#স্বামী(সিজন-২)
#পর্ব-৬
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
__________________________
“- পাপ কি পাপ?
যার জন্যে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে গেছে উনি।
— বুঝলাম না।
” তিতিল তোমার স্বামীর খুনি আমি।
এই হাতে এই হাতে ওকে ওর বিয়ের দিন খুন করেছি।
–তিতিলের বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। আসলে কি বলতে চাইছে।আমার স্বামী মানে আদনান।তাকে উনিই মেরেছে।তাও আমার বিয়ের দিন।
-” কিহ!!!!
” হ্যা তিতিল আদনান কে আমিই গুলি করেছিলাম।
-তিতিলের চোখ ভেজা তবে আপশুস একটাই এক স্বামীর হাতে আরেক জন খুন।
এক জন মাদক ব্যাবসাহি কে গুলি করার পর নিজেকে অপরাধি ভাবা এটা কেমন বিষয়। উনিতো উনার দায়িত্ব্য পালন করেছিলো।
—তোমার বিয়ের দিন তুমি হয়তো বাসর ঘরে তার জন্যে অপেক্ষা করছিলে।
ঠিক তখনই আদনান দোকান থেকে একটা ফুলের তোরা কিনে বের হচ্ছিলো।
আমরা খবর জানতাম সে এই মাদক ব্যাবসায় জরিতো আছে। যুব সমাজকে নষ্ট করছে।
তার মাছের খামারের পাশা পাশি সে এই কাজই করত। তবে কোন প্রমান না থাকায় তাকে ধরা মুসকিল ছিলো।
পুলিশ ওর উপরে কড়া নজর রাখছিলো।ওকে ধরতে পারলে বড় মাছ গুলোকে ধরা সোজা হত।
“-তিতিল রিদয়ের কথার আগা গুরা বুঝতে পারছে না।
দয়া করে আমায় সবটা খুলে বলুন।কি করেছেন আমার স্বামীর সাথে।
-মৃত ব্যাক্তির জন্য এত দরদ।হবেনাই বা কেন। সে যাই করুক।বিয়ে করে ঘরে তুলেছে তাকে।স্বামী তিতিলের।আর ফুল গুলো তিতিলের জন্যেই আনতে গিয়েছিলো। আর সেই ফুল কিনতে গিয়ে এমন কি হয়েছিলো??
—
” রিদয় তিতিলের হাতটা চেপে ধরে বললো আমি নিরুপায় ছিলাম তিতিল তাই এমনটা হয়েছে আমায় ক্ষমা করো।
-আল্লাহর দোহাই লাগে বলুন কি হয়েছে সেদিন।আমি আর পারছিনা আপনার বাহানা সজৎ করতে।বলুন কি হয়েছিলো।
“এবার তিতিলের উচু গলার শব্দে রিদয় বিভ্রস্ত।
উচু গলা হবেনা কেন।এই লোকটার জন্যে বাসর রাতে স্বামী ফুল কিনে বৌ কে দেবে বলে বেরিয়েছে।আর এসেছে লাশ হয়েছে।শুনেছে অপয়া অপবাদ।আর স্বামীর মুখটা শেষবার কেউ দেখতে দেয়নি।
সেখানে থাকলে, এখানে এসে এত কষ্ট সইতে হত না।
আমার জীবনটা এমন হত না। অন্য মেয়ের সাথে উনার প্রেম কাহিনি শুনতে হত না।
সে যাই করত।করুক আমার জীবনের একজন হয়তো থাকতো।এখন তো কেউ নেই কেউ নেই।
– ঐদিন আমি সেই পথেই এক ডাকাত দলের একজনকে ফলো করছিলাম। রাস্তাটা বেশ অন্ধকার ছিলো।
আদনান বাইকে ছিলো । আমার সাথে আরেকজন কন্সট্রেবল ছিলো।দুজনে ঐ ডাকাত টার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারিনি। সে আমাদের থেকে বহু কদম এগিয়ে।
শেষ মেস বাদ্ধ্য হয়ে গুলি চালাই।ডাকাত আর আমাদের মাঝে বেশ গুলাগুলিই চলছিলো। তেমন আলো ছিলোনা রাস্তায়, তাই এত কষ্ট হচ্ছিলো তাকে ধরা।
ডাকাত টা যখন পালানোর জন্যে অন্ধকারে ঢুকে পরে । তার পর একটু আলোর ঝলক দেখে ভেবেছিলাম ডাকাত। দূর থেকে বুঝতে পারছিলাম বাইক হবে
তখন আবার দুজনে কয়েকবার অন্ধকারে গুলি চালিয়ে দিই।
গুলি নিশানায় লেগেছে। বাইকে করে পালাতে চেয়ে পারল না ডাকাত টা। বাইক সহ রাস্তায় লোটে পরেছে।
দৌড়ে ছুটে যাই সেই গুলিবিদ্ধ মানুষটার কাছে।
তবে অবাক করা কান্ড গুলি ডাকাতের নয়।বরং আদনানের বুকে বিধেছে মোট তিনটে গুলি তার শরিল চিরে বেরিয়েছে।
-হাতে থাকা ফুল গুলো রক্তে ভেসে গেছে।
কিছু বলতে চাইছিলো তবে বলা হয়নি সেখানেই সে মারা যায়।
“-খবরটা আমার সিনিয়রদের কানে আসার পর তারা পুলিশের ইজ্জত বাঁচাতে কিছু ইয়াবা আদনানের পকেটে পুরে দিয়ে হাতে এক অবৈধ পিস্তল রেখে মিথ্যা ঘটনা রটায়।
আদনান ইয়াবা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।তাকে ধরতে গেলে সে গুলি চালায় আর তার পর পুলিশ বাদ্ধ্য হয়ে গুলি করেছে।
ঘটনাটা মিথ্যা তবে আদনান এই কাজ করত তা সত্য।
“আমি কিছুই করতে পারিনি তিতিল।বাবার সন্মান বোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে সিনিয়রদের অর্ডার ফলো করেছি মাএ। বলতে পারো হাত পা বাধা ছিলো।
আদনান ধরা পরলে হয়তো ওর শাস্তি হত ঠিক তবে মূত্যু দন্ড তো হত না।তবে আমি এই হাতে গুলি করেছিলাম তাকে।
দিনে রাতে এই পাপ আমায় কুরে কুরে খাচ্ছিলো।
আরো বেশি পাপি মনে হচ্ছিলো যখন জানলাম সে বিয়ে করা বৌ কে রেখে ওর জন্য ফুল নিতে এসেছিলো।
আর তার বৌকে ঐ বাড়িতে থাকতে দেয়নি।
সার্থের জন্যে নিজের দুষটা আদনানের উপর চাপিয়ে যে পাপ আমি করেছিলাম।সেই পাপ আজো আমায় ধাওয়া করে বেরায়।
তার পর ওর বাড়ির সব খবরা খবর নিতে শুরু করলাম।সেখান থেকে তোমার খুজ মিললে তোমার বাড়িতে গিয়ে আসেপাশের মানুষ থেকে তোমাদের খবর নিয়ে নিলাম।
আমার জন্যে এক মা তার ছেলে হারিয়েছে।এক স্ত্রী তার স্বামী হারিয়েছে।
নিজেকে কি করে শাস্তি দিবো ভাবতেই পারছিলাম না।একবার তো মনে হচ্ছিলো মরে যাই।ঐ পিস্তল টা দিয়েই নিজের বুকে একটা গুলি করি।
তবে আমি ভিতু তিতিল মরতে ভয় পাই।
আর সেই পাপের প্রাশ্চিত্ব্য করতে তোমায় আমার ঘরে তুলেছি।
—–
তিতিলের মাথা পন পন করে ঘুরছে।মাথায় কিছু কাজ করছে না। চোখে সব ঝাপসা।
রিদয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছুটে আসতেই ধপ করে ফ্লোরে লুটিয়ে পরে তিতিল।
————-
” বিয়ের মাএ কয়দিন এর মধ্যেই মাথা ঘুরানো মানেকি সুখবর আছে নাকি,!
সায়ন কথাটা বলা মাত্রই রিদয়ের চোখ গরমে সে সেখান থেকে পালিয়েছে।
সায়ন তো মজা করে বলেছিলো ভাই যে রাগ করবে কে জানে।
“-তিতিল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।আর নিতে পারছিলো না।তিতিল কে বিধবা এই লোকটা করেছে।আর কাটা ঘায়ে নূনের ছিটেও দিয়ে যাচ্ছে।
“-মাথা অন্য দিক ঘুরিয়ে রেখেছে তিতিল। এমন সার্থপর মানুষকে দেখতে ঘিন্না করছে।
–আরিফ রহমান সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। রোকেয়া এক গ্লাস দুধ রেখে চলে এসেছে।
কেন এমন হল বা কি হয়েছে তা জানতে চাননি। কারন ঘরের বাহিরে থেকে সব শুনছিলো আরিফ রহমান।
”
-তিতিল!
ডাক দিয়ে ওর মাথসয় হাত রাখার আগেই তিতিল উঠে বসেছে।
একদম ছুবেন না আমায়।আপনার মত মতলবি মানুষ আমি আজ অবদি দেখিনি।
“যা বলতে চায় বলুক রিদয় রাগ করছে না।বলুক আঘাত টা এত যে গায়ে হাত তুললেও শব্দ করব না।
“-আমার লাষ্ট কথাটা শুনে নাও।
–না আর কোন কথাই শুনতে চাইনা। কি ভাবেন নিজেকে।
এক বিধবাকে বিয়ে করে আপনার পাপ মূচন হবে?
ভুলে যাবেন না আমাকে বিধবা বানানো কারি আপনিই ছিলেন।
” তিতিল!!
–বাস অনেক বলে নিয়েছেন।আমি আপনার চোখে তিতিল নই না আপনার বৌ।আপনার চোখে আমি এক এতিম মা হারা মেয়ে।এবং বিধবা।আর দয়া করে ঘরে তুলে দায়িত্ব্য শেষ মনে করছেন।
আমিতো তোমায় এই সমাজের থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম তিতিল। তাদের মুখ বন্ধ করেছি।
“কোন সমাজের কথা বলছেন?
–বড্ড দয়া করে ফেলেছেন আমার উপরে।বিধবাও তো ভালো ছিলো।স্বামীর খুনির সাথে থাকার চেয়ে ঐ স্বামীর নাম নিয়ে বেঁচে থাকাই শ্রেয় ছিলো।
“আমার অন্যায় হয়েছে মানছি তার যা শাস্তি চাও দিতে পারো কোন বাধা নেই।
-কি শাস্তি দিবো বলুন!
করুনা করে বিয়ে করে এনেছেন ঠিক।মনের কৌঠায় জায়গা হল না। তাহলে এমন বিয়ের মানেকি?? কিসের জন্য এই মিথ্যা বিয়ের নাটক।
একটা খুনি মিথ্যাবাদীর কি শাস্তি আমি আর দিতে পারব বলুন।
-” এখন তুমি যা চাও তাই হবে।
—–কোন বিলম্ব না করে তিতিল তার সাফ কথা জানিয়ে দিতে চাইছে।এর আগে রিদয়ের শেষ উওরটা জানতে চায় তিতিল।
“আগে বলুন তো।আমায় ঘরে তুলেছেন।মনের ঘরে কখনো ঠাই দিতে পারবেন?
সেতুকে ছারা থাকতে পারবেন?? নাকি ওকে নিয়ে ঘর বাধার সপ্ন আপনার চোখে??
“-প্রশ্ন দুটো রিদয়কে ঘামিয়ে তুলেছে এর উওর কি হবে?? না সে তিতিলকে একা ছারতে চায়।আর না সেতুকে হারাতে চায়। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায়না তবে এখন তার মনের হাল সে নিজেই জানেনা।
-আপনি ভেবেছেন আমায় বিয়ে করে আমার জীবন ধন্য করেছেন।কিন্তু না আপনি শুধু আমার বিশ্বাস নয় আপনার ভালোবাসার বিশ্বাস ভংগ করেছেন।
আপনি কি করবেন তা আপনি নিজেই জানেন না।
তবে আমার স্বামীর খুনিকে আমি ছারব না।
-”
” এখন কি চাও কি করলে শান্তি পাবে তাই হবে তুমি বলো।
আদনান কেসটা রি উপেন হবে।আমি তার হত্যার বিচার চাই।আপনায় কাঠগরায় দেখতে চাই।
“বাস এই টুকুই!!
এতটা দিন মনে যে বুঝা নিয়ে ঘুরছি তার চাইতে তো ভালো এই হবে।এই দম বন্ধ হওয়া টা তো থাকবে না। তুমি তাই করো।আমার অপরাধ আমি শিকার করব।
–আরো কিছু থাকলে তাও বলো.. আর কি শাস্তি হলে তুমি শান্তি পাবে।
আমার স্বামীর খুনির সাথে আমি থাকতে রাজি নই।আমি আপনার থেকে তালাক চাই।————-
” চলবে”