অরুণিকা পর্ব -১০+১১+১২

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১০||

১৮.
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর নতুন শ্রেণিতে উঠতে গিয়েই সংকটে পড়তে হচ্ছে ছ’জনকে। এই মাসে সালেহ আলীর কাছে কোনো টাকা আসে নি। গতমাসের সঞ্চয় করা টাকা দিয়েই তাদের এই মাস কাটছে। রহমত চাচা কেন হঠাৎ টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।

এদিকে ছ’জনের পক্ষে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মতো টাকা নেই। এখন পড়াশুনা ছাড়াও তাদের পক্ষে সম্ভব না। আপতত দু’জনকে ভর্তি করানো সম্ভব। তাই সিদ্ধান্ত হলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাকী টাকা জোগাড় করতে হবে, নয়তো ইভান আর আরাফই এই বছর নতুন শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করবে।

বিকেলে সুরাইয়া তার সন্তানদের নিয়ে অরুণিকাদের ঘরে এলেন। সুরাইয়া আর সালেহ আলীর তিন সন্তান। ডুমুর তাদের বড় মেয়ে, সে শতাব্দীর বয়সী। বাঁধন অরুণিকার চেয়ে বছর তিনেক বড়। আর খোকার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তাহমিদ সুরাইয়ার বাচ্চাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালো। এদিকে ডুমুর খালি পায়ে বিছানায় উঠে বসলো। তাহমিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুরাইয়া বললেন,
“শুনলাম, তোমাদের স্কুলের ভর্তির জন্য নাকি টাকা নেই!”

তাহমিদ চুপ করে রইলো। তূর্য বলল,
“হ্যাঁ, চাচী। আমাদের তো টাকার দরকার ছিল। রহমত চাচা টাকাটা পাঠাচ্ছেন না, তাই এতো ঝামেলা হচ্ছে।”

সুরাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“তোমরা রহমত ভাইয়ের ভরসায় থেকো না। উনি বড্ড ঝামেলায় আছেন। কাল তোমাদের চাচা বলছিলেন, উনার উপর নাকি হামলা হয়েছে। কে নাকি রাবার বুলেট ছুঁড়েছে।”

সুরাইয়ার কথা শুনে ছ’জনই অবাক হলো। ইভান জিজ্ঞেস করলো, “কে করেছে এমন?”

“আমি তো জানি না, বাবা। তবে উনার পক্ষে এখন আর প্রতি মাসে টাকা পাঠানো সম্ভব না। এতোদিন যেই টাকা পাঠাচ্ছিল, ওগুলো কিভাবে দিয়েছেন জানি না। শুনলাম তোমাদের বাবা-চাচাদের একাউন্টে অনেক টাকা আছে। সেগুলো তোমরা ছাড়া আর কেউ উঠাতে পারবে না। এখন তোমাদের তো আর ওখানে যাওয়াও সম্ভব না।”

ইমন বলল,
“ওই টাকাগুলো উঠাতে পারলে আমাদের আর এখানেই থাকতে হতো না।”

“হ্যাঁ, ভালো বাসা নিতে পারতে। কিন্তু জীবন বাঁচানোর জন্য তো তোমাদের এখন সবকিছুই সহ্য করতে হবে। রহমত ভাই থেকে সব শুনলাম। তোমাদের পরিবারের সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে। বাবুনটার জন্য বেশি খারাপ লাগে। অল্প বয়সে কতো কিছু দেখে ফেলেছে!”

সুরাইয়া কিছুক্ষণ পর আবার বললেন,
“আসল কথায় আসি, যেই কারণে আমি এখানে এলাম।”

তারা ছ’জনই সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সুরাইয়া বললেন,
“তোমরা চাইলে কাজ করে খেতে পারো। তোমাদের চাচা বলছে, এভাবে অন্যের ভরসায় থাকলে তোমরা সামনে এগুতে পারবে না। কারণ আগামী মাস থেকে হয়তো দু’তিন মাস পর পর রহমত ভাই টাকা পাঠাবেন। পাঠাবেন এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“তাহলে উনি কেন আমাদের ভরসা দিয়েছিলেন? আমরা ছ’জন একসাথে কিভাবে পড়াশুনা করবো? তাছাড়া খাওয়ার খরচ, থাকার খরচ ছাড়াও অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে। অরুর এখন পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। এতোকিছু আমরা কিভাবে সামলাবো?”

সুরাইয়া ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
“পাশের বাড়ির মুন্নি আপার অনেক বছর সন্তান হয় না। তারা একটা সন্তান দত্তক নিতে চাইছিল!”

সুরাইয়ার কথা শুনে সবার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আরাফ চেঁচিয়ে বলল,
“চাচী, প্লিজ, এমন কথা আর বলবেন না।”

সুরাইয়া বললেন,
“জানি বাবা, এসব শুনে তোমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু তোমরা…”

আহনাফ সুরাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমরা কাজ করবো। কাল থেকেই কাজ খোঁজা শুরু করবো।”

তূর্য বলল,
“আমাকে সিনথিয়া আপুর খালা কাজ দিবেন বলেছিলেন। আমি ভালোই গান করতে পারি। হয়তো গান গেয়ে কিছু টাকা আয় করতে পারবো।”

তাহমিদ বলল,
“আর আমি তো খাবার বিক্রি করতে পারবো।”

ইভান বলল,
“আমি আমার চেয়ে ছোট বাচ্চাদের পড়াতে পারবো। আরাফও পারবে।”

ইমন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আমি তো কিছুই পারবো না।”

আহনাফ কোণা চোখে ইমনের দিকে তাকালো৷ তারপর সুরাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ইমনকেও আমরা একটা কাজে ঢুকিয়ে দেবো।”

অরুণিকাকে দত্তক দেওয়ার কথা উঠতেই ছ’জনের মধ্যে এক ভয়ংকর উত্তেজনা চলে এলো। সুরাইয়া তা দেখে মনে মনে হাসলেন। তিনি এটাই চেয়েছিলেন। অন্তত তাদের মাঝে যদি একটু মানসিক গতি আসে, তাহলে এই সমস্যা তারা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে। কারণ সুরাইয়া জানে রহমত সাহেবের পক্ষে এতোগুলো ছেলেকে পড়াশুনা করানো সম্ভব না। উনার অবস্থা এখন খুবই খারাপ৷

সুরাইয়া অরুণিকার পাশে বসে বললেন,
“এই বাবুন, সকালে বাড়ি এসে বাঁধনের সাথে আরবি পড়তে বসো।”

এরপর আরাফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“মৌলভী সাহেব খুব ভালো মানুষ। তোমাদের সমস্যার কথা বললে উনি টাকা নেবেন না। আর এখনই তো আরবি শেখার বয়স।”

ইমন বলল,
“আরবি কেন শিখতে হচ্ছে? আমি কতো আগে পড়েছি। মনেই নেই। এগুলো মনে থাকে না। আরেকটু বড় হলে নামাজ শিখলে চলবে।”

সুরাইয়া মুখে হাত দিয়ে বললেন,
“ওমন কথা বলছো কেন, বাবা? ও কি তাহলে কোর’আন শিখবে না? আর তোমরা দেখি নামাজ-দোয়াও পড়ো না। বাবুন তোমাদের দেখে কি শিখবে বলো? তোমাদের বাবা-মা নেই। ও এখন শিক্ষা-সংস্কৃতি, আদব-কায়দা সব তোমাদের দেখেই শিখবে। আমি যেহেতু তোমাদের চাচীর মতো। আমার তো এতোটুকু দায়িত্ব আছে, তাই বললাম। কিছু মনে করো না।”

তারা চুপ করে রইলো। এদিকে অরুণিকা পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। এই মেয়ের অর্ধেক সময় কার্টুন দেখতে দেখতেই কেটে যায়। সুরাইয়া চলে যাওয়ার পর আরাফ এসে অরুণিকার হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিলো। অরুণিকা সাথে সাথেই ক্ষেপে উঠলো। মোবাইল নেওয়ার জন্য বার-বার আরাফের কাছে জেদ করতে লাগলো। আহনাফ বিরক্ত হয়ে এক ধমক দিতেই সে ধপ করে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজলো। এরপর তাকে টেনেও আর বিছানা থেকে তোলা গেলো না। দিন দিন অরুণিকার জেদ বাড়ছে তো বাড়ছেই। এভাবে জেদ বাড়তে থাকলে, ওকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই কষ্টকর হয়ে যাবে।

দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইভান আর আরাফ অনেক গুলো টিউশন পেয়ে গেলো। সবগুলোই শতাব্দীর বাবা খুঁজে দিয়েছেন। এখন মাস শেষ হলে এই টাকাগুলো দিয়ে তারা নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু তাদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টাকা লাগবে, কারণ ভর্তির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ছ’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সালেহ আলী, মাস্টারমশাইসহ মহল্লার মধ্যে যাদের অবস্থা ভালো, তাদের থেকে কিছু টাকা ধার নেবে। কিন্তু এই ধার নিতে গিয়েই তাদের অনেক লজ্জায় পড়তে হলো। অনেকেই মুখের উপর না করে দিয়েছে, আবার অনেকে খোঁচাও দিয়েছে। কারণ কেউই বিশ্বাস করতে চাইছে না যে তাদের পক্ষে টাকাটা ফেরত দেওয়া সম্ভব। তবে যারা বিশ্বাস করে টাকা ধার দিয়েছিল, তাদের আশাহত হতে হয় নি। পরের মাসেই আরাফ আর ইভান টিউশনের পুরো টাকাটা দিয়ে তাদের ঋণ শোধ করে ফেলে। কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো তখন, যখন দেখলো ঋণ শোধের পর তাদের হাতে আর কোনো টাকাই অবশিষ্টই ছিল না।

যেই টাকা আছে তা দিয়ে হয়তো ঘর ভাড়া দিতে হবে, নয়তো খাবারের খরচ। মাত্র তিন হাজার টাকা দিয়ে ছ’জনের পুরো মাস চালানো মোটেও সম্ভব না। এখন এই মাসে আর কি কি দেখতে হবে, সেটা ভাবতেই তাদের মাথাটা আরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

(🔔পর্ব ছোট হয়ে গেছে। তাই আগামীকাল বড় করে দেবো।)

চলবে-#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১১||

১৯.
অরুণিকা শুকনো মুখে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অরুণিকা আরাফের টি-শার্ট খামচে ধরে চেঁচিয়ে বলল,
“তোমরা পঁচা। আমি তোমাদের সাথে কথা বলবো না।”

আরাফ অরুণিকার হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
“অরু, এতো জেদ কিন্তু ভালো না। তুমি তো লক্ষী মেয়ে, তাই না?”

“আমি ভালো। তোমরা পঁচা। তুমি, আহনাফ, ইভান, তাহমিদ তোমরা সবাই পঁচা। শুধু রকস্টার আর ইমন ভালো।”

ইমন মুচকি হেসে অরুণিকার পাশে বসে বলল,
“আমরা যেহেতু ভালো, তাহলে আমাদের কথা রাখবে না?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, রাখবো। কিন্তু আমার কথাও রাখতে হবে।”

“অরুণিকা, আমরা সবাই তোমার কথা রাখবো। কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে হবে। এখন তুমি যা চাইছো, তা দেওয়া সম্ভব না।”

অরুণিকা হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করে বলল,
“না, আমার লাগবেই লাগবে।”

ইভান ইমনকে সরিয়ে দিয়ে অরুণিকার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“আরেক বার যদি জেদ দেখাও, আমার কিন্তু হাত উঠে যাবে।”

আরাফ অরুণিকাকে ইভানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“হাত উঠে যাবে মানে? তুই ওকে মারবি? ও যা চায়, তা না পেলে কি আমরা ওকে মেরে চুপ করাবো? আর তুই ওকে মারবি, এটা কোন সাহসে বলছিস?”

ইভান আরাফকে আশ্বস্ত করে বলল,
“আমি ওকে শুধু ভয় দেখাচ্ছি।”

আরাফ শীতল কণ্ঠে বললো,
“ভয় দেখাতে হবে না।”

অরুণিকা আরাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আরাফ, তুমি আমাকে সাইকেল কিনে দেবে না?”

“অবশ্যই দেবো। কিন্তু এখন না।”

“না, আমার আজকেই লাগবে। এখন লাগবে।”

অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“আমি বাবার কাছে যাবো। তোমরা সবাই পঁচা।”

তাহমিদ অরুণিকার দিকে একটা চকলেট বিস্কুট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি এটা খাও। তোমার পছন্দের মিল্ক চকলেট বিস্কিট।”

“আমি খাবো না। আমার সাইকেল লাগবে।”

“হঠাৎ তুমি সাইকেল কেন চাইছো?”

“বাঁধনকে চাচ্চু সাইকেল কিনে দিয়েছে৷ ও আমাকে ওটা ধরতে দেয় না৷ ওদের সবার সাইকেল আছে। শুধু আমার নেই। ওরা আমায় খেলায় নেয় না। ওরা বলেছে সাইকেল না থাকলে আমার সাথে খেলবে না। আমি ওদের সাথে খেলতে চাই।”

“যারা তোমার সাথে খেলতে চায় না, তাদের সাথে তুমি কেন খেলবে?”

“না, আমি ওদের সাথে খেলবো।”

এবার তূর্য বলল,
“শতাব্দী খেলে না তোমার সাথে?”

“শতু আপু তো খেলে না। ও সারাদিন পড়ে।”

এবার ইভান বলল,
“ও লক্ষী মেয়ে তাই পড়ে। এখন তুমিও ওর মতো পড়াশুনা করবে, তারপর তোমাকে সাইকেল কিনে দেবো।”

অরুণিকা এবার মুখ ফুলিয়ে টেবিলের নিচে বসে পড়লো। আহনাফ বলল,
“ওখানেই বসে থাকো। তারপরও অন্তত চুপ করে থাকো। তোমার চ্যা চ্যাগুলো মাথায় লাগছে।”

অরুণিকা মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“এসব কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

তূর্য কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। মিনিট দশেক পর সে শতাব্দীকে বাসায় নিয়ে এলো।

শতাব্দী আজ অনেক দিন পর অরুণিকাদের বাসায় এসেছে। তাকে দেখে বাকীরা অবাক হলো। ইমন আরাফকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ইশারায় ইভান, তাহমিদ আর আহনাফের দিকে তাকাতে বললো। ইভান আর আহনাফ অবাক চোখে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে আছে, আর তাহমিদ তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

আরাফ সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
“কেমন আছো, শতাব্দী? অনেক দিন পর বাসায় এসেছো!”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“হ্যাঁ, গায়ক সাহেব আমাকে নিয়ে এসেছে। শুনলাম, আমার ছোট সখী সবার সাথে রাগ করে বসে আছে।”

শতাব্দী এই বলে টেবিলের নিচে গিয়ে অরুণিকার পাশে এসে বসলো। অরুণিকা শতাব্দীকে দেখে বলল,
“শতু আপু, ওদের সাথে কথা বলো না। ওরা সবাই পঁচা।”

“কেন পঁচা বলছো, সাইকেল কিনে দিচ্ছে না তাই?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। শতাব্দী আবার বলল,
“আমার একটা ছানা আছে। কিন্তু তোমার টুন-ঝুন আছে। এই মহল্লায় কারো কাছে টুন-ঝুন আছে?”

অরুণিকা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“শুধু আমার কাছেই আছে।”

“হ্যাঁ৷ এখন বাকীদের সাইকেল আছে। কিন্তু সাইকেল তো কথা বলতে পারে না৷ নড়াচড়া করতে পারে না৷ নিজ থেকে খেলেও না। শুধু তুমি যতোক্ষণ পা দিয়ে ঘুরাবে ততোক্ষণ চলবে। আর তোমার কাছে দু’টো পাখি আছে। ওরা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। যদিও এখনো কথা শিখে নি। কিন্তু তুমি ওদের কথা বলা শেখাতে পারো। খোকাও কি এখনো কথা বলতে পারে, ঠিকভাবে হাঁটতেও পারে না। কিন্তু সবাই তার সাথে খেলে, তার সাথে কথা বলে। তুমিও তোমার টুন-ঝুনের সাথে খেলবে৷”

অরুণিকা হামাগুড়ি দিয়ে টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো। শতাব্দীও ওর পিছু পিছু বেরিয়ে এলো। অরুণিকা এবার তাহমিদের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি টুন-ঝুনকে আমার সাথে খেলতে দাও না কেন?”

শতাব্দী হেসে বলল,
“ওই যে মিষ্টি মশায়ের ঘর যে নষ্ট হয়ে যাবে৷”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে শতাব্দীর দিকে তাকালো। এরপর অরুণিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“এখন থেকে আমি তোমার সাথে খেলবো। টুন-ঝুনও আমাদের সাথে খেলবে। আমরা সবাই মিলে অরুণিকা আর টুন-ঝুনের সাথে খেলবো।”

“সত্যিই?”

“হ্যাঁ, সত্যি।”

“শতু আপুও খেলবে?”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“যদি কারো আপত্তি না থাকে।”

আহনাফ বলল,
“অবশ্যই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর তোমাকে ধন্যবাদ অরুকে বোঝানোর জন্য।”

শতাব্দী মুচকি হেসে বিদায় নিলো।

২০.

আজ কয়েক পদের মিষ্টি বানিয়ে তাহমিদ বাজারের দিকে গেলো। ভ্যান কেনার মতো টাকাও তাদের কাছে নেই। তাই প্লাস্টিকের বক্সে মিষ্টিগুলো নিয়ে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পথচারীদের কেনার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। তবে সে একা বের হয় নি। তার সাথে ইমনও ছিল।
রোদের তাপে দু’জনের মুখ লাল হয়ে গেছে। আর তাহমিদের চোখেমুখেও অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। এই পেশাকে সে যথেষ্ট সম্মান করে, কিন্তু সে কখনো ভাবতেই পারে নি, সে নিজেই একদিন রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মিষ্টি বিক্রি করবে। এখন প্রতিদিনই মিষ্টি, জিলাপি, সন্দেশসহ বিভিন্ন ঝাল নাস্তা বানিয়ে কখনো বাজারে, কখনো বা পার্কের সামনে চলে যায়। তবে সে কখনোই হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরে নি। কারণ প্রতিদিনই তার সব ক’টা নাস্তায় বিক্রি হয়ে যায়৷ বিকেলের দিকে মানুষের ভীড় বেশি থাকে, তখন অনেকেই মিষ্টি কিনে খায়।
এদিকে তূর্য সিনথিয়ার খালার সাহায্যে একটি ছোট গানের দলের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা পূজায় গান গেয়ে টাকা আয় করে। তবে সেই দলে তূর্যই খুব কম টাকা পায়। সে যেহেতু বয়সে অনেক ছোট, এর চেয়ে বেশি টাকা সে আশা করতে পারবেও না।
অন্যদিকে আহনাফ কাজের জন্য এদিক-ওদিক ছুটছে। তার মধ্যে এমন কোনো সৃজনশীলতা নেই, যা দিয়ে সে নিজে কিছু করতে পারবে৷ তাই এই মুহূর্তে তার শারিরীক শ্রম দিয়েই টাকা আয় করতে হবে। কিন্তু কাজ পাওয়া এতো সহজ না। আর তার চেয়ে কঠিন কাজের জন্য মানুষের কাছে অনুনয় করা, যা আহনাফের দ্বারা সম্ভব না।

বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে আহনাফ রাস্তায় বসে পড়লো। আশেপাশে এলোমেলো ভাবে তাকাতেই চোখ পড়লো একটা বাইকের দিকে। সে বসা থেকে উঠে বাইকটির সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই তার পুরোনো স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো। হঠাৎ একটা লোক তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এই এভাবে কি দেখছিস?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে লোকটির দিকে তাকালো। আহনাফের মুখের ভাব দেখে লোকটি তার বাইকে বসতে বসতে বলল,
“তোর বাবা-দাদার ক্ষমতা নেই এমন বাইক কেনার।”

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“বাইক কিনতে ক্ষমতা লাগে না, টাকা লাগে।”

“কি বললি তুই?”

“অদ্ভুত! আমি কি আপনাকে চিনি? এভাবে হুট করে ধাক্কা দিয়ে এমন মন্তব্য কেন করছেন?”

“তুই আমার বাইক চুরি করতে এসেছিস আমি ভালো করেই জানি। এখন তোকে পুলিশে দেবো।”

“বাইকের চাবি আপনার কাছে। আমি কি বাইক কাঁধে করে নিয়ে পালাবো? ডাকেন পুলিশ।”

“আচ্ছা, আমার সাথে খবরদারি। দাঁড়া, তুই।”

আহনাফ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা, দাঁড়াচ্ছি।”

লোকটা সত্যিই পুলিশ ডাকালো। এরপর পুলিশ এসে আহনাফকে থানায় নিয়ে গেলো। সে নিজের যুক্তিসঙ্গত কথাগুলো তাদের শুনিয়ে গেলো, কিন্তু কেউই তার কথায় কর্ণপাত করলো না। সে শুধু অবাক হয়ে সবার গা-ছাড়া ভাব দেখতে লাগলো। সন্ধ্যায় সালেহ আলী আর সুরাইয়া বাবা-মার পরিচয়ে আহনাফকে ছাড়াতে এলেন, সাথে কিছু টাকাও দিতে হলো।

বাসায় এসেই সুরাইয়া রাগী কন্ঠে বললেন,
“এতো গোঁ ধরে থাকলে হয়! পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেছিল, তখনই তুমি ক্ষমা চেয়ে নিতে পারতে।”

আহনাফ চুপ করে রইলো। ইমন হাসতে হাসতে বলল,
“নায়ক সাজতে গিয়ে চোর হয়ে ফিরে এসেছে।”

আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকালো। ইমনের দেখাদেখি কিছু না বুঝে অরুণিকাও মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। আহনাফ অরুণিকার নাক টেনে তাকে সামনে এনে বলল,
“তুমি হাসছো কেন?”

অরুণিকা নাক ঢলতে ঢলতে বলল,
“ডুমুরাপি মিথ্যে বলেছে কেন?”

ডুমুর ঠোঁটে হাত দিয়ে ইশারায় অরুণিকাকে চুপ করে থাকতে বললো। আহনাফ অরুণিকার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে বলল,
“কি বলেছে ডুমুর?”

“বলেছে..”

ডুমুর অরুণিকাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“না ভাইয়া, আমি কিছু বলি নি। ও মিথ্যে বলছে।”

“ও তো এখনো কিছুই বলে নি। কি শেখাচ্ছো তুমি ওকে?”

সুরাইয়া বললেন,
“কি বলেছিস তুই বাবুনকে?”

ডুমুর কোনো উত্তর না দিয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সুরাইয়াও বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন।

আহনাফ আবার অরুণিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
“এই, ও কি বলেছে?”

অরুণিকা বলল,
“ডুমুরাপি বলেছে, একবার পুলিশের লাঠির পিটুনি খেলে সবাই বিড়াল ছানা হয়ে যায়। কোথায় তুমি তো আর বিড়াল ছানা হও নি। আমার নাকে ব্যথা দিয়েছ। এখন আমি কার সাথে খেলবো? আমি ভেবেছি আমার একটা বিড়াল ছানাও থাকবে। তারপর আমি, টুন-ঝুন আর বিড়াল ছানা একসাথে খেলবো।”

অরুণিকার কথা শুনে আহনাফ শব্দ করে হেসে উঠলো। অরুণিকার নাক হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে বিড়াল ছানা বানিয়ে রাখতে চাও? কিন্তু আমি তো বাঘের ছানা।”

“তুমি বাঘের ছানা? বাঘ তো মানুষ খেয়ে ফেলে। তুমি কি এখন আমাকে খেয়ে ফেলবে?”

“না, আমি লক্ষী মেয়েদের খাই না। কিন্তু যারা কথা শুনে না, তাদের খেয়ে ফেলি।”

অরুণিকা হুট করে আহনাফের মুখে খামচি দিয়ে আরাফের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। আহনাফ গাল ধরে বলল,
“এই মেয়ের নখগুলো তো মারাত্মক বড় হয়েছে। ওর নখ কেটে দে।”

অরুণিকা পা ধাপিয়ে বলতে লাগলো,
“না, না, না। আমি নখ কাটবো না।”

ইদানীং ছ’জনের পড়াশুনা কিছুই হচ্ছে না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘরের কাজ সেরে স্কুলে চলে যায়, আর বাসায় ফিরে অরুণিকাকে খাইয়ে নিজেদের কাজের জন্য বেরিয়ে পড়ে। কেউ রাতে বাসায় ফিরে, কেউ ফিরে সন্ধ্যায়। সন্ধ্যায় আসার পর প্রতিদিনের মতো সবাই তাহমিদকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করে।

এদিকে আহনাফ একটা ঘড়ির দোকানে চাকরি পেয়েছে। রাস্তায় বিজ্ঞাপনের লিফলেট দেখেই সে এই কাজ খুঁজে পেয়েছিল। তার চাকরিটা খুব সুখের। সারাদিন এসির নিচে বসে কাস্টমারদের কাছে ঘড়ি বিক্রি করা, নষ্ট ঘড়ি ঠিক করে দেওয়া, ব্যাটারি লাগানো এসবই করতে হয়। দোকানের মালিকের একই জায়গায় আরেকটা দোকান আছে। তার ওখানেই বসতে হয়। তিনি অনেক দিন ধরেই এমন কমবয়সী ছেলে খুঁজছিলেন। তিনি মনে করেন, কমবয়সী ছেলেদের শাসনের মধ্যে রাখা যাবে। আর আহনাফের ঘড়ির ব্র‍্যান্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকায়, তিনি আহনাফকে কাজে নিয়ে নেন। সকালে মালিক নিজেই দোকানে বসেন। এরপর আহনাফ আসার পর তিনি চলে যান। তবে আরাফ একটা টিউশন পেয়েছে আহনাফের জন্য। রাত ন’টায় দোকান বন্ধ করে মালিকের কাছে চাবি দিয়ে আহনাফ সেই টিউশনটাও করাতে যায়।
মেয়েটির নাম যতি। আহনাফের বয়সী। মেয়েটিকে শুধু ইংরেজি পড়ানোর জন্যই তাকে রাখা হয়েছে। তবে সে বাকী পড়াশুনাতেও মাঝে মাঝে যতিকে সাহায্য করে। যতির বাবা-মা ইচ্ছে করে অল্প বয়সী ছেলেকে শিক্ষক হিসেবে রেখেছেন। তাদের ধারণা যতির চেয়ে বয়স বেশি হলে সে ইতস্ততবোধ করবে, একই বয়সের হলে বন্ধুর মতো সব সহজে বুঝে নিতে পারবে। আর আহনাফের ইংরেজি বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকায়, তাকে না বলার কোনো কারণ ছিল না। তবে চাইলে তারা মেয়ে শিক্ষিকা রাখতে পারতেন, কিন্তু যতির মা সন্দেহবাতিক স্বভাবের। কারণ যতির বাবা, রুবেল আহমেদ, একজন ব্যবসায়ী। তিনি বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকেন, আর ঘরে বসেই ব্যবসা দেখাশুনা করেন। অন্যদিকে যতির মা, রুমানা বেগম অফিসেই থাকেন। তার ধারণা, তিনি মেয়ে শিক্ষিকা বা মেয়ে কাজের লোক রাখলে স্বামীকে হারিয়ে ফেলবেন। তাই বাসায় পুরুষ কাজের লোক রেখেছেন, আর মেয়ের জন্য পুরুষ শিক্ষক।
যদিও যতির বাবা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মানুষ, কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, তিনি স্ত্রীর বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন নি।

২১.

“মাওশিয়াত, আমার নাম মাওশিয়াত, অনেকে মৌ বলে ডাকে, অনেকে ওশিয়া বলে ডাকে। তুমি আমাকে কোন নামে ডাকবে?”

“ভুসি।”
ইভানের উত্তর শুনে ক্লাসের সবাই অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।

মাওশিয়াত হেসে বলল,
“ভুসি নাম দেওয়ার কারণ?”

ইভান মাওশিয়াতের দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলো। মাওশিয়াত হেসে বলল,
“যখন জানোই না, ভুসি মানে কি, তাহলে ডাকছো কেন? আচ্ছা, আমিই বলে দেই, ভুসি সাধারণত রাফেজকে বোঝায়। পেটের যতো ধরণের রোগ আছে সবকিছুর জন্য এটা অনেক উপকারী শস্য। এখন তুমি মেনে নিচ্ছ, আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ইভান চলে আসতে যাবে, তখনই মাওশিয়াত হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বন্ধু হতে পারি?”

ইভান হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি আগ্রহী নই।”

ইভান চলে যেতেই ইমন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি চাইলে আমার বন্ধু হতে পারো।”

মাওশিয়াত মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমি তোমার মতো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী নই, যে ক্লাসে প্রতিদিন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।”

ইমন হাত সরিয়ে নিলো। মাওশিয়াত হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। তূর্য ইমনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এসব মেয়েগুলো আমাদের জন্য সৃষ্টি হয় নি। এরা পড়াশুনা ছাড়া কিছুই বুঝে না।”

“ভাই তো কোনো আগ্রহ দেখায় নি, তবুও মেয়েটা ওর সাথে কথা বলেছে।”

“আরেহ, এই মেয়ে খুবই মেধাবী, নতুন ভর্তি হয়েছে। এই মেয়ে শুধু মেধাবী ছাত্রদের সাথেই কথা বলে, তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করে। আর ইভান তো এই ক্লাসের টপার। স্বাভাবিক, কথা বলবেই। কারণ ওর ইভানকে টপকে সামনে এগুতে হবে, বুঝেছিস?”

“তুই এতোকিছু কিভাবে জানলি?”

“ক্লাসে নতুন মেয়ে এসেছে, আর রিকি দা স্টার তথ্য নেবে না, তা কি হয়?”

ইমন হাসলো আর বলল,
“দেখিস, আমি ওর বন্ধু হয়েই ছাড়বো।”

চলবে-#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১২||

২২.
ইভান অরুণিকাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অরুণিকার কাছে পড়াশুনা নামক শব্দ আর ইভান নাম, এই দুইটিই মারাত্মক ভীতিকর। সন্ধ্যা হলেই অরুণিকা কখনো মলিন মুখে বসে থাকে, কখনো বা বিছানায় শুয়ে অসুস্থ হওয়ার ভান ধরে বলতে থাকে,
“আমার পেট ব্যথা করছে।”

পেট ব্যথা অরুণিকার সাধারণ অজুহাত। প্রথম কয়েকদিন সবাই ভেবেছিল সত্যিই বোধহয় সে অসুস্থ। কিন্তু যখনই পড়াশুনা করার সময় পেরিয়ে যেতো, ব্যস ওমনি সে বিছানা ছেড়ে উঠে আবার ঘরে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে দিতো। আজও এর ব্যতিক্রম হয় নি।

ইভান বাংলা বর্ণমালা শেখার বই নিয়ে বসার সাথে সাথেই অরুণিকা একপাশে দাঁড়িয়ে গেলো। ইভান হাতের ইশারায় অরুণিকাকে তার পাশে বসতে বললো। আর সে দৌঁড়ে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো৷ ইভান তাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে মেঝেতে বসিয়ে বলল,
“আজও তোমার পেট ব্যথা করছে, তাই না!”

অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। ইভান বলল,
“একটু পর ডাক্তার এসে তোমার পেটে কয়েকটা ইনজেকশন দিয়ে যাবে, তারপর সব ব্যথা সাঁই করে চলে যাবে।”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“না, না। এখন আর ব্যথা নেই।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে এখন পড়ো। দেখি বলো তো, এটা কি?”

“জানি না।”

“বলো স্বর অ।”

“বলবো না।”

ইভান চোখ গরম করে বলল,
“অরুণিকা, বলো স্বর অ।”

অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, “স্বর ও।”

“ও না অ।”

“ও।”

“একটা চড় দেবো বলছি। বলো অ।”

“অ।”
অ বলতে বলতেই সে ফুঁপিয়ে উঠলো৷ তখনই গেইটে শব্দ হলো। শতাব্দীর কন্ঠ শুনে অরুণিকা উঠতে যাবে তখনই ইভান চোখ বড় বড় করে তাকালো। সেই চোখ দেখে অরুণিকা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো, এরপর আবার নিজের জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো।

এদিকে তাহমিদ গেইট খুলতে গিয়ে দেখলো শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদকে দেখে সে বলল,
“মিষ্টি মশাই, বাড়িতে ঢুকতে দেবে কি?”

তাহমিদ কোনো উত্তর না দিয়ে গেইট খুলতে লাগলো। হঠাৎ তার চোখ পড়লো শতাব্দীর দিকে। সে মিটমিটিয়ে হাসছে। তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“হাসছো কেন?”

শতাব্দী হাসি থামিয়ে বলল, “এমনি।”

তাহমিদ দরজা খুলতেই শতাব্দী বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলল,
“মিষ্টি মশায়ের এতো পরিশ্রম হয় যে আজ সে নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে। আয়নায় গিয়ে নিজেকে একবার দেখে আসো।”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকালো। শতাব্দী তার চুলের দিকে ইশারা করতেই সে মাথায় হাত দিলো। আর সাথে সাথেই ময়দার গুঁড়োগুলো তার শার্টের উপর পড়লো। তাহমিদ ইতস্ততভাব নিয়ে বলল,
“অরুণিকা ময়দা নিয়ে খেলছিল। ওকে কোলে নিয়েছি, ও হয়তো মাথায় লাগিয়ে দিয়েছিল।”

শতাব্দী হেসে বলল,
“যাক, বাবা। আমার ছোট সখী একটা ভালো কাজ করলো।”

“এখানে ভালো কাজের কি হলো?”

“এই যে জানলাম, মিষ্টি মশাই এলোমেলো থাকলেও ভালো লাগে।”

তাহমিদ অবাক হয়ে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী হেসে ভেতরে ঢুকে অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“ছোট সখী কি করছো তুমি?”

অরুণিকা এতোক্ষণ পড়া ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল। শতাব্দীকে দেখেই সে হুমড়ি খেয়ে শতাব্দীর কোলে বসে পড়লো। ইভান তা দেখে শতাব্দীকে বলল,
“এখন ওর পড়ার সময়। তুমি এই সময় কেন এসেছ? তোমার পড়াশুনা নেই?”

শতাব্দী চোখ ছোট করে ইভানের দিকে তাকালো। অরুণিকা শতাব্দীর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“শতু আপু, আমার পড়াশুনা করতে ভালো লাগে না। আমি খেলবো।”

শতাব্দী ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যেই বাড়িতে এমন ভয়ংকর মাস্টারমশাই আছে, সেই বাড়িতে যাইহোক আর পড়াশুনা হয় না। শুধু বকুনিঝকুনিই চলে।”

ইভান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুমি কি বলতে চাইছো?”

“বলতে চাইছি, তুমি বাচ্চাদের শুধু বকাবকি করো। তোমার কাছে কেউ পড়তে চাইবে না।”

“এতোগুলো টিউশন করাচ্ছি চোখে পড়ছে না? ওরা কিভাবে পড়ে?”

শতাব্দী মনে মনে বলল,
“হ্যাঁ, সব ক’টা ছাত্রই যে তাকে মুখ ভুজে সহ্য করছে সেটা বুঝতে পারছে না।”

পরের দিন ক্লাসে ঢুকতেই মাওশিয়াতের মুখোমুখি হলো ইভান। সে সামনে এগুতেই মাওশিয়াত তার সামনে এসে দাঁড়ালো। পাশ কাটতে যাবে আবার সে সামনে এসে দাঁড়ালো। এবার ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায়, আমি বুঝতে পারছি না।”

মাওশিয়াত হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমরা চাইলে ভালো বন্ধু হতে পারি। আমি আমার নোটসগুলো তোমার সাথে শেয়ার করবো।”

“আমার এসবের প্রয়োজন নেই।”

“কেন? তুমি নোট করে পড়ো না বুঝি?”

“তোমার জেনে কি হবে?”

“আমি তো পড়ি, তাই।”

ইভান পাশ কাটতে যাবে তখনই মাওশিয়াত বলল,
“আমি কিন্তু কখনো দ্বিতীয় হই নি। সবসময় প্রথম হয়েছি।”

“তো!”

“তোমার নিশ্চয় ভয় লাগছে! কারণ এবার আমিই প্রথম হবো।”

“তোমার পরীক্ষা আমার চেয়ে ভালো হলে তুমি প্রথম হতেই পারো। এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে?”

“আরেহ, তোমার জায়গাটা আমি নিয়ে নেবো..”

ইভান মাওশিয়াতকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“উফ, মারাত্মক অসহ্যকর তো তুমি!”

ইভান কথাটি বলেই চলে গেলো। মাওশিয়াত ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইল। তখনই ইমন এসে বলল,
“হাই, ম্যাও।”

মাওশিয়াত চোখ বড় বড় করে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি বললো, তুমি?”

“হাই, ম্যাও।”

মাওশিয়াত রাগী কন্ঠে বললো, “ম্যাও কে?”

“তুমি!”

“আমি মাওশিয়াত। ম্যাও না।”

ইমন আমতা আমতা করে বলল,
“ওহ সরি। ওই দিন যে বললে অনেকে তোমাকে ম্যাও বলে ডাকে।”

“অসভ্য, ফাজিল, বদমাশ ছেলে। মৌ বলে ডাকে। ম্যাও না। যাও এখান থেকে। গাধা একটা।”

মাওশিয়াত কথাটি বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো। আর ইমন মুখ ছোট করে মাওশিয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তখনই তূর্য তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ওই দেখা যায় ক্লাসরুম, ওই আমাদের বেঞ্চ,
এখানেতে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাও আপুর ব্যাঙ।”

ইমন চোখ ছোট করে বলল, “ব্যাঙ কে?”

“আর কে হবে? তুই।”

“তুই মজা করছিস আমার সাথে?”

তূর্য গানের সুরে বলল,
“আমি তো মজা করি নি, মজা ব্যাঙের উপরে নেমেছে।”

ইমন তূর্যের হাত সরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো। তূর্যও শিস বাজাতে বাজাতে ক্লাসে ঢুকে পড়লো।

সন্ধ্যায় যতিকে পড়াতে গেলো আহনাফ। ঘরে ঢুকেই দেখলো যতি আজ সেজেগুজে বসে আছে। আহনাফ চেয়ারে বসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,
“আজ আংকেল বাসায় নেই?”

“না, বাবা ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে গেছে। এই কয়েকদিন মা আর আমি আছি।”

“এখন আন্টি কোথায়?”

“অফিসে। মায়ের তো রাত হবে ফিরতে। তার কতো কাজ!”

“বাসায় কেউ নেই?”

“না, শুধু তুমি আর আমি।”

“তাহলে আমি অন্যদিন আসি।”

“কেন?”

“এভাবে কেউ নেই, ভালো দেখাচ্ছে না।”

“চিন্তা করো না। আমি তোমার ক্ষতি করবো না। আমি কি ডাকাত নাকি!”

“তুমি সেজেগুজে বসে আছো কেন?”

“ওহ, সেজেছি, কারণ আমি আজ আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিলাম।”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বলল, “বয়ফ্রেন্ড!”

“হ্যাঁ, আমি তাকে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছি। তারপর নম্বর আদান-প্রদান হয়েছে। সেই থেকেই প্রেম।”

“ওহ আচ্ছা।”

“দেখবে?”

“কাকে?”

“আরেহ বোকা, আমার বয়ফ্রেন্ডকে।”

আহনাফ ইতস্ততভাব নিয়ে বলল,
“তোমার ইচ্ছা। চাইলে দেখাতে পারো।”

যতি একটা ছবি দেখালো। আহনাফ নিজের ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। যতি হেসে বলল,
“কেমন বোকা বানালাম তোমায়, তাই না?”

“মানে? এসবের মানে কি!”

“মানে একদম পরিষ্কার। আমার কোনো প্রেমিক নেই। আমি কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলি নি। আজ আমি তোমার জন্য সেজেছি। কারণ আমার তোমাকে ভালো লাগে। সোজাসাপ্টা বলে দিলাম। আমাদের কিন্তু দারুণ মানাবে।”

আহনাফ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“যতি, আমি তোমাকে পড়াতে এসেছি।”

“তো!”

“এটা সম্ভব না।”

“কেন সম্ভব না? আমাদের ধর্ম এক। আমাদের বয়সের পার্থক্য নেই। আমাদের অনেক ভালো বন্ধুত্বও হয়েছে। আমাদের সম্পর্কটা খুব জমবে।”

“কারণ আমার এসবে কোনো আগ্রহ নেই। আমার বাবা-মা মারা গেছে। আমার জীবনটাই খুব এলোমেলো। আমি এসব ঝামেলা আমার জীবনে চাই না।”

“আমি ঝামেলা?”

“হ্যাঁ, ঝামেলা। আর আজ থেকে আমি তোমাকে আর পড়াবো না।”

“দাঁড়াও, আহনাফ। আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আর এসব বলবো না। অন্তত আমাকে পড়াও।”

“সবকিছু জানার পর এখানে দুই মিনিট দাঁড়ানোও আমার জন্য ক্ষতিকর।”

“আচ্ছা, আমরা শুধু বন্ধু হয়ে থাকি?”

“আমার এতো বন্ধুর প্রয়োজন নেই।”

কথাটি বলেই আহনাফ বেরিয়ে এলো। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। অথচ সে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ফিরিয়ে দিলো। এটাই তো আবেগের বয়স। কিন্তু আজকাল কোনো আবেগই তাকে উচ্ছ্বাসিত করে না। বাড়িতে ঢুকেই সে মেঝেতে বসে পড়লো। অরুণিকা আহনাফের কাছে এসে বলল,
“আমার জন্য চকলেট এনেছো?”

আহনাফ মুচকি হেসে দুইটা চকলেট বের করে অরুণিকার হাতে দিলো। সে চকলেট দুটো হাতে নিয়ে দৌঁড়ে গেলো তার মাটির বাক্সের কাছে। বাজার থেকে আরাফ তাকে মাটির বাক্স কিনে দিয়েছে। সেখানেই সে প্রতিদিন চকলেট জমিয়ে রাখে। ছ’জনই বাইরে থেকে এলে অরুণিকার জন্য বিভিন্ন ধরনের চকলেট আনবে। অরুণিকা সেগুলো বাক্সে রেখে দেবে। তারপর যখন ইচ্ছে সেখান থেকে নিয়ে খাবে আর চকলেটের প্যাকেটগুলো আবার আরেকটা বাক্সে জমিয়ে রাখবে। প্রথম কয়েকবার তাহমিদ সেই প্যাকেটগুলো ফেলে দিয়েছিল। কারণ প্যাকেটে অনেকবারই পিঁপড়ে ধরে গিয়েছিল। শেষমেশ অরুণিকার কান্নাকাটি দেখে সে বাকী প্যাকেটগুলো ধুয়েই সেই বাক্সে রেখে দিয়েছে।

২৩.

যতি এভাবে কাউকে না বলে বাসায় চলে আসবে সেটা আহনাফের মাথায়ও আসে নি। যতিকে দেখে আরাফ, ইভান, ইমন, তূর্য আর তাহমিদ আহনাফের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যতি ব্যাগপত্র একপাশে রেখে বলল,
“আমি তোমার সাথেই থাকবো। তুমি যা খাওয়াবে, তাই খাবো। পড়াশুনাও করবো না। প্লিজ আমাকে ফেলে দিও না।”

আহনাফ চেঁচিয়ে বললো,
“তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে? আমি এখুনি তোমার বাবা-মাকে ফোন দিচ্ছি!”

যতি আহনাফের পা ধরে বলল,
“প্লিজ, বাবা-মাকে ফোন দিও না। আমাকে মেরে ফেলবে।”

হঠাৎ অরুণিকার দিকে চোখ পড়তেই যতি বলল,
“এই মেয়েটা কে?”

অরুণিকা যতির কাছে এসে বলল, “তুমি কে?”

যতি বলল,
“আমি আহনাফের গার্লফ্রেন্ড।”

আহনাফ রাগী কন্ঠে বলল,
“তোমার মতো ব্রেইন লেস মেয়ে আমি একটাও দেখি নি।”

আহনাফ একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই যতিকে বাসা থেকে বের করে দিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যতি আবার চলে গেলো। তূর্য বলল,
“এই মেয়ে এখন কোথায় যাবে?”

আহনাফ বলল,
“যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই যাবে।”

এবার আরাফ বলল,
“আমরাও তো টিউশন করাচ্ছি। এমন শুধু তোর সাথেই হয়েছে।”

“হ্যাঁ, কারণ আমার ভাগ্যে টিউশন লেখা নেই, তাই। আর এই মেয়ে বাসার ঠিকানা পেলো কিভাবে?”

“আমি কিভাবে বলবো? তুই বলেছিস হয়তো।”

দেখতে দেখতে ছ’মাস কেটে গেলো। শতাব্দীর সাথে এখন আরাফ আর ইমনের খুব ভাব জমে গেছে। আহনাফের সাথেও ভাব জমতে শুরু করেছে। ইভান এখন আর শতাব্দীর আগমনে বিরক্ত হয় না। তারা এখন শতাব্দীকে ভালো বন্ধু মনে করে। প্রতিদিন তারা লুডু, ক্যারাম বা অরুণিকার সাথে পুতুল খেলায় যোগ দেয়। তবে পুতুল খেলায় বাঁধন আর ডুমুরের উপস্থিতিও থাকে।

তূর্য আগের দলে কাজ করার পাশাপাশি, আরেকটা গানের দলে যোগ দিয়েছে। মোটামুটি নিজের পড়াশুনার খরচটা সে বহন করতে পারছে। তাহমিদ ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেছে। মিষ্টান্নভোজন নামে একটা ছোট দোকান খুলেছে। তবে দোকানের সামনে দু’টো চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই। ছোট একটা প্লাস্টিকের টুলের উপর সে তার মিষ্টির থালাটা বসিয়ে রাখে। উপরে একটা ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিক দিয়ে রাখে, যাতে মাছি বা ধুলোবালির হাত থেকে বাঁচানো যায়। টুলের নিচে কাগজ দিয়ে লিখে রেখেছে মিষ্টান্নভোজন নামটি। অনেকেই তার বানানো মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। এরপর অনেকে তো বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে মিষ্টির অর্ডারও দিয়ে যায়। সে এখন অনেক টাকা আয় করতে পারছে। তা দিয়ে তাদের ব্যাচেলর সংসারের পুরো টাকাটা উঠে যায়। অন্যদিকে ইভান আর আরাফের টিউশনের টাকা দিয়ে তাদের পড়াশুনার খরচ আর ইমন আর আহনাফের খরচটাও উঠে যাচ্ছে। সাথে কিছু সঞ্চয়ও হচ্ছে। আহনাফ এখনো সেই ঘড়ির দোকানেই কাজ করে। তবে সেখানে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। এ নিয়ে তার কোনো ঝামেলা নেই। আরাফ টিউশন বাবদ কিছু টাকা আহনাফ আর অরুণিকার জন্য জমিয়ে রাখে৷ মোটামুটি তাদের অবস্থা এখন ভালোর দিকে। আগামী মাসে তূর্যের জন্মদিনে তারা তূর্যকে গিটার উপহার দেবে। এতোদিন তূর্য অন্যের গিটার ব্যবহার করে গান গেয়েছিল। এবার নিজের গিটার ব্যবহার করবে। ভাবতেই তাদের খুব ভালো লাগছে।
অন্যদিকে মাওশিয়াতের সাথে ইভানের বন্ধুত্ব না হলেও মোটামুটি তারা কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। তবে ইমনের জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে। কারণ ইমনই মাওশিয়াতের সাথে বন্ধুত্ব করার লোভে ইভানকে অনুরোধ করেছে যাতে মাওশিয়াতের সাথে কথা বলে। আর ফলশ্রুতিতে এখন ইমন মাওশিয়াতের ভালো বন্ধু। অন্যদিকে যতিও মাঝে মাঝে আহনাফের সাথে দেখা করতে তার মহল্লায় চলে আসে। কিন্তু আহনাফ কখনোই তাকে সুযোগ দেয় নি। যতিও চুপচাপ উপেক্ষিত হয়ে চলে যায়। আবার কয়েক সপ্তাহ পর ঠিকই চলে আসে। এই মেয়ে যে আসলে কি চায়, তা আহনাফ নিজেও বুঝতে পারে না।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here