#অপেক্ষারা
শেষ পর্ব
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
“মা?এখানে কী লেখা?” কৌতূহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো নিয়ম।
নাজ নীল রঙের চিরকুটটায় একবার চোখ বুলিয়ে বলল, “টু মাই বেটার হাফ, মাই কম্প্যানিয়ন এন্ড মাই ইন্সপিরেশন।”
নিয়ম ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, “ইন… কী?”
“ইন্সপিরেশন! মানে যে ইন্সপায়ার করে।”
“সেটা আবার কী?”
নাজ ভ্রুযুগল সামান্য কুঁচকে বলল, “উফ! আমি বলতে পারবো না। যে লিখেছে তাকেই জিজ্ঞেস কর না।”
নিয়ম অসহায় দৃষ্টিতে সায়েমের দিকে তাকিয়ে বলল, “বাবা?”
সায়েম ঠোঁটের কোণে বিচিত্র এক হাসির আভাস নিয়ে বলল, “ইন্সপিরেশন মানে হলো সাহস দেওয়া। যেকোনো কাজ করার আগে মানুষের সাহসের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় সাহস নিজে থেকেই আসে, কিন্তু কিছু কিছু সময় অন্য একজনকে সেই সাহস জোগাড় করে দিতে হয়। তুই যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠতে ভয় পাস তখন তোকে সাহস দেয় কে?”
নিয়ম উৎফুল্ল গলায় বলল, “তুমি!”
“তাহলে তোর ইন্সপিরেশন কে?”
“তুমি!”
নাজ সরু গলায় বলল, “বাহ্! কথায় কথায় নিজেকে মেয়ের ইন্সপিরেশন বানিয়ে ফেললে?”
সায়েম নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “বানিয়ে ফেলার কী আছে নাজ? আমি তো আসলেই আমার বাবাটার ইন্সপিরেশন। তাছাড়া সামান্য একটা শব্দ যে একপ্লেইন করতে পারে না, সে আবার কারোর ইন্সপিরেশন হবে কী করে?”
নাজ আহত গলায় বলল, “বাজে কথা বলবে না তো! সব দোষ তোমার। কে বলেছিল এতকিছু লিখতে? শুধু শাড়িটা দিলেই তো হয়ে যেত।”
সায়েম কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আহারে! আমার জীবনে একটাই অপ্রাপ্তি জানো নাজ।”
“কী?”
“তোমাকে রোমান্টিক বানাতে না পারা। সেই আনরোমান্টিকই রয়ে গেলে!”
“আবারও ফাজলামি করছো? তোমার ভাগ্য ভালো আজ আমার তাড়া আছে। না হলে তোমার খবর ছিল।”
“তো করো খবর! আমার তো আপত্তি নেই।”
নাজ কিছু একটা বলতে গিয়েই থেমে গেল। অস্ফুট এক হাসি এসে রাজত্ব করছে তার ঠোঁটজুড়ে। সায়েমের সঙ্গে ছোট ছোট এই খুনসুঁটিগুলোর মধ্যে দিয়ে জীবনটা বেশ চলছে। মানুষের ক্ষুদ্র এই জীবনে হাজারটা ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের দুর্নিবার গতিতে দিশেহারা হলে জীবন চলে না। বুকে একরাশ আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আশা হারিয়ে ফেলার অর্থ জীবনযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয়। মানুষ আশা করে, ভবিষ্যতে সুখময় একটা দিনের। গ্লানিবর্জিত হাস্যোজ্জ্বল এক বিকেলে প্রিয় মানুষটার হাতে হাত রেখে সূর্যাস্ত দেখার স্বপ্ন কে না দেখে?
নাজ আশা হারিয়ে ফেলেনি বলেই হয়তো আজকের দিনটা, ঠিক এই মুহূর্তটা এত সুন্দর। সময়ের সাথে সাথে না-কি মনের ভালোবাসারও ক্ষয় হয়। কই? সায়েম আর নাজের বিয়ে এতগুলো দিন হয়ে গেল, তাদের ভালোবাসা আজও সেই প্রথম দিনের মতো রঙিন। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, মানুষ তাকে হারিয়ে ফেলে। কখনো জেনেশুনে, কখনো বা মনের অজান্তে। তারা জেনেশুনে ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেয়নি বলেই আজও তার ক্ষয় হয়নি। বরং দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে।
নাজ আর সায়েমের ভালোবাসার একমাত্র ভাগিদার নিয়ম। দেখতে দেখতেই চার বছর হয়ে গেল মেয়েটার বয়স। এই বয়সেই তিনি বিচ্ছুর চূড়ান্ত। সারাদিন ছোটাছুটি আর সাজানো-গোছানো ঘরকে এলোমেলো করে দেওয়া তার নিত্যদিনের দায়িত্ব। তার আরেকটা প্রধান কাজ হলো কথা বলে বলে চারপাশের সকলের মাথা ধরিয়ে দেওয়া। সায়েম তো প্রায়ই বলে, “এফএম রেডিওর মেয়ে হয়েছে আস্ত একটা রেডিও স্টেশন।”
সায়েম গতরাতে সেই নীল চিরকুটের সঙ্গে একটা শাড়ি উপহার দেয় নাজকে। শাড়ির রংটা দারুণ! সবুজের ওপরে কালো কাজ করা। তবে এই সবুজটা কটমটে নয়, কচুপাতা যেমন সবুজ, ঠিক তেমন। অফিসে যাওয়া কিংবা বাড়ি ফেরার পথে হুট করে দোকানে কোনো একটা শাড়ি পছন্দ হয়ে গেলেই সায়েম নিয়ে আসে নাজের জন্যে। কখনো মুখ ফুটে বলে না, “এই শাড়িটাতে তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল, যাও পড়ে এসো তো।” সেটুকু বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব নাজের।
শাড়িটা পড়ে বরাবরের মতোই হালকা সাজগোজ করলো নাজ। খোলা চুল, কানে বড় দুল আর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। সাজগোজের এই পুরোটা সময়জুড়ে সায়েমের মুগ্ধ চোখদুটো আটকে ছিল নাজের দিকে।
তবুও সাজ শেষে নাজ সায়েমের দিকে প্রচ্ছন্ন এক হাসি ছুঁড়ে দিয়ে বলল, “কেমন লাগছে আমাকে?”
সায়েম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই নিয়ম মিষ্টি গলায় বলল, “মা! তোমাকে একদম ডিজনি প্রিন্সেসদের মতো লাগছে।”
সায়েম অন্যরকম গলায় বলল, “প্রিন্সেস তো তুই বাবা, মাকে দেখাচ্ছে কুইনদের মতো।”
নিয়ম আনন্দে খাবি খেয়ে বলল, “তাই তো! মা তোমাকে কুইনদের মতো লাগছে।”
কিঞ্চিৎ লজ্জায় রক্তিম হলো নাজের গালদুটো। তবুও সেই অনুভূতিকে অপ্রকাশ্য রেখে নিজেকে সামলে নিয়ে নাজ বলল, “অনেক পাকা পাকা কথা হয়েছে। এবার রেডি হতে চল তো। এবারও তোর বাঁদরামির জন্যে ফ্লাইট মিস করতে হবে।”
সায়েম বিরক্ত গলায় বলল, “খবরদার আমার মেয়েকে বকবে না। আগেরবার ফ্লাইট মিস হয়েছিল কার জন্যে মনে নেই?”
“কার জন্যে আবার? নিয়মের জন্যে।”
“মোটেই না, তোমার জন্যে। তুমি অনন্তকাল ধরে রেডি না হলে ওই দিন দেখতে হতো না।”
“কী? আমি অনন্তকাল ধরে রেডি হই? শোনো সায়েম, আমার পাল্লায় পড়েছিলে দেখে বেঁচে গেছ। অন্য মেয়েরা শুধু মেকআপ করতেই তিন ঘন্টা লাগিয়ে দেয়। তারপর শাড়ি পড়া আর চুল বাঁধার জন্যে আলাদা সময় তো আছেই।”
“অন্য কারোর কথা উঠছে কেন? অন্যরা চাইলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তেইশ ঘন্টা সাজতে পারে। আই ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রবলেম উইথ দ্যাট। তাদের জন্যে তো আমাকে অপেক্ষা করতে হবে না, যার জন্যে অপেক্ষা করতে হয় সে দেরি না করলেই হলো।”
নিয়ম বাসে যাতায়াত করতে পারে না। বাসের ওই দীর্ঘ যাত্রায় বেচারি অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যায়। তাছাড়া সায়েমের কাছেও বাসের যাত্রাকে সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। এজন্যে নিয়ম একটু বড় হওয়ার পর থেকেই তারা প্লেনে করে গ্রামের বাড়িতে যায়।
নাজের সামান্য হাইট ফোবিয়া আছে। প্লেন টেক অফ করলেই কোনো এক অজানা ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে যায়। সেদিক থেকে একেবারেই উল্টো নিয়ম। এতটুকু একটা মেয়ে কিছুতেই যেন ভয় পায় না। প্লেন আকাশ পথে চলতে শুরু করলেই নিজের জন্যে বরাদ্দকৃত সিট ছেড়ে বাবার কোলে বসে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে মেঘেদের কারসাজি। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
বিয়ের পর অগণিতবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। তবে অন্যবারের চাইতে আজকের যাওয়াটা একেবারেই ভিন্ন। সায়েমদের বাড়ি আজ কোনো স্বাভাবিক বাড়ি নয়, বিয়েবাড়ি। কনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বেচারির খুব শখ ছিল জীবনে আর কিছু না হলেও অন্তত একটা প্রেম করবে। নিজে পছন্দ করে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করবে। কিন্তু শেষমেশ ইচ্ছাটা আর পূরণ হয়নি। প্রেমে পড়ার জন্যে উপযুক্ত মানুষটাই খুঁজে পায়নি এতদিনে।
বাবা-মা আর ভাইয়া তার জন্যে উপযুক্ত মানুষটা খুঁজে এনে দিয়েছে। ছেলেটার নাম আহনাফ, ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বিয়েটা ঠিক হয়ে আছে একবছর আগে থেকেই। এই একবছরে দুজনের মধ্যে চেনাজানা বলতে গেলে ভালোই হয়েছে। তার থেকেও বড় কথা আহনাফ নামের ছেলেটা কনার প্রেম করার ইচ্ছাকে অপূর্ণ রাখেনি।
বিয়েবাড়ির অপর নাম হাজারো আত্মীয়-স্বজনে গিজগিজ করা বাড়ি। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাড়িজুরে সকলে মহাব্যস্ত। আত্মীয়দের একদল বাড়ির বাইরে আলোকসজ্জার তদারকি করছে। একদল রান্নার গুরুদায়িত্ব সামাল দিতে ব্যস্ত। আরেকদল অকারণেই কনেকে ঘিরে বসে আছে। আর যে দল কোনো কাজই পাচ্ছে না, তারা বাড়ির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ছোটাছুটি করছে।
হাসনা বেগম বাড়ির উঠানে পায়চারি করছিলেন। মেয়ের বিয়েতে সব মায়েদের চেতনাই হয়তো দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। হঠাৎ দুশ্চিন্তা কেটে গিয়ে তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো প্রচ্ছন্ন এক হাসি। দেখতে পেলেন দূর থেকে আসছে তার পুত্র-পুত্রবধূ এবং একমাত্র নাতনি।
হাসনা বেগম তড়িঘড়ি করে উঠান থেকে বাইরে এসে দাঁড়ালেন। নিয়ম উৎফুল্ল স্বরে “দাদি!” বলে চেঁচিয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। হাসনা বেগমের হাসিটা আরেকটু প্রশস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো। নিয়মের মুখে এই দাদি ডাকটা শুনেই তার সকল দুশ্চিন্তা নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
এতক্ষণে নাজ আর সায়েমও এসে গেছে তাদের কাছাকছি।
হাসনা বেগম নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ব্যস্ত গলায় বললেন, “একি বৌমা? তোমাকে কতবার বলেছি মেয়েটার চুল এভাবে খোলা রাখবে না। দেখো! বারবার চুলগুলো চোখের ওপরে পড়ছে।”
নাজ ঠাট্টার ছলে বলল, “আমার অত দায় পড়েনি মা। আপনার নাতনি, আপনি গিয়ে চুল বাঁধুন।”
“বাঁধবোই তো, তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে না। সায়েম, তুই ফ্রেশ হয়ে একটু ডেকোরেটরের লোকদের ফোন দে না বাবা। বারোটার মধ্যে আসার কথা, এখনো এলো না।”
সায়েম শান্ত গলায় বলল, “চলে আসবে মা, তুমি শুধু শুধু ব্যস্ত হচ্ছ। ভালো কথা, যেখানে স্টেজ করা হবে সেখানে এত লোকজন কী করছে?”
“ছেলেমেয়েরা কোনো কথাই শোনে না। ওখানেই আড্ডা দিতেই বসে গেছে।”
সায়েম কঠিন গলায় বলল, “সরাও এদেরকে। বিয়েবাড়ি কোনো আড্ডা দেওয়ার জায়গা না-কি? একটাও প্রোডাক্টিভ কাজ যদি হয় এদের দিয়ে!”
সায়েম লক্ষ করলো নাজ মুখ চেপে তার অস্ফুট হাসিটা গোপন করতে ব্যস্ত।
“হাসছো কেন?”
নাজ ক্ষীণ হাসি আভা গোপন না করেই বলল, “অফিসে বসগিরি করতে করতে তোমার অভ্যাসটাই খারাপ হয়ে গেছে। বিয়ে বাড়িতে আবার প্রোডাক্টিভ কাজের কী আছে?”
বাড়িতে পা রেখে কোনমতে হাতমুখ ধুয়ে কাজে নেমে পড়লো নাজ। বাড়ির একমাত্র বৌ বলে কথা, হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না-কি। আজ সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে কনার গায়ে হলুদ। বাড়িতে এই মুহূর্তে যত আত্মীয়-স্বজন আছে তারও দ্বিগুণের সমাগম হবে তখন। রান্নাঘর এতক্ষণ ছিল একদল মহিলামন্ডলের দখলে। তাদেরকে বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে নাজ নিজেই বসে গেল রান্নায়। সায়েমের এক দুঃসম্পর্কের ফুপি অবশ্য রয়ে গেছেন।
হাসনা বেগম চিন্তিত গলায় বললেন, “বৌমা, তুমি সরো তো। এত রান্না একা হাতে সামলাতে পারবে না।”
নাজ হাড়িতে তেল ঢেলে বলল, “কেন আমার রান্নার ওপরে আপনার ভরসা নেই? আমি কিন্তু রান্না খারাপ করি না, চাইলে আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।”
“আহা, আমি সে কথা বলেছি না-কি? তোমার কষ্ট হয়ে যাবে তাই আর কি।”
“হোক। এই দিন তো আর রোজ রোজ ফিরে আসবে না। আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন তো মা। এসব তুচ্ছ বিষয়ে দুশ্চিন্তা করে করে বিয়ের অনুষ্ঠানের আগেই ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে একাকার অবস্থা করবেন দেখছি।”
হাসনা বেগম কথা না বাড়িয়ে বৌমার নির্দেশ মতো বসে পড়লেন তার পাশে পাতা মোড়ায়।
নাজ কিছুটা সময় পর হঠাৎ খুন্তি নাড়তে নাড়তে বলে উঠলো, “মা শুনুন, মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। এবার ভালোয় ভালোয় ঢাকায় গিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকবেন।”
হাসনা বেগম চমকে উঠে বললেন, “কী যে বলো বৌমা! নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ওখানে গিয়ে কী করে থাকি?”
“ছেলের বাড়ি বুঝি আপনার নিজের বাড়ি নয়?”
হাসনা বেগম ইতস্তত করে বললেন, “না তা নয় তবে…”
হাসনা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে নাজ ফাজলামির স্বরে বলল, “আপনার বাহানায় এবার আর কাজ হবে না। বিশাল একটা সুটকেস নিয়ে এসেছি, সেটাতে আপনাদের দুজনকে ভরে ঢাকায় নিয়ে যাবো।”
সেই দুঃম্পর্কের ফুপি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছেন শাশুড়ি-বৌমার খুনসুঁটির দৃশ্য। আপনজনদের ওপরে রাগ পুষে রাখা পৃথিবীর কঠিনতম কাজ। হাসনা বেগম আবেগের বশে না হয় দুয়েকটা কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন নাজকে। সেসব কথা মনে রেখে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়াতে চায় না নাজ। হাসনা বেগমের সমস্ত রাগ গলে পানি হয়ে যায়, যেদিন তিনি প্রথম দেখেন তার নাতনিকে। ওই স্নিগ্ধ চেহারার দেবশিশু যেকোনো ক্রুদ্ধমূর্তিকে গলিত করার ক্ষমতা রাখে।
বাড়িসুদ্ধ মানুষের মধ্যে তীব্র চঞ্চলতা। অথচ এতসব আয়োজনের মধ্যমণি মানুষটাই নিরুদ্দেশ। কনাকে খুঁজতে খুঁজতে সায়েম চলে এলো বাড়ির বারান্দায়। এই বারান্দায় দুটো বড় বড় বেতের সোফা আছে। তার একটাতে বসে আছে কনা, তার কোলে নিয়ম। এটা সেটা নিয়ে ক্রমাগত কথা বলেই যাচ্ছে নিয়ম।
আরেকটা সোফায় বসতে বসতে সায়েম বলল, “কী রে? আজ ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছিস না যে?”
কনা অসহায় গলায় বলল, “কী যে বলো তুমি ভাইয়া! আমার বিয়েতে আমিই যদি ছোটাছুটি করি তাহলে সবাই আমাকে বেয়াদব ডাকবে।”
“তুই বোধহয় জানিস না, তোকে ছোটোবেলা থেকেই সবাই বেয়াদব ডাকে।”
কনা ফিক করে হেসে ফেলল। তবে হাসির আড়ালে যে একটা মলিনতা লুকিয়ে আছে, তা চোখ এড়ালো না সায়েমের।
সায়েম কোমল গলায় বলল, “মন খারাপ?”
কনা ক্ষীণ গলায় বলল, “কিছুটা। এই বাড়িটাতে বেড়ে উঠলাম, বাড়ির প্রত্যেকটা কোণা, প্রত্যেকটা জিনিস আমার পরিচিত। মা আর বাবাকে ছাড়া তো এক সেকেন্ডও থাকতে পারি না আমি। অথচ কাল থেকে না-কি এসব কিছুই আমার থাকবে না।”
“কে বলেছে এসব বাজে কথা? তোর বাড়ি, সারাজীবনই তোর বাড়ি থাকবে। বাবা-মাও তোরই থাকবে। যখনি দেখতে ইচ্ছা হবে, এক দৌঁড়ে চলে আসবি।”
কনা হঠাৎ কী যেন মনে করে বলল, “আচ্ছা ভাইয়া? তোমার খারাপ লাগেনি?”
“কখন?”
“যখন তুমি আমাদের ছেড়ে ঢাকায় পড়তে চলে গেলে!”
“লেগেছিল আবার লাগেনি।”
“মানে?”
“খারাপ লাগা তো ছিলই। তবে ভেতরে ভেতরে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল। নতুন শহর, নতুন পরিবেশ। প্রথম প্রথম কয়েকটাদিন খারাপ লাগলেও পরে দেখবি মানিয়ে নিয়েছিস। মানুষের কাজই তো মানিয়ে নেওয়া।”
কনা কিছু বলল না। ক্ষীণ হেসে চুপ করে রইল।
কনাকে সহজ করতে সায়েম হেয়ালির স্বরে বলল, “আমার শুধু একটা বিষয়ই অবাক লাগছে।”
“কী?”
“এইতো সেদিন তোকে ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পেলাম, অথচ এর মধ্যে এত বড় হয়ে গেলি? কাল না-কি আবার তোর বিয়ে। ভাবা যায়?”
কনা ভ্রু কুঁচকে রাগী কণ্ঠে বলল, “উফ আবার সেই এক কথা! বিয়ে হচ্ছে, বেঁচে গেছি। এখন থেকে তোমার এসব ফাজলামি সহ্য করতে হবে না।”
বাড়ির বসার ঘরে বিরাট এক মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। মঞ্চের ওপরে হলুদ রঙের নানান ফুলের সমারোহ। জায়গাটাকে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে মঞ্চে উঠে ছবি তোলায় ব্যস্ত। মঞ্চের ঠিক ওপরে একটা ব্যানারে বড় বড় করে লেখা, ‘কণার হলুদ সন্ধ্যা’।
বিরক্তির তীব্র হওয়া বয়ে গেল কনার গা জুড়ে।
বিরক্ত গলাতেই বলল, “আমার নামের বানান ভুল!”
নাজ মিনতির স্বরে বলল, “সরি দোস্ত। তাড়াহুড়োয় বানান-টানান চেক করা হয়নি। এবারের মতো অ্যাডজাস্ট করে নে।”
“এবারের মতো মানে কী? আমার আর কয়বার গায়ে হলুদ হবে?”
নাজ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “হতে পারে না? দেখা গেল তোর আহানাফ ভাই প্রচুর রোমান্টিক। বিয়ের পর প্রথম অনিভার্সেরিতে আবারও বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রথমবারে যেসব শখ মেটেনি, দ্বিতীয়বারে তা মেটাবে। তখন তুই এই বানান ভুলের কথাটাও বলে দিস।”
মঞ্চে সেট করা হয়েছে একটা মাইক্রোফোন। একরাশ অতিথির সামনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেটার সামনে দিয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম। এতটুকু একটা মেয়ে সকলে অবাক করে দিয়ে সুর তুলল –
দোয়েল পাখি কন্যা রে,
লাউয়ের ডগা হাত রে,
আতা গাছে তোতা গান গায়
তারে দেইখা রে
আয় শুইনা যা, আয় দেইখা যা
ও কচি কলাপাতা নরম তার,
হলুদ মাখা গায়,
ও সুন্দরী কন্যা আইজ আমগো
নতুন ঘরে যা, আয় দেইখা যা
হাসনা বেগম আর শওকত সাহেব গর্বভরে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন, “দেখেছো, আমার নাতনি কত সুন্দর গান জানে?”
আনন্দে আনন্দে কেটে গেল দিনটা। অনুষ্ঠান আজকের মতো সমাপ্ত। কাল আয়োজনের মূল পর্ব, বিয়ের অনুষ্ঠান। অতিথিরা আজকের মতো বাড়ি চলে গেছেন। আর যারা যারা এ বাড়িতেই থাকবেন, তারা চলে গেছেন ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাতে। সকাল সকাল উঠতে হবে তো। হাসনা বেগম কালকের জন্যে কিছু কাজ এগিয়ে রাখছেন।
তখনি নিয়ম এসে বায়না ধরলো, “দাদি! আমি আজকে তোমার সাথে ঘুমাবো।”
হাসনা বেগমকে জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই নাজ হালকা ধমকের স্বরে বলল, “না মা! দাদি অনেক টায়ার্ড। চুপচাপ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
নিয়ম ঠোঁট উল্টে বলল, “না! আমি দাদির সাথেই ঘুমাবো।”
হাসনা বেগম আন্তরিক গলায় বললেন, “থাক না বৌমা। এত করে যখন চাইছে, তখন ঘুমাক আমার সঙ্গে।”
“আপনি নিয়মকে চেনেন না মা? সারা রাত কথা বলে বলে জ্বালিয়ে মারবে, এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারবেন না।”
“ঘুম আমার এমনিতেও হবে না। মেয়ের বিয়ের আগের দিন রাতে কোন মা ঘুমাতে পারে? তুমি যাও, শুয়ে পড়ো। কাল অনেক কাজ আছে।”
ঘরে এসে সায়েমকে কোথাও খুঁজে পেল না নাজ। তবে মোটেও বিচলিত হলো না তাতে। একটু আগে দেখে এসে সায়েম ডেকোরেটরের লোকজনদের কীসব যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে। বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে বরভাইগিরি দেখাতে এতটুকুই কার্পণ্য করছে না সে।
আজকের হলুদের অনুষ্ঠানে পড়া শাড়িটা ভাঁজ করছে নাজ। এমন সময় সায়েম ফিরে এলো ঘরে। আড়চোখে একবার নাজের কর্মকান্ড লক্ষ করে এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের কাছে।
হাতঘড়িটা খুলে রাখতে রাখতে হঠাৎ কী যেন মনে করে সায়েম বলল, “জানো নাজ, এই ঘরে এলেই আমি নস্টালজিক হয়ে যাই।”
ভাঁজ করা শাড়িটা সোফার ওপরে রেখে সায়েমের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে নাজ বলল, “কেন?”
সায়েম নাজের দিকে তাকিয়ে অন্যরকম গলায় বলল, “কেন আবার? এই ঘরেই আমাদের প্রথম দেখা। মনে নেই?”
লজ্জারাঙ্গা হাসি হেসে নাজ বলল, “নেই আবার? কী কান্ড করেছিলে সেদিন তুমি!”
সায়েম হঠাৎ গাঢ় স্বরে বলল, “তোমার ভয় লাগেনি?”
নাজ অনিশ্চিত গলায় বলল, “কীসের ভয়?”
সায়েম আচমকা নাজের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলল, “মাঝরাতে, বদ্ধ ঘরে, সম্পূর্ণ অচেনা একটা পুরুষের সাথে – ভয় করছিল না তোমার?”
নাজ কম্পিত স্বরে বলল, “করছিল তো। ভয়ে একেবারে হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
“তারপর? ভয়কে জয় করলে কী করে?”
নাজ দুষ্টুমির ছলে বলল, “অনেক ভেবচিন্তে বের করলাম, শুরুতেই যদি তোমাকে ভড়কে দেওয়া যায় তাহলে নিশ্চয়ই আমার কাছে ঘেঁষতে যাবে না?”
সায়েম তার নেশালো কণ্ঠে বলল, “তাই না? কিন্তু শেষমেশ তো আর আটকে রাখতে পারলে না?”
লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করে নাজ বলল, “একদম বাজে কথা বলবে না। সেদিন ঘেঁসেছিলে আমার কাছে?”
সায়েম নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “কেন? ঘেঁসলে তুমি খুশি হতে?”
নাজ আর জবাব দিতে পারলো না কথাটার। লজ্জায় দিশেহারা হয়ে মেয়েটা মুখ লুকালো সায়েমের বুকে।
সায়েম প্রথম যত্নে নাজকে আগলে ধরে বলল, “আহা বেচারী! এতকাল ধরে এই আক্ষেপ মনে জমিয়ে রেখেছিলে? একবার আমাকে বললেই তো হতো। চলো, এখন তোমার কাছে ঘেঁষার আশাটা পূরণ করে দিই?”
“মানে? এই! এখন কোনো দুষ্টুমি চলবে না। দিন নেই, রাত নেই শুধু…”
“শুধু কী? বলো, কথার মাঝখানে থেমে যাবে না।”
“উফ! খুব জ্বালাও তুমি! সরো তো, আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“ঘুম তো আমারও পাচ্ছিলো খুব। তুমিই তো ঝামেলা বাঁধালে।”
নাজ অবাক হয়ে বলল, “আমি আবার কী করলাম?”
“তোমাকে দেখেই তো ঘুম-টুম সব উড়ে গেলো। এখন আর পালাবার কোনো পথ নেই।”
নাজ লক্ষ করলো সায়েম নেশাক্তের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার ঠোঁটদ্বয়ের দিকে। একটু একটু করে অগ্রসর হয়ে কখন ঠোঁট দুটোকে নিজের আয়ত্তে করে নিয়েছে কে জানে। এই মানুষটার দুই মিটার রেডিয়াসে ঢুকে পড়লে নাজ আর স্বাভাবিক থাকে না-কি? সায়েমের ক্রমশ বাড়তে থাকা এই ভালোবাসাটা পাগল করে তোলে তাকে। আজকের এই ভালোবাসাময় রাতটার মতো অসংখ্য রাত তার সাক্ষী।
কাকডাকা ভোরে ঘুম ভেঙে গেল সায়েমের। গ্রামের এই এক সমস্যা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয়ে যায় পাখিদের কিচিরমিচির আর কাকের ডাক। সায়েম সবে চোখ মেলে বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করলো সময় দেখবে বলে। সময়ের আগেই তার আবছা দৃষ্টি পড়লো একটা এসএমএসের নোটিফিকেশনের ওপর, প্রেরক নাজ। কী আশ্চর্য! যে মেয়েটা সর্বক্ষণ চারপাশে থাকে, তাকে আবার এসএমএস পাঠাতে হবে কেন?
নাজ লিখেছে, “ফ্রেশ হয়ে, সোফার ওপরে রাখা পাঞ্জাবিটা পড়ে তাড়াতাড়ি বাইরে এসো। পুকুরের পাড়ে আমরা তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি।”
একটার পর একটা সাজানো কতগুলো স্বাভাবিক অক্ষর। অথচ এর মাঝেও যেন লুকিয়ে আছে মধুর কোনো সুর। মনের অজান্তেই সূক্ষ্ম এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো সায়েমের ঠোঁটের কোণে।
এ বাড়ির পেছনে বড়সর একটা পুকুর। নিয়ম পুকুরের পানির গভীরতায় ভয় পায়। কনা বহুবার তাকে সাঁতার শেখাতে চেয়েছিল, কোনোবারই তেমন লাভ হয়নি। পানিকে ভয় পেলেও পুকুরের তীর ঘেঁষে ছোটাছুটি করে বেড়ানো নিয়মের অন্যতম শখ। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
মাথার ওপরে ফুটন্ত লাল সূর্য আর নিচে অকৃত্রিম প্রকৃতিবিলাসী মা এবং মেয়ে। এই দৃশ্যটা কোনো চিত্রকরের চোখে পড়লে এক মুহূর্তও দেরি হতো না ক্যানভাসে বন্দী হতে। সায়েম একবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে দৃশ্যটা দেখে এগিয়ে গেল তাদের দিকে।
“কী ব্যাপার! এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
সায়েমের উপস্থিতি টের পেয়ে তার দিকে মনোমুগ্ধকর এক হাসি ছুঁড়ে দিলো নাজ, “তোমার রোগে ধরেছে হয়তো। কেন জানি লোকজন সহ্য হচ্ছে না।”
ফুটন্ত সূর্যটার কমলা আভা প্রতিফলিত হচ্ছে নাজের দুচোখে। মনে হচ্ছে যেন ঠোঁটের সাথে সমতা রেখে হাসছে তার চোখদুটোও।
সায়েম মুগ্ধ গলায় বলল, “তোমাকে আজ এত সুন্দর লাগছে কেন নাজ?”
কয়েক মুহূর্ত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে আনমনে হেসে উঠলো নাজ।
“হাসছো কেন?”
নাজ হাসি বজায় রেখেই বলল, “জীবনে প্রথম আমাকে এই কথাটা বললে।”
সায়েম প্রতিবাদের স্বরে বলল, “না! আগে বলেছি তো।”
“বলোনি, বললে আমার মনে থাকতো।”
সায়েম ঠাট্টার স্বরে বলল, “তোমার যে ডিফেক্টিভ স্মৃতিশক্তি! নিশ্চয়ই ভুলে গেছো।”
“তাই না-কি? আগে বলেছো আমাকে সুন্দর? কবে বলেছো মনে করে দেখো তো।”
“মনে করার কী আছে? এত সুন্দর একটা মানুষ সারাদিন চোখের সামনে ঘুরঘুর করে আর আমি একবারও তাকে সুন্দর বলবো না, তা কি করে হয়?”
নাজ কিছু একটা বলতে যাবে, তখনি শোনা গেল নিয়মের উৎফুল্ল কণ্ঠ, “বাবা! সূর্য্যির সাথে আমার একটা ছবি তোলো তো!”
সায়েম সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিয়মের কতগুলো ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো
ছবি তুলতে তুলতেই সুখময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়েম বলল, “মেয়েটা বড় হয়ে গেল তাই না?”
নাজ হাসিমুখে বলল, “হুঁ। একদিন হুট করে দেখবে কনার মতো ওরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”
সায়েম দুচোখে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে নাজের দিকে তাকিয়ে বলল, “যত যাই হয়ে যাক না কেন, আমরা তো ঠিক এমনি থাকবো তাই না?”
নাজ কয়েক মুহূর্ত তার চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে সমর্পণের স্বরে বলল, “তাছাড়া আর কোনো উপায় রেখেছ তুমি?”
দুজনে পরস্পরের হাত শক্ত করে ধরে রেখে দেখতে লাগলো নিয়মের কর্মকান্ড। আমরা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মানুষ হলেও একটা বৈশিষ্ট্যে আমাদের বেশ মিল। প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু জন্যে অপেক্ষা করে থাকি আমরা। অপেক্ষা পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলাটাও যেন দুঃসহ। অপেক্ষার পূর্ণতা যেখানে, মানুষের প্রশান্তি তো ঠিক সেখানেই। নাজ আর সায়েম দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে ছিল মা ডাক শুনবে বলে, বাবা ডাক শুনবে না। কারো ছোট্ট ছোট্ট পায়ের পদচারণায় তাদের ঘর মুখরিত হবে বলে। সেই অপেক্ষারা আজ বন্দী খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে।
(সমাপ্ত)
[❤️]