#সাইকো_বর
#writer_Tabassum_Tajnim
#part_16
বাবা মা কে রাজি করাতে পারলেও মেঘকে রাজি করাতে পারবো না,, এটা আমার পক্ষে পসিবল না। আমি বৃষ্টির দিকে অসহায়ের মতো তাকালাম,, বৃষ্টি ও আমার দিকে আমার চেয়ে বেশি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না।
বৃষ্টি— ভাবি প্লিজ,, তুমিই পারবে সবাইকে রাজি করাতে,,, ভাবি,, প্লিজ প্লিজ,, প্লিজ।
অথৈ—বৃষ্টি, তুমি তো সবাইকে চিনো?? জানো?? ওরা কি মেনে নিবে???
বৃষ্টি— ভাবি,, তুমি বললে আম্মু আব্বু মেনে নিবে। আর ভাইয়াকে তো তুমি খুব সহজেই রাজি করাতে পারবে। প্লিজ,, প্লিজ,, আমার সুইট,, কিউট ভাবি,,,,, প্লিজ,,
হুহ,, তোমার ভাইয়াকে তো তুমি চিনো না। ছেলের নাম শুনেই আমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে। আমি যে কোন কুক্ষনে এই কাজ করতে গেছিলাম আল্লাহয় জানে। সুখে থাকতে ভূলে কিলায় আর কি।
অথৈ— বৃষ্টি,, এতো তারাতারি এতো বড় সিদ্ধান্ত না নিলেই পারতে,,। এখন সবাইকে বুঝাবো কিভাবে??
বৃষ্টি— ভাবি,, আমি কিছু জানি না,, আমি তো তোমার ভরসাতেই পা বাড়িয়েছি। তখন তো তুমিই বলেছিলে তুমি আমাদের পাশে থাকবে। প্লিজ ভাবি,,, প্লিজ,, এমন করো না,,, তাহলে আমাদের পালিয়ে বিয়ে করতে হবে।
বলে কি এই মেয়ে,, পালিয়ে বিয়ে করবে মানে!!! তাহলে তো আরোও ঝামেলা। এখন কি করবো,,,
অথৈ— আরে না,,, এই সব কি বলছো,, আমি সবাইকে বলবো,, কিন্তু আমাকে একটু সময় দাও,, পরিস্থিতি বুঝে তারপর তো বলতে হবে।
বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,
বৃষ্টি— আমার সুইট ভাবি,, আমি জানতাম তুমি না করবে না।
হুহ্,,, থাক আর পাম দিতে হবে না। আমাকে ঝামেলায় ফেলে আবার আমার প্রসংশা করা হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না,, মা বাবা এই কথাটা শুনার পর কিভাবে রিয়েক্ট করবে,, বুঝতে পারছি না,, কিন্তু মেঘ যে কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি।
আমি ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে এসে সোফায় বসে পড়লাম। কিছুই মাথায় ঢুকছে না,, কিভাবে কি করবো।
মেঘ— কি হলো,, কি ভাবছো??
অথৈ— হুম,,
কথাটা বলেই আমি ওর দিকে তাকালাম,,সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে। আল্লাহ আমি তো ওকে দেখিই নি এতক্ষণ,,
অথৈ— একি,, তুমি??
মেঘ— কি হলো,, আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলে কেনো??
অথৈ— ক,,কই, নাতো।
মেঘ— ওহ,,, তো কি ভাবছো??
অথৈ— কই,, কিছু ভাবছি না তো,
কথাটা বলেই উঠে চলে যাচ্ছিলাম। মেঘ আমাকে টান দিয়ে বসিয়ে নিজের সাথে চেঁপে ধরলো। আমার এলোমেলো চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিলো।
মেঘ— আমার কাছ থেকে কেনো কিছুই লুকাতে পারবে না,, বলো কি ভাবছো??
একবার ভাবলাম বলেই দেই। আবার ভাবলাম না এখন বলা ঠিক হবে না৷ আগে মা বাবাকে রাজি করাই তারপর তোমাকে বলবো।
অথৈ— কিছু ভাবছি না তো।
মেঘ— তাহলে তখন কেনো বললে??
অথৈ— এমনি এমনি বলছিলাম আরকি।
একটা হাসি দিয়ে বললাম।এবার ওর কাছ থেকে যেতে হবে।
অথৈ— তাহলে এখন আমি যায়,,,ছাড়ো,,
মেঘ ছেড়ে দিলো আমাকে। আমিও উঠে পড়লাম। ও ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। কি ব্যাপার এই টাইমে তো ও অফিসে যায়। আজ কি ও অফিসে যাবে না।
অথৈ— কি ব্যাপার,, তুমি অফিস যাবে না??
মেঘ— না,, আজকে যাবো না।।
ল্যাপটপ থেকে মাথা না তুলেই বললো।
তারমানে আজকে সারাদিন বাড়িতে থাকবে। আমি শান্তিতে একটু চিন্তা ভাবনাও করতে পারবো না। এখন আর এইখানে থেকে কোনো কাজ নেই। দেখি গিয়ে আমার শাশুড়ি কি করছে।
নিচে নেমে দেখি বৃষ্টি খাবার টেবিলে বসে গেছে।
আর রাক্ষসের মতো খাচ্ছে।
অথৈ— বাহ্, আজকে আমাদেরকে ছাড়াই বসে পড়লে,
হেসে বললাম।
বৃষ্টি— না,, তোমাদের ডাকতে যাবো পরে যদি তোমাদের রোমান্সে বাধা পরে। তাই আর ডাকতে যায় নি। রোমান্স খেয়ে পেট ভরলে এমনিই খেতে আসবা।
কথাটা বলেই বৃষ্টি হেসে দিলো। আমিও হাসলাম,, মেঘের বাচ্চা মেঘ তোর কারনে আজকে এমন কথা শুনতে হচ্ছে, বিড়বিড় করে বললাম।
এই সারাদিন কি তুমি আমাকে বকতে বকতে কাটাও???
কানে কানে বললো।। পিছন ঘুরতেই দেখি মেঘ দাড়িয়ে আছে। উফফ আমি আস্তে কথা বললেও সবাই শুনে ফেলে।সবাই না শুধু মেঘ শুনে ফেলে। আমি কিছু না বলে খেতে বসে পড়লাম। কিন্তু কয়েক লোকমা খেতেই মনে হলো সব এখুনি বেরিয়ে আসবে। মুখ চেপে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।
উফফ,,,বমি করতে করতে আমার অবস্থা একেবারে নাজেহাল। আমি নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। এখন একটু ভালো লাগছে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। হঠাৎ করে চোখ মেলে দেখি মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, আমি ওকে ইশারা করে বললাম কি হয়েছে। তারপর উঠে বসলাম
মেঘ— তুমি ঐ ভাবে দৌড়ে চলে আসলে কেনো??
অথৈ— আরে,, কয়েক লোকমা মুখে দিতেই,, বমি আসছিলো,, তাই দৌড়ে চলে আসলাম।
মেঘ— হঠাৎ বমি!!! কেনো??
অথৈ— আমি জানবো কি করে,, হয়তো এমনি।
মেঘ– না,,, চলো ডাক্তারের কাছে যাবো।একবার চেকআপ করিয়ে নেই।
অথৈ— আরে না,,, আমি ঠিক আছি। এই ছোটো বিষয় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
মেঘ— ঠিক বলছো তো,,,
অথৈ— হুম।
মেঘ—তাহলে তো হলোই,,,
মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। আমার গলায় একের পর এক চুমু খাচ্ছে।
অথৈ— আরে,, ছাড়ো,,
মেঘ আমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরলো।।
মেঘ— চুপপপ,,,
মেঘ একেরপর এক চুমু খাচ্ছে। আমার শাড়ির আঁচল সরিয়ে,,আমার পেটে চুমু খাচ্ছে।। আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। মেঘ আমার দিকে চোখ লাল করে তাকালো। আমি দরজার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলাম। কেউ দরজা নক করছে।
মেঘ মনে হয় একটু বিরক্তই হলো। আহারে বেচারা,,, একটু কষ্টও পেলাম,, আবার খুশিও হলাম। মেঘ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আমার শাশুড়ি মা দাড়িয়ে আছে। ওনি রুমে ঢুকে আমার কাছে এলেন। মেঘ সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে টিপতে লাগলো।
মা বিছানায় বসে আমাকেও ওনার পাশে বসালেন। আমার মাথায় হাত রেখলেন।
মা— মেঘ,, তুই অথৈ কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি আজকে।
অথৈ— না,,, দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।
মা হাসলেন।
মা— দরকার আছে বলেই তো বলছি।
মেঘ একবার আমাকে দেখলো,,,তারপর
মেঘ— ঠিক আছে।
মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমাকে এখন বৃষ্টির কথাটা বলতে হবে,,তাই মায়ের সাথে আমিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।পিছন থেকে ডাকলাম। ওনি পিছন ঘুরে আমাকে দেখে আবার আমার কাছে আসলেন।
মা— কিছু বলবে,,
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। ওনি আমাকে ওনার রুমে নিয়ে গেলেন৷ তারপর আমি ওনাকে বৃষ্টির সব কথা বললাম। ওনি অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বললেন ওনার কোনো আপত্তি নেই,, তবে বাবার সাথে কথা বলতে হবে। আর মেঘের সাথেও।
উফফফফ,, বাঁচা গেলো। ওনি যখন রাজি হয়েছেন তখন বাবাও রাজি হবে। তাছাড়া রাজি হবে না কেনো,, ছেলে তো অনেক ভালো,, ব্যবসা আছে নিজেদের। কিন্তু মেঘ কি রাজি হবে???
বুঝতে পারছি না,,,কি করে ওকে বলবো। মা ও তো আমার উপরেই দ্বায়িত্ব দিয়ে দিলো। এখন আমাকেই মেঘকে বলতে হবে।
ইসসসস্,,, কিভাবে বলবো।
চলবে,,