#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২০ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
লাল র-ক্তে চারিদিকে ভেসে যাচ্ছে মানুষজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে। রক্তের বিঘুটে গন্ধে জারা চোখ মুখ কুচকে মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরে ভয়ে তার সারা শরীর কাটা দিচ্ছে যেনো কোনো এক মৃত্যু পুরী। জারা এই অদ্ভুতদেশ থেকে বের হবার জন্য এদিক ওদিক দৌড়ে পথ খুঁজতে লাগল কিন্তু ও যেদিকেই যাচ্ছে সেদিকেই ব্যথায় কাতরানোর শব্দ জারা নিজের মাথা দু-হাত দিয়ে চেপে ধরল। হঠাৎ জারার কাঁধে কেউ হাত রাখলো জারা চমকে কিছু না ভেবেই পিছনে ফিরে তাকালো। শানকে দেখে জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগল
-‘ কোথায় ছিলেন হ্যাঁ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন আপনি আমি কতটা ভয় পাইছিলাম। ‘
পেটের তীব্র ব্যথায় জারা পেটে হাত দিয়ে পিছিয়ে এলো শানের থেকে পেট থেকে র-ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জারার মাথা ঘুরে গেলো। শরীরে শক্তি ফুড়িয়ে এলো। ছলছল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। শানের হাতে র-ক্ত মাখা ধারালো ছু-রি। জারা থমকে গেলো ঝাপসা চোখে শানের অধরে লেগে থাকা অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা যেটাতে বার বার ম/রে যেতে ইচ্ছে হত। আজ সেই হাসিতেই খু/ন হলো!
জারা চিৎকার দিয়ে উঠে বসল। দরদর করে ঘাম কপাল বেয়ে পরতে লাগল। জারা চারিদিক দেখল ড্রিম লাইটের আলো বাইরে ভোরের আলো ফুটছে থাই খোলা থাকাই স্পষ্ট সবকিছু। না সে রুমেই আছে জারা পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ডেলে ঢকঢক করে পানি খেলো নিজ মুখেই বলল
-‘ কি ভ-য়ং-কর স্বপ্ন! তাও আবার শান আমাকে খু-ন! না না শান ভাইয়া আর যায় করুক এটা করতে পারে না এটা আমার বিশ্বাস করি না। ‘
জারা এপাশ ওপাশ ফিরে আর ঘুম হলো না উঠে নামাজ আদায় করে মন স্থির হলো। ছাদে কিছুক্ষণ পায়চারি করে রুমে এসে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলো। ৮টার দিকে নিচে নামলো জারা অনেকে তখনো ঘুমাচ্ছে আবার অনেকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করছে। নিচে এসে দাঁড়াতেই শানের ফুফু বলে উঠলো
-‘ কি রে শান্তি বউকে এতো ছাড় দিস কেনো? বোনের মেয়ে বলে? দেখিস একদিন মাথায় উঠে নাচবে এতো লায় দিস না পড়াশোনা করছে এবার স্বামী সংসারের হাল ধরুক তা না আবার কি না-কি করে রাতের বেলায় ও বাসার বাইরে থাকে এগুলো কিভাবে মানিস? রাতবিরেতে বাইরে থেকে কি করে খোঁজ খবর রাখিস তো না-কি সেটাও করিস না? ‘
শানের আরেক ফুফু বলে উঠলো
-‘ শান্তি তোমার ছেলে আর ছেলের বউ আলাদা থাকে না-কি? তেমন টাই তো দেখলাম বাবা তোমাদের ব্যাপার স্যাপারই তো আলাদা তা কি সমস্যা বউয়ের…..’
পরের কথাটা কি সেটা জারা বুঝতে পারলো। এমনিতেই সকালের স্বপ্নটার জন্য মন খারাপ ছিল। তার ওপরে বিষবাক্য শুনে বড্ড কান্না পেলো মন বিষিয়ে উঠলো জারার কিন্তু কাদলো না পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে থাকলো মাথা নিচু করে। কষ্টে কান্নায় চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। জারা জানে শানের বড় ফুফু মেয়েকে শানের সাথে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাই তো যতবারই আসে ততবারই জারাকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে উল্টো পাল্টা কথা বলে জারাকে ছোট করে দেয়।
শান্তি মুচকি হেসে বলল
-‘ আমার সংসারে তোমরা হস্তক্ষেপ না করলেই খুশি হবো আর কি বললে ও আমার বউমা নয় ও আমার মেয়ে আর ও কি হবে ওরা এখনো সংসার শুরু করে নি আর না ওরা সংসার ব্যাপারে কিছু বোঝে এখনো তো ওদের পুরো জীবন পড়ে আছে আস্তে আস্তে শুরু করুন ডিসিশন নিক ওরা কি করবে তোমরা আমি বললেই কি ওরা শুরু করতে পারবে? না তার জন্য ওদের প্রিপারেশনেও দরকার তাই ওদের ব্যাপার ওদের বুঝতে দাও ‘
জারার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো । অপমানে তাদের মুখ থমথমে হয়ে আঁধার নেমে আসল। জারা এগিয়ে এসে বলল
-‘ মনি কিছু লাগবে করে দিবো? ‘
-‘ না তুই চা খাবি চা করে দিবো? ‘
-‘ না মনি ইচ্ছে করছে না আমি রুমে গেলাম দরকার পরলে ডেকো। ‘
জারা রুমে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। জারার চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো জারা মুছল না ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ল কখন জারা নিজেও জানে না। ঘুম ভাংগলো শান্তির ডাকে। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
-‘ হ্যাঁ মনি বলো’
-‘ কি বলবো তোর এতো ঘুম কোথা থেকে আসলো? রাতে ঘুম হয় নি তোর? ‘
-‘ হ্যাঁ রাতে ঘুমাইছি তো এখন একটু আগেই ঘুমালাম ‘
-‘ একটু আগে? আমি তোকে দু-বার এসে দেখে গেছি ডাকি নাই সকালপ খাস নি এখন দুপুর দুইটা বাজে দুপুরেও কি খাবি না? না-কি ঘুমাবি? ‘
জারা আকাশ থেকে পড়ল লাফ দিয়ে উঠে বসে বলল
-‘ মানে এখন দুপুর? ‘
শান্তি বেগম হেসে বলল
-‘ জি হ্যা ম্যাডাম উঠে খেয়ে সাওয়ার নিয়ে রেডি হন শপিংয়ে যাবেন না? উঠেন ‘
জারা মুখটা প্যাচার মতো করে বসে রইলো। শান্তি তারা দিয়ে চলে গেলো।
জারা উঠে অগোছালো চুলগুলো খোলা হাতে খোপা করে নিজেকে বকতে বকতে বলল
-‘ সত্যি আজ এতো ঘুম কোথা থেকে আসলো এখনো ঘুম পাচ্ছে আমার দূর ‘
জারা ঝটপট সাওয়ার নিয়ে নিচে চলে আসলো তখন নিচে কেউ ছিল না। শান্তি রান্নাঘরে কি যেনো করছিল জারা যেতেই বলল
-‘ এতো দেরি হলো কেনো আয় বস খেয়ে নে। ‘
-‘ সাওয়ার নিয়ে আসলাম আসো বসো তুমি ও তো খাও নি’
-‘ কেমন করে বুঝলি? ‘
-‘ আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া খাও না’
-‘ পাকা বুড়ি তো তুমি ‘
জারা হাসল।
——–
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল সূর্যের রক্তিম আভা ছড়ানো চারিদিকে। গাড়িতে বসে আছে শান আর জারা দুজনেই চুপ নিরবতা ভেঙে জারা বলল
-‘ আপনি জানি কাল কি বলছিলেন? ‘
শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-‘ কখন? ‘
জারা বলতে নিয়েও মনে মনে বলল
-‘ আচ্ছা আমি যদি ওনাকে সরাসরি জিজ্ঞেসা করি ওনি আমাকে ভালোবাসে কি না আর ওনি যদি আমাকে অপমান করে তখন। না থাক কিছু জিজ্ঞাসা করে মুখ নষ্ট না করায় ভালো ‘,
জারা ছোট করে উত্তর দিলো
-‘ কিছু না ‘
শানও আর কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো। আর ওদের মাঝে কথা হলো না। টুকটাক যাও হলো শপিংয়ের বিষয় এ।
শপিংয়ের মাঝে হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে শানকে জড়িয়ে ধরলো। শানও হাসি মুখে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো। জারার পৃথিবী যেনো উল্টে গেলো।
#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২১ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
কষ্টের পরে সুখ আসবে ক্ষনিকের জন্য হোক বা বাকিটা জীবনের জন্য হোক সুখ আসবে। তার মাঝে আবার কষ্ট আসবে। মান-অভিমান হবে, প্রেম হবে, ভালোবাসা হবে, স্বপ্ন হবে আবার সেগুলো পুরন ও হবে।
জারা অঝর ধারায় কেঁদে চলছে। তার জীবনে এতো কেনো কষ্ট? এতো কেনো কান্না? সুখের সন্ধান কি মিলবে না? না-কি সারাটা জীবন এভাবেই বুকভরা কষ্ট নিয়ে একাকিত্বে কেটে যাবে? জারা কাঁদতে কাঁদতে থেমে গেলো আর কাঁদবে না সে এই সম্পর্কে যখন এতোই বাঁধা এতো কষ্ট যেখানে একটুকরো ভালোবাসার নৌকা নেই সেখানে থেকে কি হবে? কার জন্য থাকবে যার জন্য এতো কিছু তার জন্য কি? কিন্তু আর কত? যথেষ্ট হয়েছে আর নয় যত তারাতাড়ি সম্ভব এই সম্পর্কে ইতি টানা উচিত!
জারা শোয়া থেকে উঠে হাতে ফোন নিলো। ফোন করলো কাউকে….
—–
সেদিনের পর কেটে গেলো বেশ কিছু দিন। জারা শানের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। শানও বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত জারার মুখোমুখি হলে দু-একটা কথা বললেও জারা উত্তর দেয় না। ইগনোর করে চলে আসে। শান বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে জারার যাওয়ার পানে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে চাই না শান তাই মেজাজ ঠান্ডা করে রাখে। দেখতে দেখতে ইশার বিয়ের দিন ও ঘনিয়ে আসলো।
~ইশার হলুদ সন্ধ্যা~
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান রংবেরঙের কৃত্রিম আলোই ভরপুর। জারা ছাদে এসে দেখলো ছোট বড় সকলেই মোটামুটি আছে। মিউজিক চলছে ইশা স্টেজে উঠে নাচছে ইশার সাথে কাজিন আর ফেন্ডরাও নাচছে বড়রা উৎসাহ দিচ্ছে। ইশাকে আজ মিষ্টি দেখাচ্ছে হলুদ শাড়ি সাথে মেকাপ আর ফুলের গহনা। জারার দূরে ফাঁকা জায়গায় দাড়িয়ে দেখছে সবটা জারার হাসি পেলো এই পাগলী মেয়েটার জন্য সেদিন কাঁদছিল আজ কি সুন্দর নাচছে। জারা আজ সুতির কলাপাতা রংয়ের শাড়ি পড়ে আছে চুলগুলো বেনি করে ছেড়ে দেওয়া চোখে গোলফ্রেমের চশমা থাকায় চোখে কাজল দেওয়া সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
-‘ সেদিন ওভাবে না বলে চলে আসলি কেনো? আমাকে বলে আসতিস ‘
জারা চমকে পাশে ফিরে মুখের হাসি উড়ে গেলো। শানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সাথে সাথে সাবধানে শ্বাস নিলো। সুঠাম দেহে শানের সাদা পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে একেবারে অন্য রকম। জারা চোখ ফিরিয়ে মনে মনে বলল ‘ আপনি নামক মায়ায় আমি আর আটকাতে চাই না সব ছিন্ন করতে চাই আপনাকে মুক্তি দিতে চাই ‘
জারা মুখে ছোট করে বলল
-‘ এমনি শরীর খারাপ লাগছিল তাই ‘
-‘ ওহ তো আমাকে বলে আসলে কি হত? ‘
-‘ আপনি বিজি ছিলেন ডিস্টার্ব করে আপনার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করতে চাই নি ‘
-‘ এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো? ‘
-‘ আমি আবার কেমন ভাবে কথা বললাম সবার সাথে যেভাবে বলি আপনার সাথেও সেভাবেই বলছি ‘
-‘ সবাই আর আমি এক? ‘
-‘ অবশ্যই। আলাদা কিছু তো দেখতে পাই না ‘
শান কিছু বলতে যাবে তখনি সেদিনকের মেয়েটা ‘শান’ বলে ডেকে উঠল শান আর জারার চোখ মেয়েটার দিকে গেলো। মিউজিক বাজায় কেউ আর দূরে থাকায় মেয়েটার শান বলে ডাকাটা শান আর জারা ছাড়া কেউ দেখতে পেলো না। জারা দেখলো মেয়েটার শাড়ি পড়েছে যে কেউ দেখলেই এককথায় সুন্দরী বলে আক্ষায়ীত করবে। মেয়েটা প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় জারার শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করলো বুকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছোট করে বলল
-‘ আসছি ‘
আর দাঁড়ালো না একপ্রকার ছুটে চলে আসল। স্টেজে ইশা ক্লান্ত হয়ে বসে থাকা ওখানে গেলো। এখন রুমে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। ইশার পাশে বসে জুসের গ্লাস ধরিয়ে বলল
-‘ কি ক্লান্ত? ‘
-‘ হু এটারই দরকার ছিল ‘
জারা মলিন হাসলো। কিছুক্ষণ পর শান ঔ মেয়েটাকে নিয়ে ইশার কাছে আসলো। জারা উঠে চলে আসলো ‘মনি ডাকছে’ মিথ্যা বলে চলে আসলো। নিচে এসে শান্তির সাথে সাথে থাকলো এখন একা থাকলেই ওর কান্না পাবে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই ওর এভাবে কেঁদে কিছু পাওয়া যায় না।
—–
~ ইশার বিয়ে ~
ইশা সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে। সকলে এতো বুঝিয়েও ইশার কান্না থামাতে পারছে না। ইশা নিজের ইচ্ছেই থামছে আবার কেদে উঠছে। পার্লারের মেয়েরা মেকাপ করাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। শান এসব শুনে ওপরে আসলো
-‘ শুনলাম তুই না-কি কাঁদুনি বুড়ি হয়ে গেছিসছ ‘
ইশা কিছু বলল না শানকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক এমনই যতই ঝগড়াঝাটি করুক না কেনো মনেপ্রাণে ভালোবাসে দুজন দুজনকে। শানের চোখেও পানি চিকচিক করছে জারা দেখলো সেটা।
-‘ এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? হুম তুই কেঁদে মেকাপ নষ্ট করার কোনো মানে হয়? উল্টো সকলে তোর কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া পেত্নী মুখ দেখে হাসবে ‘
ইশাকে অনেক কথা বুঝিয়ে শান ইশাকে থামালো। ধীরে ধীরে ইশার বিয়ে হয়ে গেলো। কত কাদলো মেয়েটা। কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে বলেছিল
-‘ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবো না ‘
শানও কেঁদে ফেলছিল। একমাত্র বোনের বিদায়ে। ইশার সাথে জারাকে পাঠানো হলো।
—-
ইশাকে বাসায় এনে সব রিচুয়াল মেনেই ইশাকে রুমে নিয়ে গিয়ে চেজ্ঞ করালো। জারা এতো অচেনা মানুষের ভিরে আনকমফর্টেবল ফিল করছে। জিয়া এসে জারাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো জারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
চলবে ইনশাআল্লাহ