অদ্ভুত_মুগ্ধতা পর্ব – ২

0
6462

অদ্ভুত_মুগ্ধতা
পর্ব – ২
লিখা: মিশু মনি
.
মায়ের রাগ ভাঙানোর জন্য অনেক গুলো চকোলেট কিনে এনেছেন আব্বু।মা খুব অভিমানী কিন্তু আব্বুর অভিমান ভাঙানোর দৃশ্যটা এত আকর্ষণীয় যে রাগ করে আর থাকাই যায় না।
গুটিগুটি পায়ে হেটে আব্বু রুমে ঢুকলেন। মা খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন করছেন।
আব্বু বললেন, তিন্নি একটু শুনবে?
– শুনছি।বলো..
– আমার চুল গুলো একটু আচড়ে দেবে?
এ কথায় মা হকচকিয়ে মুখ তুলে তাকান।তারপর রেগে বললেন,
– পারবো না।
– আরে তিন্নি! তোমাকে তো আজ বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।মেকাপ করেছ নিশ্চয় ই?
– উহু,আমি মেকাপ দেইনা।
– তাহলে এত মিষ্টি দেখাচ্ছে যে!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের এই বাক্য এ জীবনে প্রায় ৯৯৯ বার শুনেছেন তিনি।তবুও একথা টা শুনলে ওনার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।সকল রাগ এক নিমেষে বরফের মত গলে বাষ্পের মত উরে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে শূন্যে মিলিয়ে যায়।
মা লাজুক স্বরে বলেন, কি যে বলছ! তুমিও না।ছেলেমেয়েরা শুনলে কি ভাববে?
– ভাব্বে আমাদের আব্বুটা আম্মুকে কত্ত ভালোবাসে!
– যাও.. ভারি দুষ্টু হয়েছ!
বাবা এ কথা শুনে মিষ্টি করে হাসেন।মা তখন উঠে এসে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,কি অবস্থা হয়েছে চুলের!
– তোমার হাত আছেনা? চিরুনি করার জন্য?
– আমি মরে গেলে কে চুল ঠিক করে দেবে?
– আরেক টা বিয়ে করবো।
আম্মু রেগে কটমট করে তাকালেন আব্বুর দিকে।তারপর চুল গুলো টেনে একদম পাগল বানিয়ে দিলেন আব্বুকে।বাবা তখন পকেট থেকে এক গাদা চকোলেট বের করে দিয়ে সরি বলেন। ব্যস! সব রাগের সমাপ্তি এখানেই।
.
সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের একমাত্র মেয়ে তানহা তানিন।খুব ভালো আর্টিস্ট। এর মধ্যেই অনেক সুনাম কুড়িয়েছে।সিনেমা
ওয়ালা রা তানিন ম্যাডাম বলতেই ফিদা!
মেয়েটা সবসময় কি যেন ভাবে।দেখলেই মনে হয় জাতির সকল চিন্তা এই মেয়ের মাথায় ভর করে আছে।কিন্তু দেখতে বেশ সুশ্রী!
তানিন অনেক ক্ষণ ধরে কিছু একটা আঁকিবুঁকি করছে।এমন সময় বড় ভাইয়া মৈত্রী তানিনের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে এলো।
তানিন ভাইয়ার হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে বলল,আব্বু আম্মুর ঝগড়া মিটেছে?
– হ্যা।
– তোরা সবাই খেয়েছিস?
– হ্যা।
– মাত্রা বাসাতেই আছে?
– হ্যা।
– হ্যা ছাড়া আর কিছু জানলে বল?
– তুমি তো শুধু হ্যা টাই জানতে চেয়েছ।
– হ্যা।এবার খাবার রেডি কর।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মৈত্রী নিজের রুমে চলে গেলো। তানিন কিছুক্ষণ ওর আঁকিবুঁকির দিকে তাকিয়ে থেকে খাবার টেবিলের দিকে পা বাড়ালো।
.
মৈত্রী খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে।এই ছেলেটা একদম অন্যরকম।তার কোনো কিছুতেই রাগ হয়না।কেউ হাজার টা গালি দিলেও সে নির্বিকার। গালি বন্ধ হলে শুধু হেসে বলবে,গালি গুলো ভালো ছিল কিন্তু আমি এর একটাও না।এমন ই অদ্ভুত প্রজাতির মানুষ ও!
ওকে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে জমের কাচা কেচে আবার ঢুকিয়ে আবার কেচে রোদে শুকাতে দিলেও ওর রাগ হবেনা।ও খুব কমই অবাক হয়।জগতের সকল বিষয় ওর কাছে স্বাভাবিক!
তানিন বলল,ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
– বল
– ডিরেক্টর ফারাবি ভাই একটা নতুন কাজ শুরু করবেন।উনি আমাকে আর্টিস্ট হিসেবে থাকার অফার দিয়েছেন।
– হুম,বেশ ভালো।
– ওদের প্রজেক্ট আগামী সপ্তাহেই শুরু হবে।আমাকে বলেছে ওদের সাথে যেতে।
– ভালো ত।যাবি।
– কিন্তু শুটিং তো হবে আমেরিকায়।আমাকে ও যেতে বলেছে।আমাকে কি আমেরিকা যেতে দেবে?
– কেন দেবো না? ইচ্ছে হয়েছে যাবি।
তানিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,সত্যি বলছ ভাইয়া! আমি যাবো?
– হ্যা যাবি।লাইফ তোর,ডিসিশান ও তোর।ভুল ভ্রান্তি করলে সাফার করবি তুই।
তানিন নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থেকে বলল,আচ্ছা ভাইয়া।তুমি সবাইকে বলে রাজি করাবে?
– হ্যা করাবো।
তানিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মৈত্রীর দিকে! এই ভাইয়াটা এত ভালো কেন! ওর চোখে পানি এসে যাচ্ছে।
.
মর্ম নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে।অনেক দিন থেকে কাজের চাপে দুনিয়ার আলো বাতাস গায়ে লাগাতে পারিনা।কয়েক দিনের জন্য সবকিছু ফেলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যায় না? একটা সফর ও হয়ে যাবে আর রেস্ট ও নেয়া হবে।
ভাবামাত্রই ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিলো ও।গতকাল সব হাতের কাজ সেরে রাত্রেই বেড়িয়ে পড়া যাবে।ভাবতেই মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো।
এদিকে তানিন ও আমেরিকা যাওয়ার উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমাতে পারলো না।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



সকাল বেলা
আম্মুর চিল্লাচিল্লি তে ঘুম ভাংল মৈত্রীর।আম্মু তো সকাল সকাল কাউকে ডাকেনা।অথচ আজ এভাবে চেঁচামিচি করছে কেন? নিশ্চয় ই আব্বুর সাথে ঝগড়া!
বলে আবারো ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
মর্ম ও তাই করলো। কিন্তু তানিন এসে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে মর্মকে ডেকে বলল,ভাইয়া ওঠ তাড়াতাড়ি। ঘটনা তো ঘটে গেছে!
মর্ম চোখ ডলতে ডলতে বলল,কি ঘটনা?
– ওঠ না।বাইরে আয়, দেখতে পাবি।সারপ্রাইজ!
বোনের ঠেলাঠেলি তে বাধ্য হয়ে উঠতে হল মর্মকে।মৈত্রীকেও উঠে আসতে হল।
বসার ঘরে আসামাত্রই দু ভাইয়ের চোখ চরক গাছ! একি! একটা লাল টুকটুকে বউ!
মর্ম অবাক হয়ে বলল,কে ইনি? কার বউকে তুলে এনেছে?
মা বললেন, মাত্রা বিয়ে করে এনেছে এই মেয়েকে।
কথাটা শোনামাত্রই মর্ম চোখ আকাশে তুলে তাকিয়ে রইলো! মাত্রা চুপিচুপি বিয়ে করে ফেলল! এত বড় অসাধ্য এত সহজে কি করে সাধন করতে পারলো ও?
মৈত্রী হেসে বলল,ফরজ কাজ করে ফেলেছে এতে এত চিল্লাচিল্লির কি দরকার? বউ বরণ করে ঘরে তোলো।আর মেয়েটা মনেহয় সারারাত কিছুই খায়নি।ওকে খেতে দাও কিছু।
সবাই একবার অবাক হয়ে তাকাল মৈত্রীর দিকে।এ ব্যাপার টা নিয়েও কোনো আগ্রহ নেই ওর? এত সহজে এটা মেনে নিতে বলছে।এমন কি নতুন বউ ও খুব অবাক হয়ে গেছে।ও খিলখিল করে হেসে উঠল।
কারো মেজাজ ঠিক নেই।সবাই ভুত দেখার মত থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর এই মেয়েটা হাসছে!
.
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিলেন। এবার বললেন,মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে।তিন্নি আমাদের আরেক টা মেয়ে হল।
মা কি বলবেন বুঝতে পারলেন না।পুরো ব্যাপার টা স্বপ্নের মত লাগছে।তার সবচেয়ে ছোট ছেলে এমন একটা কাজ করবে এটা ভাবাই যায়না।মাত্রা সবার এত আদরের অথচ….
.
অবশেষে নতুন বউকে বরণ করে নেয়া হল।বউ নিজেও ভাবেনি এত সহজে এরা ব্যাপার টা মেনে নেবে।আর বাড়ির মানুষ গুলোও এতটা অদ্ভুত! আগে কখনো এমন পরিবার দেখেনি ও।
নতুন বউয়ের নাম খুজিন্তা।বলতে হয় সে নিজেও তার নামের মতই অদ্ভুত! সবমিলিয়ে বলতে গেলে এই পরিবার টাই একটা অদ্ভুত রাজ্য! যেন পৃথিবীর বাইরের কোনো পৃথিবী!
.
সকালের নাস্তার পরপর ই সাফায়েত উল্লাহ সাহেব খুজিন্তার বাবার সাথে ফোনে কথা বললেন।বিয়েটা কিভাবে হয়েছে এটা নিয়ে কারো কোনো আগ্রহ ও নেই।কিন্তু সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ও তার স্ত্রী নিজে গিয়ে খুজিন্তার বাবা মাকে মিষ্টি খাইয়ে এসেছেন।আর নতুন করে আবারো তাদের বিয়ে দেয়া হবে এমন প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের দিন ক্ষণ পাকা করে বাসায় ফিরলেন।
কথাটা শুনে তানিনের একটু মন খারাপ ই হলো।বিয়ে আরো দশ দিন পর।কিন্তু এই দশ দিন তাদের বাসায় আয়োজন চলবে।তার আর আমেরিকা যাওয়া হচ্ছেনা!
মর্ম ও খানিক টা হতাশ হল।কোথায় একটু কাজ ফেলে ঘুরতে যেতে চেয়েছিল,এখন আবার বিয়ের আয়োজন করতে হবে।বড় ভাইয়া তো একদম উদাস! তাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিলে নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করবে কিন্তু করতে না বলা হলে কখনো ই নিজে থেকে করবে না।বাবা একা কতদিক সামলাবেন? মর্ম কে বাসায় থাকতেই হবে।
.
মৈত্রীর এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে নিজের খেয়াল খুশি মত পেশেন্ট দেখতে এসেছে।গতকাল যে মিশু পাগলী কে দেখে গিয়েছিল,সেই পেশেন্ট কে।
মিশু মৈত্রীকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে লম্বা সালাম দিলো।
মৈত্রী সালাম নিয়ে বলল,কি অবস্থা?
– তরলাবস্থা।
– ওহ আচ্ছা।
– তরল কেন জিজ্ঞেস করবেন না?
– হ্যা।তরল কেন?
– কেন আবার? পেয়াজ কাটলাম তাই চোখে জল এসে আমার কাজল ও ছ্যারাব্যারা করে দিয়েছে এই দেখুন।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here