#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৮(সমুদ্রবিলাশ)
সাগরের ঢেউয়ের সাথে মোকাবেলা করে জাহাজ এগিয়ে চলেছে সাথে গা*ঙচি*লেরা উড়ে উড়ে সঙ্গী হচ্ছে। জাহাজের যাত্রীরা বাদাম, বিস্কিট ওদের ছুঁ*ড়ে দিলে ওরা লুফে নিচ্ছে। জাহাজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রিয়া ওদের দিকে বাদাম ছুঁ*ড়ে দিচ্ছে ছবিও তুলছে। জার্নিটা এই পাখিগুলোর জন্য আরও আনন্দদায়ক হয়েছে।
সেন্টমার্টিন পৌঁছে ওরা দুপুরে খাবার খেয়ে আধ ঘণ্টার মতো বিশ্রাম শেষে সমুদ্রতটে যায়। নীল পানি ও নারিকেল গাছের জন্য পরিচিত এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি। এই দ্বীপটিকে নারিকেল জিজ্ঞিরাও বলে থাকে। প্রিয়া ও জারিফ দুজনে সাগরে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জায়গাটা নির্জন। প্রিয়া উৎসুকতার সাথে বলে,
“এখানে যদি আমাদের নিজস্ব একটা ঘর থাকত! ইশ! শান্ত সবকিছু। মন শান্ত হয়ে গেছে।”
জারিফ চুপ করে প্রিয়ার উৎসুকতা দেখছে। ভেজা বালুতে প্রিয়া নিজেদের নাম লিখছে। ঝিনুকও কুড়িয়েছে কিছু। জারিফ কিছু বুনোফুল এনে প্রিয়ার কানের পিঠে গুঁজে দেয় আর বলে,
“আমার প্রহর এখানে থমকে যাক! আমি মুগ্ধনয়ন ভরে তোমায় দেখি এই সাগরপাড়ের কন্যা রূপে।”
প্রিয়া চমৎকার হেসে তার অর্ধেক আঁকিবুঁকির দিকে দেখিয়ে বলে,
“সাগরতটে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেলাম।”
জারিফও প্রিয়ার পাশে বসে প্রিয়ার সাথে মিলিয়ে লাভ শেইপটা পূর্ণ করে। আগেই ডাব কিনে এনেছিল এখন তারা নারিকেল গাছের গোড়াতে বসে খাচ্ছে। সমুদ্রতটে বড়ো বড়ো নৌকা বাঁধা। সারা বিকেল ওদের তীরে হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের কাঠের বাড়িটাও দেখে এসেছে। কী শৌখিন করে বানানো। ছুটি কাটাতে একটা উপভোগ্য শান্তির জায়গা। সেন্টমার্টিন এতোটাই মনোরোম যে যদি কক্সবাজার ঘোরার আগে সেন্টমার্টিন আসা হয় তবে কক্সবাজার গিয়ে অতোটা নজরকারা লাগে না। নারিকেল গাছে বেষ্টিত ছোটো আকারের দ্বীপটিতে সাত হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে।
ছোটো দ্বীপটিতে সন্ধ্যা নামল। সেই সাথে আ*তঙ্কও। যারা দূরে ঘুরতে যান তাদেরকে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে বলা হয়। প্রিয়ারা এখন হোটেলের সামনে সমুদ্রপাড়ে আছে। বন*ফা*য়া*র জ্বা*লিয়ে বসা সাথে আরও কিছু দম্পতিও। তাদেরও হা*নিমু*ন! সবাই মিলে আনন্দ করতে করতে সময় চলে যায়। ওরা সবাই আগামীকাল একসাথে প্রবালদ্বীপ যাবে বলে প্ল্যানিং করে। রাতের খাবার শেষে হোটেলের সামনে গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে নারিকেল গাছগুলোর আড়ালে রাতের সাগর দেখছে। শান্ত প্রায়। জারিফ কফি হাতে প্রিয়াকে পেছোন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“নিন আপনার কফি।”
“থ্যাংকিউ সো মাচ।”
জারিফ বারান্দার ম্যাটে বসল সাথে প্রিয়াকেও বসালো।
“মাই প্লেজার। রাত কিন্তু অনেক হলো। এখানে রাত এগারোটা মানে গভীর রাত।”
প্রিয়া বিবশ হয়ে বাহিরের দিকে নজর রেখে কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“আজ নাহয় না ঘুমালাম। এখানে বসেই কা*টিয়ে দেই চলুন। ইচ্ছে ছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপে সারারাত সাগরপাড়ে আপনার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকব। কিন্তু সতর্কতার জন্য হলো না।”
জারিফ প্রিয়ার মুখটা আঁজলা ভরে নিজের দুইহাতের মুঠোয় নিলো। বলল,
“রজণী তার আপন গতিতে যাক,
প্রহর শেষে নতুন ভোরে আমি তোমাকে চাই!”
_________তিথী
_________________
প্রবালদ্বীপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে টলার ছুটছে। মেয়েরা সবাই গানের কলি খেলছে আর ছেলেরা সেটা উপভোগ করছে। আধ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলো ওরা। টলার থেকে ছোটো নৌকা করে দ্বীপে যেতে হয় কারণ এখন জোয়ারের সময় পানি বেশি। প্রবালদ্বীপ স্বচ্ছ নীল পানির নিচে প্রবালগুলো বড্ড সুন্দর লাগে কিন্তু সাবধান! ধা*রালো সেই প্রবাল। বেকায়দায় পা পরলে কে*টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জারিফ প্রিয়ার বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছে। দুজনের কাপল ছবিও তোলা হয়েছে। প্রিয়া দুটো ছোটো সাদা প্রবাল পেয়েছে পানি থেকে। জারিফকে দেখিয়ে দেওয়ার পর জারিফ এনে দিয়েছে। দুজনের পরনে আকাশি রঙের ড্রেস। প্রিয়া পরেছে আকাশি কুর্তি সাথে সাদা টাইস ও ওড়না। জারিফ আকাশি শার্ট ও সাদা জিন্স। খোলাচুলে কানে ফুল গুঁজা প্রিয়াকে সমুদ্রকন্যাই মনে হচ্ছে।
সুন্দর সময়গুলা জলদি চলে যায়। প্রবালদ্বীপ থেকে ফিরে ওদের সেন্টমার্টিনকে বিদায় দেওয়ার সময়ও চলে এসেছে। প্রিয়ার মন খারাপ। মুখ ভাড় করে সে জাহাজে বসে আছে। জারিফ কিছু শুকনো খাবার এনে প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
“এবার আক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছ। পরেরবার দ্বিগুন উৎসাহ পাবে। কিছু না কিছু আক্ষেপ জীবনে থাকতে হয়। আংশিক হলেও।”
“হুম। খুব মিস করব পুরো ট্যুরের সময়টাকে। আপনি খেয়াল করেছেন? আমি কিন্তু ছবি ও পোস্ট করা ছাড়া ফোন খুব একটা ব্যাবহার করিনি।”
জারিফ সন্দেহের সাথে বলে,
“তাই তো। তবে কি তুমি আরও ভুলোমনা হয়ে গেলে? এমনেতিই তোমাকে ফোন করে আমার অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো।”
প্রিয়া কপট রা*গ দেখিয়ে জারিফের বাহুতে মে**রে বলে,
“কথা কই থেকে কই নিয়ে গেলেন! সময়টা সুন্দর কেটেছে তাই ফোন ইউজের ফুসরত ছিল না। আর আপনি!…..”
জারিফ হেসে বলে,
“ওকে ওকে। খিদে পেলে খেও। ভাবীদের সাথে গল্প করো। আমি উপরে গেলাম।”
পরেরদিন,,
সকালে ঢাকা এসে পৌঁছে। প্রিয়াকে বাড়িতে দিয়ে জারিফ ওরিয়েন্টেশনের জন্য চলে যায় ভার্সিটিতে। এগারোটার দিকে শুরু হয়েছে। এদিকে প্রিয়া আজকে মেসেঞ্জার ইন্সটল করে তারপর ব্যাচ গ্রুপে কিছু মেয়ের প্রিয়া ও জারিফে নিয়ে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা দেখে মন বি**ষিয়ে যায় তার। রেজাল্ট ভালো হওয়ার কারণ নাকি জারিফের দু*চো*খা নীতি! সাথে বিয়ের আগে খা*রাপ স*ম্পর্কের ই*ঙ্গিত! অবশ্য সেসবে প্রিয়ার বন্ধুরা চরম বি*রোধীতা করেছে কিন্তু কিছু মেয়ে সেগুলোকে খোঁ*চাতে বড্ড পছন্দ করে কী-না!
প্রিয়া দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ কাঁদে অতঃপর মেসেঞ্জার ডিলেট করে তামান্না ভাবীর কাছে গিয়ে তুতুলকে নিয়ে বসে থাকে।
“ছোটোআম্মু, তোমার মন খারাপ?”
তুতুল বাচ্চাটার আধোবুলিতে প্রিয়া হালকা হাসে।
“না বাবা। টায়ার্ড তো ছোটোআম্মু তাই। তুমি নাকি আম্মুকে অনেক জ্বা*লিয়েছ?”
“একটুও না। সত্যি। আমি তো ভালো ছেলে।”
“হুম হুম।”
তামান্না কাপড় ভাজ করছিল আর ওদের কথা শুনছিল। সেও ভেবেছিল প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করবে তার আগে তার পা*ক*না ছেলেই করে ফেলেছে। তামান্না বলে,
“ওর কথা শুনো না একদম। চঞ্চল ছেলে আমাকে হাঁপিয়ে তুলেছে। তোমাকে এখন জ্বা*লাবে দেখো। কতোটা জার্নি করলে রেস্ট করো গিয়ে নাহয়। বিকেলে শাশুড়ি-বউয়েরা মিলে জম্পেশ আড্ডা হবে। মা একটু কাল তার বাবার বাড়ি গেছেন। বিকেলেই ফিরে আসবেন।”
“না সমস্যা নাই ভাবী। তুতুলের সাথে ভালোই লাগছে।”
তামান্না প্রিয়ার প্রত্যুত্তরে হেসে কাজে মনোযোগ দেয়।
__________
মুন্নিদের ড্রয়িংরুমে মুন্নির বাবা-মা, রাদিফ বসে আছে। রাদিফ নিজেই সাহস করে এসেছে। মুন্নিকে তার পছন্দ সেটাও জানিয়েছে। মুন্নির বাবা চুপ করে থাকায় ঘরের পরিবেশ গম্ভীর। মুন্নি অবশ্য বাড়িতে নেই। বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে গেছে। চলে আসবে। মুন্নির বাবা চশমা খুলে বলেন,
“দেখো রাদিফ, তুমি ভালো ছেলে আমি মানি কিন্তু আমার মেয়ের জীবনে যে ঝড়টা একবার বয়ে গেছে সেই ঝড়টা আমি দ্বিতীয়বার চাইনা। তাই তুমি নিজে আগে সিওর হও সব ব্যাপারে তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিও। সময় নাও। ছেলে হিসেবে তোমাকে আমার খারাপ মনে হয় না। আমার মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকতে পারবে কিনা সেটা ভেবে নাও। সে হয়তো তোমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারবে না।”
রাদিফ লম্বাশ্বাস নিয়ে বিনয়ের সাথে বলে,
“আমি সব ভেবেই এসেছি। তার অতীত না জানলেও বর্তমানে আমি সন্তুষ্ট। আপনি রাজি থাকলে আমি আমার বাবা-মাকে আসতে বলব। মায়ের মুন্নিকে পছন্দ হয়েছে।”
“আমি মুন্নির থেকে জেনে নিই। জানাব তোমাকে।”
রাদিফের মন শান্ত হলো কিছুটা। মুন্নি মানা করবে বলে তার মনে হয় না। সে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৯
দুপুরের পর মুন্নি বাড়ি ফিরল। ওর বাবা ওকে ছাদে যেতে ডেকে গেলেন। হঠাৎ বাবা ছাদে যেতে বলায় কিঞ্চিত অবাকও হয়েছে। জারিফদের বাড়ি থেকে ফেরার পরও মুন্নির বাবা ওকে এভাবে ছাদে ডেকেছিল। আজ আবার কী কারণে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। ফ্রেশ হয়ে দুই কাপ মালাই চা বানিয়ে ছাদে উঠলো। মুন্নির বাবা মেয়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। মুন্নিও হেসে বাবার পাশের চেয়ারটায় বসল। মুন্নির বাবা বলতে থাকেন,
“ভেবো না তোমাকে বোঝা ভাবি! তোমাকে সারাজীবন আমার কাছে রাখতেও আমার কোনো কৃপণতা নাই। তবে তোমার মানষিক দিক বিবেচনা করেই বলব যা বলার। তোমার কি রাদিফকে পছন্দ? বিয়ে করবে ওকে?”
মুন্নি অবাক দৃষ্টিতে বাবার দিকে চাইলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না। হুট করে এসবই বা কেনো জিজ্ঞেস করছে তাও বোধগম্য হচ্ছে না। মুন্নির বাবা আবারও বললেন,
“রাদিফ আজ এসেছিল। সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি ওকে কোনো কথা দেইনি। জীবনটা তোমার তাই তোমার মতামত জানা উচিত।”
মুন্নি বিবশ বসে রইল। এর জবাব তার কাছেও নাই। মুন্নির বাবা মিরাজ সাহেব ভণিতা না করেই বললেন,
“রাদিফকে ছেলে হিসেবে আমার খারাপ মনে হয়নি। এক মাস আমাদের বাড়িতে ছিল। যথেষ্ঠ পোলাইট ও ফ্রেন্ডলি। তোমার মায়েরও পছন্দ।”
মুন্নি ঠোঁট প্রসারিত করে মিষ্টি হেসে বলে,
“তোমাদের যা ইচ্ছা সেটাই। এই জবাব আমি উনাকেও দিয়েছিলাম। নিজ থেকে আমি কিছুতে জড়াবো না। তোমরা আমার জন্য যা ভালো বুঝবে তাই করো। আমার আপত্তি নেই।”
মিরাজ সাহেব মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন,
“সূর্যের মতো উজ্জ্বল হোক তোমার মুখের হাসি। দোয়া রইল।”
মিরাজ সাহেব চলে গেলে মুন্নি আকাশপানে দৃষ্টি স্থীর করে। স্বগোতক্তি করে,
“সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না আবার কিছু ভালোবাসার জোর এতোটাই যে আপন গতিতে পূর্ণতার পথে এগোয়।”
রক্তিম নীল অম্বরে সূর্য তার দিনের শেষ হাসি হাসছে। মুন্নি সেদিকে উদাসীন চেয়ে আছে।
_________
দেখতে দেখতে চারটা দিন কে*টে গেছে। জারিফ ও প্রিয়ার বিয়ের সব অনুষ্ঠানও শেষ। কাল থেকে প্রিয়ার নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে কিন্তু জারিফ প্রিয়ার মাঝে তেমন আগ্রহ দেখছে না। রাতে প্রিয়া বিছানা গোছাচ্ছিল তখন জারিফ জিজ্ঞেস করে,
“কাল তোমার ক্লাস কখন?”
“সাড়ে আটটায় মনে হয়।”
প্রিয়ার ভাবলেশহীন জবাব জারিফের পছন্দ হলো না। পেছোন থেকে ওর হাত টেনে নিজের দিকে ফিরালো। প্রিয়া হঠাৎ এমন হওয়ায় অবাক হয়ে বলল,
“কী হলো?”
“তোমার কী হয়েছে বলোতো? এতো উদাসীন কেনো তুমি? কাল থেকে তোমার নতুন সেমিস্টারের ক্লাস। তোমার মধ্যে আমি কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। এনিথিং রং?”
জারিফের সন্দিহান কণ্ঠে প্রিয়া মলিন চোখে চাইল।
“নাহ্ কিছু না। সকাল সকাল ক্লাস তাই একটু।”
জারিফ প্রিয়ার মন খারাপ বুঝে হাসাতে বলল,
“গত সেমিস্টারে তোমার প্রথমদিন ক্লাসে যাওয়ার দিন আমাদের দেখা হওয়াটা মনে আছে?”
প্রিয়া না চাইতেও হেসে ফেলল।
“তা কি ভোলার! আপনি কতোটা নার্ভাস ছিলেন আর আমি ছিলাম বির*ক্ত!”
জারিফ প্রিয়ার কো*মড় পেঁচিয়ে ধরে বলে,
“আর আজ সেই বিরক্ত করা লোকটা তোমার হাসবেন্ড এন্ড ইউনিভার্সটির স্যার!”
শেষোক্ত কথায় প্রিয়ার তার ব্যাচমেটদের কথা মনে পরে গেলো। জারিফ আবারও প্রিয়াকে অন্যমনস্ক দেখে প্রিয়ার গালে নিজের দুই হাত রাখল। আগলে নিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড প্রিয়া? ইউ ক্যান শেয়ার উইথ মি।”
“নাথিং। চলুন ঘুমাব। কাল অতো সকালে উঠতে হবে তো।”
“হুম।”
প্রিয়ার কথা ঘুরানো জারিফ বুঝলো। এখন বলতে চাইছে না বলে আর জোর করল না। জারিফ নিজেই খুঁজে বের করবে।
__________
চারদিন হলো পিহু আয়ানকে একটা বারও নক করেনি। দুইদিন তো আইডি ডিএক্টিভ ছিল। আয়ানের কাল প্রথম ক্লাস। সে সকালে ক্লাস নেয়নি এবার। ভাবল নিজ থেকেই পিহুকে নক করে জিজ্ঞেস করবে। ভাবনা-চিন্তা আর না বাড়িয়ে নক করেই বসলো। কিন্তু পিহু তো মেসেজ দেখছেই না। পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেলো তাও না। পাঁচ মিনিট পর আবার লিখল,
“আর ইউ এং*ড়ি উইথ মি?”
নাহ্! এবারও রিপ্লাই এলো না। আয়ান দেখল আধঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পিহু হয়ত অনলাইনে নেই। তাই সে আর মেসেজ করল না। কিছুক্ষণ ফেসবুক স্ক্রোল করে জলদি ঘুমিয়ে গেলো। পরেরদিন একটা ফ্রেশ সকালের অপেক্ষা করছে সে।
এদিকে পিহু মোবাইলের উপরে আসা নোটিফিকেশন দেখেছে কিন্তু মেসেঞ্জার আনইন্সটল তার। ফেসবুক লাইট দিয়ে মেসেজ করতে পারবে কিন্তু সে করবে না! সে ভেবেছে, দুইদিনেও আয়ানের মেসেজ সিন করবে না! পিহুর খালাতো বোন পিহুকে বলে,
“নিজেই অপেক্ষা করছিলি আয়ান ভাইয়ার মেসেজের আর এখন বলছিস দুইদিনেও সিন করবি না! কী চাইছিস তুই? এই চারদিনে তো মন খারাপ করে বসে থেকে থেকে আমার মুডেরও চৌদ্দটা বা*জিয়ে ছেড়েছিস।”
পিহু আচানক পরীর সামনে এসে ধ*প করে বসলো। পরী হকচকিয়ে উঠে।
“সে আমাকে অপেক্ষা করিয়েছে না? আমিও করাব। টি*ট ফর ট্যা*ট! হুহ্!”
পরী তোঁ*তলাতে তোঁ*তলাতে বলে,
“পরে আবার আমার মুডের সর্বনা*শ করবি নাতো?”
পিহু ভ্রুঁকু*টি করে বলে,
“কী বললে তুমি?”
“না না। কিছু না। ঘুমা তুই। কাল তো ক্লাস আছে তোর। জলদি ঘুমা।”
পিহু পরীর কথায় রাজি হয়ে গুনগুন করে গা*ন গাইতে গাইতে শুয়ে পরে। পরী মুখ লটকে পিহুর কাণ্ডকা*রখানা দেখছে। মেয়েটার কখন কী হয় বোঝা দায়।
____________
দুপুর বারোটা বাজে। ক্যাম্পাসে ওরা সাতজন একসাথে বসে আছে। আড্ডা চলছে ওদের। আয়ান পাঁচ-দশ মিনিট পরপর ফোন চেক করছে। ফেসবুকে কিছুক্ষণ আগে পিহু নিজের প্রফাইল পিকচার বদলেছে কিন্তু মেসেজ দেখছে না। আয়ান একবার ভাবে আবার নক করবে! আবার ভাবে করবে না। ওদের বন্ধুদের সামনে চারজন এসে দাঁড়ালো। তাদের মধ্যে রূপা নামের মেয়েটি টি*ট*কা*রি করে ব্যাঙ্গাত্নক ভাবে বলল,
“কেমন আছো প্রিয়া? বিবাহিত জীবন কেমন চলছে?”
প্রিয়া রূপার দিকে নিশ্চলভাবে তাকালো অতঃপর জবাব দেয়,
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।”
রূপা তার বান্ধুবীদের দিকে তাকিয়ে বি*শ্রী হাসে।
“জারিফ স্যার বুঝি খুব ভালোবাসে? তা কীভাবে?”
প্রিয়া ওদের নোং*রা ইঙ্গিতে চোখ খিঁচে নিলো। নিশি, মিম, অর্ষা, আয়ান, রাদ ও সাদ এহেনো অবান্তর নোং*রা প্রশ্নে বিরক্ত হলো। অর্ষা বলে উঠল,
“তা জেনে তুমি কী করবে রূপা?”
রূপা মুখ ভে*ঙ*চি দিয়ে বলে,
“এমনিতেই আস্ক করলাম। কেনো ফ্রেন্ড হিসেবে জানতে চাইতে পারিনা?”
মিম মুচকি হেসে বলে,
“অবশ্যই পারো। কিন্তু জিজ্ঞাসা করারও একটা ধরণ ও লিমিট আছ। তাই নয় কি?”
“উপস! মাই ব্যা*ড!”
রূপা আর ওর বান্ধুবীরা হেসে উঠল। রাদ ও সাদ বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আয়ান ওদের হাত ধরে নিষেধ করল। নিশি বলে,
“ফার্স্ট অফ অল, তোমার বলার ধরণ ফ্রেন্ডলি ছিল না এন্ড ইটস সাউন্ড অ*কওয়ার্ড।”
রূপার ফ্রেন্ড ন্যান্সি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“স্যারকে বিয়ে করাটা বুঝি অ*কওয়ার্ড না? স্যারকে কিভাবে বশ করল সেটাতো জানতে চাইনি! তাই না?”
প্রিয়ার চোখ বেয়ে জল গড়ালো। এদের মুখ লাগলে এরা পুরো ক্যাম্পাসে বাজে কিছু রটাবে। আয়ান শান্ত ভাবে বলল,
“মাই*ন্ড ইউর ওয়ার্ড। বলার আগে ভাববে তারপর বলবে।”
সাদ বলে,
“এই কথাগুলো তোমরা কী উদ্দেশ্যে বলছ আর কেনো বলছ তা বুঝা হয়ে গেছে। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। স্যার ও প্রিয়া এতে অন্যায় কী করেছে?”
রূপার আরেক ফ্রেন্ড বলে উঠে,
“ও শা*টআ*প সাদ! আমরা জানি সব অকে!”
ওরা রে*গে গেলো। রাদ দাঁতে দাঁত খিঁ*চে বলল,
“কী জানো? বলো কী জানো? তোমরা যা জানো সেটা ভিসি বা চেয়ারপার্সন স্যারের কাছে গিয়ে নাহয় বলিও। আর যা সত্য সেটাও আমরা তাদেরকে গিয়ে বলব। ইনফ্যাক্ট, উনারা সব জানেনও।”
রূপা নাক ফুলিয়ে রেগে আঙুল উুঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই আয়ান শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“প্লিজ লিভ। নো মোর ওয়ার্ডস। জাস্ট লিভ।”
রূপা হাতে থাকা কোকের বোতলটা ছুঁ*ড়ে ফেলে হনহন করে চলে গেল। ওরা যাওয়ার পর মিম প্রিয়াকে ঝাঁ*কিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
“তোরে কী বো**বায় ধরেছিল? ওরা এতোকিছু বলল কিছু বললি না কেনো?”
প্রিয়া মিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। এই চারদিন ধরে এসব প্রিয়াকে খুব এ*ফেক্ট করছিল বলে সে এগুলো থেকে দূরে থাকছিল। অর্ষা ও নিশি প্রিয়াকে কাঁদতে মানা করছে ও মা*থায় হাত বুলাচ্ছে। সাদ বলে,
“ওকে পানি খাওয়া। এরপর আবার কিছু বলুক ওরা! গ্রুপেও বাজে কথা বলেছিল আর এখানেও। এরপর কম*প্লেইন করা হবে।”
পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে ওরা প্রিয়াকে নিয়ে লাঞ্চ করতে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,