অনুভূতি,পর্ব-৩৯+৪০

অনুভূতি
পর্ব ৩৯
মিশু মনি
.
৬১.
আজ মেঘালয়ের বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী।
ওনারা মিশুকে নিয়ে যেতে বলেছেন বাসায়। মিশু সাজগোজ করে বসে আছে, মেঘালয় আসবে ওকে নিতে। মাঝখানে অনেক গুলো দিন কেটে গেছে ওর বন্ধুদের কারো সাথে দেখা হয়নি। আজ অনেক দিন বাদে সবার সাথে দেখা হবে ভেবে মিশুর খুব আনন্দ হচ্ছে। রৌদ্রময়ী ও শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিলো। কালো শাড়িতে ওকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
মেঘালয়ের সাথে এখন তিনদিন পরপর মিশুর দেখা হয়। আজকেও তিনদিন পর দেখা হতে যাচ্ছে। একদিন দেখা হওয়ার পর বাকি তিনটা দিন মিশু খুব প্রতীক্ষায় থাকে। অবশ্য মিশুর চেয়ে মেঘালয়ের বেশি চিন্তা হয় মিশুর জন্য। ওর ইচ্ছে করে সারাক্ষণ মিশুকে আগলে রাখতে। কিন্তু সেটা তো আর হয়ে ওঠে না। বড্ড মন কেমন করে ওর।
মেঘালয় মিশুকে দেখেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। কানে ফিসফিস করে বললো, “দিনদিন তোমার ফিগার তো কোকাকোলার মতন হয়ে যাচ্ছে।”
মিশু মুখটা কালো করে বললো, “টাইগার কেন নয়? আমার তো টাইগার এনার্জি ড্রিংকস বেশি পছন্দ। টাইগার ক্যান কিংবা স্পিড অথবা স্পিরিট।”
মেঘালয় হো হো করে হেসে উঠলো। মিশুর কোমরে হাত রেখে এগিয়ে এসে কানেকানে বললো, “সেগুলা তো আর তোমার ফিগারের মতন না। একমাত্র কোকাকোলাই মেয়েদের ফিগারের আকারের মতন করে বানানো হয়েছে।”
মিশু লজ্জায় মেঘালয়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো, “কি খারাপ তুমি! এভাবে কেউ বলে!”
– “হুম,আমার ই তো বউ। আমি বলবো না?”
– “যাও, খারাপ একটা লোক।”
– “অবশ্য তোমাকে এখনো নিতান্তই বাচ্চা বাচ্চা লাগে। থার্টি সিক্স,টুয়েন্টি ফোর, থার্টি সিক্স হতে আরো বছর খানেক লাগবে।”
– “মানে!”
মেঘালয় দুষ্টুমি হাসি হেসে বললো, “সেসব একটু ক্রিটিক্যাল অংক। এখন বুঝবা না, আগে বড় হও তারপর বুঝবা।”
বলেই শব্দ করে হাসতে লাগলো। আর মিশু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ক্ষেপতে লাগলো। কি বাজে একটা লোক! সারাক্ষণ জ্বালায় ওকে। অথচ এই লোকটাকে দেখার জন্যই তিনটা দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে ও। মেঘালয় কাছে এলে সময় গুলো খুব দ্রুত কেটে যায়,আর মেঘালয় যখন দূরে থাকে সময় যেন কাটতেই চায়না। সুখের সময় গুলো বড্ড বেশি দ্রুত চলে যায়।
মেঘালয় মিশুর গলায় মুখ ডুবিয়ে ইচ্ছেমত আদর করে দিচ্ছে। মিশু উত্তেজনায় ছটফট করছে শুধু। আজ থেকে চার মাস আগে ওদের বিয়ে হয়েছে,তখন কিছুই বুঝত না মিশু। অথচ আজকাল মিশুই অপেক্ষা করে থাকে কখন একটু মেঘালয়কে একান্তভাবে কাছে পাবে।
মেঘালয় বাথরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মিশু সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। মেঘালয়কে আজকাল পেলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করেনা। এত কম সময়ের জন্য ছেলেটা কেন আসে? সাজেকে যাওয়ার প্লান ছিলো সেই বিয়ের আগ থেকে, অথচ এখনো যাওয়া হয়ে উঠলো না। বিয়ে আর সিলেট ট্যুরের খরচের ঝাকিটা সামলে নিতেই কয়েকদিন কেটে গেছে। তার উপর নতুন সংসার, ভার্সিটিতে ভর্তি সবকিছু করতেই অনেক টাকা চলে গেছে। মেঘালয়ের রেগুলার রিহার্সাল থাকে, নতুন নতুন এলবামের জন্য গান করাতে ব্যস্ত থাকে ও। আর মিশু ভার্সিটিতে যায়,ক্লাস করে বাসায় ফিরে শুয়ে বসে বই পড়ে সময় কাটায়। এত সুখের জীবন ভালো লাগেনা। একটু কষ্ট না থাকলে জীবনকে জীবন মনেই হয়না।
রেডিও প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব যখন মিশুকে দেয়া হয়েছিলো মিশু খুব নিঁখুত ভাবে করে দিয়েছে। মেঘালয় আগেই ওকে সবকিছু দেখিয়ে এনেছে, টানা এক সপ্তাহ কঠিন সব প্রাক্টিস করতে হয়েছে। রেজাল্ট ও ভালোই হয়েছে। এখন যেকোনো একদিন মিশুর প্রথম জকির ডিউটি শুরু হবে, সেই অপেক্ষাতেই আছে ও। মেঘালয় আশাবাদী, মিশু একদিন নামকরা রেডিও জকি হবে। কিন্তু মিশুর আর কিছুই ভালো লাগেনা এখন, ওর শুধু সারাক্ষণ মেঘালয়কে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। সেই চার মাস আগে মেঘালয়ের যে অবস্থা হয়েছিলো, এখন ওর সেরকম হচ্ছে। সবসময় মেঘালয়কে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মেঘের এখন সময় নেই।
মেঘালয় বাইরে এসে মিশুকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললো, “কি ভাবছো?”
মিশু উঠে এসে মেঘালয়ের কলার টেনে ধরে ওর বুকে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। আদুরে গলায় বললো, “আমাকে ৩৬ ঘন্টা সময় দিবা মেঘ?”
মেঘালয় মিশুর পেটে হাত রেখে ওকে টেনে আরো কাছে নিয়ে বললো, “৩৬ ঘন্টা শরীরে শরীরে খেলা হবে?”
– “উফফ এভাবে বলো কেন? শিউরে উঠি আমি।”
– “শিহরণ বইয়ে দেয়ার জন্যই তো বলি। হঠাৎ এই আবদার?”
– “তুমি আজকাল বড্ড বেশি ব্যস্ত থাকো। আমার একা একা সারাক্ষণ ঘরে শুয়ে বসে টিভি দেখা ছাড়া আর কাজ নেই। এভাবে আমার ভালো লাগেনা। তিনটা দিন পর তুমি আসো, তাও একটা রাতের জন্য। সেটা চোখের পলকে কেটে যায়।”
মেঘালয় হেসে বললো, “সেটাই তো ভালো। প্রতিদিন কাছে পেলে এত সুখ হবেনা।”
– “জানি। কিন্তু সবসময় একসাথে থাকলে তোমাকে খাইয়ে দিতে পারতাম, একসাথে বসে টিভি দেখা,গল্প করা সবকিছু করতে পারতাম। তুমি আজকাল সারাদিনে একবার কলও দেয়ার সময় পাওনা।”
মেঘালয় হেসে বললো, “আহারে! আমার বউটার অভিমান হয়েছে বুঝি?”
– “হবেনা? রাতে ফ্রি হয়ে কল দাও সেই ১২ টার পর। তখন তুমি প্রচণ্ড টায়ার্ড থাকো, আমার খারাপ লাগে তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে। সেজন্য দশ মিনিট কথা বলেই রেখে দেই। এতে আমার সুখ হয়না মোটেও। কতদিন একসাথে বসে গল্প করিনা ভাবো তো?”
-“বুঝেছি, একটানা ৩৬ ঘন্টা আদর করতে হবে সেটা না বলে এখন আমাকে রূপকথা শুনাচ্ছো।”
– “তুমি খুব খারাপ। অতকিছু চাইনা,তুমি অনেক্ষণ আমার সামনে বসে থাকো তো আমি দেখি।”
– “আজকে আমাদের বাসায় যাচ্ছো তো, সারারাত দেখবা।”
– “একদম একান্তই আমার করে,নিজের মত করে।”
মিশুর মন খারাপ করা মুখটা দেখে মেঘালয় ওর নাকটা টেনে দিয়ে বললো, “তুমি Rj হয়ে গেছো, এখন ডিউটি শুরু হোক তারপর দেখবো এত সময় পাও কই?”
– “আমি কখনোই এত ব্যস্ততা দেখাবো না। যতটা তুমি দেখাও।”
মিশুর অভিমানী গলা শুনে মেঘালয় হেসে ফেললো, “আচ্ছা তবে কি করতে হবে বলো? ৩৬ ঘন্টার কর্ম অবরোধ দিয়ে তোমার সামনে বসে থাকতে হবে?”
– “সাজেকে….”
কথাটা বলেই থামলো মিশু। মেঘালয় চোখ নাচিয়ে বললো, “উম ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো তো।”
– “হ্যা, আমার ডিউটি শুরু হওয়ার আগেই একটা ট্যুর দিয়ে আসি।”
– “ট্যুর বলছো কেন? বলো হানিমুন। চারমাস পর হানিমুন। আহ! কি সুখ!”
মিশু মেঘালয়ের বুকে দুটো কিল বসিয়ে বললো, “তুমি দিনদিন বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছো। পাজি লোকটা।”
মেঘালয় হো হো করে হাসলো। মিশুর অভিমানী গলার কথাগুলো শুনতে বেশ লাগছে। ও মনেমনে প্লান করে ফেললো সবকাজে বিরতি দিয়ে তিনটা দিন সাজেক থেকে ঘুরে আসতে। সত্যিই অনেক দিন থেকে কাজ নিয়ে এতবেশি ব্যস্ত ছিলো ও, মিশুর সাথে একাকী ভাবে সময় কাটানোই হয়নি। মেয়েটার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সবকিছুর আগে মিশু,কাজ জলে যাক। মিশুকে দুম করেই একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দেবে ও।
মিশু ও রোদকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ও। দুপুর এখন নিখিলের সাথে থাকে। গত সপ্তাহে ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুপুর ও অরণ্য দুজনের বাবাকেই বাসায় ডেকে এনে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছে ওরা। অবশ্য পুরো ক্রেডিট টাই মেঘালয়ের। মেঘালয় সবকিছু ম্যানেজ না করলে এত তাড়াতাড়ি হয়ত তালাকের ব্যবস্থা করা সম্ভবপর হতোনা। সবকিছু ভালোভাবেই মিটে গেছে। অরণ্য দুপুরের কোনোরকম খোজ পায়নি,ঝামেলা করা তো দূরের কথা। মেঘালয় মনেমনে ভাবছে সাজেকে গেলে ওদেরকেও নিয়ে যেতে হবে। সদ্য বিয়ে হয়েছে ওদের,বিয়ের পর একটা হানিমুন হয়ে যাক।
৬২.
মেঘালয়ের মা মিশুকে দেখেই খুশি হয়ে উঠলেন। একমাত্র ছেলের একমাত্র প্রিয়জন, মেয়ের মত না দেখলে মেঘালয় কষ্ট পাবে। কয়দিন পর মিশু এ বাড়ির ই বউ হবে, অযথা দূরে রেখে লাভ ই বা কোথায়?
মিশু একটা শাড়ির প্যাকেট মায়ের হাতে দিয়ে বললো, “আপনাকে আজকে আমি বিয়ের কনে সাজিয়ে দিবো। আর বাবাকে বর সাজিয়ে দিবো।”
মা হেসে বললেন, “দিও। কিন্তু বাসর ঘর না সাজালে আমি বউ সাজবো না মোটেও।”
সবাই হা হয়ে গেলো এরকম কথা শুনে। মিশু ভেবেছিলো মা হয়ত লজ্জায় লাল হয়ে যাবেন। কিন্তু মায়ের এমন উত্তর শুনে ওর হাসি পেলো। ওর হাসি দেখে সবাই হাসতে লাগলো। মেঘালয়ের মা মিশুকে বললেন, “আগে একটু নাস্তা করে নাও সবাই মিলে। তারপর যা করার করো।”
নাস্তার টেবিলে বসে সবাই চিল্লাচিল্লি করে নাস্তা খাচ্ছে। অনেক দিন পর মিশুকে পেয়ে সায়ান আর পূর্ব দারুণ খুশি। মেয়েটাকে ছাড়া আড্ডা জমেই না যেন। মিশু নতুন Rj হয়েছে, সেই ট্রিট নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলো ওরা। দীর্ঘদিন পর পূর্ব রোদকে দেখতে পেয়ে একটু উত্তেজিত। মনেমনে একটু ফিলিংস জন্মেছিলো ওর প্রতি। সেই কনসার্টের রাতের পর মাত্র একদিন দেখা হয়েছিলো, সেরকম কথা হয়নি। তারপর আজকে দেখা। আজও একটু একটু অন্যরকম ফিল কাজ করছে ভেতরে।
মা মিশুকে জোর করে করে নাস্তা খাওয়াচ্ছেন। মিশু বললো, “আমার আম্মুও আমাকে এত আদর করেনা হয়ত।”
– “আমি কি তোমার আম্মু নই? নাকি শুধু নামের আম্মু?”
– “আপনি আমার মা। আমার কলিজার টুকরা।”
বলেই ওনাকে জড়িয়ে ধরলো মিশু। মেঘালয় তো সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকে। মিশুর একা একা লাগলেই ও এসে শ্বাশুরি মায়ের সাথে গল্পে মেতে উঠতো। দুজনের বেশ গলায় গলায় ভাব জমে গেছে। উনি মিশুকে বললেন, “এবার তো নিজের একটা পরিচয় হতে চলেছে তোমার। এখন ওটা তোমার ক্যারিয়ার প্লাস প্রফেশন ও। এবার তোমার মা আর বোনকে ঢাকায় নিয়ে এসো ”
মেঘালয় বললো, “আমিও তাই ভাবছিলাম। ওনাদেরকে এখানে নিয়ে এসে রাখুক।”
মিশু করুণ দৃষ্টিতে তাকালো মেঘালয়ের দিকে। ওর তো বাসায় একা একা থাকতে হয়। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে। তবুও মাকে নিয়ে আসার কথা ভাবেনা ও। কারণ ওরা এখানে এসে থাকলে মেঘালয় আসবে কিভাবে? তখন যদি মেঘালয়ের সাথে এইটুকু সময় ও একসাথে থাকা না হয়,মিশু মরেই যাবে। তিনদিন পর দেখা হয়েও ওর কত কষ্ট হয়। একেবারেই না হলে মেনে নেয়া যাবেনা।
মেঘালয় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপার টা অনুধাবন করতে পেরেছে। ও ইশারায় বুঝালো, “আমি তো আছি, চিন্তা করোনা।”
মিশু মাথা ঝাঁকাল। নাস্তা শেষ করে নিয়ে ও মাকে শাড়ি পড়ে দিলো। একদম নতুন বউয়ের মতন সাজগোজ করিয়ে দিলো। মেঘালয়ের বাবা এখনো বাসায় ফেরেন নি। এদিকে সবাই মিলে আনন্দ, হৈ চৈ করতে লাগলো। পূর্ব বারবার তাকাচ্ছে রোদের দিকে। মিশু ওদিকে মাকে নিয়ে রুমে সাজুগুজু করিয়ে দিচ্ছে আর মেঘালয় এদিকে বন্ধুদের সাথে প্লান করে ফেললো সাজেকে যাওয়ার। অনেক দিন থেকে সবাই মিলে একসাথে সময় কাটানো হয়না। সায়ান,পূর্ব,আরাফ,রোদ, দুপুর এদেরকে নিয়ে একটা পরিবারের মতন হয়ে গেছে। পরিবারটাকে ছাড়া সাজেকে গিয়ে কি আনন্দ হবে? মিশু শুনলে নিশ্চয়ই আনন্দে লাফালাফি শুরু করে দিবে।
মিশু একাই ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে দিলো। কাউকে আসতেও দিলোনা রুমে। মেঘালয় মনেমনে ভাবছে, মেয়েটা আসার পর থেকেই ব্যস্ত। রুম থেকে বের হওয়ার ই সময় পাচ্ছেনা। কোথায় ভাবলাম সারাক্ষণ ওর সামনে বসে থাকবো, সেটা আর হলোনা। মিশুর জন্য এখন মন কেমন করছে ওর। যত দ্রুত সম্ভব সাজেকে যেতে হবে। আচ্ছা, পরশু গেলে কেমন হয়?
সায়ান সম্মতি দিয়ে বললো, “সেটাই ভালো হবে। তবে কেউ মিশুকে কিছু বলবো না আগেই, ওর জন্য এটা একটা গ্রেট সারপ্রাইজ হবে।”
মেঘালয়ের মনটাও আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। ও আর স্থির হয়ে থাকতে পারছে না। সাজেকে যাওয়ার সমস্ত প্লান সেরে ফেললো সবাই মিলে। চাঁদা ঠিক করা হলো, দুপুর আর নিখিলকেও ফোন দিয়ে দাওয়াত করা হলো সাজেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওদের সদ্য বিয়ে হয়েছে তাই ওদের চাঁদাটা ওরা বন্ধুরা সবাই মিলে দেবে ঠিক করা হলো।
চলবে..

অনুভূতি
পর্ব ৪০
মিশু মনি
.
৬৩.
“তুমি ছুলে জল আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি,
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুড়ে দিচ্ছি”
লাইন দুটো দেখে বেশ চমকালো মিশু। ভার্সিটি থেকে ফিরে রুমে ঢুকেই দেখে দেয়ালে কাগজে ঝুলছে লেখাটা। আর বিছানার উপর একটা প্যাকেট রাখা, উপরে ফুল দেয়া। মিশু বেশ অবাক হলো! এগিয়ে এসে ফুলগুলো নিয়ে গন্ধ শুকলো,তারপর প্যাকেট টা হাতে নিয়ে খুললো। খোলামাত্র আরো বেশি মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেলো ওর চোখেমুখে। একটা নীল শাড়ি, সাথে ব্লাউজ ও আছে। ছোট্ট প্যাকেটে নীল চুড়ি, কানের দুল,টিপ। মিশুর বিস্ময়ের সীমা রইলো না। উপরে একটা ছোট্ট চিরকুটে লেখা, “অগ্নিলাকে দ্রুত দেখতে চাই”। মিশুর মনটা মুহুর্তেই উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। সমস্ত শরীরে মেঘালয়ের প্রেমের বীজ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।
ছুটে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিলো। তাড়াতাড়ি শ্যাম্পু করে নিয়ে গোসল শেষ করে তোয়ালে গায়ে পেঁচিয়ে রুমে আসল। এসে দেখলো মেঘালয় সোফায় বসে আছে। নীল পাঞ্জাবিতে দারুণ শুভ্র দেখাচ্ছে ওকে। কপালের উপর ভেজা চুলগুলো এসে লুটিয়ে পড়েছে। মিশুর ইচ্ছে করছে গিয়ে হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে। ও একটু একটু করে এগোতে লাগলো। মেঘালয় দুইপা এগিয়ে এসে মিশুর কোমরে হাত দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলো। মিশু বুক ভরে ঘ্রাণ নিয়ে বলল, “নিউ বডি স্প্রে?”
– “ইয়াপ, জানো তোমাকে দারুণ আবেদনময়ী দেখাচ্ছে।”
– “আর তোমাকে বিপজ্জনক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে।”
– “খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে না?”
মিশু মুচকি হেসে বললো, “এত বড় সারপ্রাইজ হঠাৎ? তোমার না আরো দুদিন পর আসার কথা?”
– “ঘড়ির কাটা এগিয়ে এসেছে ৪৮ ঘন্টা।”
– “যাও, দুষ্টুটা। শাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার।”
– “এবার সেটা পরিধান করে আমাকে ধন্য করুন মহারাণী।”
মিশু মেঘালয়ের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে শাড়ি পড়ে নিলো দ্রুত। চোখে কাজল টেনে নিলো। মেঘালয় ওর পায়ের কাছে বসে পায়ে আলতা দিয়ে দিলো। তারপর ডান পা তুলে পায়ের উপর চুমু এঁকে দিলো। মিশু আজ বারবার মুগ্ধ হচ্ছে। মেঘালয় এত সারপ্রাইজ কেন দিচ্ছে আজ!
মেঘালয় উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তোমায়।”
– “ইস! আর বলতে হবেনা।”
– “হ্যা, এবার আসো তাড়াতাড়ি খেয়ে নেই। আমার বড্ড খিদে পেয়েছে।”
মিশু মেঘালয়কে নিয়ে খাবার টেবিলে চলে এলো। খাবার খেতে খেতে দুজনাতে গল্প হলো কিছুক্ষণ। মিশু গল্প শুনাচ্ছে ভার্সিটি’র ফ্রেন্ড দের নিয়ে। অনেক ফ্রেন্ড হয়েছে ওর। তাদের গল্প বলতে বলতে খাওয়া শেষ করে নিলো। মেঘালয় গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে মিশুর দিকে। মিশুকে আজ বড্ড বেশি অপূর্ব দেখাচ্ছে! এত মায়াবী কেন মেয়েটা?
মিশু খাওয়া শেষ করে বসে বসে বকবক করেই চলেছে। মেঘালয় ওকে নিয়ে এসে রুমে ঢুকলো। মিশুকে বিছানায় বসিয়ে রেখে মিশুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মিশু বকবক করছে আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘালয় মুগ্ধ হয়ে শুনছে শুধু। গল্প করেই সন্ধ্যা পার করে দিলো। সন্ধ্যা পেরোবার পর মেঘালয় বললো, “মিশু, বাইরে বের হবো। চলো।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “এখন! পুরোটা বিকেল বাসায় কাটিয়ে এখন বাইরে? বাইরে ডিনার করার চিন্তা আছে নাকি?”
– “আহা! চলো তো তাড়াতাড়ি।”
মিশুর কাঁধে হাত রেখে ওকে নিয়ে মেঘালয় বাইরে বেড়িয়ে এলো। মিশু বললো, “রোদ আপুকে বলে যাবো না?”
– “আমরা যেখানে যাচ্ছি,রোদ সেখানে আগে থেকেই বসে আছে।”
– “ওহ আচ্ছা। যাচ্ছিটা কোথায় বলবা তো?”
– “উহু, গেলে দেখতে পাবা।”
মিশু ক্রমশই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। আজ মেঘালয় এত চমকে দিচ্ছে কেন! ছেলেটা মাঝেমাঝে এমন সব কান্ড করে। আজকের বিকেলটা অনন্য একটা বিকেল ছিলো। মেঘালয়ের মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বসে বসে গল্প করার সৌভাগ্য অনেক দিন হয়নি। আজ মন খুলে কথা বলেছে ও মেঘালয়ের সাথে।
মেঘালয় মিশুর পাশেই বসলো। আজ ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে। সেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। মিশু বারবার তাকাচ্ছে মেঘালয়ের দিকে। ওর চোখেমুখে কৌতুহল। গাড়ি অনেক্ষণ ধরে চলছে, গন্তব্যে পৌছাচ্ছে না এখনো। মিশু উত্তেজনায় ছটফট করছে শুধু, কোথায় যে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না কিছুই। মেঘালয় ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। মিশু বারবার জিজ্ঞেস করছে রোদ কোথায়? কিন্তু মেঘ জবাব দিলোনা।
একটা শো রুমের সামনে এসে গাড়ি থামলে মিশু অবাক হয়ে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। নামার পর সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলো এটা বাস স্ট্যান্ড। ও মেঘালয়ের পাঞ্জাবি খামচে ধরে বললো, “এখানে কেন?”
সামনে একটা বাস দাঁড়িয়ে আছে। মিশুকে বাসের দরজায় এনে বাসে উঠতে বললে ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাসে উঠে পড়লো। উঠেই ওর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। সামনের কয়েকটা সিটে ওর সব পরিচিত ব্যক্তিরা। সায়ান,আরাফ, পূর্ব ও রোদ, নিখিল দুপুর সবাই। ও অবাক হয়ে বললো, “কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
সবাই একসাথে চিৎকার করে বললো, “আমরা সাজেক যাচ্ছি।”
মিশু আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। এত জোরে লাফালো যে বাসের সব যাত্রীরা ওর দিকে তাকালো। মিশু রীতিমত ডান্স দিতে দিতে এসে মেঘালয়ের হাত ধরে ফেললো। ও উত্তেজনায় কাঁপছে, কথাই বলতে পারছে না। দুম করেই সেই মেঘের দেশ সাজেক! উফফ মেঘ ছুঁয়ে দেখা হবে! আনন্দ আর উত্তেজনায় মিশুর পুরো শরীর কাঁপছে, চোখে পানি এসে গেছে।
মেঘালয় এর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সিটে বসলো। মিশু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “কাপড়চোপড় নিয়ে যাবো না?”
– “আমাকে অতটা অকর্মা বর ভাবো? তুমি ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায়ই লাগেজ গুছিয়ে রোদের রুমে রেখে এসেছিলাম। ও নিয়ে এসেছে।”
মিশু আনন্দে মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরলো। ওর চোখে পানি এসে গেছে। ঢোক গিলে বললো, “আমরা এখন সত্যিই খাগড়াছড়ি যাচ্ছি? অনেক পাহাড় দেখতে পারবো?”
– “হুম পারবা।”
– “আমরা গিয়ে থাকবো কোথায়?”
– “সব ঠিক করা হয়ে গেছে বাবুই, এত টেনশন করতে হবেনা।”
– “সাজেকে পৌছাবো কিসে করে? শুনেছি ওখানে একটা টেম্পুর মত গাড়িতে যেতে হয়?”
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, “চান্দের গাড়ি। সেটাও ঠিক করা হয়ে গেছে বউসোনা।”
মিশু আনন্দে আবারো লাফানোর চেষ্টা করলো, “আচ্ছা তাহলে আমরা সত্যিই সাজেক যাচ্ছি?”
– “হ্যা রে বাবা,সত্যি যাচ্ছি।”
মিশু মেঘালয়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো, “তুমি খুব ভালো মেঘ, আই লাভ ইউ মেঘমনি। আই লাভ ইউ।”
মেঘালয় মিশুর চুলে একটা আলতো চুমু দিয়ে বললো, “ভালোবাসি মিশু।”
মিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মেঘালয় এত সারপ্রাইজ কেন দিচ্ছে আজ? ছেলেটা খুব বেশি পাগল। কেন যে এত ভালোবাসে! মিশু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ফেলছে ওকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে, লাইট নিভিয়ে দিতেই মিশুর আরো আনন্দ হতে লাগলো।
জানালা পুরোটা খুলে দিয়ে মিশু মেঘালয়ের মাথাটা কাছে টেনে নিয়ে ফিসফিস করে গল্প করতে লাগলো।
– “আচ্ছা মেঘমনি, আমি কি পাহাড়ের উপর থেকে মেঘ ছুতে পারবো?”
– “আমাদের কটেজ থেকেই ছুতে পারবা। রুম থেকে বাইরে বের হলেই ছুতে পারবা।”
মিশু মেঘালয়ের পাঞ্জাবির বুক পকেট খামচে ধরে বললো, “ইস! আমাদের ঘরের জানালা খুললে ঘরে মেঘ ঢুকে যাবেনা?”
– “উম পাগলীটা আমার, কত মেঘ ছুতে পারো তাই দেখার জন্য যাচ্ছি। তুমি ছোঁবে আর আমি দেখবো।”
– “আচ্ছা খুব মজা হবে। ইস! আমার তো সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে গো।”
– “কি যে বলো। আমার মিষ্টি পাগলীটা।”
মেঘালয় মিশুর মাথাটা নিজের কাঁধে নিলো। বাস অন্ধকার, দারুণ বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। মিশু মেঘালয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, “রাস্তায় চান্দের গাড়ি থেকে মেঘ দেখা যাবেনা?”
– “সাজেকে গিয়ে দেখতে পারবা। রাস্তায় পাবেনা।”
– “ওহ আচ্ছা। আমাকে পিছন দিক থেকে ধরে রাখবা,আচ্ছা?”
– “তোমাকে বুকের মাঝখানে ধরে রাখবো। আর দুজনে একসাথে মেঘ গায়ে মাখবো।”
মিশু উৎফুল্ল হয়ে বললো, “আমরা মেঘ দিয়ে ভাত খাবো হ্যা?”
– “হ্যা খাবো।”
– “সাথে এক টুকরো আকাশ আর পাহাড় ও থাকবে।”
– “হুম থাকবে।”
– “আমি পাহাড়ের গন্ধ নিবো, মেঘের গন্ধ নিবো, আকাশের বিশালতা নিবো।”
মেঘালয়ের খুব ভালো লাগছে এসব শুনতে। ও আরেকটু উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য বললো, “কেমন হবে বলোতো, আমি সারারাত তোমাকে জ্বালিয়ে ভোরবেলা ঘুমুতে দিয়েছি। যদি আমি খুব ভোরে তোমার ঘুম ভাঙাই? তুমি বিরক্ত হয়ে চোখ মেলবে। চোখ মেলতেই বিছানা থেকে বাইরে চোখ চলে যাবে। চারিদিকে পাহাড়ের গায়ে, সবখানে মেঘ লেগে আছে। মেঘেরা উড়ে উড়ে আসছে, চারিদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। পুরো পাহাড়ের গায়ে মেঘ লেগে আছে, আর তোমার ও পুরো শরীরে মেঘ লেগে আছে।”
মিশু প্রায় কেঁদে ফেলার মত অবস্থা হয়ে গেলো। এত সুখ কেন! এত সুখ কেন! মেঘালয়ের বুকটা খামচে ধরে রইলো ও। সুখে কান্না আসছে, সুখে ভেসে যাচ্ছে ও। এত সুন্দর কেন সবকিছু? সবখানে মেঘ, পুরো পাহাড়ের গায়ে মেঘ লেগে থাকবে, মিশুর পুরো শরীরেও মেঘ লেগে থাকবে। উফফ! ভাবতেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে।
মিশু মেঘালয়কে জোরে জোরে খামচে ধরছে। মেঘালয় গান গেয়ে উঠলো গুনগুন করে,
“তোমায় ছোঁবে বলে,আদর করবে বলে,
উড়ে উড়ে আসে এলোমেলো কিছু গান..
ডেকে যায় তোমার আঁচল ধরে..
তুমি ছুলে জল,আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি..
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুড়ে দিচ্ছি..”
মিশু মেঘালয়ের হাতে চিমটি দিতে দিতে বললো,”আজকাল গানগুলোও খুব কেমন যেন! গানেও আদর করে দিতে চায়! আর অনুপম রায়ের কণ্ঠে এই শব্দগুলা শুনলে বুকটা আরো ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”
– “হুম। আমার শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলো প্লিজ এই লাইনগুলা অনুপম দার গলায় শুনলে আমার দারুণ ফিল হতো। আর ভাবতাম কবে যে একটা ভালোবাসা হবে আমার।”
মিশু হেসে বললো, “সে আমার অজানা নয়। আচ্ছা মেঘমনি, আমরা গিয়ে থাকবো কোথায়? তাবুতে নাকি রুমে?”
– “কাঠের ঘরে থাকবো বউসোনা।”
মিশু উত্তেজিত হয়ে বললো, “ইস! কাঠের ঘরের প্রতি আমার কঠিন রকম দূর্বলতা গো। দোতলায় থাকবো? মেঘ এসে আমাদের গায়ের উপর দিয়ে যাবে? আমার চোখ মুখ ঠোঁট সব ভিজিয়ে দিয়ে যাবে?”
– “তুমি চাইলে মেঘ এখনি এগুলা সব করতে পারে।”
মিশু মেঘালয়ের বুকে কিল বসিয়ে বলল, “খুব খারাপ তুমি।”
– “বারে, এতকিছুর পরও আমি খারাপ?”
মিশু হেসে ওর বুকে মাথা রেখে বললো, “তুমি তো আমার মেঘমনি। আমার কলিজার টুকরা।”
– “আমি একটা টুকরা? আর বাকি টুকরা গুলা কে কে?”
– “কিহ! তুমি খুব পাজি।”
মেঘালয় হো হো করে হাসতে লাগলো। মিশু ক্ষেপে যাচ্ছে। মেঘালয় বললো, “তোমার চুলের গন্ধে আমার ঘুম এসে যায় মিশমিশ। এত নেশা কেন তোমার চুলের গন্ধে?”
– “যাও আর বলতে হবেনা। পাজি লোকটা, দুষ্টু একটা।”
– “আমাদের বাচ্চাটা কিন্তু আমার মত পাজি হবে।”
– “না, আমার মতন ভালো হবে।”
– “তুমি তো বোকা। আমাদের বাবু কখনো বোকা হবেনা।”
মিশু ক্ষেপে বললো, “আমি বোকা?”
– “প্রমাণ চাও?”
কথাটা বলেই মেঘালয় মিশুর ঠোঁট চেপে ধরলো দুই ঠোঁট দিয়ে। ছেড়ে দিতেই মিশু ওর বুকে মাথা রেখে জাপটে ধরলো। মেঘালয় বলল, “দেখেছো তোমাকে ঘায়েল করা কত সহজ?”
মিশু জোরে জোরে দুটো কিল দিয়ে বললো, “যাও খারাপ টা।”
সামনের সিটে নিখিল ও দুপুর বসেছে। নিখিল পিছন দিকে মুখ করে না তাকিয়েই বললো, “এখনো তোমাদের প্রেম দেখি বিয়ের প্রথম দিনের মতই আছে।”
মেঘালয় বললো, “না। মেঘালয়ের মেঘালয়া পুরনো হয়ে গেছে। আমি জোর করে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছি।”
মিশু মেঘালয়কে আবারো মাইর শুরু করে দিলো, “আমি পুরনো হয়ে গেছি? আমি পুরনো হয়ে গেছি?”
মাইর খেয়ে মেঘালয় বললো, “না না। আমার মেঘালয়া সবেমাত্র নাবালিকা থেকে কৈশোরে পদার্পণ করছে। থার্টি সিক্স টুয়েন্টি ফোর থার্টি সিক্স।”
নিখিল হেসে উঠলো। মিশু ক্ষেপে জানালা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে দিলো। মেঘালয় টেনে এনে ওর মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে বললো, “বাইরে মাথা রাখবা না।”
মিশু ওর কাঁধে মাথাটা গুঁজে দিয়ে হাত ধরলো মেঘালয়ের। মেঘালয় মিশুর আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে বললো, “কতবার তোর বাড়ি গিয়ে গিয়ে ফিরে এলাম, আমার মতে তোর মতন কেউ নেই।”
– “আমার মতেও তোমার মতন কেউ নেই মেঘ।”
– “মেঘের দেশে নিয়ে যাচ্ছি তোমায়-
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে নক্ষত্রের ছায়া, মেঘালয়ার চোখে মেঘালয়ের মায়া।”
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here