#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৫
প্রায় দু – ঘন্টা হতে চললো ওয়াশ রুমে বসে আছি। তখনকার আমার করা কাজটা যতবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ততোবার আমি লজ্জায় নিজের মুখ ঢাকছি। ছি আমি নিজের অজান্তে কি করে বসলাম।
— ঈশু পাখি তুমি বের হবে নাকি আমি দড়জা ভাঙবো?কি হলো বলো? (মিঃ চৌধুরি)
— আ আসছি। ( আমি)
আমি ওনার ঠান্ডা থ্রেট শুনে আমি একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে দড়জা খুলে বের হয়ে গেলাম। উনি আমার কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলে ওঠে-
— কি সমস্যা। আ’ম ইউর হাসবেন্ড। যখন তখন চুমু খাবে যা ইচ্ছা তাই করবে। মাঝে মাঝে আমিও সুযোগ পাবো।আর জান এই একটু কিসিং এ এতটুকু আর বাকি কাজ করলে তুমি তো- (মিঃ চৌধুরি)
— মিঃ চৌধুরী আ আপনি কিন্তু আমাকে আবার লজ্জা দিচ্ছেন আমি কিন্তু আবার চলে যাবো৷ ( আমি)
— না জান যেতে হবে না৷ এবার আমি নিয়ে যাচ্ছি। ( মিঃ চৌধুরী)
উনি আমাকে হুট করেই কোলে নিয়ে নিলেন। আমি ভয় পেয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলে, লোকটা ঠোঁট কামড়ে হেসে বেডে আমাকে শুয়িয়ে দিয়ে আমার ওপর ঝুকে পরে। চোখ ছোট ছোট করে বলে –
— জান আই নিড ইউ। বেডলি নিড ইউ পাখি। এন্ড আই রিয়েলি লাভ উইথ ইউ। কেন আই! ( মিঃ চৌধুরী)
লোকটার প্রতি এ কদিনে আমি সত্যি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আমিও যে এই মানুষটাকে ভালোবাসি সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। উনি কাছে এলে আমার বুক ধুকপুক করে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আর সত্যি তো সে তো আমার অনুমতি ব্যতিত আমাকে ছুঁয়ে দেয় নি। আজ আমি ওনার চোখে আমাকে কাছে পাওয়ার ব্যকুল আকুলতা দেখতে পাচ্ছি।
ভাবনার ভিতর আবার উনি গলায় হাত গলিয়ে দিলেন। আমার কোন রেন্সপন্স না পেয়ে উনি ওঠে যেতে চাইলে আমি ওনার হাত খামচে ধরি৷ চোখ খিচে বন্ধ করে ওনার বুকে মাথা গুজে দেই। লোকটা হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন-
— এই অতৃপ্ত পিপাশা কে জাগিয়ে তুলে তুমি ঠিক করো নি পাখি। বি রেডি মাই টর্চার।(মিঃ চৌধুরি)
কথাটা বলেই উনি আমাকে টেনে নিলেন নিজের বুকে। চোখে মুখে ইচ্ছে মতো চুমু খেতে শুরু করলেন। আস্তে আস্তে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়ে, ঠোঁট জোড়া চুষে নিতে লাগলেন।কাধের দিকে ওড়না সরিয়ে কামড় বসিয়ে দিলেন। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলে ছোট ছোট চুমু দিতে থাকে। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছি।এক হাতে কোমড় জরিয়ে আরেক কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর ঢুকিয়ে ঠোঁটে চুমু খেল৷ শারা শরির শিরশির করে কেঁপে ওঠলো৷ওনার মাতাল নেশালো স্পর্শে মিঃ চৌধুরীর শার্ট খামছে ধরলাম।আস্তে আস্তে ডুব দিলাম ভালোবাসার সাগরে। যেখানে এক সমুদ্র ভালোবাসা দু- জনের জন্য বরাদ্ধ। চোখ বুজে পারি দিলাম ভালোবাসার অতল সমুদ্রে।
———————————————————
আজানের শব্দে ঘম হালকা হলে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি মিঃ চৌধুরীর বুকে শুয়ে আছি। যে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে আমাকে জড়িয়ে। দু-জনের শরিরে একটা চাদর ছাড়া কিছুই নেই। লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে এদিক সেদিক হাতরে কিছু পেলাম না। মিঃ চৌধুরী শার্ট নাগালে পেয়ে আপাদত সেটাই পরে নিলাম। নড়তে গেলেই বুঝতে পারলাম শরিরে অসহনীয় ব্যথা। ঠোঁট চেপে ব্যথা হজম করে ওনার বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। কিন্তু হিতে বিপরিত হলো উলটো আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে।এমন চাহনি উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই তাই লজ্জায় এদিক সেদিক তাকিয়ে কোনমতে বললাম-
— কি কি দেখছেন, মিঃ চৌধুরী আ আমাকে ছাড়ুন। সন্ধা হয়ে এসেছে। স সবাই কি ভাববে, প্লিজ ছা!( আমি)
— উফফ ঈশু পাখি আর কিভাবে আমাকে সিডিউস করবে বলো তো,? এমনিতেই তুমি যথেষ্ঠ খারাপ করেছো আমাকে। আর এখন এই হট ড্রেসে আমাকে কি আবার আক্রমন করতে চাইছো?(মিঃ চৌধুরি)
— ছি প্লিজ এ এসব বলা বন্ধ করুন। ( হাত দিয়ে মুখ ঢেকে) (আমি)
— আজ আমি খুব খুশি পাখি৷ আমার জানকে আমি আজ আপন করে নিয়েছি। (মিঃ চৌধুরি)
— ফ্রেশ হতে হবে প্লিজ। আমাকে যেতে দিন। ( আমি)
আর কিছু না বলে উনি চাঁদরটা নিজের কোমড়ে বেঁধে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
—একসাথে ফ্রেশ হবো আমরা আর সাথে তো আদর! ( মিঃ চৌধুরী)
— বন্ধ করুন এসব বলা। (আমি)
লোকটা ইচ্ছা করে আমাকে লজ্জা দিয়ে নিজেও সাওয়ার নিয়েছে সাথে আমাকে জালিয়েছে৷ দু-জন একসাথে সাওয়ার নিয়ে বের হলে আমাকে বেডে বসিয়ে আমার চুল মুছিয়ে দিয়েছে৷ পেটে হাককা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতেই দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে নিলাম। শেষে আর না পেরে কেঁদে উঠলাম। উনি আমার মাথা ওনার বুকে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন-
— আই নো জান। তোমার কষ্ট হচ্ছে।ফাস্ট টাইম তো পাখি তাই এমন হচ্ছে,প্লিজ ফরগিভ মি। আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। কেদোঁ না প্লিজ। ( মিঃ চৌধুরী)
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর উনি ওরনা নিয়ে আমার মাথায় দিয়ে দিলেন। হাত ধরে বাহিরে যাওয়ার ইশারা দিলেন,
— আমি যাবো না, আ আমার লজ্জা লাগছে। সব কিছুর জন্য আ আপনি দায়ি। ( আমি)
— এটা একটা সিম্পল বিষয় পাখি। আর এখানে আমরা ছাড়া কেউ ছিলাম না যে আমাদের রোমেন্স কেউ দেখেছে। তাই লজ্জা না পেয়ে চলো। তুবা এই নিয়ে এগারো বার দড়জা নক করে গেলো।(মিঃ চৌধুরী)
— ছি আপনি ইচ্ছে করে এবার এমন করছেন। ( আমি)
উনি ক্রুর হেসে আমার হাত জড়িয়ে নিচে নেমে এলেন। তুবা আর আপু সন্দিহান চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথার দিকে ভালোভাবে ওরনা টেনে নিলাম। সায়ন ভাইয়া, মিঃ চৌধুরী আর তুহিন ভাইয়া কথা বলছে যেহুত সন্ধা হয়ে এসেছে তাই তুহিন ভাইয়া এসেছে তুবা কে নিয়ে যেতে। আম্মু আর চাচিমা নাস্তা দিচ্ছে৷ কিন্তু এর মধ্যে আমি এনা বা রাইসা কাওকেই দেখতে পাই নি। ভাবনার মাঝেই আপু চুলে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো-
— কি রে ঘরে বসে এত টাইম রোমেন্স করছিলি বুঝি। বাহ আদর তো ভালোই করলো ভাইয়া।( আপু)
— হুম ঈশা আহারে এমন জানলে কি আর আমি বার বার দড়জা নক করে ডিস্টার্ব করতাম। তো কি কি আদর করলো রে? ( তুবা)
— হ্যা নিশ্চই খুব বেশি আদর খেয়েছিস। থাক আজকে নাস্তা না করলেও চলবে তোর৷ ( আপু)
— উফফ কি শুরু করলে তোমরা। আপু এসব কি বলছো আর তু তুবা কিসের আদর হ্যাঁ? ( আমি)
— ওওওওও ( দুজন একসাথে)
এর মাঝেই মিঃ চৌধুরী আমার পাশে বসে পরলেন। হাতে পাস্তা নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন। অসহায় চোখে তাকাতেই বললেন –
— নো এক্সকিউজ পাখি। অনেক্ষন হয়েছে তুমি খেয়েছো। সো ফিনিস ইট। (মিঃ চৌধুরী)
উপায় না পেয়ে খেয়ে নিলাম ওনার হাতেই। তুবা আপু আর বাকি সবাই ওনার কর্মকান্ডে অভস্ত্য তাই ওরাও মজা নিচ্ছে আর খাচ্ছে। এক পর্যায়ে চাচ্চু এসে যানায় কালকের দিনটা থাকতে, কিন্তু উনি আগেই বলে দিয়েছে কাল ওনার জরুরি মিটিং আছে। তাই আমি আর আপু মুখ কালো করে বসে আছি। শেষে নিজের বাড়িতেও এক রাতের বেশি থাকতে পারবো না। কথাবার্তা, খুনশুঁটির মাঝেই সময় পার হয়ে যায়। রাইসা বা এনা আপুকে না দেখে অস্থিরতা কাজ করছে। এক ফাঁকে বাগানে নিজের গাছগুলো দেখতে এলে দেখি দু- জন কিছু বলছে৷ এনা আপু আমাকে দেখে রেগে সামনে আসে। রাইসা তা করতে চেয়েছে কিন্তু দু- জন একসাথে হওয়াতে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে গেলো।
আমি হেসে দিলে রাইসা মাটি থেকে উঠে আমার হাত চেপে ধরে বলে-
— খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? খুব আনন্দে আছিস তুই।কিন্তু বেশি দিন এই সুখ তোর কপালে সইবে না। ( রাইসা)
— তুমি আমার আরাভ কে দূর করেছো তাই না? কিন্তু তোমার আসল পরিচয় জানলে আরাভ কেন তুমি নিজেও নিজেকে ঘৃনা করবে। (এনা)
— তখন থেকে আপনি আর রাইসা তুই একি কথা বলছিস আগে কিছু কর তারপর বলিস। মিঃ চৌধুরীর কাছে থেকে আমাকে কেড়ে নেয়া অসম্ভব। ( আমি)
আমার কথার মাঝেই কাধের ওরনা সরে গিয়েছে, ফলে মিঃ চৌধুরীর দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন ঘারের কাছে জ্বলজ্বল করছে। রাইসা তা দেখে আমার হাত টেনে ওরনা সরিয়ে ইশারা করে বলে কিসের দাগ? এনা আপুও তাকিয়ে জিজ্ঞাস করে,এক পর্যায় মাথার কাপড় পরে গেলে রাইসার হাতে ভেজা চুল লাগলে বলে উঠে –
— এই তোর ঘারে বুকে লাল হয়ে আছে কেন? কিসের দাগ ঈশা। ( রাইসা)
রাইসার রাগি কথায় আমার প্রভাব না পরলে এনা আপু আমার চুল ছুঁয়ে বলে!
— এই ভর সন্ধায় তোমার চুল ভেজা কেন? এই কথা বলছো না কেন?
এবার আমি মুখ খুললাম –
— রাইসা তুই নিশ্চই বাচ্চা না। আর কেউ না জানুক তোর শরিরে এমন হাযারটা চিহ্ন আছে? (আমি)
আমার কথায় রাইসা মুখটা কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে। এবার এনা আপুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠি-
— এনা আপু বিবাহিত মেয়েদের স্বামী কাছে থাকলে যখন তখন সাওয়ার নেয়ার সাইন্সটা নিশ্চই আপনাকে হাতে কলমে ধরে বোঝানো লাগবে না? আপনারা জানতে চান তো কেন কি হয়েছে তাহলে শুনুন আমার হাসবেন্ড মিঃ চৌধুরী আমাকে আদর করেছে। হয়েছে শান্তি?নাকি আপনাদের কে আরও প্রমান দেয়া লাগবে। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আপু তাই বলছি রাইসার সাথে মিশে আমাকে নিয়ে ভেবে নিজেকে আরও নিচে নামাবেন না, ( আমি)
আমার কথায় এনা আপুর মধ্যে ইফেক্ট পরলেও রাইসার তেমন কিছুই দেখা গেলো না। আমিও রেগে তাই চলে এলাম। কিন্তু এতক্ষনের সব কথা কেউ সাইডে দাঁড়িয়ে শুনছিলো আর মুচকি হেসে বিরবির করে বলতে লাগলো-
— দ্যটস মাই ঈশু পাখি। আরাভ এর কুইন। কথার তেজেই আজ তুমি বুঝিয়ে দিলে পাখি তুমি দুর্বল নয়। কিন্তু তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে জান। ভালোবাসি আমি। আমার পরিটা কে।
#চলবে____________ #সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৬
আধো আধো চোখে দেখছি, মিঃ চৌধুরী আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন৷ বিরবির করে কিছু বলছে কিন্তু আমার কানে তার বলা বাক্য গুলো আসছে না। কিন্তু এতটুকু শুনতে পেলাম –
— জান, কিছু হবে না পাখি। আ’ম সরি। সরি পাখি আমি তোমাকে না ছুঁলে আজ তোমার এমন অবস্থা হতো না।
লোকটা এই কথাটা না হলেও হাজার বার জপ করেছে। হালকা চোখে ভাবতে লাগলাম কিছুক্ষন আগের কথা।বাগান থেকে আসার পর থেকেই শরিরে ঠান্ডা অনুভতি হয়। গল্প করতে করতে সবাই ডিনার শেষ করার লাস্ট মোমেন্ট এ মাথা ঘুরতে আরম্ভ করে। তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে বসে থাকি ডিনার টেবিলে সবার সাথে। কিন্তু হটাৎ গা গুলিয়ে উঠলে নিজেকে সামলে কোন মতে উঠে বেসিনে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে দেই। আমার এই অবস্থা দেখে সবাই নিজের খাওয়া রেখে আমার কাছে চলে আসে৷ মিঃ চৌধুরী উত্তেজিত কন্ঠে বলতে আরম্ভ করে –
— ঈশু কি হয়েছে, জান শরির খারাপ লাগছে।এদিকে এসো। (মিঃ চৌধুরি)
— আ আমার খুব খারাপ লাগছে চৌধুরি সাহেব। ( আমি)
আর কিছু বলার আগেই মাথা ঘুরতে লাগলো। মিঃ চৌধুরী আমার মাথা তার বুকে নিয়ে চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো।কিছু সময় বাদে নিজের শরিরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে ঢলে পরলাম ওনার গায়ে। আমাকে আকরে নিয়ে কোলে তুলে নিলেন। ভরসার স্থান পেয়ে মুখ গুজে দিলাম। ওনার পিছনে একে একে সবাই ঘরে এলো।
— সায়ন, ডা. মিতা কে ফোন কর। আর গাড়ি পাঠিয়ে দে ওনাকে নিয়ে আসবে। ঈশু পাখির শরির ঠিক নেই,। ( মিঃ চৌধুরী)
— হ্যাঁ ভাইয়া এক্ষুনি করছি। ( সায়ন)
— মেয়েটার তো এমন হুটহাট শরির খারাপ করে না। কি হলো ওর। ( চাচিমা)
— আম্মু ওর তো শরির গরম হয়ে আসছে। আর সেন্স তো এখনো নেই। সায়ন প্লিজ কিছু করো। ( আপু)
— কল করেছি ভাইয়া। উনি আসছে। কান্না করো না তুমি সামিয়া। ( সায়ন)
মিঃ চৌধুরী এক ধ্যেন এ আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু সময় এর মধ্যেই আমার চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। চোখে মুখে পানি দিলে আস্তে করে চোখ খুলে সবার আগে গভির চাহনির মানুষটার ব্যকুল চোখ জোরাই নজরে পরে। আমাকে তুলে বসালে। আধো আধো কন্ঠে সবাই কে চিন্তা করতে বারন করি৷ কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন মিঃ চৌধুরী গায়ে গড়গড় করে বমি করে দেই। সবাই নাক ছিটকালেও এই মানুষটার মুখে শুধু আমি ব্যকুল চিন্তার আভাস পাই।আমি লজ্জা ভয়ে কান্না করে দেই। নিজের সাথে ওনাকেও নোংরা করে দিয়েছি৷ ভয়ে জোড়ে জোড়ে কান্না করে দেই। তখন ডা. মিতা রুমে প্রবেস করে। মিঃ চৌধুরী কে দেখে বলে আগে আমাকে ফ্রেশ করে দিতে। আপু আর চাচিমা কাছে এলে মিঃ চৌধুরী মানা করেন। সবাই কে স্পেস দিতে বললে। সবাই রুম এর বাহিরে যায়। আমি আধো কন্ঠে ভয় পেয়ে বলে উঠি-
— আ আমি ইচ্ছে করে করি নি। প্লিজ আ আমাকে বকবেন না। এ্য এ্য এ্য। ( আমি) ( কান্না করে)
— হুস জান। কিছু হয় নি। কান্না করো না পাখি৷ আমি এতটুকু রাগ করি নি। আমি ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি পাখি। তুমি চুপচাপ থাকো৷
আচ্ছা এইভাবে তার গায়ে বমি করে দিলাম। কি গন্ধ ছি। আর এই মানুষটার মুখে শুধু আমাকে নিয়েই চিন্তা। এতটুকু ঘৃনা নেই এসবে? আচ্ছা আমার কপালে কি সত্যি এত সুখ ছিলো। ভাবনার মাঝেই আমাকে ফ্রেশ করে চেঞ্জ করিয়ে দিলেন৷ নিজেও ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিলেন। আমাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দিলেন। দড়জা খুলে দিলে সবাই ঘরে প্রবেশ করলেন। ডা.মিতা মুচকি হাসলেন মিঃ চৌধুরীর পাগলামি দেখে।
— ডা. মিতা ওর কি হয়েছে। সন্ধায় তো ঠিক ছিলো। জ্বর এ গা পুরে যাচ্ছে। এখন তো সিজন চেঞ্জ হয় নি তাহলে ও!
(মিঃ চৌধুরী) ( উউত্তেজিত হয়ে)
— মিঃ আরাভ আপনি শান্ত হোন। আপনার ওয়াইফ এর তেমন কিছুই হয় নি। সামান্য জ্বর হয়েছে। আমি চেকাপ করে ইঞ্জেক্ট করে দিচ্ছি। ( ডা.মিতা)
— ওকে। বাট সকালের আগে ঈশু পাখিকে ঠিক হওয়া চাই। এজ সুন এস পসেবল। (মিঃ চৌধুরী)
— আপনি এত চিন্তা করবেন না। ঠিক মেডিসিন আর আল্লাহর রহমত থাকলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। ডোন্ট ওরি। আর আপনারা প্লিজ সবাই বাহিরে যান। এত লোকজন পেসেন্ট এর ঘরে থাকা ঠিক নয়। ( ডা. মিতা)
ডা. মিতার কথায় সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলে মিঃ চৌধুরীকে জিজ্ঞাস করে –
— আচ্ছা মিসেস চৌধুরীর কি আগে থেকেই অসুস্থতা ছিলো? বা শরির খারাপ?(ডা.মিতা)
— নো ডা. ও সম্পুর্ন ঠিক ছিলো। বাট আজ প্রথম ইন্টিমেন্ট হয়েছে তাই, পেইন ছিলো। বিকেলে সাওয়ার নিয়েছে। মেইবি এজন্য এম আই রাইট ডা.. ( মিঃ চৌধুরী)
— ইয়েস। ইউ আর ইন্টেলেজেন্ট মিঃ আরাভ। আসলে প্রথম দিন তাই এমন হচ্ছে আর সাওয়ার টাইমটাও ঠিক ছিলো না। চিন্তা করবেন না আমি মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি। (ডা. মিতা)
কথা শেষ এ আমার জ্বর চেক করে শরিরে মেডিসিন ইঞ্জেক্ট করে দেয়। আমি ব্যথা ভুলে গভির ঘুমে মগ্ন হয়ে পরি। কিন্তু তার আগে মিঃ চৌধুরীর হাত আকড়ে ধরতে ভুলি নি। ডা. মিতা মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন-
— মিসেস চৌধুরীকে খুব ভালোবাসেন তাই না?( ডা.মিতা)
— ভালোবাসি কিনা আই ডোন্ট নো বাট আমার ভালো থাকার জন্য এই মেয়েটাকে ঠিক থাকতে হবে। নাহলে আমার দুনিয়া এলোমেলো হয়ে যাবে। ( মিঃ চৌধুরী)
— যেই আরাভ চৌধুরীর নাম শুনলে সবাই কেঁপে উঠে সে যে একটা পিচ্চি মেয়ের প্রতি এত দূর্বল এতটা পজেসিভ সেটা কি সবাই জানে? আর মেয়েরা যারা আইকন আরভ বলতে পাগল তারা কি জানে? ( মুচকি হেসে) ( ডা. মিতা)
ডা. মিতার কথায় উনি মুচকি হাসি দিলেন সুধু। ডা. মিতা মিঃ চৌধুরীদের ফ্যমিলি ডা. তাই ওনার সাথে মিঃ চৌধুরী স্বাভাবিক ভাবেই আচরন করে। ডা. মিতা চলে গেলে, সবাই ঘরে প্রবেস করে আমাকে দেখে যায়। সেন্সের কথা বললে মিঃ চৌধুরী বলে ঘুমের ঔষধ দেয়া আছে কাল ঘুম ভাঙবে। সবাই শান্তির নিঃশ্বাস নেয় শুধু রাইসা ছাড়া। এনা আপুও এসেছে। কিন্তু রাইসার বলা কিছু কথা ওনাকে বারবার ভাবাচ্ছে। সবাই নিজের রুমে চলে গেলে মিঃ চৌধুরী আমার কাছে এসে কপালে চুমু খায়। গলায় কিস করে বলে ওঠে-
— খুব কষ্ট হচ্ছে পাখি। আ’ম সরি। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তোমার খেয়াল রাখতে পারি নি। ( মিঃ চৌধুরী)
মিঃ চৌধুরী আমাকে ছুঁয়ে কথাগুলো বলার সময় ওনার ফোনে কল আসে। আমার দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করতেই শোনা যায় কারো কথা-
— স্যার কিছু ইনফরমেসন পেয়েছি। ১৭ বছর আগে এখানেই একটা বাচ্চা মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো। আর আপনার সন্দেহ্ ঠিক ছিলো।
মিঃ রহমার আর মিসেস শাহানার মেয়ে ছিলো। মেলায় এসেছিলো তারা। আর শোনা যাচ্ছে এখান থেকে আগেও বাচ্চা চুরি হয়েছে। একটা গ্যং এই কাজ করে। প্রতি বছর বাচ্চা চুরি করে তারা। ( অজানা)
— গুড। অনেক বড় কাজ করেছো তুমি। এর পুরষ্কার তুমি পেয়ে যাবে। আর হ্যা এর পর কি করতে হবে জানো নিশ্চয়ই। ( বাঁকা হেসে)( মিঃ চৌধুরী)
ফোন রেখে আমার কাছে এসে মিঃ চৌধুরী ঝুঁকে যায় আমার ওপর। ঠোঁটে হালকা চুমু খেয়ে বলে ওঠে-
— আমার পাখি, তোমার ওপর আর কারো আঙুল
তোলার সাহস আমি দিবো না। খুব শিগ্রই তোমার জন্য বড় সারপ্রাইজ আছে জান। (মিঃ চৌধুরী)
——————————————————————
— মেয়েটার কি হলো বলো তো। কি সুন্দর আমাদের সাথে সারাটাদিন হই হুল্লোর করলো। ( চাচিমা)
— আমার খুব চিন্তা হচ্ছে নিপা। মেয়েটা আমার সুখে থাকবে তো। ( চাচ্চু)
— তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আজতো দেখলে আরাভ মেয়েটাকে কত ভালোবাসে। কি যত্ন নেয় মেয়েটার। ( চাচিমা)
— সেটাই তো ভয় নিপা।মেয়েটার আসল পরিচয় জানলে যদি আরাভ ও ওকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাহলে তো ঈশা সহ্য করতে পারবে না। এমনিতেই মা বাবার ভালোবাসা পায় নি। এখন যদি তাও হারিয়ে ফেলে মেয়েটা আমার নিঃস্ব হয়ে যাবে। ( চাচ্চু)
— আমি আরভ এর চোখে ঈশার জন্য অসিম ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি। চিন্তা করো না। আরভ কে কাল সবটা বলে দিও। এমনিতেই বিয়েটা যেই পর্যায় হয়েছে। তাই বলা হয়ে ওঠে নি- ( চাচিমা)
তাদের কথার মাঝেই দড়জা নক করার শব্দ পায়। চাচ্চু দড়জা খুলে অবাক হয়ে বলে-
— বাবা তুমি এত রাতে। ঈশা ঠিক আছে তো? কি হয়েছে আরাভ? ( চাচ্চু)
— ঈশা ঠিক আছে চাচ্চু। আর একটু কথা ছিলো। সরি এত রাতে আসার জন্য।(মিঃ চৌধুরী)
— না না আরাভ ভিতরে এসো বাবা। ( চাচিমা)
— ঈশা কে? কি ওর পরিচয়? কোথায় পেলেন আপনারা ওকে?( মিঃ চৌধুরী)
মিঃ চৌধুরীর কথায় চাচ্চু চাচিমা ভয় পেয়ে যায়। ওনার গভির কন্ঠ বলছে উনি রেগে আছে। চাচ্চু ভয় পেয়ে মিঃ চৌধুরীর হাত ধরে বলে-
— বাবা ওর কোন দোস নেই। বিশ্বাস করো মেয়েটা এসবের কিছুই জানে না। আমি তোমাকে সব খুলে বলছি প্লিজ বাবা আমার মেয়েটাকে ভুল বুঝবে না। ( চাচ্চু)
— আহহ কি করছেন। এই আরাভ তার ঈশু পাখিকে এই সামান্য বিষয় ভুল বুঝবে এটা ভাবলেন কিভাবে। আমাকে সবটা বলুন। আমি দেখেছি আমার ঈশু পরি কে এই বাড়িতে কিছু মানুষ কিভাবে ট্রিট করে। ( মিঃ চৌধুরী)
— ঈশা কে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছি আরাভ। ( চাচিমা)
কিন্তু চাচিমার কথায় মিঃ চৌধুরীর কোন ভাব গতি হলো না। মনে হয় উনি জানতেন।চাচ্চু আর চাচিমা একে অপরের মুখ চাওয়া চাইয়ি করছে ওনাকে স্বাভাবিক দেখে। চাচ্চু নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে-
—১৭ বছর আগে আমরা পিকনিকে গিয়েছি। তখন নাবিলার নতুন বিয়ে হয়। ও বাচ্চা কনসিভ করে নি তাই মনমরা হয়ে থাকতো। কিন্তু আমার ভাই এই অবস্থা দেখে প্লেন করে একদিন সবাই পিকনিকে গিয়ে ওর মন ভালো করবে। নিপা ও নাবিলাকে জোর করে নিয়ে নেয়। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর রাস্তার আমরা দেখি তিন কি সাড়ে তিন বছরের এক বাচ্চা কান্না করছে। গাড়ি থেকে নেমে ওকে জিজ্ঞাস করলে কিছুই বলতে পারে না। শুধু মেলা কথাটাই ওর মুখে আসে। আশেপাশে খোজ নিয়ে জানতে পারি মেলা আরেকটু দূরে হচ্ছে। কিন্তু মেলায় গেলে দেখি চোর নিয়ে গন্ডগল হচ্ছে। অনেক বাচ্চাই নাকি হারা গিয়েছে। অনেক খুজেছি ওর বাবা মাকে পাই নি বাবা।( চাচ্চু)
— তারপর – ( মিঃ চৌধুরী)
— থানায় কমপ্লেন করলে বলে এত ছোট বাচ্চা রাতে কোথায় রাখবে। ওনারা খোজ করবে। তাই ওকে আমরা নিজের কাছেই রাখি। ৪/৫ দিন খোজ করার পর জানতে পারি সবাই তাদের বাচ্চা পেয়েছে শুধু ঈশার খোজ কেউ করে নি। কিন্তু এ কদিনে নাবিনা নিজের বাচ্চার মতো মিশে যায় ঈশার সাথে। এভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু কাউকেই খুজে পাই নি। আস্তে আস্তে নাবিলা আর ফারুক নিজের মেয়ে বানিয়ে নেয় ঈশা কে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ১ বছর পর। যখন নাবিলা কন্সিভ করে। রাইসার জন্ম হলে নাবিলে ঈশা কে সহ্য করতে পারে না। ওকে দূরে সরিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে আমার মেয়েটাও মা হারা হয়ে যায়। তবে ফারুক যথেষ্ঠ ভালোবাসতো ঈশা কে। ওর গায়ের পোশাক আর কথার ধরন আচরনে আমরা বুঝতে পেরেছি কোন ভালো বড় ফ্যমিলির। কিন্তু নাম না জানায় আমরাই ওর নাম দিলাম ঈশা। প্লিজ বাবা আমার মেয়েটাকে জানতে দিও না এসব ও শেষ হয়ে যাবে এসব শুনলে। তুমি- ( চাচ্চু)
— চিন্তা করবেন না আমার পরি আমার কাছে রানীর মতো এসেছে আমার কাছে সে ভালোবাসার পুতুল হয়ে থাকবে। এতটুকু কষ্ট ওর হবে না।( মিঃ চৌধুরী)
— আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবেসে দেখো ও কাওকে কষ্ট দিবে না। ( চাচিমা)
— আচ্ছা চাচ্চু এমন কোন এভিডেন্স আছে বা কিছু যেটা ইশার সাথে ছিলো। আই মিন ওর কাছে কিছু ছিলো?( মিঃ চৌধুরী)
— হ্যাঁ হ্যাঁ আছে ওর ড্রেস গুলো আমরা হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু ওর একটা পেইন্ডেন আছে যেটা ওর গলায়। আর বডি মার্ক হিসাবে ওর বা হাতে দু-টো তিল আছে। ( চাচিমা)
— ঈশার গলায়, মানে ওই যে পরি দেয়া স্টোন পাথরের পেনন্ডেন। ( মিঃ চৌধুরী)
— হ্যাঁ বাবা, ওইটা ছোট বেলায় ওর সাথে ছিলো। ( চাচ্চু)
মিঃ চৌধুরী সন্ধার কথা ভাবতে লাগলো যখন আমাকে ঘারে কামড়ে দেয়ার সময় সেই পেনন্ডেন এ ব্যথা পেয়েছে আর আমি খিলখিল করে হেসে দিয়েছি। উনি হেসে চাচ্চু আর চাচিমার থেকে বিদায় নিয়ে বেডরুমে চলে এলেন। আমার হাত ধরে বললেন-
— আমি সন্ধান পেয়ে গিয়েছি পাখি। আর মাত্র কিছুদিন। তোমার জন্মদিনেই তুমি তোমার সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা পাবে জান।বলতে বলতে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। (মিঃ চৌধুরি)
#চলবে____________
(