#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরাফ এবং ঈশিকা খানমে’র কথা শেষ হওয়ার পর ইরফান জিজ্ঞেস করলো- আম্মু’ আরিয়ান দিয়ান নিহান ওরা কোথায়?”
ঈশিকা খানম বললেন- ওরা তো সন্ধ্যার পর নাস্তা খেয়ে বের হয়েছিল এখনো ফিরেনি।
ইরফান মায়ের কথা শুনে আরিয়ান কে কল করলো!”
অপর পাশ থেকে আরিয়ান কল রিসিভ করে বললো- হ্যাঁ ইরফান বল!’ তোরা বাসায় ফিরেছিস?
ইরফান বললো- হ্যাঁ আমরা তো বাসায় চলে এসেছি!” তোরা কই?”
আরিয়ান: এই তো একটু ঘুরতেছি চলে আসবো।
ইরফান: গাড়ি নিয়ে গিয়েছিস?”
আরিয়ান: নাহ! হেঁটে হেঁটে চলে এসেছিলাম তারপর রিক্সায় চড়ে এসেছি।
ইরফান: দূর!” আচ্ছা কোথায় আছিস বল আমি আসছি!”
আরিয়ান: ঠিকানা বলে কল কে’টে দেয়।”
ইরফান বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে, সাথে যায় আরাফ।”
আরিশা নিরব হয়ে সবকিছু দেখছিল। আরিয়ান বাসায় নেই,কখন আসবে এটা নিয়ে ভাবছে ও। এখন ওর মন ক্র’মশ খা’রা’প হতে শুরু করেছে।” আচ্ছা এরকম হচ্ছে কেন এক পলক চোখের দেখাই তো!”
আরিশা রুমে চলে যায়,গোছাতে হবে এটা বলে। আরিশা যাওয়ার পর আরিয়াও চলে যায় রুমে।” ধীরে ধীরে অন্যান্য’রা’ও নিজেদে’র রুমে চলে যান।”
এইবার হৃদি ড্রয়িংরুমে একা দেখলো।দিশা ও নেই ওর মায়ের সাথে রুমে চলে গিয়েছে। এই সুযোগে হৃদি ইরিন কে বললো- ইরু তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
ইরিন বললো- হ্যাঁ বল না!”
হৃদি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো- রুমে চল।
ইরিন বললো- আয়!”
দু’জনেই চলে যায় ইরিনে’র রুমে।”
হৃদি দরজা ল’ক করবে তখন ইরিন বললো- প্রয়োজন নেই এখন কেউ আসবে না বল!’
হৃদি বললো- আচ্ছা ইরু, আরিয়ান ভাই আর আরিশা কী একে অপরকে ভালোবাসে?”
ইরিন বললো- তুই এসব জিজ্ঞেস করছিস কেন হৃদু?”
হৃদি: আরে বল না প্লিজ!” আমি জানতে চাই।
হৃদির কথা শুনে ইরিন ওকে ফার্স্ট টু লাস্ট সব খোলে বলতে লাগলো।”
সবকিছু শুনে হৃদি অবাক হয়ে বললো- এ রকম ভালোবাসাও হয়!”
কথা না বলে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রিলেশন না করে!” সামান্য কথার কারণে এক পলক না দেখে এভাবে বছরে’র পর বছর ভালোবাসা’র মানুষটি’র জন্য অপেক্ষা করা যায়।”
ইরিন: যায় কী না জানিনা তবে ওদের দ্বারা এমনটাই হয়েছে।” আরিয়ান ভাই আরিশা কে দেখলেও, আরিশা আরিয়ান ভাই কে দেখেনি।”
হৃদি: আরিশার জীবনে কী অন্য কেউ আসেনি বা আরিয়ান ভাইয়ার জীবনে?”
ইরিন: আরিয়ান ভাই একবার কথার ছলে আমাকে বলেছিলেন, দুটো মেয়ে উনাকে পছন্দ করে, উনার সাথে ওখানেই পড়ালেখা করে মেয়েগুলো বাঙ্গালী। কিন্তু আমার জানা মতে আরিয়ান ভাই ওদের সাথে বন্ধুত্বটাই করেনি।” আর আরিশার…….
হ্যাঁ আরিশা’র জীবনেও অন্য ছেলেদে’র আগমন ঘটেছিল।
ইরিন এবং হৃদি দরজা’র দিকে তাকায়। আরিয়া দাঁড়িয়ে আছে আর এই কথাটাও সে বলেছে।” আরিয়া ভেতরে ঢু’কে দরজা ব’ন্ধ করে দেয়।
তারপর বিছানায় এসে একটা বালিশ কোলে নিয়ে বসে সেখানে।” এরপর বলতে লাগে-
হ্যাঁ আরিশা’র জীবনেও অন্য ছেলেদে’র আগমন ঘটেছিল কিন্তু তারা ফিরে গিয়েছে।” ভার্সিটিতে আমাদের কোনো ছেলে বন্ধু নেই, কখনোই ছিল না। আরিয়ান ভাই চলে যাওয়া’র পর তো আরিশা মেয়েদে’র সাথেই কথা বলতো না, সবার থেকে দূরে থাকতো।”
কলেজে উঠে কিছুটা পরিবর্তন হয় বুঝতো তো সবকিছু, তবে ছেলেদে’র সাথে ও কখনো কথা বলতো না।” ভার্সিটিতেও আরিশা যেমন কারো সাথে কথা বলে না আমাদের কেও বলতে দেয় না।”
কলেজের এক অনুষ্ঠান শেষে রাহাত নামে’র একটা ছেলে আরিশা কে প্রস্তাব দেয়। রাহাত আমাদের এক ক্লাস সিনিয়র ছিল, প্রায়ই দেখা যেতো অনেক মেয়ে ওকে প্রস্তাব দিত কিন্তু ও তা ফিরিয়ে দিতো।” তবুও মেয়েরা হা’ল ছাড়তো না, এমন সুদর্শন যুবক আবার ক্লাস টপার ছেলে ছিল রাহাত।”
সেদিন আরিশা রাহাতে’র প্রস্তাব প্র’ত্যা’খ্যা’ন করে, সবাই অবাক চোখে তাকিয়েছিল। আরিশা শুধু একটা কথাই বলেছিল- আমি কখনো প্রেম করিনি আর করবো না। আর হ্যাঁ এটাও জেনে রাখবেন আমি একজন কে ভালোবাসি।”
এসব শুনেও রাহাত কয়েকদিন আরিশা:র পিছনে পড়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”
বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল ওর জন্য তিনটা, সেই প্রস্তাব গুলোও সে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ওর একটা কথা ছিল’ বড় আব্বু কে বলতো- কল করে পাত্র পক্ষ কে বলেন যে আমরা আমাদের মেয়েকে এখন বিয়ে দেবো না। না হলে সে রুমে’র দরজা খুলবে না। হলো ও তাই সবাই কে এই কথা গুলো বলতে হয়েছিল।”
তবুও আরিশা রুম থেকে দু-তিন দিন বের হতো না প্রয়োজন ছাড়া। যেহেতু ওর রুম আমার রুমের পাশেই তাই আমি শুনতে পেতাম আরিশা মাঝরাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতো।” বুঝতাম কতটা ক’ষ্টে দিন পার করছে ও।
তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহ’র কাছে সবকিছু চাওয়া’র মধ্যে একটা চাওয়া ছিল আরিয়ান ভাই।”
ও যেন ধরেই নিয়েছিল আরিয়ান ভাই-ই ওর একমাত্র জীবন সঙ্গী একমাত্র ভালোবাসা। ওর একটাই কথা ছিল যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আরিয়ান ভাইয়া’র জন্য অপেক্ষা করবে।” আল্লাহ ওকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না ওর প্রবল বিশ্বাস।” এইভাবেই আল্লাহর উপর বিশ্বাস ভরসা রেখে ধৈর্য ধারন করে অপেক্ষা করতো।” ওর যেন একটাই কথা আরিয়ান ভাই কেই চাই। তার জন্য যতটুকু অপেক্ষা’র প্রয়োজন,সে অপেক্ষা করবে। যতটুকু ধৈর্য ধারন করতে হয় করবে তবে অপেক্ষার শেষে সেই আরিয়ান ভাই কে চাই- চাই।”
তাইতো আজ অন্য ছেলে’র আগমন ঘটলেও আরিশা অপেক্ষারত।”
আরিয়ার কথা শুনেও হৃদি অবাক হলো, অপেক্ষা’র ও ভালোবাসা আছে!”
ওদের কথা শেষ হওয়া’র পর আরিয়া ইরিন নিচে চলে আসে।”
হৃদি ভাবতে থাকে হয়তো ওর দ্বারা একটা ভু’ল হয়ে যেতো।
এই দুটো মানুষে’র এই অন্যরকম অপেক্ষাময় ভালোবাসায় হয়তো ও তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে প্রবেশ করতো নিজের অজান্তে।”
হৃদি ভাবে- আচ্ছা যদি আমি ওদের মধ্যে প্রবেশ করতাম তাহলে তো ওদের পবিত্র ভালবাসাটা হেরে যেতো আমার জন্য।”
হৃদি বি’ষ’ন্ন মন নিয়ে উঠে চলে যায় নিজের রুমে।”
হৃদির আরিয়ান কে ভালো লেগেছিল, ও চেয়েছিল ইরিনে’র মতো ওর বাবা মাকেও বলবে এই ছেলেটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। এইরকম চিন্তা ভাবনা রেখে হৃদি নিচে চলে আসে রুম থেকে। মনে মনে বললো- অন্যের ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। এমন কিছু ভালোবাসা আছে যেগুলোর কথা শুনলে মনে মনে প্রশান্তি ছেয়ে যায়। পূর্ণতা পাক এই সব ভালোবাসা গুলো।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাত প্রায় দশটা এখনো আরিয়ান, ইরফান ওরা কেউ ফিরেনি।” এতোটা সময় চলে গেলো ওরা এখনো ফিরেনি, ঈশিকা খানমে’র চিন্তা হতে লাগলো।তিনি ইরফান কে কল করেন মূহুর্তে’র মধ্যে।”
তিনটা রিং হওয়া’র পর অপাশ থেকে ইরফান কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো-হ্যাঁ আম্মু বলো!”
ঈশিকা খানম- বলবো মানে!” তো’রা কোথায়?” এতো সময় হয়ে গেলো এখনো ফিরিসনি কেন?”
ইরফান বললো- আসলে আম্মু আরিয়ান,আরাফ ওদের সাথে অনেকদিন পর আমাদের কিছু পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে। সবাই একসাথে বসে কথা বলছি তাই সময় চলে গিয়েছে। তবে চলে আসবো আর একটু লে’ট হবে, অনেকদিন পর দেখা হয়েছে আর কবে ওরা আসবে আর কবে দেখা হবে।” আর একটু সময় কাটিয়েই চলে আসবো তোমরা খেয়ে নাও।”
ছেলে’র কথায় ঈশিকা খানম আর কিছু বললেন না ।”
সবাই রাতে’র খাবার খেয়ে নিজ নিজ কক্ষে চলে যান।দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা এগারোটা’র ঘরে পৌঁছালো। এগারোটা পনেরো মিনিটে ওরা বাড়িতে আসে।
ঈশিকা খানম দরজা খুলে দিয়ে বললেন তোমরা এসেছো! ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।”
আরিয়ান বললো-আন্টি আমরা খেয়ে এসেছি আর খাবো না।” ইরফানও বললো- হ্যাঁ আম্মু আমরা খেয়ে এসেছি এখন আর খাবো না কেউ।”
ঈশিকা খানম: তোদের কান্ড কারখানা দেখলে মন চায়……
বলতে বলতে কিচেনে চলে গেলেন। ওরাও হেঁসে একেকজন নিজেদের রুমে চলে যায়।”
ইরিন এতোক্ষণ ফোন টিপছিল, হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে দরজা’র দিকে দৃষ্টি দিল। নিহান কে দেখেই ফোন রেখে ফ’ট করে শোয়া থেকে উঠে বসে। বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে এসে বললো- এই এই আপনি আমার রুমে ঢু’কবেন না বের হয়ে যান এক্ষুনি।”
নিহান বাচ্চাদে’র মতো মুখ বানি’য়ে বললো- আমি কোথায় যাবো বউ?” মানুষ কী বলবে?”
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
ইরিনের কথায় নিহান বাচ্চাদে’র মতো মুখ বানি’য়ে বললো-আমি কোথায় যাবো বউ?” মানুষ কী বলব?”
ইরিন: আমি জানিনা এতোক্ষণ বাহিরে থাকতে পেরেছেন, বাকি রাতটুকুও বাহিরে কা’টিয়ে আসুন।”
নিহান বুঝতে পারলো ইরিনে’র এমন করা’র কারণ। নিহান অ’স’হা’য় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- বউ আমি না তোমাকে কল করতে চেয়েছিলাম! কিন্তু সবার সামনে কীভাবে বলতাম।” তবুও ভেবেছিলাম দূরে গিয়ে কল করে বলবো কিন্তু ইরফান ভাই আম্মু কে কল করে বলেছেন! তাই আমি আর বলিনি তোমাকে। আর সুযোগও পাইনি।”
ইরিন হাত দু’টো ভাঁজ করে বললো- আমি কী এসব আপনার থেকে জানতে চেয়েছি?” আপনি এই আমার রুমে থাকতে পারবেন না মানে পারবেন না ব্যাস।
নিহান ফু’স করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো- আচ্ছা ফ্রেশ তো হতে দাও পরে চলে যাবো।”
ইরিন ছোট ছোট চোখ করে তাকায় নিহানের দিকে,তারপর একটা হাই তুলে বললো- ঠিক আছে তবে জাস্ট পাঁচ মিনিট।” পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যাবেন।”
আমার ঘুম পেয়েছে বলে বিছানায় চলে যায়।
নিহান ইরিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে দুঃখী ভাবে বললো- কী মেয়ে’রে বাবা জামাই কে বলে রুম থাকতে দিবে না। হাহ!” দেখা যাক কে থাকে আর কে থাকে না।” এসব বির’বির করতে করতে নিহান ওয়াশরুমে ঢু’কে যায় একটা টিশার্ট এবং ট্রাউজার নিয়ে।”
ফ্রেশ হয়ে এসে ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে ব’ন্ধ করে দেয়। ধীর পায়ে হেঁটে বিছানার দিকে এগিয়ে যায় নিহান।” বিছানায় উঠে ইরিনের কোনো সা’ড়াশব্দ না পেয়ে সেও কোনো কথা না বলে ইরিন কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। ওপাশ থেকে ইরিন মুচকি হেঁসে চোখ বন্ধ করে নেয়।”
~~~~~~~~~~~~
ভোর প্রায় ছয়টা চুয়াল্লিশ মিনিট। ঘড়ি’র দিকে চোখ পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসে আরিশা।”
গতকাল রাত প্রায় এগারোটা ছয় মিনিট পর্যন্ত জেগে ছিল, কিন্তু কীভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি।”
আরিশা’র মনে পড়লো সাতটায় আরিয়ানের ফ্লাইট। আরিশা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।”
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো আরিয়ান কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।”
আরিশা’র বুঝতে বাকি নেই আরিয়ানে’র বিদায়ে’র সময় ঘনিয়ে এসেছে।”
আরিশা দূর থেকে শুধু তাকিয়ে রইলো প্রিয় মানুষটা’র দিকে।”
ধীরে ধীরে আরিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
ওর সাথে যায় আরাফ, ইরফান,নিহান,দিয়ান।
আরিশা আবার সবার আড়ালে নিজের রুমে চলে আসে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়।”
ধীরে ধীরে আরিয়ানে’র গাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
আরিশা টল’মল দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ানের গাড়িটা যতদূর চোখে’র দৃষ্টি গেল।”
তবে আরিশা জানতেই পারলো না তার অগোচরে, প্রিয় মানুষটা তাকে মন ভ’রে দেখে নিয়েছে।”
ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগলো, আরিশাদের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো।
ওরা তৈরি হতে শুরু করে, নিচে এসে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
ওরাও বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।
ইরিন, নিহান, আরিয়া,আরাফ,দিশা,দিয়ান, আরিশা,ইরফান, হৃদি। ওরা সবাই রওনা দেয় এয়ারপোর্টে’র উদ্দেশ্যে।
কিছু মূহূর্ত পর এসে ওরা পৌছায় ওদের গন্তব্যে।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে আরিশা,আরিয়া, আরাফ আবারো রওনা দেয় নিজেদে’র গন্তব্যে’র উদ্দেশ্যে।”
সময় গতিশীল, তাঁর নিজের গতিতে সে চলে যায় দূর বহুদূর। কারো জন্য কখনো থেমে থাকেনি আর থাকবেও না কখনো।”
আরিশা, আরাফ ,আরিয়া নিজেদে’র বাসায় পৌঁছাল দুপুর একটায়। মা, চাচি’র সাথে কথা বলে ওরা নিজেদে’র রুমে চলে যায়।”
ফ্রেশ হয়ে আরিশা ঘুমিয়ে পড়লো। ওর কেন যেনো কোনো কিছু ভালো লাগছে না। ঘুমালে হয়তো এই ভালো না লাগা’র সময়টা একটু তাড়াতাড়িই যাবে।”
আজানে’র ধ্বনি কর্ণকুহুর হতেই আরিশা’র ঘুম ভে’ঙ্গে যায়। বুঝতে পারে আসরের আজান, আরিশা শুয়া থেকে উঠে বসে। ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ আদায় করে নেয়।”
মায়ের কক্ষের দিকে অগ্ৰসর হয়ে আরিশা। কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখলো আয়শা সিদ্দিকা নামাজে আছেন। নিঃশব্দে মায়ের রুম ত্যাগ করে আরিশা।” পা বাড়ায় ছাদের উদ্দেশ্যে।
টবে লাগানো ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো একটু পানি দিলে ভালো হবে।”
আরিশা ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল তখন আরিয়া এসে ওর কাছে ফোন দিয়ে বললো- নে ধ’র ইরিন কথা বলবে।”
আরিশা অনেকটা সময় নিয়ে কথা বলে ইরিনের সাথে।” তারপর আবার দু’জনে মিলে পানি দেয় তাদের লাগানো গাছে। দুজনে’রই ফুল পছন্দ তবে আরিশার যেনো একটু বেশিই পছন্দ, একপ্রকার আসক্তি ফুলের প্রতি।”
রাত প্রায় নয়টা সবাই বসে কথা বলছেন ড্রয়িংরুমে। আরিশা,আরিয়াও সবকিছু বলছিল আরিফা আফরোজ এবং আয়শা সিদ্দিকা কে।”
আশরাফ চৌধুরী এবং আরমান চৌধুরী বাসায় ফিরে আসেন। আরাফ সন্ধ্যার দিকে বের হয়েছিল সেও ফিরে আসে।”
সবাই রাতের খাবার শেষ করে নিজেদের রুমে চলে যান।”
~~~~~~~~~~~
এভাবেই কে’টে গেলো অনেক গুলো দিন। আরিশা নিজের পড়ালেখা, ভার্সিটি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ঠিক দিন শেষে প্রিয় মানুষটা কে মনে পড়ে।”
দূরে থাকলে হয়তো মন কে বুঝানো যায়। কিন্তু কাছে থাকলে প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য হয়তো মনটা ব্যকুল থাকে।” চোখে’র দেখা না দেখলেও একটু কথা বলতে চায় মন।”
তবুও সবকিছু’র মধ্যে আরিশা নিজেকে সামলে নিচ্ছে। কিন্তু কতবার?” ঠিক দিন শেষে আরিয়ানে’র কথা মনে পড়ে। একটু কথা বলা’র জন্য মন আঁকুপাঁকু করে।”
একপলক দেখা’র জন্যও ছাতক পাখির ন্যায় চেয়ে তাকে কিছু সময় রাস্তা’র পানে! যদি হঠাৎ এক পলক দেখা যায়।”
কিন্তু না প্রিয় মানুষটাকে দেখা হয় না আরিশা’র।”
অপেক্ষা’র শেষটা যেমন সুন্দর তেমন অপেক্ষা করাটাও কঠিন।”
যে অপেক্ষা করে সে যানে অপেক্ষার প্রহর কতটা দীর্ঘ। যেন কোথাও আটকে গিয়েছে, তেমন আরিশাও।”
ও এখনো জানেনা আরিয়ান আদৌ দেশে আছে নাকি চলে গিয়েছে।অনেকবার ইরিন কে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।” আরিয়াকেও জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিন্তু কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে ওর মধ্যে।”
জিজ্ঞেস করবে কী করবে না এই দিদ্বাদন্ধের মধ্যে আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি।”
আরিশা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। মনে হলো ড্রয়িংরুমে কেউ কথা বলছে। ও ধীর পায়ে হেঁটে রুমের বাহিরে এসে নিচের দিকে তাকায়। কেউ এসেছে, মানুষ টা কে একপলক দেখে চোখ ফিরিয়ে আবার ফ’ট করে ফিরে তাকায়। ওর দেখার ভু’ল না হলে নিচে ড্রয়িংরুমে আরিয়ান বসে আছে।”
ও হাত দিয়ে চোখ কচলে আবার চোখ বড় বড় করে তাকায়। নাহ একদম ভু’ল নয়! আরিশা’র বিষ’ন্ন মন যেনো মূহুর্তেই ভালো লাগায় ছেয়ে যায়।”
আরিশা উপর থেকে অপলক তাকিয়ে রইলো তার আরিয়ান ভাইয়ে’র দিকে।” যেন হাজার জনম না দেখার তৃষ্ণা নিবারণে’র প্রয়াস।”
আরাফ আরিয়ান কে বসতে বলে সেও পাশে বসে পড়ে। তারপর আয়শা সিদ্দিকা কে ডাক দেয়- আম্মু কোথায় তোমরা সবাই এসো।”
ছেলের ডাক শুনে আয়শা সিদ্দিকা ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হোন।
আরাফে’র পাশে আরিয়ান কে বসে থাকতে দেখে ভাবেন কে এই ছেলেটা!”
আরিয়ান আয়শা সিদ্দিকা কে দেখেই সালাম দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আরাফ বললো- আম্মু ও আরিয়ান।
আয়শা সিদ্দিকা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে সালামে’র জবাব দেন। তারপর ওকে বসতে বলে নিজেও বসেন এবং বলে উঠেন- কেমন আছো বাবা তুমি?”
আরিয়ান জবাবে বললো- আলহামদুলিল্লাহ আন্টি ভালো আছি!” আপনি কেমন আছেন?”
আয়শা সিদ্দিকা বললেন: আলহামদুলিল্লাহ বাবা আমিও ভালো আছি।”
উনাদে’র কথার মধ্যেই আরিফা আফরোজ এসে সেখানে উপস্থিত হোন। আরিয়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আরিফা আফরোজ কিচেনে চলে গেলেন।
মিনিট কয়েক পর আবার ড্রয়িংরুমে আসেন অনেক ধরনের নাস্তা নিয়ে।”
আরিয়ান সৌজন্যমূলক হাঁসি দিয়ে টুকটাক কিছু খায় সেখান থেকে।”
উনারা কথা বলছিলেন তখন নিচে আসে আরিয়া। ওর বোতলে’র পানি শেষ, পানি নেওয়ার জন্যই আসা।” সোফায় আরিয়ান কে বসে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়।”
চলবে!