সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব -০৩

#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:০৩||

“বিয়ে করেছো একবছর হয়েছে অথচ বউকে এখানে রেখে নিজে এত দূরে পড়ে আছো কেন?বিয়ে কি আমাদের জন্য করেছো নাকি নিজের জন্য করেছো?”

আনোয়ারা বেগমের কথায় ভড়কে গেলো শোভন। উত্তরে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে আনোয়ারা বেগম আবারো বললেন,
“এবার আর তুমি একা ফিরছো না। বড়ো বউকে সঙ্গে নিয়ে তারপর ফিরবে।”

শোভন ঘোর প্রতিবাদ করে বললো,”এটা কিন্তু কথা ছিলো না। আমি কখনোই চাইনি আমার এই অগোছালো জীবনের সঙ্গে কাউকে জড়াতে কিন্তু আপনি আমায় বাধ্য করেছেন বিয়েটা করতে। এখন আবার তাকে সঙ্গে করে নিয়েও যেতে হবে?”

“মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। প্রতিটি মানুষেরই একজন সঙ্গির প্রয়োজন হয়। তুমি মানো বা না মানো তুমি আমার বড়ো ছেলে তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে তাই আমি নিজে বাছাই করে পছন্দসই মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে দিয়েছি। আশা করি স্ত্রীর প্রতি সব দায়িত্ব পালন করবে।”

“আমি কী আমার দায়িত্ব পালন করছি না? প্রতি মাসে মাসেই তো সব খরচ পাঠাই।”

“খরচ পাঠালেই কী স্ত্রীর প্রতি সব দায়িত্ব পালন হয়ে যায়? একটা মেয়ে কখনো খাওয়া পড়ার জন্য বিয়ে করে একটি ছেলের হাত ধরে অচেনা সংসারে একেবারের জন্য চলে আসে না। অতীত ভুলে যেও না। তুমি কিন্তু তোমার বাবার পথই অবলম্বন করছো। বাবার মতো হইও না জীবনে অনেক আফসোস করতে হবে।”

বসা থেকে উঠে ঘর থেকে চলে গেলেন আনোয়ারা বেগম। শোভন বিধ্বস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। আনোয়ারা বেগমের শেষ কথাটুকু এখনো কানে বাজছে, বাবার মতো হইও না জীবনে অনেক আফসোস করতে হবে। শোভন আনমনে বলে উঠলো,”আমি বাবার পথে যাচ্ছি?”

চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলো। বললো,”না আমি ওই লোকটার মতো কক্ষনো হবো না।”

ঘরে শোভনের জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছে জ্যোতি।কিন্তু ঘরে শোভনকে পেলো না। বিছানায় নাস্তা রেখে বের হওয়ার জন্য পেছনে ঘুরতেই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলো। কপাল ঘষে তাকাতেই শোভনকে দেখতে পেলো। শোভন কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। জ্যোতিও আর দাঁড়ালো না চলে গেলো নিচে।

রোজকার মতো আজও বসে বসে রান্নাবান্নার তদারকি করছেন আনোয়ারা বেগম। নিলা এলিনা এবং আনোয়ারা বেগমের জা মাছুমা বেগম দুপুরের রান্নার আয়োজন করছেন। কাজের মধ্যেই আনোয়ারা বেগম বলতে লাগলেন,

“যখন আমি এ বাড়ির বউ হয়ে আসি তখন এই খাঁন বাড়ির সদস্য সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। তারমধ্যে আমার ননদ ছিলেন চারজন। দুদিন পর পরই কেউ না কেউ স্বামী সন্তান নিয়ে চলে আসতো এ বাড়িতে। আমি এ বাড়িতে আসার পর আমার শাশুড়ি রান্নাঘরের ধারের কাছেও ঘেঁষতেন না এমনকি বাড়িতে কোনো কাজের লোকও ছিলো না। একা হাতে সব দিক আমাকে সামলাতে হতো। কাজে ভুল হলে তো এই হল ঘরে বিশাল মিটিং বসতো। তোমাদের মতো মাসে দুবার বাপের বাড়িতে যাওয়া তো দূরে থাক বছরে একটা দিনের জন্যেও যেতে পারতাম না। অসুস্থ হলেও সেবা করার কেউ ছিলো না। অসুখ নিয়েই রোজকার মতো সব কাজ করতে হতো। এখন যেমন বাড়িতে নিয়ম আছে রাতে পুরুষরা ফেরার পর তাদের খাওয়া শেষে হলে বাড়ির বউরা খাবে তখনও সেই নিয়মই ছিলো কিন্তু সন্ধ্যায় তোমাদের মতো আমরা নাস্তা করতে পারতাম না। বিকেল হলেই ক্ষুধা লাগতো তারপরেও সেই রাত সাড়ে নয়টা দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। শাশুড়ির পর আমি হলাম বাড়ির কর্ত্রী। শাশুড়ির করা নিয়ম কিছুই বদলাইনি শুধু তার সঙ্গে কিছু নিয়ম যোগ করে দিয়েছি। সন্ধ্যায় সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করেছি যাতে ক্ষুধা নিবারণ হয়। একজন বউয়ের উপর সব কাজ চাপিয়ে দেইনি বরং সবাইকে তাদের কাজ ভাগ করে দিয়েছি। ঘর দোর পরিষ্কার কাপড় ধোয়ার জন্য মানুষ রেখেছি। কেউ অসুস্থ হলে মায়ের মতো করে তাকে যত্ন করি। তারপরেও তোমাদের মনে এত হিংসা কোত্থেকে উদয় হয়?”

আনোয়ারা বেগমের সম্পূর্ণ কথা মনোযোগ সহকারে সবাই শুনলো। শেষের কথায় নিলা এবং এলিনা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আনোয়ারা বেগম বললেন,”আমার কাছে বাড়ির সব বউ সমান। সবাইকে আমি নিজের মেয়ের চোখেই দেখি। তোমরা এ বাড়িতে আগে এসেছো। আমার বড়ো ছেলেটা বিয়ে করতে চাইছিল না তাই তাকে বিয়ে করাতে একটু দেরি হয়ে গেছে আর বাকি ছেলে দুটো তো সময়ের আগেই বিয়ে করে নিয়েছে। সে যাই হোক, ছেলেটা এতদিন পর ফিরেছে তারপরেও বড়ো বউকে তার স্বামীর কাছে না পাঠিয়ে ঘরের কাজে বসিয়ে রাখবো? তোমরা ওর জায়গায় থাকলে মেনে নিতে?”

নিলা নত দৃষ্টিতে বললো,”আমরা বুঝতে পারিনি।”

“তোমরা অবুঝ নও যে বুঝতে পারবে না। ওইসব জায়ে জায়ে হিংসা শ্বশুর শাশুড়ির প্রতি বিরক্ত খাঁন বাড়িতে চলবে না। এখানে থাকতে হলে সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”

কথাটি ধমকের সুরে বলে উঠে গেলেন আনোয়ারা বেগম। নিলা, এলিনার মুখে লজ্জা এবং অনুতপ্ত এসে ভর করেছে। শাশুড়ির সমস্ত কথাই কর্ণগোচর হয়েছে জ্যোতির। মনে মনে এক প্রশান্তি বিরাজ করছে তার। ভাগ্য করে একজন ভালো মন মানসিকতার শাশুড়ি পেয়েছে সে। শোভন সেই যে ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি একবারও।

রাউফুন খাঁন হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় বসে আছেন। স্ত্রীকে দেখে ইতস্তত করে শুধালেন,”শোভন কী করে?”

আনোয়ারা বেগম উত্তরে বললেন,”তা নিজে গিয়ে দেখে এসো না।”

রাউফুন খাঁনের মুখখানা চুপসে গেলো। খানিকক্ষণ নিরব থেকে আবারো বললেন,”এবার তো নিশ্চয়ই কিছুদিন থাকবে তাই না?”

“কী জানি? কিছু তো বললো না এ ব্যাপারে।”

রাউফুন শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। পূর্বের মতো আবারো চুপচাপ বসে রইলেন।
________

অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে শাফিন। রাউফুন খাঁন এবং আনোয়ারা বেগমের ছোটো ছেলে হচ্ছে শাফিন খাঁন অর্থাৎ এলিনার হাজব্যান্ড। স্বামীকে ফিরতে দেখেই শরবত হাতে ঘরে হাজির হলো এলিনা।তাদের তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে ঈমা বাবাকে দেখে দৌড়ে এলো। শাফিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,”আমার মা টা আজ জেগে আছে দেখছি! তা ব্যাপার কী?”

ঈমা অভিমানী কণ্ঠে অস্পষ্ট শব্দে বললো,”আম্মু মাছ’ছে।”

শাফিন ভ্রু কুঁচকে ফেললো। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”কী ব্যাপার এলিনা? তুমি আমার মেয়েকে মে’রেছো কেন?”

এলিনা শরবতের গ্লাস শাফিনের হাতে দিয়ে বললো,
“মে’রেছি তো সেই দুপুরে। গোসল করতে গিয়ে পানি নিয়ে খেলছিল। পানি নিয়ে খেললে ঠান্ডা লেগে যাবে না বলো তো? তাই মে’রেছি।”

শাফিন এক চুমুকে গ্লাসটির শরবত খেয়ে নিলো। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”এটা তো ঠিক নয় মা। আম্মুর কথা না শুনলে তো মাই’র খেতেই হবে। আম্মু যা বলবে তাই শুনবে ঠিক আছে?”

ঈমা উপর নিচ মাথা নাড়ালো। শাফিন আবারো মুচকি হাসলো।শাফিন এবং এলিনা ছিলো সমবয়সী। এলিনার বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছিল অন্যকোথাও তাই সেদিনই শাফিন-এলিনা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে সবার অমতে বিয়ে করে নেয়। ছেলের এমন একটি কাজে রাউফুন খাঁন ছেলে এবং ছেলের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ছেলেকে করতে চেয়েছিলেন ত্যাজ্য পুত্র কিন্তু আনোয়ারা বেগম তৎক্ষণাৎ ছেলের পাশে দাঁড়ান। স্বামীকে বুঝিয়ে তাদের ঘরে তুলেন। একটা সময় এলিনার পরিবারও তাদের বিয়েটা মেনে নেয়।

একমাত্র শোভনের পছন্দ কিংবা ভালোবাসার কোনো মানুষ ছিলো না। লেখাপড়ার কারণে সেই ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে দূরে থেকেছে শোভন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে ওখানেই একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়।আনোয়ারা বেগম বারবার বিয়ের কথা বলার পরেও তার এক উত্তরই ছিলো,”আমি এখন বিয়ে করছি না। তাই এ ব্যাপারে আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।”

কারো জন্যই কারো জীবন থেমে থাকে না। শেষে বাধ্য হয়ে আনোয়ারা বেগমের নির্দেশে আবেদা বেগম নিজের ছেলে ইমরানের বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেন। নিলাকে ইমরান আগে থেকেই পছন্দ করতো। মায়ের কাছে নিজের পছন্দের কথা বলতেই আবেদা বেগম নিলাকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেন। একসময় বাড়িতে আসাও বন্ধ করে দেয় শোভন। এদিকে বড়ো ছেলের চিন্তায় রাউফুন খাঁন এবং আনোয়ারা বেগমের চিন্তার শেষ নেই। ছেলের মতের কোনো তোয়াক্কা না করেই ঘটকের সাহায্যে পাত্রী দেখতে বেরিয়ে পড়েন। অবশেষে জ্যোতিকে পছন্দ হয় উনার। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নানান অজুহাত দেখিয়ে শোভনকে ডেকে আনেন বাড়িতে।এ নিয়ে অবশ্য শোভন রাগারাগীও করেছিল কিন্তু পরিশেষে বাধ্য হয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে।

সন্ধ্যার নাস্তা জ্যোতির হাতে দিয়ে আনোয়ারা বেগম বললেন,”নিজের সব জামা কাপড় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে রেখো।”

জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,”কেন মা?”

“তোমার একরোখা জেদি স্বামীর তো আবার মিনিটে মিনিটে ইচ্ছে বদলায়। কখন আবার এসে বলবে আজই ফিরে যাবো তখন তো আর সব গোছগাছ করা সম্ভব হবে না।”

“কিন্তু মা আমি কেন ব্যাগ গুছাবো?”

“কারণ তুমিও শোভনের সঙ্গে ওখানে যাচ্ছো।”

চমকে গেলো জ্যোতি। বললো,”আমিই!”

আনোয়ারা বেগম উত্তরে বললেন,”হ্যাঁ।নিজের স্বামী সংসার এখনি বুঝে নেওয়ার সময়। দুজনে দুই প্রান্তে পড়ে থাকলে আর যাই হোক সংসার হয় না। নিজের ওই ছোট্ট সংসারটা নিজ হাতে সাজিয়ে নিও। কোনো সমস্যা হলে আমি তো আছিই। আমাকে বলবে আমি সব সমস্যার সমাধান করে দিবো।এখন যাও গুছিয়ে নাও সব।”

জ্যোতি সেখান থেকে প্রস্থান করল। মনে মনে বললো,”আমি ঠিক শুনেছি তো? আমি উনার সঙ্গে যাবো?”

আজ অনেকদিন পর মনের ভেতরে আনন্দ এবং ভালোলাগা কাজ করছে তার। হুট করেই একটি প্রশ্ন এলো মাথায়,”গতকাল ফেরার পর থেকেই সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। আচ্ছা ভাবী কী সত্যি সত্যি ভাইয়াকে বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে? এই জন্যই কী মা উনাকে ডেকে এনেছেন?”

ভাবতে ভাবতেই ঘরে চলে এলো জ্যোতি। বিছানায় খাবারের ট্রে রাখলো। শোভন খাচ্ছে আর মোবাইল টিপছে। জ্যোতি ইতস্তত করে বললো,”আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন? ভাবীর সঙ্গে কথা বলতাম।”

শোভনের কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়ল। প্রশ্ন করল”তোমার মোবাইল কোথায়?”

“আছে কিন্তু রিচার্জ করা নেই।”

“ওহ।” জ্যোতির দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলো শোভন। জ্যোতি মোবাইল নিয়ে ব্যালকনিতে চলে এলো। নাম্বার মুখস্থ ছিলো বিদায় কল দিলো সম্পার নাম্বারে। একবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। অপরপাশ থেকে সম্পা প্রশ্ন করল,”হ্যালো কে বলছেন?”

“ভাবী আমি জ্যোতি বলছি।”

সম্পার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।প্রশ্ন করল,”এটা আবার কার নাম্বার?”

“তোমাদের জামাইয়ের।”

“সে ফিরলো কবে?”

“গতকাল।”

“ওহ।”

“আচ্ছা ভাবী তুমি কী ভাইয়াকে কিছু বলেছিলে?”

“কী বলবো?”

“উনার সঙ্গে আমার যাওয়ার ব্যাপারে?”

“তুই না বলতে নিষেধ করলি তাই আর বলিনি।”

“ওহ।” আরো কিছুক্ষণ দুজনে কথা বললো। জ্যোতি নিজেই কল কেটে দিয়ে ঘরে এসে শোভনের দিকে মোবাইলটি এগিয়ে দিলো।শোভনের নাস্তা করা শেষ। মুখে চিন্তার ছাপ। বসা থেকে উঠে ঘরের বাহিরে চলে গেলো। জ্যোতি নিজেও নাস্তা করে নিলো তারপর শাশুড়ির নির্দেশ মতো নিজের কাপড় এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গোছাতে লাগলো।

আবেদা বেগমের মা এসেছেন বাড়িতে। বয়স উনার বায়াত্তর ছুঁইছুঁই। আবেদা বেগমের স্বামী রেজাউল খাঁন নিজে গিয়ে শাশুড়িকে নিয়ে এসেছেন।বিলকিস খাতুন বসে আছেন সোফায়। বাড়ির বউ ঝিরা উনাকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মুহূর্তেই।

আনোয়ারা বেগম এসে বসলেন পাশে।শুধালেন,”তা মাওই কেমন আছেন?”

বিলকিস খাতুনের নিচের কপাটির দুটো দাঁত পড়ে গেছে। বয়সের ভারে চামড়া কুঁচকে গেছে। মাথায় হাতে গোনা কয়েকটি চুল বাদে বাকিসব চুল সাদা রঙ ধারণ করেছে। আনোয়ারা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে হেসে বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালো। তা তোমরা কেমন আছো?”

“আমরাও বেশ ভালো।”

অন্ধকার ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে শোভন। কাউকে বারবার ফোন করছে। মুখে বিরক্তি নিয়ে ফোন দিয়েই যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ বাদে কল রিসিভ হলো। শোভন রাগ নিয়ে চাপা স্বরে বললো,”কল ধরতে এতক্ষণ লাগে?”

অপরপাশ থেকে উত্তর এলো,”রাগ করিস না মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো আমিও অফিসে ছিলাম। কাজের সময় ফোন ধরলে বস কেমন করে জানিস তো।”

“আচ্ছা শোন। আমার জন্য একটা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবি?”

“হঠাৎ ফ্ল্যাট দিয়ে কী করবি?”

“ফ্ল্যাটে মানুষ কী করে? থাকব।”

“তোকে তো অফিস থেকে থাকার জন্যই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।”

“ওখানে আর থাকব না। আমি একা নই আমার ওয়াইফও আমার সঙ্গে ফিরবে। এখন থেকে আমার সঙ্গেই থাকবে। তাই আর্জেন্ট তুই ভালো দেখে অফিস থেকে বাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের সুবিধা দেখে ফ্ল্যাট ভাড়া কর। আমি এসে টাকা দিয়ে দিবো।”

“এ তো ভালো খবর। টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। তুই শুধু ভেবে নে কাজটি কমপ্লিট।”

এবার যেনো শোভন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কাজ শেষ করে হইচইয়ের শব্দে নিচে নেমে এলো জ্যোতি। বিলকিস খাতুনকে দেখে এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। জ্যোতি বিলকিস খাতুনকে প্রথম এবং শেষ যেদিন দেখেছিল সেদিন খাঁন বাড়িতেও নতুন বউ হিসেবে ছিলো তার প্রথম দিন। জ্যোতিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেন বিলকিস খাতুন। বললেন,”ও শোভনের বউ না?”

আবেদা বেগম বললেন,”হ্যাঁ মা। এত তাড়াতাড়ি মুখ ভুলে গেলে?”

“মুখ ভুলবো কেন? আগের থেকে চেহারার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। তার উপর সেই যে বিয়ের সময় দেখেছিলাম এর মাঝে তো আর দেখাই হয়নি। তা নাতি বউ কেমন আছো?”

জ্যোতি হেসে উত্তর দিলো,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”

কথাটির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না বিলকিস খাতুন। কপাল কুঁচকে সবার মধ্যেই উটকো একটি কথা বলে ফেললেন।

চলবে ______

(কার্টেসি ছাড়া কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here