#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_2 [ প্রথম পার্ট এর লিংক কমেন্টে ]
” তুমি আমার ভীষন প্রিয়। ঠিক যেন কাশ ফুলে ঘেরা কিংবা রক্ত জবার মেলা। তুমি হাসলে , হাসে রোদ্রময়ী আকাশ। তুমি কাঁদলে আকাশ ও কাঁদে, নামিয়ে দেয় ধারা।
তোমার নামে লিখেছি কবিতা, লিখেছি হাজারো গান । কখনো শোনানো হয় নি, কবে জোরাবে প্রান ।
তুমি কি জানো প্রিয়তমা আমার মনের করুন অবস্থা। কখনো কি শুনেছে এ বুকের ধুকপুকানি, কখনো
অনিন্দিতা আর পড়তে পারলো না। ডায়েরী টা টেনে নিয়ে গেল নির্ভীক। চোখ দিয়ে যেন অগ্নি ঝরছে।
ভয়ে এক হাত পিছিয়ে গেল মেয়েটা। ডায়েরী টা উল্টিয়ে রেখে দিলো নির্ভীক। অনিন্দিতা বার বার ফাঁকা ঢোক গিলেছে। নির্ভীকের চোখে মুখে ভয়ঙ্কর রাগ স্পষ্ট হলে ও অতি শান্ত কন্ঠে শুধাল
_ এখানে কেন এসেছেন অনিন্দিতা ?
অনিন্দিতা উত্তর দিলো না। ভয়ে তাঁর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। নির্ভীক আবার বলল
_ ডায়েরী তে হাত দিয়েছেন কেন ? অন্যের জিনিসে হাত দেওয়ার আগে পারমিশনের প্রয়োজন হয় জানেন না ?
_ আমি আসলে
_ কতো টুক পড়েছেন ?
_ বেশি নয় শুধু প্রথম পৃষ্ঠা অব্দি। কিন্তু তাঁর আগেই আপনি
_ অনেক বেশি পড়ে ফেলেছেন। আমার জিনিসে অন্য কারো হাত দেওয়া একদম ই পছন্দ নয়। আপনি আমার রুমে কেন এসেছেন ?
_ আমি দেখতে এসেছিলাম আপনাকে।
_ দেখা হয়ে গেছে ?
অনিন্দিতা মাথা ঝাঁকালো । ঝাঁঝালো স্বরে নির্ভীক বলল
_ তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন ?
_ নির্ভীক ভাইয়া
_ এখানেই থেমে যান। আপনি অন্যায় করেছেন। এই রখম কিছু আবার ঘটলে আমি কঠোর হতে বাধ্য হবো।
এখনি বেরিয়ে যাবেন।
অনিন্দিতা ছলছল নয়নে কিছু বলবে তাঁর আগেই নির্ভীক বলল
_ কোনো কথা নয়। এখনি চলে যান।
অনিন্দিতা একপলক তাকালো। নির্ভীক তাঁর দিকে ফিরে ও তাকালো না। চাঁপা কান্না নিয়ে অনিন্দিতা স্থান ত্যাগ করলো।”
বর্তমান
_অনি , এই অনি কফি টা নিয়ে যাহহ। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
শাহানার ডাকে চোখ মুছে নিলো অনিন্দিতা। অস্ফুটন স্বরে বলল
_ আসছি আম্মু।
কিচেন থেকে কফি নিয়ে আবার রুমে চলে আসলো। মাথা টা কেমন ঝিম ঝিম করছে। কফি কাঁপে চুমুক দিয়ে বই নিয়ে বসলো। সামনের বছর এডমিশন টেস্টে যে করেই হোক সিলেক্টড হতেই হবে।
.
” আন্টি আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তবে অনিন্দিতা বুঝলেই হয়। ”
_ দেখো বাবা কিছু করতে পারো কি না। মেয়েটা এমন অবুঝ তো ছিল না। আজকাল বেখেয়ালি হয়ে গেছে। এই তো সকাল বেলা চা বসিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো। একটুর জন্য আগুন লেগে যায় নি।
বিকেলে কফি ফেলে হাত পুরিয়ে ফেলেছে। এমন করলে তো বড় সড় অঘটন ঘটে যাবে।
_ হ্যাঁ। আমি বুঝাবো যাতে অন্য ভারসিটির তে এডমিশন নেয়। তারপর দেখি অনিন্দিতা কি করে।
শাহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। যদি মেয়েটার একটু সুবুদ্ধি ঘটে। এন এস ইউ তেই কেন এডমিশন নিতে হবে। দেশে আরো অনেক ভারসিটি রয়েছে। কিন্তু না সেগুলো তে হবে না।
গভীর মনো যোগে বই পড়ার কথা থাকলে ও বই পড়ছে না অনিন্দিতা। আধ খাওয়া কফি টা ঠান্ডা হয়ে পরে আছে। দু চোখের কোনে পানি জমেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। নির্ভীক মাহতাব এর মাহতাব শব্দের অর্থ চাঁদ। নির্ভীক তাঁর কাছে চাঁদ ই রয়ে গেছে। আর অনিন্দিতা হলো সেই গরিব ব্রাহ্মণ।
অবশ্য সেটা ও ভুল। কারন গরিব ব্রাক্ষন রোজ নিয়ম করে চাঁদ কে দেখতে পায়। চাঁদ তাঁর থেকে লুকিয়ে থাকে না। আর নির্ভীক তাঁর থেকে লুকিয়ে বাঁচে।
প্রায় দশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে নির্ভীক । একজন জল জ্যান্ত মানুষ যে তাঁর ই রুমে উপস্থিত সে দিকে খেয়াল নেই মেয়ে টার। তাঁর ভাবনা জুড়ে নির্ভীক কে না পাওয়ার বেদনা। চারটে বছর ধরে যার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় তিনটে বছর ধরে পাগল প্রায় অবস্থা। অথচ নির্ভীক তাঁর দিকে ফিরে ও তাকায় না।
নির্ভীক খ্যাক করে কেশে অনিন্দিতার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করলো। অনিন্দিতা ঘুরে তাকাতেই বলল
_ আপনি নাকি এক বছর গ্যাপ দিচ্ছেন অনিন্দিতা ?
অনিন্দিতা উঠে দাঁড়ালো। নির্ভীক কে নিজের ঘরে আশা করে নি ওহ। বিস্ময়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ । ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা। নির্ভীক ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
_ আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন অনিন্দিতা?
অনিন্দিতা হতচকিয়ে উঠলো। জামা টেনে নিয়ে ভালো করে ওড়না পেঁচিয়ে বলল
_ জি ।
_ এটা কি ঠিক হচ্ছে ?
_ কেন ঠিক নয় ?
নির্ভীক ঘুরে দাঁড়ালো। অনিন্দিতার টেবিল থেকে বই নিতে গিয়ে চোখ পড়লো বুক স্লেফে। মুহুর্তেই রাগ উঠে গেল। প্রতি টা বই ঘেটে দেখতে লাগলো । অবাকের চরম পর্যায়ে অনিন্দিতা। নির্ভীকের ঠোঁট দুটো কাঁপছে।
একটা বই মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল
_ এই সব কি ?
_ কি ?
_ আমার সাথে মজা করছেন ?
_ মজা কেন করবো ! এগুলো তো বই।
টেবেলের উপর ধুম করে বই টা রাখলো। আট টা বই বের করে নিয়ে বলল
_ প্রতি টা বই প্রেম নিয়ে লেখা। পড়া শোনা বাদ দিয়ে এই সব পড়েন আপনি ?
আর এর জন্য ই মাথার পোকা গুলো নড়ে চড়ে উঠে?
_ আপনি কি করে জানলেন এই সব প্রেমের বই ?
নির্ভীক হতচকিয়ে উঠলো। প্রশ্ন এড়াতে বলল
_ আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। প্রেমের সংলাপ না পড়ে বই পড়ুন কাজে আসবে।
_ চাই না আমার কোনো কাজ।
_ জেদ করছেন ?
_ নাহহ। জেদ করছি না আমি। আমি শুধু জানি একজন কে ভালোবাসি।
_ থেমে যান। এন এস ইউ তে চান্স পাওয়ার ইচ্ছে টার একমাত্র কারন যে আমি, সেটা খুব ভালো করেই জানি। এই সব পাগলামি বন্ধ করুন। এতে বিন্দু মাত্র লাভ হবে না বরং যে চেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন।
অনিন্দিতা চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। নিজের দুর্বলতা দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। পেছন ফিরে নিয়ে বলল
_ আমি পাগলামি করছি না । আমার এন এস ইউ তেই এডমিশন লাগবে। সেটা যে করেই হোক।
নির্ভীকের প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। সমস্ত রাগ বইয়ের উপর উঠালো। বই গুলো ডুমরে মুচরে নিয়ে চলে গেল। নির্ভীক চলে যেতেই চাঁপা কান্নায় ভেঙে পরলো মেয়েটা। যে জায়গা টায় নির্ভীক দাঁড়িয়ে ছিলো সে জায়গায় হাত বুলালো। যে জায়গায় নির্ভীক হাত ছুইয়েছিলো সে জায়গায় ঠোঁট ছোয়ালো । চাঁদের আলোয় মেয়ে টার মুখ উজ্জল হয়ে গেছে। নির্ভীকের দাঁড়ানো জায়গায় শুয়ে রইলো।
পাগলামি, ভালোবাসা হলো এক বিচিত্র অনুভূতির বড় সড় পাগলামি।
*
” অনি , এই অনি মেঝে তে শুইয়ে আছিস কেন মা। শরীর খারাপ করেছে ? অনি এই অনি ? ”
মায়ের ডাকে চোখ পিট পিট করে তাকালো। মেঝে তে ঘুমানোর কারনে গালের এক পাশ লাল হয়ে আছে। সাথে গালে দুটো দাগ ও হয়েছে।
হাই তুলে অনিন্দিতা বলল
_ কি হয়েছে আম্মু ?
_ এখানে শুয়েছিস কেন ? কাল তো গরম ছিলো না। তাহলে জ্বর হয়েছে নাকি ? ঘুমের ঘোরে পরে যাস নি তো ?
_ আম্মু একটু শান্ত হও। এমনি ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।
এখন বলো কি হয়েছে ?
_ মেঝে থেকে উঠ আগে। তোর আব্বু এসেছে , তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।
অনিন্দিতা উঠে দাঁড়ালো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজে। কক্সবাজার থেকে এতো সকাল সকাল এসে পরলেন কি করে ?
_ যাহ ফ্রেস হয়ে আয় আমি নাস্তা রেডি করছি।
শাহানা চলে গেলেন। অনিন্দিতা বিছানা থেকে ফোন নিয়ে নির্ভীক এর প্রোফাইল ঘাটলো । 5 ঘন্টা আগে একটিভ ছিলো মানুষটা। অনিন্দিতার ভ্রু বেঁকে গেল। ছেলেটা রাতে ঘুমায় নি নাকি ?
হঠাৎ করে অনিন্দিতার বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। নির্ভীক কি কাউ কে ভালোবাসে। দু বছর আগে নির্ভীক এর ডায়েরী তে তো তেমনি লিখা ছিলো।
_ আপু এই আপু আর কতোক্ষন?
হীরের কন্ঠে ফোন টা রেখে দিলো। ভাবনা গুলো নিয়েই বাথরুমে চলে আসলো। ফ্রেস হয়ে এসে সোজা ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।
আরশাদ হক রিমোর্ট দিয়ে টিভির চ্যানেল পালাচ্ছেন। অনিন্দিতা কে দেখে বললেন
_ পাশে এসে বস অনি।
অনিন্দিতা বসলো না। আরশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। মেয়ে টা কেমন চুপচাস হয়ে গেছে । বাড়ি মাতিয়ে রাখা মেয়ে টার এমন করুন দশা কেন ?
_ কি হলো !
_ কখন এলে আব্বু ?
_ কিছুক্ষণ আগে ।
_ ফ্লাইটে করে এসেছো ?
_ হুমমম। ভাবলাম তাড়াতাড়ি আসা ও যাবে আর ভেজাল ওহ কম হবে।
অনিন্দিতা একটু হাসলো। আরশাদ উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রেখে বললেন
_ তুমি তোমার সিদ্ধান্ত এখনো বদলাবে না ?
_ আমি এন এস ইউ তেই পড়তে চাই আব্বু। যদি টাকা নিয়ে চিন্তা করো তাহলে আমি পার্ট টাইম জব খুঁজে নিবো।
_ ছিইই মামুনি। আমি টাকা নিয়ে কেন চিন্তা করবো। তোমার বাবা মধ্য বিত্ত হলে ও এন এস ইউ তে পড়ানোর ক্ষমতা রাখে।
_ আমি এন এস ইউ তেই পড়তে চাই আব্বু। এক বছর গ্যাপ যাওয়া আমার জন্য কোনো বিষয় নয়।
কথা গুলো বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেললো অনিন্দিতা । আরশাদ নিভে গেলেন। মেয়েকে দু হাতে বুকে জড়িয়ে বললেন
_ আচ্ছা তাই হবে। আমি তোমার মা কে বুঝিয়ে বলবো।
তুমি এডমিশনের জন্য মন দিয়ে পড়াশোনা করো। কেমন ?
*
ভোর বেলা উঠে পড়া শোনা করছিলো অনিন্দিতা। এন এস ইউ তে চান্স পেয়েই ছাড়বে। নির্ভীক তাঁকে সাইলেন্ট চ্যালেঞ্জ করেছে। একবার হেরে গেছে তবে এবার হারবে না।
সব সময় নির্ভীকের জয় চাইলে ও আজ নিজের জয় চাইছে।
ভালোবাসা কে একটু দেখার জন্য ই এতো কিছু করা। না হলে সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেলে ও নির্ভীকের দেখা মিলে না।মাস পার হয়ে গেলে ও কথা হয় না। নির্ভীকের ভারসিটি তে পড়লে দিনে একবার হলে ও দেখার সুযোগ মিলবে।
গভীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো। বেশ বিরক্ত হয়েই তাকালো অনিন্দিতা।
_আপু একটু শাড়ি টা পরিয়ে দিবে প্লিজ ?
শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে হীর। অনিন্দিতা বেশ অবাক হলো। শাড়ি পরতে পছন্দ করে না হীর। কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পরা হয় না তাঁর ।
_ হঠাৎ করে শাড়ি কেন পরবি ? তোর তো শাড়ি পছন্দ নয়।
_ আরে স্বাদে কি শাড়ি পরছি ? আজ তো আমাদের নবীন বরন। কলেজের ফাস্ট ডে ভুলে গেলে ?
_ আজ নবীন বরন ?
_ হ্যাঁ । একটু পরিয়ে দাও না প্লিজ। সবাই শাড়ি পরে আসবে।
_ আচ্ছা আয়।
হীর কে শাড়ি পরিয়ে দিলো। তবে শাড়ি টা বেশ পাতলা হওয়ায় শরীরের বেশ কিছু অংশ ফুটে উঠেছে। হীর একটু স্বাস্থ্যবান হওয়াতে শাড়ি টা মোটা করে পরানো সম্ভব নয়। অনিন্দিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আমি আমার একটা শাড়ি নিয়ে আসছি।
_ কিন্তু , আমি কি পুরোনো শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে যাবো ?
_ সমস্যা কোথায় ? দু একবার ই তো পরেছি।
_ নাহ আমি পুরোনো শাড়ি পরে যাবো না। সবাই আমাকে লেক পুল করবে।
হীর মন খারাপ করে নিজের ঘরে চলে গেল। অনিন্দিতার বেশ খারাপ লাগলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবাড খুললো। একটা বক্স থেকে পার্পল রঙের শাড়ি বের করলো। শাড়ি টা খুব পছন্দের। কখনো পরা হয় নি। নির্ভীকের পছন্দের রঙে কিনেছিলো। ভেবে ছিলো নির্ভীক এর সাথে প্রথম ঘুরতে যাওয়ার সময় শাড়ি টা পরবে।
নাহ , সেই ইচ্ছে টা হয়ে উঠে নি আর। শখের জিনিস তো ঘরেই পুরোনো হয়ে গেল। তাঁর থেকে না হয় হীর ই পরলো। শাড়ি টা তে হাত বুলিয়ে মৃদু হাসলো অনিন্দিতা।