স্বামী পর্ব -৩৩

###__স্বামী__###
পর্ব-৩৩
#Nirzana(Tanima_Anam)

-আনিকা আপু তুমি না বলছিলা অনুর কখনো বেবি হবে না তাহলে ও ক্যান্সিভ করলো কি করে??তাহলে কি সব ভুল বলো??আমি বাবা হবো তাই তো??
-নির তুই বোধয় আমার কথা বুঝতে পারিস নি!!অনুর সমস্যাটা ওভারিতে ওর ক্যান্সিভ করার ক্ষমতাতো আছে তবে নিজের মধ্যে আরেকটা অস্তিত্ব ধারণ করার ক্ষমতা নেই।বিষয়টা তো একই হলো তাই না??
-কিন্তু আপু…..কোনো ভাবেই কি কিছু করা সম্ভব নয়?অনু মা হতে চায় আমি ও তো… আমি কি করে….
-নির বিষয়টা খুব রিস্কি ইনফ্যাক্ট এতে হয় মা নয় তো বেবি দুজনের একজনের ক্ষতি হবে।আর কখনো কখনো তো দুজনরই…..
-তাহলে উপায়……??
-উপায় একটায় অনুকে রাজি করা আজকাল অনেক ভাবেই তো বাচ্চা নেওয়া যায়।তোরা বরং কোথাও থেকে একটা বেবি….আমি কি বলছি তুই বুঝতে পারছিস তো??
-হুম্ম……(মাথা নিচু করে)
-নির…..
-আমি দেখছি অনুকে….

নির্ঝর আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে।চোখ দুটো ছল ছল করছে।হয়তো মনের কোনো এক কোণে একটু আশার আলো উকি দিচ্ছিলো তবে আনিকা আপু কথায় সেই অন্ধকারে জ্বলে উঠা প্রদিপটা দপ করে নিভে গেছে।
না হয় একটু ইচ্ছে বিসর্জন দিলোই তাতে কি তবে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে অনুকে বিসর্জন দিতে পারবে না।সত্যিই তো বেবি অনেক ভাবেই নেওয়া যায়…অনুকে বোঝাতে হবে!!

নির্ঝর ঘরে যেতেই দেখে অনু গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে।বোধয় ঠান্ডা লাগছে।নির্ঝর একটু এগিয়ে গিয়ে অনুর গায়ে কাথাটা টেনে দেয়।

কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে।অনুকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।তবে সেই ক্লান্ত মুখে কেমন এক পরিপূর্নতার ছাপ ফুটে উঠেছে।অনুর মুখে অপূর্নতার মেঘ কেটে গিয়ে এক পূর্নতার দিপ্তি ফুটে উঠেছে।তবে আফসোস যদি অনু সেই পূর্নতার স্বাদ পেতো।যদি কোনো সাইন্স মিথ্যে হতো তবে কি খুব ক্ষতি হতো!!
কি জানি কি হতো……নির্ঝর আর নিজেকে সমলাতে পারছে না।বড্ড লোভ হচ্ছে।একটা সন্তানের লোভ।সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার লোভ। ছোট ছোট হাত পা আর আধো আধো বুলিতে বাবা ডাক।
ইসসসসস্ সব যদি মিথ্যে হতো!!
আর আমি যদি……

নির্ঝর ড্রয়ার থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বারান্দায় হাটা ধরে।
আজ অনেক দিন পর সিগারেটের নেশা লাগছে।নেশাটা কেমন জানি মাথায় চড়ে বসছে।ভেতর টা পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছে।ঠিক এই সিগারেটের আগুন যেমন একটু একটু করে গোটা সিগারেটটা পড়িয়ে নিঃস্বেষ করে দেয়।ঠিক তেমনটা।

নির্ঝরের মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।
অনু কি কখনো রাজি হবে অ্যার্বশান করাতে??কি করে রাজি করাবে তাকে!!
যেটা সম্ভব নয় সেটা নিয়ে ভেবে কি লাভ??অনুকে তো সত্যিটা বুঝতে হবে….!!কিন্তু
নাহ্ কিছু মাথায় আসছে না……
একে একে তিনটে সিগারেট অলরেডি শেষ করে ফেলেছে সে….
চার নম্বরটা মুখে নিতেই কেউ একজন ছোঁ মেরে কেড়ে নেয়…..
নির্ঝর তাকিয়ে দেখে অনু ঢুলু ঢুলু চোখে তার সামনে দাড়িয়ে আছে…..।।

-বারণ করছি না স্মোক করতে!!ঠোট পুড়ে যাবে!!
-উঠে এলে যে…..ঘুম হলো???(অবাক হয়ে)
-স্মোক করলে কিন্তু…
-আপাতোতো চুমু টুমু খেতে ইচ্ছে করছে না।সিগারেটটায় বেটার ওপশন!(মুচকি হেসে)
-বিষয়টা কিন্তু এখন আর শুধু চুমুতেই সিমাবদ্ধ নেই।হুহ্
-তাহলে???
-সিনিয়র মি.চৌধূরী জুনিয়র চৌধুরীর কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে….!!এই যে দেখো এতো ছোট্ট মানুষ এতো কঠিন ধূয়া সহ্য করবে কি করে?ওর তো খুব কষ্ট হবে তাই না??তুমি তো বাবা তোমাকে তো বুঝতে হবে না কি??(একগাল হেসে)

নির্ঝর আর নিজেকে সামলাতে পারে নি অনুকে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।অনু হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে।নির্ঝরের কান্নার মানেটা বুঝতে না পারলেও নির্ঝরের চোখের পানি অনুর বুকেঁর ভেতরে কোনো এক জায়গায় আঘাত করছে।কোনো এক অজানা ভয়ে বুকটা বার বার কেঁপে উঠছে…….
“কি হতে চলেছে তার জীবনে”

এদিকে…..

মাঝ রাত পেরিয়ে গেছে।ঘড়িতে এখন রাত দুইটা বেজে কুড়ি মিনিট।নীরা একা একা বাসর ঘরে বসে আছে।ঠিক বসে নেই কখনো বসছে কখনো দাড়াচ্ছে কখনো বা পায়চারি করছে।মোট কথা সায়নের জন্য অপেক্ষা করছে সে।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না।সায়নের আসার নামই নেই।
সায়নের না আসার কারণটা নীরা একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে।তাই বসা থেকে উঠে দাড়ায়।ঘরটা সিমসাম।খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।

আর চার দিক ফুলের সুবাসে মো মো করছে।তবে সমস্যা হলো ঘরটায় সাথে কোনো বারান্দ নেই।বারন্দা থাকলে সেখানে গিয়ে একটু আকাশ দেখা যেত।
আবার আকাশ দেখার ছলে একটু কন্না কাটিও করা যেত…….তবে বেশি কান্না করা যাবে চোখে এক গাদা কাজল লাগানো কাজল ঘেটে গেলে আবার সমস্যা
তবে আপাতাতো তেমন কোনো উপায় নেই তবে দক্ষিনে একটা জ্বানালা আছে জ্বানালাটা দিয়ে একটু চাঁদের আলো উকি ঝুকি মারছে।নীরা জ্বানালার কাছে চলে যায়।আকাশের বড় চাঁদটাকে কতোগুলো মেঘ ঢেকে রেখেছে।নীরার জীবনটাও আপাতোতো মেঘে ঢাকা সেখানে সুখের কোনো চিন্হ মাত্র নেই……
“সায়ন আদোও কি তাকে মেনে নেবে।কি হতে চলেছে তার ভবিষ্যত….”

এমন শত শত চিন্তার সাগরে ডুব দেয় নীরা……
মাঝে মাঝে চিন্তার সাগরে তলিয়ে যেতেও ভালোই লাগে।

হটাৎ দরজা খোলার শব্দে একটু কেঁপে উঠে নীরা।
পেছন ফেরে তাকাতেই দেখে সায়ন এসেছে।মুখটা কেমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে সে।ঘড়িতে এখন প্রায় তিনটা বাজতে চললো।

সায়নও নীরাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু চমকে যায়।তার ধারনা ছিলো নীরা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে…
-এহ্হম্ম…..এখনো ঘমোও নি কেন???
-ঘুম পেলেই তো মানুষ ঘুমাবে….না পেলে কি করবে শুনি??
-অনেক রাত হয়েছে তো!!
-সেটা আপনারও মনে রাখা উচিত ছিলো রাত বেরেছে…..
-আসলে আমি মানে আমার…..(মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
-আমি সোফায় সুচ্ছি আপনি খাটে সুয়ে পড়ুন!!
-সরি নীরা আমার একটু সময়ের প্রয়োজন ছিলো বাট আই প্রমিজ আমি তোমাকে তোমার যোগ্য সন্মান….
-জানি…আপাতোতো ঘুমিয়ে পড়ুন….!!
-নীরা….আমার কথাটা শুনো।।

-আপনার যতো সময় লাগবে নিন কে ধরে রেখেছে….তবে একটা কথা মনে রাখবেন দিন শেষে আপনি আমার স্বামী আর আমি আপনার স্ত্রী!!যান আপনি সোফায় শোন আমি খাটে…..
-আমি সোফায় শোবো???
-আপনি নিজেই তো সোফায় শুতে চাইলেন!!
-না মানে….

সায়নকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নীরা খাটের উপর ধপ করে সুয়ে পড়ে…..
সায়ন হা করে দাড়িয়ে আছে….

-কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছেন কেন??তা বাকি রাত কি দাড়িয়েই কাটাবেন??
-না ঠিক তা নয়…কিন্তু
-গুড নাইট!!

সায়ন কি মনে করে সোফায় গিয়ে বালিশটা নিয়ে এসে নীরার পাশে দুম করে সুয়ে পড়ে।
তার ধারনা ছিলো নীরাই হয়তো তাকে বিছানায় শোয়ার জন্য বলবে।

নীরা অন্যপাশ ফিরে সুয়ে আছে।সায়নের কান্ড দেখে নীরা একটু মুচকি হেসে সরে আসে…..
সত্যিই তো সারা দিন যতো ঝড় ঝাপটায় আসুক না কেন….যতো সুখ দুঃখ মান অভিমানের পাহাড় জমে থাকুক না কেন
“দিন শেষে একটা পরিচয়ই মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকে তাহলে #স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক…..যার ভিত্তির শুরু হয় এক পবিত্রতা দিয়ে”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here