#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_ফারিয়া_আলম_মিম
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_৮
সাতদিন পরে,,,,
ফজরের আযান কানে আসতেই হঠ্যাৎ করে ইমরানের ঘুম ভাঙলো। চোখদুটো দুহাত দিয়ে মুছে রিপাকে তার পাশে না দেখে আৎকে উঠলো ইমরান।
রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রিপাকে কোথায় না দেখে বিছানা দিয়ে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ড্রইং রুমে ঢুকলো। কিন্তু রিপা এখানে ও নেই। প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে গেলো। রিপা কোথায় যেতে পারে ভেবে??
একটুবাদে রিপা রুমের দরজাটা খুলে ঘরে আসলো।
রিপাকে দেখেই ইমরান হকচকিয়ে উঠলো।
মুখের দিকে ভালো করে তাকায় ইমরান।
চুলগুলো এলোমেলো,,,ঠোঁটের কোণে লিপস্টিক লেপ্টে আছে। ইমরানকে দেখেই রিপার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে বড় কোন অপরাধ করে এসে হাতে নাতে ধরা পরেছে।
.
ইমরান রিপার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো।
ঠোঁটের পাশে হাত দিয়ে বললো,,,রিপা তুমি এত অন্ধকার রাতে কোথায় গিয়েছিলে?? ভোরের আলো ও ভালো করে ফোটেনি। আর চেহারার কী হল করে রেখেছো??
-“রিপা আমতা আমতা করে বললো,,,একটু ছাদে গিয়েছিলাম।
-“কিন্তু কেনো???
-“আমার গরমে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ছাদে গিয়েছিলাম।
-“কিছুটা সন্দেহবশত হয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে কোন উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইমরান।
.
ইমরান চলে গেলে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে ঘন্টা খানিক ভিজলো সে। এতক্ষণ ধরে ভিজার কারনে হালকা একটু ঠান্ডা অনুভব হয় তার। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে ভালো করে চুলগুলো মুছে তোয়ালেটা বেলকুনিতে মেলে দিলো। তারপরে এসে ফ্লোরে বসে পড়লো মাথায় হাত দিয়ে।
কী হয়ে গেলো এটা?? ভাবতে ও পারছে না এমনটা হবে। কিন্তু তবুও হয়ে গেলো।
ইমরানকে ধোঁকা দিয়ে রাহাতের সাথে উফফ! ভাবতে ও পারছেনা রিপা। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই।
রিপা রাতের কথা ভাবছে,,,,
ইমরান নেশা করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়লো। রিপা সেদিন রাতের পর থেকে ইমরানের সাথে কোন কথা বলেনা। যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকই বলছে।
সেদিন সকালে,,,,,
ইমরান বাসা থেকে চলে গেলে রাহাত রিপার কাছে কল দেয়। রিপার ও রাহাতের কল পেয়ে কোন জানিনা ভীষণ ভালো লাগে। রাহাতের সাথে কথা বলতে বলতে রিপার খুব ভালো একটা ফ্রেন্ডশীপ তৈরী হয়ে গেলো দুদিনের ভিতরেই। আর রিপার এমনটা পরিবর্তনের জন্য একমাত্র ইমরান নিজেই দায়ী। স্বামী হয়ে রিপাকে ইগনোর করা,,খারাপ ব্যবহার,,,নেশা করে রাত করে বাসায় আসা,,,,রিপাকে একটু ও সময় না দেওয়া,,,, সব কিছু মিলিয়ে ইমরানের প্রতি ভীষণ ঘৃণা জন্মে গেছে তার। আর সেই কারণে কখন জানি রাহাতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরে রিপা।
রাত ২ টার দিকে…….
রাহাতের কল আসলো।
রিপা ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে সোফার উপরে বসে কলটা রিসিভ করলো।
-“হ্যালো রিপা। কী করছো তুমি??
-“এই তো বসে আছি। তুমি??
-“আমি তোমার কথা ভাবছিলাম। তুমি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছো। তোমাকে একটিবার দেখার জন্য আমি এখন তোমার বাসার নিচে অপেক্ষা করছি।
তোমাকে কী দেখতে পারবো???
-“রাহাতের কথা শুনে রিপা তো হতভম্ব হয়ে গেলো।
কী বলছো তুমি?? এত রাতে নিচে কী করছো????
চলে যাও তুমি। কালকে ইমরান চলে যাবে তখন আমি তোমার সাথে দেখা করবো।
-“না রিপা। আমি তোমাকে না দেখে এখান থেকে এক চুল ও নড়বোনা। প্লিজ না করো না। তাহলে আমি মরে যাবো।
রিপা হুশ জ্ঞান সব হারিয়ে পা বাড়ায় অবৈধ সম্পর্কের টানে। যে সম্পর্কের কোন নাম নেই। স্বামীর কাছ থেকে অবহেলায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসে রিপা।।কী করছে?? কেন করছে??? আর কী না করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তাড়াতাড়ি গেটের চাবি নিয়ে নিচে নেমে রাহাতকে সাথে নিয়ে ছাঁদের উপরে উঠলো দুজনে।
বেশ কিছুক্ষণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-“রাহাত রিপার হাত ধরে বললো,,,রিপা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারছিনা।
-“রিপা চুপচাপ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। মুখে কোন উত্তর নেই।
রাহাত এসে রিপার কপালে চুমো দিলে রিপা রাহাতকে জাপটে ধরলো। আমি ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি ইমরানকে নিয়ে সুখি না। আমার প্রতি ইমরানের কোন ভালোবাসাই নেই আছে শুধুমাত্র আমার শরীর কখন ভোগ করবে। এটা কোন স্বামীর ভালোবাসা হতে পারেনা।
রাহাত রিপার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো। তারপর পেটের উপরে হাত দিয়ে একবারে বুকের পাশে আনতেই রিপা রাহাতের হাতটা আটকে দিলো।
-“রাহাত রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,,,কী হলো রিপা?? কোন সমস্যা??
-“এখন আমি যাই।
রিপা চলে যেতে নিলে রাহাত রিপার হাত টেনে ধরে ছাদের উপরে পাটিতে শুয়ে দিলো। বুকের উপর দিয়ে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিয়ে চুমো খেতে লাগলো। রিপা উত্তেজিত হয়ে গেলে রাহাতকে আর বাঁধা দিতে পারলোনা। তারপরে রিপা ও রাহাতের মাঝে ডুব দিলো। শুরু হয়ে গেলো দুজনের অবৈধ_সম্পর্ক।
দুজনের চাহিদা পুরোন হয়ে গেলে রিপার সেন্স ফিরে এলে অনেকটা অনুশোচিত হলো সে। চোখের কোণে হঠ্যাৎ করেই পানি চলে এলো। নিজের বিবেকের কাছে বারেবারে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।
কী হয়ে গেলো এসব?? নিজের চোখকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।
রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাত হাসছে।
রিপা নিজের কাপড় চোপড় পড়ে উঠতে নিলে রাহাত রিপার হাত ধরে উঠে বসে রিপার পিঠের উপরে মুখ রেখে চুমো দিয়ে বললো,,,রিপা তুমি তো অনেক সেক্সি। এর জন্যই ইমরান তোমার শরীরের প্রতি এতটা আকৃষ্ট।
আমি ও এখন তোমার ভালোবাসায় ফিদা হয়ে গেছি।
-“রাহাত এখন নিজের পোশাক পড়ে বাসায় যাও। আমি রুমে যাবো। ইমরান উঠলে আমাকে জানে শেষ করে দিবে।
-“আরে কী যে বলোনা। ইমরান কিছু বললে,,আমি তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাবো।
.
রাহাতকে গেটের বাহিরে দিয়ে ঘরে ঢোকার পরেই ইমরানকে দেখলো রিপা।
.
আজ ইমরান অফিসে যায়নি। সারাদিন শুয়েই কাটিয়েছে।
বিকাল ৪ টায় রিপার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,
রিপা চলো আমরা দুজনে আজকে বাহির থেকে ঘুরে আসি।
-“আচ্ছা।
রিপা রেডী হতে নিলো। আলমারি খুলে শাড়ী বের করলো সে। জরজেট শাড়ি বেরে করে পড়তে নিলো।
ইমরান বিছানার উপরে গালে হাত দিয়ে রিপার শাড়ী পড়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ইমরানের দিকে আড়ঁচোখে তাকাচ্ছে রিপা।
ইমরান হা করে তাকিয়ে আছে রিপার দিকে।
রিপা হালকা করে সাজলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুকের উপরে শাড়ীর আঁচলটা বারবার টেনে দিছে। আবার ভালো লাগছে না বলে সরিয়ে দিচ্ছে।
ইমরান উঠে এসে রিপাকে ঘুরিয়ে তার দিকে ফিরিয়ে আঁচলটা খুলে দুভাঁজ করে বুকের উপরে রেখে বুরুশ দিয়ে কাঁধের উপরে আঁচলটা আটকে দিলো।
রিপা ইমরানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথাটা নিচু করে তাকালো।
রিপার মুখটা তুলে ঠোঁটের উপরে আলতো করে চুমো খেয়ে বললো,,,এই কালারের শাড়িতে তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।
রিপার হাত ধরে গাড়ি বের করে দুজনে রওনা দিলো।
ইমরান খুব জোরে জোরে গাড়ি চালাচ্ছে।
-“কী করছো আস্তে চালাও। এক্সিডেন্ট করবে তো।
-“করলে করবো। দুজনে একত্রে উপরে চলে যাবো।
-“আমার এখন মরার ইচ্ছা নাই। তা ও আবার এমন মৃত্যু!
-“ইমরান হাসছে।
হঠ্যাৎ সামনেই একটা ব্রিজ পড়লো। ইমরান এক সাইড করে গাড়িটা দাঁড় করালো।
গাড়ি থেকে নেমে দরজাটা খুলে রিপাকে বাহিরে নামালো।
রিপা গিয়ে ব্রিজের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে।
ইমরান রিপার পাশে দাঁড়িয়ে রিপার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বিভিন্ন স্টাইলে রিপাকে নিয়ে ছবি তুললো।
রিপা তো রীতিমত বিরক্ত হয়ে গেলো। কোনো জানি ইমরানকে ওর সহ্যই হয়না। ভালো লাগেনা ওর মুখটা দেখতে।
ব্রিজের উপর দিয়ে বাস,,ট্রাক আসা যাওয়া করে।
চারিদিকে বাতাস আর বাতাস। খুব সুন্দর মনোরম পরিবেশ।
ব্রিজের নিচে নদীর পানিতে নৌকা চলাচল করছে।
দৃশ্যগুলো অনেক সুন্দর। তবুও ভালো লাগছেনা রিপা।
-“ইমরান চলো বাসায় যাই।
-“কেনো??
-“জানিনা কেনো?? কিন্তু ভালো লাগছেনা।
-“ভালো লাগবে রিপা। আমি এখন অন্য জায়গায় যাবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা বলেই ইমরান তার ডান হাতটা রিপার হাতের উপরে রাখতেই রিপা তার হাতটা সরিয়ে ফেলে।
ইমরান ভাবছে কয়েকদিনের ভিতরে রিপা চেঞ্জ হয়ে গেলো কীভাবে???
না না চেঞ্জ কোথায়??? ঠিকি আছে। হয়তো আমারই ভুল ধারণা।
রিপা আনমনে ব্রিজের উপর দিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে নদীর মতো আমার ও আজ কূল কিণারা নেই। আমি ও একসময় হয়তো স্রোতের টানে তলিয়ে যাবো।
চলবে…………………
কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না।