#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে!💜🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🌺🥀
#পার্টঃ০৯💜🥀
গভীর রাত বারান্দার রেলিং ধরে দূরদুরান্তে দৃষ্টি স্থির ইয়াসিবার।
এই অন্ধকার রাতের মাজে সে কি দেখছে সে জানে নাহ।
তবুও তাকিয়ে থাকতে ভালোলাগছে।
অন্ধকারও নয় চাঁদের আলোয় সবই দেখা যাচ্ছে।
মৃদ্যু বাতাস,বাগানের ডান সাইডের শিউলি ফুলের সুভাস ভেসে আসছে।মোহময় পরিবেশ।
আজ নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে ইয়াসিবার।
আজ নিজের অস্থিত্ব জুড়ে স্বামি নামক মানুষটার ভালোবাসাময় পরশগুলো অনুভব করতে পেরেছে।
ইয়াসিবার ভীতরটা কেঁপে উঠলো আবার ওই মুহূর্তগুলো কল্পনা করে।
লজ্জারাঙ্গা মুখটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে চাঁদের আলোয়।
পিছনফিরে তাকায় ইয়াসিবা ; আফ্রিদ ঘুমোচ্ছে বিছানায় কতোটা নিষ্পাপ লাগছে তার স্বামিটাকে।
এই মূহুর্তটার জন্যে ইয়াসিবা কতো প্রতিক্ষা করেছে।সে আর আফ্রিদের সংসার হবে ছোট্ট একটা সংসার।
সেখানে থাকবে শুধু ভালোবাসা! ভালোবাসা! আর ভালোবাসা।
ইয়াসিবার ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি।
আর সে ব্যস্ত চোখ বুজে আফ্রিদের ঘ্রাণ নিতে।
হ্যা আফ্রিদের শরীরের ঘ্রাণ ; এইযে সে এখন আফ্রিদের একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আছে সেখান থেকেই আসছে।কি মনমাতানো সেই ঘ্রান।
টি-শার্ট টা আর একটু টেনে নাকের কাছে এনে লম্বা করে শ্বাস টেনে নেয় ইয়াসিবা।
স্বামির সোহাগে বুজি এতো সুখ?
ইয়াসিবার তো এতো সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করে।
———-
হালকা একটু নড়াচড়া করে পাশে হাত রাখতেই কারো অস্থিত্ব টের না পেয়ে পাশটা ভালোভাবে হাতড়ে চোখ খুলে তাকায় আফ্রিদ।
ভালোভাবে দেখে তার বউটা এখানে নেই।
তাহলে গেলো কোথায়?
আস্তে করে উঠে বসে আফ্রিদ।
রুমের চারদিকে নজর বুলাতেই বারান্দায়
একটা পরিকে দেখতে পায় সে।
পরি?হ্যা পরিই তো তার বউটা তো তার কাছে পরি।
আফ্রিদ একদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইলো।
তার বউটার এই মোহময় রূপ দেখে যে আফ্রিদের আবারো নেশা লেগে যাচ্ছে।
এইযে ও যে ওর টি-শার্ট পরে আছে যা হাটুর থেকে একটু উপড়ে।
আর টি-শার্ট টা ঢোলা হওয়ায় তার একপাশে কাধ দেখা যাচ্ছে টি-শার্ট এর হাতা কাধের নিচে পড়ে আছে বিধায়।
চাঁদের আলোয় ওর ফর্সা কাধটা জ্বলজ্বল করছে।
আফ্রিদ ব্লাংকেটটা সরিয়ে আস্তে করে নেমে দাঁড়ায় বিছানা থেকে।
তারপর ধীর পায়ে হেটে গিয়ে দাঁড়ায় ইয়াসিবাদ পিছনে।তারপর আলতো হাতে জড়িয়ে নেয় নিজের প্রিয়তমাকে নিজের বাহুবন্ধনে।
এদিকে কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে ইয়াসিবা।
এটা যে তার আফ্রিদ সে ভালোমতোই জানে।
সেও গায়ের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিলো আফ্রিদের গায়ের উপর।
আফ্রিদ ইয়াসিবার কানে ফিসফিস করে বললো,
–” আমার টি-শার্ট পড়ে আমাকেই পাগল করা হচ্ছে।অবশ্য এতে আমার কোন প্রোবলেম নেই।
তোমাকে অনেক হট লাগে আমার টি-শার্টগুলোতে।
তুমি চাইলে আমার সামনে দিনরাত ২৪ ঘন্টা এগুলো পরেই থাকতো পারো তবে শুধু আমার সামনে।”
এদিকে ইয়াসিবা পারে না মাটি খুড়ে তার মাজে ডুকে যেতে।
সেতো ভূলেই গিয়েছিলো যে ওর গায়ে আফ্রিদের টি-শার্ট।
সে আফ্রিদের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিতেই
আফ্রিদ তার হাত ধরে ফেলে
এবং আবার ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আফ্রিদ বললো,
–” আমাকে নেশা লাগিয়ে দিয়ে;
এখন পালানো হচ্ছে বুজি।
কিন্তু আমিতো পালাতে দিবো নাহ।”
আফ্রিদ ইয়াসিবার গালে নিজের ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করছে।
এক পর্যায়ে ঠোঁটজোড়া গলার খাজে আসতেই সেখানে শব্দ করে চুমু খায় আফ্রিদ।
কেঁপে উঠে নিজেকে আফ্রিদের বুকের মাজে
আরো লেগে গেলো ইয়াসিবা।
এই লোকটার ছোঁয়া ভয়ানক।
একদম রক্ত হিম করে দেওয়ার মতো।
আফ্রিদ কোলে তুলে নিয়ে ইয়াসিবাকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
ইয়াসিবা এখনো তার কোলে।
আফ্রিদ নিজের আঙুলগুলো ইয়াসিবার আঙুলগুলোর খাজে পুরে দিলো।
তারপর ইয়াসিবার হাতের উল্টো পিশে চুমু খেলো।
ইয়াসিবা আফ্রিদের মুখের দিক তাকিয়ে।
এই লোকটাকে আজ কতোটা খুশি দেখাচ্ছে।
সে খুশি দেখার জন্যেই তো অতীতে ওইসব করেছিলো।
কিন্তু ওতো আর জানতো না যে তার ওইসব করাতে তার প্রিয় এতোটা কষ্ট পাবে।
তবে যদি সে সত্যিটা জেনে যায় এতো কষ্ট করে এতোসব করার পরেও সত্যিটা জেনে যায়?
তবে কিভাবে সামলাবে সে আফ্রিদকে?
চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসে আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা।
–” কি আছে তোমার মাজে?
হ্যা! এই মেয়ে বলোনা কি আছে? কেন আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারি নাহ একমুহূর্তও।
ইচ্ছে হয় তোমাকে একদম নিজের সাথে পিসে ফেলি।
কি জাদু করলে বলো তো আমায়?”
–” ভালোবাসেন বলেই তো আমাকে কাছে চান।”
ইয়াসিবার কথায় এলতো হাসে আফ্রিদ।দুষ্টুমিস্বরে বললো,
–” তুমি বুজি চাও না আমাকে তোমার কাছে?”
সাথে নিজের চোখজোড়া চেপে বন্ধ করে ফেলে ইয়াসিবা।
লোকটা চরম অসভ্য! সে তো জানে তার বউটা কতো লজ্জা পায় এই জন্যে সে তাকে লাজুকলতাও ডাকে।
তাও সে বারবার ইয়াসিবাকে লজ্জা দেয়।
গালগুলো গরম হয়ে আছে ইয়াসিবার সাথে লাল টকটকে।
আফ্রিদ সেখানে আলতো করে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
হালকা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে ইয়াসিবা।
তারপর রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় আফ্রিদের।
আফ্রিদের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি।
মুহূর্তেই সব রাগ গলে পানি হয়ে গেলো ইয়াসিবার।
এই লোকটার সাথে একটুও রাগ করতে পারে নাহ ইয়াসিবা।
ইয়াসিবা মুখ ফুলিয়ে কামড়ের জায়গায় হালকা করে ঢলে বললো,
–” এটা কি করলেন?”
–” কি করলাম?”
–” এইযে আমার গালে যা করলেন?”
–” আদর দিলাম আমার বউটাকে।” বাকা হেসে বললো আফ্রিদ।
–” এমন ভয়ানক আদর আমার চাইনাহ😒।”
–” তাই! তাহলে তো আজ এই ভয়ানক আদরু স্পর্শ দিয়েই মাতিয়ে রাখবো তোমাকে।”
কথাটা বলেই আর একমুহূর্ত আফ্রিদ দেরি না করে ইয়াসিবাকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।
ইয়াসিবা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে চুমু খেতে লাগলো আফ্রিদ।
এদিকে ইয়াসিবা কতোক্ষন অবাক হয়ে রইলো।
পরক্ষনে আফ্রিদের ভালোবাসায়
নিজেকে বিলিয়ে দিলো সে।
————
এলার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে আফ্রিদের।
ঘুমু চোখে নিজের বুকে ঘুমন্ত ইয়াসিবাকে দেখে মুচকি হাসে আফ্রিদ।
কালরাতে সে ইয়াসিবাকে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছে।
ওদের মাজে আর কোন দুরুত্ব নেই।
ভালোবেসে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে এক পবিত্র সম্পর্কে।
ইয়াসিবার চুলগুলো ওর চোখ মুখ ডেকে রেখেছে
আফ্রিদ আলতো হাতে তা সরিয়ে দিলো।
ইয়াসিবা হালকা নড়েচড়ে আরো যেন নিবিড়ভাবে
আফ্রিদের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো।
আলতো ইয়াসিবার গালে হাত দিয়ে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুড়ে ভাবে ডাকলো!
–” বউ! ও বউ!”
–” উউউ!!” ইয়াসিবা আফ্রিদের বুকের মাজে মুক লুকিয়ে বললো।
–” উঠো! ভার্সিটিতে যাবে নাহ?
আজ তো নামাজ টাও মিস গেলো।”
–” সে..সেটা ত..তো আপনার…. আপনার জন্যেই হয়েছে।” ঘুমু কন্ঠে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললো ইয়াসিবা।
এদিকে ইয়াসিবার এমন ঘুমু কন্ঠস্বর শুনে যেন একমুহূর্তের জন্যে আফ্রিদের হৃদস্পন্দন থেমে গেলো।
আফ্রিদ বলে উঠে,
–” এমন ঘুমের রেশ কন্ঠে কথা বলে আমাকে হার্ট এট্যাক করাতে চাও?”
চোখ জোড়া খুলে মুচকি হাসে ইয়াসিবা।
তারপর আফ্রিদের বুকে চুমু খেলো।
এদিকে আফ্রিদ থ হয়ে আছে।সেকি স্বপ্ন দেখছে না-কি বাস্তব।
মানে তার লাজুকলতা তাকে চুমু খেয়েছে তাও নিজ থেকে।
আফ্রিদ বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থেকে বললো,
–” এই আমি কি স্বপ্ন দেখছি না-কি বাস্তব তুমি আমাকে চুমু খেয়েছো?”
মুহুর্তেই ইয়াসিবা লাল,নীল হয়ে গেলো।
এই লোকটা এমন কেন বুজে না ইয়াসিবা?
সেতো চুমুই খেয়েছে সেটা এভাবে বলার কি আছে?
ইয়াসিবা ‘ধুর!’ বলে উঠে যেতে নিতেই আফ্রিদ হাত ধরে নিলো।
–” কোথায় যাচ্ছো?”
–” কেন ওয়াসরুমে ভার্সিটি যাবো তো!”
আফ্রিদ দুষ্টু হেসে বললো,
–” একবার নিজের দিকে তাকাও! ”
আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা নিজের দিকে একবার তাকায় আবার আফ্রিদের দিকে তাকিয়ে চকিতে নয়নে আবারও নিজের দিকে তাকিয়ে বিদ্যুৎ বেগে ব্লাংকেটের নিচে ডুকে আফ্রিদের বুকের মাজে লুকিয়ে গেলো।
তা দেখে আফ্রিদ শব্দ করে হেসে দিলো।
হাসতে হাসতে আফ্রিদের চোখের কোণে পানিও এসে গেছে।
ঘুমের চোটে ইয়াসিবা যে কিছু পড়েনি সে তা ভূলেই গিয়েছিলো।
আর এটা দেখেই আফ্রিদ হাসছে।
আফ্রিদ হাপাতে হাপাতে বলে,
–” এখন লজ্জা পাচ্ছো কেন?নিজের বোকামিতে এখন নিজেই কাবু হয়ে গিয়েছে।”
ইয়াসিবা ব্লাংকেটের নিচে থেকেই আফ্রিদের পেটে চিমটি কেটে দিলো।ব্যাথা পেয়ে আফ্রিদ বললো,
–” উউ! চোরের মতো লুকিয়ে চিমটি কাটছো কেন?”
–” আপনি আস্ত একটা খবিস,বজ্জাত,অসভ্য লোক!” ইয়াসিবা ব্লাংকেটের নিচ থেকেই বললো।
আফ্রিদ নিশব্দে হেসে ইয়াসিবাকে ব্লাংকেট সহ পাজাঁকোলে তুলে নিলো।
ভয় পেয়ে ইয়াসিবা চেঁচিয়ে উঠে,
–” কি করছেন কি আপনি?”
–” টেক-ইট ইজি ওয়াইফি!আজ আমরা রোমান্টিক শাওয়ার নিবো।”
–” কচুর রোমান্টিক শাওয়ার আমি কোন রোমান্টিক শাওয়ার নিবো নাহ।
আপনি আমাকে নামান।হয় আপনি আগে ফ্রেস হয়ে আসুন;নাহয় আমাকে যেতে দিন।”
–” না আগে আমি যাবো না তুমি।
দুজন একসাথে ফ্রেস হবো।”
–” নাহহহহ!”
ইয়াসিবা চিৎকারে কোন লাভ হলো নাহ।
আফ্রিদ তাকে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে গেলো।
দীর্ঘ একঘন্টা গোসল নিয়ে বের হয়ে আসে দুজনে।
ইয়াসিবা ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল মুচ্ছে
আর আড়চোখে তাকাচ্ছে লোকটার দিকে।
যে আপাতত রেডি হতে ব্যস্ত।
তাকে দেখে বুজাই যাচ্ছে নাহ যে এই লোকটা কিছুক্ষন আগেই কিসব কান্ড করে এসেছে।
–” হলো তোমার?”
–” হুহ্!!” ইয়াসিবা মুখ ভেংচি কাটলো।
–” মুখ ভেংচি কাটছো কেন?”
–” আমার ইচ্ছা।”
–” ঠোঁটে এমন কামড় দিবো নাহ যে আর মুখ ভেংচি কাটা কি খেতেও পারবে নাহ।”
ইয়াসিবা উঠে এসে দাড়ালো আফ্রিদের সামনে।
তারপর নিজের গলা থেকে উড়নাটা সরিয়ে
দিয়ে আফ্রিদকে বলে,
–” আর কি কামড় দিবেন হ্যা?
কামড়ে তো দিয়েছেনই।
দেখেন কেমন হয়ে আছে।আজ আমাকে গলায় স্কার্ফ পেয়েছি থাকতে হবে।”
আফ্রিদ তাকিয়ে দেখে আসলেই ইয়াসিবার গলার অনেক জায়গায় কামড়ের দাগ স্পষ্ট।
জায়গাগুলো নীল হয়ে আছে।
আফ্রিদ বাকা হেসে ইয়াসিবাকে কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে এনে মুহূর্তেই ওর কামড়ের জায়গাগুলোতে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে ইয়াসিবাকে ছেড়ে দিলো।
তারপর যেতে যেতে বলে,
–” জলদি নিচে এসো।নাস্তা করে আমাকে হাস্পাতালে যেতে হবে।”
আফ্রিদ চলে যেতেই ইয়াসিবা চোখ মুখ কুচকে আফ্রিদকে মনে মনে ভয়ানক সব গালি দিলো।
তারপর নিচে নেমে আসলো।
দেখে আফ্রিদ নাস্তা নিয়ে বসে আছে।
ইয়াসিবা গিয়ে টেবিলের অন্যপাশে বসে পড়লো।
তারপর অন্য আরেক প্লেটে খাবার বেড়ে
খেতে শুরু করেদিলো।
তা দেখে আফ্রিদ ভ্রু-কুচকে বললো,
–” এটা কি হলো?”
–” কি হলো?আমি খাচ্ছি আপনিও খাওয়া শুরু করুন।” রাগীকন্ঠ ইয়াসিবার।
আফ্রিদ হালকা কেশে উঠলো।
ভালোই রেগেছে মেয়েটা।এখন আর কিছু বললে প্রলয় এসে পড়বে।
আফ্রিদ চুপ-চাপ উঠে এসে ইয়াসিবার পাশে বসলো।
তারপর ইয়াসিবার চেয়ারটা টেনে নিজের মুখোমুখি করে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
ইয়াসিবাও কিছু বললো না করুক সে যতো রাগ তবু লোকটার হাতে খাওয়ার চান্স সে মিস দেবে নাহ।
খাওয়া দাওয়া শেষে দুজন রওনা দিলো তাদের উদেশ্যে।
ইয়াসিবার কলেজের সামনে গাড়ি থামাতেই ইয়াসিবা নেমে যেতে নেয়।
কিন্তু তার আগেই আফ্রিদ তার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
তারপর ইয়াসিবার দু-গালে হাত দিয়ে ওর কপালে চুমু খেলো।
ইয়াসিবা পরম আবেশে চোখ বুজে নিলো।
আফ্রিদ বললো,
–” নিজের যত্ন নিও।আর সমস্যা হলে আমাকে ফোন করিও।”
ইয়াসিবাও মুখটা উচু করতে আফ্রিদ নিজ থেকেই ঝুকে এলো ইয়াসিবাও আফ্রিদের কপালে চুমু খেলো
তারপর গম্ভীর স্বরে বললো,
–” আপনিও নিজের খেয়াল রাখিয়েন। আসছি।”
ইয়াসিবা বেড়িয়ে গেলো।
ইয়াসিবা ভার্সিটিতে ডুকতেই আফ্রিদ গাড়ি পার্ক করে নিজের হাস্পাতালে চলে গেলো।
ঠোঁটে ঝুলছে তার মুগ্ধময় হাসি।
#চলবে,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
জানি ভালো হয়নি।
একটু ম্যানেজ করে নিয়েন।🙃#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️🥀
#পার্টঃ১০💜🥀
ইবাদ আর আবিয়ার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে ইয়াসিবা।
এইদিকে জুবুথুবু হয়ে দাড়িয়ে আছে তারা।
ইয়াসিবা গম্ভীর স্বরে বললো,
–” কাহিনি কি তোদের দুটোর?”
–” কি কাহিনি দোস্ত কি বলছিস?” ভারি ইনোসেন্ট গলায় বললো আবিয়া।
–” থাপ্রিয়ে তোর দাঁত ছুটিয়ে ফেলবো যদি কথা ঘুরাবার চেষ্টা করিস।তাড়াতাড়ি বল।”
–“আমি বলছি ইয়াসিবা।” ইবাদ বলে উঠে।
–” হ্যা জলদি বল।ফাকা ক্লাস রুমে তোরা দুটো কাছাকাছা কি করছিলি?”
–” আসলে আমি আর আবিয়া রিলেশনে আছি।”
কথাটা বলতে দেরি ইয়াসিবার এক দৌড়ে গিয়ে ইবাদকে জড়িয়ে ধরতে দেরি নেই।
ইয়াসিবা খুশিতে লাফাচ্ছে আর ইবাদের গলা ধরে ঝুলছে।
–” ওয়াও! ওয়াও!ওয়াও! এতো তাড়াতাড়ি তোরা রিলেশনশিপে যাবি আমি ভাবি নাই।”
–” তার মানে তুই সব জানতি যে ইবাদ আমাকে ভালোবাসে।” আবিয়ার কথায় দাঁত কেলিয়ে হাসলো ইয়াসিবা।বললো,
–” হ্যা! আমি সব জানি।”
মুহূর্তেই আবিয়া রেগে দিলো এক চিৎকার,
–” ইবাইদ্দায়ায়ায়ায়া! তোর লগে ব্রেক-আপ হ্রামি।
তুই মর, তুই ইয়াসিবাকে বলতে পারলি।
আমি তোর বেষ্টফ্রেন্ড সাথে তুই আমাকে ভালোবাসিস আর আমাকে বলতে পারলি নাহ।”
ইবাদ কপাল চাপড়ে আফসুসের সুরে বলে উঠে,
–” এইজন্যেই বেষ্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করতে নেই।
মান-ইজ্জত আর থাকে নাহ।”
–” কি বললি?” রেগে বললো আবিয়া।
–” আব! কিছু না বেবি তুমি না আমার কলিজা রাগ করে নাহ।” বলেই ইবাদ আবিয়াকে ধরতে এলে।
আবিয়া সরে গিয়ে বললো,
–” ধুর হো হারামি।আমাকে ধরবি নাহ।
ইবাদ অসহায় গলায় বললো,
–” আবিয়া আমি এখন তোর বেষ্টু নাহ।আমি এখন তোর বফ সাথে উডবি হাজবেন্ট একটু তো সম্মান দে।”
–” তোর সম্মানের গুল্লি মারি যা ভাগ।”
–” ইয়াসিবা তুই কিছু বল।” করুন গলা ইবাদের।
ইয়াসিবা এতোক্ষন হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলো।
ইবাদের কথায় সে হাসতে হাসতে আবিয়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“দেখ আবিয়া ও তোকে ভালোবাসে সেটা তোকে বলেনি হ্যা আমি মানছি তার দোষ।
কিন্তু তুই নিজেও তো বলিস নি তাই নাহ?
তুই ঠিক যেই কারনে ওকে বলতি না
ও নিজেও ঠিক সেই কারনেই বলতো নাহ।
যদি ভালোবাসার কথা বলে তোর আর ওর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।আর আমাকেও ও কালকে বলেছে।
আর আমি যেটুকু জানি আমি যাওয়ার পর পরই এ তোকে প্রোপোজ করেছে ;রাইট?”
আবিয়া উপর নিচ মাথা ঝাকালো মানে হ্যা।
ইয়াসিবা আবার বলে,
–” তাহলে সিম্পল! এখানে এতো রিয়েক্ট করার কিছু নেই আবিয়া।”
আবিয়া কতোক্ষন গম্ভীর মুখে ইবাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তারপর জোড়ে হেসে দিয়ে ইবাদকে একসাইড থেকে জড়িয়ে ধরলো।ইবাদও হেসে দিলো।
এদিকে ইয়াসিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
–” বাহ বাহ! আমি মিল করিয়ে দিলাম।
এখন আমাকেই কেউ চিনে নাহ?”
আবিয়া আর ইবাদ হেসে দিলো।
ইবাদ বললো,
–” আজ ক্লাস করা লাগবে নাহ।
চল আজ আমি ট্রিট দিবো তোকে।”
–” ইয়াহুউউ!! দাড়া আগে উনাকে একটু ফোন দিয়ে নেই ওকে।” বলেই ইয়াসিবা ফোন লাগালো আফ্রিদের কাছে।
আফ্রিদ ফোন রিসিভ করেই বললো,
–” কি ম্যাম আজ এতো খুশি? ব্যাপার কি?”
–” আপনি কি করে জানলেন?” অবাক হয়ে বললো ইয়াসিবা।
–” ম্যাম কাইন্ডলি আমার হাস্পাতালের ৫ তলায় তাকান সেখানে আপনার ইনোসেন্ট বরটা আপাতত দূর থেকে তার বউটার হাসি হাসি মুখ দেখছে।” আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা ঘাড় ঘুড়িয়ে পাসের বিল্ডিং যেটা আফ্রিদের হাস্পাতাল সেদিকে তাকায়।
ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আফ্রিদ তার ক্যাভিনের ব্যালকনির কাচটা পুরো খুলে রেখেছে আর সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে সে ইয়াসিবাকে দেখছে।
ইয়াসিবা মুখ ফুলিয়ে বললো,
–” আমাকে দেখে আপনি কি করবেন?”
–” আমার বউটার মুখটা দেখলে যে আমার কি পরিমান সুখ অনুভূত হয় তা যদি আমার বউটাকে বুজাতে পারতাম।”
–” হয়েছে পাম মারা লাগবে নাহ।আমি এখনো রেগে আছি আপনার উপর।”
–” আল্লাহ্ বলে কি?এখনো রেগে আছে আমার বউটাহ!”
–” হ্যা সকালে আপনি যে কান্ড করেছেন আমি রাগবো নাহ?”
–” আচ্ছা রাতে এসে সব রাগ আদড়ে সোহাগে ভ্যানিস করে দিবো।”
–” আপনি আস্ত একটা অসভ্য।” লাজুক কন্ঠে বললো ইয়াসিবা।
–” হ্যা আমি জানি।” হেসে বললো আফ্রিদ।
–” আচ্ছা শুনুন নাহ?”
–” হ্যা বলুন নাহ।”
–” আমি না ইবাদ আর আবিয়ার সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাবো ইবাদ আমাকে ট্রিট দিবে।”
–” কিসের ট্রিট?”ভ্রু-কুচকে বললো আফ্রিদ।
–” আবিয়া এন্ড ইবাদ আর ডেটিং ইচ আদার।” খুশি কন্ঠে বললো ইয়াসিবা।
–” ওহ আচ্ছা তাই তো বলি মেডাম এতো খুশি কেন?” আফ্রিদ বললো।
–” যাবো?”
–” মেডাম যখন যেতে চায় আমি না করি কিভাবে? নাহলে যে বউটার আরো রেগে যাবে তারপর এতো এতো রাগ ভাঙ্গানো তো আমার জন্যে মুশকিল।”
–” ধন্যবাদ ধন্যবাদ আপনাকে।” খুশিতে বলে উঠে ইয়াসিবা।
–” শুনো যেতে তো দিচ্ছি তবে সবসময় ইবাদের সাথে থাকবে।
ইবাদ ও সাথে যাবে বলেই আমি যেতে দিচ্ছি নাহলে দিতাম নাহ।
তবুও নিজের দিকে একটু খেয়াল রেখো।”
–” আচ্ছা।তাহলে রাখছি।”
–” ভালোবাসি ইয়াসিবা।”
চোখ বুযে ফেললো ইয়াসিবা যতোবার আফ্রিদের মুখে এই কথাটা শুনে তার যেন সারা শরীর এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে যায়।
–” আমিও ভালোবাসি।” বলেই ফোন রেখে দিলো ইয়াসিবা।
তারপর ইবাদ আর আবিয়ার সাথে রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলো।
রেস্টুরেন্ট এ পৌছে ইবাদ একটা ওয়েটারকে ডাক দিলো।ওয়েটার আসতেই ইবাদ বলে,
–” ইয়াসিবা অর্ডার কর।”
–” আচ্ছা দাড়া করছি।” ইয়াসিবা মেনুকার্ড দেখে খাবার অর্ডার দিলো।
ওরা গল্প করার মাজেই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।
কোল্ড কফি দেওয়ার সময় ভূলবশত সেটা ইয়াসিবার গায়ের উপরে পড়ে যায়।
ওয়েটার ভয় পেয়ে বললো,
–” সরি সরি ম্যাম আমি খেয়াল করি নি। আ’ম সো সরি।”
ইয়াসিবা ড্রেস ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
–” ইট্স ওকে।ভুল মানুষ দাঁড়াই হয়।আপনি যান।”
ওয়েটারটা আবারও সরি বলে চলে গেলো।
আবিয়া বলে,
–” ইস দোস্ত ড্রেসটা খারাপ হয়ে গেছে।”
–” হ্যা আমি ওয়াসরুম থেকে আসছি।”
–” আমিও যাই তোর সাথে চল।”
–” আরে নাহ তোরা বস আমি যাবো আর আসবো।”
–“আর ইউ সিয়র।”
–” আরে হ্যা।চিল আমি আসছি।”
–“সাবধানে যাস।”
ইয়াসিবা মুচকি হেসে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
—————–
–“স্যার আমার কাজ শেষ।” সেই ওয়েটারটা হেসে বললো।
–” ওয়েল্ডান।এই নেও তোমার পেয়েমেন্ট।” বলেই একটা লোক কতোগুলো টাকা দিলো ওয়েটারটাকে।
ওয়েটারটা টাকা নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে সেই লোকটি বিশ্রী হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললো,
–” ইয়াসিবা তোমাকে এইবার আমার থেকে কে বাচাঁবে সুইটহার্ট!”
তিনবছর আগে আমাকে থাপ্পড় মারার মজা বুজবে।
তোমাকে তো এইবার আমি ছাড়ছি নাহ।”
বলেই লোকটাও ওয়াসরুমের দিকে যেতে লাগলো।
————–
এদিকে ওয়াসরুমে এসে নিজের জামাটা পরিস্কার করছে ইয়াসিবা।
–” উফফ! কি যে হলো পুরো ড্রেসটাই খারাপ হয়ে গেলো।
আমাকে এখনি বাসায় যেতে হবে এই ড্রেস পড়ে
বসে থাকা পসিবল নাহ।”
নিজে নিজে কথাগুলো বলে ব্যাগ নিয়ে বের হতে গিয়ে সে যেন পাথর হয়ে গেলো।
তার সারা শরীর বরফের ন্যায় জমে গেলো।
আবার!আবার সেই ভয়ানক অতীত তার সামনে।
আবার! কেন?কেন?তার সাথেই কেন এমনটা হয়?
আবার কেন অতীতগুলো তার জীবনে আসছে।
সে-কি একটু সুখে থাকতে পারবে নাহ?
তার কপালটা এতো খারাপ কেন?
যখনি তার জীবনে সুখ নামক পাখিটি এসে ধরা দেয়।
ঠিক তখনি দুঃখ নামক তীরটা এসে সেই পাখিটিকে হত্যা করে ফেলে।
ইয়াসিবার সারাশরীর থরথর করে কাপতে লাগলো।
তা দেখে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি বিকট হেসে বললো,
–” কি সুইটহার্ট আমাকে দেখে বুজি খুশি হওনি?
আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
আমরা যে একে-অপরকে কতো ভালোবাসতাম ভুলে গেলে?”
ইয়াসিবা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো স্রেফ।
ব্যাক্তিটি বাকা হেসে ইয়াসিবার দিকে আগাতে লাগলো।
ইয়াসিবা তাকে আগাতে দেখে ভয় পেয়ে পিছাতে লাগলো।
যখন একেবারে ওয়াসরুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।
তখন ইয়াসিবা শব্দ করে কেঁদে দিলো।
ব্যাক্তিটি জলদি ইয়াসিবার কাছে এসে ওকে ধরতে গেলে ইয়াসিবা সাইড কেটে সরে যায়।
ব্যাক্তিটি অভিনয়ের মতো বলে,
–” আরে আরে কাঁদছো কেন?
কাঁদে নাহ।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই নাহ?
আসো আমার কাছে আসো।”
ইয়াসিবা কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে গেলো।ইয়াসিবা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–” কেন আবার এসেছেন প্লিজ চলে যান।
আমি একটু সুখ চাই।
প্লিজ আফ্রিদের সাথে আমাকে একটু সুখে থাকতে দিন প্লিজ।”
–” তাতো হচ্ছে নাহ বেবি।”
বলেই ব্যাক্তিটি ইয়াসিবার মুখে রুমাল চেপে ধরলো।
রুমালে অজ্ঞান করার ওষুধ লাগানো ছিলো।
তাই ইয়াসিবা চোখে সব ঘোলা দেখতে লাগলো।
চোখ বুজার আগে সে অস্ফুটো স্বরে বলে উঠে,
–” আকাশ! কাজটা ভালো করলেন না আমার আফ্রিদ ছাড়বে না আপনাকে।”
ইয়াসিবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
#চলবে,,,,,,,
ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন
কেমন হয়েছে জানাবেন।