#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১১
আজ আপুর মেহেন্দি। পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। আনন্দের সাথে অনেকটা মন খারাপ জেকে বসেছে। কারন এই মানুষটা চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো খুব একা। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি গড়িয়ে পরলো।পুরো বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে, মেহেন্দিতেই এত মানুষ আল্লাহ জানে বিয়েতে কি অবস্থা হয়। মেহেন্দি আর হলুদ যার যার বাড়িতে হলেও আমরা ছেলে পক্ষের লোক মেহেন্দি ও হলুদে আমাদের বাড়ি আসবে ছেলের গায়ে ছোয়ানো হলুদ ও মেহেদি নিয়ে। পুরো বাড়ি লাইটিং আর সাজ সজ্জায় ঝিকিমিকি করছে। আলোর সম্বভার বসেছে যেনো।তবে তারা চেয়েছিলেন যে আপুর আর সায়ন ভাইয়ার সব রিচোয়েলস গুলো এক সাথে করতে, কিন্তু চাচ্চু রাজি হয় নি,।আমাদের হয়তো তাদের মতো নেই মধ্যবিত্ত বাট আমরা আমাদের দায়িত্ব গুলো নিজেরাই পালন করতে চাই। তবে সবার মুখে এক কথা
” এত বড় বাড়ির বউ হওয়া কিনা ভাগ্যের ব্যপার। ছেলে , আর স্টেটাস নাকি কপাল জুরে পেয়েছে আর মিঃ চৌধুরীর কথা তো সবার মুখেই। আগে তো দেখতাম মেয়ে গুলোই সাথে লেগে থাকে, এখন দেখি এই বুড়ি গুলোও ওনার পাগল।
— কি রে ঈশা মা সেই কখন থেকে ডাকছি, কি নিয়ে এমন হাসছিস৷ আমাকেও একটু বল।
— চাচি মা কে কিছু বলবো তার আগেই দেখি রাইসা,
আল্লাহ আমি কি সত্যি দেখছি? যেই মেয়ে কিনা সকাল ১২ টার পর ঘুম থেকে ওঠে সে আজ ১০ টার আগেই ওঠেছে, আচ্ছা আমি কি ভুল দেখছি? চাচিমা কে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই দেখি সেও একিভাবে তাকিয়ে আছে, হুট করেই আমি আর চাচিমা হেসে উঠলাম, এর মধ্যেই দাদি এসে বলতে শুরু করলো!
— এহানে দাড়িয়া না থাইকা কি কাম আছে কর। নাকি তোরে রাজরানি কইরা রাখতে আনসে।
— মা আমার স্বামি যথেস্ট মানুষ রেখেছে, আমার মেয়ের বিয়েতে তাই আমার ছোট মেয়েকে তিনি শুধু আনন্দই করতে বলেছে। বাকিদের মতো।আর ঈশা শোন মা!
— তুই একটা কাজেও হাত দিবি না, প্রতিটা কাজের জন্য মানুষ রেখেছে তোর চাচ্চু। এখন যা সামিয়ার সাথে থাক, ওর সাথে সাজবি ঘরেই পার্লার এর লোক আসবে। আর সবুজ ড্রেস যে তোর আপু মেহেন্দির জন্য দিয়েছে সেটাই পরবি। যা।
— আমি দো-টানায় পরে ভাবছি কি করবো তখন দাদি আবার বলে উঠলো।
— হ হ মাথায় তুইলা নাচো।এই তোর যখন কোন কাম নাই তাইলে আমার নাতনির ঘরে যা, দেখ কি কি মাখবো মুখে ওইগুলা রেডি কইরা দে। আর!
দাদির কথা সম্পুর্ন শেষ না হতেই চাচি মা বলে উঠলেন,
— ঈশা তোকে আমি যেতে বলেছি কিন্তু। আর মা আপনার নাতনি ছোট না, ভাত, মাছ আর ছিনিয়ে নেয়া সব বোঝে তাই নিজেরটা নিজেকেই করতে দেন।
এর মধ্যেই রাইসা বলে উঠলো!
— তুমি ভাবলে কি করে চাচি আমি এই মেয়েটার হাতের ফ্যসপেক দিবো।হাও? ও তো নিজেই কালির বস্তা আবার আমাকে কি দিবে। দেখো আজকে সবাই আমার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ওর দিকে কেউই তাকাবে না, আরে কালি আবার কি সাজবে?
বলেই হেসে দিলো। চাচি কিছু বলবে তার আগে আমি বললাম,
— নিজেকে এত সুপার স্টার ভাবিস না তুই। সুন্দর হলেই যে লোকে তাকিয়ে থাকবে ব্যপার টা এমন না। আর রইলো বাকি আমি কালি? হ্যা তো কি হয়েছে অন্যদের মতো তো আর যেচে ছোট হই না? ২ দিনের হলেও আমি তোর বড় তাই আশা করবো এমন কিছু বলবি না যে বিয়ে বাড়িতে নিজের ফেসটাই না দেখাতে পারিস,আমার কথায় রাইসা সহ দাদি চাচি মা হা করে তাকিয়ে আছে, কারন তাদের জানা মতে আমি শান্ত, চুপচাপ,
— চাচিমা আমার ক্ষুদা পেয়েছে খাবার নিয়ে আপুর রুমে আসো। খায়িয়ে দেবে।
বলেই এক মুহুর্ত দেরি না করে
সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় কালকের কথা, যেখানে কাল রাত ৮ টায় ঘুম ভাংতে আমি দেখি মিঃ চৌধুরীর গাড়িতে, উনি এক দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,বাহিরে তাকিয়ে দেখি বাড়ির বাহিরেই আছি, কিন্তু লোকটা আমাকে তুললো না কেন?
— এসে পরেছি। বাসায় যাও। যেতে পারবে নাকি দিয়ে আসবো।তুমি এত ঘুমাও যে হুস নেই, আবার দেখো পরে গিয়ে কোমর ভেংগো না।
আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে শুধু মাথা নাড়ালাম, মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে তাই কোন কথা বের হচ্ছে না।
— পারবো যেতে।
উনি হটাৎ করেই বলে উঠলেন!
— সব সময় নিজেকে প্রটেক্ট করার জন্য হলেও কিছু বলতে হয়৷ মনে রাখবে তুমি যত চুপ থাকবে লোকে ততো সুযোগ নিবে। তাই ১০ টা না বলে একটা বলেই লোকের মুখ অফ করতে হয়।
ওনার কথা শুনে আমার ঘুম হাওয়া হয়ে গিয়েছে, কি বললো উনি, তার মানে কি রাইসার কথা থেকেই এই কথাটা বলেছে? আর কিছু না ভেবে নামার সময় ডেকে উঠলেন,
— ঈশা….
যানি না কি ছিলো সেই ডাকে! উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই তাই আনমনেই বলে ফেললাম,
— কিছু বলবেন?
— বাসায় গিয়ে কিছু খেয়ে, এই মেডিসিন টা খেয়ে নিবে, কেমন।
আচ্ছা উনি কি করে বুঝলেন আমার মাথায় জন্ত্রনা করছেন, জিজ্ঞাস করেই বসলাম,
— আচ্ছা আপনি কিভাবে বুঝলেন চৌধুরি সাহেব? আপনি কি মনের কথা বুঝতে পারেন? এই আগে কি জ্যতিসি ছিলেন?
উনি হু হা করে হেসে দিয়ে বললেন,
এই মেয়ে তুমি এমন কেন হ্যা , আমাকে সোজা জ্যতিসি বানিয়ে দিলে৷ যদি বলি হ্যা আমি জ্যতিসি শুধু তোমার বেলায়।
— এ্য
— এ্য নয় হ্যাঁ। এবার জান ম্যম।
কালকের কথা ভাবতে ভাবতে হেসে দিলাম। আচ্ছা লোকটা তো সবার সাথে গম্ভির ভাবে কথা বলে কিন্তু আমার বেলায় এত সফট কেন?
আস্তে আস্তে দুপুর পেরিয়ে বিকাল হয়ে এসেছে, ছেলের বাড়ির লোক যেহুত সন্ধায় আসবে তাই সন্ধার মধ্যেই রেডি থাকতে হবে, একে একে সবাই আস্তে আস্তে রেডি হতে লাগলো, আপু যেহুত ব্রাইড তাই আপুকে আগে সাজাচ্ছে, সবুজ লেহেঙ্গা মেহেদী সাজে কি অপূরুপা লাগছে, আমি দেখছি সাথে পাথরের মিক্সিং গহনা, আপুর সাজ কমপ্লিট হলে আমি আপুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম, মুচকি হেসে বললাম,
— মাশাল্লাহ তোমাকে যে কি ভালো লাগছে না! ভাইয়া দেখলে পুরো ফিদা হয়ে যাবে।আহা লজ্জা পাচ্ছো বুঝি,
— হ্যা তা ছাড়ুন আর এটা বল তুই এখন ও রেডি হোস নি কেন, মেকাপ করতে কত টাইম লাগে জানিস না।
— আমি মেকাপ করবো না আপু, তুমি তো যানো আমার এসব বিরক্ত লাগে, আমি সিম্পল থাকবো এই তো বেশিক্ষন লাগবে না।
— কি বলছিস এসব সবাই সেজে আসবে আর তুই কিনা এখন এই কথা বলছিস ঈসা।
— ও আর সেজে কি করবে, সাজালেও পেত্নি লাগবে তার থেকে বেটার এমনি থাকুক।
রাইসার কথায় আমি ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম কি সাজা সেজেছে, মনে হচ্ছে বিয়ে আপুর না ওর, কিছু না বলে বের হতেই দেখলাম তুবা এসেছে কি দারুণ লাগছে মেয়েটাকে, এমনিতে তো আর তুহিন ভাইয়া পরি বলে না। সবুজ রঙের গোল ড্রেসে পাথরের সব হালকা গহনা চুলে ফুল সেট করে ছেড়ে দেয়া কি সুন্দর লাগছে।
আমি যেতেই জড়িয়ে ধরে বকতে বকতে নিয়ে গেলো কেন সাজতে বসি নি। আমাকে নিয়েই সাজাতে বসালো,,
সবুজ ড্রেসে বাকা সিতিতে সাইডে চুল সেট করা,ফুল দিয়েছে, হালকা মেকাপ, সিম্পল জুয়েলারি, পাথরের টিপ, এক সাইডে ওরনা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে৷ আমি আয়নায় তাকাতেই অবাক এটা আমি? আগে কখনো সাজি নি, তাই কি এত চমকে গেলাম , তবে যাই হোক খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে। তুবা বলে উঠলো,
— জানু আমি ক্রাস খেয়েছি, তুই এত সুন্দর কেন রে? ইশশ আজকে সব ছেলেদের মাথা ঘুরে যাবে রে, বেবি ইউ লুকিং সো প্রিটি। ( হেসে)
— হয়েছে তুই তো সারাদিন বলিস এক কথা, কিন্তু তোকেও বেশ লাগছে কিন্তু।
আহা লজ্জা পাস না তুহিন ভাইয়া আছে তো।
— ঈশু ( চোখ রাংগিয়ে)
— আচ্ছা বাদ দে , বল তো ভাইয়া কোথায়,
— আমাকে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়াদের বাসায় গিয়েছে। একসাথে নাকি আসবে আর আরভ ভাইয়ার কি কাজ আছে তাই একসাথেই আসবে।
— ওহহ
এর মধ্যেই আমরা নিচে গেলাম৷ একে একে সবাই সেজে এসেছে, সবাইকে কি মিস্টি লাগছে, কিন্তু একটা ব্যপার বুঝতে পারছি না, সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? আচ্ছা আমাকে কি বাজে লাগছে?
এর মধ্যেই শুনলাম ছেলে পক্ষের লোক এসেছে। সবাই একে একে আসলো,আনটি, আংকেল বাদে, বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই বেশি,মায়া আবির ভাই সবাই এসেছে, মায়াও সেম সেজেছে, সবাই কে দেখলেও তুহিন ভাইয়া আর মিঃ চৌধুরী কে দেখি নি, আচ্ছা উনি কি আসবে না?তুবার কথায় ধ্যেন ফিরে পেলাম।
— আরে জিজু কাকে খুজছেন। বউ কে নাকি?
— আমার বউ আমি খুজছি, তোমাদের প্রবলেম কি বোন? এটা মনে রেখো আমার পর কিন্তু তোমার পালা।
ভাইয়ার কথায় সবাই হেসে দিলেও তুবা ভিসন লজ্জা পাচ্ছে, সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলা শেষ করে স্টেজে গিয়ে বসে পরে, কিন্তু কেন জানি আমার চোখ বার বার একজন কে খুজছে। এটা কি অনূভুতি? ভাবনার মাঝেই আপুকে স্টেজে নিয়ে এলাম, ভাইয়া মুগ্ধতার দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে, দু-জন কে কি সুন্দর মানিয়েছে। হেসে হেসে কথা বলছে, এর মাঝেই খেয়াল করলাম একটা ছেলে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে, অসস্তি হচ্ছে আমার, আর কিছু না ভেবে ছবি তুলতে গেলাম কারন মায়া আর তুবা ডাকাডাকি শুরু করেছে, ছবি তোলার এক পর্যায় দেখলাম মিঃ চৌধুরী অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি মনের ভুল ভেবে ইগনোর করলাম, কিন্তু একি? উনি তো সত্যি এসেছে, কখন এলো, আর এভাবেই বা কেন তাকিয়ে আছে?
— উফ জান এই কি সেজেছো তুমি? এই এতটুকু সাজেই যদি আমার এই অবস্থা করো তাহলে অন্য দিনগুলো আমি কন্ট্রোল থাকবো কিভাবে,। মাশাল্লাহ মাই কুইন, ইউ আর সো ইম্প্রেসিভ কুইন ইন মাই লাইফ।
চোখাচোখির এক পর্যায়ে, তুহিন ভাইয়া মাইকে কাপল ডান্সের এনাউন্সমেন্ট করলো। আমি গিয়ে আপুর কাছে বসেছি, আপুর মেহেদি পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে, এর মধ্যেই আমার নাম শুনে আমি চমকে উঠলাম,
— এখন ডান্স করবে আবির, মায়া, তুবা, ঈসা, রাইসা, সায়ন, রাহুল।
এতক্ষনে বুঝলাম ছেলেটার নাম রাহুল, হটাৎ আমার দিকে হাত দিয়ে বললো!
— চলো মিস,
— সরি ভাইয়া আমি ডান্স করবো না, আপনি অন্য পার্টনার খুজে নিন।
— আমার যে তোমাকে চাই।
— মানে?
— আব না মানে ডান্স করার জন্য৷
— দেখুন আমি!
— এই এই চল আমরা কিন্তু প্লেন করেছি তিন বান্ধুবি একসাথে পার্ফোম করবো।ঈশা কোন কথা নয় চল,
তুবা জোর করে টেনে নিয়ে গেলো, লাইট অফ হতেই গান শুরু হলো, কিন্তু ছেলেটার স্পর্শ আমার মোটেও ভালো লাগছে না, কেমন গায়ে পরা টাইপ এর মধ্যেই অনেক মেয়েরা ছবি তুলতে এলেও মিঃ চৌধুরীর রাগি চোখ দেখে সব হাওয়া। কিন্তু রাইসা ওনার কাছে গিয়ে ন্যকা শুরে বলতে শুরু করলো
-আরা না মানে ভাইয়া লেস্ট হেভ এ ডান্স ( হাত বারিয়ে)
— ওনি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু এসব আমার চোখের আড়ালে কারন লোকটার স্পর্শ আমার এরোতে আমার নজর এদিকে, চলে যেতে চেয়েও পারছি না হাত ধরে রেখেছে, রাগ জিদে কান্না চলে আসছে।
— নো আম নড ইনট্রেসড অন ইউ। বলেই উঠে আমার দিকে এগিয়ে এসে লোকটার হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা দেয়, আমিও তাল না সামলে পেরে পরে যাওয়ার আগেই মিঃ চৌধুরী আমার কোমর জড়িয়ে ধরে, তখনি মিউজিক অন হয়,
”’ আজ কাল তেরে মেরে, **পেয়ার কি চার্চে হার জাবান পার।
সাবকো মালুম হ্যা আর সাবকো,
খাবার হো গায়া।
( নিজ দ্বায়িতে শুনে নিবেন)
এদিকে গানের তালে তালে উনি আমার সাথে ডান্স করলেও আমার কোমর এত জোরে চেপে ধরাতে চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি বের হচ্ছে।
অন্ধকার বিধায় নাচের মাঝেই আমাকে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলেন, দেয়াল এর সাথে চেপে ধরলেন।
— মি মিঃ চৌধুরী আমার লা লাগছে, ছাড়ুন প্লিজ।
— লাগছে না? যখন ওই লোফার টা টাচ করছিলো তখন লাগে নি।
আমি হুট করেই কেঁদে উঠলাম,
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রেগে হন হন করে চলে গেলেন।
আমি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে অভিমান নিয়ে বললাম,
— আপনি খারাপ খুব খারাপ।আর কথা বলবো না আপনার সাথে, আমাকে আপনি ব্যথা দিয়েছেন, বকেছেন কথা বলবো না। ( অভিমানি কন্ঠে)#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১২
প্রায় ঘন্টাখানেক হতে চললো, দড়জা দিয়ে বসে আছি। যাবো না লোকটার সামনে। প্রথম দুই-দিন ভালো ব্যবহার করে এখন আমাকে ভুল বুঝে ব্যথা দিলো।
আচ্ছা আমি কি ওনার ওপর অভিমান করেছি? কিন্তু কেন? কে হয় আমার?ভাবনা চিন্তার মাঝেই চাচ্চু এসে দড়জা ধাক্কা দিলো,
— ঈশা মা কি হয়েছে আমার ছোট মায়ের? দড়জা বন্ধ করে আছে কেন?দড়জাটা খোল মা!
চাচ্চুর কথায় মাঝেই দড়জা খুলে দিলাম, আহারে এমনিতেই ছেলে না থাকার কারনে সব দিক একা হাতে সামলাচ্ছে তার ওপর আবার আমার জন্য চিন্তা করে ঘর পর্যন্ত এসেছে।
— কি হয়েছে মা, তোমার বোনের বিয়ে, আর তুমি ঘরে দড়জা দিয়ে আছো! কেউ কিছু বলেছে?মা কি কিছু বলেছে? আমার ছোট মাকে?
চাচ্চুর কিথা জমে থাকা কান্না গুলো ঠেলে আসতে চাইছে, কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলাম।
— না না চাচ্চু আসলে এমনি, আপু চলে যাবে তো তাই মন খারাপ ( মন খারাপ করে)
— আমার বড় মা টা চলে যাবে, ছোট মা টাও কদিন পর চলে যাবে। আমার কি কম খারাপ লাগছে? যাও মা তুমি নাই বলে বার বার সামিয়া তোমার কথা জিজ্ঞাস করছে।
— আমি মোটেও তোমাদের ছেড়ে যাবো না।
— পাগলি সেটা সময় হোক। এখন চলো।
— হুম চলো।
নিচে নামতেই দেখলাম একে একে সবার হাতে মেহেদি দেয়া, আপুর কাছে যেতেই দেখলাম দু-হাত ভর্তি মেহেদি দেয়া, সায়ন ভাইয়ার নাম লেখা মাঝে। মায়া আর তুবা আমাকে খুজছিলো, ভেবেছিলো বাগেনে গিয়েছি, আসা মাত্রই বকা বকি শুরু করলো,আমার জন্য নিজেরাও মেহেদী দিতে পারে নি। আমাকে জোর করে মেহেদি দিতে বসিয়েছে। কি করার আমিও বসে পরলাম। কিন্তু চোখ গুলো বার বার বেহায়ার মতো মিঃ চৌধুরী কে খুজছে,। কেন এমন হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছি না।
হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে বসে আছি, চোখে মুখে চুল আছরে পরছে, কাওকে বলতেও পারছি না। তুবা, মায়া সকলের হাত ভর্তি মেহেদি ভাবতে ভাবতেই চোখে পরলো সুন্দর একটি দৃশ্য।
— তুবা দু-হাতে মেহেদি দিয়ে বসে আছে। তুহিন ভাইয়া এটা সেটা বলে ওকে খাওয়াচ্ছে। তুবার চোখ মুখ বিরক্তি তে কুচকে আছে দেখাই যাচ্ছে বেচারিকে জোর করে খাওয়াচ্ছে। এক পর্যায়ে খাওয়া শেষ হলে তুবা কে টেনে কপালে চুমু দিলো, তুবা রাগী চোখে তাকাতেই হেসে দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো, মেয়েটা নিজেও তার প্রেমিক পুরুষ এর বুকে ঠাই নিলো।খেয়াল করলাম আমি ছাড়া আরও অনেকেই এই দৃশ্য দেখছে কেউ মুগ্ধ নয়নে তো মেয়েরা ক্ষুব্দ নয়নে।
সায়ন ভাইয়া কি সুন্দর আপুর মেহেদি তে ফু- দিচ্ছে আর কথা বলছে। মেয়েটা সত্যি ভাজ্ঞ্যবতি। এর মাঝেই রাইসা কে অনেকক্ষন না দেখে ভাবতে লাগলাম কোথায় গেলো। হটাৎ চোখে পরলো রাইসা আর রাহুল নামের ছেলেটা এক সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছে। আচ্ছা ওরা কি একে ওপর কে চিনে? কিন্তু এই ছেলে তো বড় পক্ষ। মায়াকে একবার জিজ্ঞেস করবো? ভাবতে ভাবতেই চোখে পরলো আরেক জোরা কপতি কে। আবির ভাইয়া তার প্রেয়শির রাগ ভাংগাচ্ছে এটা সেটা বলে , কিন্তু মেয়েটা বড্য অভিমানি, মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে ভাবলাম নিজের ঘরে একবার যাওয়া উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ, মোটামুটি শুকিয়ে যাওয়া মেহেদি নিয়ে যেই না নিজের ঘরে যাবো ওমনি পুরো বাড়ির লাইটিং অফ হয়ে গেল, কিছু বোঝার আগে এক জোরা হাত আমার ঘরে টেনে নিয়ে দড়জা টা দ্রিম করে আটকে দিলো। ভয়ে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছি, কোন মতে কিছু বলার পূর্বেই কোমড় জরিয়ে ধরে, ফিসফিস করে বলতে লাগলো!
— সরি, আম সরি আমার ঈশু পাখি! ট্রাস্ট মি আম রিয়েলি সরি, আর হবে না প্লিজ ফরগিভ মি,
আমি হা করে আছি, কারন কি হচ্ছে আমার সাথে,,সবাই কি আমাকে পায় নাকি? এ আবার কে, আচ্ছা ভার্সিটি তে যে ছিলো উনি কি সে?নাকি মিঃ চৌধুরি?ছি ছি আমি কি সব ভাবছি উনি হবে কিভাবে? উনি তো নেই, আর এই লোকটাই বা আমার পিছে পরে আছে কেন?
উফফ ভাবতে পারছি না, না একে এবার শিক্ষা দিতেই হবে, ব্যটা আমাকে এই নিয়ে দু-বার টাচ করেছে, কিছু বলবো তার আগেই বলে উঠলো….!
— এই মেয়ে চুপ করে কি আমার জান নিতে চাও নাকি? কি হলো কথা বল?
— এই এই আপনি কি বলে ডাকলেন এই মেয়ে? এটা আমার খুব চেনা, এই নামে আমাকে কেউ ডেকেছে,
আমি কথা গুলো বলার সময় বারবার মিঃ চৌধুরীর নাম টা মনে আসছে৷ আচ্ছা এটা কি উনি, আমি কিছু ভাবনার মধ্যে আনমনে ভেবে বললাম!
— মিঃ চৌধুরি?
জানি না লোকটার কি হলো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে গভির চুম্বন লেপ্টে দিলো।তার সাথে ঠোটে হালকা করে চুমু খেল,
আমি শক খেয়ে চোখ খোলার সাথে সাথেই দেখি উনি নেই, লোকটা কি ম্যজিক জানে কখন আসে কখন যায় বুঝতেই পারি না, যে করেই হোক এই লোক কে যানতে হবে। পেটের মধ্যে ক্ষুদা অনুভব হতেই বিরবির করে বললাম,
— আমার তো আর তুহিন ভাই আর আবির ভাই নেই যে খায়িয়ে দেবে, তাই আমার চাচিমার কাছেই যাই। দেখি ফ্রি আছে কিনা। হাযার হোক মেয়ের বিয়ে অনেক কাজ ওনার,
ঘর থেকে বের হয়ে দেখি একে একে সবাই খেতে বসলেও, ছেলের বাড়ির লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ছাদে। তাই চাচিমা কে না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখি, সবাই এদিকেই। আমি নখ কামরে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরি, চোখ ছোট ছোট করে এদিক তাকিয়ে আছে। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, দ্রুত মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। সবাই খেতে বসেছে এদিকে আমার ও খুদা পেয়েছে, সায়ন ভাইয়া আপুকে খায়িয়ে দেয়ার সময় আমাকে ডেকে নিয়েও এক নলা মুখে পুরে দিলো।আমিও হেসে খেয়ে নিলাম। এর মধ্যেই আপু সায়ন ভাইয়াকে বলে উঠলো!
— Thank you সায়ন। আমার মতো আমার বোনকে ভালোবাসার জন্য।
— ঈশা কি শুধু তোমার বোন? আমার ও বোন আমার ছোট বোন,
ভাইয়ার কথা শুনে তুবা তেরে এসে বললো আচ্ছা, তাহলে আমি কি? ভাইয়া তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো আমার তিনটা বোন। মায়া যদিও রেগে থাকার মিথ্যা অভিনয় করেছিলো,বাট ভাইয়ের কথায় গলে গিয়ে সায়ন ভাইয়ার এক হাত জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো।সবাই খেতে বসেছে বিধায় আমিও বসেছি, কিন্তু মিঃ চৌধুরির সাথেই বসতে হলো,অন্য মেয়ে বেচারিরা সামনে পেয়েও কথা বলতে পারছে না আর আমি কিনা দূরে থাকতে চাই তাই কি লোকটার সাথেই এসে পরি। হায় কপাল একি আমার ভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য। খেতে খেতে খেয়াল করলাম লোকটার যথেস্ট মাধূয্য আছে।চাল চলন, কথা, স্মার্টনেস,খাওয়া সব কিছুতেই যেনো মুগ্ধতার ছোঁয়া। আমি খাচ্চি কিন্তু লোকটা একভাবেই তাকিয়ে আছে, আচ্ছা লোক তো? এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে?
কিন্তু কিছুই বলবো না, কথাই বলবো না ওনার সাথে।
কোন মতে একটু খেয়ে উঠে গেলাম, সবাই আস্তে আস্তে বের হচ্ছে, আমিও বের হবো এমন টাইমে মিঃ চৌধুরি আমার সামনে এসে হালকা ঘার কাত করে ঠোট কামরে হেসে বলে উঠলো,
— মিস – ঈশা আপনাকে তখন বকার জন্য এইভাবে বিহেভ করার জন্য সরি। সরি এক্সেপ্ট করা আর না করা তোমার বিষয় বাট এই আরাভ কাউকে সরি বলে না সেখানে তোমাকে সরি বলেছে মেয়ে! অভিমানি মেয়েরা যে এত কিউট কেন আমি জানি না কিন্তু তুমি কেন এত সুন্দর তা জানি, ( হেসে দিয়ে)
— এ্য,
— বাই মিস অভিমানি। তবে হ্যা কাল যেন এত সাজে না দেখি,
বলেই চুলে ব্রাশ করতে করতে নেমে গেলো।
আমিও নামার সময় দেখি মায়া হা করে তাকিয়ে আছে।এই মেয়েটার কি ভাইয়ের মতো রোগ আছে নাকি? এমন স্টেচু হয়ে আছে কেন?
— এই মায়া কি হলো? এমন হা করে আছো কেন।
— এই ভাইয়া তোমাকে কি বললো, এটা কি ঠিক শুনলাম নাকি।
আমি ওর কথা শুনে হেসে এই সেই বুঝিয়ে নিচে নিয়ে এলাম। সময় এর সাথে সাথে ওরাও চলে যাওয়ার সময় হলে সবাই চলে গেলো। আমিও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। কিন্তু একি এই লোকটার কথা কেন ভাবাচ্ছে আমাকে? উফফ পাগল হয়ে যাবো।
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃস্টি তে দেখবেন।রিচেক হয় নি)
#চলবে
*হ্যপি রিডিং*