#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-১৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★খুশির চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দিনের স্মৃতি।
অতীত,
প্রহর খুশির প্রেমকাব্যের সময়কাল তখন প্রায় দেড় বছর। খুশি এখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে। যদিও পড়াশোনায় তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যতটুকু পড়ে সেটাও প্রহরের চাপে। খুশির মায়ের সাথে সাথে প্রহরও ওকে পড়ার জন্য সবসময় প্যারা দেয়। মায়ের হাত থেকে কোনরকমে ফাঁকি দিয়ে বাঁচতে পারলেও প্রহরের কাছ থেকে ফাঁকি দিতে পারে না।প্রহর সাফ জারি করে দিয়েছে। এবার খুশিকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।নাহলে দশ বছরের মাঝে বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। যেটা খুশির চরম বিরক্তিকর লাগে। মনে হয় কোন টিচারের সাথে প্রেম করছে।
দিনটা ছিলো শুক্রবার। ছুটির দিন হওয়ায় কলেজ বন্ধ। তাই খুশি সকাল সকাল প্রহরদের বাসায় চলে আসে প্রহর আর জিদান সাহেব কে সারপ্রাইজ দিতে। খুশি বাসায় ঢুকে দেখলো জিদান সাহেব কিচেনে কিছু একটা বানাচ্ছে। খুশি পেছন থেকে গিয়ে হাসিমুখে বললো।
–সারপ্রাইজ এসবি।
খুশিকে দেখে বরাবরের মতোই জিদান সাহেব প্রফুল্লিত হয়ে বললো।
–আরে খুশি মা যে,, হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। কেমন আছ তুমি?
–বিন্দাস এজ অলওয়েজ। তা কি করছেন আপনি? আপনার ছেলের এতবড় সাহস? শেষমেশ কিনা আপনাকে কাজের বুয়া বানিয়ে দিল? আরে কোথায় বিয়ে করে নিজের বৌকে দিয়ে আপনার সেবা করাবে। তানা করে আপনাকে খাটাচ্ছে? এই অবিচার মেনে নেওয়া যায় না। আমি এই ঘোর অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জিদান সাহেব স্মিথ হেঁসে বললেন।
–তোমার ইন্ডিকেট আমি বুঝতে পারছি খুশি মা। কিন্তু আমাকে এসব বলে কোন লাভ নেই। আই কান্ট হেল্প ইউ দিস টাইম। জনাব কঠোর আইন জারি করেছে। তোমার ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিয়ের কথা তোলা যাবে না।
খুশি হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে সিঙ্কের উপর উঠে বসে বললো।
–ধ্যাৎ এমন কেন আপনার ছেলেটা? আরে এতো সুন্দর একটা মেয়ে পেয়েছে। কোথায় ঝট করে এঙ্গেজমেন্ট, ফট করে বিয়ে আর চট বাচ্চা করে ফেলবে। তানা টিচারের মতো পড়াশোনা নিয়ে পড়ে আছে। হেতির মাঝে কি কোন আলোড়ন নেই নাকি?
জিদান সাহেব নিজের কাজ করতে করতে বললো।
–এখন যেমন আছে তো আছে। কি আর করতে পারি বলো? আমার কাছে তো আর অপশন নেই। তাই যা আছে তাই দিয়েই কাজ চালাতে হবে।
খুশি একটা গাজর হাতে নিয়ে গাজরে কামড় দিয়ে পা দোলাতে দোলাতে বললো।
–অপশন থেকে মনে পড়লো এসবি,, আপনি কখনো অন্য অপশনের ট্রাই করেন নি? আই মিন আপনি এতো হ্যান্ডসাম এন্ড কুল গায়। তো আপনি কোন আইটেমের সাথে ইটিস পিটিস করার চেষ্টা করেন নি? নাকি প্রহরের ভয়ে সাহস পাননি?
–আরে না। প্রহর তো আমাকে সবসময়ই বলে আমি চাইলে আমার জীবনে যে কাউকে আনতে পারি।
–তাহলে সমস্যা কোথায়? নাকি “ভালোবাসা জীবনে একবারই হয়” ওয়ালা কাহিনি চলছে? আন্টিকে ছাড়া আর কারোর প্রতি ফিলিং আসে না নাকি?
জিদান সাহেব স্মিথ হেঁসে বললেন।
–আরে না তেমন কিছু না। আবিদার সাথে আমার সম্পর্ক তেমন কোন মহান প্রেম কাহিনি টাইপের ছিলো না যে, জীবনে ওকে ভুলে অন্য কাওকে ভালোবাসতে পারবোনা এন অল দ্যাট। হ্যাঁ ভালোবাসতাম আমি ওকে।কলেজে একসাথে পড়া অবস্থায় ওই আমাকে প্রপোজ করে। দেখতে সুন্দরী ছিল তাই আমিও রাজি হয়ে যাই । কিন্তু আমিতো আর জানতাম না যে সে শুধু আমার টাকাকেই ভালবাসতো। আমাকে না। তাইতো আমাকে আর প্রহরকে রেখে সে তার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে যায়। হ্যাঁ ওর ওভাবে যাওয়ায় আঘাতও পেয়েছি অনেক। তবে ওর বিরহে দেবদাস হয়ে যাবো এই টাইপের কিছু না। আসলে আবিদা যাওয়ার পর আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি ছিলো প্রহরকে সামলানো। প্রহর অনেক ছোট ছিল। ওর মা চলে যাওয়ায় ওর ছোট্ট মনে অনেক আঘাত পেয়েছিল। যদিও সে আঘাতের ক্ষত এখনো ওর মনে আছে। তবে ওইসময় ওকে সামলানো অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তাই আমার প্রায়োরিটি ছিল শুধু ওকে স্বাভাবিক করা। আর ওকে সামলাতে সামলাতেই অনেক টা বছর কেটে যায়। তারপর ও বড়ো হয়ে যায়। নিজেকে নিজেই সামলাতে শিখে। আর আমি হয়ে যাই বুড়ো। আর এই বুড়ো বয়সে কি আর ইটিস পিটিস করবো?
–আরে কি বলছেন এসবি? বুড়ো আর আপনি? আরে আপনার সামনে তো প্রহর চা কম পানি। আপনাকে তো এখনো হেব্বি ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম লাগে। এজ ইস জাস্ট এ নাম্বার। আপনি শুধু একবার মাঠে নামুন। দেখবেন ক্যান্ডিডেটের লাইন লেগে যাবে।
–একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
–মোটেও না। আমি একদম খাটি কথা বলছি। বায়দা ওয়ে আপনার জন্য পারফেক্ট একটা ক্যান্ডিডেট আমার কাছে আছে।
জিদান সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন।
–কে??
–আমার ওয়ান এন্ড অনলি কিউটি ফুপি। এখনো সিঙ্গেল আছে। আপনি চাইলে আপনাদের ডেট ফিক্স করে দিতে পারি।
–আর ইউ সিরিয়াস?
–অফকোর্স। আসলে বেচারি কলেজ লাইফে কাউকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু সে অন্য কাওকে ভালোবাসতো। তাই ফুপি আর কখনো বিয়ে করেনি। তবে আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন। কারণ আপনারা দুজনই দুজনার ভালোবাসার ব্যাক্তির কাছ থেকে আশাহত হয়েছেন। তাই আপনাদের মনোভাবও মিলবে ভালো। ব্যাপার টা জমে যেতে পারে।
জিদান সাহেব হালকা হেঁসে বললেন।
–হ্যাঁ ট্রাই তো করাই যায়। বিয়ানের সাথে প্রেম, ব্যাপার টা খারাপ না।
খুশি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–ওকে দেন। আমি সময় সুযোগ বুঝে আপনাদের ডেট ফিক্স করে দিবো। ওকে?
–ডান।
–আচ্ছা তাহলে ওই কথাই রইলো। বায়দা ওয়ে আপনার গুনধর ছেলেটা কোথায়? দেখছি না যে জনাব কে।
–প্রহর ঘুম থেকে ওঠেনি এখনো। আসলে কাল অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কোন প্রজেক্টের কাজ করছিল। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। তাই আজ একটু বেলা করে ঘুমাচ্ছে। তুমি গিয়ে বরং দেখে আসো উঠেছে কিনা।
–ওকে আমি দেখে আসছি।
খুশি সিঙ্ক থেকে নেমে এগিয়ে গেল প্রহরের রুমের দিকে। রুমের দরজা আস্তে করে খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো প্রহর এখনো ঘুমিয়ে আছে। খুশি আস্তে করে পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলো। প্রহর খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। খুশি সেটা দেখে মনে মনে বললো, বাহ আমার সামনে তো দুনিয়ার যতো কাপড়চোপড়ের পরদে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। আর এখানে কি সুন্দর খালি গায়ে শুয়ে আছে। যেন ঘুমের মাঝে অপ্সরিরা এসে উনার সৌন্দর্য উপভোগ করবে।
দুষ্টু খুশির মাথায় আবারও দুষ্টু বুদ্ধিরা কিলবিল করছে। খুশি প্রহরের পাশে বেডের ওপর উঠে বসে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রহরের পিঠের মাঝ বরাবর কুটুস করে একটা কামড় বসিয়ে দিল। ঘুম ভেঙে গেল প্রহরের। কপাল কুঁচকে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে ঘুরে চিত হয়ে শুলো সে।চোখ খুলে খুশিকে দেখে কোন রকম প্রতিক্রিয়া প্রদান করার পূর্বেই খুশি হঠাৎ প্রহরের পেটের ওপর চড়ে বসলো। নিজের দুই হাত প্রহরের দুই হাতের মাঝে ঢুকিয়ে বিছানার চেপে ধরলো। তারপর ভিলেনি হাসি দিয়ে বললো।
–মুহ হা হা হা…. আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া?
প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কালিয়া?? হু ইজ কালিয়া??
প্রহরের কথার জবাব না দিয়ে খুশি একই ভঙ্গিতে বলতে লাগলো।
–এখন কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে তোমাকে? আজতো নুন মরিচ ছাড়াই তোমাকে কাচা খেয়ে ফেলবো।
প্রহর নিচের ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। তারপর খুশির মতোই নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো।
–নেহিইই,,দয়া করে এমন করবেন না। আপনার ঘরে কি বাপ ভাই নেই?
খুশি বাঁকা হেসে বললো।
–বাপ ভাই তো আছে । কিন্তু তোমার মতো হট চকলেট তো নেই ডার্লিং।
প্রহর এবার ফট করে খুশিকে বিছানায় ফেলে দিয়ে কাতুকুতু দিতে দিতে বললো।
–তাই না?? তাই?
আর খুশি শুধু মোচড়ামুচড়ি করতে করতে খিলখিল করে হেঁসে যাচ্ছে। এক পর্যায় প্রহর থেমে গেল। খুশির কপালের চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে আলতো করে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিলো। ললাটে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–সকাল সকাল এই হাসিমুখটা দেখানোর জন্য ধন্যবাদ। সারপ্রাইজ টা সত্যিই সুন্দর ছিল।
খুশি প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–তুমি চাইলে রোজ সকালেই এই দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করতে পারো।
খুশির কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে প্রহর বলে উঠলো।
–এসব ট্রিকস করে কোন লাভ নেই দুষ্টুপরি। ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে বিয়ের কথা ভুলে যাও। এখন বলো কখন এসেছ?
–এইতো মিনিট বিশেক হবে।
–আচ্ছা তুমি থাক। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–আমিও যাই তোমার সাথে? তোমাকে ফ্রেশ হতে হেল্প করবো।
প্রহরের স্বাভাবিক সুরে বললো।
–ঠিক আছে চলো। আমি পটি করবো। তুমি পরিস্কার করে দিও কেমন?
খুশি প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বললো।
–ইয়াক ছিহ্।
–কেন? ছি এর কি হলো? আমাকে না ফ্রেশ হতে হেল্প করবে?তাহলে চলো এখন আমার সাথে।
–একদম না। পঁচা একটা। রোমান্টিক মুডের করল্লার জুস করে দেয় একদম। যাও আমি আর আসবোই না তোমার কাছে।
কথাটা বলে খুশি ভেংচি কেটে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল। প্রহর সেদিকে তাকিয়ে থেকে হাসলো খানিক। তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে নিচে সিড়ি বেয়ে আসতেই আরেক ক্রিয়াকার্যের সম্মুখীন হলো প্রহর। দ্যা গ্রেট খুশি রাণী মিউজিক প্লেয়ারে ফুল বলিউমে গান ছেড়েছে।
♬ তেরে না দিয়া ধুমা পে গাইয়া
♬ তু চান্দিগাঢ় তো আই নি
♬ তেনু দেখ কে হোকে সারদে নিখার দে
♬ চোখা বিচ সিপাহি নি
♬ থুডি তে কালা তিল কুড়িয়ে,থুডিতে কালা তিল কুড়িয়ে
♬ যো ধাগ এ চান্দ দে টুকরে তে
♬ তেনু কালা চাশমা,তেনু কালা চাশমা
♬ তেনু কালা চাশমা জাছদা হে
♬ জাছদা হে গোরে মুখরে পে
♬ তেনু কালা চাশমা জাছদা হে,
♬ জাছদা হে গোরে মুখরে পে
গানের তালে খুশি আর জিদান সাহেব দুজনেই কালো চশমা পরে সমান তালে নেচে যাচ্ছে। যেনো দুজন স্কুল কলেজের ফ্রেন্ডস। এদের কান্ডকারখানা দেখে যতটা অবাক হওয়া দরকার ততটা অবাক হলোনা প্রহর। কারণ এসবে সে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। খুশির আবার জিদান সাহেবের সাথে খুব ভাব। দুজন প্রায়ই এসব মহান কৃতকার্য করে থাকেন। মাঝে মাঝে তো প্রহরের নিজেরই এদের কাছে ভিন্নগ্রহের প্রাণী মনে হয়। যেনো তার কোন অস্তিত্বই নেই এখানে। তবে প্রহর এতে নারাজ না। বরং মনে মনে আরও আনন্দিত। খুশি ওর জীবনে আসায় ওর বাবাও আজকাল অনেক প্রফুল্ল থাকে। খুশি যেদিনই বাসায় আসে দুজন হাসি আনন্দে মেতে থাকে। আর বাবাকে হাসিখুশি দেখে প্রহরের মনটাও ভরে ওঠে। আর খুশির প্রতি ওর ভালোবাসার তীব্রতা তখন আরও সুগভীর হয়ে যায়।
প্রহর মাথা নেড়ে মুচকি হেসে ফ্রীজের দিকে এগিয়ে গেল। পানির বোতল বের করে পানি খেতে খেতে কিচেনের দিকে যেতে লাগলো। হঠাৎ দুম করে কিছু পড়ার শব্দে কদম থেমে গেল প্রহরের। পিছনে ঘুরে তাকালো সে। চোখের সামনে যা দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা প্রহর। ফ্লোরে খুশিকে পড়ে থাকতে দেখে প্রহরের পৃথিবী মুহূর্তেই থমকে গেল। হাতের বোতল ঠাস করে পড়ে গেল নিচে। মাথার ভেতর কেমন শূন্য হয়ে গেল। স্থগিত হৃদপিন্ড নিয়ে প্রহর কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগুলো।
জিদান সাহেব খুশির শিয়রে বসে চিন্তিত সুরে বারবার খুশিকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু খুশির কোন রেসপন্স আসছে না। জিদান সাহেব প্রহরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললেন।
–দেখনা প্রহর কি হলো মেয়েটার? নাচতে নাচতে হঠাৎ করেই পড়ে গেল। কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
প্রহর ঢোক গিলে জোরপূর্বক হেসে বললো।
–আ আরে বাবা তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? আমি জানি ও নিশ্চয় মজা করছে। তুমিতো জানোই ও কতটা দুষ্টু। এখনও দুষ্টুমি করছে। এখুনি দেখবে ফট করে উঠে পড়বে।
প্রহর খুশির পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কম্পিতো সুরে বললো।
–এ এই দুষ্টুপরি দেখ আমি জানি তুমি নাটক করছ। তাই আর এসব করে কোন লাভ নেই। জলদি উঠে পড়ো। নাহলে কিন্তু আমি অনেক বকা দেবো। উঠে পড়ো বলছি।
খুশির কোন রেসপন্স না দেখে প্রহরের অন্তর্দেশ কেঁপে উঠছে। হৃদস্পন্দন থমকে যাচ্ছে। ভয়ে অন্তর শুঁকিয়ে আসছে ওর। খুশির কিছু সত্যিই হয়েছে সেটা মেনে নিতে পারছে না ও। প্রহর খুশির গালে আলতো চাপড় মেরে থমকিত হৃদয়ে বললো।
–এ এই খুশি। দেখ ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম।ইটস টু মাচ নাও। বন্ধ করো এসব। ফটাফট উঠে পড়ো। এবার কিন্তু আমি সত্যিই মার দিবো বলে দিলাম।
জিদান সাহেব বলে উঠলেন।
–প্রহর আমার মনে হয় না ও অভিনয় করছে। খুশি বোধহয় সত্যিই অজ্ঞান হয়ে গেছে।
প্রহরের সব শূন্য হয়ে যাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে ওর। প্রহর দুই হাতে খুশির মাথাটা তুলে ধরে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
–এ এই দুষ্টুপরি অনেক হয়েছে না। দেখ আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেছি। অনেক ভয় পেয়ে গেছি। এবার তো ওঠ প্লিজ। চোখ খুলে তাকাও। কথা বলোনা আমার সাথে।
খুশির তবুও রেসপন্স নেই। প্রহরের নিঃশ্বাস আটকে আসছে। প্রহর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–ব বাবা ও কথা বলছে না কেন? কেন কথা বলছে না? ও ওকে বলোনা কথা বলতে। বলোনা প্লিজ।
প্রহরের এই অবস্থা দেখে জিদান সাহেব আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলেন। প্রহরকে এর আগে কখনো এই রুপে দেখেন নি। জিদান সাহেব প্রহরের কাঁধে হাত রেখে বললেন।
–প্রহর নিজেকে সামলা বাবা। খুশি মার কিছু হবে না। তুই ওকে রুমে নিয়ে যা। আমি এখুনি ডক্টর কে ফোন করছি।
বাবার কথামতো প্রহর খুশিকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এসে বেডের ওপর শুইয়ে দিলো। খুশির হাত পায়ের তালু ঘষতে ঘষতে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
–খুশি, কলিজাটা আমার। ওঠনা প্লিজ। তোমাকে এভাবে দেখতে পারছিনা আমি। আই জাস্ট কান্ট। ইট কিলস মি।। প্লিজ ওঠনা সোনা। আই বেগ অফ ইউ।
কিছুক্ষণ পরেই ডক্টর চলে এলো। খুশিকে চেক আপ করা হলে প্রহর অধৈর্য হয়ে বললো।
–ডক্টর আঙ্কেল। কি হয়েছে ওর? কথা বলছে না কেন? হঠাৎ করে এমন অজ্ঞান হয়ে গেল কেন?
ডক্টর বলে উঠলেন।
–দেখ এমনিতে তো তেমন গুরুতর কিছু বোঝা যাচ্ছে না। বিপি একটু লো আছে। হয়তো খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেনি। তাই বিপি লো হয়ে এমন হয়েছে। আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি আবারও এমন কিছু হয়। তাহলে হসপিটালে গিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে নিও। শুধু নিশ্চিত থাকার জন্য।
চেক আপ শেষে ডক্টর চলে গেল। প্রহর তখন থেকেই খুশির হাত ধরে বসে আছে।একটু আগেও কি সুন্দর নিজের উদ্দীপনায় বাসাটা মাতিয়ে রেখেছিল।আর এখন হাসিখুশি মেয়েটাকে এভাবে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতে দেখে প্রহরের কলিজা পুড়ে যাচ্ছে। সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।
জিদান সাহেব প্রহরের মাথায় হাত বুলিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলেন। সবসময় সব সিচুয়েশনে কঠোর শক্ত থাকা প্রহরকে আজ এমন ভেঙে পড়তে দেখে জিদান সাহেবও চিন্তায় পড়ে গেলেন। আল্লাহ না করুক মেয়েটার কখনো কিছু হলে তার ছেলে যে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে সেটা আজ খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন তিনি।কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালোনা। বাচ বিধাতার কাছে একটাই চাওয়া তার ছেলেটাকে যেন আবার কোন আঘাত না পেতে হয়।
মিনিট দশেক পর খুশির জ্ঞান ফিরলো। খুশিকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে প্রহরের থমকে থাকা হৃৎস্পন্দনে নিঃশ্বাসের সঞ্চালন হলো। অশ্রুসজল চোখে অতি আকাঙ্ক্ষিত কোন কিছু প্রাপ্তির খুশি ভেসে উঠলো। প্রহর স্বস্তির হাসি দিয়ে দুই হাতে খুশির মুখটা আগলে ধরে বললো।
–থ্যাংক গড,থ্যাংক গড, থ্যাংক গড। আমার খুশি মনির জ্ঞান ফিরে এসেছে। তুমি ঠিক আছতো খুশি?
খুশি কতক্ষণ এলোমেলো চোখে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। তারপর হঠাৎ বলে উঠলো।
–খুশি? কে খুশি? আর আপনি কে? আমি কে? কোথায় আমি?
প্রহরও আবারও আৎকে উঠলো। অস্থির কন্ঠে বললো।
–খু খুশি কি বলছ এসব? কি হয়েছে তোমার? আমাকে চিনতে পারছোনা?
খুশি হঠাৎ ফিক করে হেঁসে দিয়ে বললো।
–উল্লু বানায়া, বরা মাজা আয়া। লুক এট ইউর ফেস।
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো প্রহরের। নিজের ক্রোধ এবার কন্ট্রোল করতে পারলোনা। যার ফলস্বরূপ প্রহর খুশির গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বলতে লাগলো।
–মজা চলছে এখানে হ্যাঁ? সবকিছু তোমার কাছে শুধু মজার বিষয় তাইনা? এখানে আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে আর তোমার মজা লাগছে? তোমার আন্দাজা আছে এই এতটুকু সময়ের মাঝে আমার ওপর দিয়ে কি বয়ে গেছে? তোমাকে ওভাবে নিস্তেজ পড়ে থাকতে দেখে আমি কতবার মরেছি তার হিসেব আছে তোমার? হাউ কুড ইউ ডু দিস টু মি?
খুশি মাথা নিচু করে ঠোঁট উল্টিয়ে অপরাধী সুরে বললো।
–সরি,,
প্রহর এবার খুশিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।যেন বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে পারলে শান্তি হবে। বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আবেগী কন্ঠে বললো।
–আর কখনো এমন করোনা দুষ্টুপরি। আই কান্ট টলারেট। তোমাকে না কতবার বলেছি খাবারে অনিয়ম করবে না? কেন শোন না আমার কথা? নিশ্চয় তুমি সকালে খেয়ে আসোনি তাইনা? তাইতো এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছ। প্লিজ আমার কথাটা একটু মেনে চলো। তোমার কিছু হয়ে গেলে যে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাবো। আমাকে এমন মৃত্যু যন্ত্রণা কখনো দিওনা প্লিজ।
প্রহরের জড়িয়ে ধরায় খুশি প্রহরের হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। যা এখন অস্বাভাবিক গতিতে চলছে। আর প্রহরের শরীরের কম্পনও অনুভব করতে পারছে খুশি। জ্ঞান ফিরে প্রহরের চেহারার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেই খুশি ঘাবড়ে গিয়েছিল। তাইতো প্রহরের মাইন্ড ডিসট্রাক্ট করার জন্য ওমন মজা করেছিল। কিন্তু প্রহরের এই অবস্থা দেখে খুশি রিতীমত ভয় পেয়ে গেল। এতো ভালোবাসা যে ভালো না।প্রহরের এতো ভালোবাসায় আবার নজর লেগে যাবে নাতো? আল্লাহ না করুক কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে প্রহর সইতে পারবে তো?
#অন্তঃকরণে_তোরই-পদচারণ
#পর্ব-২০
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★বর্তমান,
ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো খুশি। সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারে না খুশি। শুধু অতটুকু অসুস্থ হওয়াতেই প্রহরের ওই অবস্থা হয়েছিল। যখন সে জানতে পারবে তার দুষ্টুপরি এই পৃথিবীতে আর মাত্র কয়দিনের মেহমান, তখন প্রহরের কি হবে তার কল্পনা করতেই খুশির রুহ কেঁপে উঠছে। না সে পারবে না। পারবে না প্রহরকে সারাজীবনের গ্লানির বোঝা কাঁধে তুলে দিতে। আমার কিছু হয়ে গেলে যে আমার প্রহর জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। আর আমি সেটা কিছুতেই হতে দিবো না। তারচেয়ে বরং প্রহর আমাকে ঘৃণা করুক। চরম ঘৃণা। তবেই সে আমাকে ভুলে জীবনে সামনে এগুতে পারবে। আর প্রহরের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য যা কিছু আবশ্যক আমি সবই করবো।
সকালের রোদ জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে খুশির চোখেমুখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। ক্লান্ত ফোলা আঁখি যুগল দয়াদ্র্রচিত্তে মেলে তাকালো। নিজেকে ফ্লোরে আবিস্কার করলো সে। রাতে হয়তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আজকাল আর এসব সুবিধা অসুবিধার মাঝে তেমন পার্থক্যের আভাস পায় না খুশি। বেঁচে থাকাটায় যেখানে নিতান্তই অর্থহীন বোঝতুল্য হয়ে গেছে। সেখানে এসব ভালো মন্দ আর অনুভব হয় না।খাটে ভর দিয়ে দূর্বল শরীটাকে টেনে তুললো খুশি। মৃদুপায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো। জানালার বাইরে তাকালে যতদূর চোখের নজর যায় শুধুই সীমাহীন অথই সমুদ্র। নীল সাগরের রঙটাও তার মতোই গভীর। নাজানি এই বিশাল সমুদ্র হাজার বছরের কতো রহস্য লুকিয়ে রেখেছে নিজের গভীরতায়। তবুও কেমন রাজকীয় ভঙ্গিতে নিজের সৌন্দর্যে সবাইকে ভুলিয়ে রেখেছে।
আমি কেন পারিনা ওর মতো? কেন প্রহরকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারি না?ওকে যতো দূরে সরাতে চাচ্ছি,ও ততোই আমার কাছে চলে আসছে? এতো কঠিন কেন সবকিছু? আমাদের সাথে এমনটা নাহলে কি খুব ক্ষতি হতো? এমনটা হয়েছেই যখন তাহলে শুধু আমার সাথেই কেন হলোনা? আমার প্রহর কেন এতো কষ্ট পাচ্ছে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে ইচ্ছেকৃত ভাবে কষ্ট দেওয়ার মতো কঠিন কাজ বুঝি দুনিয়াতে আর কিছু নেই। আমার অসুস্থতার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় প্রহরের জন্য। ওকি কখনো স্বাভাবিক হতে পারবে? প্রথমেই একবার ওর মায়ের কারণে অনেক আঘাত পেয়েছে প্রহর। আর আমি ওকে আবারও সেই আঘাতে আহত করছি। কিন্তু আমি কি করবো? এছাড়া যে আমার কাছে আর উপায় নেই। এ কারণেই আমি ওর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সময়ের সাথে নিজেকে সামলে নিবে ও। নিজের জীবনে সামনে অগ্রসর হবে। কিন্তু প্রহর তো এখনো নিজেকে সামলাতে সক্ষম হয়নি।ওতো এখনো সেই আগের জায়গায়ই থমকে আছে। যেখানে আমি ওকে রেখে এসেছিলাম। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে সেই দূর্বিষহ দিনটার কথা। যে দিনটা ওর জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিন। যেদিন ওর পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। প্রহর খুশির প্রেমকাব্যের সমাপ্তি ঘটেছিল যেদিন। জীবনে এমন একটা দিন আসবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি ওরা।
অতীত,
ওদের প্রেমকাব্যের ভেলা তখন দুই বসন্ত পার করেছে। খুশির ফাইনাল এক্সামও শেষ হয়ে গেছে। খুশি যেন এখন মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাচ্ছে। ফাইনালি ও পড়াশোনা নামক পিঞ্জর থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা। প্রহর বলেছিল রেজাল্ট ভালো হলে তবেই সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তাইতো বেচারি খুশি কোমড় কষে পোড়াশোনায় নেমেছিল। প্রহরকে বিয়ে করতে হলে যে ওকে এই অভিযানে সফল হতে হবে। আর এক্সামও ইনশাআল্লাহ ভালোই গেছে।এখন বাচ শুধু শানাই বাজানোর অপেক্ষা। কবে সে প্রহরের সত্যি কারের বঁধু হবে সেই অপেক্ষা।
তবে খুশি কি জানতো তার সেই অপেক্ষার অবসান কখনোই ঘটবে না। কালবৈশাখী ঝড় এসে ওর স্বপ্নের পৃথিবী তছনছ করে দিয়ে যাবে।
প্রহরদের বাসায় সেদিন জ্ঞান হারানোর পর প্রায় মাস চারেক আর কিছু হয়নি। প্রহর অনেক চাপাচাপি করেছিল ডক্টরের কাছে গিয়ে প্রপার চেকআপ করানোর জন্য। কিন্তু খুশি কিছুতেই রাজি না। তার ভাষ্যমতে সেতো একদম বিন্দাস আছে। তাহলে শুধু শুধু কেন ডক্টরের কাছে সুই খেতে যাবে। না সে মোটেও যাবে না। যেহেতু খুশি আর অসুস্থ হয়নি তাই প্রহরও ওর জিদের সামনে হার মেনে যায়। তবে চারমাস পর খুশি নিজের বাসায় আবারও একদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বাসার সবাই ভাবে হয়তো খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের কারণে এমন হয়েছে। তাই তেমন একটা চিন্তা করেনা ওরা। আর খুশিও প্রহরকে কিছু বলে না। নাহলে ও আবার অযথা টেনশন করবে ভেবে।
খুশির এক্সাম শেষে প্রহর একটা বিজনেসের কাজে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যায়। সেই দরুন খুশি আরও দুই তিন বার ওভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারে না। মাঝে মধ্যে বমি করে ফেলে। এবার খুশির মা বাবা প্রচুর ঘাবড়ে যায়। তারা আর দেরি না করে খুশিকে ভালো ডক্টরের কাছে নিয়ে যান। ডক্টর খুশির কিছু করতে দেন। এবং টেস্টের রিপোর্টে ধরা পড়ে খুশির ব্রেইন টিউমার হয়েছে।আর টিউমার টা ব্রেইনের একেবারে সেনসিটিভ জায়গায় হয়েছে। যার অপারেশনও অনেক রিস্কি। বাঁচার চাঞ্চ মাত্র টেন পার্সেন্ট। খুশির সাজানো পৃথিবী ওখানেই থমকে যায়। ওর পরিবারও একেবারে ভেঙে পড়ে। আদরের মেয়ের এমন মরণঘাতী রোগের কথা শুনে তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায়।
তবে খুশির নিজের চাইতে বেশি প্রহরের চিন্তা হয়। প্রহর কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারবেনা। আমার কিছু হয়ে গেলে ও জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। না না ওকে আমার কথা জানতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না। খুশি তখন মনে মনে একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। খুশি ওর পরিবারকে প্রহরের কথা সব খুলে বলে। এবং সাথে এও বলে যে, সে প্রহরের জীবন থেকে অনেক দূরে যেতে চায়। সে আর এই শহরে থাকবে না। অনেক দূরে কোথাও চলে যাবে। ওর মা বাবা প্রথমে মানতে চান না। তবে খুশি জেদ ধরে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে বসে থাকে। অসুস্থ খুশি আরও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অগত্যা সবাই ওর কথা মেনে নেয়। ওরা সবাই ওদের নানির বাড়ির গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে খুশি যাওয়ার আগে একবার শেষ বারের মতো প্রহরের সাথে দেখা করে যেতে চায়।
অতঃপর প্রহর বিজনেসের কাজ শেষ করে দেশে ফিরে আসে। রাত দুটোর দিকে নিজের বাসায় এসে পৌঁছায় প্রহর। সকাল হতেই খুশির এসএমএস আসে। খুশি ওর সাথে ফার্মহাউসে দেখা করার কথা বলেছে। প্রহরও ফটাফট রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে। দুষ্টুপরি টাকে যে অনেক মিস করেছে সে। আজ সারাদিন শুধু পরিটাকে দেখবে সে। খুব শীঘ্রই খুশিকে নিজের ঘরে বউ করে আনবে। এখন যে ওকে ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই প্রহর হাসিমুখে গাড়ি চালিয়ে ফার্মহাউসে পৌঁছায়। খুশি আজ ওকে পিক করতে নিষেধ করেছে। ও নাকি আগেই চলে এসেছে। তাই প্রহরও সোজা ফার্মহাউসেই চলে আসে।
গাড়ি থামিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর চলে যায়। খুশিকে দেখার জন্য মন উতলা হয়ে উঠেছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই সেই প্রিয় মুখটার দর্শন হলো। প্রিয়তমার দর্শন মাত্র প্রশান্তির দমকা হাওয়া বয়ে গেল প্রহরের শরীর মন জুড়ে। যেন কতজনমের পর এই মুখটার দর্শন পাচ্ছে ও।
প্রহরকে দেখে খুশির বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো।কেঁপে উঠলো অন্তর। আবেগের ঘনঘটায় মিয়িয়ে গেল সে। বাঁধ ভেঙে উপচে পড়লো চোখের নোনাজল। কাঁপা কাঁপা কদম বাড়ালো প্রহরের দিকে। প্রহর হাসিমুখে দুই হাত প্রসারিত করে প্রিয়তমাকে নিজের বাহু বন্ধনে সাদর আহ্বান জানালো। খুশিও আহবানে সারা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো প্রহরের বুকে।দুই হাতে শক্ত করে প্রহরের গলা পেচিয়ে ধরে কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। প্রহরও দুই হাতে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে খুশিকে উঁচু করে ধরে গোল গোল ঘুরাতে লাগলো। ঘুরাতে ঘুরাতে বলতে লাগলো।
–আই মিস ইউ,আই মিস ইউ, আই মিস ইউ সোওও মাচ।
খুশিকে নিচে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
–এই পাগলী কাঁদছ কেন? এই দেখ আমি এসে গেছিতো। আর দূরে যাবোনা। আমার দুষ্টুপরিকে ছেড়ে আর কোথাও যাবোনা আমি।
খুশি শুধু অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। এখন ও কিভাবে বলবে যে, এবার যে খুশি নিজেই দূরে চলে যাবে। তাও সারাজীবনের জন্য। এমনটা কেন হলো ওর সাথে? ও কিভাবে থাকবে প্রহরকে ছেড়ে? প্রহর কি পারবে ওকে ভুলে যেতে? খুশিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রহর বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছনা কেন? আমার ননস্টপ টেপরেকর্ডার দেখছি একদম চুপচাপ হয়ে গেছে।আমার বিরহে এই অবস্থা হয়েছে নাকি? খুব মিস করেছ বুঝি আমাকে?
খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–কই নাতো? আমিতো শুধু এই হট বডিটাকে মিস করছিলাম।
প্রহর হেঁসে দিয়ে বললো।
–আচ্ছা তাই? আমার কামনার দেবি।
প্রহর খুশিকে কোলে তুলে নিয়ে সোফায় এসে বসলো। খুশি শুধু প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে অপলক দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়েই আছে।যেন কত জনমের দেখা একবারে দেখে নিচ্ছে ও।প্রহরের চেহরাটাকে নিজের ভেতর সামিয়ে নিচ্ছে খুশি। খুশির আজকের চাহুনি কেমন অন্যরকম লাগছে প্রহরের কাছে।ও ভাবলো হয়তো কতদিন পর দেখছে তাই এমন করছে। প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–তুমি ঠিক আছ তো খুশি? তোমাকে কেমন অন্যমনস্ক লাগছে। মুখটাও কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। শরীর ঠিক আছে তো?
চমকে গেল খুশি। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–আ আমার আবার কি হবে? আমি একদম ঠিক আছি।
–ঠিক বলছ তো? দেখ সত্যি করে বলো। আমার এ্যাপসেন্সে খাবারের অনিয়ম করোনি তো? সকালে নাস্তা করে এসেছ? আই ডোন্ট থিংক সো। তুমি বসো আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।
কথাটা বলে প্রহর উঠতে নিলেই খুশি আটকে দিয়ে বললো।
–না না উঠবে না প্লিজ। এখানেই থাকোনা আমার কাছে। দূরে যেওনা প্লিজ।
প্রহর একটু অবাক সুরে বললো।
–হেই পাগলী কি হয়েছে? এভাবে বলছ কেন? আমিতো শুধু কিচেনে যাচ্ছি। পাঁচ মিনিটের ভেতরেই চলে আসবো
–না না দরকার নেই। কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমি এখন কিছুই খাবোনা। আমি শুধু তোমাকে দেখতে চাই আর কিছুনা। তুমি শুধু আমার চোখের সামনে বসে থাকো প্লিজ।
খুশির বিহেভিয়ার এবার প্রহরকে ভাবাতে বাধ্য করছে। অকারণেই বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু করছে। প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–দুষ্টুপরি, কিছু হয়েছে? তুমি হঠাৎ এভাবে কথা বলছ কেন? দেখ আমার কেন যেন ভয় হচ্ছে। তুমি ঠিক আছ তো?
খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–কি আবার হবে? এখন কি তোমাকে মন ভরে একটু দেখতেও পারবোনা? ঠিক আছে যাও। যেখানে খুশি যাও। আমিও চলে যাচ্ছি।
কথাটা বলে খুশি অভিমান করে উঠে যেতে নেয়। প্রহর তখন আটকে দিয়ে বললো।
–আচ্ছা ওকে ওকে, আমি যাচ্ছি না কোথাও। আমি এখানেই আছি তোমার পাশে।
প্রহর খুশির কপালে চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো। বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু করছে ওর। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কোন কিছু কি হতে চলেছে?
খুশি প্রহরের বুক থেকে মুখ তুলে আবারও প্রহরের মুখের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। প্রহরের গালে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো।
–কিস মি না।
আচমকা খুশির এমন আবদারে প্রহর আবারও একটু অবাক হলো। খুশি আগে কখনো এভাবে বলেনি। আগে যা বলতো শুধু মজার ছলে বলতো। কিন্তু আজ কেমন অন্যরকম শোনাচ্ছে ওর কথা। প্রহর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো খুশির দিকে। খুশি আবারও অনুরোধের সুরে।
–প্লিজ,, শুধু একবার।এবারই শেষ। আর কখনো চাইবোনা।
প্রহরের হৃদপিণ্ড হঠাৎ কেঁপে উঠল। প্রহর একটু রাগী কন্ঠে বললো।
–খুশিইই,,,হোয়াট ডু ইউ মিন বাই এবারই শেষ? কি বলতে চাইছ তুমি হ্যাঁ? কি হয়েছে তোমার?
খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–আরে আমি বলতে চাইছি খুব শীঘ্রই তো আমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ হয়ে যাবো। তাই গার্লফ্রেন্ড হিসেবে তো এবারই শেষ তাইনা? সো প্লিজ কিস মি।
কথাটা বলে খুশি চোখ বন্ধ করে মুখ উঁচু করে প্রহরকে আহ্বান জানালো। প্রহরও প্রিয়তমার আবদার পুরনে অধর যুগল মিলিয়ে নিল।
চুম্বন ক্রিয়া শেষে খুশি আবারও প্রহরের বুকে মাথা রাখলো। কিছুক্ষণ ওভাবেই চুপ করে থাকলো। তারপর হঠাৎ বলে উঠলো।
–আচ্ছা ধরো যদি কখনো আমার কিছু হয়ে যায়। আর আমি যদি অনেক দূরে চলে যাই। তুমি প্লিজ ভেঙে পরোনা। নিজেকে এমনই শক্ত রেখো কেমন।
প্রহর খুশিকে বুকে জড়িয়ে আবেশে চোখ বুজে ছিল। কিন্তু খুশির এই কথায় ঠাস করে চোখ খুলে তাকালো সে। ফট করে খুশিকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললো।
–বুঝতে পেরেছি আমি। তুমি ইচ্ছে করে এসব করছ তাইনা? আমি তোমাকে ছেড়ে এতদিন দূরে ছিলাম তার শাস্তি দিতে চাইছ তাইতো? তাই এসব জঘন্য কথা বলে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করতে চাইছ। ফাইন। করো তুমি যা ইচ্ছে হয়।
কথাটা বলে প্রহর সামনের টি টেবিলে একটা লাথি মেরে দিয়ে হনহন করে বাইরে চলে গেল। খুশি ওভাবেই বসে রইলো। লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের কান্না আটকানোর যথাযথ চেষ্টা করছে। শুধু বলাতেই প্রহর এমন করছে। নাজানি আমার যাওয়ার পরে ওর কি অবস্থা হবে। আল্লাহর কাছে শুধু একটাই চাওয়া, প্রহর যেন নিজেকে সামলে নিতে পারে।
খুশি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। প্রহরের কাছে যাওয়ার জন্য কদম বাড়াতেই হঠাৎ প্রহর বাইরে থেকে দ্রুত বেগে এসে খুশিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সারামুখে পাগলের মতো চুমু খেয়ে আবারও বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে আবেগপ্রবণ কন্ঠে বললো।
–অ্যাম সরি না সোনা। আর কখনো যাবো নাতো তোমাকে ছেড়ে। তবুও প্লিজ এসব কথা আর কখনো বলোনা। আই জাস্ট কান্ট হ্যান্ডেল ইট।
প্রহরের আড়ালে চোখের পানি মুছে নিজেও প্রহরের বুকে নিজেকে সামিয়ে নিলো। আজকের পর হয়তো এই শান্তির জায়গা আর নসিব হবে না।
সারাদিন প্রহরের সাথে সময় কাটিয়ে অবশেষে ফেরার সময় এলো। খুশির ভেতরে সবকিছু যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে সময়টাকে থামিয়ে দিতে। তবে তা যে সম্ভব না। তাইতো প্রহরকে ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছে। গাড়ি চালাচ্ছে প্রহর খুশির বাসার উদ্দেশ্যে। খুশি প্রহরের দিকে ঘুরে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে একধ্যানে তাকিয়ে আছে শুধু প্রহরের পানে। প্রহর সেটা দেখে মুচকি হেসে বললো।
–এই পাগলী এভাবে কি দেখছ? এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো এক্সিডেন্ট করে ফেলবো।
খুশি আনমনেই বিড়বিড় করে বললো।
–ভালোই তো হবে। কিছুদিন পরে যেটা হওয়ার সেটা আগেই হয়ে যাবে।
–হুম? কিছু বললে তুমি?
–নাহ কিছু না।
অতঃপর খুশির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো প্রহর। খুশি এখনো ওভাবেই তাকিয়ে আছে প্রহরের দিকে। প্রহর বলে উঠলো।
–আর কতো দেখবেন ম্যাডাম? আপনার গন্তব্যে পৌঁছে গেছিতো। নামতে হবে না?
খুশির হৃদপিণ্ড কাঁপছে।মনে হচ্ছে আজকে রাস্তা টা অনেক ছোট হয়ে গেছে। এতো তাড়াতাড়ি কেন পৌঁছে গেলাম? এখন যে ওকে সত্যিই যেতে হবে। কিভাবে যাবে ও? নিজের আত্মাকে ছেড়ে কিভাবে যাবে। কিন্তু যেতে তো ওকে হবেই। খুশি কাঁপা কাঁপা হাতে গাড়ির দরজায় হাত রাখলো। প্রহর তখন বলে উঠলো।
–আচ্ছা শোন, কালকে রেডি থেকো। আমি তোমাকে নিতে আসবো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কাল।
খুশির গলায় সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। খুশি ঢোক গিলে নিয়ে কোনরকমে মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বুঝালো। দরজা খুলে এক পা নিচে নামাতেই আবারও ফিরে তাকালো প্রহরের দিকে। ঘুরে এসে আবারও প্রহরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। প্রহর প্রথমে হালকা অবাক হলেও, পরে মুচকি হেসে সেও খুশিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।
–এই দুষ্টুপরি এমন করলে আমি কিভাবে যাবো? আমি কালই তো আবার আসছি। এখন লক্ষী মেয়ের মতো বাসাও যাও।
খুশি আস্তে আস্তে প্রহরকে ছেড়ে দিল। দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো খুশি। কাঁপা কাঁপা পায়ে কোনরকমে গেটের ভেতর গেল। প্রহর গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই খুশি ওখানেই বসে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
সেদিনই ওরা ওই শহর ছেড়ে চলে যায়। এভাবেই সেদিন ওদের প্রেমকাব্যের সমাপ্তি ঘটে।
বর্তমান,
জারিফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে খুশি। জারিফ বলে উঠলো।
–কিরে বেড়াতে এসেও ঘরের মাঝেই আটকে থাকবি?চল ব্রেকফাস্ট করে আসি।
খুশি যেতে না চাইলেও জারিফ জোর করেই ওকে নিয়ে গেল। বাইরে এসে খুশি শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রহরকে খুঁজছে।এখন পর্যন্ত একবারও সামনে পরেনি প্রহর। কাল রাতে আমার কাজে নিশ্চয় প্রহর অনেক অপমানিত বোধ করেছে। তাইতো আজ আর আমার সামনে আসছে না। তাহলে কি প্রহর এবার সত্যিই আমার পিছু ছেড়ে দিবে? এটাই তো আমি চাচ্ছিলাম। তাহলে এখন এতো খারাপ লাগছে কেন? লাগলে লাগুক। তবুও এটাই ঠিক। প্রহর আমার থেকে যত দূরে থাকবে ততই ভালো থাকবে।
এভাবে সারাদিন চলে গেল প্রহর খুশির সামনে আসেনি। খুশি এবার নিশ্চিত হলো যে,প্রহর সত্যিই ওকে আর দেখতে চায়না। নিজের কষ্ট লাগলেও প্রহরের জন্য ভালো লাগছে ওর। হয়তো ও এখন ওর জীবনে সামনে এগুতে পারবে।
রাতের ডিনার শেষে এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল খুশি। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে খুশির মুখে রুমাল চেপে ধরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই খুশি জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো।
চলবে……
/