#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_11
নির্ভীকের শরীর দিয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। প্রকৃতির একি লীলা খেলা চলছে। দুদিন আগেই ঠান্ডা পরেছিলো আজ আবার মারাত্মক গরম। ছেলেটার শ্যাম রঙা মুখে ছোট ছোট পানি কনা গুলো এক আলাদা রকম সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। অন্তত অনিন্দিতার কাছে তেমনি মনে হচ্ছে। মানুষ এতো পারফেক্ট হয় ? হীরের ডাকে ধ্যান কাঁটে অনিন্দিতার। প্রচন্ড অবাকের সহিত হীর বলে
_ পৃথিবী এসেছে। তোমার সাথে জরুরি মিটিং এ বসবে।
_ আমার সাথে কিসের মিটিং ?
_ জানি না। এখনি চলো , না হলে রাগ করে বেচারা চলেই যাবে।
_ উফফ তুই যা তো। একটু পর ই আসছি।
প্রচন্ড বিরক্ত হলো সে। মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটালো হীর। আবার ব্যলকনি দিয়ে উঁকি দেয় অনিন্দিতা। নির্ভীক এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কারো সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে। পাশে থাকা ব্যক্তি টিকে দেখা যাচ্ছে না। অনিন্দিতা একটু ঝুঁকে , হঠাৎ পরিলক্ষিত হয় মেহেরিমা কে। অবাকে আহত হয় অনিন্দিতা। মেহেরিমা হঠাৎ এখানে কেন এসেছে ?
তবে কি কোনো ভাবে মেহেরিমার সাথে রসায়ন চলছে নির্ভীকের। বুক কেঁপে উঠে তাঁর। জীবনের এই ভয়ঙ্কর দিন টি কে মেনে নিতে পারছে না সে। প্রচন্ড ভয়ে কল করে বসে আসিম কে। কল রিসিভ করেই আসিম বলে
_ অসময়ে ফোন করলে যে, কোনো সমস্যা হয়েছে অনি ?
_ মিস এর সাথে নির্ভীক স্যারের কোনো সম্পর্ক আছে আসিম ?
_ ঠিক কার কথা বলছো তুমি ?
_ মেহেরিমা মিস এর সাথে নির্ভীক ভাইয়া ।
প্রচন্ড অবাকের সহিত আসিম বলে
_ হোয়াট ! কিসব বলছো তুমি ? আপুর সাথে নির্ভীক স্যারের প্রেম কেন হতে যাবে ?
_ তাহলে মিস কেন এখানে এসেছে আসিম। কোনো অকেশন তো নেই ! হঠাৎ করে বাসায় এসেছেন যে।
আসিমের ভয়ঙ্কর হাসি তে চমকে উঠে অনিন্দিতার হৃদয়। একটু একটু করে শ্বাস নেয় সে। আসিম কেন হাসছে ? তাঁর জন্য ভয়ঙ্কর কোনো স্বপ্ন বুনছে না তো। হতভম্ব অনিন্দিতা বলে
_ হাসছো কেন ?
_ বোকা মেয়ে আপু ইনভিটেশন কার্ড দিতে গেছে।
_ কিসের ইনভিটেশন কার্ড ?
_ আরে কাল ব্যস্ত থাকায় বলাই হয় নি তোমায় , আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাই দ্যা ওয়ে তোমার কাছে কার্ড পৌছায় নি এখনো ? আমি তো পার্সেল করে পাঠিয়েছিলাম।
অনিন্দিতা পর পর শ্বাস ফেলে। আসিমের উদ্দেশ্যে বলে
_ সমস্যা নেই কার্ড চলে আসবে। তবে তুমি তো কাল ভারসিটি গেলে ও দিতে পারতে।
_ অনি প্রেমে পাগল হয়ে গেছো তুমি। কাল কে অফ ডে ভুলে গেলে ?
মাথা চুলকোয় অনিন্দিতা। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখে ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। অনিন্দিতা দরজা খুলে পার্সেল টা হাতে নেয়। দরজা লাগাবে তাঁর আগেই মেহেরিমার ডাক। কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে অনিন্দিতা। ভদ্রতার খাতিরে ভেতরে আসতে বলে। মেহেরিমা আসে না, ব্যাগ থেকে কার্ড বের করে অনিন্দিতার হাতে দিয়ে বলে
_ মেহেন্দীর ফাংশন তো আজ রাতেই হচ্ছে, নির্ভীকের সাথে চলে এসো।
_ কিন্তু মিস
_ কিন্তু কিসের? নির্ভীকের সাথে যেতে কোনো সমস্যা তোমার ?
অনিন্দিতা মাথা ঝাঁকায়। মেহেরিমা অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নির্ভীক কে উদ্দেশ্যে করে বলে
_ ওকে নিয়ে এসো কেমন ?
অনিচ্ছা থাকা সত্তে ও সম্মতি জানায় নির্ভীক। মেহেরিমা চলে যায়। অনিন্দিতা বলে
_ আপনার সমস্যা হলে আমি একাই চলে যেতে পারবো।
_ প্রয়োজন নেই। আমি ই নিয়ে যাবো।
.
নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অনিন্দিতা । আজ কে কি তাঁকে বেশি সুন্দর লাগছে ? না বরাবরের মতোই তো লাগছে। তাহলে নির্ভীক তাকে সাথে করে নিতে চাইলো কেন ? অনিন্দিতার উত্তর মিলে না। লম্বা হেসে বেডে গা এলিয়ে দেয়। দুটো বিয়ের কার্ড পেয়েছে সে, সাথে নির্ভীকের সাথে মেহেন্দী তে যাওয়ার সুপারিশ। ভরাট মুখে মৃদু হাসি ফুটে। ছোট থেকে বিয়ের কার্ড খুব পছন্দ মেয়েটার। বাসায় যত ইনভিটেশন কার্ড আসুক না কেন এগুলোর এক মাত্র উত্তরাধিকারী হয় অনিন্দিতা। ছোট সময়ে হীর একটা কার্ড নিয়ে ছিড়ে ফেলেছিলো। সেদিন মেয়ে টা কে কি মার টাই না মেরেছিলো অনিন্দিতা। নিজের কর্ম ভাবনায় খলবলিয়ে হাসে সে। তবে তাঁর ভাবনায় রাগে গজগজ করতে করতে একটা কন্ঠস্বর নেমে আছে। নিজেকে ঠিক করে বলে
_ জিই ভাইয়া !
_ থাপ্পড় খাস না অনেক দিন হলো তাই না রে অনি ?
_ স্যরি !
_ চুপপ।
কথা টা ধমকের সুরেই বলে পৃথিবী। মুখ বাঁকায় অনিন্দিতা ফলে লম্বা করে শ্বাস ফেলে পৃথিবী। হঠাৎ করেই অনিন্দিতার হাত জোর করে বলে
_ হেল্প কর বোন আমার।
_ শুকনো হাতে চিড়ে ভিজবে না ভাইয়া।
পকেট থেকে কচ কচে হাজার টাকার নোট বের করে অনিন্দিতার হাতে তুলে দেয়। খ্যাক করে কেশে নিজেকে বিজ্ঞদের মতো দাঁড় করায় অনিন্দিতা। আশ্বস্ত করে বললো
_ চিন্তা করো না প্রজাগন। আমি সমস্যা সমাধান করে দিবো। তবে সমস্যা টা কি একটু জানাবে ?
_ তুই তো জানিস আমি হীর কে পছন্দ করি।
_ হীর কে পছন্দ করো তুমি ?
কথাটা বলে মুখ চেপে হাসছে অনিন্দিতা। পৃথিবী সামান্য বিব্রত হলো। ছোট বোনের সামনে ভালোবাসার কথা বলতে কেমন যেন লজ্জা লাগছে। তবে লজ্জা লাগলে তো হবে না। পৃথিবী একটু মাথা চুলকালো। তার এই সহজাত অভ্যাসে হীর প্রচন্ড বিরক্ত হয়। তবে আজ বিরক্ত হলো না। কারন সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে কথা চলছে। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে অনিন্দিতা ফোঁস করে দম ফেললো। একে দিয়ে হবে না। তাই হীর কে উদ্দেশ্যে করে বলল
_ পৃথিবী ভাই কে দিয়ে কোনো কাজ ই হবে না। তুই বল কি সমস্যা হয়েছে।
_ আসলে হয়েছে কি আপু। মামি পৃথিবীর বিয়ে ঠিক করেছে ওর কাজিন রিম্মির সাথে। আর তাই পৃথিবী এসেছে এখানে।
_ তো কি হয়েছে ?
হীর কেঁদে ফেললো। হঠাৎ কাঁদার সঠিক কারন বুঝতে পারে না অনিন্দিতা। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলে
_ পাগলী মেয়ে এতে কান্না করার কি আছে ? পৃথিবী ভাইয়া বিয়েটা নাকোচ করলেই তো হয় ।
মাথা নিচু করে হীর। পৃথিবী বলে
_ আমি তো নাকোচ করেই দিবো। তবে হীরের কথা টা বলবো কি করে ? তোর বিয়ে না দিয়ে ফুপি নিশ্চয়ই হীর কে বিয়ে দিবে না ?
_ বিয়ে!
প্রচন্ড আবেগ দিয়ে শব্দ টি উচ্চারন করে অনিন্দিতা।বুকে ভারী অনুভব হয়। কষ্ট হচ্ছে খুব , বিয়ে নিয়ে তো ভাবা হয় নি। বয়স তো বিশ হতে চললো। মধ্য বিত্ত পরিবার অনুযায়ী কয়েক বছরের দরুন বিয়ে দেওয়া হবে। এ কেমন অবস্থা হলো। পৃথিবীর ডাকে ঘোর কাঁটে অনিন্দিতার একটু করে হাসার চেষ্টা করে। হীরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
_ তাঁতে কি তোর বিয়ে টা না হয় আগেই হবে।
_ আপু !
_ এটা কেমন কথা অনি। এতে সমাজ তোকে ভালো চোখে দেখবে না। প্রশ্ন করবে বড় বোন কে কেন বিয়ে দেওয়া হলো না। মেয়ের কোনো ঘাটতি নেই তো ?
অনিন্দিতা হাসে। পৃথিবীর পাশে বসে এক পলক তাকায় দুজনের দিকে। একটা সাপোর্ট রয়েছে এদের মাঝে। একে অপর কে পাওয়ার বাসনা ও রয়েছে। মনে রয়েছে তুমুল শক্তি। সমাজ তো কতো কথাই বলে। দিন শেষে না খেয়ে থাকলে সমাজের কেউ তো ভাত দিবে না। তাই নিজেদের দিক টা ও ভাবতে হয়। নির্ভীক কখনো তাঁর হবে কি না জানা নেই। চান্স খুব ই অল্প , নাই বললেই চলে। কিন্তু এ দুটি হৃদয় কে আলাদা হতে দিবে না। অনিন্দিতা অধর ছাড়িয়ে হাসে। পৃথিবীর দিকে আবেগের দৃষ্টি দিয়ে বলে
_ আমার বোন কে দেখে রাখার শক্তি আছে তো পৃথিবী ভাই ?
_ আছে।
_ তাহলে এতো ভেবো না। বাবা মা কে ম্যানেজ করা আমার দায়িত্ব। আর সমাজ কে নিয়ে পরে থাকলে প্রিয় জন কে হারাতে হবে। একটা কথা কি জানো
অনিন্দিতা একটু থামে। তারপর ই বলে
_ ” যদি কাউকে ভালোবেসে থাকো তাহলে শক্ত করে জড়িয়ে রাখো। যাতে কখনো দূরে সরে না যায়। প্রিয় মানুষের শূন্যতা অনেক কাঁদায়।”
.
গ্রে রঙের শাড়ি পরেছে অনিন্দিতা। হাত ভর্তি মেহেদী দিয়েছে। সবাই অনুষ্ঠানে গিয়ে মেহেদী পরলে ও অনিন্দিতা বাসা থেকেই দিয়ে নিয়েছে। নির্ভীক কে দিয়ে বিশ্বাস নেই। হয়তো তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে না। চুল গুলো ছেড়ে রাখবে নাকি খোঁপা বাঁধবে বুঝতে পারে না। স্লিক এর শাড়ি হওয়াতে একটু গরম লাগছে। তাই সুন্দর করেই খোঁপা করে নিলো। হালকা সাজে রূপসী অনিন্দিতা কে হুরের মতোই লাগছে। একদম প্রকৃতিটে ফোঁটা সদ্য তাজা বেলী ফুলের মতো। যাঁর ঘ্রানে মুখরিত হয় চারপাশ। অনিন্দিতা ড্রয়িং রুমে আসতেই হীর দাঁড়িয়ে যায়। মনে মনে উচ্চারন করে ” আমার বোন এতো সুন্দর কেন ? ”
শাহানা রুম থেকে ছুটে আসেন। অনিন্দিতার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলেন
_ খালি হাতে কোথাও যেতে নেই অনি।
_ আমি তো নির্ভীক ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি আম্মু। টাকার দরকার হতো না।
শাহানা তবু ও টাকা টা নিতে বললেন। আরশাদ ডিউটি তে রয়েছেন। দিন রাত পরিশ্রম করেন তিনি। সপ্তাহে দুদিন দুস্থ ব্যাক্তি দের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করেন। এ নিয়ে শাহানা কখনোই অভিযোগ করেন নি। স্বামীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাঁর। অনিন্দিতা মায়ের মুখাশ্রী তে মায়া ভরা দৃষ্টি তে তাকায়। হঠাৎ করে অনিন্দিতার মনে হয় মা নামক মানুষটি ভয়ঙ্কর সুন্দরী ,উহুহ পৃথিবী খ্যাত সুন্দরী।নিজ ভাবনায় ফিক করে হেসে ফেলে অনিন্দিতা। শাহানা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
_ আসি আম্মু।
_ সাবধানে যাবি । নির্ভীকের কাছাকাছি থাকবি। আর শোন ওর সামনে অন্তত তেজ করিস না। ছেলেটা শান্ত স্বভাবের , তোর আচারনে বিরক্ত হতে পারে।
মাথা ঝাঁকায় অনিন্দিতা। হীরের মুখে হাত বুলিয়ে বলে
_ ফিরে এসে আম্মু কে সব বলবো।
_ আচ্ছা। সাবধানে যেও কেমন ?
_ হুম
অনিন্দিতা বের হয়। নির্ভীকের গাড়ি টা পার্কিং এই রয়েছে। বাসা থেকে বের হয় নি সে। তাঁর মানে নিজ রুমেই আছে। কলিং চেপে দিতেই বাসার কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দেয়। চোখ দুটো তাঁর বড় বড় হয়ে যায়। ডান গালে হাত দিয়ে বলে
_ মাশআল্লাহ আপনারে তো হুর পরীর মতো লাগতেছে আপা। কি সুন্দর দেখতে আপনি।
মুচকি হাসে অনিন্দিতা। কলি কে ধন্যবাদ দিয়ে বলে
_ নির্ভীক ভাই কি বেরিয়ে গেছেন ?
_ না ওনি তো একটু আগে রেডি হইতে গেছে।
_ ওহ আচ্ছা। আন্টি কোথায় রে ?
_ উপর তলায় নতুন ভাড়াটিয়া আসছে না তাঁদের খাবার দিতে গেছে। প্রথম দিন ব্যস্ত থাকবো তাই রান্না করতে মানা করছে।
কলির সাথে কিছু কথা বলে ডয়িং রুমে চলে আসে অনিন্দিতা। পাঁচ মিনিটের মাথায় ও নির্ভীক আসে না। অনিন্দিতার ইচ্ছে হয় নির্ভীক কে ডাকার। তবে ভয়ে যায় না। দশ মিনিটের মাথায় ওহ যখন আসে না তখন একটু ভয় লাগে অনিন্দিতার। আসে পাশে ও কেউ নেই। তাই আড়ষ্ঠতা কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। নির্ভীকের রুমের ডোর খোলাই। অনিন্দিতা যেতে গিয়ে ও যায় না। ডোরে হাত দিয়ে টোকা দিতেই নির্ভীক বলে
_ কে !
_ আমি অনিন্দিতা। হয়েছে আপনার ?
_ একটু ওয়েট করুন।
_ আচ্ছা।
অনিন্দিতা দীর্ঘশ্বাস টেনে দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিট পাঁচেক চলে যায় নির্ভীক আসে না। এখন প্রচন্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে। অনিন্দিতা আবার দরজায় নক করে বলে
_ কোনো সমস্যা নির্ভীক ভাই ?
_ না ।
_ তাহলে এতো লেট করছেন কেন ?
নির্ভীক উত্তর দেয় না। অনিন্দিতা ও আর প্রশ্ন করে না। মিনিট খানেক পর নির্ভীক বলে
_ আম্মু কে একটু ডেকে দিন তো অনিন্দিতা।
_ আন্টি তো বাসায় নেই। কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।
_ আম্মু কেই লাগবে।
_ আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।
_ আপনি পারবেন না অনিন্দিতা ।
_ আমি পারবো আপনি বলেই দেখুন।
অনিন্দিতার ফ্যাচ ফ্যাচানি তে নির্ভীক বলে
_ পাঞ্জাবির বোতাম টা খুলে গেছে। মেহেন্দীর অনুষ্ঠানের জন্য মেরুন রঙ টাই সিলেক্ট করা হয়েছে । মেরুন রঙের পাঞ্জাবি আমি পরি না। তাই এটা ব্যতীত এই রঙের আর কোনো পাঞ্জাবি নেই আমার।
_ আমি লাগিয়ে দিতে পারি। আপনি চেঞ্জ করে নিন আমি পাঞ্জাবির বোতাম সেলাই করে দিচ্ছি।
নির্ভীকের কাছে কোনো উপায় নেই। পরিশেষে সম্মতি প্রদান করে সে। অনিন্দিতা রুমে প্রবেশ করে দেখে বেডের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্ভীক। হাতের ইশারায় সুচ দেখিয়ে দেয় সে। অনিন্দিতা খুব যত্ন করে সুচ দিয়ে বোতাম গেঁথে দেয়। এর মাঝে একটি বার ও সে নির্ভীকের দিকে তাকায় নি। কারন সে চায় না আজকে তাঁর জন্য নির্ভীকের মন বিষিয়ে যাক। পাঞ্জাবি রেখে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে নির্ভীক। অনিন্দিতা সামনে থাকলে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি হয়।
#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_12
সন্ধ্যার মুখোরিত পরিবেশ। মৃদু সমীরনে শরীর কেঁপে উঠে। প্রতি টা লোম কূপ সুখের সাগরে নেমেছে। পাশে থাকা মানুষ টির শরীর থেকে আসা দারুন এক ঘ্রান ইন্দ্রিয় কে স্বস্তি দিচ্ছে। রক্তের প্রতি টি শিরা যেন হীম শীতল। সামনে দৃষ্টি রেখে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ড্রাইভ করছে নির্ভীক। সে দৃশ্য আড়চোখে দেখছে অনিন্দিতা। মেরুন রঙের পাঞ্জাবির হাতা টা গুটিয়ে রেখেছে ছেলেটা। হাতে থাকা ঘড়ি টা হেলায় ফেলায় উল্টো হয়ে রয়েছে ঠিক যেন অনিন্দিতা প্রতিরূপ । আনমনে হাসে মেয়েটা আপন মনেই উচ্চারন করে যাক একটা সঙ্গী তো পাওয়া গেল। কিছু তো আছে যে অনিন্দিতার মতোই হেলায় ভেলায় রয়েছে। তবু ও দিন শেষে অনিন্দিতা অভাগী। ঘড়ি টার স্থান নির্ভীকের হাতে আর অনিন্দিতা স্থান বহুদূরে। অদূরে ভেসে থাকা মেঘের মতো চাঁদের আলো পাওয়ার তিতিক্ষা করছে মেয়েটা। অথচ মেয়েটা জানেই না চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। রঙিন স্বপ্ন বুনে আদৌ কোনো লাভ নেই। ভাবনায় সুতো কাঁটে ফোনের বিকট রিং হওয়ার শব্দে। নির্ভীক যেন বিরক্ত হয়। ভয়ে ফোন তোলার সাহস পায় না অনিন্দিতা । নির্ভীক বলে
_ ফোন রিসিভ করুন।
_ জিই ।
ফোন রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে আসে। অনিন্দিতা কথা বলার সুযোগ পায় না। দীর্ঘ লাইনের কথা শেষ হলে দম ফেলে আসিম। অনিন্দিতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। একটু ঝুঁকে ফিস ফিস করা কন্ঠে বলে
_ আসছি তো ।
_ এতো লেট কেন করলে অনি ? নির্ভীক স্যার কি তোমাকে নিয়ে আসতে চায় নি।
_ না তেমন না। একটা সমস্যা হয়েছিলো তাই লেট হলো। আমরা রাস্তায় আছি , আর একটু ।
_ ওকে ! সাবধানে এসো, আর নির্ভীক স্যার কে বিরক্ত করো না। যদি ও তোমার প্রতি টা আচারন ই ওনার কাছে বিরক্ত লাগে। আর কোনো কিছু নিয়ে একদম ই মন খারাপ করবে না।
_ হ্যাঁ আমি মেনে চলবো।
অনিন্দিতার কথা শেষ হতেই গাড়ির ব্রেক কষে নির্ভীক। সামান্য চমকায় অনিন্দিতা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে চারপাশে রঙিন আলো ঝলমল করছে অর্থাৎ কাঙ্খিত স্থানে পৌছে গেছে। অনিন্দিতা কে না বলেই নির্ভীক নেমে যায়। পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনিন্দিতা ও নেমে আসে। সামান্য দুরুত্ব বজায় রেখে নির্ভীকের সাথে সাথেই চলছে সে। নির্ভীকের ফোন বাজে, থমকে গিয়ে ফোন রিসিভ করে সে। অনিন্দিতা আনমনে হাঁটার কারনে খানিকটা এগিয়ে যায়। হঠাৎ করেই হাতে টান অনুভব হয়। পেছন ফিরে দেখে নির্ভীক তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অনিন্দিতা যেন আকাশ থেকে পরে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না। আড়ালে নিয়ে যায় নির্ভীক। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থাকা অনিন্দিতা আরেক দফা চমকায় যখন নির্ভীক তাঁর দিকে অগ্রসর হয়। নির্ভীকের হাত কাঁপছে, চোখ দুটো কেমন এলোমেলো বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।অনিন্দিতার শরীর ঘিন ঘিন করে। হাতের ইশারায় বাঁধা প্রদান করে মেয়েটা। সে দিকে পাত্তা দেয় না নির্ভীক। দুজনের মাঝে কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান। নির্ভীক তাঁর ঠান্ডা হাতে স্পর্শ করে অনিন্দিতার বাহু। শরীরে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কেঁপে উঠে অনিন্দিতা। চোখে পানি জমেছে। যে পানি পরিলক্ষিত হয় না নির্ভীকের। আরেকটু ঝুঁকে নেয় নির্ভীক। হঠাৎ অনিন্দিতা অনুভব করে তাঁর গুছিয়ে করা খোঁপা টা খুলে গিয়ে পিঠময় চুল ছড়িয়ে গেছে। নির্ভীক সরে যায়। নিজ কার্যে সামান্য বিরক্ত হয় সে। তবু ও নিজেকে শক্ত রেখে বলে
_ পিঠ দেখানোর জন্য অনুষ্ঠানে এসেছেন ? এমন বাজে ডিজাইন কেন দিয়েছেন ?
ভারী অবাক হয় অনিন্দিতা। নির্ভীকের কাছাকাছি আসার রহস্য উন্মোচন হলে ও ভেতর টা খট খট করছে। নির্ভীক তাঁকে বললে ও তো পারতো। নির্ভীকের কঠিন ধমকে চমকে যায় অনিন্দিতা। সামান্য তুতলিয়ে বলে
_ স্যরি। সময় কম থাকায় রেডিমেড এনেছিলাম।
নির্ভীক উত্তর দেয় না। অনিন্দিতা মাথা নিচু করে আনমনেই বলে ” সময় টা থমকে গেলে ও পারতো। ”
.
আসিম এসেই অনিন্দিতা কে নিয়ে চলে এসেছে। অনিন্দিতা একটু মন খারাপ করে নিলো। আসিমের দিকে ভ্যাগা দৃষ্টি দিয়ে বলল
_ নির্ভীক ভাই এর পাশে পাশে থাকতে চেয়েছিলাম।
_ অনি, অনি , অনি উফফ তুমি কিচ্ছু বুঝতে চাও না। নির্ভীক স্যার কে জেলাসি ফিল করাতে হবে।
_ জেলাসি !
_ ইয়েস। কেন তোমাকে ইগনোর করে জানতেই হবে।
_ ওনি আমাকে পছন্দ করে না আসিম।
আসিম উত্তর দেয় না। ঠোঁটে দাঁত কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর ই পকেট থেকে ফোন বের করে কিছুক্ষন ঘাঁটাঘাঁটি করে। অনিন্দিতা কে উদ্দেশ্যে করে বলে
_ নির্ভীক স্যারের দ্বিতীয় আইডি টা কখনো দেখেছিলে ?
_ ওনার আরেক টা আইডি আছে ?
_ ইয়েস। ” অব্যক্ত প্রিয়তমা ” সেই আইডির নাম। যার প্রতি টা লাইনে লাইনে একজন কে নিয়েই লেখা অব্যক্ত প্রিয়তমা। কে এই অব্যক্ত প্রিয়তমা ?
অনিন্দিতা চিন্তিত হলো। নির্ভীকের ডায়েরী তে ও অব্যক্ত প্রিয়তমা লিখা ছিলো। সত্যি ই তো , কে সে। মুহুর্তেই মেয়েটার মন বিষিয়ে গেল। আসিম না থাকলে নির্ঘাত কেঁদে বুক ভাসাতো। সে স্পষ্ট অনুভব করছে নির্ভীক তাঁর নয়। আসিমের ধাক্কার ধ্যান ফিরে। আসিম ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে
_ আমি তোমাকে সান্ত্বনা দিবো না অনি। তবে বলবো অতিরিক্ত আশা নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর। মন থেকে চাই নির্ভীক স্যার তোমার হোক।
_ পানি, পানি খাবো আসিম।
অনিন্দিতার কাঁপা কন্ঠে বুক চিরে বের হয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। মেয়েটার কষ্ট নিতে পারছে না আসিম। প্রিয় মানুষের কষ্ট সত্যি ই কষ্টকর। আসিমের দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসে একা ব্যাথাতুর বানী ” জীবন রঙিন হয়ে ও হয় না রঙিন। ”
রোজের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে নির্ভীক। রোজ ওহ ইনভিটেশন পেয়েছে। মেয়েটা শুকিয়ে গেছে । নির্ভীকের মায়া হয় , রোজ নিজের প্রতি বড্ড কেয়ারলেস। নির্ভীক বলে
_ তোর এ অবস্থা কেন ? কানাডায় ফিরে যেতে চাস।
_ আরে না। আমি একদম ঠিক আছি।
নির্ভীক চিন্তা গ্রস্ত হয়। ঠান্ডা লেগে রোজের যা তা অবস্থা। বিডির আবহাওয়া সহ্য হয় না মেয়েটার। রোজ পর পর হাঁচি দিতেই নির্ভীক বলে
_ এই তোর ঠিক থাকার নমুনা ?
রোজ হাসে। নির্ভীকের কাঁধে হাত রেখে বলে
_ দেখলি তো ধরা খেয়ে গেলাম। সবাই তো তোর মতো অভিনয়ের জগতে বাস করে না। আচ্ছা বল তো জীবনে সাত রং থাকা সত্তে ও কেন রংধুন হয়ে উঠে না ?
” রংধনুর সাত রঙ কে ঢেকে দেওয়ার জন্য সামান্য অন্ধকার ই যথেষ্ট ”
কথা টা বলে নির্ভীক। পরক্ষণেই লম্বা হেসে ফোনে মনোযোগী হয়। হঠাৎ করেই কেমন এলোমেলো লাগছে। রোজের চোখে মুখে বিস্ময়। রোজ বলে
_ আমাদের গল্প টা অসম্পূর্ণ ই থেকে যাবে তাই না ?
নির্ভীক হাসে। সব গল্পের সমাপ্তি ঘটে না। কিছু গল্প তো চলতেই থাকে। নিশ্বাস যতো দিন আছে গল্প ওহ ঠিক ততো দিন ই চলমান হবে।
.
মেহেরিমা কে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে অনিন্দিতা। আসিম বলেছে খুব সুন্দর মেহেদী পরাতে পারে মেয়েটা। তাই মেহেরিমা ও বায়না ধরেছে। সামান্য আড়ষ্ঠতা থাকলে ও অনিন্দিতা হাসি মুখে তা গ্রহন করেছে। মেহেরিমার হাসবেন্ড প্রবাসী। তাই এতো দ্রুত বিয়ের আয়োজন। তিন মাস পর মেহেরিমা ও চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া। অনিন্দিতা মেহেদী পরানো শেষে উঠে আসলো। নির্ভীকের সাথে রোজ কে লক্ষ্য করেছে সে। ভেতরে ভেতরে ভাঙচুর হলে ও উপরে উপরে শক্ত রয়েছে মেয়েটা। কোথা থেকে আসিম চলে এলো। অনিন্দিতা শুধাল
_ যে আমাকে চায় না সে কি জেলাস হবে আসিম ?
_ দেখাই যাক কি হয়। এক বছরের ও বেশি সময় ধরে নির্ভীক স্যার কে দেখছি আমি। মানুষ টার চাল চলন বুঝতে পারি না। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে নির্ভীক স্যার এক আকাশ সমান রহস্য তে ঘেরা। তার সাথে এ ওহ মনে হচ্ছে মানুষটা গুটানো স্বভাবের।
_ আমার মনে হয় না। আসলে আসিম ওনি আমাকে পছন্দ ই করেন না। এটাই একমাত্র সত্যি।
_ চুপ করবে অনি। একটু পর আমার সাথে ডান্স করবে বুঝলে ?
_ আচ্ছা।
অনিন্দিতা কে বেঞ্চ এ বসায় আসিম। দুটো আইসক্রিম নিয়ে এসে বলে
_ খেতে থাকো আমি আসছি।
_ আচ্ছা।
আসিম চলে যায়। অনিন্দিতা আইসক্রিম এর প্যাকেট খুলে আইসক্রিম মুখে নেয়। শীর শীর অনুভূতি হচ্ছে। মনে পরে যায় রোজের কথা। মেয়েটার সাথে কিসের সম্পর্ক নির্ভীকের ?
মিনিট পাঁচেক পর ফিরে আসে আসিম। তাড়া দিয়ে বলে
_ আসো। কাপল ডান্স এর ব্যবস্থা করেছি। যদি নির্ভীক স্যার এক বারের জন্য ও তোমার দিকে রাগি দৃষ্টি তে তাকায় তাহলে বুঝবে কিছু চলছে।
_ এমন কিছু ই হবে না।
_ আচ্ছা দেখাই যাক।
কাপল ডান্স এর ঘোষনা করা হয়। এক হাত বাড়িয়ে দেয় আসিম । অনিন্দিতা কোনো রখম অস্বস্তি ছাড়াই হাতে হাত রাখে। আড়চোখে নির্ভীকের দিকে তাকায় সে লক্ষ্য করে নির্ভীক কে হাসি খুশি দেখাচ্ছে। ভেতর থেকে তাচ্ছিল্য আসে অনিন্দিতার। সব ভালোবাসায় পূর্নতা আসে না। সবার জন্য ভালোবাসার স্বাদ নিশ্চিত করা হয় না। কিছু মানুষের জন্য দগ্ধ স্থির করা হয়। তাঁর ই একজন হলো অনিন্দিতা।
আশাহত আসিম গালে হাত দিয়ে বসে আছে। নির্ভীকের অনুভূতির কোনো রকম পরিবর্তন ঘটে নি। সমস্ত প্ল্যানে যেন জল ঢেলে দিয়েছে। অনিন্দিতার মধ্য ও কোনো চঞ্চলতা নেই। কয়েক দিনে মেয়েটা যেন বুঝদার হয়ে উঠেছে। তবে একটাই দোষ আবেগে আপ্লুত হয়ে পরে খুব দ্রুত। নির্ভীকের স্মৃতি আঁকড়ে পরে থাকাই যেন তাঁর লক্ষ্য। যদি ও তাঁদের স্মৃতি খুব বেশি ভালো নয়। তুচ্ছ তাচ্ছিল্যর মাঝেই ভালোবাসা খুঁজে অনিন্দিতা। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অনিন্দিতা। ছলছল নয়নে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকালো। ঠিক তখনি কর্নপাত হয় নির্ভীকের কন্ঠ। অনিন্দিতা বলে
_ এখনি চলে যাবেন ?
_ আরো থাকতে চাচ্ছেন ?
_ নাহ এমনি বললাম।
_ রাত সাড়ে এগারো টা বাজে। এতো রাতে আপনাকে সাথে করে নিয়ে আসা যাওয়া করা ওহ আমার জন্য লজ্জাজনক।
_ নির্ভীক ভাই !
_ আমার সাথে আসুন। আমি বাস্তব টাই বললাম।
গাড়ি চলছে । অনিন্দিতা অনুভূতি শূন্য। মনের ভেতর এক বাসনা জেগেছে তাঁর। মন পাঁজরের গহীন ক্ষত টা সৃষ্টি হয়েছে আজ বেশ অনেক দিন। দিন বললেও ভুল হবে বছর হয়ে গেছে। নির্ভীকের সাথে ঘুরতে যেতে চায় অনিন্দিতা। এক বছর পূর্বে নির্ভীকের কাছে রিটার্ন গিফ্ট হিসেবে এই আকাঙ্খা রেখে ছিলো অনিন্দিতা। নিজ জন্মদিন হওয়ার সুবাদে নির্ভীক হ্যাঁ না কিছু ই বলে নি। না হলে অপমান করে তাচ্ছিল্য করতো সে। আজ সে উত্তর টা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেটা তাচ্ছিল্য হলে ও হবে। ঘড়ি তে টাইম দেখে নেয় অনিন্দিতা। বারো টা বাজার কয়েক সেকেন্ড বাকি। নিজ মন কে বুঝিয়ে নিয়ে নির্বিকের উদ্দেশ্যে অনিন্দিতা বলে
_ ” শুভ জন্মদিন ”
_ থ্যাংকস
কথা টা অনুভূতি হীন ভাবেই বলে নির্ভীক। অনিন্দিতার অন্তকর্ন থেকে ভেসে আসে দীর্ঘশ্বাস আর ক্লান্তি। নেতিয়া যাওয়া নেত্র পল্লব মেলে বলে
_ গত বছর সবাই কে রিটার্ন গিফ্ট দিয়েছিলেন আমাকে তো দিলেন না ? এবারো কি দিবেন না ?
_ কি চান বলুন।
_ যদি চাই আপনাকে ?
_ বাচ্চামো করবেন না অনিন্দিতা। অন্য কিছু বলুন।
_ ভয় পাবেন না। এটা এমনি তেই বললাম। মানুষ তো আশায় বাঁচে তাই আশা টা কে প্রকাশ করলাম। অন্য কিছু চাইলে দিবেন তো আমায় , কথা দিন তাহলে ।
_ বলুন কি চান।
_ আমি কাঁদবো নির্ভীক ভাই। আপনাকে জড়িয়ে কাঁদতে চাই। একটু স্বস্তি চাই আমি। একটা চাঁদ দেখতে চাই আমি। আমার না হওয়া ব্যক্তিগত চাঁদ কে একটু অনুভব করতে চাই।
হতবাক হয় নির্ভীক। অনিন্দিতা কে উদ্দেশ্যে করে বলে
_ এটা কেমন কথা অনিন্দিতা। অন্য কিছু চান আপনি।
_ আমাকে কথা দিয়েছেন আপনি।
_ অনিন্দিতা আমার কথা শুনুন।
নির্ভীকের উত্তরের আশা করে না অনিন্দিতা। এই প্রথম জড়িয়ে ধরে নির্ভীক কে। নির্ভীক কেঁপে উঠে । মেয়েটার ছোঁয়া মাদকতার মতো কাজ করছে। ঝলসে যাচ্ছে সে , তবু ও অতি শীতল কন্ঠে বলে
_ এতো ভালোবাসা উচিত নয় অনিন্দিতা এতো অনুভূতি নিয়ে ভালোবাসা উচিত নয়। মরন ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসুন আপনি , ভালো থাকবেন।