অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব -২০

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২০

ইফাজ স্যারের ব্যাবহার খুব অদ্ভুত।এতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে।হুট করে কেউ এমন সবাইকে নিয়ে সাজেক যাওয়ার প্লান করে।ভালো লাগে না কিছু।ইচ্ছা ছিল আয়াজের সাথে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পূরন হলো না তার আগেই একা যেতে হবে।খুব কি ক্ষতি হতো আয়াজ আমার সাথে থাকলে।

স্যার আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েছেন সবাইকে।যাক বাঁচা গেলো আজকে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।সবাইকে কল করলাম গ্রুপে।

সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললাম,,,,

“দোস্ত সবাই ভার্সিটির ক্যাফেতে চলে আয় আমিও যাচ্ছি।আর সোন কেউ কোনো এক্সকিউজ দিবি না।তাড়াতাড়ি চলে আয়”

কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিলাম।রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।মনে হয় বৃষ্টি হবে। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।আকাশে মেঘের আনাগোনা।ভালো লাগে এমন পরিবেশ।ক্যাফেতে পৌছে দেখি সবাই হাজির আমরা অনেক সময় গল্প করলাম।সবাই যার যার বাড়ি চলে গেলো।আমি বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় হাঁটতে লাগলাম।

হুট করেই ঝুম বৃষ্টি নামলো।আমি আশেপাশের সবাই আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে লাগলো।আমি দাঁড়িয়ে ভিজছি।কালো শাড়িটা ভিজে চুপচুপ হয়ে গিয়েছে দুই মিনিটে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে অনেক জোড়ে জোড়ে তাও আমি যাচ্ছি না।হাত মেলে ভিজতে লাগলাম।

“এভাবে রাস্তায় নিজের রূপ না দেখিয়ে বাসায় যাও”

আমি চমকে উঠলাম।চোখ মেলে তাকালাম।সামনে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছেন।হুট করে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।আমি আয়াজকে জড়িয়ে ধরলাম।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলাম বুঝতে পারলাম এটা আয়াজ না ইফাজ স্যার আমি আজকেও সেই একই ভুল করেছি।

আমি দূরে সরে গিয়ে বললাম,,,,”দুঃখিত স্যার আমায় ক্ষমা করবেন।আজকেও আপনাকে আমি আয়াজ ভেবে ভুল করেছি”

“সে যাই হোক রাস্তার মাঝখানে এভাবে শাড়ি পড়ে নিজের শরীর দেখানোর মানে নেই মিস ইশা উপস সরি মিসেস ইশা”

স্যারের কথায় নিজের দিকে তাকালাম।শাড়ি লেপ্টে শরীরের সাথে মিশে আছে।বিশ্রি লাগছে দেখতে।আমি শাড়ির আচল টেনে শরীর ঢাকার চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমি ব্যার্থ কারন তাও দেখা যাচ্ছে
স্যার নিজের কোটটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন,,,”গাড়িতে উঠো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি”

আমি আর কোনো কথা বললাম না কারণ এখন যদি স্যারকে না বলি তাহলে রিকশা খুঁজতে হবে আর মনে হয়না আমি এখন রিকশা পাবো।স্যার আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বললেন,,,
“মিস ইশা বাসায় গিয়ে মেডিসিন নিয়ে নিবেন নাহলে জ্বর আসবে”

“স্যার আপনার কোটটা”

স্যারের দিকে কোটটা এগিয়ে দিয়ে বললাম।স্যার বললেন,,,,”আমি যেটা একবার দিয়ে দেই সেইটা আর ফেরত নেই না তাই তুমি কোটটা নিজের কাছে রেখে দেও।”

স্যার আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।আমি কিছুক্ষণ উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ফ্ল্যাটে চলে আসলাম।ভেজা জামাকাপড় পাল্টে নিলাম।কারেন্ট নেই,আমি খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম।মেডিসিনও খেয়ে নিলাম।শুয়ে পড়লাম ভালো লাগছে না আমার।

মধ্যরাতে মনে হলো কেউ আমার মাথায় পানি ঢালছে।ঝাপসা চোখে মনে হলো আয়াজকে দেখেছি।কিন্তু আয়াজ আসবে কোথা থেকে খারাপ লাগছে প্রচুর ঘুমিয়ে পড়লাম।
|
|
“তুমি ঠিকই দেখেছো বউ আমি এসেছি।জানি তো তোমার জ্বর হবে তাই তো তোমার সেবা করতে তোমার আয়াজ হাজির।তোমাকে যে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।আর কালকে যে যভাবেই হোক আমাদের সাজেক যেতেই হবে”

আয়াজ ইশার মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।ভোর রাতের দিকে আয়াজ বাসায় চলে গেলো।ইশার জ্বর এখন অনেকটাই কমেছে।
|
|
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।কালকের রাতের কথা ভাবতে লাগলাম।মনে হয়ছিল আয়াজ এসেছেন। হয়তো সপ্ন দেখেছি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।চারদিনের জন্য যাওয়া হচ্ছে।প্রতি বছর নাকি সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু এইবারের মতো এমন কোনোদিনও হয়নি যে যাওয়া বাধ্যতা মূলক।এগুলো সব আমি অফিসের একটা মেয়ের কাছ থেকে জেনেছি।মেয়েটা খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছি আমরা।

বিকালে রেডি হয়ে নিলাম।রিকশা নিয়ে অফিসে চলে আসলাম।বাস ছাড়বে সন্ধ্যায়।নিশির কাছ থেকে জানলাম সব স্টাফরা নাকি বাসে যাবে আর স্যার আর আমি নাকি গাড়িতে যাবো।
নিশি আমায় বলল,,,
“তোমার তো সেই সময় যাবে স্যারের সাথে দেখো স্যারকে পটাতে পারো কিনা স্যার কিন্তু সেই হ্যান্ডসাম।”

আমি মলিন হেসে বললাম,,,,
“আমি বিবাহিত নিশি আর আমার বর ও অনেক সুন্দর দেখতে মানে আমাদের স্যারের মতোই দেখতে হুবুহু।আর আমি উনাকে প্রচন্ড ভালোবাসি তাই অন্যকাউকে গ্রহন করা আমার পক্ষে সম্ভব না”

“কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম তোমার বর নাকি মারা গিয়েছে”

“আমি মানি না উনি মারা গিয়েছেন।উনি বেঁচে আছেন আর একদিন উনি ঠিকই আসবেন আমার কাছে।”

“ভালোবাসো তাই না খুব”

“হ্যাঁ প্রচুর”

নিশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
“আমিও ভালোবাসতাম একজনকে সে ধোকা দিলো আমায়।অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে সে আজ একবছর।ফাহাদকে দেখছো না ও আমাকে ভালোবাসে অনেক কিন্তু আমি পাত্তা দেই না।ছেলেটা ভালো কিন্তু আমার ভালোবাসতে খুব ভয় করে”

“নিশি সবাই এক নয় আর আমিও ফাহাদ ভাইকে খেয়াল করেছি উনি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে।তাই আমার মনে হয় তুমি ফাহাদ ভাইকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো”

“আমিও তাই ভাবছি ইশা ধন্যবাদ তোমায়”

আমাদের কথা বলার মাঝেই সবাইকে ডাকা হলো।সবাই বাসে উঠে গেলো।
আমি ফায়াজ স্যারকে বললাম,,,”স্যার আমি কি আপনার সাথে যাবো নাকি বাসে উঠবো”

“তুমি আমার সাথে যাবে তুমি আমার পিএ যখন আমার সব অসুবিধা সুবিধা তো তোমাকেই দেখতে হবে”

আমরা সাজেক যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।প্রথমে আমরা ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাবো।তারপরে শহরের শাপলা চত্বর থেকে রওনা হবো সাজেক যাওয়ার জন্য।

আমাদের খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল আটটা বেজে গেলো।এখান থেকে আরো তিনঘণ্টা লাগবে সাজেক পৌছাতে।আমাদের সাজেক পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১১ টার বেশি বেজে গিয়েছে।ফায়াজ স্যার একটা রিসোর্ট বুক করেছেন।সবাইকে তাদের রুমের চাবি দিয়ে দিয়েছেন।আমরা মোট ২৫জন স্যারকে নিয়ে ২৬জন।তার ভিতরে ছেলে ১৬জন মেয়ে ১০ জন।ছেলেদের ৫টা রুম দেওয়া হয়েছে।স্যার নিজের জন্য একটা আলাদা রুম নিয়েছেন।মেয়েদেরকেও তিনটা রুম দেওয়া হয়েছে।এখানে ৪ জন মেয়ে বাদে আর কেউই আমাকে সয্য করতে পারে না কারণ আমি স্যারের পিএ হাউ ফানি।

আমি নিশি আর জুঁই আপু একরুমে।ভালোই হয়েছে জুঁই আপু খুব ভালো।আমাকে খুব ভালোবাসেন ওদের মতো না।আমরা তিনজন নিজেদের রুমে গেলাম।আমি বেলকনিতে গেলাম অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য মেঘগুলো বেসে যাচ্ছে।নিশি আর জুঁই আপুও আসলো আমি কয়েকটা পিক তুলে দিতে বললাম নিশিকে।আয়াজ যখন ফিরে আসবেন তখন দেখাবো তাকে।

রেস্ট করে বিকালের দিকে সবাই বের হলাম।আশেপাশে ঘুরে দেখতে লাগলাম।আমার সব সময় স্যারের কাছে থাকতে হচ্ছে।কখন কি লাগে স্যারের।আশেপাশে নিজেদের মতো ঘুরলাম আমরা।

সন্ধ্যায় রিসোর্টে ফিরে আসলাম।রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।নিশি আর জুঁই আপু ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি বেলকনিতে চলে আসলাম।পোন থেকে আয়াজের ছবি বের করলাম।আমাদের সব স্মৃতি গুলো দেখতে লাগলাম।আমি আর আয়াজ আমাদের প্রত্যেকটা সুন্দর মুহূর্তের ছবি তুলতাম।ছবিগুলো দেখতে দেখতে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

কিছুসময় বসে ঘুমোতে এলাম কালকে সকালে আবার সবাই মিলে কংলাক পাহাড়ে যাবো।আয়াজের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছি।
|
|
“তুমি খোঁজ পেয়েছো ওদের কোথায় আছে ওরা”

“হ্যাঁ স্যার সব পেয়ে গিয়েছি,ওদের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।ওদের এবার ধরা পরতেই হবে।”

“ওকে তুমি সব ঠিক করে রাখো আমি এসেই সব করবো”

“ওকে স্যার”

ফোন কেটে দিয়ে আয়াজ ইশার রুমের দিকে তাকিয়ে বলল,,,”আর মাত্র ৫টা দিন জান তার আর কোনো লুকোচুরি নয় তুমি তোমার আয়াজকে পাবে”
|
|
নিশির ডাকে সকালে ঘুম ভাঙলো।নিশি আমাকে তাকাতে দেখে বলে,,,,”ইশা উঠে পরো রেডি হয়ে নাও না হলে কিন্তু তোমাকে রেখেই চলে যাবে সবাই।”

“আর শুনো শাড়ি পড়ো না পাহাড়ে যাচ্ছি তো তোমার হাঁটতে সমস্যা হবে”

আমি মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে একটা টপস আর প্যান্ট নিয়ে রেডি হতে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি জুই আপু আর নিশির রেডি হওয়া শেষ।নিশি আমাকে টেনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসিয়ে বলল,,,,
“একটু সাজতে তো পারো নাকি এভাবে থাকো কেনো সবসময়”

মলিন হেসে বললাম,,,”যার জন্য সাজবো সেই তো নেই আমার কাছে তো কাকে দেখাবো সেজে”

“নিজের জন্য তো সাজো আর যখন জিজু এসে দেখবে তার বউ আগের মতো নেই তখন তো উনি বলবেন আমি তোমার মতো পেত্নিকে বউ হিসাবে মানি না”

আমি হেসে বললাম,,,,”উনি কখনোই এগুলো বলবেন না”

নিশি আমায় চুপ করিয়ে দিলো।হালকা সাজিয়ে দিলো চোখে কাজল হাতে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং চুড়ি ছোট একটা কানের দুল।

এবার নিজেকে দেখো কতো সুন্দর লাগছে।আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,”হু”

আমরা এখন কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবো।আমরা স্যার এর জন্য অপেক্ষা করছি।স্যার এখনো আসেননি।

আমাদের কংলাক পাহাড় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৩০-৪০ মিনিট লেগেছে।অসম্ভব সুন্দর জায়গা।মেঘগুলো কিভাবে ভেসে যাচ্ছে।সবাই হাপিয়ে গিয়েছি পাহাড়ে উঠতে উঠতে।আমি ভিডিও করছি মেঘগুলোর কি সুন্দর মেঘ গুলো ভেসে যাচ্ছে।ছুঁতে ইচ্ছা করছে।পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে গ্রাম কংলাক পাড়া ঘুরে আসি।আমাদের কংলাক পাড়া ঘুরতে ঘুরতে অনেক দেরিহয়ে গিয়েছে।সন্ধ্যা হতে চলল।সবাই পাহাড় থেকে নেমে যাচ্ছে।আমি আর স্যার সবার থেকে পিছিয়ে গিয়েছি।

“আহ”

“কি হয়েছে দেখি দেখি কোথায় লেগেছে তোমার”

চলবে,,,,,,?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here