সাইকো বর পর্ব ১৩

#সাইকো_বর

#writer_Tabassum_Tajnim

#Part_13

জোহান কেনো কল দিলো বুঝতে পারছি না,,
সে কি বুঝতে পারছে না যে তার কারনে মেঘ আমাকে ভূল বুঝচ্ছে। জোহান অনেক চালাক, চতুর,, সে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে এটা, তাড়াছাড়া আজকে মেঘের ব্যবহার তো,,,তারপরেও

যাই হোক,,এখন এসব ভেবে লাভ নেই। আমি মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘ জোহানকে নিয়ে এমনিতেই বিরক্ত। তারপর বারবার জোহানের আগমন,, মেঘকে অনেক রাগিয়ে তুলছে।।

মেঘ আমার দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। অন্য সময় হলে আমি এক ঝটকায় মোবাইল টা ওর হাত থেকে নিয়ে নিতাম। কিন্তু আজকে ওর হাত থেকে মোবাইল টা নিতে পারছি না,, আমার হাত কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল টা নিলাম কানের কাছে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপপ করে রইলাম। ওপাশ থেকে জোহান হ্যালো হ্যালো করেই চলছে।।

অথৈ— হুম বলো,,,কি জন্যে কল দিয়েছো??

জোহান— না,, মানে এমনিতেই কল দিয়েছি,, তোমার সাথে কথা বলার জন্য।।

জোহানের কথা শুনে আমার চোখে মুখে একটা বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো। উফফ,, কি বলে এই
ছেলেটা। এখন আমাকে বলতেই হবে আমাকে যেনো আর ডিস্টার্ব না করে।।

বৃষ্টি— ভাবি চলো না,,

বৃষ্টি আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চাইছিলাম মেঘের সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আর তা হলো না। তাতে হয়তো মেঘের সন্দেহ একটু হলেও কমতো। বৃষ্টির সাথে ওর রুমে গেলাম। জোহানের সাথে কথা বলে মোবাইলটা রাখলাম। জোহান কিছু বলতে চায়ছিলো,, কিন্তু বলতে পারে নি।। কিন্তু কি বলতে চায়ছিলো???

বৃষ্টি— ভাবি, জোহান ভাইয়ার সাথে তোমার কতো দিনের পরিচয়??

আমি বৃষ্টিকে দেখলাম,, খুব ভালো করে দেখলাম, পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলাম। বৃষ্টির হঠাৎ জোহানের কথা জিজ্ঞাস করছে কেনো।

অথৈ— হুম তা,,অনেকদিনের পরিচয়। কিন্তু তুমি হঠাৎ করে জোহানের কথা জিজ্ঞাস করলে কেনো?

বৃষ্টি— না এমনি,,, আচ্ছা জোহান ভাইয়া কি তোমার খুব কাছের বন্ধু। জোহান ভাইয়া খুব ভালো, তাই না ভাবি।

বৃষ্টির প্রত্যেকটা কথায় আমাকে অবাক করছে। জোহানের সম্পর্কে এতো জানার ইচ্ছা কেনো ওর?? তাহলে কি বৃষ্টি জোহান কে,,,,,,,
হুম ভালো লাগতেই পারে। নয়তো শুধু শুধু জোহানের কথা জিজ্ঞাস করবে কেনো।

অথৈ— হুম,, ভালো। কিন্তু তুমি সত্যি করে বলো তো জোহানের সম্পর্কে জানার এতো আগ্রহ কেনো তোমার??

বৃষ্টি আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতে চাইলো। জোহানের কথা বলাতে ওর চোখে মুখে অন্যরকম একটা খুশি একটা লজ্জার রেখা দেখা যাচ্ছে।

এই মেয়ে নির্ঘাত জোহানের প্রেমে পড়ছে। হুহু,, প্রথম দেখায় ভালোবাসা।। আর জোহানের কথাবার্তা তেও মনে হলো জোহানের ও বৃষ্টিকে ভালো লাগছে। তাহলে আর কি দু জনকে মিলিয়ে দিতে হবে।

অথৈ— বৃষ্টি,, আমার কাছে অন্তত লুকিয়ো না,,
তুমি কি জোহানকে ভালো….

আর বলতে দিলো না,, বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বুঝতে পারলাম যে বৃষ্টি জোহানকে ভালোবাসে। এবার শুধু জোহান কি ভাবছে সেটা জানতে হবে। তাহলেই হলো,, আমার রাস্তা থেকে জোহান নামক কাটা টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। উফফ,, শান্তি বাঁচতে পারবো। বৃষ্টি তোমাকে এত্তগুলা থ্যাংকু।।।

অথৈ— তাহলে,, বৃষ্টি আমি সবার সাথে কথা বলি??

বৃষ্টি আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকালো।।

বৃষ্টি— ভাবি,, আমি না হয় জোহান ভাইয়া ভালোবাসি। কিন্তু জোহান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কি না,, সেটা তো জানি না??

ওহ,,,তাই তো,, তবে আমার মনে হয় জোহানের ও বৃষ্টিকে ভালো লেগেছে। হয়তো ওইটাই তখন বলতে চায়ছিলো,, কিন্তু পারে নি।

উফফ,, জোহান নিয়ে ঝামেলাটা মিটে যাবে,, ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। বৃষ্টির রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ পিছন থেকে আমার শাশুড়ি মায়ের গলা শুনতে পেলাম।ওনি আমাকে ডাকছেন। ওনি আমাকে ওনার রুমে নিয়ে গেলেন। ওনার মুখেও সেই জোহানের কথা,,, ছেলেটা কি করে, কোথায় থাকে, ছেলেটা খুব ভালো,, এই সেই আরো কতো কি। ওনার কথা শুনে মনে হলো ওনার ও জোহান কে খুব ভালো লেগেছে। ভালোই হলো বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি শুনলে খুব খুশিই হবে।। ওনার সাথে কথা বলে রুমে গিয়ে দেখি সাইকো নেই। যাক ভালোই হয়েছে,, একটু শান্তিতে থাকবো।

অনেক রাত হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো সাইকো আসে নি। কয়েকবার কল দিয়েছি,, কিন্তু কেটে দিয়েছে। ওর জন্য সবাই অপেক্ষা করতে করতে তারপর খেয়ে ফেললো। আমি তো সবার আগেই খেতে বসে গিয়েছিলাম। আমার ক্ষুধা লাগলে আর সহ্য করতে পারি না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি এসে আবার শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না,, সাইকো কই গেলো?? এখনো কেনো আসছে না, এইটাই ভেবে পাচ্ছি না।

একটু পর মেঘ রুমে ঢুকলো,,আমাকে দেখলো একবার,, কিন্তু কিছু বললো না। তারপর নিজের খাবার টা খেয়ে শুয়ে পড়লো।

মেঘ— অথৈ,,,

কি মনে করে ডাকছে,, আল্লাহই জানে,,,

অথৈ— হুম বলো,,

মেঘ— জোহান তোমাকে কেনো কল দিয়েছিলো??

উফফফফ,, এরা সবাই খালি জোহান জোহান করে কেন,, বুঝি না,, আর মেঘ তো একটু বেশিই জোহান জোহান করে।।

মেঘ— বলো,, কেনো কল দিয়ছিলো??

মেঘ উঠে বসে পড়লো।

অথৈ— এমনি দিয়েছিলো,,

মেঘ— এমনি এমনি কেনো কল দিবে?? কোনো দরকার ছাড়া, বলো কেনো কল দিয়েছিলো????

আবার প্রশ্ন করলো মেঘ। এবার আমি একটু বিরক্ত হলাম। কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না। আমি ওর দিকে ঘুরলাম।

অথৈ— এমনিই কল দিয়েছে। কিছু বলে নি।

মেঘ আমাকে একটানে বসিয়ে দিলো।

মেঘ— অথৈ,, আমি জানতে চাচ্ছি কেনো কল দিয়েছিলো জোহান,,

উফফফ,, মহা ঝামেলা তো,,বারবার এক কথা বললে বিরক্ত লাগে,,সত্যি কথা বলছি,, তারপরেও,,,

অথৈ— বললাম তো এমনি,, কল দিয়েছে,, জিজ্ঞাস করেছিলাম তো,, কিন্তু কিছু বলে নি।।
চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বললাম। তারপর আবার শুয়ে পড়তেই,,, মেঘ আবার আমাকে টেনে তুললো।

মেঘ— এই উঠো,, আমি বলছি তোমাকে শুয়ে পড়তে।।আমার কথা এখনো শেষ হয় নি।

অথৈ— উফফফফ,,, আমার ঘুম পাচ্ছে,, আমি এখন ঘুমাবো।

মেঘ— অথৈ,, আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তবেই তুমি ঘুমুবে। এখন বলো জোহান,,,

অথৈ— কি শুরু করছো তুমি,, বারবার জোহান জোহান করো কেনো??

মেঘ— কারন,, তোমার আর জোহানের মধ্যে কি চলছে তা আমার জানার প্রয়োজন….

অথৈ— জোহান আর আমার মধ্যে কিছুই নেই। আচ্ছা কারো সাথে কি হেসে হেসে কথা বলা যাবে না, কেউ কি আমায় দেখতে আসতে পারে না, কেউ কি ফোনে আমার সাথে কথা বলতে পারে না,,,
কেনো এতো সন্দেহ করো,,

অনেক বিরক্তি নিয়ে একটু জোরে জোরে বললাম কথাগুলো। মেঘ শুধু শুনছে,,,

অথৈ— আচ্ছা তোমার কি মনে হয় না তুমি বাড়াবাড়ি করছো,, সাধারণ বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলছো। মেঘ প্লিজ,,, তুমি যা চাইবে তাই হবে,, আমি কারো সাথে কথা বলবো না,, কেউ আমাকে দেখতে আসবে না, কেউ আমাকে কল দিবে না,,এবার তো তোমার শান্তি।

কথাগুলো বলেই আমি শুয়ে পড়লাম। মেঘকে কিছুই বলার সুযোগ দিলাম না। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। ঠিক যেমন এখন মনে হচ্ছে। মেঘ কি আমার উপর একটুও বিশ্বাস রাখতে পারে না।

এভাবে ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা দিয়েই চলছিলো আমাদের জীবন। দেখতে দেখতে দু মাস কেটে গেলো।।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here