সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১৯

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে মাই লাভলি সুঁই,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”

ছোট একটা রেকর্ডার কায়াসার হাতে।সে বারবার রেকর্ডারটা প্লে করছে আর এইটা শুনছে।এই রেকর্ডারটা বক্সেই ছিল।কায়াসা রেকর্ডারটা মধ্যে থাকা শব্দ শুনে বোঝার চেষ্টা করছে আদৌও কি এটা তার পরিচিত কেউ কিনা।কিন্তু অনেকবার শোনার পরেও কায়াসার বুঝতে পারেনা এটা আসলে কে।

রেকর্ডারটা সাইডে রেখে কায়াসা আবারো বক্সের ভেতরে হাত দেয়।এবার কায়াসা একটা চিঠি পাই।চিঠিটা খুলে কায়াসা পড়তে শুরু করে।

শুভ জন্মদিন প্রিয় সুঁই।আমি আল্লাহর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ কারণ উনি তোমাকে যত্ন করে তৈরি করে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আর তোমার ভাগ্যে আমাকে রেখেছেন।

পুতুলটা দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলে না?আমি জানতাম তুমি অবাক হবে।খুব পছন্দ না তোমার কাছে থাকা পুতুলটা?জানো প্রথমে তো আমার পুতুলটার উপর খুব রাগ হয়েছি,ইচ্ছে করছিল ওটাকে ছিঁড়ে ফেলি।কেন তুমি আমার থেকে ওকে বেশি ভালোবাসবে?কিন্তু পরে তোমার কথা ভেবে ওটাকে আর কিছু করলাম না।কারণ আমি যদি ওটাকে নষ্ট করে ফেলতাম তাহলে তুমি খুব কষ্ট পেতে আর আমি চাইনা যে তুমি কষ্ট পাও।তাই তো সেইম দেখতে আরেকটা পুতুল তোমাকে উপহার দিলাম।এবার তো তুমি আরো বেশি খুশি তাইনা?

চকলেট খুব পছন্দ নাকি তোমার?আমি তো জানতাম তুমি মাঝেমধ্যে ছাড়া তেমন একটা চকলেট খাওনা তাহলে অন্যের দেওয়া চকলেট কেন নিলে?বক্সে দেখো তোমার পছন্দের চকলেটসহ আরো চকলেট আছে।চকলেট খেতে ইচ্ছে করলে এগুলো খাবে,অন্যজনেরটা খাবেনা।এটা আমি মোটেও পছন্দ করিনা।

ভালো থেকো আর সুস্থ থেকে।নিজের যত্ন নিও আর মন দিয়ে পড়াশোনা করো।আমি কে তা নিয়ে এতো চিন্তা করোনা।সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলে দেবো।

ইতি
সুঁইয়ের সুতো

কায়াসা কাজটা ভাঁজ করে সাইডে রেখে দেয়।তারপর বক্সের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখে একটা বড় বক্স।বক্সটা বের করে দেখে আসলেই তাতে অনেক রকম চকলেট আছে।কায়াসা চকলেটর বক্সটা খুলে চকলেটগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে।

ফোন বাজছে কায়াসা।কায়াসা বক্সটা সাইডে রেখে চার্জ থেকে ফোনটা খুলে নেয়।

” হ্যালো আব্বু,কেমন আছো?”

” আলহামদুলিল্লাহ মা,তুমি কেমন আছো?”

” আলহামদুলিল্লাহ আব্বু।”

” শুভ জন্মদিন আমার ছোট মামুণি।”

” তোমার মনে আছো আব্বু?”

” আমি কি করে ভুলে যাবো যে আজ আমার ছোট নিশিটার জন্মদিন।”

” ধন্যবাদ আব্বু।তোমার শরীর কেমন আছে?”

” এই আছে বেশ।তোমার কি ওখানে একা থাকতে কষ্ট হচ্ছে?কষ্ট হলে এখানে চলে এসো।এখানেও তো অনেক ভালো ভালো মেডিকেল কলেজ আছে।”

” না আব্বু আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।আমি এখানে বেশ ভালো আছি।”

” আচ্ছা এই নাও তোমার ফুফু বলে তোমার সাথে কথা বলবে।ওর সাথে একটু কথা বলোতো।”

” ফুফুমণি কি তোমার সাথে আছে এখন?”

” হ্যাঁ।সে তো প্রতিদিন আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য আসে।”

” আচ্ছা দাও ফুফুকে।”

” কিরে মা আমাকে ভুলে গেলি বুঝি?কতদিন হলো তোর সাথে কথা হয়না।”

” আরে ফুফু কি যে বলো।তোমাকে কি আমি ভুলতে পারি।আমার মায়ের অভাবটাতো তুমিই পূরণ করেছো।তুমি যদি না থাকতে তাহলে হয়তো আমি আজ এতোদূর আসতে পারতাম না।আমাকে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে তো তুমিই বড় করেছো।তাহলে তোমাকে আমি কি করে ভুলে যায় বলো।”

” আরে আমার পিচ্চি মা টাতো দেখি আবেশি হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা এবার বল কেমন আছিস তুই?”

” আমি তো খুবই ভালো আছি ফুফুমণি।তুমি কেমন আছো গো?শরীর ঠিক আছে তোমার?”

” হ্যাঁরে আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।শুভ জন্মদিন পিচ্চি মা।”

” ও ফুফুমণি,থ্যাংক ইউ।”

” তুই কবে আবার এখানে আসবি?তোকে খুব মিস করি আমরা।”

” জানিনা ফুফু।তবে কলেজ থেকে যখন অনেকদিনের ছুটি পাবো তখন নিশ্চয়ই আসবো।”

” আচ্ছা তাহলে ভালো থাকিস।নিজের যত্ন নিস আর সময় মতো খাবার খেয়ে নিবি।কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের ফোন করে জানাবি।”

” আচ্ছা ফুফুজি।আর তুমিই নিজের আর আব্বুর খেয়াল রেখো।”

ফোন কেটে দিয়ে কায়াসা টেবিলে রাখার জিনিসগুলোর দিকে তাকাই।সে পুতুলটাসহ সব জিনিস আবারো বক্সে ভরে রাখে কিন্তু চকলেটের বক্সটা ফ্রিজে রেখে দেয়।বক্সটাকে কায়াসা নিজের রুমের এককোণাতে রেখে দেয়।ফ্রিজে চকলেট রাখার কিছুক্ষণ পর ফ্রিজ খুলে কায়াসা বক্সটা থেকে একটা চকলেট মুখে দিয়ে কাজ করতে থাকে।

এদিকে,

আজো টিভির স্ক্রিনের কায়াসাকে দেখছিল এশান।কায়াসাকে তার দেওয়া চকলেট খেতে দেখে এশান খুব খুশি হয়।সে ভেবেছিল কায়াসা হয়তো চকলেটগুলো ফেলে দেবে কিন্তু যখন কায়াসা সেগুলো ফেলে না দিয়ে রেখে দিয়েছে এটা দেখে এশানের মনে একটা শান্তি কাজ করে।

অন্যদিকে কায়াসা ভাবছে সে কেন চকলেটগুলো ফেলে দিলোনা।আসলে বক্সে অনেক চকলেট ছিল আর কায়াসা চাইনা কোন ধরনের খাবার অপচয় করতে,হোক সেটা চকলেট।সে চাইলেই এগুলো কোন বাচ্চাকে দিয়ে দিতে পারতো কিন্তু সে সেটাও করেনি।কারণ তার মনে একটা ভয় আছে যে যদি চকলেটগুলোতে কিছু মেশানো থাকে তো তার জন্য আরেকজনের ক্ষতি হতে পারে।তাই সবদিকে বিবেচনা করে কায়াসা চকলেট গুলো নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

এক সপ্তাহ পর,

” ইতু তুই ওকে প্লিজ বোঝা না।” আরোহী ইতিকে বলে।

” কি বোঝাবো আমি?তুই তো জানিস এখন ও কেমন।বুঝিয়ে কি হবে?” ইতি বলে।

” কায়ু প্লিজ তুই রাজি হয়ে যা।দেখ এটা তোদের সাথে আমার প্রথম জন্মদিন।আমি আমার জন্মদিনে তোদের দুজনের সাথেও সময় কাটাতে চায়।আর দেখ ইতুও তো আসছে তাহলে তোর আসতে অসুবিধা কোথায়?”

” দেখ আরু প্রথমত আমার এসব ফাংশন ভালো লাগেনা।তারউপর তুই পার্টির আয়োজন করেছিস রেস্টুরেন্টে তাও রাতে।আমার টিউশনি করে তারপর পার্টিতে যাওয়ার ইর্নাজি বা মুড কোনটাই থাকবেনা।তার থেকে বরং ইতি যাচ্ছে,ওই যাক।”

” আমি যখন বলেছি তুই আসবি মানে আসবি।তুই না আসলে আমি পার্টিই ক্যানসেল করে দেবো।” রেগে বলে আরোহী।তারপর সে ব্যাগটা নিয়ে ধুপধাপ পায়ে ক্লাসে চলে যায়।কায়াসা অসহায় দৃষ্টিতে আরোহীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।সে এতোদিনে বুঝতে পেরে গিয়েছে আরোহী যা বলে তাই করে অনেকটা জেদি টাইপের একটা মেয়ে সে।

” দেখলি তো মেয়েটা এখন রেগে গেলো।কেন শুধু শুধু ওকে রাগী দিলি বলতো?”

” ইতু তুই আমাকে ভালো করেই চিনিস আমি কিরকম।আমার এসব ভালো লাগেনা।বেশি লোকজন থাকলে আমার অস্বস্তি লাগে তা তো জানিস তুই।”

” হ্যাঁ আমি তোর সমস্যাটাও বুঝতে পারছি।কিন্তু একদিনেরই তো ব্যপার।তুই বেশিক্ষণ ৫/১০ মিনিট থাকলেই তো হতো।”

” তোর কি মনে হয় আরু আমাকে গেলে আর ছাড়বে?আর তাছাড়াও আমার মন কেন যেন কু ডাকছে।মন মানছেনা আরোহীর জন্মদিনের পার্টিতে যাওয়ার জন্য।মনে হচ্ছে ওখানে গেলে খারাপ কিছু হবে।”

” কি বলছিস তুই এগুলো?কিছু হবেনা।আমরা আমরাই তো।বেশি থেকে বেশি হলে ওর কাজিনরা আসবে।তুই ভেবে দেখ।”

” হুম চল এবার ক্লাসে।দেখে মহারাণী কতটা রাগ করলো।”

” তুই যা আমি খাবারের টাকাটা দিয়ে আসছি।”

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কায়াসা চিন্তা করতে থাকে যে সে এখন কি সিদ্ধান্ত নেবে।তার কি যাওয়াটা উচিত হবে?কিন্তু তার মন যে মানছেনা,তার মনে বারবার খারাপ চিন্তা আসছে।

” এইযে মিস ইডিয়েট?ধ্যান কোথায় তোমার?”

কায়াসা উপরে তাকিয়ে দেখে তার থেকে কয়েক সিঁড়ি উপরে আদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে।হাতে তার কয়েকটা বই আর খাতা।

” সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মন অন্যকোথাও থাকলে তো পড়ে যাবে।তখন হাত-পা ভাঙলে তো কতৃপক্ষের দোষ হবে।”

” হুম।”

” পরের থেকে খেয়াল রাখবে।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় অন্যমন্সক থাকলে যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”

” হুম।ধন্যবাদ স্যার।”

কায়াসা আদ্রিকের পাশ কাটিয়ে উপরে উঠতে থাকে।কয়েক সিঁড়ি উপরে উঠে কায়াসা দেখে জেমি তার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কায়াসা তার দিকে মনোভাব না দিয়ে নিজের ক্লাসে দিকে যেতে থাকে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here