অচেনা শহর পর্ব ১৪+১৫

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৫

খুব মনোযোগ দিয়ে বই এর দিকে তাকিয়ে আছে স্নেহা।
লাইব্রেরীতে বসে কিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর নোট করে নিচ্ছে। সামনে বসে আছি অন্তরা ফোনে কারো সাথে তর্ক করে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কার সাথে এইভাবে কথা বলছে।
অন্তরা বলল হৃদয় নামের সেই ছেলেটা। সে নাকি কোথায় থেকে ওর নাম্বার নিয়ে ছে তারপর কাল থেকে ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে। আর তার সাথে ফোনে ঝগরা করে যাচ্ছে।

“ওফ অন্তরা দেখতে, তুই কিন্তু খুব জ্বালাচ্ছিস। এত বিরক্ত লাগলে ফোনটা কানে ধরে রেখেছিস কেন ফোন কেটে দিয়ে।”

“না বকে ফোন কেটে দেবো। কোথায় থেকে নাম্বার পেয়েছি সেটা আমার জানতে হবে না।”

“হ্যাঁ এতো জানার ইচ্ছে। তাহলে আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে ঝগড়া কর। জানার চেষ্টা কর। চিল্লিয়ে মাথা খেয়ে ফেললি আমার।”

প্রচন্ড বিরক্তির সাথে কথাটা বললাম।আমার বিরক্ত হওয়া চাহনি দেখে অন্তরা আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলো। আমি আর কিছু বললাম না।

আমার তো ব‌ই নেই।এজন্য লাইব্রেরী থেকে বা অন্তরার বই নিয়ে পড়া কালেক্ট করতে হয় খাতা লিখে নিয়ে গিয়ে বাসায় গিয়ে পড়তে হয়।
আজ ও তাই করছি। প্রথম ক্লাস করে লাইব্রেরীতে এসেছি দ্বিতীয় ক্লাস আমাদের নাই। 40 মিনিট ক্লাস ততক্ষণ এখানেই থাকবো। বইয়ের ভেতর গভীর মনোযোগ দিয়ে আছি।

হঠাৎ কারও কণ্ঠস্বর শুনে চমকে মাথা উঁচু পারলাম।

“ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শপিং করতে যাওয়া। আবার শপিংয়ে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ইন্টারেস্টিং কাহিনী তাই না‌। আচ্ছা সত্যি কি হারিয়ে গিয়েছিলে নাকি এক্টিং করেছে আমাদের সামনে।”

ব্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আদ্র কথাটা বলে উঠলো। আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উনার কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলে,

সাথে সাথে কালকের খারাপ ব্যবহারের কথাটা মনে পড়ে গেল। কতবার রিকোয়েস্ট করার পরও কেউ তো হেল্প করলো না। উল্টা সবাই মিলে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দিয়েছিল। কি ভাবে হাসছিল মনে হয় আমি সাহায্য চাইছি না সর্কাস দেখাচ্ছি।
পড়ে নিজেরই নিজের ওপর রাগ উঠেছিল। উনি কতো টা খারাপ সেটা খুব ভাল করেই জানি তবুও কেন ওনার কাছেই গেলাম। আমার তাকে চেনা উচিত ছিল। উনি আমাকে হেল্প করবে না। কারণ হেল্প করার মত মানুষ উনি না। উনি বিপদে ফেলতে পারে সাহায্য করে না।

চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে আর গভীর চিন্তা করছি।

“ও হ্যালো, বললেনাতো! আর এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
বলেই কি যেন বলে আদ্র বাঁকা হাসলো।
“আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর আর ভার্সিটি সব মেয়েরা এজন্য আমার জন্য পাগল। তুমিও আমার উপর ফিদা সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি। কিন্তু এখন সেটা দেখাতে হবে না যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।”

আদ্রর এমন টিটকারি মারা কথা শুনে রাগে আমার শরীর কাপতে লাগলো। আর উনি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর এইরকম বাজে কথা বলছে।

“একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি মোটে আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম না আমি তো,

হঠাৎ অন্তরা কথা মাথায় এলো। ও ত আমার সাথে বসেছিল অন্তরা কোথায় গেল?

“আপনি এখানে কি করছেন ? এখানে তো অন্তরা ছিল।”

“কে ছিল সেসব তো আমি জানি না। এখন আমি আছি।”

“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আপনি আছেন।”

বলে স্নেহা অন্তরা কে খোঁজার জন্য আশেপাশে তাকালো। আর পেয়েও গেল। ফোনে কথা বলছে আর জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
এই ম্যাইয়া ঐ খানে গেল কখন আবার ও , না এখানে আমার সামনে বসেছিল।

“আপনি এখানে কি করছেন?”

“এমনভাবে জিজ্ঞেস করছ যেন আমি এখানে আসতে পারব না। আর তোমার মাথায় রাখা উচিত এটা লাইব্রেরী এখানে যে কেউ আসতে পারে।”

“হ্যাঁ তা আসতে পারেন। কিন্তু আমার সামনে বসেছেন কেন? এখানে তো আরো অনেক সিট আছে অন্য কোথাও গিয়ে বসেন।”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি এখানে বসে আছি তোমার কোন প্রবলেম।”

“আপনার মতো অসভ্য লোক আমি জীবনে আর দুইটা দেখি নাই।”

“কি বললে তুমি আমি অসভ্য। তা আমি কি অসভ্যতামি তোমার সাথে করেছি।”

“একদম ফালতু কথা বলবে না। কালকেও আপনি আমার কে নিয়ে যথেষ্ট মজা করেছেন। আবার আজকে এসে আগ বাড়িয়ে ঝগরা করছেন?”

“কি বললে আমি ফালতু কথা বলি?আমি আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করছি । এখানে ঝগড়ার কি হল আমি তো সামান্য একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।”দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল।

“জিজ্ঞেস করবেন কেন? কাল কি ব্যবহার করেছেন আমার সাথে মনে নেয়। কতবার বললাম একটু হেল্প করেন। আপনারা সবাই মিলে আমাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করলেন সাহায্য তো করলেন না ওটা হাসির পাত্র বানিয়ে দিলেন।”

“হাসির মতো কথা বললে যে কেউ হাসবে।
এতে এত আফসেট হওয়ার কি আছে।তুমি কি চেনো না নাকি না চিনেই কি তুমি শপিং মল চলে গেছো। যে হারিয়ে যাবে আবার সেটা আমাদের বলতে এসেছ।”

“আপনি কি বলতে চাইছেন আমি আপনাকে মিথ্যা বলছি।”

“সে তুমি বলতেই পারো আমি কিভাবে জানবো।”
শয়তানি হাসি দিয়ে।

“আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন।”
আদ্রর এই হাসি আর ওর কথা বলার ধরন দেইখে স্নেহার মনে চাইছে ওর মাথা বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে দিতে।

“কি অতিরিক্ত করলাম?”
এমন ভাবে কথা বলল, যেন এতক্ষণ কিছু বলেই নি নিষ্পাপ শিশু একটা।
রাগীভাবে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছু বলতে চেয়েও বললাম না এর সাথে কথা বলা মানে কথা বাড়ানো। এর থেকে কথা না বড়ানোই ভালো।

“এই যে চুপ হয়ে গেলে যে, কি অতিরিক্ত করলাম বল?”

কিছুই বললাম না চুপ করে রইলাম

“কি হল মুখ বন্ধ হয়ে গেল কেন? নাকি কথা আর খুঁজে পাচ্ছো না।”

এর মাঝে অন্তরা চলে এলো। আমাকে আর আদ্রকে এক সাথে বসে থাকতে দেখে ও অবাক হলো। অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ওকে দেখে আমি বললাম,
“এই তুই কোথায় গিয়েছিলি?”

“এইতো এইখান ছিলাম। কিন্তু তোরা একসাথে বসে কি করছিস? আচ্ছা ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন?”

আদ্রকে একদমই দেখতে পারেনা অন্তরা সেদিনই আদ্রর জন্য কাঁদছিল। এই লোকটাকে ভয় ও পায় এজন্য ভাইয়া বলে সম্বন্ধে করল। না হলে একে ভাইয়া বলতো না।হঠাৎ তার মনে হতে লাগল লোকটা এত সুন্দর হ্যান্ডসাম যেমন দেখতে তেমন সুন্দর। কিন্তু এতো পাজি না হলেও পারতো।

মুখটা কালো করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়।

আদ্রর এবার মুখ খুলল,
“কিছুই বুঝতে পারলাম না তোমরা দুজনে আমার সাথে এমন করছো কেন? এমন করে বলছো যেন আমি লাইব্রেরীতে এসে বড় কোন অপরাধ করে ফেলেছি। দুজনের এক‌ই প্রশ্ন করছো?আমার যখন ইচ্ছা আমি লাইব্রেরীতে আসতে পারি । আর শুধু লাইব্রেরী কেন আমি ভার্সিটি যেকোন স্থানের যেকোন সময় যেতে পারি এর জন্য কার কাছে আমি কৈফত দিতে বাধ্য নই।”

আদ্র কথাটার রেগে চিৎকার করে বলল ওর কথা শুনে অন্তরা স্নেহা দুজনে কেঁপে উঠলো। দুজনে দুজনের মুখোমুখি চেয়ে ভয় পেয়ে কোনরকম ছুটে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে এলো।

বাইরে এসে দুইজনে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।

“বড় জোর বেঁচে গেছি। অসভ্য, বান্দর ছেলে কেমন কারলো। না জানি কি করে বসতো? বড় জোর বেঁচে গেছি আর এর সামনে ভুলেও যাবনা।”

স্নেহা এমনিতেই আর্দ্র কে ভয় পায়। তবুও বাজে বিহেভ দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল না রেখে কয়েকটা কথা বলে ফেলে । কিন্তু ভয় ও ভালো পায়। এখনো ভয় পেয়েছে।তাইতো এভাবে ছুটে পালিয়ে এসেছে। নাহলে লাইব্রেরী সবার সামনে হেনস্থা হতে হবে তার থেকে এর সামনে না থাকাই ভালো সব সময় এরিয়ে চলতে হবে।

আদ্র প্রচন্ড রাগ উঠে গেছিল। এমনিতে স্নেহা তারপর আবার অন্তরার কথা শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি চিৎকার করে কথাগুলো বলে। সামনে তাকিয়ে দেখে দুজনে হাওয়া তারা দুজনেই দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। হতভম্ব হয়ে দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র। লাইব্রেরীর সবাই আদ্র দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কারন আদ্রর চিৎকারের শব্দে সবাই ওর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আদ্র সেটা খেয়াল করে কিছুটা লজ্জা পায়। সবাই ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবুও সবাইকে অগ্রাহ্য করে বেরিয়েছি লাইব্রেরী থেকে।

.

“সত্যি করে একটা কথা বলবি।”

“কি কথা?”
আয়রার কথা শুনে রাহাত দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকাল। আয়রা ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।

“তুই কি আমাকে একটু ভালোবাসিস না।”

ওই ভাবে তাকিয়ে থেকে কথাটা বলল আয়রা। ওর এই চোখে মুখে আতঙ্ক।
রাহাত কিছু বলছ না চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তাই আয়রা আবার নিজে থেকে আবার বলল,

“কি হল বল?”

“বাসি তো।একজন ফ্রেন্ডকে যতটুক ভালোবাসা দরকার ততটুকু বাসি।”

কথাটা বলে মুচকি হাসি দিল রাহাত। কিন্তু ওর উত্তর শুনে আয়রা চমকে উঠল ওতো এতোটুকু ভালোবাসা চায় না এর থেকে বেশি ভালোবাসা চায়।

“কিন্তু আমি তো তোর থেকে আরো বেশি কিছু চায়।তুই কি সেটা বুঝতে পারিস না। নাকি বুঝতে চাস না।কেন এমন করছ আমার সাথে। আমার কষ্টটা কি তোর চোখে পড়ে না।”

“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”

“কিছু বলার নাই তো কিছু বলছি না।”

এবার আয়রা রেগে উঠলো,
রাহাতের কলার চেপে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলতে লাগলো,

“কেন তোর কিছু বলার নাই।বল কেন তোর কিছু বলার নাই। তুই তো জানিস আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু কেন তুই আমাকে ভালবাসতে পারছিস না। আমি কি দেখতে অসুন্দর। আমাকে কি ভালো বাসা যায় না।”

“আয়রা কলার ছার।”

“না ছারব না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”

“কিসের উত্তর দেবো। বলছি না আমি তাকে ভালোবাসি না বারবার কেন এক কথা বলিস।”

“কেন ভালোবাসিস না কেন?”

চিৎকার করে বলেই রাহাতের কলার ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।

রাহাত এক নজর তাকিয়ে বেরিয়ে এলো রুমে থেকে।

আয়রা কাদতে কাদতে ওখানে বসে পরল। চিৎকার করে কাঁদছে আয়রা। আর ভাবছে কেন রাহাত ওকে ভালোবাসে না কেন?২ বছর আগে থেকে ওকে ভালোবাসে কতবার ওকে বলেছে তত বারি ও সবসময় কষ্ট দিয়েছে না করেছে।

আচ্ছা ওর কি অন্য কাউকে পছন্দ। এটা তো কখনো ভেবে দেখিনি। আর যাকে পছন্দ হয়ে থাকুক না কেন ও শুধু আমার। কথা বল ভেবে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালাম।

.

তিনদিন পর

স্নেহা টিউশনি শেষ করে বাসায় সামনে গাড়ি থেকে নামল। এখন ছয়টা বাজে।
গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেট দিয়ে ঢুকবে। হঠাত ওর চোখ যায় রাস্তার বাম পাশে একটা মেয়ের দিকে। ভেতরে ঢোকা বাদ দিয়ে পেছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকায়।
তিনদিন ধরে খেয়াল করছি এই মেয়েটা এখানে এভাবে বসে আছে। মুখটা কেমন বিষন্ন দেখা যাচ্ছে শুকনো মনে হয় খাওয়া পারেনি পেটে। শুকনো মুখ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার। খুব কৌতুহল হল স্নেহার মেয়েটার বিষয়ে জানার।

এই ড্রেস পরে এইভাবে বসে আছে এর কি বাড়ি ঘর নাই নাকি। মেয়েটার বয়স ১১কিংবা ১২ হবে। স্নেহা মেয়েটা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আমাকে দেখে মেয়েটা মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকালো। মুখটা দেখে খুব মায়া হল,

“তুমি এখানে বসে আছো কেন তোমার বাসা নাই। কয়দিন ধরে দেখছি এখানে বসে আছো।”

মেয়েটা কিছু বলে না চুপ করে রইলো।

আমি ছারার পাত্রী ন‌ই। আজ এর বিষয়ে সব কিছু জেনে ছাড়ব।

আমি মেয়েটার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলাম।একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে আমি জিজ্ঞেস করলাম,,

“বলো, তোমাকে কয়দিন ধরে দেখছি এখানে বসে আছ। সবসময়ই বসে থাকতে দেখছি। তোমার বাবা-মা কাউকে দেখি না। কোথায় উনারা। তোমার কি বাড়ি বাড়িঘর নাই। এখানে বসে আছো কেন? মুখটা তো শুকনা লাগছে মনে হচ্ছে দুদিন ধরে খাবার ও পেটে পড়ে নাই।”

প্রচুর শয়তান মেয়ে তো তাও কথা বলে না চুপ করেই আছে।মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে কথা বলেই যাচ্ছি। এর মুখ থেকে কথা বের করেই ছাড়বো আজকে।

“কি হল বল আমাকে বলতে পারো বড় বোন মনে করে। আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”

তবু কিছু বলল না আরো কিছু কথা বললাম তাও কাজটা ও হলো না। নিরাশ হয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ আবার বসে পারলাম। পাইছি তোমার মুখ দিয়ে কথা এবার বের করবই।

“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্ষুধার্ত তুমি। তুমি কি খেতে চাও তাহলে আমি তোমাকে খাবার দিতে পারি।”

কথাটা শুনেই মেয়েটা চট করে আমার দিকে তাকালো। মুখটা ঝলমল করছে খুশিতে। কাজে লেগেছে তাহলে।

“কি হলো খাবে?”

সাথে সাথে মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।

কি আর করা যাবে খাবার কথা যখন বলেছি তাহলে তো খেতে দেওয়া লাগবে। বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরের খাওয়াতে পারব না । তাই এই বাসা থেকে খাবার এনে দেই।

খাবার গুলো দেখি মেয়েটা গাপুস গুপুস করে খাবার শেষ করে ফেলে।প্রচন্ড ক্ষুধা লেগে ছিল যে খাবার খাওয়া দেখে বোঝা গেল । এর যদি আমি এখন এক ডিশ ও খাবার দেয় তাহলেও মনে হয় শেষ করতে পারবে।

খাওয়া শেষ করে মেয়েটা নিজে থেকে বলতে লাগলো,
যা শুনে বুঝলাম মেয়েটার বাবা নেই মা ছিল মাকে নিয়ে মেয়েটা রাস্তায় ভিক্ষা করতো। ওইভাবেই যেখানে রাত সেখানেই ঘুমিয়ে যেতে। নিজস্ব কোন বাড়িঘর নেই। দুদিন আগে একটা ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট লেগে ওর মা ও মারা যায়। তখন থেকেই এখান এইভাবে বসে আছে যাওয়ার কোন জায়গা নাই। কোথায় যাবে তাই এখানে বসেই ভিক্ষা করে। কেউ কিছু দিয়েছে না হয় নাই। আর মার দুঃখে কাতর হয়ে এই ভাবে দিন কাটাচ্ছে।

মার কথা বলে মেয়েটা রান্না করতে লাগলো। ওর কান্না শুনে আমার ও চোখের কোনে জল চলে এলো ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালাম।
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম। মেয়েটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে কিন্তু একে নিয়েই বা কি করবো আমার ও যে অভাবের সংসার। নিজেরাই কোন ভাবে দিন কাটাচ্ছে বাবাকে নিয়ে। কিন্তু মেয়েটাকে এখানে রেখে যেতেও মন চাইছে না একটুকু সময় মধ্যেই যেন মনে একটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।রাত হয়েছে বলে আরো মায়া লাগলো এই রাতের বেলায় মেয়েটা এখানে থাকবে আরো দুদিন হতে এখানে থেকেছে নিশ্চয়ই ভয় করেছে কিভাবে থেকেছে?

আমি ভেবেছিলাম আমিই হয়তো সবচেয়ে দুঃখী। কিন্তু এ তো আমার থেকেও দুঃখি আমার তো বাবা আছে কোন ভাবে আমি চলছি ভালোই তো আছি খাচ্ছি দাচ্ছি চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওর নিজের সব শেষ বাবা-মা কেউই নাই। গভীরভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম আজান পড়ে গেছে। বাসায় গিয়ে নামাজ পড়তে হবে বাবার কি অবস্থা দুপুরের পরে দেখতে পারি নাই। কষ্ট লাগলেও কিছু করার নাই উঠে চলে যেতে লাগলাম।
মেয়েটার নাম রানি।

হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েটা আপা বলে ডেকে উঠলো,
থমকে দাঁড়ালাম।

পেছনের ঘরে বললাম” কিছু বলবা?”

“আপা আমনে খুব ভালা।”

শুকনো একটা হাসি দিয়ে চলে এলাম উপরে। কিন্তু ভালো লাগছেনা পরে এসে বাবার সাথে দেখা করলাম নামাজ শেষ করে। বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ পরল রানির দিকে ওইখানে ভাবে বসে আছে রানি।

দেখি আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো প্রচন্ড খারাপ লাগতে লাগলো। কিছু করতে না পারি রাতটুকু তো ওকে আশ্রয় দিতেই পারি শীতে কাঁপছে মেয়েটা দূরে থেকেই দেখতে পাচ্ছি। যে কোন বিপদ হতে পারে যেকোনো সময়। খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো।

কি যেন ভেবে ‌নিচে নেমে এলো স্নেহা
দারোয়ান আমাকে বের হতে দেবে না অনেক বলে বেরিয়ে এলাম রানি আমাকে দেখে বল আমনে এইহানে।
কিছু না বলে ওকে নিয়ে বাসার ভেতরে চলে এলাম।

রাতটাও আমার কাছে থাকল। সকালে ভাবছি কি করা যায়। হঠাৎ রুনা আপুর কথা মনে পড়লো আপু বলেছিলো রায়ার জন্য একটা আয়া রাখবে।

আচ্ছা রানি কে যদি রাখে তাহলে খুব ভালো হবে।ওর একটা আশ্রয় স্থল হবে।ভেবে মুখে হাসি ফুটিয়ে রুনার কাছে গেল আর সব তাকে খুলে বলল।
রুনা আপু তো সেই খুশি রাজি ও হয়ে গেল।
আমি জানতাম আপু রাজি হবে।

🍁
ভার্সিটিতে এসে আদ্রকে খুঁজতে লাগলাম। আদ্রকে খুজার‌ বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার ছিলো না কিন্তু এখন তাকে আমরা দরকার। তাই যার সামনে যেতে চাই না তাকেই খুঁজতে হচ্ছে।

সব সময় তো চোখের সামনেই থাকে কিন্তু আজকে পাচ্ছি না।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৪

“কিরে এখনই ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিস কেন এখনো শেষ হয় নাই। আর একটা ক্লাস আছে।”

“আজকের আমি ক্লাস করবো না আর।”

“মানে ক্লাস করবে না কেন ? প্রথম দুইটা ক্লাসটাও তো করতে পারলি না একটা ক্লাস করলি। আর একটা গ্লাসে আছে এটাও করবি না?”

“না সময় নাই অলরেডি 2 টা বাজে। সবগুলো ক্লাস করতে করতে তিনটা বেজে যাবে।”

“তো সেটা কি তুই ও জানিস। আমিও জানি। আজকে নতুন না কি। বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে আঙ্কেল ঠিক আছে তো।”

“তেমন কিছু না তোকে বলছিলাম না একটা টিউশনি যোগাড় করেছি আজকে সেখানে যেতে হবে।”

“তো তাহলে কি প্রতিদিন এক ক্লাস বাদ দিয়ে চলে যাবি।”

“ধুর না।ক্লাস করেই সেখানে যাব। কিন্তু আজকে তো প্রথম বাসায় গিয়ে রুনা আপুর সাথে নিতে হবে।প্রথম দিন কিছু চিনি না তো। তাই আমার সাথে আজকে যাবে আপু। আর কাল থেকে ক্লাস সবগুলো করেই ভার্সিটিতে থেকেই সেখানে চলে যাব।”

“ও আচ্ছা তাহলে চল। আমি চলে যাই আমার একা ভালো লাগেনা।”

“না তোর যাওয়া হবেনা কি পড়ায় নোটিশ করে রাখিস। কাল তাহলে আমি নিয়ে নেব দুজনে চলে গেলে তো পড়ার ক্ষতি হবে।”

“কিন্তু আমার থেকে ভালো লাগেনা।”

“ভালো লাগবে এক ক্লাস‌ই ত করে আয় আমি চলে যাই। আমার দেরি হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা যা।”

মন খারাপ করে কথাটা বলল অন্তরা স্নেহা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে থেকে বেরিয়ে এলো।

স্নেহার হাতে সেই হলুদ সূর্যমুখী ফুল টা। সেইটা হাতে করে সিড়ি দিয়ে নামছে দ্রুত পায়ে।
ফুলটা দেখতে দেখতে সিড়ি দিয়ে নামছে। হঠাৎ কি মনে করে যেন ফলটা কানের কাছে নিয়ে গুজলো‌। অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। নিজেকে একবার আয়নায় দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু এখানে আয়না কোথায় পাবো। ব্যর্থ হয়ে আয়না দেখার কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে লাগলো। ওড়না দিয়ে ভালো করে মাথা পেচিয়ে কান ঢেকে নিলো যাতে কেউ কানে ফুল আছে দেখতে না পারে।

শেষে সিড়ি করে নিচে নামতে একজনের তীক্ষ্ম দৃষ্টি চোখে পড়লো। তাকে দেখে খানিকটা চমকালাম। আধাঘন্টা আগে আমি এভাবে রেখে গিয়েছিলাম তাকে সে আর কেউ নয় আদ্র।কাজ শেষ করে উপরে যাওয়ার সময় তখনো সে এই সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিল কানে ইয়ারফোন হাতে ফোন নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এখনো সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।

আমি আর নিচে সিড়িতে নামতে পারলাম না সেখানে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকালাম। এনাকে দেখলে বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে।তাও সাহস করে চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিলাম কিন্তু যেতে পারলাম না মনে আমাকে টেনে ধরে রেখেছে।

পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্র আমার হাত ধরে আছে। আমি তাকাতেই হাত ছেড়ে দিল।

“তোমার সাথে কিছু কথা আছে।আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে কোথাও যাবেনা।”

অবাক চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকটা শান্ত ভাবে কথা বলছে আর এর আগে কখনো এমন শান্তভাবে কথা বলতে দেখনি। সব সময় রেগে গিয়ে কথা বলেছে আমার সাথে । আজকে চোখে-মুখে এর রাগেও দেখছি না। কি বলবে ভাবছি? আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। যা বলবে শুনে চুপচাপ চলে যাব।মাঝে মাঝে এই আদ্রর মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সব সময় আমাকে ঝামেলায় ফেলে। কিন্তু আমি কিছু করতে পারবোনা আমি খুব ভালো করে জানি তাই চুপচাপ থাকো।
চুপ করে তার কথা শোনার জন্য আছি।

“কালকের অনুষ্ঠান আসো নাই কেন?”

মাথা নিচু করে ছিলাম আদ্রর কথায় মাথা উচু করে তার মুখের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এ কথা জিজ্ঞেস করার জন্য। কিছু বলছি না চুপ করে আছি কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর আদ্র আবার বলে উঠলো,

“তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে বলি নাই।”

এমন ভাবে কথা বলছে মনে হয়নি আমার গার্জেন। কথা বলার ধরন দেখেই আমার রাগ উঠে গেল। চোখমুখ শক্ত করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

“আমার ইচ্ছায় হয় নাম আমি আসি নাই। সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য নই।”

কিছুটা রেগে কথাটা বলল স্নেহা।

স্নেহের কথার ধরন দেখে আরো ফুস করে উঠলো,

“তুমি আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছো ইউ নো হোয়াট আমি কি করতে পারি তোমার ধারণা আছে?”

“দেখুন সব সময় ভয় দেখাবেন না। আপনি সেই প্রথম দিন থেকে আমার পেছনে পড়ে আছেন অনেক জ্বালিয়েছেন আমাকে। এবার দয়া করে ছাড়ুন আমি কেন আসি নাই সেই কথা আমাকে কেন বলব বলুন তো। আমি যা বলার তা স্যার কে বলেছি তার বিনিময় আপনারা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন আর এখন সেসব নিয়ে মাথা ঘামানো তাই ভালো।”

“তুমি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছ স্নেহা আমি তোমাকে ভালো কথা কথা জিজ্ঞেস করছি।”

“সেটাইতো বুঝতে পারতাছিনা হঠাৎ এত ভাল করে কথা বলছেন।”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি ভালো করে বলছি। তোমার কোন সমস্যা আছে।”

“না সমস্যা নেই আপনার মুখে ভাল কথা আসবে সেটা আমি কখনো ভাবি নাই। আচ্ছা আমি আসছি।”

বলে স্নেহা এগিয়ে যায় পেছন থেকে আদ্র আবার বলে ওঠে,

“কোথায় যাচ্ছ ক্লাস এখনো শেষ হয় নাই।”

“জানি শেষ হয় নাই।”

“জানা যেহেতু তাহলে যাচ্ছো কোথায়?”

“সেই কৈফিয়ত ও কি আপনাকে দিতে হবে।”

বলার আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াল না স্নেহা সোজা হেঁটে গেল মাঠ দিয়ে।

আদ্রর ওর যাওয়া দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে।

.

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে দেখা করে এলাম হালকা কিছু খাবার খেয়ে। রুনা আপু সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।কলেজের সামনে যেতে হলো আমি কলেজ থেকে বাম দিকে আছে কিন্তু টিউশনি ডানদিকে।ভালোই হলো কলেজ থেকে আসে তাহলে কলেজ থেকে আধা ঘন্টার মত লাগলো সেই বাসায় যেতে।আপু গিয়ে কলিং বেল চাপ দিয়ে দুই মিনিট পর একটা মহিলা হাসি মুখ করে দরজা খুলে দিল। আপুর সমবয়সী হবে দেখতে খুব সুন্দর মহিলাটা। আপুকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমি আর আপু ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলাম। আপু তার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তার সাথে পরিচয় জানতে পেলাম এই হল আমার স্টুডেন্টের মা। সে আমাদের বসিয়ে রেখে রান্নাঘর থেকে ছোট লাগালো খাবার-দাবার নিয়ে এলো। হালকা খাবার এনে সামনে দিল।তারপরে পরানের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চললো কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ছেলে রা নানুবাড়ি গিয়েছে’ যার জন্য আজকের পড়ানো হবে না কাল থেকে পড়াতে বলল। কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বললে মহিলাটিকে ভালই লাগলো।হাসিখুশি একটা মহিলা রায়া আমার কোলে ছিল দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করল এক ঘন্টার মতো সেখানে বসে রইলাম তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর আপু। আপু বাইরে এসে বল তার নাকি একটু মার্কেটে যাওয়া দরকার।

কাছে নাকি একটা মার্কেট আছে সেখানেই যাবে।
আপুকে না করার সাহস আমার নায় তাই আর কিছু বললাম না মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
আবার আমি পাঁচ মিনিট একটু হেঁটে সামনে একটা বিশাল বড় মার্কেট দেখতে পেলাম বাইরে যেতে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে আমি হা করে মার্কেটের দিকে তাকিয়ে আছি অনেক বড় মার্কেট।এ ফর প্রেসেরভেশন মার্কেটের ভিতরে ঢুকলাম মানুষের আনাগোনা অনেক। যে যার মত জিনিস কেনাকাটা করছে। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছি। কিছু মহিলা কসমেটিকের দোকানে বসে বসে সাজছে। কেউ মুখে মেকআপ দিচ্ছে আবার কেউ ঠোঁটে লিপস্টিক বা কেউ চুল বাঁধছে। রাখার মত সবকিছু।কেউ কারো দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। সবার সামনে এভাবে সাজছে লজ্জা করছে না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপু সাথে হাটতে লাগলাম। এখানে আসার পর থেকেই শুধু ভার্সিটিতেই গিয়েছে আজকে ফার্স্ট শপিংমল এলাম।আপু কসমেটিকের দোকান পেরিয়ে উপরে উঠলো না শেষে দোকানে গেল সেখানে মনে হয় ছোটোদের জামা দেখা যাচ্ছে তার মানে রায়ার জন্য কিছু কিনবে।

আমি শুধু চারপাশে দেখছি আপু দোকানে গিয়ে রায়ার জন্য শীতের জামা দেখতে লাগলো।

রায়াকে আপু নিজের কোলে নিয়ে পরিয়ে দিচ্ছে ঠিকঠাক লাগেনা। আমি আপুকে রেখেই দোকান ছেড়ে বেরিয়ে পাশের দোকান গুলো দেখতে লাগলাম। কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে আর কখন আসতে পারবে কিনা। দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।

পরপর তিনটা দোকান পেরিয়ে গেছি আমি।আমার তো সেদিকে খেয়াল নেই আমি আমার মতো এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রতিটা দোকান দেখছি। হঠাৎ আমার খেয়াল হল আমি ভুল করে ফেলেছি। কত দূর চলে এসেছি কে জানে আমি এখন একটা জুতার দোকানের সামনে। ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের জুতা অসংখ্য। কিছু লোক আছে তারা আছে আমি তার পাশে থাকা সেখানে তো সেই দোকান টা রুনা আপু কোথায়।
চারপাশে তাকিয়ে খুঁজছি পাচ্ছি না। এসেছিলাম দক্ষিণ দিকে গেলাম আমি উত্তর দিকে আমার সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। কি মুশকিল কি ঝামেলায় পড়লাম?

এখন আপুকে কোথায় খুজে পাব উল্টা দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর আপুকে খুঁজছি। সবার মাঝে আমি এক অচেনা সবাই আমার অপরিচিত। আমার ঘোরাফেরা তাকানোর চালচলন দেখে মনে সবাই বুঝতে পেরেছে যে আমি হারিয়ে গেছি এমন। সবাই কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে যে যার কাছে নিযুক্ত হচ্ছে। বড়সড় একটা ঢোক গিললাম এখন কি হবে?
আপুকে কোথায় খুজে পাব কেন যে তখন পাগলামো করে বেরিয়ে আসতে গেলাম।
এখন আপুকে কোথায় খুজে পাব।
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে সবাইকে স্ক্যান করছি। একবার আপুকে দেখলেই দৌড়ে চলে যাব।

চোখ বন্ধ করে একটা বড় শ্বাস ফেলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌।হঠাৎ একটা মুখে দেখে হাসি ফুটে উঠল জানিনা কেন লোকটা কেন অসম্ভব ঘৃণা করি তবুও তার মুখটা দেখে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।
দৌড়ে এলাম এই লোকটার সামনে দাঁড়াতেই। আমাকে দেখে অসম্ভব পরিমানে শক খেলো লোকটা। এখানে আমাকে কল্পনা করেনি হয়তো।
কিন্তু আমি একটু হলে ভয় মুক্ত হলাম কেন জানিনা। তাকে দেখে সাহস পেলাম হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে তো বেচেছি। এই অনেক তাকে অসহ্য লাগে আমার কিন্তু তবুও সে আমার পরিচিত আর কেউ এখানে পরিচিত নয়। তার কাছ থেকে হেল্প নিতে হবে। সে কি আমায় হেল্প করবে। আকাশ-পাতাল ভাবনা ভাবতে থাক সামনে দাঁড়িয়ে।

আদ্র স্নেহাকে দেখি বড় স্বর শক খেয়েছে। ভাবি নাই এখানে আবার স্নেহা কে দেখবে। তারমানে মার্কেটে আসবে বলে স্নেহা তখন ক্লাস সবগুলো না করে চলে এসেছে কিন্তু এভাবে দৌড়ে আসলে ?

“তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?”

“আপনাকে আমার সহ্য না হলেও। আজকে আপনাকে দেখে কতটা খুশি হয়েছে জানেন। অফ আর একটু হলে ভয় হার্ট অ্যাটাক করতাম।”

বলে বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস ফেলল স্নেহা।
আদ্র স্নেহের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু ওকে সহ্য হয় না এ কথাটা শুনে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।

“কি বললে তুমি আমাকে তুমি সহ্য করতে পারো না। সেই কথাটা আবার তুমি বড় গলায় বলছো তোমার সাহস দেখে আমি হতবাক।”

“দেখুন আমার সাথে ঝগড়া ক‌ইরেন না এখন। আমি সত্যি খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।”

“বিপদ আর বিপদ এর কি হয়েছে?”

কপালে ভাঁজ ফেলে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল কথাটা।

“আমি হারিয়ে গেছি আমাকে একটু সাহায্য করুন আমি কিছুই চিনতে পারছিনা। রুনা আপুকে খুঁজে পাচ্ছিনা কোথায় চলে এলাম।”

স্নেহা এমন কথা শুনে আদ্রর পাশে দাঁড়ানোর ফ্রেন্ডরাও বড় বড় চোখ করে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। সেম আদ্র ও এত বড় মেয়ে কিনা হারিয়ে গেছে।এ ই মেয়ে কি পাগল হলো নাকি।

“হোয়াট হারিয়ে গেছে মানে কি পাগল হলে নাকি হারাবে কেন?”

“সত্যি আমি হারিয়ে গেছি। রুনা আপু একটা বাচ্চাদের দোকানে গেছিল আমাকে নিয়ে। আমি মার্কেটে ঘুরে দেখার জন্য তাকে রেখে চলে এসেছি। এখনো তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা।”

কাঁদো কাঁদো মুখ করে কথাটা বলল স্নেহা।আর্দ্র সহ ওর সাথে সবাই আমার কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো। আমি চোখ ছোট করে তাদের হাসি দিকে তাকিয়ে আছি।

“আর ইউ সিরিয়াস তুমি হারিয়ে গেছ এত বড় মেয়ে কিনা হারিয়ে গেছে।”

কথাটা বলে আবার হেসে উঠলো।
স্নেহা ওদের এভাবে হাসার কারণ এ রেগে উঠে । তবুও অনেক কষ্টে রাগ সংযত করে বলে,

“আপনারা হাসছেন কেন? আমার কথা কি আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।”

কেউ কিছু বললো না হেসে চলছে।
এবার স্নেহা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারেনা।

“আপনারা আসলেই অসভ্য। এই যে ( আদ্রকে দেখিয়ে) আপনাকে আমার পরিচিত মনে হয়েছিল বলে আপনার কাছে এসেছিলাম সাহায্যের জন্য।আপনি যে সাহায্য করার মত লোক না সেইটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আপনাদের সাহায্য আমার লাগবে না।”

বলে হাঁটতে লাগলো নিজের চুল নিজের‌ই টেনে ছিড়ে ফেলতাম ইচ্ছে হচ্ছে। কেন যে অসভ্য লোক তার কাছে গেলাম। আমার তো আগেই বোঝা উচিত ছিল উনি আমাকে হেল্প করবে না। উল্টো সবার সামনে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেবে।

নিজের মত বকবক করতে করতে হাটতে লাগল স্নেহা।

“আরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”

“তোরা যা আমি একটু পরে আসছি।”

আদ্র স্নেহার পেছনে যেতে লাগলো। আদ্র স্নেহার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে। স্নেহা বকবক করতে করতে হাঁটছে। নিজেকেই নিজে থাপ্পর মারতে ইচ্ছা হচ্ছে। কেন গেলাম কেন গেলাম করতে করতে হঠাৎ রুনা আপুকে পেয়ে গেলাম।

আদ্র স্নেহার কাছাকাছি চলে এসেছে যেই স্নেহা বলে ডাকবে। আমি স্নেহা রুনাকে গিয়ে জাপটে ধরে। আদ্র দুর থেকে সেটা দেখে থেমে যায়। সামনে আর যায়না।

চলবে♥️
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here