অভিমান পর্ব -০৪

#অভিমান
#পর্বঃ৪
#তানিশা সুলতানা

“আরে ভাই আপনি ভুল জায়গায় এন্ট্রি নিয়েছেন। আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না। আমি তোহা। আপনার শত্রু। আপনার সাথে খালি ধাক্কা খায়। তোহা আমি তোহা তততততততততততততততোহহহহহহহহহহহহহহহা
তোহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে জোরে বলে। তোহা নামটা সুর টেনে বলে। মেঘের হুশশশ ফেরে। চোখ মুখ ঝাঁকিয়ে নেয় একবার। এক হাত তোহার কোমর থেকে তুলে কানে হাত দেয়।
” ওহহহ তুমি।
তোহাকে ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকে বলে।
তোহা কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে।
রোমান্টিক রোমান্টিক চাহনি ছোঁয়া সব কিছু গার্লফ্রেন্ড ভেবে করেছে। ভাবা যায়? এরকম গার্লফ্রেন্ড পাগল ছেলেও হয়। না জানি কখন মা বা কাকিমনি কে গার্লফ্রেন্ড ভেবে জড়িয়ে ধরে।
“ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি। সারাক্ষণ গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ভাবলে এমনটা হয় আমি জানি। এতে এতো সরি বলার কিছু নেই।
ভাব নিয়ে লম্বা চুলগুলোর মধ্যে কিছু চুল সামনে আনতে আনতে বলে।
” এক্সকিউজ মি
তোমাকে ওই শব্দটা কে বললো? কেউ বলে নি। আর মেঘরাজ কখনো ভুল করে না।
চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে বলে মেঘ।
তোহা ভেংচি কাটে।
“হিরো সাহেব। থুক্কু হিরো আলম সাহেব। কখনো ভুল করে না। ঢং দেখে বাঁচি না।
বিরবির করে বলে তোহা।
” কি বললে?
তোহা মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে
“কই কিছু তো বলি নি।
আবার মেঘের বুকের ধক করে ওঠে। হাসি মুখটা দেখে থেমে যায়। এই মেয়েটা কি মেঘকে পাগল করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছে না কি?
” আসি হ্যাঁ। মা ডাকছে। হ্যাঁ মা আসছি
তোহা জামা উঁচু করে ধরে দৌড় দিতে যায়।
মেঘ হাত ধরে ফেলে। তোহা চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে যায়।
“কি হলো? আবার আমার মধ্যে গার্লফ্রেন্ডকে দেখছেন না কি?
মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে তোহা।
মেঘ হাত ছেড়ে চুল গুলো ছুঁয়ে দেয়। তোহা চোখ বন্ধ করে।
” হেই কখনো চুল খুলে রাখবে না। নেক্সট টাইম দেখলে চুল কেটে দেবো।
বলেই মেঘ চলে যায়। তোহা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
“হনুমান একটা। হালকা করে থ্রেট দিয়ে গেলো। বউ পাবি না তুই। আর তোহা কাউকে ভয় পায় না হু
জোরে জোরে বলে তোহা।

” দেখ না পিক গুলো কি সুইট এসেছে।
কেমেরা দেখতে দেখতে বলে শুভ।
মেঘ এগিয়ে যায় শুভর দিকে।
“কিসের পিক।
কেমেরাটা কেড়ে নিয়ে বলে মেঘ। ক্যামেরায় তোহা আর মেঘের রোমান্টিক কিছু পিক দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় মেঘ। শুভ ততোখনে কান ধরে উঠবস করছে।
” সরি ইয়ার
কতো সুন্দর পোছ দিচ্ছিলি তোরা তো পিক তোলার লোভ সামলাতে পারি নি।
“এতোদিনে একটা ঠিক কাজ করেছিস।
আলতো হেসে বলে মেঘ। শুভ এক লাফ দিয়ে মেঘকে জাপটে ধরে।
” ছবি গুলো সুন্দর করে ফ্রেম করে আনবি সকাল হওয়ার আগেই।
শুভ নাচতে নাচতে চলে যায়।
এই একটা মানুষ যে মেঘের খুশিতে সব থেকে বেশি খুশি হয়৷ প্রাণের বন্ধু মেঘের।

মায়া আর আকাশকে এক সাথে দেখতে ভালো লাগবে না তোহার তাই তোহা একা একা নিজের মতো করে ঘুরছে। নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে।
মেঘ ঘুরে ঘুরে সব সময় তোহাকেই দেখছে।
“এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? ঘুরে ফিরে চোখটা খালি এই মেয়েটার দিকেই কেনো যাচ্ছে? চোখের আড়াল হয়ে গেলেই পাগল পাগল কেনো লাগছে? হচ্ছে টা কি এসব?
মেঘ নিজের দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মনে মনে বলে।

” আমায় ডেকেছিলেন?
বাবার রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে মেঘ। মেঘের বাবা আর দাদা বসে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো।
“এখানে আমাদের সাথে থাকতে পারবে না?
দাদা বলে ওঠে।
” সম্ভব না। মেঘ সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
“ঠিক আছে।
আসতে পারো।
বাবা গম্ভীর সুরে বলে।
” তবে হ্যাঁ তোহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে এসো। একমাত্র বোন তোমাদের।
বাবার কথা শুনে বড়বড় চোখ করে তাকায় বাবার দিকে। তোহার বিয়ে মানে? যে মেয়ের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বিকেলটা শেষ করলো তার বিয়ে?
“বুঝলাম না?
মেঘ কান খাড়া করে বলে
“তোহাকে বিয়ে দেবো খুব তারাতাড়ি। তোহার বাবার সাথে কথা হয়েছে। তোমার দাদুর ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে তোহার বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তুমি তো
থাল বাদ দাও
আমরা ছেলে পছন্দ করে ফেলেছি। ছেলের পরিবারও তোহাকে পছন্দ করেছে। খুব তারাতাড়ি ওদের বিয়েটা সেড়ে ফেলবো। তো তোমাকে অনুরোধ করছি থেকো একমাত্র বোনের বিয়েতে। তোমার ফুপা ফুপি খুব খুশি হবে৷
মুখের গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বলেন মেঘের বাবা।
বারবার বোন বলে সমন্ধন করা মেঘের একদম ভালো লাগছে না। তারওপর আবার বিয়ে।
” কখন যাচ্ছো? খেয়ে যাবে তো?
দাদু বলে।
“জানি না
রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে যায় মেঘ।
বাবা আর দাদু হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এরকম তো কখনো মেঘকে দেখে নি।

” বাবা বলছিলাম কি তোহার সাথে মেঘের বিয়েটা দিয়ে দিলে
মেঘের বাবার কথা শেষ হওয়ার আগেই দাদু বলে ওঠে
“তোমার ওই চরিত্রহীন বেহায়া ছেলের সাথে কি করে তোহার বিয়ের কথা ভাবো তুমি? আমার একমাত্র নাতনীকে আমি কখনোই ওর সাথে বিয়ে দেবো না।
বলে তখুনি গটগট করে বেড়িয়ে যায়।
মেঘের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” আমিই ভুল ছিলাম। সত্যিই তোহা মামনির মতো এতো ভালো একটা মেয়েকে কখনোই আমার বেহায়া ছেলেটা ডিজার্ভ করে না।

তোহার বিয়ে কথাটা বারবার কানে বাজছে মেঘের। যে মেয়েটাকে দেখে ও মুগ্ধ হয়েছে। যে মেঘের বুকে ধুকবুক বাড়িয়ে দেয় সেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে? এটা হতে পারে না। হতে দেবে না মেঘ।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে তোহা। একটু আগে বাবা মায়ের ফিসফিসানি শুনতে পেয়েছে। বাবা মা ফিসফিসিয়ে বলছিলো তোহাকে পাএপহ্ম দেখেছে আর পছন্দ করেছে। ছেলেকেও সবার পছন্দ হয়েছে। এখন খুব তারাতাড়ি ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে। এটা শুনেই তোহার মন খারাপ হয়ে গেছে৷ কবে দেখে গেছে সেটাও জানে না তোহা।

চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে মেঘ। তোহার মুখটা ভেসে আসে। কি সুন্দর হাসি। ভয় পেলে চোখ মুখ কুচকে ফেললে কতোটা মায়াবী লাগে। ভয়ে ভয়ে কথা বলে। অজস্র মায়া আছে এই মেয়েটা মুখে।
হঠাৎ করে মেঘের একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে। এক পলক তোহাকে দেখার ইচ্ছে।
সাহারা হোটেলেও যায় নি আজ। দুটো মেয়েকে আনা হয়েছিলো৷ শুভকে বলেছে টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে
উঠে বসে মেঘ।
“যাবো একবার?
যায় একবার ঘুমন্ত মুখটা দেখে আসি। ঘুমলে কেমন লাগতে পারে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here