#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৩
অফিসে পৌছানোর পরে ইমরান নিজের রুমে ঢুকে ডেস্কের উপরে মাথা রেখে উপুর হয়ে থাকে। রাহাতের ব্যাপারটা মাথার ভিতরে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। মনের মধ্যে খচখচ করছে।
আজকে কেনো জানি রিপার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠে।
এতকিছু ভাবনার ভিতরে হঠ্যাৎ করেই মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো। লাফ দিয়ে উঠে ফোনটা হাতে নিতেই চমকে উঠলো। বুঝতে পারলো Wi_Fi কানেকশন পাওয়ার সাথে সাথেই ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আসছে অফিসে ঢোকার সময়ে। আজকে মোবাইলটা সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছিলো সে। মোবাইলের স্ক্রিনের উপরে দিকে তাকিয়ে দেখে রাহাতের আইডি থেকে ভিডিও সেন্ড করা হয়েছে। দেখেই বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো। হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে।
ভাবছে ভিডিওটা কীসের হতে পারে?? অনেক জল্পনাকল্পনা শেষে ভয়ে ভয়ে ভিডিওটার উপরে ক্লিক করলো। সাথে সাথে ভিডিওটা চলতে শুরু করে। ইমরান তো দেখেই হতবাক হয়ে যায় রিপার মুখটা সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে মোবাইলটা হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়। মাথার ভিতরে এবার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে।
ভাবছিলো হয়তো বা রাহাত মিথ্যা বলছে যে তার কাছে ভিডিও আছে। কিন্তু এখন বিশ্বাস হলো রাহাত সত্যিই বলছে। কত বড় নোংরা চরিত্র ওর। এই মানুষটাকে নিয়ে বিথী গর্ববোধ করে। বিথী যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন তো ওর জীবনটা কালো মেঘে পরিণত হয়ে যাবে। আমি তো বিথীকে ভালো করে চিনি। এত বড় ধোঁকা কিছুতেই সে মেনে নিতে পারবেনা। রাহাতের কারণে আজ ৩ টা জীবন ধ্বংসের পথে।
.
.
.
বসা ছেড়ে উঠে সোজা তুহিনের রুমে গিয়ে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,দোস্ত রাহাত এই মাত্র ভিডিও টা আমাকে ম্যাসেঞ্জারে সেন্ড করেছে।
কী যে করবো এখন মাথায় তো কোন কাজ করছেনা।
.
ইমরান আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থাটা কী??
রাহাত তো দেখছি জানোয়ারের বাচ্চা। একে শিক্ষা না দিলে সে কিছুতেই শুধরাবে না। যা করবো এবার বুদ্ধি দিয়ে করতে হবে। রাহাত ভেবেছে তোর সংসার ভেঙে দিয়ে নিজে সুখের সাগরে ভাসবে। কিন্তু কোনদিন এটা সম্ভব হবেনা। রাহাতকে তার কর্মের ফল পেতেই হবে।
ইমরান রাহাতের বউ তোর বান্ধবী ছিলোনা??
-“হুম।
.
-“তাহলে কাঁটা দিয়েই এখন কাঁটা তুলতে হবে।
রাহাতকে ফাঁসিয়ে তারপরে সমস্ত সত্যিটা সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে।
-“তুহিন আমি আর মনকে মানতে পারছিনা। যতক্ষণ পর্যন্ত কাজটা না হয় আমি একটুও শান্তি পাবোনা।
-“তুই কোন চিন্তা করিসনা। আমি তো আছি।
শোন টেনশন করিসনা। রাহাত কিচ্ছু করতে পারবেনা।
আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি। এমন সিচুয়েশনে অফিস করা একদম সম্ভবনা।
.
.
শোন ১১ টা অডিটর আসবে। তুই তোর কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে স্যারের পারমিশন নিয়ে বাসায় চলে যাবি। এই মূহুর্তে ভাবীকে তোর সময় দেওয়ার উচিত। বেচারির মনের অবস্থা জানি কেমন হয়েছে সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে। ইমরান তুই তোর সবটা দিয়ে ভাবীকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবি। কারণ তোকে এখন ভাবীর ভীষণ জরুরী।
-“হুম। তুই ঠিকি বলেছিস।
-“ইমরান শোন আমি একটা প্লান করেছি। তুই যদি সেই মতো কাজ করতে পারিস তাহলে গর্ত থেকে সাপকে বের করে আনা সম্ভব।
-“কী কাজ??
-“শোন তুই প্রথমে রাহাতকে কল করে শেষবারের মতো রিকুয়েস্ট করে দেখ সোজা আঙুলে ঘি ওঠে কিনা!
এরপর ও যদি সে না মানে তাহলে তুই আমাকে কল দিবি। তারপর আমি ওর বউকে গিয়ে সব কিছু খুলে বলবো।
-” তুহিন শোন,,,,আমি বিথীকে যতটুকু চিনি তাতে আমার মনে হয়না যে বিথী তোর কথা বিশ্বাস করবে। তবে এটা শিউর তোর কাছ থেকে কথাগুলো শুনে সে রাহাতকে অবশ্যই এই ব্যাপারে জিজ্ঞাস করবে। সত্যি না মিথ্যা যাচাই করার জন্য।
-“ঠিকাছে। তাহলে এই কথাই রইলো।
-“হুম।
.
.
.
ইমরানের কাজ শেষ হলে সোজা এসে স্যারের কেবিনের সামনে সোফায় বসে আছে। ছুটি নিয়ে বাসায় যাবে তাই স্যারের সাথে কথা বলাটা জরুরী।
স্যার ভিতরে মিটিং করছে। অনেক ব্যস্ত সে। তবে আজকে তিনি তার কাজে সন্তুষ্ট হয়েছে। ইমরান সমস্ত কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্ন করেছে একাই। অডিটর কাজের কোন ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারেনি। যা বিগত দিনে এতটা নীট এন্ড ক্লিন ভাবে কোন ম্যানেজার ও হিসাব দিতে পারেনি। যেটা ইমরান মাত্র কয়েকদিনে সমাধাণ করেছে।
প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেছে ইমরান এখন ও বাহিরে বসে বসে হাতের নখ কাঁটছে দাঁত দিয়ে।
.
অফিসের পিয়ন এসে ইমরানকে স্যারের সালাম জানিয়ে ভিতরে যেতে বলে।
.
.
-“মে আই কামিং স্যার?
-“ইয়েস কামিং। সিট ডাউন প্লিজ ইমরান।
-“থ্যাংক ইউ স্যার।
-“তা বলো কী খাবে কফি নাকি কোল্ড ড্রিংকস?
-“আপনি যা খাওয়াবেন তাই খাবো।
-“স্যার বেল বাজালে পিয়ন ভিতরে আসলো। ২ টা কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসো ঠান্ডা দেখে।
-“জ্বি।
.
-“আজকে আমি ভীষণ খুশি ইমরান। তোমার পারফরমেন্স তো এককথায় অসাধারণ। কালকে থেকে তোমাকে প্রোমোশন দিলাম। তোমার ভিতরে লুকানো প্রতিভা আছে আর সেটা আমরা কাজে লাগতে চাই।
আমাদের প্রতিষ্ঠান এত দূর এগিয়ে গেছে ভাবতে ও পারছিনা। এসব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
-“না স্যার। আপনি অনেক বাড়িয়ে বলছেন। আমি শুধু আমার দ্বায়িত্ব পালন করেছি।
-“তুমি শুধু তোমার দ্বায়িত্ব নয় এই প্রতিষ্ঠানকে নিজের মতো করে ভালোবেসেছো। আর তারই ফলস্রুতিতে আজকে কোটি কোটি টাকা লাভ হবে। আর এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট একমাত্র তোমার।
thank you my son…..
.
.
-“স্যার আমার এখন শরীরটা ভালো লাগছেনা। আপনি
যদি পারমিশন দিতেন তাহলে বাসায় যেতাম।
-‘of course। তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। আর হ্যাঁ ২ দিন তোমাকে ছুটি দিলাম। তুমি সুস্থ হয়ে তারপর এসে
অফিস জয়েন করো।
-“ঠিকাছে স্যার।
.
.
স্যারের রুম থেকে বেড়িয়ে তুহিনের কাছে গিয়ে বললো,,,
-“দোস্ত আমি যাচ্ছি তুই ব্যাপারটা দেখিস।
-“তুই কোন চিন্তা করিস না।
.”হুম।
.
.
ইমরান বাসায় এসে দেখে দরজাটা খোলা।
ভিতরে চোখ পড়তেই দেখে ইতি সোফার উপরে বসে মোবাইলে কথা বলছে। ইমরানকে দেখেই ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে বসা ছেড়ে উঠে ইমরানের কাছে আসে।
-“ইমরান ভাইয়া তুমি এত তাড়াতাড়ি এসে পড়েছো?
-“হুম। কাজ আছে তাই চলে এসেছি। রিপা কোথায়??
-“ভাবী একটু মার্কেটে গিয়েছে। আমাকে ও যেতে বলেছিলো কিন্তু আমি জাইনি। তাই সে একাই গিয়েছে। যাক ভালোই হলো না গিয়ে।
-“ইমরান ভাবছে তার মানে ইতি বাসায় একা। এই অবস্থায় এখানে থাকা একদম ঠিক হবেনা।
ইতি তুই দরজা আটকে বস আমার একটা জরুরী কাজ আছে। কাজটা শেষ করে তারপর আসছি।
ইতি ইমরানের হাত টেনে ধরে বললো,,, এখন কোন কাজ নেই পরে যা করার তুমি করবে। কথাটা বলেই ইমরানকে তার রুমে নিয়ে গেলো।
.
.
ইমরানকে বিছানার উপরে বসিয়ে দিয়ে বললো,,
-“তুমি এখানে বসো আমি এখুনি আসছি।
ইতি কী করছিসস এসব! আমি যাচ্ছি।
-“একদম চুপ করে থাকো। কোথায় ও যেতে পারবেনা।
ইতি বাথরুমে ঢুকে তারপরে বেড়িয়ে আসলো।
ইতি বেড়িয়ে আসার সাথে সাথেই লজ্জায় চোখ দুটো নিচু হয়ে গেলো ইমরানের।
ইতির শরীরের নাইলনের গেঞ্জি ছাড়া উপরের দিকে আর কোন কাপড় নেই। ইমরান কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
বসা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে গেলে ইতি উঠে ইমরানের পথে বাঁধ সাধলো।
-“ভাইয়া কোথায় যাচ্ছো। প্লিজ এভাবে চলে যেও না।
ইমরান লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। ইতি তুই এসব কী শুরু করেছিস? এমন পোশাক পড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াতে তোর লজ্জা করছে না।
-“কীসের লজ্জা ভাইয়া? যাকে ভালোবাসি তার সামনে দাঁড়াতে লজ্জার কী আছে?? তাছাড়া আমি তো একটা বাচ্চা মেয়ে।
-“ছিঃ ছিঃ কী বলছিস এসব? তোকে আমি আমার বোন হিসাবে মনে করি আর তুই কিনা আমাকে নিয়ে এসব নোংরা কথা চিন্তা ভাবণা করছিস??
.
.
ইতি এসে ইমরানকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,কী হলো মাথা নিচু করে আছো কেনো?? তাকাও না আমার দিকে। বাচ্চা মেয়েদের কিন্তু সব কিছু বেশী থাকে। ভাবী যেটা পারবে না সেটা কিন্তু আমি পারবো। তাছাড়া আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবেনা। চলো না আমরা দুজনে ইনজয় করি।
.
.
ইমরানের ভীষণ রাগ উঠলো। নিজের রাগকে আর কন্টোল করতে পারেনা। প্রচন্ড রাগের মাথায় ঠাস্ করে ইতির ডান গালে একটা চড় মেরে বসলো। ইতির চোখ বেয়ে তরতর করে পানি গড়িয়ে পড়লো। আস্তে আস্তে ইমরানের দিকে তাকিয়ে অভিমাণ মাখা সুরে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো,,
তুমি আমাকে মারলে?? আমাকে কেউ কোন দিন মারেনি।
মারেনি বলেই আজ তুই এতো পেকে গেছিস। সারাদিন ইন্টারনেটে বাজে ছবি দেখে এইসব শিখেছিস তাইনা??
এতই যদি তোর চাহিদা থাকে তাহলে তোর মাকে বলনা তোকে বিয়ে দিতে। আর তা না হলে পতিতালয়ে গিয়ে শখ মিটিয়ে আয়।
.
.
দরজার সামনে চোখ পড়তেই দেখে রিপা তাকিয়ে আছে।
রিপার কাছে গিয়ে রিপাকে জড়িয়ে ধরে ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ইতি তুই কালকে সকালে আমার বাসা ছেড়ে চলে যাবি। তোর মতো নষ্টা মেয়ের কোন জায়গা নেই আমার বাসায়।
.
.
কথাটা বলেই ইমরান রিপাকে নিয়ে চলে গেলো।
চলবে……………