#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৬
হাতের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে মনে চাইছে এটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে।
এর জন্য আমাকে চোখে পরলো লোকটার অসহ্য।
স্নেহার হাতে আদ্রর বাইকের চাবি।
কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটিতে ঢোকার সময় হঠাৎ একটা লোককে ডেকে ওঠে পেছনে দেখে একটা ছেলে। সেই ওকে জিজ্ঞেস করে,
“আপু আপনি কি এই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন?”
স্নেহা মাথা নেড়ে হ্যা জানায়। লোকটা সাথে সাথে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে।
তারপর পকেট থেকে একটা চাবি বের করে বলে ফাইনাল ইয়ারের আদ্র কে চিনি কিনা।
আদ্রর নাম বলতে আমি চিনে যাই। ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
“আপনি কে? এসব আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
“আসলে আপু আমি আদ্রর ফ্রেন্ড জামিলের বড় ভাই। জামেলা বাইকটা কালকে নিয়ে গিয়েছিল আজকে জামিল একটা কাজে ঢাকার বাইরে গেছে এজন্য আমাকে বলেছিল যে বাইক টা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেকক্ষণ ধরে এখানে তোকে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না। বাইকটা এখানে পার্ক করে রেখেছি কিন্তু চাবিটা। কার কাছে দেবো বুঝতে পারতেছি না।”
“তো এখন আমাকে ডাকলেন কেন?”
“আসলে আপু আমি আপনার কাছে দিবো ভাবছিলাম। আপনি যদি একটু কষ্ট আদ্রকের চাবিটা দিয়ে দেন খুব উপকার হত। আসলে আমার কাজ আছে এখানে বেশী সময় নষ্ট করা আমার জন্য প্রবলেম। আপনি প্লিজ একটু আদ্রকে দিয়ে দিবেন আপু।”
কি আর বলবো এমন ভাবে লোকটা বলছিল আমি না করতে পারলাম না। তিনি আমার হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর থেকে আদ্র কে খুঁজতে লাগলাম। আদ্র ও ভার্সিটিতে নাই আর ওর সাথের সাঙ্গোপাঙ্গ গুলো ও নাই। ভার্সিটিতে দেখছি না কেউই আসেনাই। আর আসবেই বা কেন এতো সকালে। আমি তো আজকে অনেক সকালে এসেছি। লাইব্রেরীতে যেতে হবে এভাবে খুঁজে লাভ নাই। তার থেকে বরং লাইব্রেরীতে গিয়ে আমি আমার কাজ শেষ করি। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে দিয়ে দেবো নি।
স্নেহা লাইব্রেরীতে চলে গেল।
ক্লাসের 10 মিনিট আগে বের হয়ে গেল।
অন্তরা মনে হয় চলে এসেছে। যায় ওকে নিয়ে আদ্র কে খুঁজবো। ক্লাস রুমে গিয়ে অন্তরা কে খুজতে লাগলাম। কিন্তু অন্তরা ক্লাসে নাই। অন্তরা কি আসে নাই নাকি। ক্লাসের সময় তো হয়ে গেছে এখনো আসে নাই। ওকে আজকে আসবে না?
গ্রিলের উপর হাত রেখে নিচে তাকাতেই আদ্রর দিকে চোখে পড়লো।
আদ্রর বাইক টা নিচে পার্ক করা ছিল। আর চাবিটা আমার কাছে ছিল। আদ্র ও তার সকল ফ্রেন্ডরা একসাথে বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে কি যেন আলোচনা করছে।
ওদেরকে দেখে স্নেহার মুখে হাসি ফুটল।এই আদ্র কে পেয়েছি ওনার চাবি ওনাকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে এখন। ভেবে তাড়াতাড়ি নিচে নামতে লাগলো। আদ্রর সামনে বিন্দুমাত্র যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও এখন যেতে হবে। ভেবে রাগ উঠলে ও রাগ সংযত করে এগিয়ে যেতে লাগলো।
কাছাকাছি আসতে মাইশার প্রশ্ন করতে লাগলো,
“হে ইউ তুমি এখানে কি করছ?”
তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে প্রচন্ড বিরক্ত আমাকে এখানে দেখে আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম আদ্রর দিকে। এবার মেয়েটা চিৎকার করে উঠলো, হয়ত আমার এই ইগনোর মেনে নিতে পারে নাই। কিন্তু এর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা আমার নেই। প্রথম থেকে এই আমাকে সহ্য করতে পারে না।
মাইশার চিৎকারের উপস্থিত সবাই সব মনোযোগ ভঙ্গ করে আমাদের দিকে তাকালো।এভাবে সবার তাকানোতে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করলাম সাথে মাইশার চিৎকারে খানিকটা কেপে উঠলাম,
“ইউ তুই আমার কথা ইগ্নোর করছিস?”
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা এত জোর কেউ চিৎকার করে ভয় পেয়ে গেছে গা। ভয়ে কথা বলতে পারছিনা। হঠাৎ কোথা থেকে রাহাত ভাই এসে জিজ্ঞেস করল,
“আরে স্নেহাকে তুমি এখানে কিছু বলবা নাকি।”
এবার আস্তে আস্তে বললাম,”আসলে ভাইয়া আমার একটা দরকারি জিনিস দেওয়ার ছিলো।” আঙ্গুলের ইশারা করে আদ্রকে দেখিয়ে বললাম,” ওনাকে”
আমার কথাটা শুনে কেউ হজম করতে পারে নাই হয়তো। সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবার কি দেবো তোকে। ওটাই হয়তো ভাবছি সবাই।
আদ্র নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ভাইয়া বলল “আচ্ছা যাও দিয়ে আসো।”
আমি একটু সাহস নিয়ে সবার থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর দিকে যেতে লাগবো এমন সময় সামনে এসে দাড়ালো মাইশা।
এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে।
বুঝতে পারতেছি না উনি এত রেগে গেলে কেন? কিছুক্ষণ আগে বিরক্ত হয়ে কথা বলছে এখন তো রেগে আগুন হয়ে আছে।
আমি একটা ঢোক গিললাম ওনার রাগ দেখে।
“আদ্রকে কিসে দিবি মানে। আদ্রকে তুই আবার কি দিবি।”
রেগে কথাটা বলল,
“আসলে এই যে এইটা দেওয়ার জন্য এসেছিলাম।”
বলেই হাতের চাবিটা উঁচু করে দেখালাম।
মাইশা তো আমার হাতে আদ্রর বাইকের চাবি দেখে বড় গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই চাবিটা আমার হাতে একদমই আশা করে নাই ।
আদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে চাবিটা আমার হাতে কি করে এলো?আমাকে হাতে চাবিটা দেখে মাইশাটা টান দিয়ে আমার হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিল।
“আদ্রর বাইকের চাবি তোর কাছে কি করে এলো?”
আমি কিছু বলতে যাবো আবার মাইশায় বলে উঠলো,
“আদ্র আমরা তো ভেবেছিলাম চাবি চুরি হয়ে গেছে। এই দেখ চুর নিজে এসে ধরা দিয়েছে।এই মেয়ে তুমি বাইকে যাবি চুরি করে ছিলে তাইনা।”
হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মাইশার দিকে। শয়তান মেয়ে আমাকে চোর বলছে।
“কি সব বলছেন আপনি আমি চুরি করতে যাব কেন?”
“চুরি না করলে তোমার কাছে চাবি কিভাবে গেল!”
“যেভাবে বাইকটা এখানে আসছে ওই ভাবেই চাবিটা আমার কাছে গেছে।”
“সত্যি করে বল।”
সবকিছু খুলে বললাম।তারপর আর কেউ কিছু বলল না আর চাবিটা যেহেতু মাইশা নিয়েছে আর আদ্র সেটা দেখেছে। তাই আমি আর কিছু বললাম না সব বলে চলে আসলাম।
আর মনে মনে সবকটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম। বিশেষ মাইশা শাকচুন্নিটার।
বকতে বকতে এলোমেলো পায়ে হেঁটে আসছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে রাহাত ভাই ডেকে উঠলো, সে আমার পাশে এসে দাঁড়াল।
“ভাইয়া কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ আসলে স্নেহা কেমন আছো?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এমনি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে আসলাম।আসলছ তোমার সম্পর্কে তো তেমন কিছুই জানি না। এতদিন ধরে পরিচিত হলাম তাই আরকি।”
“আচ্ছা বলেন কী জানতে চান?”
“তোমার পরিবারে কে কে আছে?”
“আমি আর বাবা।”
“তুমি আর বাবা তোমার মা কোথায়?”
কথাটা শুনে স্নেহার মুখটা মলিন হয়ে গেল। মায়ের কথা মনে পড়ে গেল মা তো আর এই পৃথিবীতে নাই।
স্নেহার মলিন মুখ দেখে কিছুটা অবাক হল রাহাত। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করাতে মুখ গোমরা করল কেন? বোঝার চেষ্টা করছে।
“এনি প্রবলেম স্নেহা।”
স্নেহা একটা বড় শ্বাস ফেলে বলল,,,” না, আমার মা বেঁচে নাই।”
ছোট করে কথাটা বলল, রাহাতের খুব মায়া হলো কথাটা শুনে। অজান্তেই মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম,
সাথে সাথে রাহাত বলল,” সরি সরি এক্সট্রিমলি সরি আমি জানতাম না। আর তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই নি। তবু অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললাম কিছু মনে না।”
“ইটস ওকে, ভাইয়া এত সরি বলতে হবে না।”
একে একে আমার সবকিছু জিজ্ঞেস করল কিছু কিছু বললাম কিছু বললাম না গ্রাম থেকে এসেছি সেটা বললাম বাবার আমি ছাড়া আর কেউ নাই সেটা বললাম। কথা বলতে বলতে সিড়ির কাছে চলে এলাম ভাইয়া আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল আমি উপরে চলে গেলাম।
ক্লাসে গিয়ে অন্তরা কে পেলাম। একটা আগে ও তো ছিল না এখন কোথা থেকে এলো।
“এই তুই কোথা থেকে এলি?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন বাসায় থেকে এলাম।”
“কিন্তু একটু আগে তো তোকে ক্লাসে দেখলাম না। আমি পাঁচ মিনিট আগে নিচে গিয়েছি পাঁচ মিনিট তুই চলে এলি।”
“আমি অনেকক্ষণ আগে এসেছি। তোকে পাইনি দেখে লাইভ্রেরীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুই তো সেখানে ছিলি না উল্টা আমার বিপদ হয়েছিল।”
“বিপদ হয়েছিল মানে?”
“আর বলিস না ওখানে গিয়ে ওই হৃদয় সাথে দেখা হয়েছিল। এত ছেসরা কেন ছেলেটা বলতো। সারাদিন ফোন দিয়ে আমাকে পাগল করে খায়। ফোন না ধরলে আমাকে থ্রেট দেয়। বাসায় আসবে আর আব্বু আম্মুকে নাকি বলবে তার আর আমার রিলেশন চলছে। কি এক জামেলা বলতো। ছেলেটা আমার বাসাও চিনে নিয়েছে।”
অন্তরা কথা শুনে সত্যি চিন্তা হতে লাগলো। খারা বেয়াদব তো ছেলেটা।
“আমি কি করবো দোস্ত। একটা সাজেশন দে একে উচিত শিক্ষা দেওয়ার।”
“আমি কি সাজেশন দিব।”
ভাবুক হয়ে কথাটা বলল আমার মাথায় কিছুই আসেনা। অন্তরা আমার কথা শুনে রেগে তাকিয়ে আছে।
স্যার চলে আসায় কথার সমাপ্তি হলো আর ক্লাসে মন দিলাম।
।
।
।
।
স্নেহা ওয়াশরুমে গেছে অন্তরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাকলো কন্ঠটা শুনে অন্তরা রেগে উঠলো,
হৃদয় দাঁত কেলিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে। অন্তরা রেগে পেছনে তাকাতেই রাগ উবে হয়ে গেল। হৃদয়ের দিকে চোখ আটকে গেল। নীল কালারের টিশার্টের অপূর্ব লাগছে দেখতে। অন্তরা রেগে থাকলেও দেখাতে পারছে না ও হাঁ করে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে কেন জানি।
ওর তাকানোর মাঝে ধ্যান ভঙ্গ করলো হৃদয়ের কথায়। হৃদয় যে কথাটা বলছি সেটা শুনে রাগ ওর মাথায় উঠে গেল।
“সুইট হার্ট আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে আজকে যে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ।”
ওর কথা শুনে আমার মন চাইছে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিতে।
“কি হল আমার দেখে রেগে বেলুন হয়ে গেলে কেন?”
“আপনি আসলেই একটা শয়তানের হাড্ডি। আপনাকে বলছিনা আপনি আমার আশেপাশে আসবেন না এত বেহায়া কেন আপনি?”
“ভালবাসলে তো একটু বেহায়া হতেই হবে তাইনা।”
“ভালোবাসা মাই ফুট আপনি আমার চোখের সামনে কখন আসবেন না। ভুলেও আমাকে ফোন দিবেন না। বুজছেন আপনাকে আমার সহ্য হয় না বুঝতে পারেন না।”
“এটা তোমার রাগের কথা। তুমি ওআমাকে ভালোবাসো সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি কিন্তু স্বীকার করছ না।”
একথা শুনে অন্তরা বোকা বনে গেলো। ছেলে বলে কি আমি নাকি ভালোবাসি ওনাকে কখন কবে ভালোবাসলাম আমি নিজেই জানিনা উনি জেনে গেছে। যত্তসব আজাইরা উটকো ঝামেলা।
“ফালতু কথা আপনি সব সময় বলেন।এখন আবার আরেক কথা বলছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি আসলেই আপনি একটা পাগল। আপনাকে আমি সহ্য করতে পারি না আর আপনি বলছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
বলেই তাচ্ছিল্য মার্কা একটা হাসি দিল অন্তরা।
“স্বীকার করছ না তো করবে করবে খুব শীঘ্রই নিজে এসে আমাকে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো।”
“পাগল আমি এই কথা আমি জীবনে বলবো না।আপনার এই পাগলামো কথা আপনার নিজের কাছে রাখুন আর ফটুন তো এখান থেকে।”
“আজকে বেশী সময় নাই। তাই চলে যাচ্ছি ভালো থেকো সুইট হার্ট। বাই।”
বলে হৃদয় দুলতে দুলতে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলাম।
🍁
ঘুমের ঘুরে হালকা আর্তনাদ শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসলো স্নেহা। এমন আর্তনাদ কোথায় থেকে আসছে ভাবতে বাবার কথা মনে পরে। দৌড়ে বাবা রুমে আসি।
বাবা বিছানায় হাঁসফাঁস করছে।বাবাকে ধরতে আমার হাত গরম হয়ে ওঠে। এত গরম শরীর। বাবা কি জ্বর হয়েছে কিন্তু রাতে খাওয়ার সময় তো ঠিকই ছিল।
“বাব তুমি ঠিক আছো কি হয়েছে তোমার ?কথায় কষ্ট হচ্ছে বলো।”
ভয় তোতলাতে তোতলাতে কথাটা বল স্নেহা।বাবার কি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নাকি বুঝতে পারছ না। স্নেহার বাবা অস্পষ্ট সুরে পানি বলে উঠলো,
স্নেহা তাড়াতাড়ি বোতলের দিকে নজর দিলো না একটু পানি নাই বোতলের কিভাবে করলাম বোতল একটু পানি রাখে নাই।
তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে পানি এনে বাবাকে পানি খাইয়ে দিলাম। কিন্তু বেশি পানি খেতে পারল না। তবুও কেমন জানি করছে? কথা বলতে পারছে না। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি করবো এখন বুঝতে পারছি না?মাথা কাজ করছে না। বাবাকে নানা কিছু জিজ্ঞেস করছি কথা বলছে না।চোখ বন্ধ করে আছে। এতে আমি আরও ভয় পেয়ে যাই।
এখন রাত দুটোর কাছাকাছি।
এই সময় তো ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না। একটা প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারলে ভালো হতো। কোথায় পাবো এই সময় দোকান পাট ও খোলা থাকবে না।
চিন্তিত হয়ে বাবার পাশে বসে আছি। আশার আলো ফুটলো ছোটবেলায় আমারও যখন জ্বর হত । মাথা তখন মা জলপট্টি দিতো। আমিতো এই কাজটা করতে পারি উঠে বাথরুমে থেকে ছোট বাটিতে পানি ও একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে আসলাম। তারপর বাবার মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলাম।
শরীর অতিরিক্ত গরম মনে হয় অনেক জ্বর এসেছে। বাবার মাথায় জলপট্টি দিয়েছে আর আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। বাবাকে হারানোর একটা ভয় পাচ্ছি।
সাথে সাথে আমার হাত চলা বন্ধ হয়ে গেল আমি আর জলপট্টি দিতে পারছিনা।বাবার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচব। পৃথিবীতে তো এই একমাত্র একজনই আছে যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওই ভাই বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফোটাতে লাগলাম।
আল্লাহ তুমি এত নির্দয় হয় না বাবা কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।
ছোট থেকে একটু তেল আমি একটু বেশি ভয় পাই।
হঠাৎ মাথায় বাবার হাতের ছোঁয়া পেয়ে মাথা চোখের বাবার দিকে তাকালাম বাবা তাকিয়ে আছে।
বাবা কষ্ট করে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তাকিয়ে থাকতে পারছিনা। কথা বলতে পারছেনা। আমি বাবার হাতে মাথায় চেপে ধরে বাবা বাবা বলে ডাকতে লাগলাম। তারপর আবার জলপট্টি দিতে লাগলাম ও ভাবেই বাবা ঘুমিয়ে পড়ল।
জলপট্টি দিতে দিতে সকাল হয়ে গেল। সকালের দিকে বাবার মাথায় হাত রাখলাম একটু হালকা জ্বর কমে এসেছে। কিন্তু বেশি কমেনি ওষুধ আনতে হবে দিনের আলো ফুটতে আমি টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ওষুধ কেনার জন্য।
বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটলে একটা ওষুধের দোকান আছে। সেখানে যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগলাম কিন্তু সেখানে এসে নিরাশ হলাম। দোকান বন্ধ বেশি সকাল দেখে মনে হয় দোকান খুলিনি।
বাবা কে বাসায় একা রেখে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না ।তাড়াতাড়ি ওষুধ নিয়ে ফিরতে হবে।কিন্তু এখন ওষুধ কিভাবে নেব। দোকানই তো বন্ধ আরেকটা দরকার আছে সেটা অনেক দূর অনেকদূর হেঁটে যেতে হবে। অনেক সময় চলে যাবে।
যত সময়ই লাগুক যেতে হবে। টাকা যা আছে তা দিয়ে ওষুধ হবে। গাড়ি ভাড়া তো নেই। বাধ্য হয়ে হাঁটতে লাগলাম।
স্নেহা হাঁটতে লাগলো দ্রুত গতীতে । এখন যদিওর পাখা থাকতো উড়ে উড়ে চলে যেত। মন চাইছে পাখা থাকা দরকার ছিল কিন্তু সেটা তো সম্ভব না এখন পায়ে হেঁটে যেতে হবে। তারাতারির জন্য স্নেহা নিচের দিকে খেয়াল না করে এক মনে হেঁটে যাচ্ছে হঠাৎ পায়ের সাথে কিছু বেজে মুখ থুবড়ে পড়তে নিলো,
পরেও গেল পরে একটা চিৎকার করে উঠলো, পায়ের গোড়ালিতে ও হাত ছুলে রক্ত বের হয়ে গেছে। প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি মনে হয় আমার হাত আর পা ভেঙে গেছে। পরে উঠার শক্তিটুকু পাচ্ছিনা ওই ভাবেই বসে রইলাম।
চোখ বন্ধ করে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু কমছে না উল্টা আরো বেড়ে যাচ্ছে মনে হয়। যন্ত্রণায় গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগল।
মাথা উঁচু করে দেখলাম আশেপাশে তেমন কেউ নেই। একজন দুইজন যাচ্ছে তারা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের তাকানোতে হালকা লজ্জা পেলাম এত বড় মেয়ে হয়ে ভাবে পড়ে গেছি। ভাবতেই ব্যথা আর লজ্জ্বা দুইটা আমাকে আঁকড়ে ধরল।
ওইভাবে উঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু উঠতে পারছে না পা মনে হয় ভেঙে গেছে। হঠাৎ আমার সামনে একটা বাইক এসে থামল, মাথা উঁচু করে বাইকের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। উনি এখানে কি করছে?
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৭
আদ্র বাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। এভাবে দেখে কিছুটা না অনেকটাই অবাক হয়েছে যা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।একেতে ব্যথা শরীর অসাড় হয়ে আসছে । তার উপর আবার এভাবে চোখের সামনে আদ্রকে দেখে আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। লোকটাকে এখন আমার সামনে আসতে হল।
এমনিতেই সব সময় আমাকে অপমান করে লোকটা কিছু হলেই। আজকে আবার এভাবে রাস্তা এভাবে পড়ে থাকতে দেখেছে। এটা নিয়ে আমাকে কত কথাই না শোনাবে আল্লা মাবুদ জানে। কিন্তু উনি এখানে কি করছে?
এই সাত সকালে।
উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে চেঞ্জ করে নাও এভাবে ছুটে চলে এসেছে। গায়ে একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার। হলুদ গেঞ্জি। আজকে ওনাকে গেঞ্জিতে দেখলাম তাও হলুদ রঙের। উনার চোখে ঘুম ঘুম ভাব।আমি কিছুটা অবাক হলাম। উনী এভাবে এখানে কোন জরুরী কাজে চাচ্ছিলাম মনে হয়।
“আপনি এখানে?”
আমতা আমতা করে কথাটা বললাম।
আমার জবাবের উত্তর না দিয়ে উনি আমাকে বলল,
“সাতসকালে তুমি রাস্তার মাঝে বসে কি করছো?”
ওনার কথা শুনে আমি হতবাক। আমার উত্তর না দিয়ে উল্টা আমাকে প্রশ্ন করছে কত বড় অসভ্য লোক। বিরবির করে উনাকে বকে উঠে দাঁড়াতে গেলাম।
কিন্তু উঠতে পারলাম না সাথে সাথে আবার বসে পড়ল।পায়ের ব্যাথাটা গুরুতর হয়েছে। এমন ভাবে পড়েছি আল্লাহ পা দুটো আমার ভেঙ্গে গেল। একদিকে বাবাকে নিয়ে চিন্তা এদিকে আমার এই অবস্থা যখন বিপদ আসে চারদিক থেকে আসে। তার উপর আবার সামনে আদ্র।
আমাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে আদ্র অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
“কি হয়েছে এভাবে বসে পড়লে কেন?”
“আমাকে একটু ধরেন প্লিজ আমার তে পারছিনা।”
বলেই হাতটা এগিয়ে দিলাম এখন তাড়াতাড়ি ওঠার দরকার। উঠে আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে তারসর বাবার কাছে যেতে হবে। এখন আদ্রর সাথে তর্কে যেতে পারবো না যে কারণে এসে থাকো আই ডোন্ট কেয়ার।
আদ্র হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এই কথাটা হয়তো হজম করতে।
“কি হল এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? একটু আমার হাতটা ধরেন না। আমি উঠতে পারছিনা দেখতে পাচ্ছেন না।”
“পড়তে পারছো না কেন নাকি এক্টিং করছে আমার হাত ধরার জন্য। আর তোমার হাত আমি কেন ধরতে যাব তোমাকে সাহায্য কেন করব।আমি কাউকে সাহায্য করি না ওকে। তুমি এখানে কি করছো বললেনা তো?”
আদ্রর কথা শুনে আমার রাগ উঠে গেল এমন খারাপ লোক আমি আমার জীবনে দুটো দেখিনি।সাহায্য করবে না সাহায্য করেনা সে আবার আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি এখানে কি করছি? আমি কেন বলতে যাবো।
“দরকার নাই আপনাকে।আমি একাই উঠবো”বলে উঠে দাঁড়িয়ে এক পা এগোতে ঠাস করে যেতে নিলাম।
এবার আমি শেষ কিন্তু আল্লা বাঁচিয়ে আমি পরি নাই।
এটা কিভাবে সম্ভব কেউ আমাকে ধরে রেখেছে শক্ত করে। সে আর কেউ না আদ্র। আদ্রকে দেখে মেজাজটা গরম হয়ে গেল। একটু আগেই আমি হাত ধরতে বললাম ধরলোনা এখন আবার আমাকে ধরেছে। একে বোঝা মুশকিল।
তবুও রাগ দেখিয়ে বললাম,
“আপনি আপনি আমাকে ধরেছেন কেন? ছারুন, একটু আগেই তো আপনি বলেছেন কাউকে সাহায্য করেন না এর আগে বলেছিলেন। তাও কেন জানি বারবার আপনাকে সাহায্য করতে বলি বুঝি না আসলে দোষ আমার না দোষ আপনার। আমি বিপদে পড়লে সব সময় আপনি আমার সামনে আসেন কেন বলেন তো।আমাকে আপনার ধরা লাগবে না আপনার ধরা থেকে আমি নিচে পড়ে যাওয়া ভালো।”
কথাটা বলে আদ্রর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় একটা শুকনো ঢোক গিলি। আদ্রর চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে। এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে দিবে।
আদ্রর দিকে তাকাতেই আমি ঠাস করে নিচে পড়ে গেলাম। নিচে পড়ে ওমাগো বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
“এটা আপনি কী করলেন এভাবে কেউ ফেলে আমার মাজার টা গেলো। এতক্ষণ পায়ে ব্যথা ছিল এখন মাজাটা ভেঙে গেল বোধহয়।”
বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।
“স্টপ ইট। একদম কান্না করবেনা।”
“ব্যথা পেয়েছে এখন আবার কান্না করতে পারবেন না। আসলে আপনি একটা রাক্ষস।”
“আজেবাজে কথা বলে কিন্তু তোমাকে কি হাল করতে পারি । তুমি খুব ভালো করেই জানো।”
“অসভ্য লোক একটা। সব সময় থ্রেট দেওয়া।”
“আরেকবার তোমার মুখ থেকে আর একটা বাজে কথা বের হলে। আমি কিন্তু ধরে আর একটা আছাড় মারবো তোমাকে।”
বিরক্ত হয়ে আদ্র দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটল স্নেহা। তারপর বলল,” দেখুন আপনার সাথে আমি ঝগড়া করতে চাই এখন। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেল আপনার জন্য আমার অবস্থা একদম খারাপ। এবার আমার থেকে সরে যান। নিজের রাস্তা নিজে জান আমাকে আমার রাস্তায় যেতে দিন।”
বলে স্নেহা কষ্ট করে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো খারাপ লাগলো এখন তাড়াতাড়ি ফার্মাসিতে যেতে হবে। ওইদিকে বাবা একা বাসায় আছে আবার কি না কি করতেছে। ঘুম ভাঙার আগে আমার বাসায় পৌঁছাতে হবে।
আদ্র দিকে আর না তাকিয়ে সামনে এগোতে লাগল। সারা শরীর ব্যথায় অসার হয়ে আসছে। এক পা এগানোর শক্তিটুকু ও নাই এখন আর। চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেই দুর্বল ভাবে।
“বাইকে ওঠো।”
আদ্রর গম্ভীর কণ্ঠে আসতেই চমকে পিছনে তাকায়।গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইক ছেড়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম। ও বাইকে বসে বাইক কথাটা বলে। আমি তাকাতেই বাইক স্টার্ট করে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবারঝ কই কথা বলে উঠলো,
“কি আমি আপনার বাইকে কেন উঠবো?”
“কথা বলতে বলিনি বাইকে উঠে বলছি। বড্ড বেশি কথা বল তুমি। তাড়াতাড়ি করে এমনি আমার হাতে বেশী সময় নাই।”
“সময় নাই তো এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন? আমি আপনাকে কি আমি বলছি আমার জন্য দাড়িয়ে থাকেন। আর আমি আপনার বাইকে কেনো উঠবো”
“তোমার দরকার উঠবে।”
“আমার দরকার আপনার বাইক করতে যাব কেন? আমি আপনার বাইকে উঠবো না।”
“প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি উঠ। আমি তোমাকে হেল্প করার জন্য বাইকে উঠতে বলছি না। আর না তোমার সাথে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য বলছি।আমি আঙ্কেলের জন্য বলছি এখন যদি না যাও তাহলে সত্যি অনেক লেট হয়ে যাবে। আর তুমি যদি তোমার বাবার ক্ষতি চাও তাহলে ওঠো না।এতে আমার কিছুই হবে না সে বাসায় একা আছে তারই প্রবলেম হবে তার। তার ভালো চাইলে ওঠো না হলে থাক আমি যাই।”
স্নেহা হা করে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যা না কিছুই বলতে পারছ না ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। বের হবে কিভাবে ওতো হতভম্ব হয়ে আছে। আদ্র জানলে কিভাবে বাবা বাসায় একা আছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও এতটাই শক হয় ছে যে নড়াচড়া করছে না।
আদ্র স্নেহার এমন মুখ্য ভঙ্গিতে দেখে রেগে চিৎকার করে বলে,,
” এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি যাবে হ্যাঁ, না কিছু একটা বলো। ওকে বুঝতে পেরেছি যাবে না ঠিক আছে না গেলে।”
আদ্রর কথায় ধান ভাঙ্গে স্নেহার আদ্র গাড়ি স্টার্ট করতে যাবে এটা দেখেই স্নেহা টনক নড়ে। নানা আদ্রকে এভাবে যেতে দেওয়া যাবে না ওর হেল্প নিতে হবে আমাকে। এই শরীর নিয়ে সত্যি আমার খুব দেরি হয়ে যাবে এখনো অর্ধেক রাস্তা পেরোতে পারি নাই। তার থেকে বরং আদ্রর হেল্পটাই নেই।ও যেমনই হোক যতই ঝগড়া করি যতই ঘৃণা করি না কেন? বাবার জন্য ওর হেল্প আমাকে নিতেই হবে।
এদিকে আদ্রর বাইকে স্টার্ট হয়ে গেছে চলে যাবে এমন সময় লাফিয়ে স্নেহা তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে বসে। জীবনে ফার্স্ট টাইম বাইক নামক জিনিসটা উঠেছে। ভয় ওর হাত পা কাঁপছে।
স্নেহা উঠতেই আদ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়। না হলে স্নেহা পড়ে যাবেও ভালো করে বসে নাই।
কি ব্যাপার তুমি না বলে যাবে না আমার বাইকে উঠবে না। কিন্তু এটা কি হলো?
দেখুন এখন কথা বলেন না প্লিজ তাড়াতাড়ি ফার্মাসিতে চলুন।
কিছু টা নরম হয় কথাটা বলল স্নেহা। এখন রেগে কথা বলে লাভ নাই এর হেল্প আমার দরকার খুব দরকার।
আদ্র আর কিছু বলল না বাইকে স্টার্ট দিল। কিছুদূর যেতেই, স্নেহা চিৎকার করে উঠল,
সাথে সাথে আর্দ্র রেগে বাইক থামালো তারপরে কঠিন চোখ মুখ করে স্নেহা দিকে তাকালো,,
“কি হলো এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো?”
প্লিজ একটু আস্তে চালান। আমিতো পড়ে যাচ্ছিলাম আর একটু হলেই ঠাস করে নিচে পরে যেতাম।
আদ্রর স্নেহার দিয়ে তাকিয়ে দেখে স্নেহা কিছুই ধরে বসে নাই। এবার আরো রেগে যায়,
“ইউ স্টুপিড গার্ল, তুমি চোখে দেখো না বাইক না ধরে বসলে তো পরবাই। ”
“কি ধরে বসবো এই পাশে তো ধরেছিলাম। আমি আজি ফাস্ট বাইকে উঠেছি প্লিজ একটু সাবধানে যাবেন আস্তে আস্তে চালান।”
“যতসব ঝামেলা।”
“দেখুন একদম আমাকে ঝামেলা বলবেন না।আপনি কিন্তু অফার করেছিলেন বাইকে উঠার জন্য আমি আপনার কাছে অনুরোধ করে বাইকে উঠতে।”
“ভুল করেছি।এবার দয়া করে আমার কাঁধে হাত রাখে। শক্ত করে ধরে রাখেন হ্যান্ডেল।”
“কে আমি আপনার কাঁধে হাত রাখবো অসম্ভব।”
“ওকে ধরতে হবে না আমি আমার মতো চালাই তুমি যেভাবে যা ইচ্ছা ধরা পড়ে গেলে পরো । আই ডোন্ট কেয়ার!!”
বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইক চালাতে লাগলো। আল্লাহ মনে হচ্ছে পড়ে যাব। এত নরডছি পড়লে আমি শেষ। পাশের হ্যান্ডেল দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছি।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিনা ইচ্ছে করে মনে হয় বাইক স্টার্ট জোরে ছেড়ে দিয়েছে। শয়তান খচ্চর লোক বাধ্য হয়ে ডান হাতটা আদ্রর কাঁধে ধরে আবার সরিয়ে নিলাম। পরবর্তীতে আবার ঝাকিতে পড়ে যাওয়ার মত হলে শক্ত করে কাঁপ চেপে ধরলাম। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওইভাবে আসতে হল। ফার্স্ট টাইম কোন ছেলেরা এত কাছে বসে আছি। কেমন কেমন যেন লাগছে?
আদ্রর শরীরের সাথে ঘেসে বসে আছি। কোন ছেলেরা এত কাছে বসে থাকলে যে কোন মেয়েরই এমন লাগবে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কেমন লজ্জা লাগছে এখন। হঠাৎ আদ্রর বাইকের আয়না চোখ পরল আদ্র আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল। আর আয়নায় আমার মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।সাথে সাথে অন্য দিকে তাকায় কেমন যেন
লাগছিল আদ্রর চোখ মুখ।
আর একবার ওই দিকে তাকায় না সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি। একটু পরে ফার্মেসীর সামনে এসে গাড়ি থামায় আদ্রর।
ফার্মাসি তে পৌঁছে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে। আদ্র সাথে আগের সব রাগ নিমিষেই সব শেষ হয়ে যায়। খুরিয়ে খুরিয়ে তাড়াতাড়ি ওষুধ কিনে নেই।
ওষুধ নিয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বাইরে আসতে দেখে আদ্র ফার্মেসিতে ডুকছে। ব্রু কুঁচকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আদ্র কি ওষুধ কিনতে এসেছে। হয়তোবা! স্নেহা হাঁটতে লাগে।
এখন তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছতে হবে। কিন্তু বেশি দূর যেতে পায়না আবার আদ্র সামনে এসে স্নেহা বাইকে উঠতে বলে।
স্নেহা সাথে সাথে না করে দেয়।এবার আর যাবে না। ওই ভাবে খুব অস্বস্তি লাগছিল আদ্রর সাথে এভাবে এতো কাছাকাছি আসলে বুকের ভেতরটা প্রচন্ড রকম লাফাতে থাকে।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এবার আদ্র আমাকে জোর করে না। একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাইক থেকে নেমে আসে। হতবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। নেমে আসছে কেন? আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে হঠাৎ আমার হাত টেনে নেয়।
আচমকা দুই হাত টেনে ধরায় শরীরে মনে হয় কারেন্টের শক খেলাম। এভাবে হুট হাট হাত ধরায় প্রচন্ড অসুস্থি ফিল করি আমি। কিছু বলতে যাব তার আগে আমার হাতে আদ্রর একটা মলম দেয়। হাঁ করে মলম এর দিকে তাকিয়ে আছে এটা তো ব্যথার মলম।
“এটা….
কথার মাঝে থামিয়ে দেয়,,
“ব্যথার স্থানে লাগিয় দুদিনে ঠিক হয়ে যাবে। আসি বাই।”
আর কিছু না বলে সোজা বাইকে উঠে শো করে চলে যায়। আমি হতভম্ব হয়ে আদ্র যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি আচমকা কথাটা আমি মেনে নিতে পারছিনা। আমার ব্যথার জন্য আদ্র মলম কিনে দিল। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে মলম টার দিকে। এদিকে আদ্রর বাইক আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।
আমি এক কদম এগিয়ে যাব হঠাৎ একটা অটো আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আর আমাকে গাড়িতে উঠে তে বলে।
“আমি যাব। আপনি চলে যান।”
“কেন মা আসো তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দেই।”
“না আমার কাছে কোন টাকা নাই। আমি হেঁটে চলে যেতে পারবো।”
“আমারে টাকার কি বলছো? তোমার ভাড়া দেওয়া আছে চলো আমার সাথে।”
“ভাড়া দেওয়া আছে মানে? ভাড়া কিভাবে দেয়া হলো? আমি তো আপনাকে কখনো বাড়তি টাকা দেয়নি।”
“তুমি তো দেও নাই অন্য একজন দিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি চলো।”
“অন্য একজন কে দিছে?”
হঠাৎ আদ্রর কথা মনে পড়লো ওই কি তাহলে!
“তাড়াতাড়ি কর আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
স্নেহা গাড়িতে উঠে বসে। সারা রাস্তা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে।
বাসায় এসে দেখি বাবা উঠে নাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। হালকা কিছু তৈরি করে বাবার রুমে গিয়ে বাবাকে দেখিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিই।
আজকে আর ভার্সিটিতে যাব না বাবা এভাবে একা রেখে।
সারাদিন বাবাকে নিয়ে রুমে কেটে গেল দুইবার রায়াকে নিয়ে এসেছিল রানি সাথে রুনা আপু ও এসেছিলো।
বাবাকে দেখে গেছে।
সারাদিন আদ্রর মলম কিনে দেওয়ার অটো পাঠানো নিয়ে চিন্তা করেছি। এসব কেন করল আর হঠাৎ ই বা কেন এলো? সাত সকালে সে জানলো কিভাবে আমি এখানে আছি।
কাল জিজ্ঞেস করবো। রাতে আবার অন্তরা ফোন দিয়েছিল ভার্সিটিতে কেন যায়নি সেটা জানার জন্য। ওকে সব বললাম।
চলবে♥️
চলবে♥️
Next part🙏 please🙏🙏🙏🙏