#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৬৬||
১০৯.
পরনে সাদা শাড়ি, খোঁপায় সাদা বেলি ফুল বাঁধা, আর হাতে এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ নিয়ে ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সানায়া। বহুদিন পর আজ সে সাহস নিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানানোর জন্য ইভানের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এদিকে ইভান এক দৃষ্টিতে সানায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সানায়া বলল,
“তোমার কাছ থেকে দূরে থাকলে আমি ভালো থাকি না। তোমার দেখা পেলেই আমার মন শান্ত হয়ে যায়। কিভাবে যেন তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো! তুমি ছাড়া হয়তো আমি অসম্পূর্ণ। তুমি আমার স্বপ্ন। অনেক শখের স্বপ্ন। আমি তোমাকে ভালোবাসি, ইভান।”
ইভান কিছুক্ষণ সানায়ার এগিয়ে দেওয়া ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ফুলগুলো হাতে নিয়ে সানায়ার দিকে তাকালো। সানায়ার চোখে আনন্দের হাসি। ইভান এই মুহূর্তটা হারাতে চাইছে না। সে সানায়ার হাত ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে আনলো। সানায়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইভান হঠাৎ সানায়াকে এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দিলো। সানায়ার পরনের সাদা শাড়িটা সাথে সাথেই রাস্তার ধুলোর সাথে মিশে মলিন হয়ে গেলো। আর তার চোখেও বিষ্ময়ের চিহ্ন ভেসে উঠলো। সানায়া উঠার আগেই ইভান ফুলগুলো সানায়ার মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“তোমার মতো সো কল্ড মেয়ে আমার মনে কোথাও জায়গা পায় না। এমন মেয়েদের আমি এভাবেই ধাক্কা দিয়ে আমার পাশ থেকে সরিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলি। এখন যেমনটা তোমার সাথে হলো।”
সানায়া এখনো মাটিতেই বসে আছে। ইভানের কথা শোনার পর থেকে সে শরীরে আর কোনো শক্তি পাচ্ছে না। তার গলায় কথা আটকে গেছে। চোখ দু’টিও শীতল হয়ে গেছে। ইভান বাঁকা হেসে বলল,
“তোমাকে রাস্তায় বেশি মানাচ্ছে।”
ইভান মুখ ঘুরিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো। সানায়া মাটিতে ছড়িয়ে পড়া ফুলগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ইভান, দাঁড়াও।”
ইভান দাঁড়ালো না। সে সামনে হাঁটছে তো হাঁটছেই। সানায়া এবার পা বাড়ালো। আর ধীরে ধীরে পায়ের গতি বাড়িয়ে ইভানের সামনে এসে দাঁড়ালো, আর বলল,
“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু এখন এসব কথা কেন বলছো? কি হয়েছে, ইভান? তুমি কি কোনো ব্যাপারে আমার উপর রাগ করে আছো?”
ইভান রাগী কন্ঠে বললো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর আমি শুধু তোমাকে তোমার জায়গা দেখাচ্ছি। মন্ত্রীর মেয়ে আর মির্জা গ্রুপের এম.ডির বোন হয়ে তুমি নিজেকে যতোটা যোগ্য ভাবছো, আমি তোমাকে সেই যোগ্যতাটাই দেখাচ্ছি। তোমার ভাই একজন ক্রিমিনাল, তোমার বাবা একজন খুনি, আবার সে বুড়ো বয়সে এসে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই তোমার বাবা-মারও ডিভোর্স হয়ে গেছে, তবুও তারা একই ছাদের নিচে থাকছে। ইন্টারেস্টিং। তোমার বোন মুন্সী গ্রুপের এম.ডিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বসে আছে। আর তোমার সম্মানিত ভাবী আমার বন্ধুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর এদিকে তুমি এসেছো বেহায়ার মতো আমাকে ভালোবাসি বলতে? ইন্টারেস্টিং, রিয়েলি, ভেরি ইন্টারেস্টিং ফ্যামিলি। নিজেই ভেবে দেখো। তোমার পুরো পরিবারই হাবভাবে অনেক উপরে, কিন্তু মানের দিক থেকে ওই রাস্তায় পড়ে থাকার যোগ্যতাও নেই। আর তোমার মতো মানহীন মেয়েকে আমি ভালোবাসবো? এটা খুবই হাস্যকর।”
সানায়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সানায়া ইভানের হাত ধরে বলল,
“আমার পারিবারিক অবস্থা হয়তো ভালো নয়। কিন্তু এখানে আমার তো কোনো দোষ নেই। আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?”
“তোমার রক্তে দোষ আছে। আর সেই নোংরা রক্ত আমার রক্তের সাথে কখনোই মিশবে না।”
ইভান সানায়ার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি চলে যাচ্ছে। আর সানায়া ঝাপসা চোখে ইভানের যাওয়া দেখছে। তার শাড়ির আঁচল হাওয়ার তালে উড়ছে।
ইভানের গাড়ি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সানায়ার বডিগার্ডদের গাড়ি পার্কে ঢুকতেই তারা সানায়াকে মাটিতে অজ্ঞান অবস্থায় পেলো। তারা তাকে সেখান থেকেই হাসপাতালে নিয়ে গেলো। আর ডাক্তার চেকাপ করে বলল,
“লো ব্লাড প্রেশারের জন্য শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল।”
সাহিল সানায়াকে দেখতে হাসপাতালে এলো। সানায়া ভাইকে দেখে পাশে থাকা খালি স্টিলের ট্রে-টা ছুঁড়ে মারলো। সাহিল অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কাছে আসতেই সানায়া চেঁচিয়ে বললো,
“তোমাদের জন্য আমি আমার সব হারিয়ে ফেলেছি। যাও এখান থেকে। আই হেইট ইউ, সাহিল মির্জা, আই হেইট ইউ।”
সাহিল সানায়ার হাত ধরে নরম সুরে বলল,
“সানায়া, কি হয়েছে বোন? আ’র ইউ ওকে?”
সানায়া সাহিলের হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমাদের জন্য আমি ইভানকে হারিয়েছি। তোমাদের জন্য আমার রক্ত নোংরা হয়ে গেছে। প্লিজ, আমার সব রক্ত নিয়ে নাও। আমার এই নোংরা রক্ত লাগবে না।”
সানায়ার পাগলামো দেখে সাহিল খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। নার্স এসেও সানায়ার চড় খেয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। দু’জন নার্স তো বলাবলি করছে, সানায়ার মানসিক বিকার ঘটেছে। এদিকে ডাক্তার সাহিলের রাগী চেহারা দেখে সানায়াকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ওই অবস্থায় ডিসচার্জ নিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেছে। আর বলে দিয়েছে বাসায় থাকলেই সে আরো ভালো থাকবে।
এদিকে ইভান সোজা আরাফের সাথে দেখা করতে তার চেম্বারে চলে গেছে। আরাফ ইভানের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তুই এভাবে হুট করে এখানে এলি যে?”
ইভান মুচকি হেসে বলল,
“অনেক দিন পর তোর সেই ক্ষতের দাগগুলো মন থেকে মিটিয়ে ফেলতে পেরেছি।”
“কিসের ক্ষত?”
“সাহিল মির্জার দেওয়া সেই ক্ষত।”
আরাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি করেছিস তুই?”
“থাক, এসব বাদ দে৷ এখন সাহিল মির্জা বুঝবে বিনা অপরাধে অন্যের ভুলের শাস্তি নির্দোষ কাউকে দিলে কেমন অনুভূত হয়। যদিও শাস্তিটা অনেক সামান্য ছিল। কিন্তু এই আঘাত দেহে পড়ে নি, একদম ভেতরে গিয়ে পড়েছে। আর এই ক্ষত সহজে মেটানো যাবে না।”
ইভান চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“বাসায় আজ আমার পক্ষ থেকে ডিনারের ব্যবস্থা হবে। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাসায় ফিরিস। আজ কিন্তু সবাই একসাথে বসেই ডিনার করবো।”
আরাফ মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।
মৃদুমন্দ হাওয়া, নদীর জলে তরঙ্গের ঢেউ, মাঝখানে ছোট একটা তরী। তরীতে কোনো মাঝি নেই। শুধু বসে আছে দু’জন যাত্রী। তাদের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই। তারা একে অপরের মুখোমুখি বসে আছে, আর মনে মনেই কথা বলছে।
শতাব্দী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর তাহমিদ একটা ফুলের ঝুড়ি সামনে নিয়ে ফুল গাঁথছে। অরুণিকাই আজ তাদের বাইরে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে আসার পর থেকেই শতাব্দী ঘরে বন্দি। বেশি হলে তার ছাদেই যাওয়া হয়। কিন্তু একবারো সে ঘর থেকে বের হয় নি। তাই অরুণিকা তাহমিদকে বলল শতাব্দীকে নিয়ে বাইরে যেতে। আর তাহমিদ আগে থেকেই জানতো শতাব্দীর নদী-সমুদ্র এসব জায়গা খুব বেশি প্রিয়। এই মুহূর্তে সমুদ্র দেখানো তো আর সম্ভব না। তাই কাছে একটা শাখা নদী ছিল, সেখানেই সে শতাব্দীকে নিয়ে গেলো।
তাহমিদ ফুল গাঁথার শেষ করে শতাব্দীর মাথায় সেই ফুলের মালাটি লাগিয়ে দিলো। শতাব্দী তরীর পাঠাতনের সাথে লাগানো কাঠ বোর্ডটিতে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার এই মুহূর্তে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার কন্ঠে কোনো প্রাণ নেই। তাই সে মনে মনেই গাইলো।
“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো।
তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো,
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়।
.
তোমার আবেগ মাখা খামখেয়ালী
হাঁটছে আমার পিছু,
আমার আসা যাওয়ার পথের বাঁকে
পাইনি অন্য কিছু।
তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়।
.
আমার হৃদয় যেন বানভাসি হয়
তোমার স্রোতের টানে
আমি তোমার কাছে যাবোই যাবো
একলা থাকার দিনে।”
তাহমিদ শতাব্দীর আঙ্গুলের ফাঁকে ফুল ধরে বলল,
“তুমি একদম বকুল ফুলের মতো। বকুল ফুলের অনেক সুগন্ধ৷ তুমিও যেখানেই যাও পুরো জায়গাটা মোহময় করে তুলো। আর সেই মোহময়তা বকুলের মতোই দীর্ঘস্থায়ী।”
শতাব্দী কিঞ্চিৎ হাসলো। তাহমিদ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী খুব কম হাসে। আর যখন হাসে তখন তাহমিদের পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। যখন শতাব্দী খিলখিল করে হাসতো, তখন পুরো পরিবেশ কেমন জীবন্ত হয়ে উঠতো। আর এখন মৃত পরিবেশটাকে শতাব্দীর এই কিঞ্চিৎ হাসিটাই যেন প্রাণ দিয়েছে।
এদিকে অরুণিকা একটা রেস্টুরেন্টে ইমানের মুখোমুখি বসে আছে। সামনে ইমানের অর্ডার করা খাবারগুলো এসেছে। সে একটার পর একটা অরুণিকার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। অরুণিকা সবগুলো সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল,
“আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
ইমান বিরক্তির সুরে বলল,
“বারবার একটা কথায় বলছো, অরু। আগে তুমি সত্যটা স্বীকার করো, প্লিজ।”
অরুণিকা মলিন মুখে বললো,
“হ্যাঁ, এটা সত্য। আমার আপনাকে ভালো লাগতো। আমি আহনাফকে বলেছি এই কথা আপনাকে জানানোর জন্য। কিন্তু সে জানায় নি। উলটো বলেছে, আপনার অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে।”
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি, অরুণিকা।”
“দেখুন, ইমান। আমার আহনাফের সাথে আক্দ হয়ে গেছে। আর আমি আপনাকে গল্প করার জন্য এখানে আসতে বলি নি। আমি জানতে চাইছি, আপনি কার কাছে শুনেছেন এসব কথা। একটি বার আমাকে বলুন। আমার এটা জানা খুব দরকার।”
ইমান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আরবান তালুকদার বলেছে।”
“কেন? উনি কেন এই কথা আপনাকে বললো? আর কিভাবে বললো?”
“শুক্রবার মসজিদে দেখা হয়েছিল। তখনই বলল আরাফ জোর করে তোমার আর আহনাফের বিয়ে দিতে চাইছে। এও বলেছে তোমাদের বংশে জন্মসূত্রে এটাই চলছে। অন্যের ভালোবাসা নষ্ট করাই তোমাদের বংশের কাজ।”
অরুণিকা কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়ালো। ইমানও অরুণিকাকে উঠতে দেখে তার হাত ধরে বলল,
“আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, অরু।”
“আপনি আমাকে অরু ডাকবেন না। অরু ডাকার অধিকার শুধু আহনাফ আর আরাফের আছে। বাকিরাও আমাকে অরুণিকাই ডাকে।”
“তুমি হঠাৎ এমন শক্ত হয়ে গেলে কেন? আগে তো অনেক নরম ছিলে।”
“আমি কি আপনার সামনে কখনো নরম হয়েছিলাম?”
“হও নি? কিন্তু আমি জানি, তুমি এমন নও।”
“যে আপনাকে এসব জানিয়েছে, সে ভুল জানিয়েছে। হয়তো আহনাফকে আমি বিয়ে করতে চাই নি, কারণ আমার আপনাকে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন আমার আক্দ হয়ে গেছে। আর আহনাফ আমার কাছে আপনার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন আমার কেউ ছিল না, তখন সে আমার হাত ধরেছে। আর এখন আমার তার হাত ধরার সময় এসেছে। আর এবার আমিই আহনাফকে প্রটেক্ট করবো।”
অরুণিকা বাসায় এসে সোজা আহনাফের রুমে চলে এলো। আহনাফ অরুণিকাকে দেখেই বিরক্ত মুখে বের হতে যাবে তখনই অরুণিকা ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“আহনাফ, একটা জরুরী কথা বলার আছে।”
আহনাফ অরুণিকাকে পাশ কাটিয়ে সরে পড়লো। অরুণিকা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো, আহনাফের মুখটা লাল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে। অরুণিকা আহনাফের হাত ধরতেই আহনাফ এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“গেট আউট ফ্রম হেয়া’র।”
অরুণিকা অবাক হয়ে বলল,
“আহনাফ, এভাবে রেগে যাচ্ছো কেন? আমি কি করলাম?”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“মানলাম আমাকে ভালোবাসো না। তবুও এমন কাজ তো অন্তত না করলেও পারতে, অরু।”
অরুণিকা অবাক হয়ে বলল,
“কি করেছি আমি?”
“ইমানের সাথে দেখা করেছো। কি বলেছো ওকে? তুমি ওকে ভালোবাসো, তাই না?”
আহনাফ তালি বাজাতে বাজাতে বলল,
“গুড, গুড, ভেরি গুড, অরু। তোমার মতো প্রেমিকাই তো সবার পছন্দের। যে বিয়ে করা বরের চেয়ে পুরোনো ভালো লাগার মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেবে।”
অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কে বলেছে এসব তোমাকে?”
“ইমান নিজেই বলেছে।”
“আর তুমি বিশ্বাস করেছো?”
“ওর কথা আমি এমনি এমনি বিশ্বাস করি নি। আমাকে ছবি দেখিয়েছে। আমার ফোনে তোমাদের দেখা হওয়ার সব প্রমাণ আছে।”
“আমি ওমন কথা বলি নি। বলেছি ভালো লাগতো। কিন্তু এখন…”
আহনাফ হুট করে অরুণিকার মুখ চেপে ধরে ধড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। অরুণিকা ভয়ে কেঁপে উঠল। সে আহনাফের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আহনাফের চোখ দু’টি চিকচিক করছে। সে অরুণিকার চুলগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে অরুণিকাকে নিজের কাছে টেনে আনলো, আর বলল,
“আমি অনেক সহ্য করেছি, অরু। কিন্তু আর না। আমি মানুষ। আমি কোনো যন্ত্র না। আর তুমিও ছোট বাচ্চা না যে কিছু বুঝতে পারছো না। ইমানকে আমার ভালো লাগে না। আরেকবার যাতে ওকে তোমার আশেপাশে না দেখি। এটা আমার ওয়ার্নিং। ইমানের সাথে যদি তোমার কথাবার্তা হয়, আর এটা যদি আমার চোখে পড়ে, তাহলে অনেক খারাপ হবে। ইমানকে জানিয়ে দিও, আমার মানুষকে আমি রাখতে জানি।”
আহনাফ অরুণিকাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অরুণিকা আহনাফের এমন ব্যবহারে পুরোপুরি হতবাক। সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। এদিকে আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে নেমে গেলো। ইমন তাকে কিছু বলতে যাবে, সে না শুনেই বাইরে চলে গেলো। বাইকে উঠেই চাবি ঘুরালো। সে এলাকা থেকে বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময় রহমতুল্লাহ একটা কালো গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে হেলান দিয়ে কাউকে ফোন দিয়ে বলল,
“বস, কাজ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”
ওপাশ থেকে কেউ একজন হেসে বলল,
“আহনাফ আর অরুণিকার ছোট্ট কাবাব সংসার, আর মাঝখানে ইমান সেই কাবাবের হাড্ডি। আর সেই ভাজা কাবাব আমাদের খাদ্য। চমৎকার কাজ করেছো। আরবান সাহেব তো ইমানকে সব জানিয়ে আমাদের কাজ আরো সহজ করে দিয়েছেন। এখন আহনাফ অরুণিকার আলাদা হওয়া মানেই আমাদের কাজ শেষ।”
“আরেকটা কাজ বাকি আছে। মুরাদপুরে সেই বোম বার্স্ট। আর সেদিনই শেষ হয়ে যাবে আমাদের শত্রু। আর শেষ হবে এতোদিনের অপেক্ষা।”
“আর ফেঁসে যাবে আমাদের মহামান্য মৈত্রী গ্রুপের জুনিয়র্সরা। আর একা হয়ে যাবে আমাদের ছোট্ট সোনামণি, অরুণিকা।”
“হ্যাঁ, বস। এজন্যই তো ওদের কলকাতায় পাঠিয়েছি। ওরা সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছে। আর এর প্রমাণও আছে। পুরো ক্ষমতা যখন আমাদের হাতে চলে আসবে, তখন ওদের দেশদ্রোহী প্রমাণ করতে আমাদের এক মিনিটও লাগবে না।”
“আর এরপর আমার বহু বছরের প্রতিশোধ পূর্ণ হবে। আমি স্বস্তি পাবো।”
এদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছাদে বসে আছে ইমন আর মাওশিয়াত। আকাশে তারা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাসায় অস্বস্তি লাগছে তাই মাওশিয়াত ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে, আর তাকে সঙ্গ দিচ্ছে ইমন। মাওশিয়াত চিন্তিত কন্ঠে ইমনকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমরা সারাদিন লাইব্রেরীতে কি করো?”
“সেই অতীতের রহস্যের উদঘাটন চালাই।”
“এতোদিনেও কি এর কোনো সমাধান হয় নি?”
“হয়েছে। অনেক কাছাকাছিই আছি।”
“কে করেছে এসব?”
“প্রথমে তাহমিদের মামা মুরশিদ জুবাইয়কে সন্দেহ হয়েছিল। তারপর তিনি আমাদের সব সত্য জানালেন। বললেন, সেদিন আমাদের বাঁচানোর জন্য তিনিই রহমতুল্লাহকে পাঠিয়েছিলেন। তারপর রহমতুল্লাহই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে বাস্কার গ্রুপের এম.ডি রিয়াজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। আর তিনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। তারপরও আমরা তাকে সন্দেহ করেছি, কারণ জুবাইয়ের আংকেল মৃত্যুর আগেই বলেছিলেন, শত্রু আমাদের আশেপাশেই ছিল। কিন্তু এখন তিনিও আমাদের সাহায্য করছেন। এরপর অরুণিকার মামা শাহবাজ খানকে সন্দেহ করার কারণ, তিনি মির্জা গ্রুপের এক কেইসে তাদের সাহায্য করেছিলেন। আর মির্জারা আমাদের একমাত্র শত্রু। আর মিডিয়াতেও এই গুজব রটেছিল। পরে আদিল ভাইয়ার মৃত্যুর পর বুঝলাম মির্জা গ্রুপের এর সাথে সংযুক্ত থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদিও কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না। তবুও মনে হচ্ছে এরা কেউই জড়িত নয়।”
“তাহলে কে জড়িত?”
“রহমতুল্লাহই বলতে পারবে। তবে আমরা আরবান তালুকদারকে সন্দেহ করছি।”
মাওশিয়াত আরবান তালুকদারের নাম শুনে চমকে উঠলো। সে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“ইমন, আমিও এটাই বলতে চাচ্ছিলাম। আমারও উনাকে সন্দেহ হয়। অরুণিকাও আমাকে বলল শতাব্দী আরবান মামাকে দেখে কিছু একটা বলতে চাইছে। আমিও উনাকে দেখছি, উনি আজকাল আহনাফ আর অরুণিকার রুমের আশেপাশে খুব ঘুরঘুর করছেন।”
ইমন চুপ করে রইলো। মাওশিয়াত বলল,
“উনাকে বের করে দাও বাসা থেকে।”
ইমন ফিসফিস করে বলল,
“শত্রুকে কাছে রাখতে হয়৷ আর উনার সাথে আরো একজন জড়িত আছে। আর সেই হচ্ছে মাস্টারমাইন্ড। তাকে ধরতে পারলে সব প্রবলেম সলভ। এই জন্যই আরবান তালুকদারকে বাসায় রেখেছি।”
কিছুক্ষণ দু’জনই চুপ করে রইলো৷ হঠাৎ ইমন মাওশিয়াতের চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো। মাওশিয়াত সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো। ইমন মাওশিয়াতকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমাদের এতো বছরের যাত্রায় আমরা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি। কেউ কি জানতো চটচটে মেজাজের মাওশিয়াত আমার জন্য শান্ত হয়ে যাবে?”
মাওশিয়াত ইমনের দিকে ফিরে তার গালে হাত রেখে বলল,
“আমি এমনিতেই শান্ত হই নি। সায়ন্তনী আমাকে শান্ত করিয়ে গেছে। মেয়েটার মৃত্যুটা আমি এখনো মানতে পারি না, ইমন। রোজ মনে হয়, ওর ভালোবাসার মানুষকে আমি আগলে রাখছি। তোমাকে আমি ভালোবাসি, ইমন৷ কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ কম, দায়িত্ব বেশি হয়ে গেছো। আমি সায়ন্তনীকে বলেছি, তোমার পাশে থাকবো। ও আমাদের জন্য হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে। ওর কাছে ভালোভাবে ক্ষমাও চাইতে পারি নি। আর সেই অপরাধবোধ নিয়ে এখনো বেঁচে আছি।”
“আর তাই আমাকে এতো ভালোবাসো?”
“হয়তো। ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসি। কারণ তোমাকে ভালোবাসা আমার দায়িত্ব হয়ে গেছে। তাই এই ভালোবাসা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব না।”
ইমন মাওশিয়াতের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে বলল,
“আমার ভালোবাসা থেকে তুমি মুক্ত হতেও পারবে না।”
“আচ্ছা, ইমন তোমার তো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তুমি কি আর খেলবে না?”
ইমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মাঝে মাঝে অন্যের জন্য নিজের ইচ্ছেগুলো ত্যাগ করতে হয়।”
পরক্ষনেই সে হেসে বলল,
“কিন্তু আমাদের ছেলেকে আমি ফুটবলার বানাবো।”
মাওশিয়াত মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমার ছেলে ডাক্তার হবে।”
“আচ্ছা, তাহলে দুইটা ছেলে লাগবে তোমার? সমস্যা নেই, আমি তো আছিই।”
মাওশিয়াত ইমনকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“চলো নিচে। বেশি কথা বলো তুমি।”
ইমন মাওশিয়াতের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ম্যাও যা বলে, তাই হবে।”
এক সপ্তাহের মধ্যেই গুপ্তচরের সহায়তায় রুকনকে ধরতে সক্ষম হলো রিয়াজুর রহমান। তিনি রুকনকে একটা অন্ধকার কক্ষে বেঁধে রেখেছেন। আর এই খবর ফোন করে আহনাফকেই প্রথম জানালেন। আহনাফ খবর পেয়ে দেরী না করে রিয়াজুর রহমানের দেওয়া ঠিকানায় চলে এলো। আর রুকনকে দেখে নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে তাকে বেধড়ক মারধর করলো। রুকন মার খেতে খেতে ক্লান্ত প্রায়। সে চেঁচিয়ে বলল,
“আমি সব আব্বার কথায় করছি।”
আহনাফ তার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে বলল,
“তোর আব্বা তোকে কেন এই কাজ করতে বলেছিল, আগে সেটা বল।”
রুকন কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আব্বার সাথে মির্জা গ্রুপের বনিবনা হইতো না। আব্বার সাথে মির্জা সাহেবের সমস্যা ছিল। আব্বা জানতো মৈত্রী গ্রুপের কিছু হইলে মির্জা গ্রুপ ফাঁইসা যাবে, তাই তাদের মাইরা ফেলার জন্য আমাকে ওখানে কাজ নিতে বলছিল। আমিই সবার তথ্য নিয়া আব্বারে দিতাম।”
আহনাফ চেঁচিয়ে বলল,
“শুধু এটাই তো কোনো কারণ হয় না!”
“আব্বার শুধু এতোটুকুই লাভ ছিল, ভাইজান। এর বেশি না। আর ওরা তো আব্বারে কোটি টাকার লোভ দেখাইছিল। কিন্তু হাজার টাকাও দেয় নাই। আপনেরা বেঁচে যাওয়ায় তো সব সমস্যা বাঁধলো।”
“কে টাকা দিয়েছিল রহমতুল্লাহকে?”
“আব্বা চিনে লোকটারে। আমি চিনি না। কিন্তু একটা কথা জানাইতে পারি। আব্বা দু’জনের আন্ডারে কাজ করতো। একজন খালি চৌধুরী পরিবাররে মারতে চাইছে, অন্য জন সবাইরে।”
আহনাফ কিছুটা অবাক হলো। বলল,
“কখনো দেখেছিস?”
“হ, দেখছি। আব্বার বসের পোলারেই দেখছি। তৈমুর নাম তার।”
রিয়াজুর রহমান চমকে উঠে বললেন,
“তৈমুর তো শাহবাজ খানের ছেলে। আর ও এই কাজ কখনোই করবে না। আমার কাছে তৈমুরের ছবি আছে।”
রিয়াজুর রহমান ছবি বের করে রুকনকে দেখাতেই সে বলল,
“না এইডা না।”
আহনাফ বলল,
“তাহলে সে শাহবাজ খানের পরিচয়ে এই খুন করেছে। আর সেই পরিচয়েই চলছে। লোকটাকে পাবো কিভাবে?”
আহনাফ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“এ খুনির ছেলেকে চিনে। তাহলে আমরা আমাদের পরিচিত সবার ছবিই একে দেখাই। অন্তত এটা তো নিশ্চিত, খুনি আমাদের পরিচিতদের মধ্যেই আছে।”
রিয়াজুর রহমান মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। তখনই বাইরে থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ ভেসে এলো। আহনাফ পিস্তল তাক করার আগেই কেউ তার পিঠে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলো। রিয়াজুর রহমান মুহূর্তেই নিজের শক্তি দিয়ে লোকটাকে আঘাত করতে গেলে লোকটা আহনাফের হাতের পিস্তলটি কেঁড়ে নিয়ে রিয়াজুর রহমানের উপর চালিয়ে দিলো। মুহূর্তেই পেছন থেকে ঠা ঠা শব্দ ভেসে উঠলো। পুরো স্থানটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ধোঁয়াটে হয়ে গেলো। আর মিনিটের মধ্যেই পুরো জায়গা জুড়ে নিরবতা ছেয়ে গেল।
চলবে—-#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৬৭||
১১০.
কেবিনের বাইরে আরাফ, তূর্য আর তাহমিদ দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার বের হতেই আরাফ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এখন কি অবস্থা?”
“চিন্তার কোনো কারণ নেই। গুলি হাতেই লেগেছিল। আমরা বের করে নিয়েছি। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।”
এদিকে নিয়াজ হোসেন কাঁপা শরীর নিয়ে এগিয়ে আসতেই আরাফের সামনে এসে হোঁচট খেলেন। আরাফ আর তাহমিদ দু’জনই তাকে ধরে বেঞ্চে বসালো। নিয়াজ হোসেন চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
“রিয়াজের কি অবস্থা?”
তাহমিদ আশ্বস্ত করে বলল,
“এই মাত্র ডাক্তার বেরিয়ে বলল, তিনি এখন আশংকা মুক্ত।”
নিয়াজ হোসেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন ডাক্তার আরাফের কাছে এসে বলল,
“আরাফ, আহনাফের ক্ষতের জায়গায় ড্রেসিং করিয়ে দিয়েছি। ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে। যদিও ক্ষত ওতোটা গভীর ছিল না, নয়তো অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।”
কিছুক্ষণ পর অরুণিকা হাসপাতালে এসে পৌঁছালো। আরাফকে দেখে সে দৌঁড়ে এসে বলল,
“ইমন মৌ ভাবীকে ফোন করে বলল আহনাফকে এই হাসপাতালে এনেছে! কেন এনেছে এখানে? কি হয়েছে ওর?”
আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“চিন্তার কোনো কারণ নেই। পিঠে ছুরির আঘাত লেগেছিল। এখন ও ঠিক আছে।”
“তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ওকে দেখতে যাও নি?”
“দেখে এসেছি। ও ভালোই আছে। ওর একা থাকতে ইচ্ছে করছিল। আমাদের চলে যেতে বললো, তাই বেরিয়ে এলাম।”
“আমি ভেতরে যাই? ওকে দেখে আসি?”
“হুম, যাও।”
অরুণিকা ভেতরে ঢুকেই আহনাফকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আহনাফ অরুণিকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরুণিকা আহনাফের পাশে বসে বলল,
“তুমি কাউকে না বলে ওই লোকটাকে ধরতে গেলে কেন? এখন তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো?”
আহনাফ ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“কিছু তো আর হয় নি। বেঁচেই আছি।”
অরুণিকা আহনাফের হাত ধরে বলল,
“আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, জানো?”
অরুণিকার চোখে অশ্রু দেখে আহনাফ বলল,
“কাঁদছো কেন?”
“কাঁদবো না কেন? অদ্ভুত তো! তোমার কিছু হয়ে গেলে?”
অরুণিকা ভেংচি কেটে ব্যঙ্গ করে বলল,
“কাঁদছো কেন! এটা আবার কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন?”
আহনাফ বলল,
“যাও এসব ফোঁপাফুপি বন্ধ করো। আমি বেঁচে আছি।”
অরুণিকা মলিন মুখে কিছুক্ষণ আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিতেই অরুণিকা অভিমানী মুখে চিমটে কেটে বলল,
“তুমি সব সময় আমার সাথে টেরামি করো। তুমি একদম ভালো না। আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি, আর তুমি ভাব দেখাচ্ছো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পটর পটর বন্ধ করো তো, ভালো লাগছে না।”
অরুণিকা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। আর আহনাফ আনমনে হাসলো। অরুণিকা যে অভিমান করেছে তা আহনাফ ভালোই বুঝতে পেরেছে। তবুও সে অরুণিকার অভিমান ভাঙাবে না। কারণ সে চায় অরুণিকা তাকে গুরুত্ব দিক। তার কথা না বলা, অভিমান করে থাকাটা বুঝে যাতে আহনাফকে তার প্রাপ্য স্থানটা দিতে শিখুক।
অরুণিকা বের হওয়ার পর আরাফ, তূর্য আর তাহমিদ আহনাফের কাছে গেলো। তূর্য বলল,
“এখন কেমন লাগছে?”
আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“ভালো লাগছে। আচ্ছা, তোরা কিভাবে জানলি আমি ওখানে গিয়েছি?”
“টুইংকেল বলেছে।”
“অরু কিভাবে জানলো? আমি তো ওকে বলে বের হই নি।”
“জানি না। এতো কিছু জিজ্ঞেস করার সময় পাই নি। ও বললো, আর আমরা তাড়াতাড়ি চলে গেলাম।”
“রিয়াজুর রহমানের কি অবস্থা?”
“এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তবে আউট অব ডেঞ্জার।”
“রুকন এখন কোথায়?”
আরাফ বলল, “মারা গেছে।”
আহনাফ অবাক কন্ঠে বললো,
“মানে? কিভাবে?”
“কয়েকটা গুলি একসাথেই লেগেছিল। অরুণিকা বলার সাথে সাথেই আমরা গাড়ি নিয়ে ওখানে চলে গেলাম। তারপর গিয়ে দেখলাম মুখোশধারী কিছু লোক, বাইরে থাকা দারোয়ানদের উপর হামলা করছে। তাদের মধ্যেই আহত একজন জানালো, একটা লোক কোথা থেকে এসে ভেতরে ঢুকে তাদের উপর হামলা করেছে। এদের মধ্যে কয়েক জনকে মেরে আমরা ভেতরে গেলাম। আর ইভান ভেতরে ঢোকার আগেই টিয়ারগ্যাস ছাড়লো। আমরা আসলে বুঝতেই পারছিলাম না কারা রিয়াজুর রহমানের লোক, আর কারা হামলাকারীর পক্ষে। টিয়ার গ্যাস ছাড়ার পর দেখলাম ভেতরে তুই আর রিয়াজুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। লোকটা তোকে আঘাত করে, রিয়াজুর রহমানের উপর হামলা করতে গেলো। আমরা লোকটাকে বিভ্রান্ত করার জন্যই গুলি ছুঁড়তে লাগলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে চেয়ারে বাঁধা রুকনকে খেয়াল করি নি। ও আমাদের ছোঁড়া গুলিতেই মারা গেছে।”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এতোদিন পর খুনিকে ধরার একটা সুযোগ পেয়েছি, আর তোরা বোকার মতো গুলি চালিয়েই সেই সাক্ষীটাকেই মেরে ফেলেছিস?”
তাহমিদ বলল,
“রিল্যাক্স। ভুল হয়ে গেছে। কি আর করার? কেউ একজন তোর উপর ছুরি চালিয়েছিল। রিয়াজুর রহমানকে মারতে চাইছিল। আমরা শুধু তাকে ভয় লাগাতেই গিয়েছিলাম। এক কোণায় যে চেয়ারে ওই রুকনটাকে বেঁধে রেখেছিস ওটা আমরা কিভাবে বুঝবো, বল? আমরা কি আগে থেকে কিছু জানি?”
তূর্য বলল,
“আর যাই বলিস। ভালোই হয়েছে মরেছে। ওর মতো বিশ্বাসঘাতকের জন্যই আমরা আমাদের পুরো পরিবারকে হারিয়েছি। মরে জাহান্নামে যাক, আমাদের কি? আমরা তো আর ওকে দেখেশুনে মারি নি। আর মুরশিদ মামা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ওকে এতোক্ষণে দাফনও দিয়ে দিয়েছে হয়তো।”
আরাফ বলল,
“আর শুনতে চাইবি না আমরা কাকে ধরেছি?”
আহনাফ কপাল ভাঁজ করে বলল, “কাকে?”
“রহমতুল্লাহ ধরা পরেছে। ইভান আর ইমন উনাকে নিয়ে থানায় গেছে। তোদের উপর উনিই হামলা করেছিল।”
তূর্য বলল,
“দেখিস, এবার কেমন থরথর করে সব বলে দেয়।”
এদিকে তূর্য লিফটে উঠতেই উপমাকে দেখে থমকে গেলো। আহনাফ আর অরুণিকার আক্দের পরই উপমা আবার বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল। এরপর আর তাদের দেখা হয় নি। আর আজ উপমাকে হাসপাতালে দেখে তূর্য ভয় পেয়ে গেলো। সে উপমার কাছে এসে ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“তুমি এখানে কি করছো? বাবা, মা ওরা ঠিক আছেন তো?”
উপমা তূর্যকে ভালোভাবে দেখে বলল,
“হ্যাঁ, ভালো আছেন। আমি আমার বসকে দেখতে এসেছি।”
“বসকে মানে?”
“রিয়াজুর রহমানকে। শুনলাম উনার উপর হামলা হয়েছে।”
তূর্য মাথা নাড়লো। উপমা আবার বলল,
“এও শুনলাম, এবারও আপনাদের কাজে সাহায্য করতে গিয়েই আমার ভাইয়ের মতো তিনিও হামলার শিকার হয়েছেন। মোটামুটি আপনাদের আশেপাশে থাকলেই মৃত্যু নিশ্চিত, এর কোনো সন্দেহ নেই। তবে স্যারের ভাগ্য ভালো। তাই তিনি বেঁচে গেলেন।”
উপমা কথাগুলো বলেই লিফট থেকে নেমে গেলো। সে তূর্যকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। এরপর উপমা উপরে উঠেই রিয়াজুর রহমানের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিয়াজ হোসেন ফোন দিয়ে বলেছিলেন, তার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই রিয়াজুর রহমান আফসোস করে বলছেন তাকে দেখতে কেউ আসছে না। বন্ধুর এই অবস্থা দেখে নিয়াজ হোসেন উপমাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করে বললো রিয়াজকে দেখতে আসার জন্য। আর অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাওয়া ভালো। তাই উপমাও সেই অনুরোধ ফেলতে পারলো না। নিয়াজ হোসেন উপমার কল দেখেই কেবিনের বাইরে এসে বললেন,
“তুমি বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছো? ভেতরে আসো।”
উপমা মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকলো। রিয়াজুর রহমান উপমাকে দেখেই প্রশান্তির হাসি হাসলেন। উপমা সালাম দিয়ে বলল,
“এখন কেমন লাগছে স্যার?”
রিয়াজুর রহমান মুচকি হেসে বললেন,
“এতোক্ষণ প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে সব ব্যথা কমে গেছে। তুমি হয়তো আমার ব্যথা সারানোর ওষুধ।”
উপমা রিয়াজুর রহমানের কথা শুনে নিয়াজ হোসেনের দিকে তাকালো। তখনই তূর্য কেবিনে ঢুকলো। তূর্যকে দেখেই রিয়াজুর রহমান বললেন,
“কোথাও শান্তি নেই। যেখানেই যাই, কেউ না কেউ আসবেই।”
তূর্য উপমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“কেমন আছেন মিস্টার রিয়াজ?”
“এতোক্ষণ ভালো ছিলাম। এখন হঠাৎ ব্যথাটা বেড়ে গেলো।”
উপমা রিয়াজুর রহমানের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তূর্য উপমার হাত ধরে বলল,
“দেখা করা শেষ হলে, চলো।”
রিয়াজুর রহমান ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“মিসেস উপমা মুক্ত পাখির মতো স্বাধীন। শুধু শুধু তাকে খাঁচায় বন্দি না করাই ভালো।”
তূর্য শক্ত করে উপমার হাত ধরলো। রিয়াজুর রহমান বললেন,
“আরেকটু বসুক না। আমার ভালোই লাগছিল।”
নিয়াজ হোসেন রিয়াজুর রহমানের হাত ধরে তাকে থামাতে গেলেই রিয়াজ বলে উঠলেন,
“আহা, নিয়াজ, হাতটা তো ভেঙেই দিচ্ছিস। এভাবে ধরেছিস কেন? এই বুড়ো বয়সেই প্রাণটা নিয়ে নিবি নাকি? বিয়েই তো করলাম না এখনো।”
তূর্য উপমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“তামাশা শেষ হলে বেরিয়ে এসো। আমার ভালো লাগছে না এসব।”
তূর্য হনহনিয়ে বেরিয়ে আসতেই উপমা রিয়াজুর রহমানকে বলল,
“স্যার আপনি বিশ্রাম নিন। আমি আজ আসি।”
রিয়াজুর রহমান আর কিছু বললেন না। উপমা বের হতেই তিনি বাঁকা হেসে বললেন,
“এভাবে একটু আধটু যদি তার যত্ন পাওয়া যায়, তাহলে পুরো হাতটা ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও আপত্তি নেই।”
নিয়াজ হোসেন বিরক্তির সুরে বললেন,
“আম্মাকে এখনো কিছুই বলি নি। তুই এখন আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহ আল্লাহ কর। ওকে দেখেছিস? এবার চুপচাপ ঘুমা।”
“ঘুমাবোই তো। এখন তো শান্তির ঘুম ঘুমাবো।”
একদিন পর আহনাফকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হলো। বাসায় আনার পর থেকেই অরুণিকা আহনাফের পিছু লেগেই আছে। রাতে সবাই আহনাফের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই অরুণিকা স্যুপ নিয়ে রুমে ঢুকলো। আহনাফ তাকে দেখেই বলল,
“আবার কেন এসেছো? আমি এখন ঘুমাবো।”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে রুমে ঢুকেই আহনাফের মুখোমুখি বসে স্যুপের বাটিটা রেখে বলল,
“আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। খেয়ে নাও।”
“খাবো না।”
“কেন?”
“এতো রাতে কেউ স্যুপ খায়?”
“না খেলে বানিয়েছি কেন? এতো কষ্ট করে বানিয়েছি। খাবে মানে খাবে।”
আহনাফ স্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হাত নাড়াতে ইচ্ছে করছে না। হাত ব্যথা করছে।”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“সোজাসুজি বললেই পারো, খাইয়ে দাও, অরু। তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে।”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“খাবো না আমি। যাও এখন।”
অরুণিকা স্যুপের বাটিটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি আহনাফের মুখের সামনে চামচ ধরলো। আহনাফ মনে মনে খুশি হলেও মুখে বিরক্তির ভাব রেখে স্যুপ খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কিভাবে জানলে আমি ওখানে গিয়েছি?”
অরুণিকা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আহনাফের একদম কাছে চলে এলো। আহনাফ অরুণিকার কান্ডে একদম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সে অবাক হয়ে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে রইল। অরুণিকা আহনাফের কানের কাছে এসে বলল,
“শুনো বলছি।”
আহনাফ কানে হাতে দিয়ে বলল,
“অরু, কানের কাছে এসে কেন বলছো? এমনিতেই বলো।”
অরুণিকা আহনাফের মুখে হাত রেখে বলল,
“আস্তে। সিক্রেট কথা কি মাইক নিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবো?”
আহনাফ অরুণিকার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মুহূর্তে তার খুব ইচ্ছে করছিলো অরুণিকাকে কাছে টেনে নিতে, তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে। আহনাফ ঘোরের মধ্যেই অরুণিকার গালে হাত রাখার আগেই থমকে গেলো। হঠাৎ তার অরুণিকার বলা কথাটি মনে পড়ে গেলো।
“আমাকে স্পর্শ করার লোভ চড়ে বসেছে, তাই তো আমাকে বিয়ে করতে চাইছো।”
অরুণিকার বলা এই বাক্যটি মনে পড়তেই আহনাফ হাত গুটিয়ে নিলো। অরুণিকা আহনাফের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার পরই আরবান মামা কাকে যেন ফোন করে বললো ওই জায়গায় যেতে। আর উনি তোমাকে খুব ফলো করে। জানো, উনিই ইমানকে বলেছে আমি ওকে পছন্দ করি। তুমি তো ওইদিন আমার সাথে রাগ করেছো। আমার কথা শুনতেই চাও নি। আমি সেদিন ইমানের সাথে এমনি এমনি দেখা করতে যাই নি। এটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম, ও কিভাবে জানলো, আমি ওকে পছন্দ করি। আর ও কি বললো জানো? এসব নাকি আরবান মামা ওকে বলেছে।”
অরুণিকা কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
“কেমন লাগে বলো তো, আহনাফ? আমার না কি লজ্জা লেগেছিল! ও এখন সব জেনে গেছে। আমি ওকে বিয়ে করার জন্য তোমার সাথে ঝগড়া করেছি এসবও জেনে গেছে।”
আহনাফ চুপ করে রইলো। অরুণিকা আবার বলল,
“জানো, ইমানও আমাকে ভালোবাসে।”
আহনাফ এবার বলল,
“ভালোই তো। শেষমেশ তুমি তোমার ভালো লাগার মানুষের ভালো লাগা হতে পারলে। কিন্তু এটা শুধু ভালো লাগার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমি এর বেশি কিছু হতে দেবো না। এখন যাও এখান থেকে।”
অরুণিকা চুপচাপ আহনাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল,
“পুরোটাই তো শুনলে না। থাক, আমি আর বলবোই না।”
অরুণিকা উঠে চলে যেতেই আহনাফ আরাফকে ফোন করে নিচে নামতে বললো। আরাফ আহনাফের ঘরে এলে সে অরুণিকার বলা কথাগুলো আরাফকে বললো। তারা এবার ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, আরবান তালুকদার রহমতুল্লাহর সাথে জড়িত আছেন। কারণ রহমতুল্লাহকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। রহমতুল্লাহকে একবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পুত্রশোকে কাঁদছেন। কিছুই স্বীকার করছেন না। তবে তিনি শোক কাটিয়ে উঠে যে সব বলবেন এটা নিয়ে সবাই নিশ্চিত আছে। তাই হয়তো আরবান তালুকদারের ছটফটানি বেড়ে যাচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ পর, আহনাফ আর অরুণিকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজনের কথাবার্তা চলতে লাগলো। ঘরোয়া পরিবেশে মেহেদি অনুষ্ঠান শেষ করে, খুব তোড়জোড় করেই আহনাফ তার বিয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলো। বিয়ে নিয়ে অরুণিকারও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তাই সে অরুণিকার পছন্দমতো সবকিছু সাজানোর পরিকল্পনা করছে। আহনাফ অরুণিকাকে নিয়ে আজ বিয়ের শপিংয়ে যাবে। তাই সে অরুণিকাকে নেওয়ার জন্য তার রুমে আসতেই দেখলো রুমের দরজা খোলা। ঘরে ঢুকে অরুণিকাকে খুঁজতেই টেবিলে থাকা অরুণিকার ফোনটি বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে ইমান নামটি দেখে আহনাফ থমকে গেলো। ইমান অরুণিকাকে এখনো ফোন দেয়? কিন্তু কেন?
আহনাফ চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এদিকে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অরুণিকা ইমানের ফোন দেখে দরজা আটকে দিলো। অরুণিকাকে দরজা আটকে দিতে দেখেই আহনাফের রাগ উঠে গেলো। সে হনহনিয়ে নিচে নেমে তার রুমে ঢুকে ধড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। এদিকে অরুণিকা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ইমান বলল,
“আমি বলেছিলাম না, তোমার কথা রাখবো।”
“কি করেছেন এখন?”
“আমি আরবান তালুকদারের সব তথ্য বের করে নিয়েছি। উনার ছেলেরা উনাকে ঘর থেকে বের করে দেয় নি। ওরা তো দেশেই থাকে না। তিনি নিজেই এই বছরের শুরুতে দেশে এসেছিলেন।”
“আগে কোথায় ছিলেন?”
“আমেরিকাতে।”
“এতোটুকুই?”
“কেন কম কিছু জানালাম?”
“হ্যাঁ, এসব তথ্য তো আরাফরাই বের করেছে। আমি ওদের ল্যাপটপে দেখেছি, এসব আগে থেকেই সংগ্রহ ছিল।”
“আচ্ছা, তুমি উনার সম্পর্কে কেন জানতে চাইছো?”
“কারণ আমার মনে হচ্ছে, উনি আমার আর আহনাফের ক্ষতি করতে চান।”
ইমান একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আচ্ছা, আমি আরেকটা সূত্র পেয়েছি। হয়তো ওই সূত্রধরে এগুলে কোনো ক্লু পেতে পারি। কাল কি আমার সাথে একবার দেখা করবে?”
“কোথায়?”
“খুলশি টাওয়ারের সামনে থেকো। আমি ওখানে আসবো।”
চলবে—-