হারিয়ে গেলে ভুলো না আমায় পর্ব -০২

#হারিয়ে_গেলে_ভুলো_না_আমায়
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০২

টুম্পা ছাদের রেলিং এর কাছে এসে দাঁড়াতে চোখমুখ গিজগিজ করে।রাগে রেলিং এ খুব জোরে হাত দিয়ে একটা ঘুষি মেরে বলে,
“আমি নিহাল ভাইয়ার সামনে গেলে কেনো চুপ হয়ে যাই, বলতো?ভয় পাই কেনো।তাকে?উফফ!রাগ হচ্ছে এখন নিজের উপর।তখন মুখের উপর বলে দিলেই তো হতো যে ভাইয়া বাসরঘর আমরাই সাজাবো!”

বাতাসা খিলখিল করে হেসে দেয়।আর চোখ টিপে বলে,
“ভালোবাসার মানুষদের সামনে পড়লে এরকম পরিস্থিতিই হয় রে টুম্পা!মুখ দিয়ে কোনো কথা আসে না।প্রতিবাদ তো দূরে থাক!”

রিধি বাতাসার মুখে “ভালোবাসার মানুষ” কথাটি শুনে বেশ অবাক হয়।বাতাসাকে বলে উঠে,
“ভালোবাসার মানুষ মানে?”
” কেনো তুই জানিস না আমাদের টুম্পা আপা যে নিহাল ভাইয়ার উপর প্রেমে গোপনে হাবুডুবু খাচ্ছে!”

টুম্পা ওমনিই ফোঁড়ন কেঁটে বলে উঠে,
“এখন গিয়ে প্রপোজ করে আসবো?আর যে চেপে রাখতে পারছি না!কতকাল এভাবল গোপনে ভালোবাসবো!”
“করতে পারিস।আমার মতে দেরী করা ঠিক না একদম।এই দেরীর সময়টুকুতে হয়তো অন্যকেউ সেখানে চলে আসবে।তাহলে ভালোবাসার মানুষটিকে আজীবনের জন্যে হারাতে হবে!”

বাতাসার কথায় টুম্পা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।তারপর মনে মনে বলে,মন্দ বলে নি।তবে এখন হুট করে প্রপোজ করাটাও বেমানান।একটি প্লানিং করে করতে হবে।ভেবেই টুম্পা এবার প্রকাশিত কন্ঠে বললো সবাইকে,

“কাল তো আমরা সবাই শাড়ি পড়বো,না?”
“হু।”
“কাল শাড়ি পড়ে নিহাল ভাইয়াকে প্রপোজ করবো।যাতে আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে মাতাল ঘোরে আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করে ফেলে।”

বাতাসা খিলখিল করে হেসে উঠে।তারপর তালে তালে হেসে উঠে পাশে থাকা অন্য কাজিনগুলো।মুখে শুধু হাসি আসে নি রিধির।সে নিরবে, নিশ্চুপে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদ থেকে চলে আসতে পা বাড়ায়।ছাদ থেকে নামতে বাতাসা পেছন থেকে বাঁধ সাঁধে,

“কিরে রিধি?চলে যাচ্ছিস যে?থাক কিছুক্ষণ আরো।আড্ডা তো শেষ হয়নি আমাদের।”
“ভালো লাগছে না আমার।মাথাব্যথা করতেছে।”

বলেই আর দাঁড়ালো না রিধি।উদাস মনে প্রতিটি সিড়িতে পা ফেলতে ফেলতে হঠাৎ পায়ের গতি আবার শ্লথ হয়ে যায়!সামনে পড়ে নিহাল ভাইয়া।রিধির বুকের ভেতরটা দুমড়ে উঠে এবার।চোখে পানি ভরে যায়।নিজেকে খুব শক্ত করে সামলায়!দীর্ঘ একটা হাঁক ছেড়ে মুখে অভিনয়ের ছলাৎ হাসি ঝুঁলিয়ে নিহালকে পাশ কেঁটে নিজে যেখানে থাকে সেই রুমটায় ফিরে আসে।দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে!

“টুম্পা নিহাল ভাইয়াকে ভালোবাসে!আর কালকেই প্রপোজ করতে যাচ্ছে!এটা শুনলাম আমি আল্লাহ!কি শুনলাম!”

বলতে আরো কাঁদতে থাকে রিধি!তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো তার এতটা খারাপ লাগতেছে কেনো!নিহাল ভাইয়া তো তার প্রেমিক নয়!তবে তার বর্তমান অবস্থা জানান দিয়ে দিচ্ছে সেও
গোপনে গোপনে তার নিহাল ভাইয়াকে ভালোবাসে।একটু বেশিই ভালোবাসে!আচ্ছা তার এবং টুম্পার ভালোবাসার পরিমাণ কি এক?নাকি টুম্পার ভালোবাসার পরিমাণ একটু বেশি!যার ভালোবাসার পরিমাণ বেশি নিহাল ভাইয়া তো তাকেই একসেপ্ট করবে!এসব আবার কী ভাবতেছে রিধি!সে তো কখনো নিজ মুখে নিহাল ভাইয়াকে বলতেও পারবে না, “আপনাকে ভালোবাসি।পাগলের মতন ভালোবাসি।”আবারো কেঁদে উঠে রিধি।

—————————————————
সকাল হলে এই বাড়িতে একটা সাজ সাজ রব!বাসার সবাই সাজতে ব্যস্ততুর।ছোট-বড়,জোয়ান-বৃদ্ধ এবং প্রৌঢ়!আজকে বউভাত।নিলয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজন আসবে।বাতাসা এবং টুম্পা দরজা ঠেলে দেখে রিধি এখনো সাজে নি।শাড়ি সেই পাশে ই পড়ে আছে।সে নয়টার দিকে শাড়ি দিয়ে গিয়েছে রিধিকে!এখন বারোটা বাজতে চললো।তারা সেজেগুজে রেডি আর এই মেয়েটা এখনো সাজতেছে না!বাতাসা রাগান্বিত স্বরে বলে,

“কিরে?এখনো সাজিস নি?কিছুক্ষণ পর তো মেহমান চলে আসবে!কখন সাজবি তুই ভাই??”
টুম্পা বলে,
“ভাই একটু তাড়াতাড়ি কর!আমার আবার নিহাল ভাইয়ার সাথে দেখা করতে হবে!কখন প্রপোজ করবো ওই টেনশনে আছি।”

রিধি এবার টুম্পার দিকে তাকায়।আজকে অনেক সুন্দর করে সেজেছে টুম্পা।গাঁয়ে নীল-গোল্ডেনের কাজের উপর একটা রেশমের শাড়ি পড়েছে।ঠোঁটে কড়া করে লিপস্টিক দিয়েছে।হাত-গলা-কানে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে অর্নামেন্ট দিয়েছে।বেশ ভালো দেখাচ্ছে টুম্পাকে!রিধি এবার জড়োসড়ো ভাবে বলে,
“তোদের কে ভালো লাগছে খুব।”

টুম্পা বলে উঠে,
“সত্যিই?আমাকে একটু বেশি না?”
“হ্যাঁ।”
“নিহাল ভাইয়া পছন্দ করবে তো?”

রিধি টুম্পার কথার পিঠে একটু হাসি টানে।তারপর অন্য প্রসঙ্গ টেনে বলে,

“আচ্ছা তোরা বস।আমি শাড়ি পড়ে আসছি।”

রিধি শাড়ি পড়ে বাথরুৃ থেকে বেরুলে বাতাসা মোটামুটিভাবে সাজিয়ে দেয় রিধিকে।গাঢ় খয়েরী কালারের শাড়ি পড়েছে রিধি।বাইরে বের হয় তিনজন।টুম্পা আশপাশে তাকাতে থাকে নিহাল ভাইয়ার খোঁজে।সামনে পড়ে নিলয় ভাইয়া।টুম্পা বলে,

“এ্যাঁ,ভাইয়া?নিহাল ভাইয়াকে কোথাও দেখেছেন?”

বাতাসা টাসটাস গলায় বলে উঠে,
“নতুন বউ এসেছে বেচারার!নতুন বউকে দেখবে নাকি আরেকজনের খবর রাখবে!?

নিহাল বলে,
“মাইর পাইছে তোকে!বুঝছি!”
“মারেন!কারণ এই যুগে সত্য কথা বললে ভাত নাই!”

টুম্পা খিলখিল করে হেসে উঠে।রিধি কিছুটা।টুম্পা এবার বাতাসাকে থামিয়ে,
“ওসব এখন বলার সময় না।পরে বলিস।ভাইয়া?নিহাল ভাইয়াকে সত্যিই দেখেন নি?”
“নিহালকে দিয়ে কি করবি?সে তো মনে হয় তার গার্লফ্রেন্ডদের সাথে আছে!প্লে-বয়দের খোঁজ নিয়ে পাত্তা পাবি না।আমাকে দ্যাখ্ আমাকে পাবি!’

বাতাসা বলে,
“আপনি তো দেখতেছি আরেক প্লে-বয়!বউ রেখে অন্যমেয়ের দিকে তাকান!”
টুম্পা ওসব কথায় পাত্তা দিচ্ছে না আপাতত।সে নিহালের প্রসঙ্গে,
“নিহাল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“থাকতেও অসম্ভব কি!মেইন ডোরের পেছনে যেই বেলকনিটা আছে সেখানে গিয়ে দ্যাখ তার গার্লফ্রেন্ডের অভাব নাই!”
“সত্যি সেখানে নিহাল ভাইয়া!?”
“আহা,গিয়েয়ে দেখ না আগে!”

টুম্পা নিলয়ের কথা মতন মেইন ডোরের দিকে হাঁটা ধরে।তারপর মেইন ডোরের বাম দিকে একটা ইনডোর দরজা আছে, সেটা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেয়।উঁকি দিতেই টুম্পা চমকে উঠে।নিহালকে অনেকগুলো মেয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।আর কয়েকটা ছেলেও।আর নিহালের সবার সাথে কথাবার্তার হাবভাবে বুঝতে বাকি রইলো না টুম্পার তারা উনার ফ্রেন্ডস!টুম্পা সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে,

“দেখছিস,নিহাল ভাই কতটা ভয় পাইয়ে দিলো!উনার যদি সত্যিই এখানে গার্লফ্রেন্ড থাকতো,আমি তো হার্টএ্যাটাক করে ফেলতাম!”

বাতাসা হাসে।রিধি বলে,
“আচ্ছা তোরা থাক তাহলে।আমি গেলাম। আমার-না ভালো লাগতেছে না!”
“ভালো লাগতেছে না মানে কি!আমি আজকে নিহাল ভাইয়াকে প্রপোজ করবো আর তোরা আমার সাথে থাকবি!”

বাতাসের টুম্পার তালে বলে উঠে,
“হ্যাঁ,রিধি সবসময় ভালো লাগে না।আজকে মাথাটাকে শক্ত করে ধরে রাখ যাতে ব্যথা না করে।”

রিধির না চাইতেও কষ্টের মাঝে হাসি চলে আসে।টুম্পা বলে,
“আচ্ছা এবার থাম।নিহাল ভাইকে এবার ডাক দে!”

বাতাসা বলে,
“উনার ফ্রেন্ডসগুলা যে উনার সাথে!”
“বাতাসা পরে আর উনার সাথে কথা বলার সুযোগ পাবো না মেহমান চলে এলে!সন্ধের পরও পাবো না। ভাইয়ার শ্বশুর বাড়ি যাবেন।”
“এখন কি করবি তাহলে?”
“ডাক!”
“অপেক্ষা করি আমরা একটু?ভাইয়া দেখি একা হয় কিনা?”
সময় নিহাল তার ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলার মাঝে ইনডোর দরজার দিকে তাকায়।রিধি,টুম্পা এবং বাতাসা আজ শাড়ি পড়েছে।এমন সময় নজর যায় বাতাসার দিকে।সে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকতেছে তাকে।নিহাল ফ্রেন্ডসদের “এক্সকিউজ” বলে এগিয়ে আসে তাদের দিকে।টুম্পা বলে উঠে,

“ভাইয়া?আপনাকে খুঁজেছিলাম এতক্ষণে।”
“হু,বল?”

টুম্পা এবার ইতস্ততা বোধ করে।কীভাবে শুরু করবে।সাথে বাতাসা এবং রিধিও আছে।লজ্জাও লাগছে এখন!উপায়ন্তর না পেয়ে,
“একটু সাইডে আসতে পারবেন?একটু সময়ের জন্যে..!”
“কিছু বলবি?”
“ইয়ে মানে ভাইয়া..ভাইয়া আপনার সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে …।তাই আর কি!”
“ওকে, চল।”

বলে নিহাল হেসে টুম্পার সাথে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়!রিধির ভেতরটা ধকধক করে উঠে!টুম্পা হেসে হেসে কিছুক্ষণ কথা বলার পর পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ নিহালের সামনে আনবে,ঠিক এমতাবস্থায় রিধি মুখ ফিরিয়ে নেয়।দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।দরজা বন্ধ করে!ওড়না টা জোরে খাটের দিকে ছুঁড়ে মেরে কেঁদে উঠে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here