শেষ পাতার তুমি পর্ব ১

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী

#পর্বঃ১_২

দেয়ালের সাথে বধুবেশী আয়ানাকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে তার প্রাক্তন স্বামী রায়ান!!!

রায়ানের চোখে স্পষ্ট রাগ দেখা যাচ্ছে!!! অপরদিকে লোকের আওয়াজ শুনতেই রায়ান আয়ানাকে নিয়ে আরেকটু চেপে যায়!!!আয়ানা “উমম উমম” আওয়াজ করছে!!!

রায়ান আয়ানার কানে ফিসফিস করে বলে–এত্তো ছটফট করছো কেন??একটু চুপ করে দাঁড়াও!!

আয়ানা তাও রায়ানের বুকে ঘুষি খামচি দিয়েই যাচ্ছে!!!

এবার রায়ান আয়ানার হাত আটকে ধরে!!তারপর মুখে রুমাল চেপে ধরতেই আয়ানা জ্ঞান হারায়!!তারপর ঢলে পড়ে রায়ানের বুকে!!রায়ান খুব সাবধানে আয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে সবার চোখের আড়াল হয়ে বেরিয়ে যায় ভরা বিয়ে বাড়ি থেকে!!!

হোটেলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো গাড়ির কাছে আয়ানাকে কোলে করে রায়ান যেতেই একজন গাড়ির ডোর খুলে দিল!!

রায়ান খুব সাবধানে আয়ানাকে নিয়ে গাড়িতে ঢুকল!!

তারপর কালো কাপড় পরিহিত এক লোক ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো!!

গাড়িতে কোলে বসে থাকা আয়ানার দিকে তাকিয়ে রায়ান একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল–আর আমাকে ফাঁকি দিয়ে যেতে পারবে না জান!!!ধরে ফেলেছি তোমাকে আমি!!এবার তোমায় বন্দি করবো!!

তারপর রায়ান আয়ানার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে দিল!!

অপরদিকে,,

আয়ানার বাবা–আয়ানার মা,,আয়ানা কে নিয়ে এসো দ্রুত!!সবাই অপেক্ষা করছে তো!!!

আয়ানার মা শুকনো ঢোক গিলে বলল–আমি ছেলেকে চেইন পড়াবো!!তুমি গিয়ে একটু নিয়ে আসবে!!

আয়ানার বাবা মুচকি হেসে বলল–হুমম!!যাই আমার রাজকন্যা কে আমিই নিয়ে আসি!!

কথাটা বলেই আয়ানার বাবা দ্রুত পায়ে গেল আয়ানার ঘরের দিকে!!

দরজায় বার কয়েক নক করেও আয়ানার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চমকালো আয়ানার বাবা!!

তারপর কাঁপাকাপা হাতে পকেট থেকে ডুবলিকেট চাবি বের করে লক এ ঘোরাতেই লক খুলে গেল!!

আয়ানার বাবা দ্রুত ঘরে ঢুকে দেখলেন ঘর ফাঁকা!!

সব জায়গায় দেখেও আয়ানাকে না পেয়ে ধপ করে বিছানাতে বসে পড়লেন আয়ানার বাবা!!

ঘাম মুছে ড্রেসিং টেবিলের দিক তাকতেই দেখলেন আয়নাতে কাজল দিয়ে লেখা–নিয়ে গেলাম আমার বউকে শ্বশুরমশাই!!

আয়ানার বাবা ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন!!!

মাথাটা নিচু করে বাইরে বিয়ের আসরের মাঝে এসে দাড়ালেন!!

তারপর একটু জোর দিয়ে বললেন–বিয়ে বন্ধ!!

কথাটা শুনে বরবেশে বসে থাকা শান্ত তো অবাক!!

মাথার পাগড়ি খুলে আয়ানার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন–কি বলছেন কি আংকেল??আয়ানা কোথায়??

আয়ানার বাবা চোখ শক্ত করে বললেন–নিয়ে গিয়েছে ওই শয়তানটা!!

শান্ত চোখ মুখ কুঁচকে বললেন–কি??রায়ান নিয়ে গিয়েছে!!

আয়ানার বাবা–হুমম!!

শান্ত দ্রুত পায়ে গেট থেকে বেরিয়ে গেল!!

যেতে যেতে মুখে বলতে লাগল–কোনো ক্ষতি হতে দিবো না আমার আয়ানার!!আমি ঠিক খুঁজে নিয়ে আসবো!!!

শান্ত বেরিয়ে যেতেই শান্তর বাবা- মা বেশ উদ্বিগ্ন স্বরে আয়ানার বাবা মা কে বললেন–আপনাদের সাবধান থাকা উচিত ছিল!!

ধীরে ধীরে অতিথি যেতে শুরু করল!!মুহুর্তেই ভরা বিয়ে বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল!!আয়ানার বাবা বললেন–কেন বলোতো রায়ান এমন করছে?ও নিজের আয়ানাকে ছেড়ে এখন আবার উঠেপড়ে লেগেছে আমার মেয়ের পেছনে!!কি চায় ও??

আয়ানার মা বলল–ধৈর্য ধরো!!সব ঠিক হয়ে যাবে!!

অন্যদিকে শান্ত পাগলের মতো আয়ানাকে খুঁজে যাচ্ছে!!

সন্ধ্যা নামল বলে,,

শান্ত ক্লান্ত হয়ে বিজ্রের ওপর গাড়ি থামিয়ে দেয়!!

তারপর বলে–কি করে খুঁজে পাব তোকে আয়ানা??কোথায় তুই??দেখ না তোর বেষ্টু কাঁদছে!!

তারপর চোখ বন্ধ করে গাড়িতে হেলান দেয়!!!

অপরদিকে,,,

সোফাতে হেলে শুয়ে থাকা আয়ানার দিকে এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোফার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ান!!

চোখে রাগ না জেদ তা বোঝা মুশকিল!!

আয়ানা আর তার পরিবারের করা কিছু কাজের কথা মনে করতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো রায়ানের!!

তারপর দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল–বি রেডি আয়ানা!!তুমি পালিয়ে খুব ভুল করে ফেলেছো!!

দরজাতে টোকা পড়ায় রায়ানের ভাবনায় ছেদ পড়ে!!

রায়ান!!

রায়ান ধীরে দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ভেতরে চলে আসেন একজন মাঝবয়সী মহিলা!! ভেতরে এসেই দরজা বন্ধ করে আয়ানার পালস চেক করে বললেন–কি করেছিস ওকে??সেন্স আসেনি কেনো এখনো??

রায়ান অবাকের স্বরে বলল–কি করব??ক্লোরোফম স্প্রে করেছিলাম এজন্য!!দেখ তুমি চেক করে!!

মহিলাটি একটু আওয়াজ চড়া করে বললেন–হুমম তোদের ফ্রি ডাক্তার তো আমি!!বেয়াদব

রায়ান বিছানাতে বসে বলল–ওহহ মা!!ডাক্তার হওয়ার সময় তো শপথ নিয়েছেলে যে যেকোনো অবস্থায় সেবা করবে!!

রায়ানের মা(রেশমি আহমেদ) একটু দাঁত কটমট করে বলল–তোর বাবা আর দাদী জানতে পারলে কি হবে বলতো??গতবারের ঝামেলা এখনো কেউ ভোলে নি!!

আর যখন ওকে তুলেই আনলি তখন অন্য কোথাও যেতে পারতি!!তা না বাড়িতে নিয়ে এলো!!

রায়ান নিজের শার্ট খুলতে খুলতে বলল–বাড়ির বউকে নিয়ে বাইরে থাকাটা ঠিক মনে হয়নি মা!!তাই ওকে বাড়ি নিয়ে এলাম!!

রেশমি আহমেদ একটু আয়ানার কাছে এগিয়ে বললেন—সেন্স আসতে সময় লাগবে!!আমি গহনা গুলো খুলে দিচ্ছি!! তুই খেয়াল রাখিস ওর!!!

রেশমি আহমেদ আয়ানার গহনা খুলে একটা বালিশ আয়ানার মাথার নিচে দিয়ে দিলেন!!

রেশমি আহমেদ যাওয়ার সময় বললেন–বাবু আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি!! ওর সেন্স আসলে খাইয়ে দিস!!

আর সাবধান,, তোর বাবা,দাদি যেন জানতে না পারে!!

রায়ান মায়ের কাছে এসে বলে–চিন্তা করো না!!সব ঠিক হয়ে যাবে!!

রেশমি মুচকি হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়!!

রায়ান একটু ফ্রেস হয়ে এসে বিছানাতে গা এলিয়ে দিল!!

তারপর ফোন হাতে নিয়ে কাউকে ফোন দিয়ে বলল–খবর কি??

—-

রায়ান অপর পাশের কথা শুনে বাকা হেসে বলল–সাফার তো করতেই হবে শান্তকে যতটা আমি করেছি তার থেকেও বেশি!!!

তারপর রায়ান একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে–অভ্যাসটা ছিলো না!!তোমার জন্য ধরেছে ছাড়াতেও হবে তোমাকে!!!

তারপর রায়ান সিগারেট টানতে থাকে আর ঘরময় সেই বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রাজ্য তৈরি করেছে!!!

অপরদিকে,,

শান্ত এখনো রাস্তায় আয়ানাকে খুঁজছে!!!

ফোনের আওয়াজ পেতেই গাড়ি থামিয়ে শান্ত ফোন রিসিভ করে!!!

শান্ত–হুমম মা বলো!!

শান্তর মা–কোথায় বাবা তুই??

শান্ত–মা আয়ু কে এখনো পাইনি!!ওই বজ্জাত টা আয়ুর কি অবস্থা করেছে কে জানে??!!

শান্তর মা–তুই বাড়ি আয় তারপর সবাই মিলে ব্যবস্হা করা যাবে!!

শান্ত — আসছি মা!!চিন্তা করো না!!!

শান্ত ফোন কেটেই ফোন চোখ রাখতেই ভেসে উঠল আয়ানার ঝলমলে হাসিমাখা মুখ!!

শান্ত ছবিটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল বাড়ির পথে!!!

সদর দরজা দিয়ে শান্ত প্রবেশ করতেই শান্তর মা দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে নিলেন!!

এক কোণায় কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানার মা – বাবা!!

শান্ত তার মাকে ছাড়িয়ে আয়ানার মা বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল–যদি জানতে পারে এতে বাড়ির কারো হাত আছে তাহলে তো আর বলতে হবে না কি করব আমি!!!আর যতক্ষণ আপনাদের মেয়েকে আমি খুঁজে পাব না ততক্ষণ আপনারা এখানেই থাকবেন আংকেল আর চিন্তা করবেন না!!

কথাটা সরু চোখে আয়ানার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে শান্ত ওপরে নিজের ঘরে চলে গেল!!!

আয়ানার মা আরেকবার ঢোক গিলে নিল!!!তারপর ধীরপায়ে ঘরে চলে গেল!!

আয়ানার বাবা ছাদের পথে হাঁটা ধরলেন কারণ সমস্যার সমাধান বের করা জরুরি!!

রায়ানের দিনের পর দিন বেয়াদবি তিনি আর মেনে নিবেন না!!

অপরদিকে,,,

আয়ানা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই কাশি শুরু হয়ে যায়!!

কোনো মতে উঠে বসতেই ধুপ করে পড়ে যায় সোফা থেকে মাটিতে!!অন্ধকার হওয়ার কারণে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না আয়ানার!!!!

আয়ানা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই কাশি শুরু হয়ে যায়!!

কোনো মতে উঠে বসতেই ধুপ করে পড়ে যায় সোফা থেকে মাটিতে!!অন্ধকার হওয়ার কারণে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না আয়ানার!!!

ধোয়ার গন্ধ নাকে আসতেই আয়ানা বুঝে যায় যে এটা নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া!! কাশতে কাশতে উঠে বসার চেষ্টা করে তবে কোমড়ে ব্যাথা পাওয়ার দরুণ উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলো না আয়ানা!!

আবারও কাশি দিতেই আলো জ্বলে উঠলো!!

আয়ানা ধীর চোখে খুলে আবারও কাশতে শুরু করে!!

রায়ান মুখে সিগারেট নিয়েই এক গ্লাস পানি হাতে আয়ানার সামনে দাঁড়ায়!! রায়ান সিগারেট নিয়ে কাছে আসায় আয়ানা চোখ মুখ কুঁচকে আবারও কাশতে শুরু করে!!

রায়ান পানিটা টি টেবিলের ওপর রেখে বলল–পানিটা খাও!!

আয়ানা কাশিটা থামিয়ে বলল–সিগারেট টা ফেলো!!প্লিজ!!

রায়ান বাঁকা হেসে সিগারেট টা এ্যাস ট্রে তে চেপে রেখে বলল –কেন সহ্য হচ্ছে না এখন??শান্ত ও তো সিগারেট খায়!!!

আয়ানা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল খানিক তারপর টেবিলের ওপর থেকে গ্লাস নিয়ে পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে কপাল কুঁচকে বলে–আপনি এখানে কেনো এনেছেন আমাকে??আজ আমার বিয়ে!!

রায়ান জোরে হেসে আয়ানার সামনে থেকে উঠে বলে–এতোক্ষণে তোমার বাবার মাথায় হাত উঠে গিয়েছে!!!

আয়ানা উঠে দাঁড়িয়ে বলল–মানে??

রায়ান বিছানাতে শুয়ে বলল–রাত ১১ টায় কি তোমার বর আসরে ধ্যান ধরে বসে আছে নাকি??

আয়ানা এবার চড়া কন্ঠে বলে –কেন তুলে এনেছেন আমায়?? আপনার সাথে তো আমার সব সম্পর্ক শেষ!!তাহলে কি চাই এখন আপনার??

রায়ান চোখ বুজে বলল–গলার আওয়াজ নামিয়ে কথা বলো!!তুমি মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ!!এখানে বউরা এত উঁচু গলায় কথা বলে না!!বাড়িতে তোমার শ্বশুর আছে!!

একটু থেমে আবার বলল–আর কি বললে!!সম্পর্ক শেষ??লাইক সিরিয়াসলি!!সিনেমা মনে হয় যে দুটো কাগজে সই করে চলে গেলেই তালাক হয়ে যাবে!!

আয়ানা এবারও চড়া গলাতে বলল–আমি বাড়ি যাবো!!

রায়ান–টেবিলে খাবার আছে!!খেয়ে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়!!!

কথা গুলো বলেই রায়ান ঘরের আলো নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ল!!

আয়ানা ভ্রু কুচকে বেশ অনেক সময় রায়ানকে বাড়ি যাওয়ার কথা বলল দরজার কাছে গিয়েও চেষ্টা করল কিন্তুু লাভ হলো না!!!

ব্যর্থ হয়ে আয়ানা সোফাতে বসে পড়ল!!!

তারপর ছলছল চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল–বাজে ই আছেন আপনি এখনো!!কেনো এনেছেন আমায় এখানে!!!

কথাটা শুনে রায়ান ধপ করে উঠে এসে আয়ানার হাত চেপে ধরে!!

আয়ান সবটা বুঝে ওঠার আগেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রায়ান দাঁত কটমট করে বলে–তা কোথায় নিয়ে যাবো তোমায়??এটাই তোমার বাড়ি!!বিয়ের পর থেকে!!

আয়ানা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে–আমাদের তালাক হয়ে গিয়েছে আরও ২ বছর আগে ভুলে গিয়েছেন নাকি!!!অসভ্য বাজে লোক!!

রায়ান আরো একটু চেপে ধরে বলে–চুপ!!কোনো কথা বলবে না!!এটা তোমার বাপের বাড়ি না!!আর স্বামী কে সম্মান করে কথা বলো!!

আয়ানা–সম্মান মাই ফুট!!বাড়ি দিয়ে আসুন আমায়!!

রায়ান–বাড়িতেই আছো এখন!!

আয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান আয়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে–আর কোনো কথা নয় আয়ুপাখি!!!ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!!!

কথা বলেই রায়ান আয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দেয়!!

আয়ানা হালকা কেঁপে উঠল!!! আবারো পুরোনো সেই ছোঁয়ার আবেশে!!!

রায়ান আয়ানাকে ছেড়ে বিছানাতে গা এলিয়ে দিয়ে বলল–আলমারিতে এখনো তোমার কাপড় গুলো গোছানো আছে!!

আয়ানা চোখ খুলে কার্নিশে জমা পানি মুছে ওয়াশরুমে চলে গেল!!

অপরদিকে,,

শান্ত ঘর আটকে বসে আছে!!ইতিমধ্যে ঘরের অর্ধেক জিনিস ভাঙচুর করে ফেলেছে!!

শান্ত ধীর কন্ঠে বলে ওঠে–চিন্তা করিস না আয়ু!!তোকে ঐ গরীবের বাড়িতে থাকতে দিব না আমি!!

কালই তোকে নিয়ে আসব!!রায়ানকে পুঁতে ফেলব আমি!!ও বারবার আমার আর তোর মাঝে বাধা সৃষ্টি করে!!!তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে!!!ভয় পাস না আমি আছি!!!

কথাগুলো দেয়ালে আয়ানার ছোট্ট বেলার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলল শান্ত!!!

বেশ কিছুক্ষণ পর,,

আয়ানার বাবা,শান্ত আর তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে ছাদে!!

শান্ত–কাল আমি নিয়ে আসবো আয়ুকে আর কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নেই আসার পথে কাজী অফিস হয়ে আসবো!!!

আয়ানার বাবা–আমার তো একটাই মেয়ে —

কথা শেষ করার আগেই শান্তর বাবা বলল–একটা মেয়ে তো কি!!১ম বিয়ে তো আর না!!তাই এতো নাটকের দরকার নেই!!!

আয়ানার বাবা আর কিছু বলল না!!!

আয়ানার মা দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা শুনে ফিসফিস করে বলল–বিয়ে তো তোর সাথে আমার মেয়ের কখনো হবে না!!আয়ু রায়ানের কাছেই ভালো থাকবে!!!

বলেই নিজের ঘরে গিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেল!!

তারপর ওয়াশরুমের লন্ড্রি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রায়ানকে ছাদে শোনা সবটা মেসেজ করে দিল!!

মেসেজের আওয়াজে তন্দ্রা কাটে রায়ানের!!

রায়ান উঠে বসে দেখে আয়ানা এখনো ওয়াশরুমে!!

রায়ান ফোন হাতে হালকা হেসে বলল–পুরোনো অভ্যাস!!!

তারপর মেসেজ অপশনে গিয়ে আয়ানার মায়ের মেসেজ টা পড়ে হালকা হেসে বলে–নো ওয়ারিস!!মা!!তোমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে!!

তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরাল!!!

আয়ানা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল রায়ান বারান্দাতে!!

তোয়ালে মেলে দিতে গিয়েই নাক চেপে ধরে বলল–আপনার তো এই অভ্যাস ছিলো না!!??

রায়ান না ঘুরেই বলল–এখন ধরেছে!!!

আয়ানা নাক সিটকে –কেন??

রায়ান সিগারেট ফেলে বলল–তোমার জন্য!!!

আয়ানা কপাল কুঁচকে –আমি!!!আমি আবার কি করেছি!!!আপনি আমার ছেড়ে দিয়ে ছিলেন!!বাড়ি থেকে বের ও করে দিয়েছিলেন!!!

রায়ান ধরা গলায় বলে–ভুল করেছিলাম নাকি বাধ্য হয়েছিলাম তা তুমি একদিন জানতে পারবে!!!

আয়ানা –আমাকে আমার বিয়ের আসর থেকে এভাবে আনলেন কেন??

রায়ান আয়ানাকে কাছে টেনে আয়ানার ভেজা চুল কাঁধ থেকে সরিয়ে কাঁধে চুমু দিল তারপর বলল–তোমাকে ভেজা চুলে বেশ দারুণ লাগে!!

আয়ানা দ্রুত সরে এসে বলল–আপনি তো বেশ অসভ্য হয়েছেন!!আগে তো এমন ছিলেন না!!আগে তো আমাকে টাচ ও করতেন না!!

রায়ান আয়ানাকে আবারও কাছে এনে বলে–স্বামী স্ত্রী কে ছুলে কখনো অসভ্য হয় না সোনা!!আর আগের কথা বাদ!!!

আয়ানা–আমরা মোটেই স্বামী স্ত্রী নই!!আপনি নিজে আমায় ডিভোর্স দিয়েছেন!! আপনার প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য!!

রায়ানা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে বলল–তাই??

আয়ানা–হুম তাই!!আমি এখন আপনার প্রাক্তন স্ত্রী!! আর প্রাক্তনকে ছোঁয়া পাপ!!!

রায়ান–প্রাক্তন হলে তবে তো পাপ হবে!!!

আয়ানা–মানে??

রায়ান–মানে কিছু না!!যাও ঘুমিয়ে পড়ো!!

আয়ানা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও রায়ানের কোনো হেলদোল না পেয়ে ঘরে এসে বিছানার এক কোণে শুয়ে পড়ল!! তবে ঘন্টাখানিক এপিট ওপিট করেও আয়ানা কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না!!

কারণ হলো গরম!!

এপ্রিলের প্রচন্ড গরমে রায়ানের ঘরের ফ্যানের বাতাস যেন বিছানা অবদি আসছে না!!!

তারওপর চুল ভেজা থাকাতে আরও অসহ্য লাগছে!!

রায়ান ঘরে এসে আয়ানার অস্বস্তি বুঝে বলল–অভ্যাস করে নাও!!আগে যেমন করেছিলে!!কারণ তোমার বাবার মতো বড়লোক নই আমরা!!!

আয়ানা কপাল কুঁচকে কথাটা শুনে কিছু না বলে দুম করে চোখ বুজে নিল কারণ ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই আয়ানার সারাদিনের ক্লান্তি ভর করেছে এখন!!!

চলবে

১০৪৫ শব্দের পর্ব♥️♥️

বিঃদ্রঃ চলবে কি??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here