#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কায়াসা বাড়ি এসে পৌঁছেছে সবে মাত্র ১৫/১৬ মিনিট হলো।কায়াসা ড্রেস করে এসে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে দিকে যেতে নেয় রাতের খাবার রান্নার করার জন্য,এরপর আবার তাকে পড়তেও বসতে হবে।মাত্রই চাল ধুয়ে পাত্রে ঢেলেছে কায়াসা এরই মধ্যে কায়াসার ফ্ল্যাটের বেল বেজে উঠে।কায়াসা ভাতের পাত্রটা চুলোর উপর দিকে দরজা খুলে যায়।
” আপনি?”
” অবাক হলে বুঝি?” বিপরীতে আদ্রিক বলে।
” আপনি হঠাৎ এখানে?”
” বাইরে দাঁড় করিয়ে সব প্রশ্ন করবে নাকি ভিতরেও আসতে দেবে?”
কায়াসা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।আদ্রিক ভেতরে এসে সোফায় বসে পড়ে।
” কেমন আছো?”
” হুম ভালো।”
” শরীর ঠিক আছে এখন?”
” হুম।”
” এদিকে এসো তোমার নার্ভটা একটু চেক করি।তোমার কথায় আমার মোটেও বিশ্বাস নেই।কাল যা দেখিছি বাবা।”
” কাল দেখেছেন মানে?”
” মানে কাল তো ড্রিংক করে বেহুশ হয়ে পড়েছিলে।
” আমি কোন ড্রিংক করিনি,ওটা জাস্ট এমনিতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।আর আপনি কি করে জানলেন আমি কাল বেহুশ হয়েছিলাম?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে কায়াসা।
” কারণ তোমার চেকাপ আমিই করেছি।আর ডাক্তার হয়ে রোগীর অবস্থা জানবোনা এটা তো হয়না।”
” আপনি চেকাপ করেছেন মানে?”
” মানে বলছি শোন।”
ফ্ল্যাশবেক,(আদ্রিকের দৃষ্টি অনুসারে)
সবেমাত্র কয়েক মিনিট হলো আদ্রিক হসপিটাল থেকে ফিরে।সারাদিন ক্লাস,হসপিটাল,অপারেশন সব মিলে আদ্রিকের শরীর প্রচুর ক্লান্ত।ড্রেস চেঞ্জ না করেই বিছানায় শুয়ে পড়ে আদ্রিক কিন্তু তার বিশ্রামের বেঘাত ঘটাতে তার ফোনটা বেজে উঠলো।আদ্রিক একটা ক্লান্তি ভরা নিশ্বাস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
” হ্যালো।কে বলছেন?”
” স্যার আমি ইতি।কায়াসার বান্ধবী।”
” হ্যাঁ ইতি বলো।এতো রাতে ফোন দিলে?কোন দরকার?”
” স্যার আপনি এখন কোথায়?”
” বাসায়।কিন্তু কেন?”
” স্যার আপনি প্লিজ একটু কায়াসার বাসায় আস্তে পারবেন।আপনাকে এখন খুব দরকার।প্লিজ স্যার না করবেন না।এই মহূর্তে আমার শুধু আপনার কথায় মনে পড়লো।আমি এই মহূর্তে কাউকে বিশ্বাস করে ঘরে ডাকতে পারবোনা।এই কয়েকদিনে আমি কিছুটা হলে বুঝতে পেরেছি আপনি কেমন মানুষ আর সেই সাথে আপনি কায়াসারও পরিচিত।আপনাকে খুব দরকার স্যার,প্লিজ আপনি এখুনি কায়াসার বাড়িতে চলে আসুন।”
ইতির কথা শুনে আদ্রিক বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা হয়েছে।সে আসছি বলে ফোনটা কেটে দেয় আর গাড়ির চাবি নিয়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে।
চিন্তিত অবস্থায় কায়াসার পাশে বসে আছে ইতি।বেলের শব্দ পেয়ে ইতি দৌড়ে দরজা খুলে দেয়।দরজা খোলার সাথে সাথে আদ্রিক প্রশ্ন করে,” কি হয়েছে?”
” ভেতরে আসুন স্যার বলছি আপনাকে।”
ইতি আদ্রিককে কায়াসার রুমে নিয়ে যায়।কায়াসাকে শুয়ে থাকতে দেখে আদ্রিক ভ্রু-কুচকে ইতির দিকে তাকাই।
” কি হয়েছে ওর?ঘুমিয়ে আছে নাকি?নাকি জ্বর হয়েছে?”
” না স্যার ও ঘুমিয়ে নেই আর না ওর জ্বর।ও অজ্ঞান হয়ে আছে।”
” অজ্ঞান হয়ে আছে মানে?কিভাবে?”
” জানিনা।আমি ওকে পার্টিতে এভাবেই অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি।অনেক চেষ্টা করেছি জ্ঞান ফেরানোর কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও ওর জ্ঞান ফিরছেনা দেখে আপনাকে ফোন করলাম।”
আদ্রিক কায়াসার পাশে বসে তাকে চেক করে।তারপর ইতিকে বলে,
” নিশ্চয়ই ও হাই পাওয়ারি কোন ঔষধ খেয়েছে বা নেশার কোন কিছু খেয়েছে।এভাবে ওর জ্ঞান ফিরে আসবেনা।ওকে একটা ইনজেকশন দিতে হবে।”
” আপনি নামটা বলুন আমি নিয়ে আসছি।”
” না এতো রাতে তোমার বাইরে যাওয়ার দরজার নেই।আমিই নিয়ে আসছি,তুমি বরং ওর পাশে বসো।”
ইতিও আর কোন কথা বাড়াই না।কারণ আসলেই এতো রাতে তার বাইরে যাওয়া ঠিক হবেনা।আদ্রিক ওষুধ আনতে চলে যায়।এই ফাঁকে ইতি তার মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আজ সে বাড়িতে আসবেনা,সে কায়াসার বাড়িতে থাকবে।সেহেতু ইতির মা আগে থেকেই কায়াসাকে চিনতো তাই তিনি মানা করলেন না।এরিই মধ্যে আদ্রিক ওষুধ নিয়ে আসে।সিরিনজের মধ্যে ওষুধ নিয়ে কায়াসাকে ইনজেক করে দেয় আদ্রিক।
” সকালে জ্ঞান চলে আসবে।আর না আসলে আমাকে ফোন করে জানাবে।আমি আসছি এখন।ওর খেয়াল রাখবে আর তুমিও সাবধানে থাকবে।এখন ও ঠিক আছে তাই ওর জন্য বেশি চিন্তা করতে হবেনা।কিছু খেয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ো।আর দরজা জানলাম চেক করে শুতে যাবে।”
ইতি আদ্রিকের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়,আদ্রিক চলে যায়।আদ্রিক যাওয়ার পর ইতি কিছু খায়না,সে চুপচাপ কায়াসার পাশে শুয়ে পড়ে।
ফ্ল্যাশবেক এন্ড,
” হুম তোমাকে চেক করা শেষ।এখন সব নরমাল আছে তবে নিজের খেয়াল রাখবে।”
আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা ধ্যান ভাঙে।আদ্রিক যে কখন কথা বলতে বলতে ওকে চেক করে ফেলেছে সেটা কায়াসা বুঝতেও পারেনি।
” এই নাও,ব্যাগটা ফ্রিজে রেখে দাও।”
” কি আছে এতে?”
” এখানে কিছু ফল আছে।এরকম দীর্ঘসময় অজ্ঞান থাকা মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।তাই যথাসম্ভব বেশি বেশি খাবার খাবে আর ফল খাবে।পারলে সকালে একটু হাঁটতে বের হবে,এতে শরীর আরো ভালো থাকবে।”
” আচ্ছা।”
” শুধু আচ্ছা বললেই হবেনা।যা বলেছি তা মানতেও হবে।বুঝতে পেরেছো?”
” হুম।”
” আচ্ছা তাহলে আমি আজ আসি।নিজের খেয়াল রেখো,কোন ধরনের সমস্যা হলে বা শরীর খারাপ লাগছে আমাকে ফোন দেবে।আমি যথাসম্ভব আসার চেষ্টা করবো।”
কায়াসা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।আদ্রিক চলে যায় আর কায়াসা ফলগুলো ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়।ফ্রিজ খুলতে কায়াসার চোখে পড়ে এশানের দেওয়া চকলেটগুলো।চকলেটেন বক্সটা খুলে তার থেকে একটা চকলেট মুখে পুড়ে দিয়ে কাজ করতে থাকে কায়াসা।
রাতে,
আজ রাতেও এশান কায়াসার রুমে এসেছে।সে এসে চুপটি করে কায়াসার পাশে বসে আছে।সে শান্ত দৃষ্টিতে কায়াসার দিকে তাকিয়ে আছে।
” আমাকে ক্ষমা করে দিও সুঁই,আমি তোমাকে এতো বড় একটা বিপদের সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচাতে পারলাম না।পারলাম না আমি তোমাকে পুরোপুরি রক্ষা করতে।কাল যখন তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেছি তখন নিজে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।আমার অসাবধানতার কারণে তোমাকে ওই জানোয়ারের কবলে পড়তে হয়েছিল।কিন্তু তুমি ভেবোনা আমি এই ভুল আর কোনদিন করবোনা।আর ওই জানোয়ারটাকে তো আমি ছাড়বোনা।ওকে এমন ভয়ংকর শাস্তি দেবো যে ও ভাবতেও পারবেনা।” এরপর চুপ হয়ে যায় এশান।তারপর কয়েক মিনিট পর কায়াসার হাত ধরে বলে,
” জানো কায়ুপাখি তোমাকে আমি সুঁই কেন বলি?কারণ সুঁই ছোট হলেও তার কাজ কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ।সে ছিঁড়ে যাওয়া জিনিসকে জোরা লাগাতে সাহায্য করে।আর একটা ছিঁড়ে যাওয়া জিনিসকে জোরা লাগানোর জন্য সুঁইয়ের সাথে সাথে একটা সুতোরও প্রয়োজন।কারণ তারা যে একজন অন্যজনকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।তারা দুজনে মিলে একটা ছিঁড়ে যাওয়া জিনিসকে জোরা লাগায়।সুঁইয়ের মধ্যে সুতো ঢোকানো কিন্তু সহজ কাজ নয়
তার জন্য অনেক ধৈর্য্য প্রয়োজন।তেমনি তোমার মনে জায়গায় করে নেওয়াটাও কিছু সহজ নয়।তার জন্যও ধৈর্য্য এবং ভালোবাসা প্রয়োজন।কিন্তু তুমি তো জানি সুতোকে সুঁইয়ের মধ্যে দেরি করে হলেও একসময় ঢোকানো যায় তেমনি তোমার মনে জায়গায় করে নেওয়াটাও কোন কঠিন কাজ নয়।আমি দেরি করে হলেও তোমার মনে জায়গায় করে নেবো।কথায় আছে না অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়,তেমনি আমি জানি আমি তোমার মনে একবার জায়গায় করে নিলে তুমিও আমাকে মন উজাড় করে ভালোবাসবে।আর সেটাই হবে শুধু একটু সময় প্রয়োজন।” এশার আর কিছু বলে তখন তার ফোন বেজে উঠে।কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে কায়াসা তা শুনতে পাইনা।এশান উঠে বারান্দায় চলে আসে।
” হ্যাঁ কুনাল বলো।”
” স্যার ছেলেটার জ্ঞান ফিরে।অনেক চিৎকার চেচামেচি করছে।”
” তুমি জানোনা চিৎকার করলে কি করতে হবে?” কিছুটা রেগে বলে।
” জ্বি স্যার কিন্তু আপনি রাগ করবেন ভেবে আর মুখ বন্ধ করিনি।”
” ওকে।তুমি এখন ওর মুখ বন্ধ করে দাও।আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”
এশান ফোন কেটে দিয়ে নিঃশব্দে ভেতরে প্রবেশ করে।তারপর আরো কয়েক মিনিট কায়াসার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যেদিক দিয়ে এসে সেদিকেই চলে যায়।
চলবে…….
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কায়াসার বাড়ি থেকে নিজের গোপন জায়গায় এসে পৌঁছালো এশান।এশান এসে জানতে পেরে কুলান তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে।কুলানকে দেখে এশান প্রশ্ন করে,
” কি অবস্থা এখন?”
” বেঁধে রেখেছি স্যার।”
” গুড।তুমি এখানেই থাকো আমি ডাকলে তবেই আসবে।”
” ওকে স্যার।”
এশান ভিতরে ঢুকে যায় তবে ঢুকার আগে নিজের মুখ ঢেকে নেয়।এশানকে দেখে রাতুল ভয় বা রাগে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু মুখ বন্ধ থাকার কারণে তার চিৎকারের শব্দ মুখের মধ্যেই রয়ে গেছে।
” কেমন আছেন মিস্টার রাতুল?আশা করি আমার খাতির যত্ন আপনার পছন্দ হয়েছে।”
রাতুল উঁহু উঁহু করে শব্দ করে যাচ্ছে।রাতুলের অবস্থা দেখে এশান জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।তবে পরক্ষণেই শক্ত মুখভঙ্গিতে রাতুলের দিকে তাকাই।
” আমার কায়ুপাখির দিকে তুই খারাপ নজর দিয়েছিস তাইনা?ওর সম্মান নিজে খেলার চেষ্টা করতে গিয়েছি তাইনা?খুব শখ না মেয়েদের সাথে এসব বাজে কাজ করার।আজ আমি তোর সব শখ পূরণ করে দেবো।এমন ভাবে করবো যেন তুই জীবনেও আর এধরণের কাজের কথা ভাববিনা।স্বপ্নতেও এধরণের কাজ করার আগে একশোবার ভাববি।”
এশান জোরে কুলানের নাম ধরে ডাকে।এশানে শব্দ শুনে কুলান তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে আসে।
” স্যার কিছু লাগবে?”
” যেটা তৈরি করে রাখতে বলেছিলাম ওটা রেখেছো তো?”
” জ্বি স্যার।”
” নিয়ে এসো ওটা।”
কুলান দ্রুতপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর একমিনিটেরও কম সময় নিয়ে সে আবার ফিরে আসে।
” স্যার গ্লাভস।” এশান কুলান থেকে গ্লাভসগুলো নিয়ে পড়ে নেয়।তার কুলানের হাত থেকে গরম লোহার রডটা নিয়ে চোখের ইশারায় কুনালকে বাইরে যেতে বলে।কুনাল একবার রাতুলের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
” এটা কি জানিস?গরম লোহার রড।এটা ভাবিস না এটা গলে যাবে তবে আবার এটাও ভাবিস না এটা ঠান্ডা।এটা গলানোর মতো গরম না হলেও তোর শরীরের চামড়া জ্বলানোর জন্য একদম পারফেক্ট।”
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে এশানে লোহার রডটা দিয়ে রাতুলকে মারতে শুরু করে।একদিকে গরম তারউপর এতো শক্ত একটা জিনিস।দুটো মিলে রাতুলের গায়ের অবস্থা কয়েক মিনিটের মধ্যে বেহাল হয়ে গিয়েছে।মুখ বন্ধ থাকার কারণে সে চিৎকারও করতে পারছেনা।এরই মধ্যে রাতুলের শার্টের কয়েকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।প্রায় আধাঘন্টা মারার পরে এশান থাকে।রাতুল ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।
এশান কিছুক্ষণ চুপ করে একটা চেয়ারে বসে থেকে তারপর উঠে দাঁড়ায়।রুমের এককোণায় থাকা হকি স্টিক নিয়ে রাতুলের সামনে দাঁড়ায় এশান।
” এই পা দুটো দিয়ে তুই আমার কায়ুপাখি কাছে গিয়েছিলিস না?” রাতুলের পায়ে হকি স্টিকটা ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলে এশান।এরপর হুট করেই হকি স্টিক দিয়ে একটা বারি বসিয়ে দেয় রাতুলের বাম পায়ে।ব্যথায় রাতুল কুঁকড়ে উঠে।
” এই পা দুটো দিয়ে তুই আমার কায়ুপাখির দিকে এগিয়েছিলিস না?আজ আমি তোর এই পা দুটোই ভেঙে ফেলবো।” কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এশান হকি স্টিক দিয়ে রাতুলের পায়ে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।ব্যথায় রাতুলের অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম।এবারো অনেকক্ষণ মারার পর এশান থাকে।তবে এতো মারার পরেও তার রাগ এখনো বিন্দু পরিমাণ কমেনি।
” এই হাত দিয়ে তুই আমার কায়ুপাখিকে ওই নেশার ওষধু মেশানো জুসটা দিয়েছিলি না?এই হাত দিয়ে তুই ওকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করেছিলিনা?তাহলে এই হাত দুটো এখনো কি করে ঠিক আছে?কি করে?” শেষ কথাটা বলতে বলতেই এশান রাতুলের হাতে হকিস্টিক দিয়ে মারতে শুরু করে।এবার আর রাতুল সহ্য করতে পারে,সে অজ্ঞান হয়ে যায়।মারতে মারতে অনেক্ষণ পর এশানের খেয়াল হয় রাতুল অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।এটা দিয়ে এশান হকি স্টিকটা নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
” এই চোখ খোল,চোখ খোল।তোকে আমি এতো শান্তিতে মরতে দেবোনা।অজ্ঞান হয়ে কি ভেবেছিস?বেঁচে যাবি?মোটেও না।আমি তো অজ্ঞান অবস্থায় কিছু করবোনা।তুই সজ্ঞানে থাকা অবস্থায় আমি তোকে কষ্ট দেবো।কুনাল…….”
” জ্বি স্যার।”
” তাড়াতাড়ি ওর জ্ঞান ফেরাও।”
এশান বাইরে চলে যায়।কুনাল বোতল থেকে পানি নিয়ে রাতুলের চোখে মারে।অনেক্ষন পানি দেওয়ার পরেও যখন রাতুল চোখ খুলছেনা তখন কুনাল বাইরে বেরিয়ে আসে।
” স্যার চোখ খুলছেনা।এখন কি ইনজেকশন দিয়ে দেবো।”
” ঠিক আছে।তবে আমার নেক্সট আধাঘন্টার মধ্যে ওর জ্ঞান ফেরা চাই।”
কুনাল এসে একটা বক্স থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রাতুলকে দিয়ে দেয়।
” কেন যে নিজের কপালে নিজেই দুঃখ ডেকে আনলি।আজ তোকে এশান স্যার জীবিত ছাড়বে বলে মনে হয়না।” কুনাল রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।
আধাঘন্টা পর,
এশান রুমে এসে দেখে রাতুল ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটপট করছে।রাতুলকে সজ্ঞানে দেখে এশান খুব খুশি হয়ে যায়।সে আস্তে আস্তে রাতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়।এশানকে দেখে রাতুল ভয় পেয়ে যায়।
” কি মিস্টার রাতুল কেমন আছেন এখন?আমার অতিথি আপায়্যান কেমন লেগেছে আপনার?”
রাতুল কিছু বলছেনা শুধু ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটপট করছে।
” ও…..আমার অতিথি আপায়্যান বুঝি আপনার খুব ভালো লেগেছে?আচ্ছা তাহলে আরো একটু আদর যত্ন তোর আপনার করতেই হয়।”
এশান একটা কলম নিয়ে রাতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়।
” জানিস তোর চোখগুলো না আমার খুব পছন্দ হয়েছে।বিশেষ করে ওই বাম চোখটা আর আমার যেটা পছন্দ সেটা আমি নিজের করেই ছাড়ি।তাই তোর চোখটাও……..” কথা শেষ হওয়ার আগে এশান হুট করে কলমটা রাতুলের বাম চোখে ঢুকিয়ে দেয়।ব্যথায় রাতুল চোখ বন্ধ করে ফেলে আর কয়েক সেকেন্ড পরেই রাতুলের বাম চোখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে।
” আমার কায়ুপাখির দিকে বাজে দৃষ্টিতে থাকানো আর তার সাথে খারাপ কাজ করার শাস্তি।আমি চাইলেই তোকে মেরে ফেলতে পারতাম।তবে আমি তোকে একেবারে মারবোনা।তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো।”
পরেরদিন সকালে,
সকালে তেমন কোন কাজ না থাকায় আজ একটু বেশি সময় ধরে ঘুমাচ্ছে কায়াসা।কিন্তু তখন থেকে তার ফোনটা বেজে যাচ্ছে।তবে কাঁথা থেকে হাত বের করে ফোনটা ধরতে কায়াসার মোটেও ইচ্ছে করছেনা।কিন্তু যখন দেখলো ফোনটা বন্ধ হওয়ার নয় তখন বাধ্য হয়ে কায়াসা ফোনটা রিসিভ করলো।
” হ্যালো কে বলছেন?”
” কায়ু আমি আরু বলছি।”
” হ্যাঁ বল।”
” এখনো ঘুমাচ্ছিস নাকি?”
” হুম।কেন?কি হয়েছে?ক্লাসে টাইম করি আগে করে দিয়েছে নাকি?”
” আরে না ক্লাসের টাইম আগের মতোই আছে।আমি তোকে অন্য একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছি।”
” কি এমন জরুরি কথা বলবি যে এতোবার ফোন করছিস?”
” কায়ু রাতুলের খবর পাওয়া গিয়েছে।”
” ও আচ্ছা।”
” কায়ু আমি তোকে কি বলছি তুই বুঝতে পারছিস?রাতুলের খবর পাওয়া গিয়েছে।”
এমনিতেই রাতুলের নাম শুনে কায়াসার মাথা গরম হয়ে গিয়েছে তারউপর আরোহীর কথা শুনে তার রাগের সাথে সাথে বিরক্তি আরো বেড়ে গিয়েছে।বিরক্ত নিয়ে কায়াসা উঠে বসে।
” হ্যাঁ আমি শুনতে পেয়েছি তোর কথা।তোর সাথে রাতুলের কথা হয়েছে এতে এতো বড় কথার কি আছে?হয়তো সে একদিন তোর সাথে কথা বলেনি এতে আরো হাইপার বা এক্সাইটেড হওয়ার কি আছে?”
” কায়ু রাতুল মোটেও ভালো নেই।কেউ ওকে খুব নৃশংস ভাবে মেরেছে।ওর হাত,পা,চোখ কোনকিছুই ভালো নেই।সকালে কেউ হসপিটাল থেকে ওর এক বন্ধুকে ফোন করেছিল।তারপর সবাই জানতে পারে।রাতুলের অবস্থা খুব খারাপ কায়ু।ওকে লাইফ সাপর্টে রাখা হয়েছে।” কথাগুলো বলতে বলতে আরোহী কান্না করে দেয়।রাতুলের জন্য খারাপ না লাগলেও কায়াসার আরোহীর জন্য খারাপ লাগে।
” আচ্ছা কান্না করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই কলেজে আয় তারপর বাকি কথা বলবো।”
আরোহী কিছু না বলে শুধু কান্নাই করতে থাকে।কায়াসা ফোনটা কেটে দেয়।তারপর ইতিকে ফোন দেয়।
” আরে কায়ু আমি তোকেই ফোন দিতে যাচ্ছিলাম।তোকে আরোহী ফোন দিয়েছিলো তাইনা?”
” হুম কিছুক্ষণ আগেই।”
” আমাকেও দিয়েছে আর ওই শয়তানটার কথা বলে বলে কান্না করছিল।”
” হুম।”
” আচ্ছা তুই এখন এতো ভাবিসনা।কলেজে আয় তারপর দেখা যাবে।”
” আচ্ছা।”
ফোন কেটে দিয়ে কায়াসা কিছুক্ষণ চুপচাপ বিছানায় বসে থাকে।তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
চলবে……