#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|২০|
দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতায় স্মৃতি একটু শান্তিতে বসতেও পারছে না। তার ভাইকে নিয়ে তার খুব চিন্তা হচ্ছে। জুভানের হয়তো আর বেশি সময় লাগবে না তাকে খুঁজে বের করতে। স্মৃতির ফোনটাও তার কাছে নেই। ফোনটা থাকলে অনন্ত ভাইকে একবার সাবধান তো করতে পারতো।
.
স্মৃতির ফোনের লক ভাঙতে বেশি সময় লাগল না। সেখান থেকে তার ভাইয়ের নাম্বারটা নিয়ে তার লোকেশনটাও খুব সহজে তারা বের করে ফেলল। জুভান তার পুলিশ বন্ধুকে তাড়া দিয়ে বলল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলেটাকে যেন সে খুঁজে বের করে। ঐ ছেলের কাছেই তার বোন আছে। আর তার ধারণা জিহাদও হয়তো তাদের কাছেই আটক আছে। আর দেরি না করে পুলিশের গাড়ি নিয়ে তার বন্ধুও চলে গেল সেই লোকেশনে।
জুভান তাদের সাথে না গিয়ে খাবার নিয়ে স্মৃতির কাছে ফিরে আসে। জুভানকে দেখা মাত্র স্মৃতি আবারও ক্ষেপে যায়। তবে জুভান তার সাথে তেমন কোনো কথা না বলে খাবারের প্যাকেটগুলো রেখে দিয়ে বেরিয়ে আসে।
ঘন্টা খানিক বাদে জুভানের বন্ধু কল করে জানায় যে সে সেই লোকেশনে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু, এক্সেক্ট জায়গাটা সে খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণের মাঝে জুভানও পৌঁছে যায় সেখানে। সে স্মৃতির নাম্বার দিয়েই তার ভাইয়ের নাম্বারে কল লাগায়। বোনের নাম্বার দেখে সোহান সেই কলটা সাথে সাথেই রিসিভ করে। জুভান ফোন কানে লাগিয়ে বসে থাকে, কিন্তু কিছু বলে না। ওপাশ থেকে সোহান হ্যালো হ্যালো বলতে থাকে। কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর জুভান কলটা কেটে দেয়। তারপর সে তার বন্ধুকে ডেকে বলে,
‘দোস্ত, এটা নাম্বারের লাস্ট লোকেশন। এই লোকেশনটা খুঁজে বের কর। গুগল ম্যাপে দেখ। যেকোনো ভাবে আমাদের এখানে পৌঁছাতে হবে।’
জুভানের বন্ধু আরো সতর্ক হয়ে তার তল্লাশি চালিয়ে যায়। এর মাঝে সোহান তার বোনের নাম্বারে আরো একবার কল দেয়। কিন্তু এবার আর জুভান কলটা রিসিভ করে না। সোহানের তখন খটকা লাগে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে তার বোন হয়তো ঠিক নেই। সব সত্যি শোনার পর কল থেকেই সে খুব ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছিল। রাগের মাথায় সে যদি হুট করে জুভানকে সবকিছু বলে দেয় তবে তাদের খেলা পুরো ঘুরে যাবে। সোহানের মন খচখচ করছে। সে আর কোনো রিস্ক নিতে চায় না। সে সরাসরি তখন ত্রিপল নাইন এ কল করে। সে তাদের বলে যে তারা খুব বিপদে আছে। তার লোকেশনটাও সে তাদের বলে দেয়। সে ভেবেছিল, তার হাতে এখন উপযুক্ত প্রমাণ আছে। এবার সে পুলিশ দিয়ে খুব সহজেই জুভানকে ধরিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কে জানতো ভাগ্য এখানে এসে আবার উল্টে যাবে। হেড কোয়ার্টার থেকে কল যায় ঐ এলাকার থানার ওসি’র কাছে। আর ঐ ওসি ও দুর্ভাগ্যবশত জুভানের বন্ধুই ছিল। হেড কোয়ার্টারের সব ইনফরমেশন পেয়ে তাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না তারা কার কথা বলছে। জুভান এতে পৈশাচিক আনন্দ পায় যেন। সে হেসে হেসে তখন বলে,
‘অবশেষে মাছ নিজে থেকেই আমাদের জালে এসে ধরা দিয়েছে।’
সোহানের ধারণাই ছিল না যে সে নিজের বিপদ এভাবে ডেকে এনেছে। আইনের লোক কখনও বেআইনি করবে না, এই দৃঢ় বিশ্বাস তার ছিল। তাই সরল মনেই আর কোনো ঝামেলা না করে সে পুলিশের সাহায্য নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে আদৌ কি কোনো সাহায্য পাবে? আইনকে যে জুভান তার টাকায় কিনে নিয়েছে।
ক্ষণিকের মাঝেই জুভান আর তার পুলিশ বন্ধু সোহানের সেই ঠিকানায় পৌঁছে গেল। দরজা ধাক্কা দিতেই সোহান প্রথমেই জিজ্ঞেস করল, “কে”। পুলিশ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর সোহান নিশ্চিন্ত চিত্তেই দরজা মেলে দাঁড়াল। আর সাথে সাথেই চমকে গেল সে। জুভানকে সে এখানে কল্পনা করেনি। সে কিছু বোঝার আগেই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জুভান সহ তার বন্ধু ভেতরে ঢুকল। আর সেই রুমে গিয়ে জুভান জারাকেও দেখতে পেল। জুভান বোনের কাছে ছুটে গেলেও জারা তার জায়গা থেকে কিঞ্চিত নড়ল না। ভাইকে দেখে যেন এইটুকুও আনন্দ পায়নি সে। জুভান বোনকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে,
‘তোর কিছু হয়নি তো জারা? ওরা তোর সাথে খারাপ কিছু করেনি তো? বল আমায়, ভাই ওদের খুন করে ফেলব। কী হলো জারা, চুপ করে আছিস কেন? বল কিছু।’
জারা জবাব না দিয়ে পুলিশের দিকে তাকায়। এই লোকটাকেও বলে কিছু লাভ নেই। আইনের পোশাক গায়ে দিয়ে সবসময় বেআইনি কাজই করে যাচ্ছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘আমি এখানে ভালো ছিলাম। আমাকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করতে হবে না।’
জুভান ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘তুই ভালো ছিলি? ওরা তোকে আটকে রেখেছিল, আর তুই বলছিস তুই এখানে ভালো ছিলি? জারা, তুই কি কোনো ভাবে ওদের ভয় পাচ্ছিস? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এই যে এখানে আমি আছি সাথে ঈশান আছে ভয় কেন পাচ্ছিস? বল আমায়, একটাকেও আমি আস্ত রাখব না।’
জারা শক্ত গলায় বলল,
‘বললাম তো আমি এখানে ভালো আছি। আর আমি কারোর ভয়ে কিছু বলছি না। ভাবির মা আমাকে খুব যত্নে রেখেছেন, এই নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।’
জারার কথাবার্তা শুনে জুভান খুবই অবাক হয়। সে জারাকে বলে,
‘আর যত্নে থাকতে হবে না। চল এবার বাড়ি চল। আর ওদের যত্ন আমি বের করছি। এই ঈশান তুই ওকে(সোহানকে দেখিয়ে) এরেস্ট কর।’
‘কেন, ওকে কেন এরেস্ট করবে? ও কী করেছে?’
জারার প্রশ্নে জুভান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ও তোকে কিডন্যাপ করেছে।’
‘না তো, আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছি। আমাকে কেউ কিডন্যাপ করেনি। আর যদি এরেস্ট কাউকে করতেই হয়, তাহলে তোমাকে করবে। ঈশান ভাইয়া, ভাইয়া কে এরেস্ট করুন কারণ, ভাইয়া একজন খুনী।’
জুভান বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে বোনের কথা শুনে। নির্বাক, নিষ্পলক হয়ে চেয়ে থাকে সে। তার মানে তার বোনও সব জেনে গিয়েছে। রাগে তার শরীর তখন জ্বলে উঠে। সে উঠে সজোরে গিয়ে সোহানকে একটা থাপ্পড় মারে। জারা তাতে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
‘ওকে কেন মারলে ভাইয়া?’
জারার কথায় জবাব না দিয়ে জুভান গর্জে উঠে ঈশানকে বলে,
‘ওকে নিয়ে যা ঈশান।’
ঈশান সোহানের শার্টের কলার ধরে তাকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায়। সোহান তখন ঈশানকে বলে,
‘আপনি আইনের লোক হয়েও এভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন? আমি আপনার নামেও থানায় মামলা করবো।’
ঈশান দাঁত কেলিয়ে বলে,
‘আগে তো তুই নিজে বাঁচ, তারপরই না অন্যকিছু।’
সোহানকে গাড়িতে বসিয়ে ঈশান গাড়ি স্টার্ট দেয়। ততক্ষণে জুভানও জারাকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে আসে। গাড়িতে বসে জুভান সোহানকে জিজ্ঞেস করে,
‘আমার শাশুড়ি কে কোথায় রেখেছ শালাবাবু? একেবারে বলে দাও, বার বার আর এত কষ্ট করে আসতে হবে না।’
সোহান নাকের পাল্লা ফুলিয়ে বলে,
‘মা কোথায় আমি জানি না।’
ঈশান হেসে বলে,
‘আরে দোস্ত বাদ দে। জায়গা মতো কয়টা পড়লেই ফরফরিয়ে সব পেট থেকে বের হয়ে যাবে।’
ঈশানের কথা শুনে জুভানও হু হা করে হেসে উঠে। ভাইয়ের এমন হাসি দেখে জারার মনটা তখন ঘৃণায় বিষিয়ে উঠে।
চলবে…