“অদ্ভুত মুগ্ধতা ”
পর্ব ১৪
মিশু মনি
.
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর মৈত্রী আপন মনেই বলল,কত তেজ থাকলে এত জোরে আঘাত করা যায়! আমার উপর এত রাগ!
তানিন কথাটা বুঝতে পারলো না।কিন্তু খুজিন্তা ব্যাপার টা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।মৈত্রীর সাথে রাগ ঝাড়তে গিয়ে মিশু ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু একটা করে বসেছে এটা নিশ্চিত।ও মিশুর জন্য নাস্তা আনতে নীচতলায় চলে গেলো।
তানিন জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া তুই ওষুধ আনতে যাবি?
– উহু,ওকে এই অবস্থায় ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না।আমি বরং ফার্মেসীতে ফোন দিয়ে জানাচ্ছি।
– তাড়াতাড়ি আনতে বল ভাইয়া।মিশুর জন্য আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে।
কথাটা শুনে মিশুর চোখ আবারো ভিজে উঠল।বাসার সবাই ওকে এত ভালোবাসে কেন? ওর সেরকম কোনো গুণই নেই অথচ ওনারা সবাই কত বড় বড় মানুষ! মিশু তানিনের দিকে তাকিয়ে বলল,আপু।
– হ্যা আপু,বলো।
– আম্মুকে কি জানিয়েছো এ কথাটা?
– না। ভাবলাম তোমার জ্ঞান ফিরলে তোমার বাসায় ফোন দিয়ে জানাবো।
– না।প্লিজ আম্মুকে জানিয়ো না এসব কথা।প্লিজ,
– কেন?
মিশু একবার মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে তানিনকে বলল,আম্মু যদি জানতে পারে আমি এতটা অসুস্থ তাহলে আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।কিন্তু আমার এত তাড়াতাড়ি তোমাদেরকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।আমার ইচ্ছে করছে আরো কিছুদিন তোমাদের সাথে থাকি! তোমাদের সাথে থাকতেই আমার বেশি ভালো লাগছে।
তানিন মিশুকে জড়িয়ে ধরে ফেললো।মেয়েটা বড্ড মায়াবী! শুধু মায়ায় জড়িয়ে ফেলে।ওকে এভাবে বাসায় পাঠিয়ে এদের ও কারো ভালো লাগবে না।আর বিয়েটা না দেখেই মিশু চলে যাবে সেটা হতেই পারেনা।তানিনকে জড়িয়ে ধরে মিশু চুপ করে রইলো।মৈত্রীর ও ইচ্ছে করছে ঠিক এভাবেই মিশুকে বুকে জড়িয়ে রাখতে।কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।মিশু পেশেন্ট হলেও একজন যুবতী মেয়ে,আর মৈত্রি একটা ছেলে।কিন্তু মিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে মৈত্রীর।এর আগে কখনোই কোনো পেশেন্টের জন্য ওর এত খারাপ লাগেনি।কিন্তু মিশুর জায়গাটা আলাদা। মিশুর জন্য প্রথম ওর অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল।
মৈত্রি নিজের ঘরে চলে গেলো। আসলে ও চারদিন আগেই বুঝতে পেরেছিলো মিশুর প্রতি একটু একটু করে ওর দুর্বলতা কাজ করছে।কিন্তু মেয়েটা তো একদম বাচ্চা স্বভাবের।ও যদি কোনোভাবেই বুঝতে পারে মৈত্রীর মনে ওর জন্য ভালোবাসা তৈরী হচ্ছে,তাহলে হয়ত আঘাত পাবে।মেয়েটা এমনি তেই ফোভিয়ায় ভুগছে,ওকে আর আঘাত দেয়া ঠিক হবেনা।তাই মৈত্রী মিশুর থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে এই চারটা দিন।কিন্তু সেই দূরত্বের ফল এমন হবে সেটা ও ভাবতে পারেনি।মৈত্রী দুজনেরই ভালো চেয়েছিলো।মিশুর বয়স যেখানে আঠার,সেখানে মৈত্রির বয়স প্রায় ত্রিশ।যদিও এই পার্থক্য বোঝার উপায় নেই,তবুও মেয়েটা মৈত্রীর তুলনায় অনেক ছোট।মিশুর অনার্স শেষ করতেই আরো তিন থেকে চার বছর বাকি।ততদিনে মৈত্রির বয়স আরো বেড়ে যাবে।ওরকম ফুটফুটে একটা মেয়ে নিশ্চয়ই তখন মৈত্রীকে বিয়ে করতে চাইবে না।এখন ওর নিজের মত বড় হওয়ার বয়স,এখন ওকে সংসারে বেধে ফেলাও ঠিক হবেনা।আর মিশু যদি পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করতে চায়,ততদিনে মৈত্রী বুড়া হয়ে যাবে।এসব ভেবেই মৈত্রী দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলো।
★“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মর্ম বাসায় ফিরেই দেখলো মিশুর এই অবস্থা।অবস্থা বললে ভুল হবে,একেবারে দূরবস্থা।হাতে ব্যান্ডেজ,বিছানায় শোয়া,আর ডাক্তার যা যা বলে গেছে সব শুনে মর্ম ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো।কিন্তু মিশু যে আয়নায় আঘাত করে হাতের এই অবস্থা করেছে সেটা কেউ জানতে পারলো না।মিশু নিজে কাউকে বলেনি,মৈত্রীও বলতে পারলো না।তবে সবাই অনেক আদর যত্ন করতে লাগলো মিশুকে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব সবচেয়ে বেশি মন খারাপ করলেন।মিশুকে উনি তানিনের মতই নিজের মেয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন।মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন ওনার যে ছেলের সাথে মিশুর প্রেম হবে,তার সাথেই উনি বিয়ে দেবেন।সেই আদরের রাজকন্যার এই অবস্থা শুনলে কেমন লাগে? তারউপর আবার ফোভিয়া টোবিয়া না কি যেন অসুখ ও আছে!
মিশুর ডান হাতে ব্যান্ডেজ তাই সাফায়েত উল্লাহ সাহেব নিজে ওকে তুলে খাওয়ালেন।ওকে খাওয়াতে দেখে মর্ম ও মাত্রা এগিয়ে এসে বলল,আব্বু আমাদের ও খাওয়াও।
উনি হেসে মর্ম ও মাত্রার মুখেও খাবার তুলে দিলেন।তা দেখে তানিন ছুটে এসে বলল,আব্বু তুমি তো বড্ড হিংসে।আমায় খাওয়াবে না? আমি বুঝি বড় হয়ে গেছি?
– নে খা।আর মৈত্রী তুইও আয়,খেয়ে যা।
মৈত্রী ও তানিনের মুখে খাবার তুলে দেয়ার পর সাফায়েত উল্লাহ সাহেব খুজিন্তাকে বললেন, কিরে খুজু।তোর কি নিজেকে খুব বুড়ি বুড়ি লাগে নাকি?
খুজিন্তা আমতা আমতা করে বললো, মানে আব্বু..
– আব্বু ডাকতে পারিস আর খেতে পারিস না? এত লজ্জা? আয় এদিকে।
খুজিন্তা এগিয়ে গেলো বাবার দিকে।বাবা খুজিন্তার মুখে খাবার তুলে দিলেন। আনন্দে ভরে গেলো ওনার বুকটা।সব ছেলেমেয়েকে তুলে খাওয়ানোর আনন্দ টাই অন্যরকম! এভাবে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারলে ওনার আর কোনো দুঃখ থাকতো না।উনি স্ত্রীর দিকে চেয়ে বললেন, কি গো,তোমাকে ও তুলে খাওয়াবো?
– আমার দিকে তাকানোর সময় আছে নাকি তোমার আবার?
সবাই হেসে উঠল।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ওনার স্ত্রীকে ও খাইয়ে দিলেন।সবার বেশ সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে।মিশুর ইচ্ছে করছে সারাজীবন এ বাড়িতে থেকে যেতে।কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।সবাই তা মানবে কেন? কিন্তু এমন একটা পরিবার পেলে কি ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয়? সবাইকে রেখে একদিন বাসায় ফিরতে হবে ভাবতেই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
হিমু দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের কান্ড।এ বাড়ির সবাই খুব ভালো। হিমুর মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে দুনিয়ার সব মানুষ কে ডেনে এনে দেখাতে এদের পরিবার টা কত সুন্দর! সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হিমুকে ডেকে বললেন, সবাইকে খাওয়ালাম। তুই আবার না খেয়ে থাকবি কেন? আয় আয়,খাবিনা?
হিমুর চোখে পানি এসে গেলো।ও কাঁদতে কাঁদতে সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের হাতে খাবার খেলো।
উনি বললেন,মাত্রার ওয়েডিং টা হয়ে গেলে আমাদের হিমু রানির বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
হিমু লজ্জা পেয়ে বলল,কি যে কন আব্বা! আমারে আবার কে বিয়া করবো?
– ছোট থেকেই তুই আমাদের বাসায় বড় হলি।তোর প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে।তাছাড়া তুই আমাকে বাবা আর তিন্নিকে মা ডেকেছিস। তোকে বিয়ে দিতে হবেনা?
– না আব্বা।আমার ইচ্ছা এ বাড়িতেই যেন আমার মরণ হয়।
– তোর যার সাথে বিয়ে হবে,তাকেও আমরা এ বাড়িতে রেখে দিবো।যেকোনো একটা কাজ দিলেই হবে।তুইও সংসার করবি,আমাদের কত ভালো লাগবে তাইনা তিন্নি?
ওনার স্ত্রী খুশি হয়ে বললেন, একদম ঠিক কথা বলেছো।হিমুর তো বিয়ের বয়স ও পার হয়ে যাচ্ছে।পরে তো আর বিয়েই করতে চাইবে না কেউ।আমাদের উপর ফরজ হয়ে গেছে ওকে একটা ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেয়া।
হিমু লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো।এনারা সবাই ওকে নিয়ে ভাবছেন বলে ওর অবাক লাগছে ঠিকই,কিন্তু বিয়ের কথা শুনে লজ্জা লাগছে ভীষণ।হিমুও স্বপ্ন দেখে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে কারো বউ সেজে বিছানায় বসে থাকার।বর ঘোমটা তুলে ওর মুখখানি দেখবে আর ও লজ্জায় লাল হয়ে উঠবে!
মিশু হঠাৎ বলল,আমি একটা পাত্র জোগাড় করে দিতে পারি।
মর্ম হেসে বলল,তুমি! কই পাবা পাত্র?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, মিশুর পছন্দের উপর আমার ষোলআনা ভরসা আছে।মিশু মা তুই বল পাত্র কে? কি করে?
– আমাদের বাসায় টুকটাক কাজ করে দেয়।পড়াশোনা তেমন করতে পারেনি,কিন্তু মানুষ ভালো।মাঝেমাঝে গাড়ি চালায়,সিএনজি চালায়।এলাকাতেই বাড়ি,গরীব হলেও খুব অনেস্ট।দেখতেও ভালোই,হিমুর সাথে বেশ মানাবে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব খুশি হয়ে বললেন, বাহ! তাহলে তো হয়েই গেলো! আর চিন্তা কিসের।মিশু হবে এই বিয়ের ঘটক।কিরে মিশু পারবি না?
– আমি ঘটক হতে পারবো না,ঘটকী হতে পারবো।
সকলে হেসে উঠল ওর কথায়।হিমু খুব লজ্জা পেয়েছে।ও নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।খুজিন্তা হাসিমুখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।কত ভালো একজন মানুষ!
বাকি খাবার টা মিশুকেই খেতে হলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব জোর করে খাওয়ালেন ওকে।তারপর ওষুধ খাইয়ে বললেন, চুপ করে শুয়ে থাক।
মিশু ওনার কথামত চুপ করে শুয়ে পড়লো কিন্তু শুয়ে থাকতে লজ্জা লাগছিল।ওর তো তেমন কিছু হয়নি।সবাই অযথা এত চিন্তা করছে।সকলে ওর ঘরে বসে আছে আর ও কিভাবে শুয়ে পড়ে?
মিশু বলল,আপনারা খাবেন না? আমি শুয়ে আছি,আপনারা খেয়ে আসুন।
কেউ এখনি খেতে চাইলো না।কিন্তু মিশু জোর করে সবাইকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসলো।নিজে বসে রইলো একটা চেয়ারে।বাকিরা খাচ্ছে।
মৈত্রী হঠাৎ বলল,মিশুর জন্য তিনটা আইসক্রিম রাখা আছে ফ্রিজে।ভ্যানিলা, ক্রানচি আর কোন।
মৈত্রীর মা ছেলেকে বকা দিয়ে বললেন,আইসক্রিম খেতে ওর বোধহয় খুব ভালো লাগে।একটু বেশি করে আনলে কি হত? মাত্র তিনটা আনছিস।
– আম্মু ওখানে চারশ টাকার আইসক্রিম আছে।
আইসক্রিমের দাম শুনে মা বিষম খেলেন।তিনটা আইসক্রিমের দাম চারশ টাকা! বাচ্চারা খাবে কি তাহলে? নিশ্চয়ই ভালো মানের আইসক্রিম।উনি আগে অনেক আইসক্রিম খেয়েছেন কিন্তু দাম জানতেন না।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ওনার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।দাম শুনে তিন্নির মুখ হা হয়ে গেছে।মিশু নিজেও অবাক হয়ে গেছে অনেকটা।ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে এনে খেতে আরম্ভ করলো।
প্রথমে নিলো কোন আইসক্রিম।সবাই খাবার খেতে খেতে মিশুর আইসক্রিম খাওয়া দেখছেন।অবশ্য দেখার মতই দৃশ্যটা।মিশু প্রথমে খোসা অর্থাৎ একটু করে কাগজ তুলে সেটা চেটে চেটে খেলো,ওর ডান হাতে ব্যান্ডেজ তাই বাম হাতে ধরে মুখ দিয়ে খোসা কামড়ে ছিড়ে আইসক্রিম টেবিলে রেখে বাম হাতে খোসা নিয়ে চেটে চেটে খেতে লাগলো। এরপর টুক করে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে খেতে লাগলো আর মুখটা এমন ভাব করছে যেন এর মত স্বাদের খাবার জীবনেও খায়নি ও।সেটুকু খাওয়া শেষ হলে আবারো একটু করে কাগজ তুলে সেটা চেটেপুটে খেয়ে রেখে দিয়ে আগের মত করে খেতে লাগলো।আইসক্রিম টেবিলে রেখে এর উপরে থাকা বাদাম গুলো বাম হাতে একটা একটা করে তুলে মুখে দিলো।তারপর আবারো চোখ বন্ধ করে মাথা দোলাতে লাগলো।টেবিলে বসে থাকা সবাই মুখ টিপে হাসছে কেবল মৈত্রী হা করে চেয়ে আছে।মিশু কোন আইসক্রিম টা কিছুটা খেয়ে সেটা রেখে দিলো।তারপর নিলো ভ্যানিলা আইসক্রিম টা।চামচ নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো।তারপর এক হাতে আইসক্রিম তুলে কি যেন ভাবলো।মনে হচ্ছে মনে মনে কোনো হিসেব করে ফেললো।ওর পাশেই সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বসে আছেন।ও ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,এটা খুলে দিন তো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব নিজের খাওয়া বন্ধ করে আগে আইসক্রিমের মুখটা খুলে দিলেন।মিশু প্রথম বার চামচে করে সামান্য একটু আইসক্রিম তুলে মুখে দিলো।দ্বিতীয় বার আগের চেয়ে একটু বেশি আইসক্রিম তুলে মুখে দিলো। তৃতীয়বার আরেকটু বেশি,চতুর্থ বার আরো একটু বেশি,এরপর পঞ্চম বার এক চামচ পুরো টা নিয়ে মুখে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে মাথা দোলাতে লাগলো।সকলেই মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওর খাওয়া! এ কেমন স্টাইল আইসক্রিম খাওয়ার! অল্প একটু খেয়েই রেখে দিলো।তারপর ক্রানচি টা নিয়ে বলল,এটা কাল খাবো।হিমু এটা ফ্রিজে রেখে দাও তো।
হিমু ছুটে এসে আইসক্রিম টা নিয়ে ফ্রিজে রেখে আসলো।বলল,গইলা গ্যাছে তো।
– যাক,একদিনে চারশ টাকা খাওয়া যাবেনা।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হাসলেন।মিশু আবারো কোন আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করেছে।একই স্টাইলে।বাম হাতে খেতে যদিও ওর অসুবিধা হচ্ছিল।কিন্তু অনেক মজার ছিল ওর এই খাওয়ার দৃশ্যটা।মর্ম মনে মনে ভাবল,আরেকবার আইসক্রিম এনে তুলে খাওয়াতে হবে।
সবার খাওয়া শেষ হতেই মিশু এক এক করে আইসক্রিম চামচে করে তুলে দিলো সবার মুখে।
মর্ম বললো,আইসক্রিম খাওয়ার এত স্টাইল আছে জানতাম না তো।
– আমিতো আর্ট করে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম।
মর্ম কেশে উঠে তানিনের দিকে তাকাল।আইসক্রিম আবার আর্ট করে খেতে হয় নাকি! হাস্যকর ব্যাপার!
এরপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার ঘরে শুতে গেলো।আজ রাতে মিশুকে বলা হয়েছে তানিনের সাথে ঘুমাতে।মিশু তানিনের বিছানায় চুপ করে শুয়ে রইলো।পাশেই বসে তানিন কাজ করছে।দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়েও পড়লো।
★
সকালবেলা তানিনের সাথে উঠেই বাইরে এসে মিশুও দৌড়াতে লাগলো। তানিন ওকে নিষেধ করলেও শুনলো না।ওর নাকি দৌড়াতে ভালোই লাগছে।তাই তানিন আর কিছু বললো না।মিশু ব্যান্ডেজ হাতে আস্তে আস্তে দৌড়ালো।তারপর তানিনের পাশে বসেই দু একটা ইয়োগা করে ফেললো।যদিও হাতে ব্যাথা পাচ্ছিল তবুও মুখে কোনো শব্দ করেনি।তানিন অবাক হয়ে দেখল মেয়েটির সহ্য করার ক্ষমতা! হাতে ব্যথা পেলেও টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না!
অনেক্ষণ ব্যায়াম করার পর দুজনে বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে রইলো।তানিন এক মগ গ্রিন টি নিয়ে এসে মিশুকে দিয়ে বলল,খাও।শরীরের অনেক উপকার হবে।
মিশু লক্ষী মেয়ের মত তানিনের কথা শুনলো।তানিনের কথামত কিছু করতে ওর খুব ভালো লাগে।তানিন ও মিশুকে ছোটবোনের মত আদর করে।
এরপর নাস্তা করে সবাই একসাথে বসল।বিয়ের কার্ড এখনো কিছু বাকি আছে।কয়েকজনের বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে আসতে হবে।বাসার ডেকোরেশন প্রায় সম্পূর্ণ,এখন শুধু ঘরের ভিতরে গাদা ফুল দিয়ে সাজাতে হবে।এটা মিশুর কাজ,খুজিন্তা ও তানিন মিশুকে সাহায্য করবে।আর মিশুর যদি কষ্ট না হয় তাহলে গায়ে হলুদের স্টেজ টা সাজানো শুরু করতে হবে।মিশু জানালো ওর কোনো কষ্টই হবেনা।বরং কাজ করতে না পারলে ওর কষ্ট হবে।তাই কেউ আর আপত্তি করলো না।কিন্তু শর্ত হচ্ছে যা করতে হবে,সাবধানে করবে।
সবাই যার যার কাজে লেগে পড়লো।আজ অনেক কাজ আছে।আজ থেকেই নিমন্ত্রিত অতিথি রা আসতে শুরু করবেন।বাসা ঝকঝকে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।কয়েকজন কর্মচারীকে মিশু ঘর,দরজা,করিডোর,
বেলকুনি,ছাদ সমস্ত জায়গা ভাগ করে দিয়ে একেবারে ঝকঝকে করে ফেলতে বললো।মিশুর ডান হাত বন্ধ,তাই ওকে চুপচাপ কাজ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।আলপনা আঁকা হচ্ছেনা,হাড়ি সাজানো হচ্ছেনা।তানিন নিজেই সবগুলো হাড়ি নকশা করে ফেললো। আর খুজিন্তা লেগে গেছে আলপনা আঁকায়।মিশু বাম হাত দিয়েই দু একটা কাজ করার চেষ্টা করলো।ওর নির্দেশ মত হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে।
চলবে…