করে নিতে পারনি ?
আমি অনবরত মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম ,
– “না না আন্টি ,উপস সরি মা ! এমন কিছু না আসলে অভ্যাস ছাড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে এই আর কি । ”
শেষের কথাগুলো নিচু স্বরে বলি । আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ,
– “তুমি চেষ্টা করো দেখবে অভ্যাস হয়ে যাবে । ”
আমি উত্তরে মুচকি হাসলাম । হিয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু ইশারা করে বুঝালো আমাকে খুব সুন্দর লাগছে । আমি লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি । এমন সময়ই দেবদাশ উপ্স কাবির সিং ! না ,না অগ্নি ভাইয়ার আগমন হয় । বেশ গম্ভির মুখ নিয়ে ফোন টিপতে টিপতে আমার পাশের চেয়ারে এসে বসে । আমি তার থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে দূরে সরে বসি । হিয়া আপু নাস্তা সার্ভ করে দেয় । উনি কোনো দিকে না তাকিয়ে নাস্তা করতে লাগে । বেশ কিছুসময় কেটে যায়। সবাই যার যার মত নাস্তা করছে । মা নিরবতা ভেঙে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন ,
– “আজ তোমাদের চার জন কে ওই বাসায় যেতে হবে । বাড়িতে ছোট করে অনুষ্ঠান রেখেছে । বিয়াই সবাইকে আমন্ত্রন করেছে ।আমি যেতে পারবোনা কিছু কাজ আছে । তোমরা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ো । ”
আবির ভাই বাধ্য ছেলেদের মত বলল,
– “আচ্ছা মা ! ”
কিন্তু অগ্নি ভাইয়া শুনে না শুনার মত করে আছে । মা গম্ভির গলায় বলে ,
– “অগ্নি তুমি কি শুনতে পারছো আমি কি বলছি ? ”
অগ্নি ভাইয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর বললেন,
– “জি শুনতে পারছি মিসেস আদ্রিতা খাঁন ।আজ কাল আমার মর্জি আর আমার রইলো কই? সব তো আপনার ইচ্ছাতেই হয় ।”
অগ্নি ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় । মা আহত চোখে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। উনি যেতেই মা ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে আহত গলায় বললেন ,
– “আজ যেই কারণে তুই আমাকে ঘৃণা করিস । একদিন এই কারণটার জন্যেই ,তুই আমাকে ধন্যবাদ দিবি ।
মিলিয়ে নিস ।
________________
নাস্তা করেই জটপট রেডি হয়ে নিলাম । উনিও ঘন্টা খানেক পর চলে আসেন।
গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি যেই গাড়ি তে পিছনের সিটে উঠবো ওমনি সামনের থেকে অগ্নি ভাইয়ার গম্ভীর আওয়াজ ,
– “আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয় নাকি ? ”
অন্যকোন সময় হলে কঠিন করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতাম । কিন্তু এই মুহুর্তে আমি বড্ড ক্লান্ত শরীর মন উভয় দিক থেকে । তাই কথা বাড়ালনা।কিছুক্ষন রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনে বসে পড়ি । গাড়ি চলছে নিজ গতি তে । আমার মনে কিছু একটা খচখচ করছে । তাই নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম ,
– “আমার মামা মামী এই কন্ট্রাক্ট মেরেজের কথা যেন জানতে না পারে । তাহলে খুব কষ্ট পারে । তাদের সামনে প্লিজ স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রী থাকার মত চেষ্টা করবেন । এটা আমার রিকোয়েস্ট প্লিজ !
ভয় নেই আপনার ঘাড়চেপে বসবো না। এক বছর কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী চলে যাবো আপনার জীবন থেকে । আর সুপ্তি ফিরলে তার ও আগে । ”
উনি কোন উত্তর দিলেন না।চুপচাপ করে গাড়ি চালাচ্ছেন । মৌনতা সম্মতির লক্ষন । তবে কি সম্মতী ধরে নিবো ? ধরাই যায় !
আবারো নিরবতা বিরাজ করছে । হ্ঠাৎ নিরবতা ভেঙে উনিই ডেকে উঠেন,
– “হুর !! ”
আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠেন ,
– “হেইট ইউ ! ”
তার মুখে বিশেষ কোন অনুভুতির ছাপ নেই । কথাটা বেশ স্বাভাবিক ভাবে বললেন । আমি তার দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললাম ,
– “হেইট ইউ মোর এন্ড মোর !!! ”
আমার কথায় উনি বাঁকা হেসে ড্রাইভিং এ মন দেয় । উনি নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে তাই একা হাসে আবার কারণ ছাড়া রেগে যায় ।
আমি মুখ ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে চোখ দেই । ছোট্ট নিশ্বাস বেরিয়ে আসে । কিছুক্ষণ পর চোখজোড়া ছোট হয়ে আসতে লাগে । আজ কেন জানো আপুর হলুদের কথা বড্ড মনে পড়ছে তা ভেবেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে ।
অতীত_______________
অগ্নি ভাইয়া মেরুন রং এর পাঞ্জাবি পরেছেন । চুল গুলা স্টাইল করা । ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে টুকরো টুকরো হাসি । আসে পাশের মেয়ে গুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে । আমিও খেয়েছি কিন্তু তা চেহারায় প্রকাশ করলাম না । কারণ এই মুহুর্তে আমার উনার মাথা ফাটাতে ইচ্ছা করছে । আমি প্রচণ্ড রকম বিরক্তি নিয়ে জুসের গ্লাস হাতে দাড়িয়ে আছি। আর আমার ঠি ক সামনে অগ্নি ভাইয়া চেয়ারে আরাম করে গা এলিয়ে আছে । ঠোঁটে তৃপ্তিকর হাসি । আমাকে এভাবে দাড়া করিয়ে উনি বেশ মজা পাচ্ছে !
সবাই কত আনন্দ করছে । আপুকে হলুদ দিচ্ছে ।নাচচ্ছে গান গাইছে । আর আমি উনার ওয়েটার হয়ে দাড়িয়ে আছি ।কখনো কফি এনে দিচ্ছি আবার কখনো জুস এনে দিচ্ছি । আমি না হয় একটু ভুল করেই ফেলেছি তাই বলে উনি আমার উপর এভাবে প্রতিশোধ নিবে ? আমার ইনোসেন্ট চেহারা দেখে কি উনার দিলে একটু দয়া হয় না ? খুব রাগ হচ্ছে রাগে কান্না আসছে । আমি উনাকে বেশ শান্ত স্বরে বলি ,
– “ভাইয়া আমি এখন যাই কেমন ? ”
উনি গম্ভির কন্ঠে বলে ,
– “উহু একদম না । আমি আরো কিছু খাবো! ”
আমি বেশ চমকিয়ে শব্দ করে বললাম,
– “আপনি আরো কিছু খাবেন ?”
– “কেন তোমার সমস্যা হচ্ছে ? আন্টিকে বলবো তুমি আমাকে খাবার এনে দিচ্ছনা ?
আমি শুধু অবাক হচ্ছি । মানুষ এত বদ কেমনে হয় ? আমাকে এভাবে শাস্তি দিলো ? এতক্ষন যে আমাকে দিয়ে গাধার খাটনি খাটালেন তা ভুলে গেলো ? এ কেমন নির্দয় লোক ?
আমার কত শখ ছিলো হিয়া আপুর বিয়েতে কত্তও মজা করবো কিন্তু এই নির্দয় মানুষ রুপি রাক্ষসরাজের জন্য আমার সব শখ মাটি হয়ে গেল ।
আমার ভাবনায় ছেদ পরে উনার কড়া ধমকে!
উনি ধমক দিয়ে বললেন,
– “এই মেয়ে যাও আমার জন্য ডিজার্ট নিয়ে আসো ! ”
আমি সরু দৃষ্টি তে তাকিয়ে রেগে উত্তর দেই ,
– “আমি পারবোনা না না না । না মানে না । একদম পা- র- বো- নাআয়ায়ায়া । ”
উনি আমার চিৎকারে নিজের কান চেপে ধরে । আমি এখনো রাগে ফুসফুস করছি । উনি এবার চেয়ার থেকে উঠে যায় । আমার দিকে কপাল কুচকিয়ে তাকায় । সামনের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
– “সুন্দরীইইইইইইইই ,সেদিন কি জানো বলছিলে ? ও হ্যা ! আমি যেন দোয়া করি তুমি আমার বউ হয়ে আমার জীবন তেজপাতা করতে পারো ! পারবে তো আমাকে হ্যান্ডেল করতে ? ”
আমার উনার এই রুপে খুব ভয় করছে । আমি ভয়ে কান্না করে দেই । কাদো কাদো গলায় বললাম ,
– “ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর জীবনে এমন কিছু বলবোনা ! ”
বলেই ভ্যা করে কান্না করে দেই । উনি আমার কান্না দেখে শব্দ করে হাসতে লাগে । বললেন ,
-“এতোটুকুতেই এই অবস্থা ? আবার আমার জীবন তেজপাতা করবে ? ”
কথা শেষ করে আবার শরীর কাঁপিয়ে হাসতে লাগে । মূহুর্তেই আমার কান্না থেমে যায় । হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । কারো হাসি এত সুন্দর কি করে হয় ? কেউ এত সুন্দর কি করে হয় ? উফফফ আল্লাহ !
এমন সময়ই দরজার কাছে কিছু পরার আওয়াজ পাই । আমি আর অগ্নি ভাইয়া সঙে সঙে সেই দিকে তাকাই । তাকিয়ে দেখি সুপ্তি দাড়ানো । তার চোখে মুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ । সুপ্তি থরথর করে কাপছে । তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে যায় । অগ্নি ভাইয়া তার পিছু পিছু যায় বার বার সুপ্তিকে ডাকতে লাগে । কিন্তু সুপ্তি তাকায় না চলে যায়।
আমি এসব কান্ডে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকি । সব আমার মাথার উপর দিয়ে যায় । কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারি সুপ্তি আর অগ্নি ভাইয়া পূর্বপরিচীত ।
কিন্তু মনে একটা সংশয় রয়ে যায় । সুপ্তি কেন এত ভয় পাচ্ছিলো ? এর কারণ কি ছিলো ?
সেদিন আর অগ্নি ভাইয়াকেও দেখতে পালাম না । বিয়ের দিন উনার সাথে দেখা হল কিন্তু কথা হল না । তিনি আমাকে বরাবরই ইগনোর করলেন । আমিও আর কথা বাড়াইনি । কিন্তু উনি কেন জানো আমার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকাচ্ছিল মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবে ।
বউভাতের দিনও তাই হলো ।
আপুর বিয়ের একসাপ্তাহ কেটে যায় । একদিন ভার্সিটি থেকে ফিরলে মামা রেডি হতে বললেন হিয়া আপুর শ্বশুর বাড়ি যাবে।আজ অগ্নি ভাইয়ার এংগেজমেন্ট । ইচ্ছা না থাকার স্বর্থেও যেতে হলো । কিন্তু সেখানে যেয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় শক খাই !
কারন অগ্নি ভাইয়ার সাথে আর কারোনা আমারই বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে হচ্ছে । অথচ আমি কিছু জানিনা । আমি কি ওর এতটাই পর যে একবার জানানোও প্রয়োজন মনে করলো না ? চোখ গুলো ভরে আসছে । কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে সুপ্তির কাছে গেলাম । সুপ্তি আমাকে দেখেই দ্বিধায় পড়ে গেলো । আমি সুপ্তিকে অভিনন্দন জানাতে যাবো তার আগেই কোথা থেকে যেন অগ্নি ভাইয়া চলে আসে । আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দূরে নিয়ে আসে । ধমক দিয়ে বললেন,
– “আমার হবু বউ থেকে দূরে থাক । অনেক ঝামেলা করেছো আর না । সুপ্তির আশেপাশে যেন তোমাকে না দেখি ! ”
আমি লজ্জা আর বিস্ময়ের চরম পর্যায় । আমি কি ঝামেলা করেছি ? কেন আমাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে ?
আমি তা জিগাসা করতে যাবো তার আগেই উনি চলে যায় । আমি সেখানে এক সেকেন্ড দেরী না করে বাড়িতে চলে আসি।সেদিন থেকে সুপ্তির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই । সুপ্তিও কোনো খোঁজ নেয়নি । কিছুদিন পর মামা থেকে শুনি অগ্নি ভাইয়ার বিয়ে ।আমি তেমন গুরুতও দেই না। তাদের বিয়ে আমার তাতে কি ? তারা বিয়ে করুক না করুক তাতে আমার কি আসে যায় !
হ্ঠাৎ একদিন ভোর সকালে আদ্রিতা আন্টি আমাদের বাড়িতে আসে। সবাই বেশ চমকিয়ে যাই উনাকে এত সকাল সকাল দেখে । মামা মামী তো বরাবরই ঘামছে । ওই বাড়িতে কোনো সমস্যা হয় নি তো ।
আন্টি ড্রইং রুমে বসে । মামী নাস্তা নিয়ে এসে বললেন ,
– “বেয়াইন আপনি এত সকাল সকাল । হিয়ার কি কিছু করেছে ?
মামীর কথায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।আন্টি শীতল কন্ঠে বললেন,
– “হিয়া কে নিয়ে কিছুনা বিষয়টা অন্য । ”
মামা ভ্রু কুচঁকিয়ে বললেন ,
– “তা কি বেয়াইন । ”
আন্টি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সরাসরি বললেন ,
– “আমার ছেলে অগ্নির জন্য আপনার ভাগ্নির হাত চাইতে এসেছি । ”
কথাটা একপ্রকার বোমের মত বাড়ীতে ব্লাস্ট হলো । মামা থতমত গলায় বললেন,
– “অগ্নি তো সুপ্তির সাথে বিয়ে ঠি ক তাই না ? ”
– “হ্যা ,কিন্তু সুপ্তি কাল রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে । কোথায় গিয়েছে তা কেউ জানে না । নোট লিখে গেছেন সে এখন বিয়ে করতে পারবেনা ।
এদিকে একসাপ্তাহ পর বিয়ে সবাইকে ইনভাইটেশন দেওয়া শেষ । এখন যদি জানতে পারে বউ পালিয়েছে পুরো সোসাইটির সামনে আমার নাক কাটা যাবে । প্লিজ আমার রিকোয়েস্ট আপনারা রাজী হয়ে যান । আমার ছেলের জন্য হুর থেকে বেটার কেউ হতে পারেনা । আমার প্রথম চয়েস হুর ছিলো শুধু অগ্নির চাপে পড়ে সুপ্তির সাথে বিয়েতে রাজী হয়েছি । কিন্তু নিলজ্জ মেয়ে কি করলো ? পালালো । মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো ।
আশা করি আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না ।”
মামা বললেন,
– “বেয়াইন এটা বিয়ে শাদীর ব্যপার স্যপার হুরে জীবনের ব্যপার এই ডিসিশন নেওয়ার অধিকার হুরের। হুরের সিদ্ধান্তই হবে আমাদের সিদ্ধান্ত ! ”
আমি এতসময় পর্দার আড়াল থেকে শুনছিলাম। মামা কথা শুনে বাহিরে বেড়িয়ে এলাম।বললাম,
– “আমি এই বিয়েতে রাজি না । ”
আন্টি আমার কথা শুনে বললেন,
– “প্লিজ মা তোমার কাছে আমার রিকোয়েস্ট আমার মান সম্মান বাচাঁও । ”
– “আন্টি আমার বেয়াদবি মাফ করবেন । কিন্তু আমি পারবোনা অগ্নি ভাইয়াকে বিয়ে করতে । সে আমার বান্ধবীর ভালোবাসার মানুষ আমি কি করে তাকে বিয়ে করবো ? ”
আন্টি বেশ শক্ত গলায় বললেন ,
– “যদি তোমার বান্ধবী সত্যি আমার ছেলেকে ভালোবাসতো তাহলে পালাতো না।
এটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত ? ”
আমি মাথা হ্যা বোধক নাড়ালাম । আন্টি বললেন,
– “তাহলে তোমার বোনের সংসার করাও আর হবেনা। আমি যেমন গড়তে পারি তেমন ভাঙতেও পারবো ।
আমি আমার সম্মানের জন্য সব পারি । অনেক কষ্টে এই সম্মান অর্জন করেছি ।
আজকের দিন সময় দিলাম ভেবে সিদ্ধান্ত জানাবে । ”
আন্টি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়।। মামা মামী চিন্তায় পড়ে যায় । মামী কান্না কাটি করতে লাগে । সেদিন বিকাল দিকে হ্ঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসে “হ্যালো ” । কন্ঠটা শুনতেই শরীরে শীতল হাওয়া বইলো ।চোখ গুলো ভরে আসে। কন্ঠটা খুব পরিচীত আর কাছের একজনের । হঠাৎ এতো মাস পর শুনতে পেয়ে কলিজায় লাগে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার মন ভেঙে চুরমার করে ওপাশের ব্যক্তি বললেন,
– “হুর আমি অগ্নি । ”
কথাটা শুনে মন ছোট হয়ে গেলো ।আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। আচ্ছা দুটো মানুষের কন্ঠ কি এতটা মিল হতে পারে ? আদো সম্ভব ?
আমার ভাবনায় ডাক পড়ে । অগ্নি ভাইয়া ভারী গলায় বললেন,
– “আমি জানি হুর তুমি আমাকে শুনছো ।এটাও জানি মা আজ তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে গিয়েছিলো । আমি সুপ্তিকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবো না । আমার দ্বারা সম্ভব না !
আশা করি তোমার উত্তর না হবে । ”
বলেই ফোন রেখে দেয় আমি থম মেরে বসে থাকি । কি করবো এখন ? আমার কি করা উচিত ? সারারাত নিদ্রাহীন ভাবনায় কাটিয়ে দিলাম । চোখ বন্ধ করলেই শুধু মামা মামী আর হিয়া আপুর চেহারা ভেসে উঠে । তারা আমাকে ছোট থেকে মানুষ করেছেন ,আগলিয়ে রেখেছেন । তাদের ঋন কোনদিন শোধ করা সম্ভব না। আমার জীবনের বলি দিয়ে যদি তাদের হাসি মুখ দেখা যায় তাহলে তাই হোক । আমি তো জন্মের পর থেকে পুড়াকপালী । ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম যা হবার তা হবে ।
সবদিক বিবেচনা করে পরের দিন আন্টিকে বললাম আমি বিয়েতে রাজী ।এক সাপ্তাহ পর আমাদের সেইদিনেই বিয়ে হয় যেদিন অগ্নি ভাইয়া আর সুপ্তির বিয়ের কথা ছিলো । এর মাঝে এক সাপ্তাহ অগ্নি ভাইয়া বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি করিনা কারন তার রাগের সামনে ধারানোর মত শক্তি আমার ছিলোনা !!!!
বর্তমান____________
মুখের উপর কারো ঘন নিশ্বাসে আমার ঘুম ভাঙে । চোখ খুলে দেখি অগ্নি ভাইয়া আমার দিয়ে গভীর নয়নে তাকিয়ে । আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলি,
– “আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিচ্ছিলেন ? আপনি আমার নামে মাত্র হাসবেন্ড । আমার থেকে দুরে থাকেন ! ”
তার বলা কথা তাকেই ফিরিয়ে দেই । গাড়ি বাড়ির সামনে দাড়ানো তাই তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি । নিশ্চিত রাক্ষসরাজ রাগে লাল হয়ে আছে ! নাকের দগাটা লাল হয়ে আছে রাগে? বেশ মজা লাগছে ।
উনি পিছুপিছু আসতে লাগে । বাড়িতে ডুকতেই মামী জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “কেমন আছিস মা ? ও মা শাড়ি পরেছিস ? লাল শাড়িতে একদম আসমানী হুর লাগছে ! ”
আমি মামীর কথায় লজ্জাময় হাসি দেই । হ্ঠাৎ পিছনে একজন লোক কে দেখে ভয় পেয়ে যাই ।ভয়ে অগ্নি ভাইয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরি ।অগ্নি ভাইয়ার পিছনে চলে যাই ।
লোকটি তখনো আমার দিকে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে ।
চলবে ……❤️