অরুণিকা পর্ব -১৮+১৯

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব||

৩২.
আহনাফ বাসায় এসেই যতিকে দেখে চমকে গেলো। যতি আহনাফকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে বলল,
“অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। কেমন আছো?”

আহনাফ নির্বিকার ভাব নিয়ে বলল,
“এখানে কেন এসেছো?”

যতি মলিন মুখে বললো,
“তুমি আমার উপর সবসময় বিরক্ত থাকো কেন বলো তো? কোনো কথারই ঠিকভাবে উত্তর দাও না। আর আমি তো তোমাকে বিরক্ত করি না। মাঝে মাঝেই তোমাকে দেখতে আসি।”

“মাঝে মাঝেও আসার কোনো দরকার নেই।”

আহনাফের কথা শুনে তূর্য বলল,
“ক’জনের কপাল এতো ভালো হয়? আমাদের তো খোঁজ নিতেও কেউ আসে না। আর তুই পেয়েও পাত্তা দিচ্ছিস না।”

যতি তূর্যের কথা শুনে বলল,
“যা সহজে পাওয়া যায়, তার মূল্য কেউ বুঝে না।”

আহনাফ তূর্যের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে যতিকে বলল,
“আমি সহজ কঠিন কোনোভাবেই তোমাকে চাই না।”

যতি আহনাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি তো বলি নি আমি তোমাকে চাই। আমি তো শুধু তোমার সাথে দেখা করতে আসি। তুমি এমন কেন ভাবছো যে আমি তোমাকে চাই? তাহলে কি তুমি আমাকে নিয়ে ওভাবে চিন্তা করো!”

আহনাফ বিরক্ত হয়ে বলল, “উফ! তুমি প্রচন্ড….”

ইমন আহনাফকে থামিয়ে দিয়ে তাকে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো। তূর্যও সেদিকে গেলো। আহনাফ ইমনের হাত ছাড়িয়ে বলল,
“কোণায় নিয়ে এসেছিস কেন?”

ইমন বলল,
“মেয়েটার দোষটা কোথায় সেটাই বল!”

“মানে?”

তূর্য বলল,
“যতি কি তোর কোনো ক্ষতি করেছিল?”

“না তো।”

“তাহলে তুই ওর উপর এতো বিরক্ত কেন?”

আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“আমি জানি না।”

“জানবি কিভাবে? কোনো কারণই তো নেই।”

এবার ইমন বলল,
“অন্তত ওর সাথে বন্ধুত্বটা তো রাখতে আপত্তি নেই!”

আহনাফকে কিছু বলতে না দিয়ে তূর্য আর ইমন তাকে টেনে যতির সামনে এনে দাঁড় করালো। যতি আহনাফের চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমরা একই বয়সী। তাই আমি তোমাকে বুঝি। তুমি যেদিন জেনেছো, আমি তোমাকে পছন্দ করি, সেদিন থেকেই আমার কাছ থেকে দূরত্ব রাখছো। কারণ তুমি ভাবছো, আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখলে আমি সেই বন্ধুত্বটা অন্যদিকে নিয়ে যাবো। আর তুমি প্রেম নামক ঝামেলায় জড়াতে চাও না, কারণ তোমার ব্যক্তিগত জীবন অনেক এলোমেলো, তাই না?”

তূর্য বলল, “একদম ঠিক। এটাই তো!”

আহনাফ চোখ গরম করে তূর্যের দিকে তাকালো। এবার যতি হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“অন্তত আমরা বন্ধু থাকি।”

আহনাফ কিছুক্ষণ ভেবে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আচ্ছা, আজ থেকে আবার বন্ধুত্ব শুরু করলাম। তবে শুধুই বন্ধু।”

যতি মুচকি হাসলো।

এদিকে অরুণিকাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। সে সকালে উঠেই স্কুলের নতুন জামা পরে বসে আছে। শতাব্দীর কাছ থেকে স্কুলের গল্প শোনার পর থেকেই তার স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ জন্মেছে। সে হাতে চিরুনি নিয়ে আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে অরুণিকা বলল,
“আমার চুল বেঁধে দাও?”

আরাফ মুচকি হেসে যত্নের সাথে অরুণিকার চুল বেঁধে দিলো। এবার ইভান তার ব্যাগ গুছিয়ে দিলো। তাহমিদ অরুণিকার টিফিন তৈরী করে দিলো। তারপর অরুণিকা আরাফের হাত ধরে স্কুলে চলে গেলো। অরুণিকার স্কুল আরাফদের স্কুলের পাশাপাশি। অরুণিকাকে ক্লাসে বসিয়ে আরাফ বেরিয়ে এলো। এরপর দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। অরুণিকা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, আর সে বাকী বাচ্ছাদের দেখাদেখি ব্যাগ থেকে খাতা আর পেন্সিল বের করলো। আরাফ মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করে মুচকি হাসলো।

এদিকে অনেকদিন মাওশিয়াত ইমনের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে, আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করার জন্য। তবে ইমন এতোদিন তূর্য আর ইভানের জন্যই মাওশিয়াতের সাথে কথা বলতে পারছিলো না। কিন্তু আজ সায়ন্তনী এসে ইভান আর বাকীদের বোঝায় হয়তো মাওশিয়াত সত্যিই পালটে গেছে। তাই তারাও মাওশিয়াতকে ক্ষমা করে দেয়৷ তবে মাওশিয়াত শুধু ক্ষমা পেয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। সে ইভান আর ইমনের সাথে আবার বন্ধুত্ব করেই শান্ত হয়েছে। আজ মাওশিয়াত ছুটির পর সায়ন্তনীর কাছে এসে বলল,
“সায়ন্তনী, আমার কিছু কথা আছে।”

সায়ন্তনী অবাক কন্ঠে বলল, “কি কথা?”

“ইভান আর ইমন আমার বন্ধু। আর আমি চাই না, ওদের সাথে তোর কোনো বন্ধুত্ব থাকুক। এখন তুই আমার বন্ধুদের থেকে দূরে থাকবি।”

সায়ন্তনী কিছু না বলে চলে গেলো। এতো বছর পর সে এতোগুলো ভালো বন্ধু পেয়েছে, আর সে তাদের ছেড়ে দেবে? না, তা সে করবে না। আর মাওশিয়াতের কথা সে কেন শুনবে?

চলবে–

(বোনাস পর্ব ছোট হয়েছে। তাই রাতে আরেকটা পর্ব দেবো ইনশাআল্লাহ।)#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৮||

৩৩.
আহনাফের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে অরুণিকা। আহনাফ এতোক্ষণ যতির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো। যতি হুটহাট আহনাফকে ভিডিও কল দেয়। কল না ধরলে বাসায় চলে আসে। তাই আহনাফ বাধ্য হয়েই যতির সাথে কথা বলে। যদিও যতি দেখতে সুন্দর আর আহনাফকেও ভালোবাসে, এখন তারা বন্ধুও হয়েছে, তবুও আহনাফ যতির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ পাচ্ছে না। এদিকে অরুণিকার তাকানো দেখে আহনাফ চোখ ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি দেখছো?”

অরুণিকা কোনো উত্তর দিলো না। আহনাফ নিজের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে যতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অরুণিকাকে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

অরুণিকা এবার মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। বয়স কম হলেও সে ইদানিং অনেক কিছুই বুঝে। এবার আহনাফ ফোনটা পাশে রেখে অরুণিকাকে টেনে নিজের কাছে আনলো। অরুণিকা এবার আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ অরুণিকার কপালের চুলগুলো পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
“যার সাথে আমি কথা বলছিলাম ওর নাম যতি। বুঝেছ?”

অরুণিকা বলল, “যতি কে?”

“আমার বন্ধু।”

“জানো, আমারও বন্ধু আছে।”

“তাই নাকি! তোমার ক’টা বন্ধু হয়েছে?”

“অনেকগুলো। তপন আর তিরা আমার সাথে খেলে। তপন আমাকে চকোলেট দেয়।”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“ও তোমাকে কেন চকোলেট দেয়?”

“আমি ওর বন্ধু তাই।”

“বাইরের কেউ কিছু দিলে খাবে না। আমরা তো তোমার জন্য চকোলেট নিয়ে আসি। এখন থেকে বাইরের কিছুই খাবে না। ঠিক আছে?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল, “আচ্ছা।”

এদিকে মাওশিয়াত সায়ন্তনীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সায়ন্তনী সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ইভানের পাশে বসে পড়া বুঝিয়ে নিচ্ছে। মাওশিয়াত সামনে এগুতেই দেখতে পেলো ইমন একা একা বসে ঝিমাচ্ছে। সে ইমনের সামনে এসে তার হাত ধরে তাকে টেনে ক্লাসের বাইরে নিয়ে গেলো। ইমন অবাক হয়ে মাওশিয়াতের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাওশিয়াত ইমনকে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে মাঠের এক কোণায় এসে দাঁড়ালো। ইমন বলল,
“তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন?”

মাওশিয়াত বলল,
“ইমন, সায়ন্তনীর সাথে দেখছি অল্প দিনেই তোমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সারাদিন ও তোমাদের আগেপিছে ঘুরতে থাকে।”

“হ্যাঁ, ও আমাদের নতুন বন্ধু।”

“কিন্তু তুমি ওর সম্পর্কে কতোটুকুই বা জানো?”

“যতোটুকু জেনেছি অনেক কম জেনেছি। এতেই যদি এতো ভালো বন্ধু হতে পারে, ভেবে দেখো, বেশি জানলে হয়তো প্রেমে পড়ে যাবো।”

ইমনের কথায় মাওশিয়াতের চোখে মুখে আতংক ভীড় করে উঠলো। মাওশিয়াত ইমনের হাত ধরে বলল,
“তুমি কি আমার চেয়ে বেশি সায়ন্তনীকে পছন্দ করো?”

ইমন মাওশিয়াতের চোখের দিকে তাকালো। এমনিতেই মাওশিয়াতকে সে পছন্দ করে। কিন্তু ভাই আর বন্ধুদের কথায় সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপতত নিজের ভালো লাগাটা প্রকাশ করবে না। কিন্তু এখন মাওশিয়াতের এমন প্রশ্নে সে আবার দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইমনকে চুপ করে থাকতে দেখে মাওশিয়াত নিজের চুল টেনে ধরে, নিজের গালে নিজেই চড় মারলো। আর কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লো আর বলতে লাগলো,
“হ্যাঁ, আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম, ইভানের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য। ওর কাছ থেকে নোট নিয়ে ওর চেয়ে সুন্দর করে নোট তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝেছি বন্ধুত্ব আর পড়াশুনা দু’টো আলাদা বিষয়। কিন্তু আজ সব বুঝেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কেউ আর আমার বন্ধু হতে চাই না।”

ইমন মাওশিয়াতের পাশে বসে তার দুই হাত ধরে বলল,
“আমি তোমার বন্ধু হবো, মাওশিয়াত। অনেক ভালো বন্ধু হবো।”

মাওশিয়াত অশ্রুভেজা চোখে ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে সায়ন্তনী আমাদের বন্ধুত্বের মাঝখানে কেন এসেছে?”

“ও আমাদের বন্ধুত্বের মাঝখানে আসে নি। বরং ও ইভান, আরাফ, তূর্য, তাহমিদ আর আহনাফকে বলেছে সব ভুলে গিয়ে আমরা যাতে সবাই বন্ধু হয়েই থাকি। বাকিরা তাই তোমার সাথে সহজ হয়েছে। ওদিন তুমি যা করেছিলে, তা কারোই পছন্দ হয় নি। হ্যাঁ, তুমি ভুল করেছো। এটা এখন আমরা সবাই বুঝেছি, তুমিও বুঝেছো। আর এটা বোঝাতে সাহায্য করেছে সায়ন্তনী।”

মাওশিয়াত ইমনের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,
“সায়ন্তনী, সায়ন্তনী, সায়ন্তনী। এই নাম ছাড়া আর কি কোনো নাম নেই? আমি সোজাসাপটা বলে দিচ্ছি, ওই মেয়েটাকে আমি বন্ধু মনে করি না। আর আমার বন্ধুরাও ওর বন্ধু হতে পারবে না।”

ইমন ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“মাওশিয়াত আমরা এখন বড় হচ্ছি। আর তুমি বাচ্চাদের মতো আবদার করছো!”

মাওশিয়াত অভিমানী কন্ঠে বলল,
“যাও কথা বলবো না তোমার সাথে। আমি কারো সাথেই কথা বলবো না।”

মাওশিয়াত হনহন করে ক্লাসে গিয়ে একা একা একপাশে বসে পড়লো। পুরো ক্লাস সে নিরবে চোখের জল ফেলেছে।

মাওশিয়াতের অভ্যাস তার ভালো লাগার কোনো জিনিস বা মানুষকে সে অন্য কারো সাথে ভাগ করে নিতে পারে না। মাওশিয়াতের পরিবার তার বাবা মিরাজ হাসান ও তার বাবার স্ত্রী, তিশা হাসানকে নিয়ে। মাওশিয়াতের জন্মের সময় তার মা মারা যায়। তার বাবা কয়েক মাস পর মাওশিয়াতের জন্য তিশাকে বিয়ে করেন। তিশা মিরাজের স্কুলের বান্ধবী ছিলেন। তিনি কখনোই মা হতে পারবেন না। আর তিনি মাওশিয়াতকে অনেক বেশিই ভালোবাসেন। বাবার চেয়ে বেশি সৎ মা-ই মাওশিয়াতকে বেশি ভালোবাসে। অতি ভালোবাসা পাওয়ায় সে অতিরিক্ত জেদি চরিত্রের হয়ে যায়। তার যখনই যা প্রয়োজন হয়, তখনই সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়ে যায়, তাই সে কারো কাছে হারতে পছন্দ করে না। যে-কোনো ব্যাপারেই তার জেদ থাকে, তা হোক বন্ধু তৈরি করা, বা কোনো বস্তুগত জিনিসের প্রতি। এর জন্য মাওশিয়াতের চেয়ে তার বাবা-মার অপরাধটাই বেশি। কারণ সন্তানরা যা চায়, তা সাথে সাথে তাদের দেওয়া উচিত নয়। মাঝে মাঝে না দেওয়ায় ভালো। তখনই তারা সব পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে।

কয়েক দিন পর সন্ধ্যায় অরুণিকা তার স্কুল ব্যাগটা মুখের সামনে ধরে আরাফের সামনে এসে দাঁড়ালো। আরাফ তখন পড়তে বসেছিলো। আরাফ মাথা বাঁকিয়ে ব্যাগের পেছনে অরুণিকাকে দেখতে যাবে তখনই অরুণিকা আবার ব্যাগটা সামনে এনে ধরলো। আরাফ অরুণিকার হাবভাব বুঝতে পারলো না। সে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো। তখনই অরুণিকা ব্যাগটা সরিয়ে আরাফের দিকে তাকালো। আরাফ মুখে কলম পুরে অরুণিকার দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। অরুণিকা মিষ্টি হাসি দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা ড্রয়িং খাতা বের করে আরাফের সামনে রাখলো। আরাফ খাতাটা উল্টে দেখলো সে বৃত্ত আর ত্রিভুজে রং করেছে। আরাফ বলল,
“অনেক সুন্দর হয়েছে।”

অরুণিকা পাতা উল্টিয়ে বলল,
“দেখো আমি আজ অনেক ড্রয়িং করেছি।”

অরুণিকা আরাফের কোলে উঠে বসলো। আরাফ বলল,
“অরু, আমি এখন পড়বো। তুমি ওপাশে বসে ড্রয়িং করো।”

অরুণিকা কথা শুনলো না। সে আরাফের কোলে বসেই ড্রয়িং খাতায় আঁকা ছবির উপরই পেন্সিল চালাতে লাগলো। আরাফ তাকে কোলে নিয়ে পাশে বই খুলে বসে আছে। অরুণিকা একটু পরপর আরাফকে তার আঁকা ছবি দেখাচ্ছে। যার কারণে আরাফ পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছিলো না। বাকিরাও পড়তে বসেছিলো। তাই এই মুহূর্তে সবাই ব্যস্ত। দুইদিন পর তাদের দ্বাদশ শ্রেণির সাময়িক পরীক্ষা। আরাফ অরুণিকাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
“অরু, আমার পড়তে হবে। তুমিও পড়ো। আমিও পড়ি।”

অরুণিকা ড্রয়িংখাতা নিয়ে আরাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর তূর্যের কাছে গেলো। তূর্য গানে হেডফোন গুঁজে গান শুনে শুনে অংক করছে। অরুণিকা পাশে এসে বসতেই সে মুচকি হাসলো। অরুণিকা এবার তূর্যকে তার ড্রয়িং দেখালো। তূর্যও হাতের ইশারায় বুঝালো সুন্দর হয়েছে। তারপর নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। অরুণিকা অনেকবার তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে গেলো, কিন্তু তূর্য কোনো উত্তর দিলো না। কারণ সে গানের শব্দে কিছুই শুনে নি। এবার অরুণিকা তূর্যের মনোযোগ না পেয়ে তাহমিদের কাছে গেলো। তাহমিদও অরুণিকার দিকে তাকালো না। সে কানে হাত দিয়ে পড়ছে। এবার অরুণিকা ইমনের কাছে গেলো। ইমন কিছুক্ষণ অরুণিকার ড্রয়িং খাতা ঘাঁটলো, তারপর বলল,
“অরুণিকা, এবার আমি পড়ি। এখন যাও।”

অরুণিকা ইভানের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। সে ইভানের কাছে এমনিতেই যায় না। কারণ ইভান কোনো কারণ ছাড়াই তাকে বকাবকি করে। তাই অরুণিকা আহনাফের কাছে গেলো। আহনাফের মেজাজ এমনিতেই চটে আছে। অরুণিকা তার পাশে এসে মিষ্টি হেসে বলল,
“আহনাফ, আমার ড্রয়িং দেখবে? আমি এঁকেছি।”

আহনাফ শীতল কণ্ঠে বললো,
“না, আমি এখন ব্যস্ত আছি।”

অরুণিকা আবার বলল,
“দেখো না। একটু করে দেখো। টিচার আমাকে গুড দিয়েছে। দেখো।”

আহনাফ ড্রয়িং খাতাটা অরুণিকার হাত থেকে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে মারলো। ভয়ে অরুণিকার মুখ শুকিয়ে গেলো। আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এমনিতেই ওই যতির জ্বালায় আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, এদিকে একটু শান্তিতে যে পড়বো সে উপায় নেই। এই মেয়ে এসেও বিরক্ত করছে। যাও এখান থেকে।”

আরাফ আর তাহমিদ অরুণিকার দিকে তাকালো। ইমন আবার বইয়ে মনোযোগ দিলো। ইভান তো তাকালোও না। তূর্য হেডফোন গুঁজেছিল, তাই কিছু শুনে নি। আরাফ চেয়ার ছেড়ে উঠে অরুণিকার ড্রয়িং খাতা তুলে আহনাফকে বলল,
“এভাবে বকছিস কেন ওকে?”

আহনাফ রাগী কন্ঠে বললো,
“তুই সামলা ওকে। আমার মেজাজ ঠিক নেই। আমার সাথে কথা বলিস না।”

আরাফ অরুণিকাকে একপাশে বসিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর বলল,
“আমাদের পরীক্ষা। তুমি ড্রয়িং করো। আমরা পরে দেখবো।”

আরাফ আবার নিজের পড়ায় ডুবে গেলো। এদিকে অরুণিকা স্থির হয়ে বসে আছে। তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে সেই জল মুছে নিচ্ছে। কিন্তু বাঁধন হারা জল যেন আজ থামছেই না। বাবা-মা কাউকেই তার মনে পড়ছে না। সবার ছবি দেখলেই সে চেনে। কিন্তু অরুণিকা তাদের অনুভব করতে পারছে না। কারণ তার অনুভব সব ছ’জনকে ঘিরেই। তারা বকলেই সে কষ্ট পায়, তাদের কাছেই তার সব আবদার, তাদের দূরে যাওয়ায় তাকে বেশি আঘাত করে। তবে আঘাত, দূরে যাওয়া এসব অনুভূতি অরুণিকা বুঝে না। তার কাছে তিনটি শব্দই পরিচিত, আদর, অভিমান আর বকা। সে বকা খেয়েই অভিমান করে, আবার আদর করলে সব ভুলে যায়।

এদিকে অরুণিকার ফুঁপানোর শব্দ বাড়তে লাগলো। এবার সে মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। তূর্য ছাড়া বাকি পাঁচজন অরুণিকার দিকে তাকালো। আরাফ আর তাহমিদ দৌঁড়ে তার কাছে গেলো। আরাফ কাছে আসতেই অরুণিকা তার কাছ থেকে দূরত্ব রেখে পিছিয়ে গেলো। আহনাফ, ইমন আর ইভানও উঠে এলো। তূর্য সবাইকে উঠতে দেখে কান থেকে হেডফোন নামালো।

অরুণিকাকে কাঁদতে দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাহমিদ অরুণিকার দিকে হাত এগিয়ে দিতেই অরুণিকা এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিলো। আহনাফ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে অরুণিকাকে বলল,
“সরি অরু।”

অরুণিকা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আহনাফ অরুণিকার হাত ধরতেই সে আহনাফের হাতে খামচি দিয়ে বলল,
“আমি তোমার সাথে কখনো কথা বলবো না।”

কথাটি বলতে বলতেই অরুণিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তূর্য অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“টুইংকেল, তুমি আর কান্না করো না। আমি এখন তোমার সব ড্রয়িং দেখবো।”

“না, আমি কাউকে আমার ড্রয়িং দেখাবো না। শুধু বাঁধনকে দেখবো। ও আমার সব ড্রয়িং দেখবে। তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না। বাঁধন আমাকে ভালোবাসে।”

ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এখানে বাঁধন কেন এলো?”

আহনাফ কান ধরে বলল,
“আমি কান ধরে ওঠবস করছি। তুমি দশ পর্যন্ত গুনতে থাকো।”

ইভান ছাড়া বাকিরাও কান ধরলো। অরুণিকা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ও কান ধরে নি।”

ইভান চোখ ছোট করে তাকালো। আরাফ চোখের ইশারায় তাকে অরুণিকার কথা রাখতে বললো। সেও এবার কান ধরে ওঠবস করতে শুরু করলো। আর অরুণিকা গুনতে লাগল। শেষমেশ অরুণিকার মুখে হাসি ফুটলো। এবার ইভান অরুণিকার ড্রয়িং দেখতে বসলো। বাকিরা আবার পড়তে বসে গেলো।

তিনমাস পর,
আহনাফ ছাড়া বাসায় আজ কেউ নেই। অরুণিকা বাঁধনের সাথে খেলছে। আর তাদের পাশেই আহনাফ ঘুমোচ্ছে। বাঁধন হুট করে অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“প্রেম প্রেম খেলবে?”

অরুণিকা বাঁধনের দিকে তাকালো। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“প্রেম প্রেম কিভাবে খেলে?”

বাঁধন অরুণিকার চোখ বেঁধে দিলো। তারপর অরুণিকাকে কিছুক্ষণ ঘুরালো। তারপর অরুণিকার কাছে এসে তার গালে চুম্বন করলো। অরুণিকা এসবের কিছুই বুঝলো না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। বাঁধন এবার অরুণিকার ঠোঁটের কাছে আসতে যাবে তখনই আহনাফের চিৎকারে দু’জনই কেঁপে উঠলো। আহনাফ বিছানা ছেড়ে উঠে এক চড় মেরে বাঁধনকে মেঝেতে ফেলে দিলো। এরপর অরুণিকার চোখ থেকে কাপড় খুলে তার গালেও একটা বসিয়ে দিলো। অরুণিকা চড় খেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। এই প্রথম সে আহনাফের চড় খেয়েছে। সে গাল ধরে কাঁদতেই আহনাফের ভয়ংকর মুখটা আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠলো। বাঁধনকে টেনে তুলে ঘর থেকে বের করতে যাবে তখনই ইমন আর তাহমিদ বাসায় এলো। ঘটনা তাদের খুলে বলতেই তাহমিদ বাঁধনের গালে আরেকটা চড় মারলো। ইমন বাঁধনের কান টেনে ধরে বলল,
“এসব কোথায় শিখেছিস?”

বাঁধন কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“টিভিতে দেখেছি।”

আহনাফ বলল,
“ডাক ওর মাকে। তোর পিঠের ছাল তুলে নেবো আজ। বেয়াদব ছেলে। তোর সাহস কি করে হয় অরুকে নিয়ে বাজে চিন্তা করার? ও বাচ্চা মেয়ে ও কিছু বুঝতে পারছে না, তাই তুই যা তা শিখাবি ওকে?”

ইমন সুরাইয়াকে ডেকে আনল। সুরাইয়া ছেলের এমন কাজে লজ্জায় নুইয়ে পড়লেন। সামনে থাকা স্টিলের পেন্সিল বক্স দিয়ে ইচ্ছে মতো হাতে-পিঠে মারলেন। বাঁধন এক পাশে জড়ো হয়ে গেলো। অরুণিকা ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। ততোক্ষণে আলেয়া খালা আর ডুমুর ছুটে এসেছে। আলেয়া খালা টেনে সুরাইয়ার কাছ থেকে বাঁধনকে ছাড়ালেন। সুরাইয়া কপাল চাপড়ে বললেন,
“হায় আল্লাহ, মৃত্যু হোক আমার। এতোটুকুন ছেলে কি শিখে ফেলেছে। বড় হলে তুই তো আমাদের সম্মান কেঁড়ে নিবি।”

তাহমিদ রাগী কন্ঠে বলল,
“ওর সামনে বসে বসে টিভিতে এমন নোংরা জিনিস দেখলে ও এসবই শিখবে। ওর দোষ নেই। দোষ কার সেটা নিজেই ভেবে দেখুন।”

এবার ইমন বলল,
“আপনাকে আর চাচাকে আমরা অনেক সম্মান করি। আপনারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। কিন্তু অরুণিকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে কিছুই না। ওর সাথে খারাপ কিছু হলে আমাদের কিছুই মনে থাকবে না।”

আহনাফ ইমনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এতো কথা বলার দরকার নেই। এই ছেলে আর যদি অরুর আশেপাশেও আসে, আমি এর হাত-পা ভেঙে দেবো।”

সুরাইয়া কান টেনে ধরে ছেলেকে অরুণিকাদের ঘর থেকে বের করলেন। তারা বের হওয়ার সময় আরাফ, ইভান আর তূর্য বাসায় এলো। বাসায় এসে তারা বাকি ঘটনা জানলো। ইভানের তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আরাফও অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছে। আহনাফ অরুণিকার দিকে এগিয়ে আসতেই সে এক দৌঁড়ে আরাফের দিকে ছুটে গেলো। আরাফ তাকে কোলে উঠিয়ে বলল,
“বাঁধন এর আগেও এমন করেছে?”

অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“না আজকেই।”

“এগুলো ভালো না অরু। কেউ এমন করলে তার থেকে দূরে থাকতে হয়।”

“আমি কিছু দেখি নি। বাঁধন চোখ বেঁধে দিয়েছিল।”

ইভান মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“ওর বয়সে আমরা তো এসব জানতামই না। ওই ছেলের মাথা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। অরুণিকাকে আর ওই বাসায় রাখা ঠিক হবে না। এখন থেকে ওর স্কুল ছুটি হলে ওকে আমাদের স্কুলেই বসিয়ে রাখবো।”

তূর্য বলল,
“কিভাবে? এভাবে ও আমাদের স্কুলে একা একা বসে থাকবে?”

“ক্লাসে এনে বসিয়ে রাখবো।”

“ক্লাসে এনে বসিয়ে রাখবো আর কেউ আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করবে না ও কি করছে?”

আহনাফ রাগী কন্ঠে বলল,
“তো ওকে কি একা ছাড়বো এখন? কোথায় রাখবো ওকে? কোন জায়গাটা ওর জন্য নিরাপদ, বল?”

চলবে–#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৯||

৩৪.
অরুণিকার জন্য ছ’জনই এবার স্কুলে যাওয়ার সময়সূচী ভাগ করে নিলো। প্রতিদিন ছ’জনের মধ্যে একজন স্কুলে না গিয়ে অরুণিকাকে স্কুলে দিয়ে আসে, আবার নিয়েও আসে৷ আর যেদিন তাদের অবশ্যই স্কুলে উপস্থিত থাকতে হয়, সেদিন অরুণিকাকে দিয়ে আসার সময় স্কুলের স্টাফকে বলে আসে যাতে তারা না আসা পর্যন্ত অরুণিকা স্কুলেই থাকতে পারে। তাদের স্কুল ছুটির ব্যবধান দুই ঘন্টা। এই দুই ঘন্টা অরুণিকা তার স্কুলেই সময় পার করে। কখনো কখনো আরাফ গিয়ে অরুণিকাকে তাদের স্কুলে নিয়ে এসে একটা ক্লাসরুমে বসিয়ে রাখে৷ শতাব্দীর বাবা আরাফদের স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় এটা নিয়ে কোনো অসুবিধে হয় নি।

আজ আরাফ স্কুলে যায় নি। সে ছুটির পর অরুণিকাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে দেখলো অরুণিকা স্কুলের মাঠে তার বয়সী বাচ্চাদের সাথে দৌঁড়াচ্ছে। আরাফ তাকে ধরতে যাবে তখনই অরুণিকা দৌঁড়ে একপাশে গিয়ে বলল,
“আরাফ, তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।”

আরাফ অরুণিকাকে ধরার জন্য তার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো। এদিকে অরুণিকা হাসছে আর দৌঁড়াচ্ছে। আরাফও অরুণিকার সাথে খেলছে। তার বেশ মজায় লাগছিলো। কিন্তু হঠাৎ আরাফ থেমে গেলো। তার মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। কানে বাজছে কয়েকটি বাক্য,

“আরাফ, দোলনায় ধাক্কা দেবে না? আরেকটু জোরে ধাক্কা দাও। আরাফ, তোমার তো শরীরে একটুও শক্তি নেই।”

“আরাফ, দেখি কে আগে ওই সীমানায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে। আমি নাকি তুমি?”

“আরাফ, দেখি আমাকে ধরতে পারো কিনা। যদি পারো তাহলে আজ এক প্লেট ভেলপুরি খাওয়াবো।”

অরুণিকা আরাফের কাছে ছুটে আসতেই তার ঘোর কাটলো। অরুণিকা বলল,
“আরাফ, তুমি খেলবে না আমার সাথে?”

আরাফ মুচকি হেসে বলল,
“অন্য দিন। আজ বাসায় চলো।”

অরুণিকা তার ব্যাগটা আরাফকে ধরিয়ে দিলো। আরাফ অরুণিকার হাত ধরলো।

রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে আঠারো বছর বয়সী কিশোর, আর তার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ সাত বছর বয়সী মেয়ে শিশুর হাত। ছেলেটির চোখে শূণ্যতা। মেয়েটির চোখে উচ্ছ্বাস। ছেলেটির মন ভাঙা। মেয়েটির কোমল মন গড়তে শুরু করেছে। এই শূণ্যতা-উচ্ছ্বাস আর ভাঙা-গড়ার যোগসূত্রই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ। তাহমিদ এখন ভালোভাবেই তার মিষ্টান্নভোজন সামলাতে পারছে। ব্যবসায় অধিক সময় দেওয়ায় তার জন্য ভালো একটা পথও খুলে গেছে। তার হাতে তৈরী মিষ্টি আর নাস্তা এখন আশেপাশের লোকেদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে। আর ভাগ্যক্রমে তার একটা রেস্টুরেন্টেও চাকরি হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টটি মধ্যমমানের হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সেখানে প্রতিদিন যাওয়া আসা হয়। আর তাহমিদের তৈরি নাস্তা সেই রেস্টুরেন্টটিকে আরো বেশি পরিচিতি দিয়েছে।
এদিকে আরাফ মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য পড়াশুনা করছে। আর তাহমিদ আর ইমন দু’জনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হবে। তবে আপতত তারা কয়েকমাস পড়াশুনা থেকে ছুটি নিয়েছে। এই ছুটিতে তাহমিদ তার রেস্টুরেন্টে সময় দিচ্ছে। আর ইমন একা একাই বিভিন্ন ব্যায়াম শিখছে, পাশাপাশি সে বিভিন্ন মহল্লার ফুটবল খেলায় অংশ নিচ্ছে। এদিকে তূর্যের পড়াশুনার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। তবুও ইভানের জোরাজুরিতে সে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। আর ইভান ফার্মেসিতে আর আহনাফ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তবে আহনাফ পাশাপাশি কম্পিউটারের দোকানে কাজ নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক মাসের জন্য সে যান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে তার এই ব্যস্ততা যতি একদমই বুঝতে চাইছে না। যদিও আহনাফের পক্ষ থেকে যতি এখনো তার বন্ধু। কিন্তু যতি এই সম্পর্কে বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে প্রতি ঘন্টায় কয়েকবার আহনাফকে ফোন দেবে। আর এসবে আহনাফ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং আহনাফ যতির কাছ থেকে দূরত্ব রাখছে। তবে যতোই সে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছে। যতি ততোই আহনাফের কাছে আসতে চাইছে। এমনকি সে মাঝে-মাঝে বাসায় এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

তূর্যের ‘রিকি দা স্টার’ ইউটিউব চ্যানেলটি এখন খুবই পরিচিতি পেয়েছে। মাসে সে এখন বিশ হাজার টাকা আয় করছে। এই টাকা দিয়ে সে অরুণিকার পড়াশুনার পুরো খরচ বহন করছে। বর্তমানে তাহমিদ আর তূর্যই বাকিদের তুলনায় বেশি আয় করছে।

অন্যদিকে ইমন আর মাওশিয়াতের বন্ধুত্ব আগের মতো থাকলেও এবার ইভানের সাথে মাওশিয়াতের সম্পর্কটা বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। ইভান এর আগে তার পক্ষ থেকে মাওশিয়াতের সাথে ওতোটা ঘনিষ্ঠ হয় নি। তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ইভান মাওশিয়াতের সাথে বেশিই সময় পার করেছে। কারণ তারা দু’জনই ফার্মেসিতে ভর্তি হয়েছে। তবে ইমন এই ব্যাপারে মনে মনে ক্ষিপ্ত। যদিও সে ইচ্ছে করেই ফার্মেসিতে ভর্তি হয় নি। কারণ তার সে বিষয়ে পড়াশুনা করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি সে তাদের পারিবারিক ব্যবসাটাও সামলাবে। তার বাবারও সেই ইচ্ছে ছিল। কারণ ইভানের ব্যবসায় কোনো আগ্রহ ছিলো না।

৩৫.

আজ মাওশিয়াত আর ইভান একসাথেই বাসায় ফিরছিলো তখনই ইমন তাদের রাস্তায় দেখে ফেলে। বাসায় এসেই ইমন ইভানের উপর খুবই রেগে যায়। চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
“ভাই, তুই জানিস আমি মাওশিয়াতকে পছন্দ করি। তবুও তুই ওর সাথে কেন ঘুরাঘুরি করছিস?”

ইভান অবাক হয়ে বলল,
“তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? ও আমার ক্লাসমেট। ওর বাসা আসার সময় পরে, তাই আমি ওকে নামিয়ে দিয়েছিলাম।”

“আমি দেখেছি তোরা কিভাবে হাসাহাসি করছিলি।”

তূর্য ইমনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ইমন, তুই খুব সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস। আমি চাই না তোরা দুই ভাই ওই মেয়েটার জন্য ঝগড়াঝাঁটি কর। কি আছে ওর মধ্যে?”

ইভান তূর্যের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ঝগড়াঝাঁটি করার প্রশ্নই আসে না। মাওশিয়াত শুধুই আমার ক্লাসমেট। আমরা একই সাথে দুই ক্লাস শেষ করেছি। এরপর স্কুলের কোনো পরিচিত বন্ধুই আমার সাথে ফার্মেসিতে ভর্তি হয় নি। তাই ওর সাথেই আমার বেশি কথাবার্তা হয়। ইনফ্যাক্ট, আমরা খুব ভালো বন্ধুও হয়েছি। কিন্তু এখানে ওকে পছন্দ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

ইমন ইভানের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো। তারপর মলিন মুখে বললো,
“ও তো এখন আমার সাথে কথাও বলে না।”

“ও তোর কথা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে। বাসায় আসার সময় পায় না, নয়তো তোর সাথে দেখা করতো।”

“আচ্ছা, এই কথা তুই আমাকে কেন বলিস নি?”

“ইমন, আমি ক্লাস থেকে এসেই টিউশন করাতে যাই। আমার মনেই থাকে না এসব। আর আজকাল তো আমরা কেউ আড্ডা দেওয়ার সময় পাই না। এসব মনে করে বলার সময় কি এখন আমাদের আছে?”

এবার আরাফ বলল,
“তোরা প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছিস? এখন এই সময়টা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়।”

ইমন হুট করে বলে উঠল,
“আজ যদি রুহানি বেঁচে থাকতো, তাহলে তুই এই কথা বলতি না।”

ইমনের কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলো। আহনাফ চেঁচিয়ে বললো,
“ইমন, তুই দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস।”

আরাফ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তখনই সে শতাব্দীর মুখোমুখি হলো। শতাব্দী তাকে দেখেই বলল,
“আরাফ, কি হয়েছে তোমার?”

“কিছু না।”

শতাব্দী আরাফের পিছু পিছু এসে বলল,
“বলো, কি হয়েছে?”

তাহমিদ শতাব্দীর হাত ধরতেই সে পেছন ফিরে তাকালো। তাহমিদ তাকে ইশারায় চলে যেতে বললো। এরপর আহনাফ আর তাহমিদ অনেকক্ষণ আরাফের পাশে বসে ছিল।
নিরবতা ভেঙে তাহমিদ বলল,
“রুহানির মৃত্যুর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের বয়স তখন মাত্র বারো-তেরো ছিল। তুই এখনো ওকে নিয়ে ভাবিস। ওর জন্য কষ্ট পাস।”

আরাফ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“সেদিন আমার জন্যই ওর সাথে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল।”

আহনাফ বলল, “এখানে তোর দোষ নেই।”

“আমারই দোষ ছিল। অরুণিকাকে দেখলেই আমার রুহানির কথা মনে পড়ে। ওর বয়স তখন দশ কি এগারো ছিল। ওর মুখটা আমাদের অরুণিকার মতোই মায়াবি ছিল। স্কুল ছুটির পর ওর সাথেই খেলতাম। ও আমাকে দেখে লজ্জায় নুইয়ে পড়তো। এটা ভালোবাসা ছিল না। এটা ভালো লাগা ছিল। আমার পক্ষ থেকেও তাই ছিল। সব মেয়েদের ভীড়ে ওকেই আমার চোখে পড়তো। তারপর বন্ধুত্ব। ওই আমার প্রথম মেয়ে বান্ধবী। আমরা একসাথে খেলতাম, বাসায় ফিরতাম। আমি অবচেতন মনে ওকেই ভালোবাসার জায়গা দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় যা হয়েছিল, তা আমি কখনোই ভুলবো না।”

আরাফ চোখ বন্ধ করতেই তার সেই অতীতটা মনে পড়ে গেলো। কিন্তু আরাফ সেই ঘটনা আর মনে করতে চাইছে না। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। বাসায় এসে আবার পড়তে বসে গেলো। ইমন আরাফের কাছে ক্ষমা চাইলো। আরাফ মলিন হেসে বলল,
“রুহানি আর মাওশিয়াত সম্পূর্ণ আলাদা। মাওশিয়াত তোর ভালোলাগার মানুষ। আর আমি রুহানির অপরাধী।”

গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হয়ে মাথা মুছছিলো আহনাফ। অরুণিকা তাকে দেখেই চোখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। আহনাফ তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে খিলখিল করছো কেন?”

“তুমি জামা পরো নি কেন? তোমার তো একদমই লজ্জা নেই।”

আহনাফ ধমক দিয়ে বলল,
“এই ইঁচড়েপাকা মেয়ে, তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো? সরো এখান থেকে।”

আহনাফ মুখে প্রকাশ না করলেও অরুণিকার কথায় সে লজ্জা পেয়েছে। এখন থেকে তাকে এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। যদিও এটা পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। তবে অরুণিকা যেহেতু এটাকে অস্বাভাবিক ভাবছে, তার সেই ভাবনাটা মিথ্যে প্রমাণ না করাই ভালো। এভাবেই তো সে নিজেকে আলাদা করতে শিখবে, আর বুঝতে শিখবে কোনটা দৃষ্টিকটু, আর কোনটা ভালো। আহনাফ যদি তাকে বোঝায়, এটা পুরুষদের স্বাভাবিক অভ্যাস, এতে কোনো সমস্যা হয় না। তখন অন্য পুরুষের অস্বাভাবিকতাগুলোও অরুণিকার কাছে স্বাভাবিক লাগবে।

আহনাফ কাপড় পরে অরুণিকার নাক টেনে ধরে বলল,
“আমি তোমাকে দেখি নি। আমি তো জানি না তুমি এখানে বসে আছো।”

“কেন? তোমার চোখ কোথায় থাকে?”

“আমার সাথেই থাকে।”

“আমার তো মনে হয় পকেটে থাকে।”

“এই ইঁচড়েপাকা মেয়ে, তোমাকে এসব পাকা পাকা কথা কে শিখিয়েছে?”

“আমার কতো বন্ধু আছে! তুমি হিসেবও করতে পারবে না। তারা শিখেয়েছে।”

“আচ্ছা, তুমি এতো বন্ধু দিয়ে কি করবে?”

“খেলবো। বেশি বন্ধু হলে অনেক মজা করা যায়।”

“যাও এখন, ইঁচড়েপাকা।”

“আমি ইঁচড়েপাকা না। তুমি ইঁচড়েপাকা।”

“ইঁচড়েপাকা অর্থ জানো?”

“হ্যাঁ, জানি।”

“কি, দেখি বলো তো?”

“যে পাকা পাকা কথা বলে।”

“কে বলেছে তোমাকে?”

অরুণিকা হেসে বলল, “রকস্টার বলেছে।”

“ওই বদমাশ ছেলেই তোমাকে এসব কথা শিখিয়েছি, তাই না?”

“রকস্টার না, তুমি বদমাশ। তুমি ইঁচড়েপাকা। তুমি ফোনাপুর সাথে সারাদিন পাকা পাকা কথা বলো।”

আহনাফ চোখ বড় বড় করে অরুণিকার দিকে তাকালো। তারপর অরুণিকাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“এই মেয়ে, কি বলো এসব? ফোনাপু কে আবার?”

“ওই যে যার সাথে ফোনে কথা বলো। ওই যে মাঝে-মাঝে বাসায় এসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে ওই মেয়েটা।”

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি ওর সাথে পাকা পাকা কথা বলি এই কথা তোমাকে কে বলেছে?”

অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল, “বলবো না।”

“না বললে চটকানি দেব।”

“রকস্টার আর ইমন বলেছে।”

আহনাফ বিড়বিড় করে বললো,
“এই দুইটার আর তো কোনো কাজ নেই। সারাদিন আমার পেছনেই লেগে থাকবে।”

এদিকে মাওশিয়াত সন্ধ্যায় ফোনে ইভানের ছবি দেখছে। ছবি দেখে সে আনমনে হাসছে। স্কুলের চেয়ে এখন কলেজে উঠেই যেন সে ইভানের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। ইভানও এখন তাকে অনেক সময় দেয়। তবে সে জানে না এই অনুভূতির নাম কি! তার ইভানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, তার সাথে যতো সময় কাটায়, মনে হয় কম হয়েছে। এই অনুভূতির কোনো নাম না থাকুক। তবুও সে ইভানকে এভাবেই অনুভব করতে চায়।

এদিকে রাতে ভাত খাওয়ার সময় অরুণিকা মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। কোনোভাবেই সে ভাত খাবে না। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তার কান্না করার কারণটাও কেউ বুঝতে পারছে না। আরাফ তার কাছে এসে মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“অরু, বলো আমাকে, কি হয়েছে তোমার?”

অরুণিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইভান বলল,
“ড্রামাকুইন। ওর কিছুই হয় নি। নাটক করতেই ওর বেশি ভালো লাগে।”

তাহমিদ বিরক্ত হয়ে বলল,
“খাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে, অরুণিকা। চুপচাপ খেয়ে নাও।”

তূর্য ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“ভাই তোরা এতো অদ্ভুত কেন? ওর নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এভাবে তো আগে কখনো কান্না করে নি।”

আহনাফ বাটির ঢাকনা উলটে তূর্যকে বলল,
“সবজি দেখে কাঁদছে। তাকে মাছ আর সবজি দিয়েই আজ খেতে হবে।”

অরুণিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে মাথা নাড়লো। আরাফ বলল,
“বলো অরু।”

অরুণিকা দাঁত দেখিয়ে বলল,
“দাঁতে ব্যথা করছে।”

আরাফ অরুণিকার দাঁত দেখে বলল,
“আরেহ, দাঁত পড়বে। এখানে কান্না করার কি আছে!”

ইমন খাওয়া ছেড়ে উঠে বলল,
“আমি ওর দাঁত ফেলবো।”

অরুণিকা দৌঁড়ে উঠে গেলো। ইমন বলল,
“বাচ্চা, তুমি ইমনের হাত থেকে পালাতে পারবে না। ফুটবলের মতো জোরে একটা কিক দেবো আঙ্গুল দিয়ে। তোমার দাঁত হবে বল, আমার আঙ্গুলগুলো হবে পা। দেবো একটা কিক, ওমনি টপ করে নিচে পড়ে যাবে।”

ইভান ইমনের কান টেনে দিয়ে বলল,
“তোর দাঁত ফেলার ব্যাখা শুনে ও আর এই জন্মে তোর কাছে দাঁত ফেলবে না।”

“দেখা যাক।”

অরুণিকা দৌঁড়ে আরাফের পেছনে নিজেকে আড়াল করে বলল,
“আমি দাঁত ফেলবো না। এটা আমার দাঁত। ও কেন ফেলবে?”

ইভান বলল,
“ওর সাহস নেই তোমার দাঁত ফেলার।”

কথাটি বলেই অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“ডাক্তার একটা ওষুধ দেবে। ওটা খেলে দাঁত আবার শক্ত হয়ে যাবে।”

অরুণিকা ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো, “সত্যি?”

“হ্যাঁ, সত্যি। দেখি তো কেমন হয়েছে?”

আরাফ বলল,
“হ্যাঁ, অরু। দেখাও তো একটু।”

অরুণিকা হাঁ করতে ইভান এক টান দিয়ে দাঁতটা ফেলে দিলো। ব্যস অরুণিকা তার সব শক্তি দিয়ে ইভানকে ইচ্ছেমতো ঘুষি মারলো। আর আরাফকে খামচি দিলো। তূর্য সেই সুযোগে অরুণিকার মুখ পরিষ্কার করিয়ে দিলো। আহনাফ তা দেখে বলল,
“এই বেটা সবসময় কোনো কাজ না করেই অরুর প্রিয় হয়ে যায়৷ পড়াবে ইভান, খাওয়াবে তাহমিদ, তার বাকি কাজ করবে আরাফ, আর তার প্রিয় রকস্টার।”

তূর্য কলার নাচিয়ে বলল,
“কেন তোমার সমস্যা কোথায়? তোমার তো ফোনাপু আছে, তাই না টুইংকেল?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। আহনাফ চোখ ছোট করে তূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here