অপেক্ষারা পর্ব -৪৯

#অপেক্ষারা
৪৯
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

বাংলাদেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আজকাল ভালোই ব্যবসা করছে। আগে কিছু একটা অর্ডার করলে হাতে পেতে পেতে সপ্তাহ খানেক লেগে যেত। কিন্তু আজাকাল অর্ডার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাতে পাওয়া যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বস্তু। একটা জিনিস অর্ডার দিয়ে সেই তখন থেকে চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি করছে নাজ। জিনিসটা আজই হাতে না পেলে সর্বনাশ ঘটে যাবে।

একটু পর পর মোবাইল চেক করছে নাজ। অ্যাপে ডেলিভারির সম্ভাব্য সময় দেখাচ্ছে। জিনিসটা তার কাছে পৌঁছাতে আরো তেইশ মিনিট লাগবে। আগামী তেইশ মিনিট তাহলে অসহনীয় দুশ্চিন্তার মধ্যেই কাটাতে হবে! এদিকে এক দুশ্চিন্তা কাটবার আগেই আরেক দুশ্চিন্তা ঝেঁকে ধরেছে তাকে।

আজ সকালে সায়েমের ঢাকায় ফেরার কথা।
কিন্তু সকাল থেকেই ছেলেটা তাকে ফোন দিচ্ছে না তার ফোন রিসিভও করছে না। প্লেন সাবধানমত ঢাকায় ল্যান্ড করলো কিনা, একবার ফোন করে জানানোরও প্রয়োজন বোধ করলো না সায়েম? একটা মানুষ তার জন্যে দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে অথচ সায়েম তাকে রীতিমত উপেক্ষা করে চলেছে। এত কীসের ব্যস্ততা তার?

ফোন রিসিভ করছে না বলে ঠিক কখন সে বাসায় এসে পৌঁছাবে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ওই জিনিস ডেলিভারির আগে সায়েম না এলেই হলো। নাজের সাত-পাঁচ ভাবনায় ছেদ পড়লো কলিংবেলের শব্দে। ডেলিভারি ম্যান নিয়ে এসেছে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা। যাক! জরুরি কাজটা এবার সেরে ফেলা যাবে।

সকাল দশটা তেরো, নাজ ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আজ জরিনা ছুটি নিয়েছে। দীর্ঘদিন পর স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ঘর গুছিয়ে রান্না বসাতে হবে। আজ সায়েমের পছন্দের খিচুড়ি রান্না করবে নাজ।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো তার। সায়েম ফোন করেছে? সে কি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে? নাজ ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোনের কাছে যেতেই কিছুটা আশাভঙ্গ হলো তার। সায়েম ফোন করেনি, স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে শিউলির নাম।

নাজ ফোন রিসিভ করে স্বাভাবিক গলায় বলল, “কী রে? কী অবস্থা?”

শিউলি হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলল, “অনেক ভালো অবস্থা।”

“খালা-খালুকে বলেছিস সব?”

“বলেছি তো। আমি তো ভেবেছিলাম সবটা শুনে ওরা আমাকে দোষাবে। কেন আমি অমন একটা ছেলেকে বিয়ে করেছিলাম, কেন শেষ পর্যন্ত মানিয়ে চলতে পারলাম না, কেন পুলিশকে জড়ালাম – এ ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, মা রে একটাবার আমাদের বলিসনি কেন। আমরা কী মরে গেছি?”

নাজ মুগ্ধ গলায় বলল, “আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা তো বাবা-মা। শিহাব নয় যে ভালোবাসার অভিনয় করবে।”

শিউলি হাসতে হাসতে বলল, “আর ওদিকে হাসনা খালা আমার বাবা-মাকে কী বলেছে জানিস?”

“কী বলেছে?”

“বলেছে, মেয়েটার মাথায় একটু বুদ্ধি-সুদ্ধি ঢোকানোর ব্যবস্থা করুন, আমার সাহসী বৌমা না থাকলে আজ ওর খবর ছিল।”

নাজ খিল খিল করে হেসে উঠল।

শিউলি হঠাৎ অন্যরকম গলায় বলল, “উনি কিন্তু মিথ্যা কিছু বলেননি নাজ। তুই না থাকলে এখনো আমাকে ওই কারাগারে পড়ে থাকতে হতো। গত কাল পর্যন্ত যেখানে আমার বারবার মনে হচ্ছিল জীবনটাকে শেষ করে দিই, সেই আমিই আজ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। জানিস, বাবা বলেছে আমাকে আবারও লেখাপড়া করাবে। আমার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো আবারও আমার কাছে ফিরে এসেছে নাজ। সবটাই সম্ভব হয়েছে তোর জন্যে। তোকে যে কী করে থ্যাংক ইউ বলি!”

শিউলির কথাগুলো শুনতে শুনতে মনের অজান্তেই অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো নাজের চোখদুটো।

হঠাৎ উদয় হওয়া কেউ আবেগকে রীতিমত উপেক্ষা করে নাজ বলল, “হয়েছে হয়েছে, তোর থ্যাংক ইউ দিয়ে আমি কী করবো? পরেরবার যখন বাড়িতে যাবো মন ভরে ফুচকা খাইয়ে দিস, তাহলেই হবে।”

শিউলি হেসে উঠলো।

“শিউলি শোন! সবসময় এমন হাসিখুশি থাকবি, আর কখনো যেন তোকে কাঁদতে না দেখি। তোর চোখে জল একেবারেই মানায় না।”

দিন গড়িয়ে বেলা হয়ে যাচ্ছে তবুও সায়েমের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। এই মুহূর্তে ছেলেটার ওপরে ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। রাগের সঙ্গে সঙ্গে সমানতালে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে মনের মাঝে। উফ! একটা বার তার ফোন রিসিভ করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?

কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত সায়েম তার ফোনগুলো রিসিভ করছিল না, কিন্তু এখন রীতিমত কেটে দিচ্ছে। কোনো মানে হয়? আজ একবার ফিরুক সে, কঠিন গলায় কিছু একটা বলতে হবে।

কলিংবেল বেজে উঠলো। নাজ কিছু না ভেবে তড়িৎ গতিতে ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। দরজার অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার প্রিয় মানুষটা। নাজ ঠিক করে রেখেছিল সায়েমকে দেখেই কঠিন গলায় কিছু একটা বলবে। কিন্তু শেষমেশ আর পারলো না। কয়েক মুহূর্তের জন্যে থমকে দাঁড়িয়ে রইল একই জায়গায়।

আজ কতগুলো দিন পর মানুষটা দেখছে! সময়টা সাত দিন হলেও তার কাছে যেন অনন্তকাল। ওই নেশালো চোখদুটো না দেখলে তার ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে যায়। এই মানুষটার মাঝেই যে লুকিয়ে তার সমস্ত প্রশান্তির উৎস। নাজের ইচ্ছা করছে এক্ষনি সায়েমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু পারছে না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন আটকে রেখেছে তাকে।

সায়েম নিঃশব্দে তার সুটকেস নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সোজা চলে গেল বেডরুমে। তার চোখদুটোর মাঝে একরাশ রাগ দেখতে পাচ্ছে নাজ। কীসের এত রাগ ছেলেটার? রাগটা আবার তার ওপরে নয় তো?

নাজ দরজা বন্ধ করে ছোট ছোট পা ফেলে গিয়ে দাঁড়ালো সায়েমের সামনে। তার চোখদুটোর ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে। নাজ বারবার কিছু একটা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলতে পারছে না।

অবশেষে সায়েম নিজেরই নিরবতা ভঙ্গ করে যথাসম্ভব শান্ত গলায় বলল, “গত পরশু কোথায় ছিলে তুমি?”

লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নাজ। যা আন্দাজ করেছিল, ঠিক তাই ঘটেছে! সেদিনের ঘটনা যে সায়েম শুধু জেনেই গেছে, তা নয়। সেই সঙ্গে ভয়ঙ্কর রেগে গেছে।

সেই ঘটনা সায়েমের জেনে যাওয়ার খুব একটা অবাক হলো না নাজ। সে কী করে শিউলিকে উদ্ধার করে শিহাবকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে তা গ্রামে মোটামুটি সকলেরই জানা। সেখান থেকেই হয়তো কেউ একজন সায়েমকে ফোন করে জানিয়েছে। সেই কেউ একজনটা তো তার মাও হতে পারে।

নাজ অস্পষ্ট গলায় বলল, “আমি সব বলছি, আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন।”

সায়েম প্রচন্ড এক ধমক দিয়ে বলল, “জাস্ট আনসার মাই কোয়েশ্চন! কোথায় ছিলে তুমি?”

নাজ নিচু স্বরে বলল, “চিটাগংয়ে।”

সায়েম রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “কার পারমিশন নিয়ে গিয়েছিলে?”

“আমি একা ছিলাম না। বাবা আমাদের সকলকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন, আবার সাবধানে ঢাকায় পৌঁছেও দিয়েছেন।”

“বাবা? তুমি আমার বাবাকে চেনো না? তার চোখের সামনে যদি তুমি কোনো বিপদে পড়ে যাও, তাহলেও সে নির্বিকার হয়ে বসে থাকবে।”

“দেখুন আমার কোনো উপায় ছিল না। আমাদের বান্ধবী শিউলি খুব বড় বিপদে পড়েছিল। আমরা না গেলে বেচারি মরেই যেত।”

“তুমি কি পুলিশ না গোয়েন্দা? কারো প্রাণ বাঁচানো কনট্র্যাক্ট তোমাকে কে দিয়েছে?”

নাজ আহত গলায় বলল, “এভাবে কথা বলছেন কেন আপনি?”

“তো কীভাবে কথা বলবো, শিখিয়ে দাও আমাকে? নিজেকে তো মহাজ্ঞানী মনে করো তাই না? একটা ডিসিশন নেওয়ার আগে কাউকে জানানোরও প্রয়োজন মনে করো না।”

“আপনাকে আগেভাগে জানালে তো আপনি যেতেই দিতেন না।”

“অবশ্যই দিতাম না। অচেনা একটা শহরে তুমি একা একা। তাও আবার না-কি পুলিশ ডেকে একাকার কান্ড বাঁধিয়েছো! ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।”

“কেন? আমি মেয়ে বলে?”

সায়েম ভ্রু কুঁচকে বলল, “ওয়াট?”

“মেয়ে বলে অচেনা একটা শহরে আমাকে কল্পনা করতে পারছেন না। মেয়ে বলে পুলিশ ডেকে আমি অন্যায়ের বিচার চাইতে পারবো না, তাই তো?”

সায়েম তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “শাট আপ ইউ ইডিয়ট! এত বড় বড় কথা কোথা থেকে শিখেছো? সিনেমা দেখে না পণ্ডিত ইউটিউবারদের ভিডিও দেখে?”

“কোথাও থেকে শিখিনি। আমার মনে যা এসেছে তাই বলেছি। আমাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করেন কেন আপনি? সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকা যাবে না, দূরে কোথাও গেলে আপনি গিয়ে দিয়ে আসবেন? আমি মেয়ে বলেই তো এসব করেন। মেয়ে বলেই আমার কোনো স্বাধীনতা থাকতে পারবে না।”

সায়েম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “ওয়াও! আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তোমার কাছ থেকে আমাকে ফেমিনিসমের লেকচার নিতে হচ্ছে।”

নাজ বহুকষ্টে চোখের জল আড়াল করে বলল, “যেটা সত্যি, আমি সেটাই বলছি।”

“তাই না? আচ্ছা তোমার একবারও মনে হলো না? কনাও তো তোমাদের সঙ্গে গিয়েছিল। আমার বোনের জন্যে চিন্তিত না হয়ে আমি কেন কেবল তোমার জন্যেই চিন্তা করছি!”

নাজ চুপ করে রইল। আসলেই তো, এ কথা তো আগে মাথায় আসেনি!

“কারণ তুমি এখনও একটা বাচ্চা নাজ। নিজেকে খুব বড় মনে করলেও তুমি চিরকাল বাচ্চাই থেকে যাবে। অচেনা একটা জায়গায় পথ হারিয়ে ফেললে কনা নিজেকে সামলে একা একা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবে, কিন্তু তুমি পারবে?”

“তাই বলে সবসময় আমার সঙ্গে এমন করবেন আপনি? সেই বিয়ের পর থেকে লক্ষ্য করে আসছি, আমাকে ধমক না দিয়ে কথাই বলতে পারেন না আপনি!”

“কারণ বিয়ের পর থেকেই তুমি ধমক খাওয়ার মতো কাজ করে আসছো।”

নাজ অভিমানী স্বরে বলল, “সোজাসুজি বলে দিলেই তো হয় যে আমাকে আপনার সহ্য হয় না!”

সায়েম বিরক্ত গলায় বলল, “আসলেই সহ্য হচ্ছে না এই মুহূর্তে। কয়েক ঘন্টার জন্যে প্লিজ এ ঘরে আসবে না, আমাকে একা থাকতে দাও।”

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল নাজ। অবিশ্বাসে তাকিয়ে রইল সায়েমের দিকে।

অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করে স্পষ্ট গলায় বলল, “ঠিক আছে। কয়েক ঘন্টার জন্যে কেন, সারাজীবনের জন্যে আমি এ ঘর থেকে চলে যাচ্ছি।”

সায়েম ক্লান্ত গলায় বলল, “তোমার স্বভাবই হলো তিলকে তাল মনে করা। আমি একবারও বলেছি, সারাজীবনের জন্য চলে যাও?”

“আপনি না বললেও আমি যাবো। আমাকে যখন এতটাই অসহ্য লাগে, তখন থাকুন একা একা!”

নাজ হনহন করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সায়েম। কোথায় ভেবেছিল বাড়ি ফিরেই নাজকে কঠিন কোনো শাস্তি দেবে, সেখানে মেয়েটা নিজেই রাগ দেখিয়ে চলে গেল। বাচ্চা মেয়েটা হঠাৎ এত রাগী হয়ে গেল কবে থেকে? সায়েম এই মুহূর্তে নিজের রাগটা প্রাধান্য দেবে, না-কি নাজের রাগ ভাঙাতে যাবে ঠিক বুঝতে পারছে না।

প্রায় অনেকটা সময় পার হয়ে গেল অথচ নাজ এখনো আরেকটা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সায়েমের ওপর অসম্ভব রাগ হচ্ছে তার। সবসময় কেন নাজের ওপরে রাগ দেখাতে হবে তাকে?

সায়েম এতক্ষণে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে টিভি দেখছে। তার মধ্যে রাগ ভাবটা একেবারেই অবশিষ্ট নেই। হঠাৎ কী যেন মনে করে আবারও এই ঘরে ফিরে এল নাজ। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আলমারির কাছে গিয়ে কী যেন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

সায়েম তার শান্ত গলায় কিছুটা রহস্য মিশিয়ে বলল, “কী ব্যাপার? সারাজীবনের জন্যে না চলে গিয়েছিলে? শেষ তোমার সারাজীবন?”

রাগে, বিরক্তিতে নাজের গা জ্বলে উঠলো। কোথায় সায়েম গিয়ে তার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবে, তা না করে বরং আরও বেশি রাগিয়ে দিচ্ছে।

নাজ ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, “আপনার সঙ্গে থাকতে কে এসেছে? একটা জিনিস দেওয়ার ছিল, সেটা দিয়েই চলে যাবো।”

“কী?”

আলমারি থেকে বের করে আনা জিনিসটা সায়েমের দিকে বাড়িয়ে দিলো নাজ। সায়েম এক লাফে উঠে বসলো। নাজের হাতে একটা প্রেগন্যান্সি কিট। সায়েম সঙ্গে সঙ্গে সেটা হাতে নিয়ে দেখলো গোলাপী রঙের সুন্দর দুটো দাগ উঠেছে। সায়েম হতবাক গলায় তাকিয়ে রইল নাজের দিকে।

নাজ কম্পিত স্বরে বলল, “আজ সকালে অনলাইন থেকে কিট আনিয়ে টেস্ট করেছি…”

কথাটা বলতে বলতেই থেমে গেল নাজ। কিছুটা দম নিয়ে আবারও থেমে থেমে বলল, “আমি প্রেগন্যান্ট।”

সায়েম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিটের দিকে। নিজের চোখকে যেন কয়েক মুহূর্তের জন্যে বিশ্বাসই করতে পারছে না। আচ্ছা এটা কী সত্যিই বাস্তব না-কি কোনো স্বপ্ন? এই বাচ্চা মেয়েটা না-কি নিজেই একটা বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। এ কী বিশ্বাসযোগ্য? সায়েমের চোখদুটো মুহূর্তেই অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। একটা ছেলের কাছে বোধ হয় বাবা হওয়ার থেকে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।

নাজ ধরা গলায় বলল, “এই কথাটাই বলা ছিল, বলা হয়ে গেছে। আপনি থাকুন আপনার রাগ নিয়ে।”

সায়েম আর এক মুহূর্তও অপচয় না করে না হাতটা টেনে ধরে, তাকে এনে ফেলল নিজের বুকের মাঝে।

শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “এত বড় একটা কথা এতক্ষণ পরে বললে কেন?”

সায়েমের বুকে গুটিশুটি মেরে নাজ বলল, “আপনি তো আমার ওপরে রাগ দেখিয়েই কুল পান না, বলবো কখন?”

কয়েক মুহূর্ত নিভৃত নিরবতায় কেটে গেল। কারোর মুখেই কোনো কথা নেই, তবে দুজনেই একে অপরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার প্রবল স্রোতে। আসলেই কি তাদের মাঝে তৃতীয় একজন আসতে যাচ্ছে? এই তৃতীয় মানুষটা এতদিন কোথায় ছিল? তাদের মাঝেই তো ছিল, দুজনের ভালোবাসার মাঝে লুকিয়ে ছিল। তারাই খেয়াল করেনি।

সায়েম নাজের পেটে হাত বোলাতে বোলাতে স্তব্ধ গলায় বলল, “আই কান্ট বিলিভ দিস। আমি সত্যি সত্যিই বাবা হবো, আর তুমি মা হবে?”

নাজ আবেগে মোমের মতো গলে গিয়ে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

সায়েম নাজের কপালে তার শীতল ঠোঁটের সম্মোহনী স্পর্শ দিয়ে বলল, “এতটা বড় কবে হয়ে গেলে তুমি? যে মেয়েটা নিজেকেই সামলাতে পারে না, সে না-কি আবার মা হবে!”

মানুষের জীবনটা কতোটা অনিশ্চিত তাই না? আগেভাগে কেউ কিছুই বলতে পারে না। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কি সায়েম বা নাজ কেউই বুঝতে পেরেছিল, যে তাদের মাঝে প্রচন্ড এক আনন্দের বার্তা নিয়ে আসছে আজকের এই দিনটা?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here