#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২১
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
হাঁসি, আড্ডা, গল্পে’র মধ্যে কে’টে যায় অনেকটা সময়।
এখন সবাই মিলে আরিশা’র বিয়ে’র কাপড় দেখছে। বিয়ের সব কাপড় গুলোই সুন্দর, এবং আরিশা’র সাথে মানানসই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাপড় গুলো পছন্দ করা মানুষটা’র পছন্দ কত সুন্দর।”
ইরিন,আরিয়া সবকিছু দেখে আবার গুছিয়ে রাখলো।”
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা, সবাই রাতে’র খাবার খেয়ে নিজেদে’র রুমে চলে এসেছেন।”
আরিশা নিজের রুমে শুয়ে আছে। আরিয়ানে’র নাম্বার দেখছে হোয়াটসঅ্যাপে কিন্তু কোনো মেসেজ করছে না।” কতকিছু বলার ছিল আরিয়ান কে কিন্তু বলা হলো না।”
আগে যোগাযোগ করার জন্য এই নাম্বার ছিল না। তবুও কথা বলার জন্য কত চেষ্টা করেছিল গোপনে।”
আর আজ সেই নাম্বার থেকেও কথা বলতে পারছেনা।”
আসলে কী এটা অনেকদিন কথা না বলার অভ্যাস নাকি দুজনে’র মধ্যে কথা না বলার’ অদৃশ্য একটা দেয়াল।”
আরিশা ব্যর্থ হয়ে বের হয়ে গেল হোয়াটসঅ্যাপ থেকে।”
ফেসবুকে ঢু’কে ইরিনে’র আইডিতে নিহানে’র আইডি দেখে আরিশা। আনমনেই নিহানে’র আইডিতে প্রবেশ করে।” কিন্তু ঢু’কেই যে এমন কিছু দেখবে ভাবেনি।”
নিহান, আরিয়ান,দিয়ান ওদের তিনজনে’র একটা ফটো পোষ্ট করা আছে নিহানে:র টাইমলাইনে! সাথে ওদের আইডি ট্যাগ করা।”
আরিশা কাঁপা কাঁপা হাতে আরিয়ানে’র আইডিতে প্রবেশ করে! ভাগ্য ভালো প্রোফাইল ল’ক করা নেই।”
আরিয়ানে’র অনেক ফটো দেখলো আরিশা।”
যতই দেখছে ততই যেন মুগ্ধ হচ্ছে! সাথে আরিয়ানে’র অনেক গুলো ফটো সংরক্ষণ করে রাখলো নিজে’র ফোনে।”
হঠাৎ ভাবলো এটা কী করছি আমি?” এই মানুষটাকে আমি পাবো না।
কাল বাদ পরশু আমি অন্য কারো অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবো। অন্য কারো সাথে আমার জীবন জুড়ে যাবে।”
তাহলে কেন আমি এই মানুষটার কোনো অস্তিত্ব আমার কাছে রাখছি। না না এটা ঠিক নয়!” আল্লাহর ইচ্ছাই বড় ইচ্ছা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেনা। আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালো,র জন্যই করেন।”
তবুও আরিশা আরিয়ানের ফটো’র দিকে তাকিয়ে আছে।” অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে মনে মনে বললো- কেন আরিয়ান ভাই কেন আবার তুমি কাছে আসলে। দূরে ছিলে ভালোই তো ছিলে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতাম।”
কিন্তু আবার কেন কাছে এসে এই অগোছালো আমিকে আবার এলোমেলো করে দিলে?”
তুমি ছাড়া অন্য কাউকে যে কল্পনায়ও নিজের পাশে দেখলে আমার ভেতরে কম্পন সৃষ্টি হয়। মানতে পারিনা, খুব কষ্ট হয় জনাব।”
কথা গুলো বলে আরিশা ফোন চেপে ধরে বুকের মধ্যে।” চোখ বুজতেই চোঁখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরে দুফোঁটা নোনাজল।”
~~~~~~~~~~~~~
আরিয়া পানির বোতল হাতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ কেউ ওর হাত টেনে একটা রুমে নিয়ে যায়!” তারপর দরজা বিড়িয়ে দেয়।”
আরিয়া ভ’য়ে ভ’য়ে মাথা কিছুটা উপরে তুলে দেখলো মানুষটাকে।”
তাকে দেখে একটা স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ছাড়লো! তবে শ্বাস চলছে অস্বাভাবিক গতিতে।” আরিয়া বুকে হাত রেখে জোরে আরো একটা নিঃশ্বাস নেয়।”
আরাফ আরিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”
আরিয়া ওর দিকে ক’ট’ম’ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- ভাইয়া তুমি এই রাত বিরাতে যখন তখন এই হাত ধরে টানাটানি করো কেন?” ভয় পেয়ে না জানি কবে আমি হার্ট অ্যা’টা’ক করে বসি।”
আরাফ: আচ্ছা তলে তলে এতো কিছু আর আমি কিছুই জানিনা। কবে থেকে এসব তুই তো জানতি এসব আমাকে কেন বললি না।”
আরিয়া ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো আরাফে:র দিকে।”
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- কী কী জাজানি আআআমি?”
আরাফ: কিছু জানো না সোনা দাঁড়াও বলছি।”
তারপর আরাফ আরিয়া কে যা বললো- তা শুনে আরিয়া অবাক হয়। তারপর বললো- ভাইয়া তুমি ভুল ভাবছো তেমন কিছু নয়……..
সবকিছু খুলে বললো- আরাফকে।”
সবকিছু শুনে আরাফ বললো- তুই একবার আগে আমাকে বললি না কেন?”
আমি ভয়ে কিছু বলিনি যদি তুমি কিছু বলো!”
আরাফ: আচ্ছা বাদ দে! তা তুই এতো রাতে বাহিরে চ’ক্ক’র দিচ্ছিস ঘুম নেই?”
আরিয়া হাতে পানি’র বোতল দেখিয়ে বললো- এই যে পানি নিতে এসেছিলাম।”
আরাফ: ওহ আচ্ছা!” ওকেই এবার তুই যেতে পারিস।”
আরিয়া বেরিয়ে যাবে তখন আরাফ ওকে আবার সামনে এনে দাড় করিয়ে ওড়না ঠিক করে পরিয়ে দেয়।” এবং বলে ওড়না সবসময় এইভাবে পড়বি।
আরিয়া: এইভাবেই পড়ি ঘুম থেকে উঠে আসায় এরকম হয়ে আছে।”
আরাফ চোখ বন্ধ করে বললো- হয়েছে যা এবার।
আরিয়া মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।”
আরাফ দরজা ল’ক করে লাইট নিভিয়ে দেয়। চুল খাম’চে ধরে বিরবির করে বললো এই মেয়ে পা’গ’ল করে দেবে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সকাল প্রায় আটটা ঊনত্রিশ মিনিটে’র দিকে ঘুম ভা’ঙ্গে আরিশার।”
ঘড়িতে সময় দেখে চট করে উঠে বসে। তারপর ভাবলো আজ তো ভার্সিটিতে যাওয়া নেই। গায়ে হলুদ তাই তো আম্মু ডাকেননি আর ওরও নামাজ নেই তাই ভোরে উঠেনি।”
আরিশা ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।” ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে বসলো।
আরিশার মামাতো বোন সাওদা কিচেনে গিয়ে আরিফা আফরোজ কে বললো- আরিশা আপু এসেছে নাস্তা দাও আন্টি।” তিনি বললেন আচ্ছা তুমি যাও নিয়ে আসছি।”
সময় যেতে লাগলো প্রায় বিকেল গড়িয়ে আসছে। অনেক মেহমান এসেছে, আরো অনেকে আসার বাকি।”
সবকিছু কেমন আরিশার কাছে অসহ্য লাগছে। বিষাদে ভরে গেছে মন।” মানুষের আসা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আরিশা, যদি একবার আরিয়ান কে দেখে! আজ তো ওর হলুদ অনুষ্ঠান নিশ্চয়ই আসবে।”
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা সাতটা! মেয়েরা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।”
আরিশা ওর বাবাকে বলেছে ওর হলুদ বড় করে না করার জন্য অর্থাৎ স্টেজ বাঁধতে হবে না।”
হলুদ যেহেতু ওকে শুধু মহিলারা ছোয়াবেন তাই যেকোনো একটা রুমে ছোট করে আয়োজন করা হোক।”
আশরাফ চৌধুরী মেয়ের কথায় হাঁসি মুখে রাজি হলেন।
নিচ তলার কর্নারের রুমটা সুন্দর করে সাজিয়েছেন। একমাত্র মেয়ে তার বিয়েতে এরকম বলেছে তিনি মেয়ের কথা রাখবেন না তাতো হয় না!”
রাত সাড়ে নয়টায় আরিশাকে ওই রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওর কথা মতো শুধু মহিলা এবং মেয়েরাই ছিল।
বাড়ির মানুষ ছাড়া অন্য কেউ হয়তো জানতেই পারতো না এই বাসায় যে হলুদ অনুষ্ঠান হচ্ছে। যদি না খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।
হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয় আরিশা গোসল সেরে নেয়। তারপর আরিশার হাতে সুন্দর করে মেহেদী পড়িয়ে দেয় আরিয়া এবং মাওয়া।
সবকিছু শেষে আরিশা প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে নিজের রুমে আসে। হাত ধুয়ে এসে শোয়ার প্রস্তুতি নেয়। লাইট অফ করবে এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে।”
লাইট অফ দা করে ফোন হাতে নেয় ও। ফোনের স্ক্রিনে নামটা দেখেই আরিশার বুকটা ধ’ক করে উঠে।” কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করে, কম্পি’ত কন্ঠে সালাম দেয়।”
ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে আরিয়ান জিজ্ঞেস করলো- ঘুমাচ্ছো আরু?”
আরিশা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো- না ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।” কিছু বলবেন?”
আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- আরু তোমার কাছে একটা কিছু চাইবো দিবে?”
আরিশা বুঝতে পারলো না তবুও বললো- আচ্ছা দেবো কী চান?”
আরিয়ান দেরি না করে বললো- একটা ভিডিও কল দেই!” শুধু একটা কথা বললেই হবে।”
আরিশা না করতে পারলো না আরিয়ানের কথায়। আনমনেই বলে দিলো হু।”
আরিয়ান সম্মতি পেয়ে মুহূর্তেই কল কে:টে ভিডিও কল দেয়।”
আরিশা আবার শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠে, কল রিসিভ করে। তারপর ক্যামেরা টা ওর দিকেই রাখে, কারণ ওর বুঝতে বাকি নেই আরিয়ান ওকে দেখার জন্যই কল দিয়েছে।”
আরিয়ান কিছু না বলে শুধু আরিশা কেই দেখছে।” আরিশা অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখেছে।
নিরবতা ভেঙ্গে আরিয়ান বললো- আরু তোমার হাতের মেহেদী দেখি।”
আরিশা হাত দুটো উঁচু করে দেখায়।” কিছুক্ষণ পর আরিয়ান বললো- আরু!”
আরিশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো- কী?”
আরিয়ান: তুমি কী তোমার হবু স্বামী কে দেখেছো?”
আরিশা শক্ত গলায় উত্তর দিল- আমার মা বাবার পছন্দ নিশ্চয় খারাপ হবে না। আর হলেও সমস্যা নেই আমার, মানুষ সুন্দর না হোক মন সুন্দর হলেই চলবে।”
তারপর বললো-আচ্ছা ভালো থাকুন আমার ঘুম পেয়েছে বলেই খ:ট করে কল কে’টে দেয়।
ফোন বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে আরিশা।”
চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। মনে মনে আওড়ায় কালই তুমি এই কল করার অধিকারটা হারাবে আরিয়ান ভাই।” কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে’র সাগরে তলিয়ে যায় আরিশা।”
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২২
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিয়া মাওয়া’র রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে’র দিকে যাচ্ছিল। তখন কেউ ওর হাত টেনে ধরলো। দেয়ালের সাথে আরিয়াকে চে’পে ধরে মানুষটা ওর দিকে একটু মুখ এগিয়ে নেয়।”
আরিয়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখন গালে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো।” সেই হাত গাল থেকে গলায় গেলো, সাথে সেই ঠান্ডা জিনিস।”
আরিয়া কেঁপে উঠে, চোখ ব’ন্ধ করে নেয়। তখন ওর কানে’র কাছে মুখ এনে সেই মানুষটা ফিসফিস করে বললো- একদম হলুদ প’রি লাগছিল তোকে রিয়ু পাখি। ”
রিয়ু পাখি নামটা আজ দীর্ঘ তিন মাস পর শুনলো আরিয়া।”
আরিয়া কাঁপা গলায় বললো- আর….
বলা’র আগেই সেখান থেকে চলে গেলো আরাফ।” এই মানুষটা আরাফই ছিল।”
আরিয়া মনে মনে বললো- কী ব্যাপার ভাইয়া কিছু না বলে চলে গেলো কেন?” দূর ভালোই হয়েছে।”
সে তার রুমে চলে আসে। ওয়াশ রুমে ঢু’কে প্রথমে হাতের মেহেদী ধুয়ে নেয়। এই মেহেদী’র জন্যই এতো রাত হলো। সবাই কে পরিয়ে দিতে দিতে সময় নেই নিজে পরার।
আরিয়া হাত ধুয়ে একবার আয়নার দিকে তাকায়। গলায় আর গালে হলুদ লেগে আছে।”
মুখটাকে কাঁদু কাঁদু করে বললো- ভাইয়া এইটা কী করলো?” এখন আমাকে আবার গোসল করতে হবে,দূর।”
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সে সুইচে’র দিকে তাকায়। ওমা হিটারে’র সুইচ কে অন করলো। আরিয়া সাথে সাথে খুশি হয়ে গেলো মানে তাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে না।”
~~~~~~~~~~~~~~~
সকাল সাতটা উনিশ মিনিট সবাই নাস্তার টেবিলে বসে খাচ্ছেন।” ইরিন এবং নিহান এগিয়ে আসলো ডাইনিং টেবিলে’র দিকে। নিহানের উঠতে আজ লেট হয়েছে তাই ইরিনও আসেনি। সবার সাথে ওরা নাস্তা সেরে নেয়। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় নিহান ইরিনে’র মা বাবা এসেছেন।”
বেলা সাড়ে দশ’টা, পার্লার থেকে দুটি মেয়ে নিয়ে আসা হয়েছে আরিশা কে সাজানো’র জন্য। আরিশা কে শাড়ি পড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলে’র সামনে বসানো হলো।”
এবার ওকে কীভাবে সাজাতে হবে সেটা ও নিজেই বলে দিল। আরিশা একদম সিম্পল সাজের কথা বলেছে তা দেখে ইরিন অবাক হয়ে বললো- আরু তুই কী তোর অমতে বিয়ে হওয়ার জন্য এইভাবে সাজতে চাচ্ছিস?”
আরিশা: কী বলিস! বিয়ে তো একবারই হবে। এটা আল্লাহর হাতে যার সাথেই হোক আমি মানিয়ে নেবো।
কিন্তু বিয়ের সাথে সাজের কী সম্পর্ক? বিয়ে তো সাজগোজ করলেও হবে না করলেও হবে।
আমার এইরকম ভাবে সাজা’র ইচ্ছা ছিল আর হলুদটাও এইভাবে হওয়ার ইচ্ছা ছিল। হলুদের ইচ্ছেটা পূর্ণ হয়েছে এইবার বিয়ের সাজটাও পূর্ণ হোক।কথা গুলো বলে আরিশা হাসা’র চেষ্টা করলো।
কিন্তু আরিশার ভেতর কাঁপছে,কীভাবে এই বিয়ের আ’স’ড়ে ও বসবে। খুব করে চাচ্ছে আরিশা কিছু একটা হয়ে যাক। এই বিয়েটা যেন না হয়, আর সে আরিয়ান কে পেয়ে যাক।”
আরিশার দিকে তাকিয়ে ইরিন একটু হাসলো। ওরা তো এমনটাই চেয়েছিল, যেন আরিশা ভে’ঙ্গে না পরে। আর হয়তো তাই হচ্ছে।” মনে মনে আরো কিছু ভেবে ইরিন মুচকি হাসলো।”
আরিশার সাজ কম্পিল্ট,সবাই একপলক ওর দিকে তাকালো। ওকে একদম পুতুলে’র মতো লাগছে এই সিম্পল সাজে। মাথায় হিজাব করায় ওর সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
ওকে দেখে দিশা বললো- মাশা-আল্লাহ তোমাকে কী সুন্দরটাই না লাগছে গো আপু।” আমি ছেলে হলে এখনই তোমাকে বিয়ে করে নিতাম। দুলাভাই তো তোমাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবেন।”
দিশা’র কথা শুনে আরিশা লাজুক হাসলো। সে নিজেও একবার নিজেকে পরখ করলো। সত্যিই ওকে সুন্দর লাগছে বিয়ের শাড়িতে।”
আরিশার ভেতরটা ধ’ক করে উঠলো নিজের দিকে তাকিয়ে বললো-এরকমটা তো আমি আরিয়ান ভাইয়ার জন্য সাজতে চেয়েছিলাম! তাহলে?”
আরিশা নিজেকে বুঝালো নাহ! আমি আর ভাববো না উনার কথা।”
একে একে অনেকেই চলে গেলো নিজেরা তৈরি হতে।”
দুপুর একটা চারিদিক থেকে শুনা যাচ্ছে বর এসেছে। আরিশার কানে কথাটা আসতেই ওর শরীরে ক’ম্প’ন সৃষ্টি হলো। তাহলে কী শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েই যাবে?”
আরিশা ওর আশে পাশে থাকা সবার দিকে তাকায়।”
ওর ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে গিয়েছে। ব’ক্ষস্থলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে।
মনে প্রাণে চাচ্ছে এই বিয়েটা না হোক, বাঁচতে পারবে কী এইভাবে আরিয়ান কে ছাড়া?”
আরিশা’র মনে হচ্ছে ওর জীবনে’র সবথেকে কঠিন সময় বয়ে যাচ্ছে এখন।”
তবে এটাই কী নিয়তি’র খেলা, ভাগ্য কী শেষ পর্যন্ত সহায় হলো না।” কী এমন চেয়েছে একটা মানুষ কে তো জীবনে চলার পথে। শেষ পর্যন্ত কী তাকেও পাবে না?”
জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে না?” #অপেক্ষার_শেষে যা চেয়েছিল তা কী সত্যিই পাবে না?”
হ্যাঁ আল্লাহ আপনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হয়তো এই মানুষ টাকে পেয়ে গেলে আমি ভালো থাকবো।”
নতুন করে কীভাবে অন্য মানুষ কে আমি জীবনে মেনে নেবো?”
এতো দিন যার জন্য অপেক্ষা করেছি তাকে কী পাওয়া হবে না?”
আরিশা থেমে থেমে ইরিন কে বললো- ইরু সোহা, মিতু কোথায় রে?”
ইরিন আমতা আমতা করে বললো- আছে হয়তো কোথাও!” এখন বোধহয় নিচে গিয়েছে।”
আরিশা: ওহ কাল থেকে ওদের কে দেখছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ইরিন: ওহ!” আছে কোথাও।”
অনেকেই আসে নিচ থেকে, সবাই ধরে আরিশা কে নিচে নিয়ে যায়। আরিশার যেনো পা টাই চলছে না। ভেতর টা কাঁপছে অস্বাভাবিক গতিতে! শেষ পর্যন্ত প্রিয় মানুষ হারানো’র শোকটা কী আরিশাও অনুভব করবে?”
কাঠের পুতুলে’র মতো যে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছে আরিশা।”
আরিশাকে বরের পাশে বসানো হলো। এখন যেন আরিশার মা বাবার উপর বড্ড অভিমান হচ্ছে। কী এমন ক্ষতি হতো আরো একটু সুযোগ ওকে দিলে।”
কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে আরিশা।” সে তার দৃষ্টি নিচে’র দিকে করে নিলো। পাশে বসে থাকা ওর বরকে একপলক দেখলো না, আর না দেখার চেষ্টা করলো।”
আরিশা আরো একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। নাহ! আরিয়ান কোথাও নেই তাহলে কী ও বিয়েতে আসেনি?” নাকি এখানে নেই?”
আরিয়ার দিকে একবার দৃষ্টি দিলো আরিশা। দেখলো আরিয়া কে কেমন অ:স্থির দেখাচ্ছে।” মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।”
আরিশা ভাবলো পরে জিজ্ঞেস করবে কী হয়েছে ওর। আবারো দৃষ্টি নামিয়ে নেয় আরিশা।” আপাতত কোনোকিছু দেখতে ভালো লাগছে না। অশান্তি ঘিরে রেখেছে ওকে।”
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।”
আরিশাকে কবুল বলতে বলা হয়। সে অন্যমনস্ক হয়ে ছিল। কথাটা কানে পৌঁছাতেই চোখ বন্ধ করে কবুল শব্দটা উচ্চারণ করে।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মনে হচ্ছে কেমন যেন একটা পাথর বুকের উপর থেকে নেমে গিয়েছে, প্রশান্তির হাওয়া ছেয়ে যায় ওকে।”
মাথা করে নিলো, দুফোঁটা অশ্রুকণা ঝরে পড়লো নেত্রযুগল থেকে।”
আরিশা বুঝতেই পারলো না এই অশ্রু যে ওর প্রাপ্তির অশ্রু।”
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত করে নিলেন। মোনাজাত শেষ হতেই আরাফ ওর বাবা অর্থাৎ আশরাফ চৌধুরী’র পাশে এসে বললো- আব্বু আমি বিয়ে করবো! আর তা এখনই।”
ছোট আব্বু এখন তোমার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দাও।” তুমি বলেছিলে ও বড় হোক আর আমি চাকরি পেলেই বিয়ে দেবে। তোমার মেয়েকে আমার করে দেবে , এখন দাও তোমার মেয়েকে।”
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো। আশরাফ চৌধুরী এবং আরমান চৌধুরী বললেন কী বলছো আরাফ এখন বিয়ে করবে মানে কী?
আমরা বলেছি বিয়ে দেবো তোযাদের কিন্তু এখন বিয়ে মানে কী বলছো এসব?”
আরাফ: সেই তো একসময় দিতেই হবে এখন দিয়ে দাও।”
আরাফের কথা শুনে আরিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। মনে হচ্ছে ও জানতো এমনটাই হয়তো হবে।”
চলবে!